পরিযায়ী জীবন পর্ব-০২

0
19

#পরিযায়ী_জীবন (পর্ব – ২)

সারা রাত মেহরাবকে নিদ্রা এতটুকুও আচ্ছন্ন করতে পারল না চাপা যন্ত্রণা আর উত্তেজনায়। সকালে ঘর থেকে বের হল না। ফাতেমা নাশতার জন্য ডাকলেও সাড়া দিল না। সাড়া না পেয়ে ফাতেমা তার ঘরে এগিয়ে গেলে দেখল, মেহরাবের মুখ কেমন থমথমে, চোখ লাল। অনিদ্রার ছাপ স্পষ্ট সেখানে। সে অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করল- কি হয়েছে? খেতে ডাকছি আসছিস না যে? মেহরাব শুষ্ক গলায় জানায়- “তার খিদে নেই, কাজ আছে বাইরে যাবে এখুনি। খিদে পেলে যেখান থেকে পারে কিছু খেয়ে নেবে।” হঠাৎ সজীবের এমন রূঢ় কথায় ফাতেমা অবাক হল। কী এমন কাজ পড়ে গেল সেটাও বুঝল না। জিজ্ঞেস করতেই সজীব যেন মহা বিরক্ত হয়ে গেল। গলায় একরাশ বিরক্তি ঢেলে বলল-

-কী কাজ সেটা জেনে তুই কী করবি? আমার সব কাজ তুই বুঝবি? নাকি তোদের না জানিয়ে আমি কিছু করতে পারব না?

ফাতেমা বুঝল না হঠাৎ সজীবের কী হল যে এমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করল? খুব বড় কিছু না ঘটলে তার ভাই কখনো এমন আচরণ করে না। একরাতের মধ্যে এমন কী হয়ে গেল? সে আর কিছু বলার সাহস করল না। চলে এসে মাকে সবটা জানায়। শুনে সাজেদার বুকটা ধড়াস করে উঠল… পেটে না ধরলেও সজীব তো তারই। ছেলের মনে কী চলে সে সবই বুঝতে পারে। তিনি ফাতেমাকে বললেন-

-“কিছু হয় নাই। তুমি তোমার কাজে যাও আমি দেখতেছি।” ফাতেমা বুঝল নিশ্চই কিছু একটা ঘটেছে যা মা খুব ভালো করেই জানে! কিন্তু এক রাতের ব্যবধানে হলটা কী? সে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল।

সাজেদা তাকে আর কিছু না বলে সোজা ছেলের ঘরে চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন সজীব বের হতে যাচ্ছে। তিনি আস্তে করে বললেন- “কই যাও?”

সজীব মুখ খুলল না। সাজেদা আবার জিজ্ঞেস করল- কই যাইতেছ? খাইয়া যাও? না খায়া কোথাও যাইতে পারবা না।

সজীব কোন উত্তর না দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল আর সাজেদা সাথে সাথেই খপ করে ছেলের হাত ধরে ফেলল। সজীব শক্ত হয়ে রইল। এই মুহূর্তে সে কোনভাবেই মায়ের মুখোমুখি হতে চায় না। তার যা মনের অবস্থা হয়ত এমন কিছু বলে ফেলবে যা খুব বাজে অবস্থা তৈরি করে ফেলবে।

সাজেদা আহত গলায় বলল- কী হইছে? আমার উপর রাগ?

মেহরাব নিষ্প্রাণ গলায় বলল- তোমার উপর রাগ হবে কেন? কারো উপর আমার কোন রাগ নেই। সব আমার ভাগ্যের দোষ। নয়ত বাবা-মা থাকার পরও কেন আমাকে অন্যের কাছে মানুষ হতে হয়? কেন পরিচয় নেই বলে সমাজে লাঞ্ছিত হতে হয়, বর্জিত হতে হয়? সব দোষ আমারই তো।

সাজেদার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। যে ভয়ে সে এতকাল আতঙ্কিত ছিল আজ তাই হল! তার চোখে শূন্য দৃষ্টি… সে সজীবের হাত দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ভেজা গলায় বলল- বাবা, স্বার্থপরের মত আমি তোমার মা হইতে চাইছি সেইটা আমার জঘন্য অপরাধ হইছে আমি জানি। আমার কোনো মাপ নাই… আমারে তুমি শাস্তি দেও তাও এমন কইরা মুখ ফিরায় নিও না… আমি সারাটা জীবন মনের মধ্যে অনেক যন্ত্রণা পাইছি। তোমার বাবা সব সময় আমারে বলছে- “ফাতেমার মা, তুমি কিন্তু ভুল করতাছ। একদিন এইসব জানাজানি হইব তখন ছেলে তোমারে মাপ করব না। তখন কিন্তু তুমি সহ্য করতে পারবা না। যার ছেলে তুমি তার কাছে দিয়া আসো। এত মায়া কইরা লাভ নাই। যে আমাগো না সে আমাগো কথা মানবই কেন? তুমি না পারো আমি নিজে তারে সব বলি?” আমি তার কথা শুনি নাই। আমার খালি ওই ছোট্ট মুখটা ভাসে চোখে… তাছাড়া কোট-কাচারি আর পুলিশের ভয় পাইতাম খুব। আমরা গরীব মানুষ, আমাগো তো কেউ নাই, কিছু নাই। হয়ত আমরাই চুরির দোষে ফাইসা যাইতাম। সেই ভয়ে চুপ থাকলাম। দিন যত গেছে তোমার মায়া মায়া মুখটা আমারে শক্ত কইরা প্যাঁচায় ধরছে। আমি কেমনে এই ছেলেরে দিয়া দেই… এইটা তো আমার, আমার ছেলে, আমার কলিজার টুকরা… তোমার বাবা এই কষ্ট নিয়া চইলা গেল! সেইটাও আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমি তো কিছু করতে শক্তি পাই না বাবা… বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সাজেদা। সজীব তবু চুপ করে রইল। তার দৃষ্টিতে কোনো কমলতা বা সহানুভূতি নেই! সাজেদা বলতে থাকল- বিজরীর বাবা যখন সব চেষ্টার পরেও তোমাদের সম্পর্ক মাইনা নিল না তখন আমি নিজেরে আর মানাইতে পারি নাই। শেষমেষ তার কাছে গেছিলাম। তারে সব সত্য বইলা দিলাম তারপরও সে মানল না। আমি তারে অনেক বুঝাইলাম কিন্তু কোনভাবেই রাজি হইল না। সে নাকি বিরাট ভালো ঘর পাইছে সেখানেই মেয়েরে বিয়ে দিবে। আমি তার কাছে চোখের পানিতে হাতজোড় কইরা এমনকি পায়েও ধরতে গেছি কিন্তু সে তারপরও শক্ত থাকল। বিজরীর বিয়ের দিন পর্যন্ত গেছি তার কাছে তারে গলাইতে পারি নাই। তোমার বিশ্বাস না হইলে তারে জিজ্ঞেস কইরা দেখতে পারো। আমি তো মা, তোমারে পেটে না ধরলেও সেই একদিন বয়স থেকাই পালতেছি। আমি কেমনে তোমার মা হইলাম না? এই প্রশ্নই তো আমারে ছাড়ে নাই কোনোদিন। আমার এখন কী করা লাগব বাপ? তুমি যা বলবা তাই করব এই যে আমি তোমার পাও ধরতেছি…

মেহরাব খপ করে সাজেদার হাত ধরে ফেলল। অস্ফুটস্বরে শুধু বলল- কী করতেছ আম্মা! সাজেদা হু হু করে কাঁদতেই থাকল। সাজেদার কান্নায় মেহরাব কেমন দ্রবীভূত হয়ে গেল… নিজের কষ্টগুলো চাপা দিতে চেষ্টা করল, নিজেকে শান্ত করতে চাইল। মায়ের কথাগুলোও তো সত্যি কিন্তু তাই বলে… তার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল।

ফাতেমা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পুরো ব্যাপারটা শুনল। তার নিজের চোখেও অশ্রু বান ডাকল। পুরো ব্যাপারটা তার কাছে স্পষ্ট হল। সজীবের রাগ বা অভিমান দুটোই যেমন যৌক্তিক তেমন মায়ের জায়গাটাও সম্পূর্ণ ভুল নয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে মা হয়ত অন্য কিছু ভাবতে পারত। কিন্তু নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষই জানে জীবন তাদের কত অসহায় করে বাঁচিয়ে রাখে! এই মুহুর্তে মা ছেলের মাঝে একজন তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি অনুভব করল সে। ভুলগুলোর অবসান এখনই হওয়া দরকার। তাই দাঁড়িয়ে না থেকে চোখ মুছে ঘরে ঢুকে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলতে শুরু করল-

-সজীব, আম্মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইলে তুই সেটা অবশ্যই পারিস। আমাদের অপরাধ অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু একবার আম্মার মাতৃত্বের জায়গা থেকে ভেবে দেখ ভাই? আম্মার হয়ত অনেক বড় ভুল হয়েছে কিন্তু কেউ কারো “মা” হয়ে উঠলে সেখান থেকে মানুষটা কী করে বের হয়? যেখানে মেয়েদের জন্মই হয় মায়ের জাত হিসেবে! সে শুধুই তার মাতৃত্বের জায়গা থেকে ভেবেছে তাই কিসের ভুল, কোথায় ভুল, কতটা দোষের কিছুই সে আমলে নিতে পারেনি। আমরা তো ভুলেই গেছি তুই আমাদের পরিবারের রক্তের কেউ নস। আমরা কখনো ভাবিই না আমাদের ভাই বলে আদতে কেউ নাই। আমরা দুই বোন এক ভাই এটাই চির সত্য হয়ে স্থায়ী হয়ে গেছে। তুই ছিলি বলে আমাদের ছেলেবেলাটা এত মধুর ছিল। ভেবে দেখ মায়ের কাছে সব সময় তোর জন্য সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা বরাদ্দ ছিল। আমরা দুই বোন যত যাই করি না কেন ভালোবাসার বড় অংশটুকু তোর ভাগেই পড়েছে। তুই তা কখনোই অস্বীকার করতে পারবি না। আমাদের মত এমন একটা অর্থনৈতিক দৈন্যতাময় পরিবারে বাস করেও তোকে ডাক্তারি পড়িয়েছে আম্মা। এইজন্য আমাদের সবাইকে কত কষ্ট করতে হয়েছে সেটা তোর চেয়ে ভালো কে জানে? তুই নিজেও তো কত কষ্ট করেছিস। কতবার আমাদের কষ্ট দেখে সব ছেড়ে দিতে চেয়েছিস। আমরা তো সেটা হতে দেইনি। আমাদের না দিয়ে আম্মা তোকে সব দিয়েছে। তুইও তো আমাদের ছাড়া কখনও কিছু বুঝিসনি। যত কিছুই হত দৌড়ে এসে এই বুবুর কাছেই সব বলতি। আজ কেন একবার এসে বললি না সব বুবুকে? এক মুহুর্তে সব পর করে দিলি? আমি আর আম্মাই তো তোর আশ্রয় ছিলাম। যত বড় হয়েছিস তত আমাদের ভাইয়ের চেয়ে অভিভাবক হয়ে উঠেছিস বেশি। এই যে বাবা নেই আমার তো একবারও মনেহয় না মাথার উপর বাবার ছায়াটা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। তুই আছিস বলেই আমরা বাবার অভাব অনুভব করি না, মাথার উপর অভিভাবকের ছায়া নেই মনে করি না। নির্ভরতায় নিশ্চিন্তে দিন কাটে। এত বছর ধরে বিয়ে হয়ে যাবার পরও আমাদের দুই বোনের এখনো ছোট বড় সকল সমস্যায় তোর নামটাই আগে মনে আসে। আমরা ভুলে গেছি তুই আমাদের কেউ নস, সেটা যদি অপরাধ হয় তাহলে শাস্তি তো আমাদের সবারই পাওনা! কী করব ভাই, আমরা তো লোভী… ভাইয়ের লোভ, ছেলের লোভ… এক নিঃস্বাসে এতগুলো কথা বলে ফাতেমা হাপিয়ে উঠল। তার চোখেও বাঁধ ভাঙা কান্না।

সজীব মাথা তুলে বলল- আমি এসবের কোন কিছুই অস্বীকার করছি না। এসব মনে রাখিনি তাও নয়। তোদের দেয়া ভালোবাসা বা ঋণ কোনটাই শোধ করার দুঃসাহস আমার নেই। কিন্তু একটাবার আম্মা আমাকে জানাতে তো পারত? আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারল না?

-এটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের বিষয় নারে ভাই। আমআদের মাঝে হারাবার ভয় ছিল। তোকে হারাবার ভয় মনে এমনভাবে চেপে বসেছিল যে আম্মা মাতৃত্য ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারেনি। কিছুতেই চায়নি তার পরিবার ভেঙে ছোট হয়ে আসুক।

-সবাই যার যার জায়গায় ঠিক আছে। আমিই আসলে ভুল।

ফাতেমা সজীবের কাছে গিয়ে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল- ভাই তোকে পেয়ে আমাদের জীবন আনন্দে পালটে গিয়েছিল তাই বাস্তবতা দেখতে ইচ্ছে হয়নি। এমন করিস না ভাই। তুই আমাদের পায়ের তলার মাটি আর মাথার উপর ছাদ হয়ে উঠেছিস। তুই কষ্ট পেলে আমাদের পুরো জগৎ অন্ধকার হয়ে যায়।

-আর আমি যে এত বছর ভুলের ভেতর বাস করে আমার পরিবার থেকে বঞ্চিত হলাম? পরিচয় বিহীন বেওয়ারিশ মানুষ হিসেবে সমাজের চোখের বালি হয়ে রইলাম সে সবই ভুলে যাব?

ফাতেমা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সজীবের এই কথায়। সে চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাসের সুরে বলল- আমরা তাহলে শুধুই “ভুল” ছিলাম! আমাদের ভালোবাসার কোনই মূল্য নেই? সেই মুহূর্তে সাজেদা জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন!

ফাতেমা আতঙ্কে কেঁদে ফেলে বলল- “আম্মা কী হল তোমার? চোখ খোল আম্মা? মাগো…” সজীব ধরতে গেলে ফাতেমা বলল- থাক, আম্মা তো তোর কেউ না। সে তো ভুল মানুষ, অপরাধী।”

সজীব কিছু না বলে আম্মাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পালস চেক করল। তারপর দৌড়ে গিয়ে পানি এনে মুখে ছিটিয়ে দিল। ফাতেমা মায়ের হাতের তালু ঘষে যাচ্ছিল আর কাঁদতে কাঁদতে মাকে ডেকে যাচ্ছিল।

বেশ কিছুক্ষণ পর সাজেদার জ্ঞান ফিরল। সে ঘোলাটে চোখে ছেলের দিকে তাকায়… তার চোখ থেকে দুফোঁটা উষ্ণ পানি গড়িয়ে পড়ল। সজীব মায়ের হাত ধরে কাঁপা গলায় বলল- আম্মা আমি মনেহয় তোমার যোগ্য ছেলে হতে পারিনি। খুব অযোগ্য আমি…

সাজেদা উঠে বসে ছেলের হাত টেনে নিয়ে নিজের গালে চেপে ধরে বলল- না বাবা, তুমি আমার ছেলে। আমার রাজপুত্তুর রাজা ব্যাটা। এতগুলা বছর ধইরা তুমি কষ্ট চাইপা বড় হইছ। তোমার কষ্ট আর আমার অপরাধ কোনটাই আমাকে এক মুহূর্ত শান্তি দেয় নাই। এখন আর আমার কিছু যায় আসে না। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি তোমারে তোমার মায়ের হাতে তুইলা দিয়া নিশ্চিন্তে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিব। আমার হায়াত মনেহয় শেষ হয়ে আসছে। সেদিন তোমার বাবারে স্বপ্নে দেখলাম। আমারে নিতে আসছে, খুব রাগ! এখনো আমি তোমারে সব সত্য বইলা কেন দেই না?

-এত কথা বলো না এখন, একটু রেস্ট করো। আর এগুলা কথা একদম বলবা না। আমি আছি… কিছুই হবে না তোমার।

সাজেদা চুপ হয়ে গেল। মেহরাব তাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিল। তার মত মায়েরও যে সারা রাত ঘুম হয়নি সেটা সে ভালোই বুঝতে পারছে। তারপর নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করল। নিজের মনকে আর প্রশ্রয় দিল না। বার বার মায়ের কথা আওড়াতে লাগল মনে মনে। একজীবনে মানুষের সব চাওয়া, আশা, ইচ্ছে কী পূরণ হয়? জীবন কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছেয় চলে না। জীবন আল্লাহর ইচ্ছায় তার নিজের গতিতে চলে। এখানে আমরা নাটকের চরিত্র মাত্র! এই মানুষগুলো তাকে নিঁখাদ ভালোবাসা দিয়েছে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কী লাভ এখন এসব খুঁচিয়ে ঘা তৈরি করার, রক্তাক্ত করার? এই মানুষগুলো তাকে অসম্ভব ভরসা করে, তার তো উচিত সেটাতেই মনোনিবেশ করা?

সারাবেলা মেহরাব কারো সাথে তেমন কথা বলল না। বিকেলে মাকে বলল- চলো?

সাজেদার বুক কেঁপে ওঠে। সজীব কী তাকে নিয়ে আজই মায়ের কাছে যাবে? তিনি কাঁপা গলায় বললেন- কই যাব?

-কই যাব সেটা দিয়ে তোমার কোনো কাজ নেই। তুমি তোমার ছেলের সাথে বের হবা, এত প্রশ্ন কেন?

-“ছেলের সাথে বের হবা” শুনে সাজেদার বুকের উপর চেপে থাকা পাথরটা নেমে যেতে চাইল। হ্যাঁ, তারই তো ছেলে। আর কোনো প্রশ্ন না করে তিনি তৈরি হয়ে নিলেন।

মেহরাব মাকে নিয়ে বের হয়। উঠোনে পা রাখতেই ঝুপ করে অনেক স্মৃতি এসে ভীড় করল তার মস্তিষ্কে… তার প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে বিদীর্ণ করে দিয়ে অবাধ্য চোখজোড়া পাশের বাড়ির ৩য় তলার বারান্দার দিকে ছুটে যায়। বারান্দায় আজও তার দেওয়া মাধবীলতা গাছটা ঝুলে আছে! গত ৩ বছরে সে ডালপালা ছড়িয়ে অনেকটাই বেড়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। গাছ ভর্তি থোকা থোকা ফুল, কী চমৎকার লাগছে দেখতে। সে চোখ নামিয়ে নিতে যাবে তখনই মনে হল গাছটার গা ঘেঁষে আড়াল নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে আরেকবার সেদিকে তাকায়, মুহূর্তেই তার সমস্ত পৃথিবী থেমে গেল… বিজরী! তার বুক মুচড়ে একটা চিনচিনে ব্যথা সেখানে বাস করা কারো অস্তিত্ব জানান দিয়ে ওঠে। সে আর মুহূর্তমাত্র দেরি না করে গাড়িতে উঠে পড়ল। আজ তার হাতে অনেক কাজ। অযথা নষ্ট করবার মত সময় তার হাতে নেই।

চলবে