পরিযায়ী জীবন পর্ব-১০

0
15

#পরিযায়ী_জীবন (পর্ব – ১০)

মেহরাব ফজরের নামাজ পড়ে সোজা বাসায় চলে আসে। ভোরবেলা হাঁটতে হাঁটতে এলাকাটা একটু ঘুরে দেখাবে বলে মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে বাইরে বের হয়। বাড়ির গোলিটা ছেড়ে তারা হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছুটা দূরে চলে এলো। মেহেরুন্নেসা চারপাশটা ভালো করে দেখছিল। এদিকটাতে লোকারণ্য কম। দুপাশের ফাঁকা জমিগুলো গাছগাছালি আর উঁচু ঘাসে ভরা। একটু দূরে দূরে গাছগাছালির ফাঁকফোকর দিয়ে ২/৪টা দালান মাথা উঁচিয়ে উঁকি দিচ্ছে। প্রায় বাঁকল শূন্য করে ফেলা একটা গাছ তার নজরে এলো! বুঝতে পারল এটা অর্জুন গাছ। তারপর আরও কিছু ঔষধি গাছ দেখল। জায়গাটা তার খুব পছন্দ হল। জায়গাটা এমনিতেই একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজের তার উপর এখন ভোরের শীতল বাতাস। শীত মনে হচ্ছে এখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে চাইছে। মেহরাব টুকুর টুকুর গল্প করেতে করতে হাঁটছিল। মেহেরুন্নেসা তখন মনে মনে ভাবে- নিরিবিলিতে ছেলের সাথে বিজরীর বিষয়টা নিয়ে আলাপ করার এটাই মোক্ষম সময়। তাই কথার ফাঁকে প্রসঙ্গটা তুলে ফেললেন। সরাসরি বললেন-

-তোমাকে একটা কথা বলার ছিল, আমি আসলে এখানে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম… তোমার বিয়ের ব্যাপারে। মেহরাব সাথে সাথেই সতর্ক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়। মেহেরুন্নেসা বলতে থাকে- আপার (সাজেদা) কাছে বিষয়টা তুলতেই তিনি বিজরীর বিষয়টা জানালেন এবং পুরোটাই জানালেন। ব্যাপারটা শুধু কষ্টদায়ক এমন নয়, তারচেয়েও ভীষণ রকম তিক্ততার। তিক্ত অভিজ্ঞতা মনকে বিষিয়ে রাখে, সঙ্কীর্ণ করে তোলে। তবে আপার কথায় বুঝলাম তিনি বিজরীকে বেশ পছন্দ করেন। তোমাদের দুজনকে তিনি একসাথে দেখতে চান। কিন্তু আমার মনেহয়, এটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

মেহরাব ভ্রু কুঞ্চিত করে ভাবে, মা আমার মতামত না নিয়েই বলে ফেলল ভুল সিদ্ধান্ত হবে! সে অস্ফুটস্বরে প্রশ্ন করে- ভুল?

-হ্যাঁ ভুল। তোমার উচিত ওসব ভুলে গিয়ে এখন নতুন করে ভাবা।

মেহরাব মায়ের কথায় ভীষণভাবে অবাক হলো। তার মানে মা এখানে এসেই সবটা জেনে নিয়েছে। কই কাল রাতে আম্মার সাথে এত কথা হল তখন তো আম্মা কিছুই বলল না এ ব্যাপারে? সে চট করে বুঝে নিল নিশ্চই মা এমন কিছু আম্মাকে বলেছে যার কারণে আম্মা তাকে এব্যাপারে কিছুই বলেনি। আর সেকারণেই আম্মা তাকে এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু সিরিয়াসলি ভাবতে বলেছেন। আম্মা যেহেতু জানিয়েছে তার মানে মাকে সবটাই বুঝিয়ে বলেছে। সব জানবার পরও মা এভাবে বলতে পারছে? মায়ের ভাবনাটা তার ভালো লাগল না। বলল-

-আম্মা নিশ্চই তোমাকে সবটাই বলেছে। সব জেনেও আমার নতুন করে ভাবা উচিত বলে মনে হচ্ছে তোমার?

-সেটাই তো হওয়া উচিত?

-আমরা এখানে একসাথে অনেক বছর ধরে আছি। বিজরীকে আম্মা খুব ভালো করেই জানে। তাছাড়া বিজরীর বাবা তার কৃতকর্মের জন্য ভীষণভাবে অনুতপ্ত। তিনি খুব করে বিজরী আর আমাকে একসাথে দেখতে চান সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু সেটা তিনি সরাসরি বলবার সাহস কখনও করেননি। কারণ তিনি শুধু অনুপ্তই নন অনুশোচনাতেও ভুগছেন। তার চেয়েও বড় কথা তুমি বিজরীর অবস্থাটা ভাববে না?

-বিজরীর অবস্থা ভাববার জন্য তার পরিবার আছে। ওর কথা ভাবতে গিয়ে আমি তো আমার ছেলের জীবন খারাপ হতে দিতে পারি না।

মেহরাব রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মনে মনে বেশ আহত হলো। কী বলবে ভেবে পেল না। সে ভেবেছিল মাকে সব বললে মা নিজেই সব ম্যানেজ করবে এখন তো দেখছে স্রোত উল্টো বইছে! কেমন জেদ চেপে বসল তার। তাকে এই মুহূর্ত থেকে শক্ত না হলে ব্যাপারটা বাজে দিকে গড়াতে পারে। সে চোয়াল শক্ত করে দৃঢ়তার সাথে বলল-

-মা তোমার কী মনে হচ্ছে না তুমি একটু রূঢ়ভাবে ভাবছ? তুমি তো বিজরীকে দেখওনি! আর সবচেয়ে বড় কথা, বিজরীর ব্যাপারে আমি সিরিয়াস। তুমি যদি শুধু আমার কথাই ভাবতে তাহলেও তুমি বিজরীকেই চাইতে, ২য় কোন অপশন পেতে না। এ বিষয়ে আমি আসলে কারো মতামত চাই না। কেবল সুন্দরভাবে সকলের গ্রহণযোগ্যতা চাই।

মেহেরুন্নেসা চমকে উঠে তাকালেন ছেলের দিকে। এই কদিনে মেহরাবকে যতটুকু দেখেছে তাতে একে খুব শান্ত, কোমল বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু কোমলতার ভেতরেও যে এমন রুদ্রমূর্তি থাকতে পারে সেটা তিনি ভাবেননি। মেহরাব কী করে বলল ছেলের কথা সে ভাবেনি? ভেবেছে বলেই তো… আচ্ছা তিনি কী আসলেই স্বার্থপরের মত ভাবছেন? ভুল ভাবছেন? মেহরাব তখন বলল-

-আমি আজই বাবা আর ভাইয়াদের সাথে কথা বলতে চাই এব্যাপারে। আম্মার শরীরটা ভালো না। তাকে আমি দীর্ঘ সময় দুশ্চিন্তায় রাখতে পারব না। তারপর উল্টো ঘুরে বলল- রোদ উঠে যাচ্ছে, চলো বাড়ি যাই। মেহেরুন্নেসা আর কোনো কথা বললেন না। চুপচাপ ছেলের পাশে হাঁটতে লাগলেন।

বাসায় এসে মেহরাব বুবুকে তাড়াতাড়ি নাশতা দিতে বলে সাজেদার ঘরে চলে যায়। সাজেদা বিছানাতেই ছিল। তার সারা শরীর কেমন ব্যথা। মেহরাব ঘরে ঢুকে আস্তে করে ডাকল- “আম্মা?” সাজেদা পাশ ফিরে ছেলেকে দেখে। মেহরাব মায়ের পাশে বসে বলে, এখনো ওঠোনি? খারাপ লাগছে?

-শরীরটা খুব ব্যথা করে…

-বেলা হয়ে যাচ্ছে উঠে নাশতা করে ঔষধটা খেয়ে নাও। ব্যথা চলে যাবে। তাছাড়া এখন ব্যথা, শরীর খারাপ এসব বললে হবে না। ছেলের বিয়ে দিতে চাচ্ছ আর নিজে বিছানায় পড়ে থাকবে ওসব চলবে না। আমি এখন গাজীপুর যাচ্ছি। বাবা আর ভাইয়াদের সাথে কথা বলে তাদের নিয়ে ফিরব আজই। বাবা আর ভাইয়া এসে বিজরীর বাবার সাথে কথা বলবে। তুমি ভালো দেখে একটা দিন ঠিক করে ফেলো বিয়ের জন্য।

সাজেদা অবাক হয়ে যায়। কী বলছে তার সজীব! মেহেরুন্নেসা কী সব মেনে নিল তাহলে? কাল যে এত কথা বলল? সে জিজ্ঞেস করল- তোমার মায়ের সাথে কথা হইছে?

-হ্যাঁ, হয়েছে।

কী কথা হয়েছে সাজেদা সে বিষয়ে না গিয়ে বলল- তোমার মা বিজরীকে একবার দেখব না? ওরে ডাকায় আনি?

-না থাক, এত দেখার কী আছে? আমার বউ আমি দেখলেই হবে।

সাজেদা মৃদু হেসে বলে- বউ তো তুমি একা পালবা না, সবাইরেই দেখতে হইব।

-এখন ওকে ডাকলে দেরি হয়ে যাবে। সবাই একসাথেই দেখবে নাহয়। তুমি ওঠো। আমি খেয়েই বের হব এখনি।

সাজেদা উঠে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল- আচ্ছা, সব ভালোয় ভালোয় গুছায় নিয়া তাড়াতাড়ি ফিরা আসো। আল্লাহপাক আমার ছেলেরে বরকতময় করুক। তার মনের সব আশা পূরণ করুক।

মেহরাব মাকে নিয়ে আড়াই ঘন্টা পর গাজীপুরের বাসায় চলে আসে। বাবা বাসায়ই ছিল আর দুই ভাই জানিয়েছে লাঞ্চ আওয়ারে ছুটি নিয়ে আসবে। মেহরাব তখন বাবার কাছে গিয়ে বসে। হাসান সাহেব খেয়াল করেছেন মেহেরুন্নেসা কেমন গম্ভীর হয়ে আছে, মেহরাবও চুপচাপ। তিনি বুঝলেন কিছু একটা হয়েছে। মেহরাব নিজে থেকেই বাবাকে বলে তার কিছু জরুরি কথা আছে। হাসান সাহেব চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন-

-কী বিষয়ে?

-তোমরা তো জানো আমি বেশ কিছুদিন কানাডা ছিলাম। আমাকে সেখানে আবার ফিরতে হবে খুব শীঘ্রই। তোমরা যেটা জানো না সেটা হলো, কানাডা যাবার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল। আমি একজনকে পছন্দ করতাম। কিন্তু… মেহরাব খুব ধীরে সব কিছু খুলে বলে। হাসান সাহেব মনোযোগ সহকারে সবটা শুনলেন। তৎক্ষনাৎ কোনো মন্তব্য না করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন। এবং বুঝতে পারলেন তার স্ত্রীর মুখ কেন গম্ভীর। তারপর নিরবতা ভেঙে বললেন-

-জোহরের নামাজের সময় হয়ে আসছে। গোসল সেরে আগে নামাজটা পড়ে আসি। ততক্ষণে মাহবুব আর মাহাদীও চলে আসবে।

মেহরাব কিছু বলল না তবে বুঝতে পারল বাবা একটু সময় নিয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করছে। বাবা হয়ত সেটাই করবে যেটা ও নিজে চায়। সে ভেতরে ভেতরে একটু আশ্বস্ত হল। তারপর মায়ের ঘরে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে। মেহেরুন্নেসা কোনো কথা বললেন না। হয়ত নিজের কাছে অপরাধী লাগছে কিংবা অভিমান! মেহরাব বলতে শুরু করে- মা, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমি আমার পরিবারের জন্য ব্যাকুল থেকেছি। কীভাবে তোমাদের ফিরে পাবো সেটা নিয়ে কত কী যে ভেবেছি। মনে কত প্রশ্ন এসেছে… কে কে আছে আমার? বাবা? মা? ভাই? বোন? আরও কেউ? কিন্তু এতো সম্পর্কের ভীড়েও আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হত মায়ের জন্য। অন্যদের নিয়ে যতটা ভাবনা হত তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাবনা তোমাকে নিয়ে হত। আম্মা আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছে যে অন্য কারো কথা মনে আসবার কোনো সুযোগই নেই। তারপরও সারাক্ষণ তোমার কথা মনে হত। হয়ত আম্মার এত ভালোবাসা দেখেই মনে হত, না জানি তোমার ভালোবাসা কত মধুর! তারপর মায়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল- আমি জানি তুমি আমার ভালো চাও। যেকোনো মূল্যেই ভালো চাও। তুমি তোমার জায়গা থেকে হয়ত ঠিকই আছ কিন্তু আমার জায়গা থেকে একবার ভেবে দেখো? ভরসা করে দেখো? এই দীর্ঘ জীবনে তোমার কাছে প্রথমবার কিছু আবদার করার সুযোগ হয়েছে… তুমি আপত্তি তুলবে?

ছেলের কথায় মেহেরুন্নেসার বুকের ভেতর হু হু করে উঠল। সে তো একবারও এমন করে ভাবেনি! সে আসলে সার্থপর হিংসুক হয়ে গিয়েছিল। নিজের কাছেই লজ্জিত হয়ে গেল। বহু বছর পর ছেলেকে পেয়েছে, তাকে ২য় বার হারাবার সাধ্য তার নেই। চোখ মুছে বলল- তুমি প্রথমবার মায়ের কাছে কিছু আবদার করেছ আমি রাখব বাবা। আসলে আমারই ভুল হয়েছে আগে পিছে কিছু না ভেবেই ভুলভাল ভেবে ফেলেছি।

মেহরাব মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে বলল- বিজরী এত ভালো মেয়ে যে, একটা মেয়ের জন্য তোমার বুকে যে হাহাকার ছিল তা পূরণ হয়ে যাবে। মেহেরুন্নেসা আর কিছু বললেন না। চোখ মুছতে মুছতে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবাই মিলে বাবা-মায়ের ঘরেই বসে। হাসান সাহেব নিজেই বড় দুই ছেলেকে আলোচনার বিষয়বস্তু জানায়। তারপর ঘরে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন- আমরা আজই মেহরাবের সাভারের বাড়ি যাব। বিজরীর সাথে আলাপ করব এবং তার পারিবারের সাথে কথা বলব। সিদ্ধান্তটা খুব দ্রুত নিতে হচ্ছে কারণ মেহরাবকে কানাডা ফিরতে হবে, ওর হাতে সময় নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা ওর আম্মার শরীর অনেক খারাপ। তাছাড়া কোন কাজ অযথা ঝুলিয়ে রাখাটা আমি পছন্দ করি না। মেহরাব বিচক্ষণ ছেলে, তার উপর আমার বিশ্বাস এবং আস্থা দুটোই আছে তাই এ ব্যাপারে এখনই কারো মতামত আমি প্রয়োজন মনে করছি না। ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হোক তারপর যা কিছু সিদ্ধান্ত নেবার সবাই মিলে নেওয়া যাবে। সবাই দ্রুত তৈরি হয়ে নাও আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে নয়ত ফিরতে পারব না। মেহরাব তুমি বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দাও যে আমরা আসছি।

হাসান সাহেব এক কথার মানুষ, তিনি যা বলেন খুব ভেবে চিন্তেই বলেন। তাই কেউ কিছু না বলে চুপচাপ যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নিল।

সবাই একসাথে যাবার জন্য একটা হাইস ভাড়া করে রওয়ানা হল। মাহাদী আর মেহরাব পেছনের সিটে বসেছে। মাহাদীর খুব মজা লাগছে ছোট ভাইয়ের বিয়ের জন্য সে অভিভাবক হিসেবে পাত্রী দেখতে যাচ্ছে। আজ তারও মতামতের মূল্যায়ন আছে। ছোট বলে তো বাড়িতে কখনও সে পাত্তাই পায়নি! আজ দেখাবে দায়িত্ব কাকে বলে? তার শরীরের মাসলগুলো একসাথে কিলবিলিয়ে ঝাকি মেরে উঠল সব। তারপর মেহরাবকে জিজ্ঞেস করল-

-ডাক্তারি পড়ে আবার প্রেম করারও সময় পাস? কত বছরের সম্পর্ক তোদের?

-গুনে দেখিনি।

-এটা গুনে দেখতে হয়! তুই তো প্রেমিক হিসেবে very জঘন্য। দেখি, বিজরীর একটা ছবি দেখা?

-ছবি নেই।

-নেই মানে?

-নেই মানে নেই।

-সত্যি করে বলতো, বিজরীর সাথে সত্যিই তোর এফেয়ার ছিল নাকি সেন্টি খেয়ে এসব করছিস?

-সেন্টি খাব কেন? সত্যিই।

-তুই তো very very জঘন্য প্রেমিক!

-আসলে আমাদের এত মাখামাখি টাইপ প্রেম ছিল না তাই একসাথে কোনো ছবি নেই। ওর ফেসবুক থেকে ২/৩টা ছবি সেভ করেছিলাম কানাডা গিয়ে সেটাও ডিলিট করে দিয়েছিলাম।

-মাখামাখি টাইপ প্রেমটা কেমন প্রেম?

-ওহ ভাইয়া…

-তুই ই তো বললি! আচ্ছা যাক, ফেসবুকের গল্পের মত নায়িকাকে নাহয় বাসর ঘরেই দেখব, আই মিন বিয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে দেখব। তারপর দুই ভাই গুটুর গুটুর অনেক গল্পই করতে থাকে।

ওদিকে সবাই আসবে শুনে সাজেদার মনের মেঘ কাটতে শুরু করে। সজীব যেহেতু সবাইকে নিয়ে আসছে তারমানে সব কিছু ভালোই হবে। আল্লাহপাক তার ছেলের সুখের দিন শুরু করেছে। সব কিছু যেন ভালোয় ভালোয় হয় সেজন্য সে উঠে দ্রুত দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে বসে গেল। এত মানুষ আসবে বলে তাদের আতিথিয়েতার জন্য ফাতেমা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সাজেদা নামাজ পড়ে ফাতেমাকে বলল-

-ভাইসাবকে তো জানানো দরকার?

-তুমি চাচাকে ফোন করো।

সাজেদা সাথে সাথেই ফোন করলেন। জাকারিয়া সাহেব তখন দুপুরের খাবারের পর একটু অলস ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় সাজেদার ফোন আসে। সাজেদা শুধু এতটুকুই জানায় যে, “সজীব আজ সন্ধ্যায় তার পুরো পরিবার নিয়ে বাসায় আসছে। এলে পরিচয় হবার জন্য তাদের সবাইকে নিয়ে আপনাদের বাড়ি আসব।” এটুকু শুনেই বাকিটা জাকারিয়া সাহেব বুঝে নিলেন। তিনি একই সাথে খুশি হলেন আবার এত অল্প সময়ে কীভাবে কী আয়োজন করবেন সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেলেন। দ্রুত বিজরীর মাকে সব জানিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। ওদিকে পাশের ঘর থেকে বাবার কথা শুনে বিজরীর ভুরু জোড়া কুঞ্চিত হয়ে গেল!

চলবে…