#পরিযায়ী_জীবন (পর্ব – ১৪)
মেহরাব নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট আগেই রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে। ও আসার ১৫ মিনিট পর বিজরী উপস্থিত হয়েছে। প্রায় ৮ মিনিট ধরে দুজন মুখোমুখি বসে আছে কেউ কোনো কথা বলছে না। এর মধ্যে ওয়েটার এসে মেন্যু বুক দিয়ে গেছে। সেটা নিয়েও কেউ কিছু বলছে না। কীভাবে কথা শুরু করবে সেটা ভেবে মেহরাব উশখুশ করে যাচ্ছে। আর বিজরী এমনভাবে বসে আছে যেন তাকে মেরেধরে আজরাইলের সামনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, তার এখন “ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি” পড়ার কথা গালগল্প কেন করবে? দুজনে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর ফোন দেখছে। পার হয়ে গেল আরও ৩মিনিট। এমন সময় শুনতে পেল কে যেন জোরে জোরে বলছে, “কিরে এভাবে আর কত? কথা বল? উজবুকের মতো মুখে তালা দিয়ে রেখেছিস কেন? তুই তো আর বোবা বকরি না। নাকি ওর রূপে মুগ্ধ হয়ে তব্দা খেয়ে গেছিস? আরে সেটাও তো বলতে পারিস তাই না?” মেহরাবের মনে হল কথাগুলো তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হচ্ছে আর ভয়েসটাও পরিচিত… ভাইয়ার গলা নাতো! সে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে খুঁজতে লাগল, কে কথা বলে? দেখল এক ভদ্রলোক ফোনে কথা বলছে, পেছন দিকে বসা বলে চেহারা দেখা যাচ্ছে না। মাথায় লাল ক্যাপ আর গায়ে ইয়োলো কালারের টি-শার্ট। নাহ্, এটা ভাইয়া না, কারণ বাসায় এই রঙের কোনো টি-শার্ট নেই। সে সামনে ফিরলে লোকটা আবার বলতে থাকে- “এদিক ওদিক না তাকিয়ে যে কাজে এসেছিস সেটা কর না? নিজে তো পার্টনার নিয়ে বসে আছিস আমি কতক্ষণ বসে থেকে রেস্টুরেন্টের ইট, পাটকেল, চেয়ার, টেবিল গুনব?” মেহরাব তখন কপাল কুঁচকে বিজরীকে বলল-
-কথাগুলো কী আমাদের বলছে?
-কোন কথা?
-ওই লোকটা এত জোরে চিৎকার করে যে কথাগুলো বলছে?
-কী আশ্চর্য, রেস্টুরেন্টে বসে লোকের কথা শুনতে এসেছি নাকি?
-তাহলে চুপ করে বসে আছ কেন? কথা বলতে পারছ না?
-না, পারছি না। আপনি বলুন? ডেকেছেন তো আপনি নাকি আসমান থেকে ওহীবাক্য নাজিল হলে কথা বলবেন সেই অপেক্ষায় আছেন?
-তুমি এমন ঝগড়ুটে হলে কবে থেকে?
-যখন থেকে ঝগড়ুটে লোকের সামনে বসে থাকতে হচ্ছে।
-বাসা থেকে কী মার খেয়ে এসেছ, এমন তেঁতে আছ যে?
-আমি মার খেয়ে আসি আর বগুড়ার দৈ খেয়েই আসি তাতে আপনার কী?
-“আপনার কী” মানে? আমারই তো সব।
মেহরাবের শেষের কথাটায় থমকে গিয়ে বিজরী চুপ হয়ে গেল। মেহরাব তখন বলল- তুমি কী জানো তোমাকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে? একদম মুঘল সম্রাট, সম্রাট আকবরের রাজ-খানসামার হাতে তৈরি স্পেশাল নবাবী সেমাই লাগছে। মনে হচ্ছে এইমাত্র রন্ধনশালা থেকে সুসজ্জিত হয়ে এসে শাহজাদা সেলিমের সামনে বিরাজমান হয়েছে।
-রন্ধনশালা থেকে সুসজ্জিত নাবাবী সেমাইয়ের থালাটা শাহজাদা পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে মাঝখানে প্রাসাদের অন্দরমহল থেকে শাহজাদা সেলিমের আনারকলি সেই থালায় কিঞ্চিত রাসেলস ভাইপারের বিষ মিশিয়ে দিল, এবার?
বিজরী কথাটা শেষ করা মাত্রই পাশের টেবিলে বসা ভদ্রলোকের মুখ থেকে ফুল স্পিডে পানি ফস করে বের হয়ে গিয়ে কাশতে লাগল। তখন মেহরাবের পেছনের টেবিলে বসা হলুদ টি-শার্ট পরা লোকটা উঠে গিয়ে ওই ভদ্রলোকের পিঠে জোরে জোরে থাবা মারতে লাগল। ব্যাপারটা একই সাথে হাস্যকর এবং সন্দেহের মনে হলো মেহরাবের কাছে। এরা আসলে কারা? সে বিজরীকে জিজ্ঞেস করল- তুমি কী এদের চিনতে পারছ?
বিজরী আগেই খেয়াল করেছে এরা কারা কিন্তু কিছু বলছে না, বলবেও না। মেহরাব উল্টো দিকে বসা বলে ও ভালোমতো দেখতে পারছে না তাই বুঝতেও পারছে না। নিজের ভাইদের চিনতে পারছে না আশ্চর্য! বলল- এরা কারা আমি কী করে বলব? আমি আপনার মত অন্যের কথা শুনছি না বসে বসে।
মেহরাবের ধারণা তার ধারণা সত্যি। হলুদ টি-শার্ট ভাইয়া আর অন্যটা মিরাজ ভাই। ১০ মিনিটেই অলরেডি দুজনে রেস্টুরেন্টে আসা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছে চিৎকার চেচামেচি করে। বাকি সময়ে কী করবে কে জানে? – যাকগে, সে বিজরীর দিকে ফিরে আগের কথা ধরে বলল- ওটা যদি শাহজাদা সেলিমের আনারকলি হয় তাহলে বিষও মঞ্জুর।
বিজরী আর কিছু বলল না। মেহরাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল- তুমি বড্ড রূঢ় আচরণ দেখাচ্ছ। যেটা তুমি ঠিকঠাক দেখাতেও পারছ না। এই যে তুমি আমার কথা ভেবে যেভাবে বলেছি সেভাবে এসেছ এটা তো ভালোবাসা থেকেই তাই না?
বিজরী কিছুক্ষণ সময় নিল কথা গুছিয়ে নিতে তারপর বলল- আমি আসতে চাইনি। মা জোর করে পাঠাল সেই সাথে এই শাড়িটাও পরতে বাধ্য করেছে।
-ও… তাই নাকি! মেহরাবের প্রচন্ড মন খারাপ হলো। বলবার মত আর কোনো কথাই খুঁজে পেল না। এমন সময় পাশ থেকে ওই হলুদ টি-শার্ট পরা লোকটা আবার ফোনে চেঁচিয়ে উঠল- আরে গাধা এগুলা সব মিথ্যা। তুই কী খেয়ে এত বড় ডডড…ইয়ে হয়েছিস হ্যাঁ? একটু চোখ কান খুলে বোঝার চেষ্টা কর, ও এগুলো সব মিথ্যা বলছে। ধুর… আমারই মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে। আরে, থিংক গাধা থিংক।
মেহরাবের এবার শিওর হলো কথাগুলো তাকে বলা হচ্ছে এবং ভয়েস বলছে এটা মাহাদী ভাইয়া! একি যন্ত্রণা… সে কী উঠে গিয়ে দেখবে একবার? কিন্তু ও কিসের মিথ্যার কথা বলল? ওর ভাবনার মাঝেই বিজরী বলল-
-আমি বাসায় যাব।
মেহরাব তখন চট করে খটকাটা ধরতে পারল মনে হলো। বলল- আগে বসো, তারপর বিজরীর মাকে ফোন দিল। সালাম দিয়ে বলল- আন্টি বিজরীকে কী আপনি জোর করে এখানে পাঠিয়েছেন?
-“এখানে” কোথায় পাঠাব? ও তো বলল একটু বের হচ্ছে কী যেন কাজ আছে।
-মেহরাব মুচকি হেসে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে বলল- কী এমন কাজ যে আপনি তাকে শাড়ি পরে বের হতে বাধ্য করলেন?
-শাড়ি? কই আমি তো ওকে এসব কিছুই বলিনি! তাছাড়া আজকাল ও কারো সাথে কথা বলে? না শোনে? কিন্তু তুমি এসব বলছ? কোথায় ও?
মেহরাব তখন বিজরীর দিকে তাকিয়ে বলল- তুমি কোথায় আছ সেটা আন্টিকে আমি বলব নাকি তুমি বলবে?
বিজরী মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। মেহরাব হেসে বলল- আন্টি আপনার মেয়ে আমার সামনে বসে আছে।
-ও… ওকে তাহলে জিজ্ঞেস করো মিথ্যে কেন বলেছে?
-জিজ্ঞেস করব, এখন তাহলে রাখি। সে ফোন রেখে বলল- আন্টির কথা শুনলে তো, এবার বলো?
বিজরী চুপ করেই রইল। মেহরাব তখন বলল-
-দেখো, আমরা এখানে কেন এসেছি, আমরা কী চাইছি, বড়রা আমাদের নিয়ে কী চাইছে তা সবই তোমার জানা তাহলে সমস্যাটা কোথায় তোমার? তুমি কেন এমন অদ্ভুত আচরণ করছ?
বিজরী হতাশ গলায় বলল- দেখুন, আমি কী করছি, কী চাইছি কিছুই বুঝতে পারছি না। সারাটাক্ষণ তীব্র আতংক আমাকে জাপ্টে ধরে রাখে। অন্তর দ্বন্দে প্রতিনিয়তই আমি পিষে যাচ্ছি। কী করতে পারি আমি?
মেহরাব বিজরীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল- আমি আছি তো। আমাকে ভরসা করে দেখো শুধু?
বিজরীর চোখে তখনো দ্বিধা! হাতটাও ছাড়িয়ে নিতে চাইছে… মেহরাব হতাশ হয়ে হাতটা ছেড়ে দিতে যাচ্ছিল আর তখনই ফোন এলো ফাতেমার। মেহরাবের সাথে সাথেই মনে হলো “আম্মা!” সে দ্রুত ফোন ধরে জিজ্ঞেস করে- কী হয়েছে বুবু?
-তুই কোথায়? আম্মার অবস্থা ভালো না… বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
-আমি এক্ষুণি আসছি। বলেই ফোন কেটে সে দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স কল করল। তারপর বিজরীকে বলল- চলো উঠতে হবে।
-কী হয়েছে?
মেহরাব থেমে ওর দিকে একবার তাকালো বলল- চলো আমার হাতে একমুহূর্ত সময় নেই। বলেই সে হনহন করে বেরিয়ে গেল। বিজরী খেয়াল করল মেহরাব ড্রাইভ করছে আর বার বার চোখ মুছে যাচ্ছে। কী হলো ওর?
সাজেদা সুলতানাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। মেহরাব বড় ডাক্তার হওয়ায় নিজেই দৌড়াদৌড়ি করে দ্রুত ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিতে পারল। সাজেদাকে এখন ICU তে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ২৪ ঘন্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই ২৪ ঘন্টাও যে কোনো আশা নিয়ে শেষ হবে তেমন কোনো সম্ভাবনার কথা ডাক্তার বলতে পারছে না। মেহরাব ছোটাছুটি করে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে আম্মা এইমুহূর্তে অনেকটা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে। কী হবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। প্রতিটা মুহূর্ত যেন আম্মাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতেই ব্যস্ত! তার বোন দুটোর দিকেও তাকানো যাচ্ছে না। বিজরী ওদের পাশেই আয়রাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছায়ার মতন। সাগর আর মিরাজ ওদের সান্তনা দিতে দিতে ক্লান্ত। মেহরাব ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওদের কাছে এসে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। তার শরীর মন কোথাও একরত্তি জোর নেই। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই কারো। তার খুব অসহায় লাগছে। এইমুহূর্তে একটা ভরসার স্পর্শ ওর খুব দরকার।
বিজরী মেহরাবের দিকে তাকিয়ে আছে… সে আয়রাকে ফারজানার কোলে দিয়ে মেহরাবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বিজরীর দিকে তাকিয়ে মেহরাবের ভেতর থেকে তীব্রভাবে কান্নাটা সশব্দে উঠে আসতে চাইল। সে চোখ ফিরিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগল কান্নাটাকে সামলে নিতে। বিজরী তখন সমস্ত পৃথিবীকে উপেক্ষা করে মেহরাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মেহরাব কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারল না। ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। বিজরী ওকে ফিসফিস করে বলতে লাগল- কিচ্ছু হবে না আম্মার, কিচ্ছু না।
প্রায় ১৩ ঘন্টা পর পরদিন ভোরবেলা সাজেদার জ্ঞান ফেরে। ডাক্তার যেখানে কোনো আশার আশ্বাস দেয়নি সেখানে এটা অনেকটা মিরাকল যেন। তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মেহরাব ফাতেমাকে বাদে বাকি সবাইকে রাতেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। ফারাবি আর ফাইয়াজকে বাসায় মাহাদী সামলাচ্ছিল। সাজেদার এই অবস্থার কথা মাহাদী তার বাসায় সবাইকে জানিয়েছে। মেহেরুন্নেসা আর হাসান সাহেব ফোনে খোঁজ রাখছিলেন। সকাল বেলা তারা দুজন হাসপাতালে চলে এসেছেন।
দুপুর নাগাদ সাজেদাকে কেবিনে শিফট করা হয়। তাকে সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে বলা হয়েছে। মেহরাব পুরো সময়টাই হাসপাতালে মায়ের কাছে রয়েছে। তার জন্য ফাতেমার দুপুরের খাবার নিয়ে আসার কথা এখনও আসেনি। সাজেদা ঘুমুচ্ছে আর মেহরাব মায়ের পাশে বসে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে পড়ে যাচ্ছে- “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা” এমন সময় খুব আস্তে দরজায় শব্দ হয়। মেহরাব উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বিজরী এসেছে। মেহরাব দরজা ছেড়ে দিয়ে বলল-
-তুমি? বুবু কোথায়?
বিজরী খাবারের ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল- বুবু সারা রাত জেগেছে, এত টেনশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তার নিজের শরীরটাও ভালো রাখার দরকার আছে। ছোট আপাও এতগুলো বাচ্চা একা সামলাচ্ছে তাই ভাবলাম…
মেহরাব বিজরীর দিকে তাকিয়ে ছিল। কেবিনটা বেশ বড়, সে বিজরীকে নিয়ে বিছানার অপর পাশের সোফায় গিয়ে বসল। বলল-
-তুমি কেন এত কিছু ভাবছ বা করছ?
-মানুষ মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবে এর জন্য এত কিছু ভাবাভাবির কী দেখলে?
-তুমি নিজেও জানো এগুলো কেন করছ শুধু স্বীকার করতেই যত সমস্যা।
বিজরী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেহরাবের দিকে তাকায়। মেহরাব বলল- অনুভূতি নেই বলে তুমি তোমার মনকে সারাক্ষণ শিখিয়ে যাচ্ছ অথচ অনুভূতি কখনও চেপে রাখা যায় না, এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবেই এটা তোমার ভালো করেই জানা। এই যে আমার পরিবারের সবার খেয়াল রাখছ, না বলতেও আমার প্রয়োজন বুঝে যাচ্ছ এটাকে কী বলে বলতো?
-প্রতিবেশী হিসেবে এগুলো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর মাঝে অন্য কিছু খুঁজতে যেও না।
-আচ্ছা? ওকে, মানলাম। ধরো, তোমাদের বাড়ির কোনো ভাড়াটিয়া আন্টি এরকম মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলো। মায়ের জন্য তার ছেলেটার অবস্থাও আমার মত হয়ে গেল… তুমি কী তাকেও এভাবে জড়িয়ে ধরবে? উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে তার ভরসা হবে? তার প্রতি তোমার তীব্র ভালোবাসা প্রকাশ করবে ?
বিজরী বিরক্ত গলায় বলল- এসব কী কথা নিয়ে পড়লে? ঠিক আছে কিছু করাটা ভুল হয়েছে আমার, চলে যাচ্ছি আমি। বলেই উঠে দাঁড়াল আর মেহরাব সাথে সাথেই ওর হাত ধরে ফেলে বলল- কী হলো, সত্য হজম হলো না?
-হাত ছাড়ো।
-বসো, কোত্থাও যাবে না। আমার খাওয়া শেষ হবে তারপর যাবে।
বিজরী দাঁড়িয়েই রইল। মেহরাব তখন জোর গলায় বলল- কী হলো বসতে বললাম না? বিজরী বসল।
মেহরাব প্লেট নিল খাওয়ার জন্য। বলল- প্লেট একটা কেন?
-আর কে খাবে?
-তুমি খাবে।
-আমি খেয়ে এসেছি।
-হাস্যকর লাগে এমন মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
বিজরী কোনো কথা বলল না। তার সব কথাই তো ধরা পরা আসামী হয়ে যাচ্ছে। মেহরাব প্লেটে খাবার নিতে গিয়ে বুঝতে পারছিল না কোথা থেকে কী বাড়বে। বিজরী সেটা খেয়াল করে ওর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে খাবার বাড়তে লাগল। মেহরাব তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল- কেমন যেন মনে হচ্ছে…
বিজরী ওর দিকে তাকিয়ে বলল- কী কেমন মনে হচ্ছে? খাবার?
-না, অন্য কিছু।
-কী?
-তোমাকে কেমন বউ বউ লাগছে…
-মানে কী?
-এই যে আমার পছন্দের খাবার এনেছ, বেড়ে খাওয়াচ্ছ, আবার…
-আবার?
মেহরাব ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেই বলল- তুমি আমাকে আগের মত “তুমি” করে বলতে শুরু করেছ।
বিজরী চমকে উঠল, তাই তো! সে তো খেয়ালই করেনি এটা। বলল- খাবার সময় এত কথা বলতে নেই মানুষ সেটাও জানে না, আশ্চর্য। প্লেটটা ওর সামনে রেখে সাজেদার বিছানার পাশে একটা চেয়ার রাখা সেখানে গিয়ে বসল।
মেহরাব খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল- ভালো খাবার একা খাওয়া যায় না। তারপর বিজরীর দিকে তাকিয়ে বলল- খিদে পেয়েছে কিন্তু… তুমি আসবে নাকি আমি উঠে যাব? বিজরী তারপরও কিছু বলল না। মেহরাব উঠে আসতে চাইল বিজরী তখন বলল- উঠতে হবে না আসছি। তারপর বিড়বিড় করে বলল- সব সময় জেদ, সে যা বলবে তাই করতে হবে। মেহরাব মুচকি হেসে বলল- মিনমিন করে কিছু বলার দরকার নেই, আমি বুঝতে পারি কী বলছ। তারপর দুজন একসাথে খেতে বসে। প্লেট একটা হওয়ায় বিজরী একটা বাটিতেই খাবার নেয়। মেহরাব খেতে খেতে বলে- খাবার ভালো হয়েছে। রাঁধুনির একটা পুরস্কার পাওনা রইল।
চলবে…