#পরীজান
#পর্ব ৫৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
শুভ্র মেঘ সরে গিয়ে গগনে কালো আধার নেমে এসেছে। তপ্ত গরমের প্রকৃতি মুহূর্তেই বাতাসে ভরে গেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ আর ধুলো বালি উড়ছে। এই নির্মল বায়ু তাদের কোথায় নিয়ে থামাবে তা তাদের জানা নেই। তারা শুধু ছুটছে। পরী জানালা দিয়ে তা অনেকক্ষণ যাবত দেখে চলছে। ওর জীবনটাও বোধহয় এরকম গন্তব্যহীন। ভালোবাসার পিছন পিছন সেই থেকে ছুটে আসছে সে। কিন্ত এর গন্তব্য কোথায় তা জানে না পরী। তার এসব ভাবনার মাঝেই আকাশ ভেঙে বারিধারা নেমে এল ধরণীতে। স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তাটা ভিজিয়ে দিতে লাগল। মানুষ গুলো ছুটোছুটি করে একটুখানি আশ্রয়ের জন্য। যাতে তারা এই বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে পারে।
জানালার পাশেই দাঁড়ানো পরী। বৃষ্টির ছিটা তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। তবুও সরে দাঁড়াচ্ছে না পরী। তার বড্ড ভাল লাগছে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরী যদি নিজ ইচ্ছাতে না সরে দাঁড়ায় তাহলে ওকে সরানোর কেউ নেই। শায়ের ব্যতীত এই ঘরে কেউ আসে না। এমনকি নাঈম ও নয়। পরীর মুখে তার অতীত শুনেছিল যেদিন সেদিনই নাঈমের সাথে পরীর শেষ দেখা ছিল। এর পরে ওদের সাথে দেখা হয়নি। নাঈম ই সরে এসেছে। পরীর হাতের পত্র খানা ভিজে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে একটা হাত ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে। হতবাক হয় না পরী। শুধু ভেজা নয়ন জোড়া মেলে ধরে শায়েরের পানে। ঠান্ডায় ভেজা ঠোঁট জোড়াও কাপছে ওর। শায়ের দ্রুত গামছা এনে পরীর শরীর মুছে দিতে দিতে বলতে লাগল,’নিজের অযত্ন কেন করছেন পরীজান? এভাবে ভিজলে আপনার শরীর খারাপ করবে। এই সময়ে একটু সাবধানে থাকবেন তো!’
শান্ত চোখে শায়ের কে দেখতে লাগল। একটা মানুষের ঠিক কত রূপ থাকতে পারে তা দেখছেন পরী। সে বলে ওঠে,’সাতাশ নাম্বার চিঠিটা আমি পেয়েছি।’
শায়েরের হাত আপনাআপনি থেমে যায়। ক্ষীণ নজড়ে পরীকে সে দেখতে লাগল। খুব গোপনে সে আর নাঈম মিলে চিঠি গুলো লুকিয়ে রেখেছিল যাতে পরীর হাতে না পড়ে। আজকে অসাবধানতার বসে পরীর হাতে তা পড়েই গেছে। দু মাস যাবত ছাব্বিশটা চিঠি পাঠিয়েছে রুপালি। যা শায়ের আড়াল করে রেখেছিল। আর আজ তাকে জবাব দিতে হবে। পরী শায়েরের বাহু আকড়ে ধরে বলল,’আমাকে কেন মেরে ফেললেন না আপনি? তাহলে তো আমাকে এত কিছু দেখতে হত না। নিজের বাবার বিকৃত রূপ টাও দেখতাম না। কিছু না জেনেই ম*রে যেতাম। খুব ভাল হত তাহলে।’
শায়ের পুনরায় পরীর শরীর গামছা দিয়ে মুছে দিতে লাগল,’আপনি মৃ*ত্যুকে সহজ ভাবলেও মৃ*ত্যু কিন্ত
এত সহজ নয়।’
-‘আমাকে মারা তো সহজ ছিল। তাহলে আমাকে কেন মারতে পারল না কেউ?’
শায়ের মৃদু হাসে,’আপনাকে হত্যা করা ততটা সহজ ছিল না যতটা আপনি ভাবছেন। আপনার বাবা অন্দরে আপনাকে মা*রতে পারত না। কেননা আপনার অনুমান প্রখর ছিল। অন্দরে কোন পুরুষ পা রাখলেই আপনি তা অনায়াসে ধরে ফেলতেন। চার পাঁচ জনের সাথে লড়াই করা আপনার কাছে কিছুই না। তার চেয়ে বড় কথা হল আপনার বাবা চায়নি আপনি সব জানুন। তবে আমি সবসময় পেছন থেকে আপনাকে রক্ষা করে গেছি। সেজন্য আপনাকে মা*রাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
-‘কেন রক্ষা করেছেন আমাকে? আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই আমার।’
-‘কিন্তু আমার আপনার সাথে বেঁচে থাকার ইচ্ছা আছে।’
-‘এতগুলো চিঠি আপনার কাছে এসেছিল অথচ আপনি একটাবার আমাকে জানালেন না?’
-‘আপনার কষ্ট হবে ভেবেই জানাইনি।’
-‘এখন বুঝি আমার খুব ভাল লাগছে? আমি কি সুখে আছি খুব?’
শায়ের জবাব দিল না। আলমারি থেকে শাড়ি এনে পরীর হাতে দিয়ে বলে,’শাড়িটা বদলে ফেলুন নাহলে ঠান্ডা লাগবে আপনার।’
-‘রুপা আপা যে নূরনগর ফিরে এসেছে সেটা তো বলতে পারতেন? আমার আম্মা যে সেখানে ভাল নেই সেটা তো বলতে পারতেন? এতটা স্বার্থপর কেন হলেন?’
এবার বিন্দু বিন্দু রাগ দেখা দিল শায়েরের চোখে। কিন্ত পরীর সামনে সে প্রকাশ করল না। কেননা পরীজানের জন্য শুধু ভালোবাসা আছে। তাই সে বলে,’দুনিয়াটা এমনই,একজনের কাছে ভাল হতে গেলে অন্যজনের কাছে বেঈমান স্বার্থপর হতে হয়। আমি স্বার্থপর হয়েছি। আপনার ভালোর জন্য আমি পুরো পৃথিবীর কাছে স্বার্থপর হতে প্রস্তুত।’
রাগ বেড়ে গেল পরীর। দুহাতে চেপে ধরল শায়েরের পাঞ্জাবির কলার,’আপনার ভালোবাসা আমার কাছে এখন বিষাক্ত ধোঁয়া মনে হচ্ছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমি তো একা ভাল থাকতে চাই না। আমি সবার সাথে ভাল থাকতে চাই।’
-‘কিন্তু আমি শুধু আপনার সাথে থাকতে চাই। আপনার আর আমার মাঝে কাউকে চাইনা।’
শায়ের পরীকে জড়িয়ে ধরতে গেলে পরী ধাক্কা দিল শায়ের কে,’ভালোবাসা আপনাকে অন্ধ করে দিয়েছে। পাগল হয়ে গেছেন আপনি।’
-‘পরীজান আপনি শান্ত হন।’
-‘কি শান্ত হব আমি? ওখানে আমার পরিবার বিপদে আছে আর আমি শান্তিতে আপনার সাথে সংসার করব? আপনি ভাবলেন কীভাবে?’
-‘আপনার বাবা ওদের কোন ক্ষতি করবে না। ওদের ক্ষতি করে আপনার বাবার কোন লাভ হবে না।’
-‘আপনি বের হয়ে যান। আমাকে একটু একা থাকতে দিন।’
পরীকে কিছুক্ষণ নিষ্পলক ভাবে দেখে বের হয়ে গেল শায়ের। বের হতেই নাঈমদের মুখোমুখি হয় সে। নাঈম এতক্ষণ সবই শুনছিল। সে শায়ের কে বলে, ‘চিন্তা করবেন না সব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।’
বিপরীতে কথা বলে না শায়ের। নাঈম আবার বলে, ‘পরীর মতো আমারও একটা প্রশ্ন? পরীর বাবা তো ক্ষমতাশীল। এক্ষেত্রে পরীকে হ*ত্যা করা আমার মতে সহজ ছিল। আপনি পরীকে সবসময় রক্ষা করেছেন। কিন্ত বিয়ের আগে??’
নাঈম সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই বুঝে গেল শায়ের। সে বলে উঠল,’আমার পরীজান সে। তার গায়ে কোন আঘাত পেতে আমি এত সহজে দেব? আপনি হয়ত জানেন পরীজানের ব্যাপারে। তবে জমিদারের পূর্ব পুরুষদের নিয়ম ছিল অন্দরে যেন কোনরকম রক্তারক্তি না হয়। কিন্ত পরীর বাবা সেই নিয়ম ভঙ্গ করে নিজ মেয়েকে হ*ত্যা করতে লোক পাঠায়। কিন্ত তার জানা ছিল না যে পরীজান আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মত নয়। লড়াই করার সাহস আর শক্তি দুটোই আছে। প্রতিটা পদে পদে আড়ালে আমি পরীজানের ঢাল হয়ে ছিলাম। আর এখন প্রকাশ্যে ঢাল হয়ে দাঁড়াব।’
-‘ভাগ্যের জোরে এতদিন পরীকে বাঁচিয়েছেন আপনি। আর কতদিন বাঁচাতে পারবেন জানি না। তবে আমি আপনার আর পরীর সাথে আছি।’
-‘আমাদের সাথে থেকে নিজেকে জীবন বিপদে ফেলবেন না। আপনি যতটুকু করেছেন ততটুকুই যথেষ্ট।’
-‘তাহলে আপনি এখন কি করবেন? নূরনগরের যাবেন কি?’
-‘নাহ।’
-‘দেখুন রুপালি অনেকবার করে বলেছে আপনি যেন একটাবার সেখানে যান। নিজের জন্য ডাকেনি সে। তার ছেলে পিকুলের ভাল একটা ভবিষ্যতের জন্য ডেকেছে। জমিদারের অত্যাচার ওনারা সবাই সহ্য করতে পারবেন কিন্ত ছোট ছেলেটার তো ভবিষ্যত আছে নাকি?’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়ের,’আমার সন্তান পৃথিবীর আলো না দেখা পর্যন্ত আমি এক চুল ও নড়ব না। আমার কাছে সবার আগে আমার পরীজান।’
সকালে হতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে শায়ের। গত কাল রাতে সে নাঈমের সাথে ঘুমিয়েছে। পরী বারণ করেছে বিধায় আর ওর ঘরে যায়নি। তবে সকাল হতেই পরীর ঘরে উঁকি দিতে ভোলে না সে। আশ্চর্যের ব্যাপার যে পরী ঘরে নেই। ভয়ে শায়ের কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে দ্রুত নাঈম কে ডেকে তুলল। দুজন মিলে রাস্তায় বেরিয়ে গেল তখনই। অলি গলি
খুঁজতে থাকে ওরা। পরী কখন বের হয়েছে কতক্ষণ ধরে বের হয়েছে তা অজানা। শায়ের এদিক ওদিক দৌড়াতে দৌড়াতে পাগল প্রায়। লোকজনের ভিড় ঠেলে সে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর একেকজন কে জিজ্ঞেস করছে পরীর ব্যাপারে। নাঈম অন্যদিকে খুঁজছে।
তবে বেশিক্ষণ খুঁজতে হল না পরীকে। রাস্তার একপাশে বেঞ্চিতে বসে আছে পরী। কোন টাকা পয়সার নেই ওর কাছে। তাই এখান থেকে বেশি দূর
যেতে পারেনি। তাছাড়া পরীর পক্ষে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্লান্ত দেহটা আর টেনে নিতে পারল না। ধপ করে বেঞ্চের উপর বসে পড়ল। তার কিছুক্ষণ বাদেই শায়ের হাঁপাতে হাঁপাতে চলে এল সেখানে। অবাক হল না পরী। সে জানত এম কিছুই হবে। শায়েরের দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল সে। শায়ের পরীর পাশে বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিল। অনেক দৌড়েছে সে। পরীর পাশে বসে সে বলে ওঠে,’চলুন।’
বলেই পরীর হাত ধরে শায়ের। কিন্ত পরী হাত টা ছাড়িয়ে নেয়। বলে,’আমার বড় বোন মারা যাওয়ার অনেক গুলো বছর পর জানতে পারি তাকে হ*ত্যা করা হয়েছিল। তারপর আমার বিন্দু খু*ন হল। সাথে সম্পান মাঝিও। কিন্ত তাদের কারো বিচার হল না। আমার রুপা আপার জীবনটাও যাতাকলে পড়ে গেছে। আর আম্মা!! ওদের সবার শান্তির নীড় একমাত্র আমি। আর আমার শান্তি আপনি। আপনি কেন বুঝতেছেন না তাহলে? আমি কেন একটু শান্তি চাই!!’
-‘কেমন শান্তি চান আপনি? আপনার শত্রুদের হত্যা করে শান্তি পেতে চান? কিন্ত এখন তা সম্ভব নয়। পরীজান আমাদের সন্তানের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। আপনি মা হবেন আর আমি বাবা। এই সুখের জন্য আপনি কম চোখের জল ফেলেন নি। আপনার কথা আল্লাহ শুনেছেন। এই সুখকে ফিরিয়ে দেবেন না পরীজান ফিরে চলুন আমার সাথে।’
এই পুরুষটির সামনে নিজের কঠোরতা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না পরী। অশ্রুজলে ভাসে কপোলদ্বয়। যে পুরুষ ঠকায় তাদের চোখে অদ্ভুত মায়া আছে যা নারীরা সহজে কাটাতে পারে না। শায়েরের চোখে ঠিক তেমনি মায়া আছে যা পরীর কঠোরতা ভাঙার জন্য যথেষ্ট। কিন্ত শায়ের তো ঠকানোর পরেও পরীকে সমানতালে ভালোবেসেছে।
আজকে দ্বিতীয়বারের মতো ওর অনাগত সন্তানের কাছে হেরে গেছে পরী।
তাই তো সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সে শায়েরের সব কথা মেনে নিয়েছে। সব কিছু মেনে সে নাঈমের বাসায় থেকেছে। মনের সব কষ্ট চেপে সে হাসিমুখে জন্ম দিল এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের। অবিকল মায়ের মতোই হয়েছে সে। শায়েরের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্তান তুলে দিল ওর হাতে। পুত্রের কানে আযান দিল শায়ের। খুশিতে মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল তার। পদ্ম পাতার জলের ন্যায় ক্ষণস্থায়ী হলো সে খুশি। শোভনের বয়স চার মাস হওয়ার পরই বুয়ার কাছে শোভন কে রেখে পরী আবারও হারিয়ে গেল অজানায়। বুয়ার কাছে একটা চিঠি দিয়ে গেল। সে যেন চিঠিটা শায়ের কে দেয়।
বহুদিন পর নূরনগরে পা রাখে পরী। কিন্ত এখনও আগের মতোই আছে গ্রামটা। কিছুই পরিবর্তন হয়নি। পথে রাস্তার ধারের কদম গাছের দিকে তাকাল সে। সুখান এখনও সেখানেই বসে আছে। সোনালীর কবরের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে পরী সামনের দিকে এগোয়। প্রতিটা পদে পদে পরীর অতীত মনে পড়ছে। পশ্চিম জঙ্গলের দিকে তাকাতেই সেই লৌহমর্ষক ঘটনার কথা মনে পড়ল। বিন্দুকে পরী কোনদিন ভুলবে না। সম্পান মাঝি খারাপ ছিল কিন্ত সেও ভালোবেসেছিল বিন্দুকে। ভালোবাসা খারাপ মানুষকেও ভাল পথে নিয়ে আসে। কিন্ত মালা?? মালা ব্যর্থ হয়েছে নিজ ভালোবাসায় স্বামীকে আটকাতে।
পরী ভাবছে আর হাটছে। না জানি কোন অবস্থাতে বাড়ির সবাই রয়েছে? পথে যেতে যেতে অনেক পরিচিত মুখ ভেসে আসে। সম্পানের মা রাঁখি কেও দেখল। কেমন পাগলের মত চেহারা খানা হয়েছে তার। ক্ষেতের ভেতর থেকে শাকপাতা তুলছে সে। ইন্দু কেও দেখল মহেশের হাত ধরে বাজার থেকে ফিরছে। লখা পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা করছিল।বাবা আর দিদিকে দেখে সেও ছুটল। পরী ভাবল সবাই কি পেছনের কথা ভুলে গেছে? মনে থাকলে এত হাসিখুশি সবাই থাকতে পারত কি? কিন্ত পরী তো কিছু ভুলতে পারছে না! ভাবতে ভাবতে পরী পৌঁছে যায় জমিদার বাড়ির সামনে। ভেতরে ঢুকতে বুক কাঁপে না পরীর। একটুও মৃত্যুর ভয় সে না করে বিনা বাক্যে প্রবেশ করে সে।
#চলবে,,,,
#পরীজান
#পর্ব ৫৬
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
সিমেন্টে আবৃত সোনালীর খাতাটায় কলম চালাচ্ছে পরী। গতকাল থেকে এসেই সে লিখছে। চার দেয়ালের ভেতর থেকে সে প্রয়োজন ব্যতীত একবারের জন্যও বের হয়নি। তার আর শায়েরের ভালোবাসার প্রতিটা মুহূর্ত তুলে ধরছে সে। যেমনটা সোনালী তার রাখালের প্রতি অনুভূতি তুলে ধরেছিল। পরী খাতাটায় কিছু লিখত না যদি রুপালির লেখা দেখত। সিরাজের প্রতি ভালবাসা যে এখনও ওর রয়ে গেছে। যা দেখে ঘৃণা হল পরীর। তবুও তা ভালবাসা। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিটাও কারো না কারো প্রিয়। তাকেও কোন নারী নিঃসন্দেহে ভালবাসে। রুপালি সিরাজ কেও সে তালিকায় রেখেছে বলেই এখনও ভালবাসে। তবে ভালবাসা সত্ত্বেও রুপালি সিরাজকে শাস্তি দিয়েছে।
রুপালি ওই খারাপ মানুষটিকে সত্যিই খুব ভালোবেসেছিল। কিন্ত কপালে ওর সুখ ছিল না।
পরী বেশি কিছু লিখল না। তার লেখা শেষ করে বই খাতার মাঝে চাপা দিল খাতাটা।
কালকে জমিদার বাড়ির আঙিনায় আসতেই সবার পরিবর্তন পরীর চোখে পড়ল। তবে আফতাব আর আখির কে সে দেখল না। বাড়িতে এসে সে জানতে পেরেছে চিঠি গুলো রুপালি ইচ্ছাকৃত ভাবে লেখেনি তাকে জোর করে লিখিয়েছে আখির। নাহলে মালার ক্ষতি করে দেবে সে। পরী বুঝল যে শায়ের এসব বুঝতে পেরেই কোন প্রতিক্রিয়া করেনি। পরী বুঝতে পারেনা কেন এতো মিথ্যার পর্দা চারিদিকে ছড়িয়ে আছে? কেন এই সুন্দর প্রকৃতিও সত্য বলে না? এসব ভাবতে লাগল পরী। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না সে ভাবনা। মালার ডাকে বের হয়ে এল সে। উঠোনে আসতেই বাকি সবাই কে একসাথে দেখতে পেল সে। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে এগিয়ে গেল সে। বলল,’সব গুছিয়ে নিয়েছো সবাই?’
মালা নিজের হাতের ব্যাগটা মাটিতে রেখে বলে,’সব গোছাইছি। আর দেরি করিস না পরী। চল যাই।’
পরী সবাইকে নিয়ে অন্দর পেরিয়ে বৈঠকে গেল। কিন্ত সেখানে পৌঁছাতেই রক্ষিরা ওদের পথ আটকাল। পরী তাদের কিছু না বলে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পরীও চাইছিল আফতাবের মুখোমুখি হতে। তাই ওরা অন্দরে ফিরে এল। সারাদিন অন্দরের উঠোনে বসেই কাটিয়ে দিল সবাই। কুসুমের চোখে মুখে আতঙ্ক। সে বলে ওঠে,’আপা আমার ডর করতাছে। আপনের বাপে আমাগো যাইতে দিব না।’
-‘তুই চুপ থাক করে থাক কুসুম। আজকে ওই লোকটার সাথে আমার শেষ বোঝা পোড়া।’
জেসমিন কাচুমাচু হয়ে এক কোণে বসে আছে। পরীর সাথে সেও জমিদার বাড়ি ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে গৃহে শান্তি নেই সে গৃহ বসবাসের অযোগ্য। তাই পরীর এক কথায় মালা,জেসমিন, কুসুম শেফালি ও রুপালি বাড়ি ছাড়তে রাজি হয়। তারা সবাই অতিষ্ঠ। মালা বুঝতে পারে না হঠাৎই পরী এই সিদ্ধান্ত নিল কেন? হয়তো পরীর পরিকল্পনায় ভ*য়া*বহ কিছু আছে। যা সম্পূর্ণ করার আগে ওদের সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে চাইছে। মালা নিজেও ধৈর্যহীন হয়ে গেছে। তাই পরীর ভরসায় সব ছাড়তে চাইছে। কিন্ত আফতাব কি বলবে? আদৌ কি ওদের যেতে দিবে? নাকি পরীর উপর আবার হামলা করবে? এসব চিন্তাতে সারাদিন গেল সবার। বিকেলের দিকে আফতাব আখির দুজনেই এলো। তারা আগেই খবর পেয়েছে যে পরী জমিদার বাড়িতে ফিরেছে। দূর গ্রামে একটা কাজে গিয়েছিল তারা তাই আসতে দেরি হয়েছে। দুই ভাই তৈরি হয়েই এসেছে। পরী স্বাভাবিক ভাবেই উঠে দাঁড়াল। আফতাব বলল, ‘তাহলে আবার ফিরলে তুমি!! তো এবার কাকে মা*রতে এসেছো?’
-‘আমি কাউকে মা*রতে আসিনি। আমি সবাইকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাদের থেকে অনেক দূরে চলে যাব আমরা।’
আফতাবের পরিবর্তে আখির জবাব দিল,’তাহলে গ্রামের লোকজন কি বলবে? কি বলব সবাইকে?’
মুহূর্তেই পরীর চোখে রাগ দেখা দিল,’আপনি চুপ থাকবেন নাহলে আমার পরিকল্পনা বদলে যেতে পারে। আপনার উপর আমার নজর পড়লে আপনারই বিপদ।’
অতঃপর আফতাবের দিকে তাকিয়ে বলে,’আমি কোন শ*ত্রুতা করতে আসিনি। একজন পিতা তার কন্যাদের হ*ত্যা করতে চায় তা আমি এই প্রথম আপনাকে দেখলাম। যাই হোক আমি সবাইকে নিয়ে যেতে এসেছি। আমি চাই আপনি আমাদের যেতে দিন। আর কখনো এই গ্রামে আমরা পা দেব না।’
-‘ভাই পরীর কথা শুনবেন না। ও এখন সবাইকে সারিয়ে নিচ্ছে যাতে পরে আমাদের উপর আ*ক্র*মণ করতে পারে। আমি সব বুঝতে পারছি। পরী তুই একবার যখন আমাদের জালে এসে পড়েছিস তাহলে তোকে আমরা যেতে দিব না। দিনের বেলা দিবা স্বপ্ন দেখিস না তুই।’
পরী হেসে গিয়ে বারান্দায় বসল। আফতাব আখির কিছুই বুজল না পরীর এহেম কান্ডে। আফতাব দেখল পরী ব্যতীত সবাই যার যার ঘরে চলে গেছে। এতেও আফতাব অবাক হল তবে তা আমলে নিল না। সে পরীকে বলে উঠল,’তুমি যদি এখানে না আসতে তাহলে তোমাকে খুঁজে বের করতাম। এখন দেখি তুমি সহজেই ধরা দিয়েছো?’
আফতাবের কথায় পরী চোখ তুলে তাকাল বলল, ‘আমি কি সত্যিই আপনার মেয়ে? নাকি আপনিও আপনার ভাইয়ের মতো!!’
হুঙ্কার ছাড়ে আফতাব,’মুখ সামলে কথা বলো পরী?
তোমার ভয় হচ্ছে না। আজ তোমাকে কঠিন মৃত্যু দেব আমি!’
-‘আপনার ভাইকে তো আমি অকেজো বানিয়েছি কিন্ত আপনার এই অবস্থা কে করল?’
আফতাব তেড়ে এল পরীর দিকে। তখনই একটা নারী কন্ঠ ভেসে আসে,’পরীর গায়ে হাত দিলে তোমার হাত ঠিক থাকব না কইয়া দিলাম।’
আফতাবের চোখ গেল জেসমিনের দিকে। এতটা উন্মাদ হতে জেসমিন কে সে প্রথম দেখল। কৃষ্ণবর্ণ মুখখানা তে তেজি ভাবটা ফুটে উঠেছে। তার চেয়ে বড় কথা জেসমিনের হাতে রয়েছে বড় ত*লো*য়া*র খানা। শুধু জেসমিন নয়। মালা রুপালি কুসুম আর শেফালিও রয়েছে। জেসমিন বলে ওঠে,’অনেক তো দাপট দেখাইলেন। এইবার আমরা মাইয়াগো দাপট দেখেন। বড় আপা আর আমি কম সহ্য করি নাই। আইজ হয় আমাগো যাইতে দেবেন নাইলে আপনার জা*ন আমি নিমু। ভাবছিলাম স্বামী হ*ত্যা মহাপাপ। এখন বুঝতে পারছি আপনের মত স্বামী হ*ত্যা সবচাইতে বড় পূর্ণ।’
জেসমিনের এই রূপ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে শুধু পরী হাসছে। আখির আফতাবের কানে ফিসফিস করে বলে,’পরিস্থিতি ভাল না ভাই। সবাইকে পরী এসব বুঝিয়েছে। ওদের আজ ছেড়ে দিলে পরে আবার আমাদের উপর হামলা করবে। পুলিশ কেও বলতে পারে। তাই ওদের এখানেই শেষ করে দেওয়া উচিত।’
-‘তাহলে গ্রামের লোকদের কি বলব? সবাই যখন জানতে চাইবে কি বলব? গ্রামের সবার সাথে তো আমরা পারব না।’
-‘ওসব পরে ভাবা যাবে। আপনি এক কাজ করুন। এখন সবাইকে বেঁধে ফেলুন। রাতের আঁধারে সবাইকে বাগান বাড়িতে নিয়ে শেষ করে দিব।’
আফতাব সব রক্ষিদের ইশারা করতেই তারা প্রথমে পরীর দিকে এগোলো। জেসমিন সামনে এসে সবাইকে বারণ করতে লাগল কিন্ত কেউই তার কথা শুনছে না। শেষে সে ত*লো*য়ার চালিয়ে দেয়। পরীর মত দক্ষ নয় জেসমিন। তাই তার হাতটা একজন রক্ষি বন্দি করে নিল তার হাত দ্বারা। পরী এক মুহূর্ত দেরি না করে লাথি মারে রক্ষির বুক বরাবর। এবং মালার থেকে ছিনিয়ে নেয় ত*লো*য়ার। সাথে সাথেই একজনের বুক ভেদ করে পরীর সেটা। তাজা র*ক্ত গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সেও লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। বাকি সবাই পিছিয়ে গেল। আখির দ্রুত বাইরে গিয়ে বাকি সবাই কে ডেকে আনে। যাতে পরীর বিরুদ্ধে ল*ড়াই করা সহজ হয়।
ঘটনার সবকিছু দ্রুত ঘটতে লাগল। আশেপাশের সবকিছুই বুঝে ওঠা মুশকিল। এসব দেখে ভয় পেল মালা। ভ*য়ংক*র কিছুর আভাস পাচ্ছে সে। বাপ মেয়ের যু*দ্ধ শেষে কোন দিকে মোড় নেবে? ওরা তো চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্ত আফতাব তাতে বাঁধা দিয়ে সব গন্ডগোল পাকিয়ে দিল।
পরীর সাথে মালা বাদে বাকি সবাই যোগ দিল। তবে এত গুলো লোকের সাথে পেরে ওঠা কষ্টকর। বাইরে থেকে লোকজন আরো আসার আগেই কুসুম অন্দরের লোহার দরজাটা আটকে দিল। রক্ষিদের হাতে শুধু লাঠি ছিল। অ*স্ত্র থাকে বাগান বাড়িতে। কিন্ত পরী যে অন্দরে অ*স্ত্র রেখেছে তা জানা ছিল না কারো। অ*স্ত্র থাকার কারণে আফতাবের লোকেদের কাবু করা খুব বেশি কঠিন হল না।
র*ক্ত*স্রো*তে ভেসে গেল অন্দরের উঠোন। তবে সবার দেহেই প্রাণ আছে কিন্ত যখম হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ উঠে দাঁড়াতে পারছে না বিধায় মেঝেতে শুয়ে রইল। আর কিছুক্ষণ পর বোধহয় তাদের প্রাণপাখি উড়াল দিবে।
পরিস্থিতি খারাপ দেখে আখির দরজা খুলে পালিয়ে যাচ্ছিল। রুপালি পেছন থেকে টেনে ধরে। আখিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,’কু*ত্তা*র বাচ্চা। এখন পালাচ্ছিস কেন? আমাদের মা*রবি না? নারী শক্তি কখনো দেখেছিস? তবে আজ দেখ।’
রুপালি আখিরকে মারতেই যাবে তখনই ভারি কিছুর আঘাতে ওর দেহ শান্ত হয়ে গেল। সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকাল আফতাবের দিকে। রক্ষিরা সব এক দিকে সরে দাঁড়াল। রান্না ঘর থেকে পাথর এনে রুপালিকে আঘাত করেছে আফতাব। পরী বোনের নিষ্প্রাণ দেহের দিকে তাকিয়ে রইল নির্ণিমেশ। তখনই পরিচিত কন্ঠস্বরে চোখ তুলে তাকাল। শায়ের আর নাঈম এসে পৌঁছে গেছে। চোখাচোখি হল শায়েরের সাথে পরীর। কিন্ত সে দৃষ্টিও সাথে সাথে স্থির হয়ে গেল। রুপালির ত*লো*য়ার খানা পরীর পিঠে ঢুকিয়ে দিয়েছে আখির। কিন্ত পরী নির্জীব। শান্ত দৃষ্টিতে সে তার স্বামীকে শেষ দেখা দেখে নিচ্ছে। শায়ের “পরীজান” বলে চিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেল। কারো ভাবনাতে আসেনি আখির পরীকে আঘাত করে বসবে। আফতাব কাউকেই হ*ত্যা করার হুকুম করেনি। সবাইকে বাগান বাড়িতে নিয়ে শান্ত ভাবে হ*ত্যা করে ওদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো বিক্রি করে দিত। কিন্ত রুপালি আখির কে মা*রতে গিয়েছিল বিধায় একাজ করতে হল তাকে। তবে আখিরের যে শেষমেশ পরীকে আ*ঘাত করবে তা আফতাব ও ভেবে বসেনি।
পরীকে আ*ঘাত করে আখিরও বেশিক্ষণ শ্বাস নিয়ে দাঁড়াতে পারল না। জেসমিনের আ*ঘাতে খন্ডিত হল আখিরের দেহখানা। পরীকে আ*ঘাত করার সাথে সাথেই জেসমিন আখিরের পিঠ ত*লো*য়ার চালিয়ে দেয়। যার ফলে সেও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
পরী মাটিতে পড়ার আগেই শায়ের তাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে। বেশিক্ষণ শায়ের কে দেখতে পারল না পরী। এমনকি কিছু বলতেও পারল না। কিন্ত ওই খোলা চোখদুটো যেন অনেক কিছুই বলতে চাইছিল শায়ের কে। তা আর বলা হল না। পরী শুধু একটা কথাই বলতে পেরেছিল। তা হল,’আমার পরিবারের দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। আপনি সবাইকে রক্ষা করবেন।’
পরীকে বুকে জড়িয়ে ধরে শায়ের। খুব শক্ত করে ধরে। ওর চোখ থেকে জল গড়ায় না। তার অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরে সে যেন শান্তি অনুভব করে। কিন্ত আজকের পর থেকে এই শান্তি শায়ের আর পাবে না। সে আস্তে করে বলে ওঠে,’আমার দায়িত্ব কে নেবে পরীজান? আপনি হিনা আমি কীভাবে থাকব? আরেকটু থেকে গেলে হত না?’
শান্ত অন্দরের দেয়ালে বারি খাচ্ছে শায়েরের কথা গুলো। প্রিয়তমাকে সে অনেক কথাই বলছে। তার সাথে আর কটাদিন থাকার অনুরোধ করছে খুব করে। কিন্ত প্রকৃতি যে বড়ই নিষ্ঠুর। চোখের জলে যদি প্রিয় মানুষটা ফিরে আসত তাহলে পৃথিবীর কেউ সঙ্গিহীন হত না। শায়েরের আসতে যে খুব দেরি হয়ে গেছে। নাহলে পরীকে সে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও রক্ষা সে করত।
——-
মুসকান তার চোখের পানি আটকাতে পারেনি। শায়ের পরীর ভালোবাসার কাছে সে মাথা নত করে ফেলেছে। শায়েরের বলা প্রতিটা কথাই বেদনা দায়ক। নিজেকে তাই ধরে রাখা অসম্ভব। সে বেদনাত্মক কন্ঠে বলে,’পরী তাহলে জীবিত নেই!! আর ওই খু*ন গুলো আপনি করেননি। তাহলে নিজের ঘাড়ে কেন সব দোষ নিলেন?’
-‘আমার পরীজান তার পরিবারকে রক্ষা করতে বলেছিল। আমি তাই করেছি। এর বিনিময়ে আমি আমার পরীজানের কাছে চলে যাব। এর থেকে সুখকর আর কি আছে?’
-‘জমিদার আফতাব তো বেঁচে ছিল। ওনাকে কে মা*রল?’
-‘পরীজানকে নিয়ে চলে আসার পর ওনার দুই স্ত্রী তাকে খু*ন করেছে?’
-‘ওনারা এখন কোথায়? আর পরীকে নিয়ে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?’
শায়ের বেশ বিরক্ত হল মুসকানের কথায়,’আপনি অনেক বেশি প্রশ্ন করেন!! বিরক্ত লাগলেও আমাকে বলতে হবে। আমি আমার পরীজান কে নিয়ে নবীনগর ফিরে যাই। সেখানেই তাকে কবর দেই। এবং তিন বছর সেখানেই ছিলাম। তারপর পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।’
-‘বুজলাম না আপনার কথা। আপনি যদি তিনবছর নবীনগর থাকেন তাহলে পরীর মা মালা ও জেসমিন কোথায়? আর জুম্মান পিকুল ই বা কোথায়?’
-‘জানি না ওনারা কোথায়!! কিন্ত ওইদিন আমি সবাইকে বলেছিলাম ওনারা যেন দূরে কোথাও চলে যায়।’
মুসকান আর শায়েরের সামনে বসে থাকল না। উঠে চলে গেল। নুরুজ্জামান ও এতক্ষণ সব শুনছিল। সে বুঝতে পারে শায়ের নির্দোষ হয়েও নিজের ঘাড়ে সব দোষ কবুল করে নিয়েছে। মুসকান নুরুজ্জামানের সাথে তার কেবিনে গিয়ে বসল। তারপর রেকর্ডারটা নুরুজ্জামানের কাছে দিল। গোপনে সে শায়েরের সব কথাই রেকর্ড করে ফেলেছে। নুরুজ্জামান সেটা হাতে নিয়ে বলল,’এই কেস এবার ঘুরবে। সবার আগে প্রধান আসামীদের গ্রেফতার করতে হবে। আমার মনে হয় আপনার স্বামী মানে ডক্টর নাঈম সব জানে। আগে তাকেই প্রশ্ন করতে হবে।’
#চলবে,,,,,