পাতা বাহার পর্ব-বোনাস

0
526

#পাতা_বাহার
লেখনীতে: #বেলা_শেখ
বোনাস- পর্ব

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

শীতের গোধূলি বেলা! কুয়াশায় আচ্ছন্ন পথ রাস্তা ঘাট! বৃষ্টির ছিটেফোঁটার ন্যায় কুয়াশা পড়ছে টুপটাপ। নীরহারা বিহঙ্গের দল নীরে ফিরছে দলে দলে। তাদের কিচিরমিচির শব্দ কানে বাজে। দূর থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসে। সাথে কুকুরের দলের ক্রন্দনরত ডাক। চায়ের দোকানে ভিড় জমেছে বেশ। শীতের সন্ধ্যায় ভাপা পিঠার সাথে গরম গরম চায়ের জুটি মেলা ভার। রাস্তার ধারে একদল লোক খরকুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে ব্যস্ত। কিছু লোক গায়ে চাদর মুড়িয়ে হাঁটছে এলোমেলো সাথে মিষ্টি মধুর আলাপন। পিচঢালা রাস্তা শিশির বিন্দুতে ভিজে আছে। সেই ভিজে রাস্তায় শা শা করে চলছে একের পর এক গাড়ি। মাঝখানের এক গাড়িতে অরুণ সরকার ও তার গোটা চারেক বন্ধু বসে। তাঁর শাবক ও সিংহীও উপস্থিত। আরিয়ান দক্ষ হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ড্রাইভিং করতে ব্যস্ত।তার পুরো মনোযোগ ড্রাইভে। শুভ প্রতিবারের মতো ফ্রন্ট সিটে। রাসেল, মুস্তাকিম ও ফয়সাল মাঝের সিটে। একেবারে শেষ সারিতে অরুণ সরকার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেছে। পাশেই ঘুমন্ত পাতা! গায়ে শাল জড়ানো। তখন অরুণের বাহুতে মাথা এলিয়ে শরীর ছেড়ে দিলেও জ্ঞান হারায় নি। কিছু সময় ওভাবেই থেকে আবার বমি করে ভাসিয়েছে। অরুণ তাঁর চোখে মুখে পানি দেয়! পাতা কুলকুচি করলেই অরুণ অপেক্ষা না করে পাজা কোলে গাড়িতে বসিয়ে দেয়! শুকলাদের ব্যবস্থা করে সবাই মিলে রওয়ানা হয় জলদি। অরুণ ছেলেকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে আদুরে গলায় সুধায়,
-” আব্বু শীত করছে?”
-” একটু একটু!”
মিনমিন করে বলে ভোর। অরুণ সামনে উঁকি দেয়। রাসেলের গায়ে জড়ানো চাদর টেনে ধরে। রাসেল চাদর খুলে অরুণের মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বলে,
-” বললেই দিতাম! টানাটানি করিস ক্যান ভাই?”
অরুণ কিছু না বলে চাদরটা দিয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নেয় ভোরকে। ভোর আরাম পায় চাদর সরিয়ে উঁকি দিয়ে বলে,
-” আঙ্কেলের শীত করবে তো!”

অরুণ মুচকি হেসে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে ঢেকে দেয় আদুরে মুখ। রাসেল পিছনে ফিরে হেসে বলে,
-” শীত গরম কোনোটাই কাবু করতে পারে না এই আর্মি ম্যানকে!”
ফয়সাল হেসে বলে,
-” তা পারবে কেন? গন্ডারের চামড়া তো!”
রাসেল কটমট করে তাকালো। বাকি সবাই হেসে ওঠে। ভোরও হাসে শব্দ করে। শুভ সামনে থেকে বলে,
-” ভোর তুমি তো ইন্টেলিজেন্ট! এরকম বোকামি কেউ করে? অপরিচিত লোক দেখলেই শতহাত দূরে সরে যাবে আর তুমি…! দেখ কতকিছু হয়ে গেলো!”

ভোরের মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায়।বাবার শার্টে নাক মুছে গাল ফুলিয়ে বলে,
-” ওই বাজে লোক বলেছিলো আম্মুকে আটকে রেখেছে আমি না গেলে…! আমার ঘুম পাচ্ছিল অনেক তারপর মনে নেই!”

সবাই বুঝতে পারে আসল কাহিনী! অরুণ রুমাল বের করে ছেলের নাক পরিষ্কার করে দিয়ে আবার ঢেকে নেয়। রাসেল পেছন ফিরে ভোরকে উদ্দেশ্য করে সন্দেহভাজন গলায় বলে,
-” ভোর? ওখানে কি হয়েছিলো? ওই বাজে লোকদের এরকম বাজে হাল কে করেছে? তোমার আম্মু?”

সকলের উৎসুক নজর এবার পেছনে অরুণের কোলে চাদরে ঢেকে থাকা ভোরের উপর! অরুণের কৌতুহলও শতভাগ। তবে ভোরের মাঝে জবাব দেওয়ার উদ্রেক দেখা যায় না। সবাই উত্তর শোনার অধির আগ্রহে কিন্তু ভোর চুপ করে থাকে।‌বেশ খানিকটা সময় কেটে যাবার পর মিনমিনে গলায় বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” আব্বু? ভোরের ঘুম পাচ্ছে!”

-” ভোর বললে না? কি হয়েছিল?”
ভোরকে আবার জিজ্ঞেস করে শুভ। অরুণ ছেলেকে বুকের সাথে সেঁটে নিয়ে বলে
-” জোর করার দরকার নেই। পরে এমনিতেই বলে দেবে।এখন রেস্ট নিক। শরীরটাও একটু আকটু গরম! জ্বর আসবে বোধহয়! কলিজা বলতে হবে না ঘুমাও!”

কেউ আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলে! ভোর বাবার বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে যায় শিঘ্রই।অরুণ ছেলেকে আগলে রাখে।‌পাশে ঘুমন্ত পাতার দিকে খেয়াল রাখতে ভোলে না। চাদরের ভিতরে হাত গলিয়ে দেখে হাত ঠান্ডা হয়েছে কি না? কখনো কপালে হাত রেখে দেখে শরীর গরম কি না! তাদের সামনের সারিতে বসা ফয়সাল আড়চোখে সবটা লক্ষ্য করে। সে একটু না বেশিই ছটফটে অস্থির টাইপের। চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। আশেপাশের সব দিকেই তাঁর মনোযোগ ও নজর থাকবে শতভাগ। সে অরুণকে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ ধরে। অরুণ স্বভাবতই অতিযত্নশীল! যাকে ভালোবাসে তাকে প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে; তাঁর প্রোপার যত্ন নিতে চুল পরিমাণ গাফিলতির অবকাশ নেই তার মাঝে। তাঁর কলিজা ওরফে ছেলে কাছে থাকলে তাঁর সর্বচ্চ মনোযোগ ছেলেতেই নিবদ্ধ। এতো দিন তো সেটাই দেখে এসেছে। তবে আজ কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। অরুণ ছেলের পাশাপাশি পাতা মেয়েটার যত্ন করছে‌ শতভাগ। এমন না অরুণ পাতার যত্ন করে না; করে তবে তাদের সম্মুখে এতটা বাড়াবাড়ি করে না। তবে আজ অতিরিক্ত যত্নে মেতেছে অরুণ সরকার। এই যেমন পাতার পা ঠান্ডা হয়ে এসেছিল দেখে পায়ের তালু হাতে ঘষে গরম করে নিজ শু পরিয়ে দিয়েছে। ব্লেজার পরিয়ে চাদরে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিয়েছে। পাতার পাশ ঘেঁষে বসে আছে যেন পড়ে না যায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে।অপাশে এবং কোলের উপর কুশন রেখেছে। একটু পর পর মেয়েটার হাত ধরে দেখছে ঠান্ডা হয়েছে কি না!আরিয়ানকে একটু পর পর বলছে গাড়ি স্লো চালাতে। ব্রেক না কষতে! মিনিট অন্তর অন্তর মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে! পারছেনা তাদের মতো সুশীল বন্ধুদের সামনে কোলের উপর বসিয়ে দিতে! বাহু জড়িয়ে বুকের মাঝে লুকিয়ে নিতে। ফয়সালের হাসি পায় সাথে তার একটু খটকাও লাগে। কাহিনী কি? সে পেছন ফিরে অরুণের উদ্দেশ্যে বলে,

-” এই অরু? কাহিনী কি ভাই? হুম? কেমন ব্লাশ ব্লাশ করছিস! সেকেন্ডে সেকেন্ডে ভাবীর দিকে তাকাচ্ছিস! এমন ভাব করছিস যেন মেয়েটা তিনবছরের বাচ্চা! তাছাড়া তোর চেহারায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে। অথচ এই মুহূর্তে টেনশনে তোর মুখ ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়ের মতো হওয়া উচিত ছিলো!”

অরুণ কুঞ্চিত কপালে চায়! সকলের নজর এবার অরুণ ও ফয়সালের উপর! ফয়সাল আবার জিজ্ঞেস করে,
-” ভাই কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি! এখন বল রহস্যটা কি? কেউ আসছে নাকি?”

সকলের চোখে মুখে উদ্রেক! রাসেল সন্দেহভাজন চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,
-” শালা তোর প্রতিটা হাবভাবের সাথে পরিচিত আমরা। তখন মেয়েটা বমি করে ভাসিয়ে দিলো! তুইও কেমন যেন একটু বেশিই কেয়ার করছিস? আমার বউমা আসছে?”

এ পর্যায়ে আরিয়ান গাড়ির গতি কমিয়ে কান খাঁড়া করে রাখে।অরুণ গম্ভীর মুখে সকলের দিকে তাকালো। তার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে হতাশ হয় সবাই! তৎক্ষণাৎ অরুণের মুখে হাসির ঝলকানির আবির্ভাব হয়! পাতার দিকে একপলক তাকিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,

-” তিনজন থেকে চারজন হবো ইনশাআল্লাহ!”

কথাটায় যেন বিষ্ফোরণ হয়! সবার চোখ বড় বড় হয়! আরিয়ান গাড়ির গতি আরেকটু কমিয়ে পেছনে উঁকি ঝুঁকি দেয়। গলা উঁচিয়ে বলে,
-” ভাই এটা কিন্তু ঠিক না? আগে বলিস নি কেন আমায়? তুই কিন্তু ভোরের বেলায় বলেছিলি এর পর কেউ আসলে সবার আগে আমায় জানাবি!”

অরুণ মুচকি হেসে বললো,
-” তো বললাম তো! আর কাউকেই জানাইনি তোরাই প্রথম!”
আরিয়ান সন্তুষ্ট হয় না।
-” সেটা তো তোমার হারামখোর বন্ধুদের বললে আমাকে বলো নি!”
অরুণ হেসে দেয় আরিয়ানের বাচ্চামো কথায়। মুস্তাকীম আলতো করে আরিয়ানের চুল পেছন থেকে টেনে ধরে বলে,
-” শা*লা! তোর শশুর হারাম খোর!”

আরিয়ান হেসে ওঠে শব্দ করে। কিছু বলবে এর আগে অরুণ পাতার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” তুই ছিলি তাই বলেছি!মহারানী জানালে তোকেই আগে জানাতাম! কিন্তু সে তো মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলো ভয়ে। আমি জোর করলেও বলেনি। আজ সকালে রিপোর্ট এনে তবেই সিওর হলাম। তারমধ্যেই এসব!”

শুভ কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
-” পাতা না বললে তুই জানলি কিভাবে? ”

-” আ’ম হার হাসবেন্ড!”

রহস্যময় হেসে বলে অরুণ! সে খেয়াল করেছিলো পাতাবাহার কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের বাচ্চামো ভাবটা দেখা যায় না। কেমন ভয়ে ভয়ে থাকে তার সামনে! তাঁর সন্দেহ হয় শুকলা বা অন্যকেউ মেয়েটাকে কোন ভাবে ভয় দেখাচ্ছে না তো! পাতাকে জিজ্ঞেস করলে বলে না। তবে আলমারিতে শাড়ির ভাঁজে প্রেগন্যান্সি কিট দেখে সন্দেহ আশাতে নিপতিত হয়। ড্রাইভার ও ভোরের কাছ থেকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনে সে খোঁজ খবর নেয় ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার আজ দুপুরের দিকেই কল করে জানায় রিপোর্ট পজেটিভ। অরুণ থম মেরে বসেছিল। আরেকজন আসছে তাদের ছোট্ট সংসারে! তাঁর ছোট্ট সংসারে সুখের ভোরের আগমনের পর আরেকজন আসছে। অরুণ খুশিতে কেমন যেন পাগলাটে আচরণ করছিলো।কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলো না। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো! এই যেমন কফির মগকে কলমদানি ভেবে কলম রেখছিল! সুজনকে পাতাবাহার বলে ডেকেছিলো!সিরিয়াস মিটিং এ বসে মিটমিট করে হাসছিল। কেমন যেন আজেবাজে বকছিলো! তবে তার একটু রাগও হয়েছিলো গাধা মেয়েটা তাঁর থেকে লুকানোর চেষ্টা কেন করছিলো বারংবার? ভয়ও পাচ্ছিল! তাকে কি মেয়েটা ভরসা করে না? সে কতবার করে বলেছিল আমাকে বলো! কিন্তু মেয়েটা রেগে যাচ্ছিলো! কি ভেবেছিল কি পাতাবাহার? যে সে নতুন বাচ্চার আগমনে রাগে ফেটে পড়বে! তাহলে তো মেয়েটা চেনেই না তাকে। সে তো চায় ছোট ছোট ডজন খানেক বাচ্চা তাঁর আঙিনায় খেলুক কাঁদুক বড়হোক। তার পুরো বারোটা বছরের একাকিত্বের স্মৃতি দূর হয়ে যাক! তাঁরও ভরা সংসার আনন্দে মেতে উঠুক।

-” এই অরু কোথায় হারিয়ে গেলি?”
রাসেলের কথায় ধ্যানভগ্ন হয় অরুণের! মাথা নেড়ে বোঝায় কোথাও না। মুস্তাকিম হেসে বলে,
-” নিশ্চয়ই স্বপ্নে বাচ্চা কোলে আসমানে ভাসছে!”
অরুণ রাগে না। মুচকি হেসে মাথা নাড়ল।
রাসেল বলে,
-” মেয়ে হলে কিন্তু আমার ছেলের বউ হবে? সেই কবেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম!”
অরুণ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-” আমার মেয়েকে বিয়ে তাঁর সাথেই দিবো যে ঘরজামাই থাকবে আমাদের সাথে।”
-” ফোর্স সমেত গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবো সময় হলে!”
অরুণ মুচকি হাসলো। মেয়ে হবে? তাঁর আম্মু আসবে?
ফয়সাল হঠাৎ টিপ্পনী কেটে বলে,
-” ভাই এতো তাড়া কিসের ছিলো? নাকি আমাদের কথায় নিজের স্ট্রেন্থ প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে বাবা হয়ে দেখিয়ে দিলি যে দেখ আমি অরুণ সরকার এখনো পাক্কা খেলোয়াড়! হুম হুম?”

অরুণের চাহনি পরিবর্তন হয়। কটমট করে তাকায়! তার তাকানো তোয়াক্কা না করেই মুস্তাকীম বলে,
-” এই ফয়সু তুই জানিস না? এতো সত্যি কথা বললে ভস্ম হয়ে যাবি চোখের চাহনিতে। আর বেচারা অরুণেরই বা কি দোষ তোরা যেভাবে পিছনে পড়েছিলো ওর!! কি বলবো! ওর পু*রুষত্ব তুলে কথা বলেছিস গায়ে লাগবে না? তাই প্রমাণ করে দিল আমাদের অরুণ এখনো সুপুরুষ বটে! সাবাস অরুণ সরকার!”

-” মুখে লাগাম দে? আমার মুড চেঞ্জ হতে সেকেন্ড সময় লাগবে না!”
নাহ্! অরুণের কথা কেউ কর্ণপাতই করলো না। শুভ হামি তুলে বলল,
-” মশা? অরুণের সুপুরুষ হয়ে ওঠার অল ক্রেডিট গোস ট্যু মি! কলিকাতা হারবাল কিন্তু আমিই পাঠিয়েছিলাম।তারপরই না সফলতার মুখ দেখলো!”
মুস্তাকীম দাঁত বের করে হেসে অরুণের দিকে তাকিয়ে থাম্বস আপ দেখায়! অরুণে ভয়ঙ্কর কন্ঠ নিঃসৃত হয়ে ভয়ঙ্কর গালি বের হয়! গালি দিয়েই বলে,
-” তোর কলিকাতা হারবাল আছে আমার কাছে। অর্ধেক ফাইল ছিলো তাই সেভাবেই রেখে দিয়েছি। ছুঁয়েও দেখিনি। ওই অর্ধেক নিশ্চয়ই তুই খেয়েছিলি? তাঁর পরেই না আরেক মেয়ের মুখ দেখলি!”

এবার শুভর মুখখানি দেখার মতো! লাল হয়ে আছে! লজ্জায় নাকি রাগে ঠাহর করা গেলো না। বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি। সাথে শুভকে সান্ত্বনা বানি শোনাচ্ছে। শুভ আর সহ্য করতে পারলো না। দু হাত জোর করে পেছনে তাকিয়ে অরুণের উদ্দেশ্যে বলে,

-” ঘাট হয়েছিল আমার তোর সাথে লাগতে গিয়েছিলাম!ক্ষ্যামা দাও হে মহামান্য পুরুষ!”
-” তথাস্তু!”

হাত তুলে আশির্বাদ করার ভঙ্গিমায় বলে অরুণ! শুভ সহ সবাই হেসে উঠল শব্দ করে। আরিয়ানও হাসে তবে শব্দহীন। ভাই বন্ধু গুলো পেয়েছে খাঁটি! এদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ নেই।মজার সবকটা ! মহল জমাতে ওস্তাদ! আর তার বন্ধু গুলো স্বার্থ রক্ষায় আগেপিছে ঘুরঘুর করে। দরকার ফুরোলে আর চেনে না। তাঁর ভাইয়ের এই বন্ধু গুলোকে বেশ লাগে। বন্ধু বন্ধু ফিল আসে। আরিয়ান মিছে বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলে,

-” তোমাদের মেলোড্রামা খতম? তোমাদের জ্বালায় শান্তিমতো ড্রাইভিং ও করতে পারবো না দেখছি! বুড়োকালেও কিশোরদের মতো হাবভাব! বলছি কি ক’দিন পরে ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে নাতি নাতনির মুখ দেখবে স্বভাব চরিত্রের একটু আপডেট দাও?”

মুস্তাকীম খেখিয়ে ওঠে আরিয়ানের কথায়!
-” এই তুই আবার বুড়ো বলছিস? তুই কি কচি খোকা নাকি?”

-” মোটেই না! আমার থার্টি ওয়ান! কচি খোকা তো তোমরা হ্যাপি?”

মুস্তাকীম অরুণের দিকে ফিরে কটমট করে বলে,
-” তোর সামনে তোর ভাই আমাদের বুড়ো বলে অপমান করে! আবার কচি খোকা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তুই কিছু বলবি না? আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি!”
অরুণের কপাল কুঞ্চিত হয়! কিছু বলবে তার আগে আরিয়ান শব্দ করে হেসে বলল,
-” আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি মুস্তাকীম ভাই!”

মুস্তাকীম গর্জে ওঠা সুরে বলে,
-” অপমানস! বড় ভাইয়ের বন্ধু সেই হিসেবে বড় ভাই হই তোর! সিনিয়রদের সম্মান দিতে জানিস না বেকুব! যা অভিশাপ দিলাম সামনে বছর তোর শশুর থুরি শাশুড়ি প্রেগন্যান্ট হবে।”

আরিয়ান নাখ মুক কুঁচকে বলে,
-” কথায় কথায় শশুর শাশুড়ি টানো কেন?”
মুস্তাকীম বিজয়ী হাসলো! সিনা টান টান করে বলে,
-” তুই কথায় কথায় আমাদের বুড়ো বলে খোঁচা মারিস কেন ভাই? মানছি একটু একটু করে বয়স বাড়ছে তাই বলে তুই সবসময় বুড়ো বলবি? তুই বুড়ো হবি না? সিনিয়র তোর ভেবে কথা বলতে পারিস না?”
-” জুনিয়র আমি তোমরা ভেবে কথা বলতে পারো না? কলিকাতা হারবাল! খেলোয়াড়! পুরুষত্বের পরীক্ষা! লজ্জা লাগে না ছোটদের সামনে এসব বলতে?”

মুস্তাকীম দাঁত বের করে হেসে বলে,
-” লজ্জার কি আছে? এই তোর সমস্যা টমস্যা হলে বড় ভাই ভেবে বলতে পারিস সব সমাধান করিয়ে দিবো!তোর শশুর মশায়ের জন্যও শলা পরামর্শ নিতে পারিস! ”
আরিয়ান লুকিং গ্লাসে মুস্তাকীমকে একবার দেখে নিয়ে বলে,
-” ব্যবসা শুরু করেছো নাকি? ওই যে রাস্তা ঘাটে বাজারে হাটে মাইকে ঘোষণা করে ওষুধ সেবন করায়! সেসব?

ফয়সাল গোল গোল করে তাকিয়ে বলে,
-” আশ্চর্য! অরুণ? ছেলে মানুষ এতোটা ঝগরুটে হয় তোর ভাইকে না দেখলে জানতাম না। মেয়েরাও এতোটা কোমড় বেঁধে ঝগড়া করে না। তোর ভাইয়ের ভাঙা ক্যাসেট বন্ধ করতে বল! কখন না উপর ওয়ালার কাছে টপকে দেয় সবাইকে!”

বলেই পেছনে অরুণের দিকে তাকালো! অরুণ হামি তুলে বলে,
-” এই আরিয়ান সাবধানে গাড়ি চালা! এমনিতেই কুয়াশায় রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। এককাজ কর রাসেল চালাবে তুই রেস্ট নি?”
আরিয়ান মানা করে নিজেই গাড়ি চালায় গাড়ি। মাঝে টুকটাক মুস্তাকীম ফয়সালের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়লে অরুণের সাবধান বানীতে চুপ করে।

চলবে…..