পান পাতার বৌ পর্ব-০৭

0
144

#পান_পাতার_বৌ
সপ্তম_পর্ব
~মিহি
[হাই এলার্ট! প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবাহিতদের জন্য উন্মুক্ত :3]

সীমান্তর ঘরের প্রত্যেকটা কোণা লালে গোলাপে শোভিত, মাঝে মাঝে লালরঙা লাভ শেইপের মোমবাতিগুলোও রাখা। এ কাজটা তার মা ব্যতীত কারো না সে জানে। বিয়ে করার পরমুহূর্তেই মা’কে কল করে জানিয়েছিল সে। ভেবেছিল মা বোধহয় রাগারাগি করবেন নিশ্চিত কিন্তু সালমা খানম বেশ শান্তভাবেই তাকে বাসায় ফিরতে বললেন শর্বরীকে নিয়ে। ভীতসন্ত্রস্ত শর্বরীকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলেনও। সমস্ত রাগ মুহূর্তেই হাওয়া। সীমান্ত জানতো বিয়ে হলে তার মা কিছুতেই আপত্তি করবেন না।

-“এখনো ভয় পাচ্ছো বউ?”

-“না। আপনি যতক্ষণ আমার পাশে আছেন আমার আর কোনো ভয় নেই।”

-“ফ্রেশ হও। পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভট বিয়েটা তোমার হয়েছে। না বিয়ের শাড়ি না গহনা, উল্টো তোমার বর ইউনিফর্ম পড়ে বিয়ে সেরে ফেললো। পাঞ্জাবির টাকা বাঁচলো।”

-“কিপ্টা কোথাকার!”

সীমান্ত শর্বরীর হাত পিঠের পিছনে নিয়ে গিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো। শর্বরীর ঠোঁটে মুচকি হাসি। সীমান্ত শর্বরীর নাকে নাক ঠেকালো।

-“ফ্রেশ হয়ে আসো। তোমার জন্য একটা গিফট আছে।”

শর্বরী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো। সীমান্ত তার বিপরীতে ভ্রু কুঁচকালো।

-“আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। বলতেছি কী গিফট, যাও!”

শর্বরী কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে। সীমান্ত আলমারি থেকে শর্বরীর জন্য কেনা লাল শাড়িটা বের করে বিছানার উপর রেখে ইউনিফর্ম পরিবর্তন করতে লাগলো।

শর্বরী দীর্ঘশ্বাস নিল। প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে তার। সালমা খানমের প্রতি কৃতজ্ঞ সে। ভদ্রমহিলা কেন যেন অমায়িক। উনি রাজি না হলে হয়তো শর্বরীর পরিবারও কখনো বুঝতো না তাকে। কথাগুলো ভেবে চোখেমুখে পানি ছিটালো সে। অতঃপর আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই চোখ পড়লো সীমান্তর উপর। ট্রাউজার পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। শর্বরী বিড়বিড় করলো,”নির্লজ্জ লোক একটা!”

-“যেটুকু লজ্জা রেখেছি, তা বাসর রাতে কোনো পুরুষ রাখে? তবুও আমিই নির্লজ্জ?”

শর্বরী জিভ কাটল দাঁত দিয়ে। আচ্ছা কান তো এই লোকের! বিড়বিড় করে বলা কথাও শুনে ফেলল! শর্বরী পেছন থেকে সীমান্তকে জড়িয়ে তার উন্মুক্ত পিঠে মাথা ঠেকালো। অবশেষে সে অধিকারটা পেয়েছে।

-“আজ ছাড়বে না তাই না বউ?”

-“কেন? আপনি চাচ্ছেন আমি ছেড়ে দিই?”

-“আমি চাচ্ছি তুমি ঠিক ততটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরো যতটা শক্ত করে ধরলে সমস্ত ফারাক দৃষ্টিগোচর হবে।”

সীমান্ত পেছনে ফিরলো। শর্বরী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে। সীমান্ত শর্বরীর থুতনিতে হাত রেখে মুখ উঁচু করালো। শর্বরীর গালে লাল আভা তখনো ফুটে উঠছে। সীমান্ত খুব ধীরে, পরম আকুতিসমেত শর্বরীর ঠোঁটজোড়ার দিকে এগোতে লাগলো। শর্বরী তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে নিল। শর্বরীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস সীমান্তকে ক্রমশ মাতাল করে তুলছে। আচমকা ফোনটা বেজে উঠায় সীমান্ত দাঁতে দাঁত বসিয়ে খানিকটা সরে আসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ডাক্তার দাসের কল। রিসিভ করলো সে।

-“হ্যালো সীমান্ত, কিছু কথা আছে তোমার সাথে।”

-“ভালোই বদলা নিলেন ডাক্তার!”

-“মানে?”

-“আজ আমার বাসর রাত। আপনি খুব ভালো সময়ে কল দিছেন!”

-“হা হা! বদলা প্রকৃতি নিলো, আমি না। আচ্ছা পরে কথা বলবো। যাও যাও কাজ করতেছিলা করো। দাওয়াত টাওয়াত তো কপালে নাই!”

সীমান্ত কল কেটেই শর্বরীকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেললো। শর্বরীর দম বন্ধ হয়ে আসছে।

-“শ্বাস আটকে মেরে ফেলবেন নাকি?”

-“হুহ…তোমার জন্য শাড়ি এনেছি, পড়তে পারো নাকি পড়িয়ে দিব?”

-“পারি।”

-“আনরোমান্টিক বউ। পড়ো নেও। কুঁচি ঠিক করার দায়িত্ব এটলিস্ট আমাকে দাও।”

-“আপনি আগে একটা টি-শার্ট পড়েন তো। অসভ্যের মতো ঘুরতেছেন।”

-“পড়বো না। তুমি শাড়ি পড়ো। আমি গোসল করে আসি।”

শর্বরীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সীমান্ত তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। শর্বরী বিছানার উপর রাখা শাড়িটার দিকে তাকালো। রক্তলাল রঙের শাড়ি, ব্লাউজের ডিজাইনটাও সুন্দর। চয়েস ভালোই তার বরের! শর্বরীর শাড়ি পড়তে সময় লাগলো না তেমন একটা তবুও সে কুঁচি ঠিক করলো না, এলোমেলোই রাখলো। সীমান্ত ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখলো শর্বরী শাড়ি পড়েছে তবে সত্যিই কুঁচি ধরার জন্য তাকে প্রয়োজন। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে শর্বরীর কাছে এলো সে। তোয়ালে বিছানার উপর ফেলে শর্বরীর কুঁচি ঠিকঠাক করে দিল।

-“এখন একদম বউ বউ লাগতেছে।”

-“আগে কী মনে হচ্ছিল?”

-“প্রেয়সী!”

-“কিন্তু আপনাকে এখনো অভদ্র মনে হচ্ছে। একটা টি-শার্ট পড়লে গা জ্বলে যাচ্ছে আপনার?”

-“তুমি এমনভাবে আমার পিছে পড়ছো মনে হচ্ছে আমি পরপুরুষ! আরে বউয়ের সামনে টি-শার্ট পড়া লাগলে বিয়ে করছি ক্যান আমি?”

-“খালি গায়ে থাকার জন্য বিয়ে করছেন?”

-“হ্যাঁ!”

শর্বরী সীমান্তর বুকে কিল বসিয়ে দিল। সীমান্ত হেসে উঠলো। শর্বরীর প্রেমে পড়াটা বড্ড হুট করে আর এই প্রেম তাকে গৃহবিদ্রোহ করতে শেখালো। বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত সে মায়ের অনুমতির তোয়াক্কা না করে নিয়ে ফেলেছে। এটা ভালোবাসার জোর?

-“মোমবাতিগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

-“তোমার রূপের আগুনে একজন জলজ্যান্ত মানুষ ছাই হয়ে যাচ্ছে আর তুমি দেখলে কী? মোমবাতি! তোমরা মেয়েরা বড্ড নিষ্ঠুর!”

-“কোথায় জ্বলছে দেখি?”

-“তুমি বড্ড জ্বালাময়ী শর্বরী! এই রাত্রির মতো নিস্তব্ধ-নিঝুম অথচ একেবারে ছারখার করে ফেলা তোমার উপস্থিতি!”

-“পুলিশের চাকরি ছেড়ে বই লিখুন একটা।”

সীমান্ত শর্বরীকে কোলে তুলে নিজের বারান্দার দোলনাটাতে বসালো। শর্বরী খেয়াল করলো আকাশে অর্ধচাঁদ। তার ঠিক পাশেই মেঘেদের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে।

-“তুমি ছাড়া আমি ঐ অর্ধচাঁদ যার জ্যোতি অসম্পূর্ণ।”

শর্বরীর কোলে মাথা রাখলো সীমান্ত। শর্বরী তখনো চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। সীমান্ত শর্বরীর শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচাচ্ছে আবার খুলছে, কখনো বা অপলক দৃষ্টিতে শর্বরীকে দেখছে।

-“আপনি লাভ এট ফার্স্ট সাইট বিশ্বাস করেন?”

-“বিশ্বাস করি বলেই তুমি আজ আমার বউ। তুমিই আমার লাভ এট ফার্স্ট সাইট ছিলে। তোমার নামের অর্থ রাত্রি কিন্তু তুমি কি আমার জীবনে সকাল হবে শর্বরী?”

শর্বরী অপলক দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়ে থাকে। আজ সব কথা যেন ইশারাতেই হচ্ছে। সীমান্তর মনে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। মেয়েটাকে হারালে সে আদৌ মানসিক শান্তি খুঁজে পেত কখনো? বোধহয় না।

-“শর্বরী, এখন থেকে তোমাকে প্রতিটা রাত জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব নিলাম।”

-“আপনি লোকটা আসলেই নির্লজ্জ!”

-“লে! তোমার মানসিকতা নষ্ট হলে দোষ আমার? আমি তো গল্প করার কথা বলতেছিলাম।”

-“ওওও! খুব সাধু আপনি, তাইনা?”

-“অবশ্যই!”

-“তাই?”

বলতে বলতে শর্বরী সীমান্তর দিকে মুখ এগিয়ে আনলো। সীমান্ত তখনো শর্বরীর কোলে মাথা রেখে আছে। শর্বরী খানিকটা কাছে আসতেই সে মাথা উঁচু করে শর্বরীর নাকে নাক ঘষলো।

-“বউ!”

-“বলেন।”

-“কিছুনা, এমনি ডাকতে ইচ্ছে করতেছে।”

শর্বরী কিছু বলার আগেই নিচে চেঁচামেচির শব্দ শোনা গেল। রাতের প্রায় বারোটা বাজে। এমন সময় নিচতলায় কোনো মেয়ের চেঁচানোর শব্দ মোটেও স্বাভাবিক নয়। সীমান্ত টি-শার্ট গায়ে জড়ালো। শর্বরীও শাড়ির আঁচল কাঁধের দু’পাশে নিয়ে সীমান্তর পিছু পিছু নিচে নামলো। একজন মেয়ে ক্রমাগত চেঁচাচ্ছে। সীমান্ত নিচে নামামাত্রই মেয়েটা সীমান্তর টি-শার্টের গলার দিককার অংশটা টেনে ধরলো। চেঁচিয়েই বলে উঠলো,”তুই আমার সাথে এত বড় ধোঁকাবাজি করতে পারলি?” বাক্যটা শোনামাত্র শর্বরীর পায়ের নিচ থেকে যেন জমিন সরে গেল। মাথা বনবন করে ঘুরছে তার। এই মেয়েটা কে? সীমান্ত তার সাথে ধোঁকাবাজি করেছে মানে কী? সীমান্ত কী করেছে এর সাথে? প্রশ্নগুলো মাথায় এমনভাবে জট পাকাচ্ছে যে শর্বরীর মনে হচ্ছে এই বুঝি সে সিঁড়ি থেকে ধপ করে নিচে গিয়ে পড়বে।

চলবে…