পান পাতার বৌ পর্ব-০৮

0
128

#পান_পাতার_বৌ
অষ্টম_পর্ব
~মিহি

“তুই আমার সাথে এমন করতে পারলি? এত বড় বেইমানি কেমনে করলি?” সীমান্তর কলার ছেড়ে কান টেনে ধরলো মেয়েটি।

-“আপা কান ছাড় আমার! হঠাৎ বিয়ে করছি, বাসরও করতে দিলি না! সৌমিক বলছে না তোরে? কই ঐ বেদ্দপটা?”

শর্বরীর উদ্বেগ মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেল। মেয়েটি তার ননদ! দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সায়বা সীমান্তর সাথে কথা না বাড়িয়ে শর্বরীর মুখোমুখি হলো।

-“মাশআল্লাহ! ভাই তো দেখি চাঁদ এনেছে জমিনে। তা ভাবীজান, ননদকে পছন্দ হলো?”

-“খুব!”

সায়বা হাসলো। ততক্ষণে সৌমিকও এসেছে বসার ঘরে। সীমান্ত একটু পরপর চোখ কটমট করে তার দিকে তাকাচ্ছে। এরকম ভাই থাকার চেয়ে না থাকা ভালো! তার বাসর রাতের সর্বনাশ করে ফেলল। অসহায় দৃষ্টিতে শর্বরীর দিকে তাকিয়ে আছে সে। শেষমেশ বাসর রাত সত্যিই ভেস্তে গেল সীমান্তর। সায়বা শর্বরীকে নিয়ে গেল তার সাথে ঘুমানোর জন্য আর সীমান্তকে পাঠালো সৌমিকের ঘরে থাকার জন্য। মন ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেছে সীমান্তর। এ কেমন জুলুম?

সৌমিক আগেভাগে ঘরে ঢুকে ঘুমানোর ভান করে পড়ে রইল। সীমান্তর রাগ তখন সপ্তম আসমানে। পাশে থাকা বালিশটা সৌমিকের মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো সীমান্ত। প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে তার! তার বাড়ির লোকদের আক্কেল কবে হবে? খিটখিটে মেজাজ নিয়ে সারা ঘরে পায়চারি করতে লাগলো সে। দেখতে দেখতে রাত দুটো পেরোলো। সীমান্তর চোখে ঘুম নেই। শব্দহীন পায়ে নিজের ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালো। নিজের বোনকে সে চেনে, চরম ঘুমকাতুরে। একবার ঘুমালে বাড়িতে আগুন লাগলেও টের পাবে না। সীমান্ত দরজায় আলতো করে টোকা দিল বেশ কয়েকবার। কিছুক্ষণ বাদে শর্বরী দরজা খুলতেই তাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো সীমান্ত।

-“স্বামীকে রেখে ননদকে পাত্তা দিচ্ছো খুব?”

-“স্বামী তো চুপচাপ ছোট ভাইয়ের সাথে ঘুমাতে চলে গেছে। তাহলে আমি আর কী বলবো?”

-“ধূর! আপা আসলে একটু ড্রামাটিক টাইপের আর সৌমিক একটা আস্ত বলদ। এই দুটোর জন্য আমার বাসর রাতটাও নষ্ট হলো শেষমেশ।”

-“উমম..রাত তো এখনো শেষ হয়নি।”

শর্বরীর কথায় সীমান্ত ভড়কাল খানিকটা। শর্বরীর ঠোঁটের হাসি তাকে ভালোই তড়পাচ্ছে।

-“সিগন্যাল দিচ্ছো?”

-“উঁহু!”

সীমান্ত আরো শক্ত করে ধরলো শর্বরীকে। শাড়িটা বেশ মানিয়েছে তাকে। এলোমেলো চুলের এ অগোছালো সাজসজ্জাটা চেয়ে চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে সারাটা সময় জুড়ে।

-“ছাড়ুন। কেউ দেখলে কী ভাববে?”

-“মানে কী? আমার বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য আমি লোকে কী ভাববে সেটাও দেখবো?”

-“লোকে না, মা বা আপা দেখলে? কী ভাববে বলুন। চুপচাপ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, আচ্ছা?”

সীমান্তর রাগ হলো, সে প্রকাশ করলো না। টুপ করে শর্বরীর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো,”আমি তোমার উপর রাগ করেছি, প্রচণ্ড রাগ! চুমু খেলাম বলে গলে গেছি তা নয়। আমার রাগের সাথে পরিচয় করাবো শীঘ্রই।” সীমান্ত আর কিছু না বলে চলে গেল। শর্বরীর ইচ্ছে করলো সীমান্তকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সে পারলো না।পা অসাড় হয়ে এলো। এ বাড়িতে আসার পর থেকেই তার মনে নার্ভাসনেস কাজ করছে। হুটহাট সীমান্তকে কিছু বলতে দ্বিধা কাজ করছে তার। চুপচাপ ঘরে এসে শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিল সে।

-“শুধু কি চুমু খেয়েই ছেড়ে দিল আমার ভাই? রামছাগল একটা!”

সায়বার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠলো শর্বরী। সায়বা তা দেখে চোখ খুলে হাসতে লাগলো।

-“থাক থাক লজ্জা পেও না। আমি জানতাম ঐ ছাগল আসবেই কিন্তু তাই বলে পাঁচ মিনিট থেকে চলে যাবে? গাধা!”

-“বাদ দাও না আপা। রাগ করে চলে গেছে।”

-“ওহ হো! মন খারাপ বুঝি আমার ভাবীটার? সীমান্তর রাগ? কাল থানা থেকে আসতে আসতে ভুলেই যাবে কেন রাগ করেছিল তোমার উপর! ঘুমিয়ে পড়ো।”

শর্বরী ঘুমালো না। তার রাতটা নির্ঘুমই কাটলো।

___________________________

-“আপনিই ইরিনার বাবা ইরতাজ সাহেব?”

-“হুম।”

-“হঠাৎ আমার সাথে দেখা করার এমন তলব? ডাক্তার দাস বেশ রাত করে কল করেছিলেন তাই তখন জানতে পারিনি। সকালে বললেন আপনি নাকি আমার সাথে দেখা করতে চান।”

-“হুম। ইরিনার ব্যাপারে কথা ছিল কিছু।”

-“লাশ আপনারা দাফন করে ফেলেছেন। পোস্ট-মর্টেম করতে দেননি। এখন আবার কী কথা?”

-“দেখো সীমান্ত, আদনানকে ইরিনা মারেনি এটুকু বিশ্বাস আমার আছে। ইরিনা প্রচণ্ড জেদী। আদনানকে সে আঘাত করেছিল ঠিকই কিন্তু একইসাথে সে আদনানকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। আদনানকে আঘাত করার পর সে নিজের শরীরেও বেশ ক্ষত করে। ও কখনোই আদনানকে খুন করতে পারেনা।”

-“এসব কথা এখন কেন বলছেন?”

-“আমি ঘুমাতে পারছিনা সীমান্ত! আমার মেয়ের কাতর কণ্ঠ আমাকে ঘুমাতে দেয় না। তুমি দয়া করে আদনানের কেসটা আনঅফিশিয়ালি একটু দেখো। আমার মনে হচ্ছে এটা অন্য কারো কাজ।”

-“আপনার সন্দেহ হয় কাউকে?”

-“হ্যাঁ। আদনানের বোনজামাইকে। লোকটা চতুর টাইপের। আগেও টাকা নিয়ে আদনানের সাথে ঝামেলা করেছে।”

-“আদনানের বোনজামাই আদনানের মৃত্যুর দু’দিন আগেই বিদেশে গেছে। ওর এসবের সাথে সম্পৃক্ততা নেই। আর কেউ?”

-“সন্দেহ না তবে একটু আধটু মনে হয় আদনানকে বাড়ির কাজের মেয়েটা কিছু করেছে। আমি যতবার ইরিনার সাথে দেখা করতে ও বাড়িতে গেছি, মেয়েটা কেমন চোরের মতো করে তাকাতো। মনে হতো কিছু লুকোচ্ছে।”

-“ওকে খোঁজা হচ্ছে। পেলে জানাবো। আপনি আসতে পারেন, আমরা দেখছি কী করা যায়!”

ইরতাজ সাহেব চলে গেলেন। সীমান্তও ভাবতে লাগল কেসটা নিয়ে। শুরু থেকে সব ডিটেলসগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো সে। কোথাও একটা কিছু মিস হচ্ছে কিন্তু সে ধরতে পারছে না। সারাদিনের ব্যস্ততায় সীমান্ত সত্যিই ভুলে গেল সে শর্বরীর উপর রাগ করেছিল। সায়বা বিকেলের দিকে চলে গেছে। এখনো ঘটা করে সীমান্তর বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি। ঘরে ফিরেই সীমান্ত আবার ল্যাপটপে কেস ডিটেলস দেখতে লাগলো। ব্যস্ততায় কোনো কিছুই টের পেল না সে। একসময়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হলে গোসলে গেল সে।

মিনিট বিশেক পর গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে আরেক তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো সীমান্ত। শর্বরী তখন মনোযোগ দিয়ে সীমান্তর ল্যাপটপটা দেখছে।

-“কী দেখছো? আমার ল্যাপটপে তোমার দেখার মতো কিছু আছে?”

-“মেয়েটা খুন করেনি। ও লেফট-হেন্ডেড।”

-“মানে?”

-“দেখো, তোমরা যাকে সাসপেক্ট ভাবছো সে তো লেফট হেন্ডেড। বাম হাত দিয়ে কারো বুকের বাম পাশে এত জোরে আঘাত কীভাবে করবে? যদি বুকের উপর উঠে বসেও করে তবুও আঘাত তেরছা হবে কিন্তু এটা তো সোজা। এটা এমন কেউ করেছে যে ডানহাতি।”

সীমান্তর মাথায় কথাটা ক্লিক করলো দারুণভাবে। তার একটা ক্লুই দরকার ছিল কেসটা একটু গতিশীল করার জন্য।

-“আরে বাহ! তোমার তো গোয়েন্দা হওয়া উচিত।”

-“গোয়েন্দা হয়ে কী লাভ যদি স্বামীর মনের খোঁজই না রাখতে পারি! শুনেছি স্বামী মহাশয় নাকি এখনো রেগে আছেন। ঘটনা গুজব নাকি?”

সীমান্ত চুলে হাত বোলাতে বোলাতে হাসলো। এই মেয়েটাকে যতবার যতভাবে সে দেখে ততবারই প্রেমে পড়ে যায়। কে বলেছে বিয়ের পর প্রেম করা যায় না? সীমান্তর প্রেমটা তো শুরুই হচ্ছে বিয়ের পর।

-“এই যে মহাশয়, রাগ ভাঙানোর জন্য কী করবো বলেন?”

-“সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলতে হবে।”

চলবে…