পান পাতার বৌ পর্ব-১৬+১৭

0
126

#পান_পাতার_বৌ
ষোড়শ_পর্ব
~মিহি

-“আপনি কি পাগল, মি. সীমান্ত? আপনি ওনার স্বামী হয়েও মেয়েটার এ অবস্থা করে ফেলেছেন? আমি যে ওষুধ দিয়েছিলাম তার এন্টি ড্রাগ দিয়েছেন ওকে! আপনি বুঝতে পারছেন কত বড় ব্লান্ডার ঘটে গেছে? ওর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। আপাতত ওকে হসপিটালেই রাখতে হবে আমাদের।”

ডাক্তার নবনীর কথায় সীমান্ত পুরোপুরি পাজল্ড হয়ে পড়লো। ঘুমের ওষুধের এন্টিড্রাগ? সে কেন দিতে যাবে এটা শর্বরীকে? উল্টো সে চেয়েছিল শর্বরী একটু শান্তিতে ঘুমোক।

-“ম্যাম,আমি কেন ওকে এন্টিড্রাগ দিতে যাবো?”

-“ওর ব্লাডে তো ট্রেস পাওয়া গেছে। ও নিজে থেকে নিয়েছে?”

-“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনারা ট্রিটমেন্ট করুন, বাকিটা আমি দেখছি।”

সীমান্ত বুঝে উঠতে পারছে না শফিক সাহেব আর আরজু বেগমের সামনে কী করে যাবে। মানুষদুটো তো সীমান্তকে ভরসা করেছিল। তার মান সে রাখতে পারলো কই? সীমান্ত মাথা ঠাণ্ডা করলো। এন্টিড্রাগের বিষয়টা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার। শর্বরী ডাক্তার নবনীর দেওয়া ওষুধের পর একটা জিনিসই খেত, সালমা খানমের বানানো বাদাম দুধ।দুইয়ে দুইয়ে চার মিললো সহজেই। সীমান্ত হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। ভোর চারটা বাজে। ঘণ্টা দুয়েক পর তার মা ঠিকই টের পাবে সে বাড়িতে নেই। এগারোটা নাগাদ আরজু বেগমের কল পেয়ে তড়িঘড়ি করে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে এম্বুলেন্স নিয়ে এসেছে সে। ওখানে ক্লিনিক থাকলেও সীমান্ত রিস্ক নিতে চায়নি। লোক্যাল ক্লিনিক থেকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে আসে শর্বরীকে। ডাক্তার নবনী যেহেতু আগেও শর্বরীর চিকিৎসা করেছেন, তিনি চেকআপ করে ব্যাপারটা বুঝলেন সহজেই।

সীমান্ত ঘাবড়াচ্ছে না, ঘাবড়ালে কাজ হবে না। সালমা খানমের এই রূপটা নতুন তবে ছেলে নিজ পছন্দে বউ ঘরে তুলেছে এ আক্রোশ তার মনে জমেছে তা পুরোপুরি অবান্তর নয়। তবে এর জের ধরে নিজ পুত্রবধূর সাথে এ হেন আচরণের পক্ষপাতিত্ব সীমান্ত মোটেও করবে না।

___________

সালমা খানম ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাতে গেলেন। আজ নাস্তা বানানোতে শান্তি আছে, ঐ মেয়েটা নেই আশেপাশে। সালমা খানম গুনগুন করছেন। আচমকা মনে হলো এতক্ষণ তো সীমান্তর উঠার কথা। ছেলেটা এখনো উঠেনি? সালমা খানম সীমান্তর ঘরে গিয়ে তাকে খুঁজে পেলেন না। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে ফোনের কী-প্যাডে সীমান্তর নম্বরটা তুললেন। তিন-চারবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করলো সীমান্ত।

-“হ্যাঁ মা বলো।”

-“কোথায় গেছিস তুই এই সাত সকালে? যাওয়ার আগে বলেও যাসনি!”

-“মা, একটা আর্জেন্ট কেস পড়ে গেছে তাই না জানিয়েই চলে আসতে হয়েছে। স্যরি মা। কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়িই ফিরবো, টেনশন নিও না।”

-“বৌমাকে আনতে যাবি না?”

-“মা, এখন কাজ আছে। রাখছি।”

সীমান্ত কল কেটে দিতেই মুখ টিপে হাসলেন সালমা খানম। ছেলের কাটা ঘাঁয়ে নুন ছেটাতে যদিও তার একটুও ভালো লাগছে না তবে পরিকল্পনা সফল হওয়ার আনন্দটা একটু তো উপভোগ করতেই হয়! মনের সুখে আজ গরুর মাংস দিয়ে পোলাও আর কালাভুনা করলেন তিনি। সীমান্তর বাবার প্রেশার আছে, তার জন্য আলাদা করে আরেক পদের তরকারি রাঁধলেন। সালমা খানমের মন বড্ড ফুরফুরে আজ।অবশেষে তিনি তার কার্যে সফল হয়েছেন। এতদিন ধরে শর্বরীর সামনে ভালো মানুষ সেজে থাকার লাভ অবশেষে উঠাতে পেরেছেন তিনি।

-“সালমা, এত রান্না করছো কেন? বউমা বাড়িতে নাই, এতসব কে খাবে? আমার তো মাংস খাওয়া বারণ।”

-“সীমান্তকে বললাম বৌমাকে আনতে। ব্যস্ত আছে বলে কল কেটে দিল। তুমি একবার কল করো দেখো তো!”

সীমান্তর বাবা কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। ছেলে আর ছেলে বৌয়ের মন কষাকষিতে শ্বশুরের ঢোকা বাঞ্ছনীয় দেখাবে না। তিনি আর কথা বাড়ালেন না। সালমা খানম এ দৃশ্য দেখে মনে মনে যেন আরেক যুদ্ধ জয় করে ফেললেন।

__________________

-“আপনি এখানে কেন এসেছেন?”

-“চোখ খুলেই বরকে সামনে পেয়েছো! অন্য কেউ হলে বুকে জড়িয়ে ধরতো আর তুমি জিজ্ঞাসা করছো কেন এসেছি?”

-“যে বুকে জড়িয়ে ধরবে তার কাছেই যান, আমার কাছে আসতে তো কেউ বলেনি।”

-“বউ, তুমি আমাকে এতটুকুও বিশ্বাস করতে পারলে না? যে ছেলেটা নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমায় বিয়ে করেছে, সে তোমাকে একটুও ভালোবাসতে পারেনি? আমার ভালোবাসা ভেজাল মনে হয়েছে?”

-“কিন্তু আম্মা যে বললেন…”

-“তোমার এই অবস্থা মায়ের জন্যই এ কথা তুমি বিশ্বাস করবে? তোমার শরীরে এমন কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে যার কারণে তোমার এ অবস্থা। এ কাজটা কার জানো? মায়ের বাদাম দুধের!”

-“আম্মা এসব কেন করবেন? উনি তো আমাকে মেনে নিয়েছে। আমাকে ওনি যথেষ্ট স্নেহ করেন।”

-“মা এসব কেন করছো সেটাই জানতে হবে। নাটক করার জন্য তৈরি থাকো।”

শর্বরী বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকাল। সীমান্ত কিছু বললো না কেবল বাঁকা হাসি হাসলো। শর্বরী আন্দাজ করতে পারলো সীমান্তর মাথায় প্রচণ্ড খুরাফাতি কোনো আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে।

-“কী ভাবছেন?”

-“ঝগড়ার কেমন পারো তুমি?”

-“মানে?”

-“ঝগড়া করতে পারো না? বাঙালির তো রক্তে মিশে আছে ক্যাঁচাল! এটাই কাজে লাগাতে হবে।”

-“কী যা তা বলতেছেন?”

-“কিছু না জান। তুমি আপাতত রেস্ট নাও। বিকালে রিলিজ দিবে, যেতে যেতে বোঝাবো সব।”

শর্বরীর কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিল সীমান্ত। শর্বরী সীমান্তর যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে ভুল বোঝার অনুতাপে মাথা ভার হয়ে আসলো তার। সীমান্তকে পেছন থেকে ডাকলো সে।

-“সীমান্ত একটু বসবেন আমার কাছে?”

সীমান্ত পিছু ফিরলো। মুচকি হেসে শর্বরীর পাশে বসে তার দু’হাত নিজের মুঠোয় নিল।

-“আ’ম স্যরি বউ, আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি। আমি আসলে ভাবিনি মা এত সিরিয়াস কোনো এটেম্প নিতে পারে।”

-“আম্মা আদৌ এসব করেছেন? আপনি না জেনে সন্দেহ করছেন না তো?”

-“বাড়ি চলো, নাটকটা করো আমার সাথে তাহলেই বুঝবো আসল কাহিনী কী।”

শর্বরী কেবল মাথা নাড়লো। সীমান্তর এলোমেলো চুলগুলো কপালে এসে বাড়ি খাচ্ছে একটু পর। ছেলে মানুষের চুল এত সুন্দর হতে হবে কেন? শর্বরীর ইচ্ছে করলো চুলে একটু হাত বুলিয়ে দিতে। চোখ বন্ধ করলো শর্বরী। সীমান্ত তার বউয়ের বন্ধ চোখের পানে তাকিয়ে আত্মপ্রশান্তি খুঁজে পেল অনেকখানি।

সীমান্তর পাশে শর্বরীকে দেখে সালমা খানমের সমস্ত খুশি যেন মলিন হয়ে এলো। সীমান্তও ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরে শর্বরীকে দরজায় রেখে একাই ঘরে ঢুকে গেল। শর্বরী কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইল। এ দৃশ্যে মন জুড়ালো সালমা খানমের। অবশেষে ছেলে তার কর্তৃত্বে ফিরেছে। এটাই তো তিনি চেয়েছিলেন এতদিন। মুখে হাসি ফিরলো তার। শর্বরীকে কাছে এনে নিজ হাতে বাড়িতে আনলেন।

-“কোথায় চলে গিয়েছিলি মা? এভাবে যায় কেউ?”

-“মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল আম্মা, তাই না বলেই চলে গিয়েছিলাম।”

-“আচ্ছা ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আয় যা। আমি খাবার বাড়তেছি।”

শর্বরী মাথা নেড়ে ঘরের দিকে এগোল। সালমা খানমও পেছন পেছন এলেন। শর্বরী ঘরে ঢুকতেই বেশ জোরেসোরে একটা কিছু ভাঙার আওয়াজ পেলেন সালমা খানম। পরক্ষণেই ভেসে উঠলো সীমান্তর গলা, “তোমায় বিয়ে করাটা আমার লাইফের সবথেকে বড় ভুল!”

চলবে…

#পান_পাতার_বৌ
সপ্তদশ_পর্ব
~মিহি

“কে বলছিল আমাকে বিয়ে করতে?” বলেই ফ্লাওয়ার ভাসটা মেঝেতে ছুঁড়লো শর্বরী। দরজায় কান ঠেকিয়ে বসে থাকা সালমা খানম হঠাৎ এত জোরে শব্দ পেয়ে খানিকটা চমকালেন তবে দিব্যি মজা লাগছে তার। অতটুকুন মেয়ে কিনা তার ছেলেকে বশ করতে চায়! বাব্বাহ, মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি। সালমা খানম মনে মনে হাসছেন।

-“বেয়াদবি করো না শর্বরী! তুমি অসুস্থ দেখে এখানে এনেছি অযথা সিন ক্রিয়েট করবে না।”

-“আরেহ কিসের সিন ক্রিয়েট? আমি তো মামলা করবো আপনার নামে, নারী নির্যাতনের মামলা। তারপর দেখবো কে বাঁচায় আপনাকে। কেমনে টেকে চাকরি ঐটাও দেখবো।”

এতক্ষণ মজা পেলেও এবার সালমা খানম রীতিমতো একটা শক খেলেন। কী বলছে এই মেয়ে? নারী নির্যাতনের মামলা করবে? নিচ থেকে সীমান্তর বাবা ক্রমাগত সালমা খানমের নাম ধরে ডাকছে। বিরক্ত হয়ে তিনি দরজার পাশ থেকে সরে নিচে গেলেন। সীমান্ত লক্ষ করলো দরজার পাশে সালমা খানম নেই। সীমান্ত শর্বরীর হাত ধরে টেনে তাকে কাছে আনলো।

-“কী যেন বলছিলে? মামলা করবে? কিসের মামলা শুনি?”

-“অতিরিক্ত ভালোবাসার।”

-“ভালোবাসতে দিলে কই? অভিমান করে চলেই তো গেছিলে! এরপর কখনো একটুও যদি সন্দেহ হয় তোমার, দয়া করে আমাকে সরাসরি বলবে। একটা সম্পর্ক টিকেই থাকে বিশ্বাসের উপর আর সে বিশ্বাসে একটু আঁচ আসলে পরবর্তী জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। একটা মিথ্যের পর সব সত্য সন্দেহ বলে একটা কথা আছে না? তেমনি একটা সন্দেহের পর সব বিশ্বাস ঠুনকো!”

শর্বরী কিছু বললো না। সীমান্তকে জড়িয়ে ধরলো। সে ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি। তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে আগলে রাখতে চায়।

শর্বরী ঘরের দিকে তাকালো। সম্পূর্ণ ঘর এলোমেলো হয়ে আছে। দেখেই চোখমুখ কুঁচকালো সে।

-“চোখমুখ কুঁচকে লাভ নেই! আমি তো আর জানতাম না তখন যে তুমি বাবার বাড়ি গেছো। আর চিঠি রেখে গেছো কেন? সরাসরি বলতে আমাকে। পুলিশের বউ হয়েছো, এটুকু সাহস নাই?”

-“চুপ করেন। ঘরটা শেষ করে দিছে। বের হন রুম থেকে, এসব গোছাবো আমি।”

-“আমাদের নাটকে ছিল না এটা। ঘর থেকে বের করে দিতে পারো না তুমি আমাকে।”

-“ভালোই ভালোই যাবেন নাকি আরেকটা ফুলের ভাস আপনার মাথায় ভাঙতে হবে?”

শর্বরীর নাকের ডগা লাল হয়ে এসেছে। সে যে আসলেই রাগে ফেটে পড়ছে তা উপলব্ধি করে সীমান্তর ইচ্ছে করলো তাকে আরেকটু জ্বালাতে। শর্বরীর হাতটা পেঁচিয়ে ধরলো সে।

-“হাত ছাড়বেন? আচ্ছা না ছাড়লেন। এখন সব কাজ আপনি করবেন।আমি নিচে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি রুম পরিষ্কার হয়ে গেছে।”

সীমান্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এ কেমন বাঁশ? শর্বরী ঠোঁট টিপে হাসলো। চট করে সীমান্তর গালে একটা চুমু খেল সে। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া সীমান্ত আরো বিস্মিত হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো। সুযোগ বুঝে সীমান্তর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিচে দৌড় দিল শর্বরী। সালমা খানম তখন হলে বসা, মুখে চিন্তার ভাঁজ। তার এ দুশ্চিন্তার কারণ অবশ্য অজানা নয় শর্বরীর তবুও শাশুড়িকে একটু খোঁচাতে ইচ্ছে করছে তার।

-“কী হয়েছে আম্মা? আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে যে?”

-“না মা কিছুনা। বসো বসো। শরীর কেমন তোমার? এভাবে না বলে কেউ যায়? কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম আমরা!”

-“স্যরি আম্মা। আর হবে না।”

-“তুমি কি সীমান্তর উপর রাগ করেছো মা? ঐ গাধাটা কি কিছু করেছে?”

শর্বরী চুপ হয়ে গেল। মানুষ কত নাটক যে করতে পারে!

-“না মা, উনি কেন কিছু করতে যাবেন! রাগ অভিমান তো সেখানে থাকে যেখানে ভালোবাসা থাকে আর আপনি তো জানেনই ওনার প্রথম ভালোবাসা অন্য কেউ। সেখানে আমি কেন ওনার উপর রাগ করে…”

-“ছিঃ ছিঃ মা! এসব কেমন কথা? বিবাহিত পুরুষের প্রথম ভালোবাসা সর্বদা তার স্ত্রী। তুমি আগের কথা ভুলে যাও মা। এখন তো এটা তোমার সংসার। তোমাকেই এই সংসার সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে।”

-“দেখা যাক আদৌ এসব টেকে কিনা!”

শর্বরী আর কিছু না বলে উঠে এলো। পেছনে সালমা খানমকে মহা চিন্তার সাগরে ডুবে থাকতে দেখা গেল। শর্বরী কোনোক্রমে হাসি আটকে নিজের ঘরে ফিরলো। সীমান্ত তখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।

-“আপনি আচ্ছা অর্কমা তো! একটা ঘর গোছাতে পারলেন না?”

-“বিয়ে করে কোনো লাভই নাই। কেন যে বিয়ে করছিলাম? বউকে কাছে পাবো ভাবছিলাম অথচ পাচ্ছি কি? কাজের বুয়ার চাকরি!”

-“ঘর এলোমেলো করার সময় মনে ছিল না?”

-“থাক এলোমেলো, এতটাও খারাপ লাগতেছে না!”

-“সরেন তো সরেন। খাইস্টা কোথাকার! ঘরের ছত্রিশটা বাজায়ে বলে খারাপ তো লাগতেছে না।”

সীমান্তকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিল শর্বরী। সৌভাগ্যক্রমে সালমা খানমও তখন উপরেই আসছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তার পিলে চমকে উঠলো। তার ছেলের বউ কিনা ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? এমন দিন দেখার ছিল তার? কী ভেবেছিলেন আর কী হচ্ছে! এ মেয়ের যে অবস্থা, সত্যি সত্যি নারী নির্যাতনের মামলা না ঠুকে দেয় তার ছেলের নামে। মাকে দেখে সীমান্ত অসহায় মুখ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। সালমা খানম চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখলেন। কী করবেন এখন তিনি? দুজনকে একেবারে ছাড়াছাড়ির ব্যবস্থা করাবেন? না না! মেয়ে ডেঞ্জারাস! যদি পুরো পরিবারের নামে কেস করে দেয়? সালমা খানম কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। মেয়ে সাইবাকে কল করলেন তিনি। হঠাৎ মায়ের কল পেয়ে সাইবা চটজলদি কল ধরলো।

-“হ্যাঁ মা বলো, হঠাৎ কল করলে যে! শরীর ঠিক আছে তোমার?”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। শোন, তোর ভাই ভাবীর মধ্যে ঝগড়া বাঁধছে, কী করা যায় বল তো।”

-“আহা মা! এসব তো হয়ই, একটু খুনসুটি তো সব বিয়েতেই হয়।”

-“না আমার সিরিয়াস মনে হচ্ছে।”

-“তোমার ছেলেকে বলো বয়স থাকতে থাকতে বাবা হয়ে যেতে তাহলেই আর বউয়ের রাগ টিকবে না।”

বলেই হাসতে লাগলো সাইবা। কথাটা সে হাসির ছলে বললেও সালমা খানমের পছন্দ হলো সেটা। তিনি আরো কিছুক্ষণ সাইবার সাথে কথা বললেন। অতঃপর কথা শেষ করে সীমান্তর সাথে কথা বলতে নিচে আসলেন। মাকে আসতে দেখে সীমান্ত দ্রুত মুখে একটা দুঃখী ভাব এনে বসে পড়লো। সালমা খানমও ছেলের পাশে এসে বসলেন।

-“কী হয়েছে বাবা তোর? এমন মলিন লাগছে কেন চেহারাটা?”

-“মা, শর্বরীর বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার কি ওকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে ও কেন নিজের ছেলে বন্ধুরবাড়িতে থাকলো?”

-“না না! এসব কেন জিজ্ঞাসা করতে যাবি? তাছাড়া ছেলে মেয়ে বন্ধু হতেই পারে আর আমার কী মনে হয় জানিস? এই আলেয়া মিথ্যে বলেছে। ও নিশ্চিত শর্বরীর ভালো চায় না তাই এমন করেছে।শর্বরী মোটেও অমন মেয়ে না।”

-“ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে মা। ওর সাথে আমি কিভাবে সংসার করবো বলো।”

-“বাবা নতুন বিয়ে তো, এসব তো হয়ই। তোরা একটা বাচ্চা নে তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বৌমাকে বোঝা।”

সীমান্ত মনে মনে হাসছে। যেখানে তার মা তাদের আলাদা করতে চাইছিল এখন সে-ই মা-ই ভিন্ন সুর গাচ্ছে।

-“এসব কথা আমাকে বলে লাভ আছে মা? আমি বললেই কি আর তোমার বৌমা মানবে?”

-“আলবাত মানবে! আমি বোঝাবো বৌমাকে।”

সীমান্ত হাসি আটকাতে পারছে না। কী এক নাটক সে শুরু করেছে! এ নাটকের জল কতদূর গিয়ে যে গড়াবে ভাবতেই হাসিতে পেটে ফেটে আসার উপক্রম হচ্ছে তার। দেখা যাবে তার মা এবার তাদের জন্য আরেকটা বাসর না সাজিয়ে বসে থাকে!

চলবে…