পান পাতার বৌ পর্ব-১৮+১৯

0
119

#পান_পাতার_বৌ
অষ্টাদশ_পর্ব
~মিহি

-“তোমরা বাচ্চা নাও একটা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো মা।”

-“বাচ্চা? আপনার ছেলের সাথে এক মুহূর্ত থাকবো না মা আমি। অনেক হয়েছে। আমাকে সন্দেহ করে আপনার ছেলে। তার সাথে কিভাবে থাকবো আর কেন-ই বা থাকবো?”

শর্বরী আর কিছু না বলে উঠে আসলো সালমা খানমের ঘর থেকে। তার মন ভালো নেই আজ। বাবা-মায়ের জন্য খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। শর্বরীর সঞ্চিত যা টাকা ছিল তা সে দিয়ে ফেলেছে। এখনো অনেকটা টাকা লাগবে বাড়ি ছাড়াতে। সীমান্তকে এসব বলেনি সে। বলার সুযোগ হয়নি।এখানেও তো আর সব স্বচ্ছভাবে চলছে না। অবশ্য সালমা খানমের আচরণ দেখে এখন হাসি আটকাতে পারে না শর্বরী। ভদ্রমহিলা নারী নির্যাতন মামলার ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন।

________________________

সীমান্তর ফিরতে ফিরতে এগারোটা পেরোলো। শর্বরী খাবার প্লেট সাজিয়ে ঘরে এনে রেখেছে। ডাইনিংয়ে বসে থাকলে সালমা খানম সন্দেহ করবেন। সীমান্ত ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে তার। সকাল থেকে কিছু খাওয়ার সুযোগ হয়নি, একটা কেস নিয়ে বেশ ভালোই প্যারার মধ্যে ছিল সে। শর্বরী সীমান্তর মাথার কাছে এসে বসলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

-“ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার সাজিয়ে রেখেছি।”

-“ভালো লাগছে না। তুমি খেয়ে নাও।”

-“কী হয়েছে আপনার?”

-“জানিনা। সবকিছু এলোমেলো লাগছে। তোমাকে নিয়ে সবকিছু সুন্দরভাবে শুরু করার কথা ছিল অথচ নাটক করতে হচ্ছে দুজনকে।”

-“নাটক কিন্তু ভালোই লাগছে আমার তবে একটা সিরিয়াস কথা ছিল আপনার সাথে।”

-“হুম বলো।”

-“আসলে মা আমাদের বাড়িটা বন্ধক রেখেছিলেন ভাইকে টাকা পাঠানোর জন্য। এখন আমার ভাই টাকা নিয়ে বলতেছে সে আর দেশে আসবে না। মা তো রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন। আমি সেদিন গেলাম না? মা গলায় দড়ি দিতে নিছিল।”

-“তুমি আগে বলোনি কেন এসব?”

-“সুযোগ কোথায় ছিল? কেবলই তো একটু সময় পেলাম আপনার সাথে ভালোমতো কথা বলার।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে, আমার একাউন্টে ভালোই টাকা আছে। আমরা কাল ও বাড়িতে ….”

-“সীমান্ত, বাবা-মা আপনার টাকা নিতে চাইবেন না। যতই হোক, জামাইয়ের টাকা দিয়ে…”

-“শর্বরী, তোমার এটা মনে হয়? আমি ওনাদের কাছে ছেলের মতোই। আমি তো শুধু তোমার দায়িত্ব নিইনি। বিয়ে মানে তো শুধু একটা বউ আনা নয়, আমি তোমার পরিবারেরও আপনজন এখন। তাদের প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে।”

-“আমি বুঝতে পারছি কিন্তু তারা বুঝবে না। তাছাড়া আমার মা সবসময় তার ছেলেকেই সব ভেবে গেছেন, সারাটা জীবন ছেলেই তার জন্য সব ছিল। আমিও এবার তার জন্য কিছু করতে চাই সীমান্ত। অন্তত একটু কিছু করেও আমি বোঝাতে চাই যে তাদের মেয়ে তাদের পর হয়ে যায়নি।”

সীমান্ত কিছু একটা ভাবলো। শর্বরী কথাটা মন্দ বলেনি তবে বাস্তবতা বিবেচনায় আনলে শর্বরীর কথা খানিকটা অযৌক্তিকই বটে। চাইলেই সে এখন সব টাকা একা জোগাড় করতে পারবে না।

-“শর্বরী, আমি জানি তুমি তোমার বাবা-মাকে সাহায্য করতে চাও কিন্তু এখন একা তোমার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। আমার টাকাটাও তোমারই। তোমাকে আমি তাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছি। মোহরানার সব টাকা এখনো তোমার হাতে আমি তুলে দিইনি যেটা তোমার অধিকার। আমি এখন সেই অধিকারের টাকাটাই তোমাকে দিচ্ছি। এতে নিষেধ করতে পারো না তুমি।”

সীমান্তর কথায় শর্বরীর মন ভারাক্রান্ত হয়ে এলো। এই মানুষটার সঙ্গে তার কতদিনের পরিচয় ছিল? একমাসও তো নয়। তবে এত গভীর বন্ধন দুজনের মাঝে অকস্মাৎ সৃষ্টি হওয়াটা বোধহয় বিবাহ নামক শব্দটার জোরই! দীর্ঘশ্বাস ফেলল শর্বরী। সীমান্ত আলতো করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।

_______________

সালমা খানম পায়চারি করছেন। ঘর অন্ধকার। সীমান্তর বাবা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন, ঘুম নেই সালমা খানমের চোখে। ছেলে রাত করে ফেরায় তিনি ছেলের ঘরে গিয়েছিলেন খোঁজ নিতে। ভাগ্যিস গিয়েছিলেন! ছেলে আর ছেলের বৌ এর দিনের বেলার নাটকটা তো ধরতে পারতেন না তা নাহলে। দিনে কী সুন্দর গজগজ করে কথা বলে অথচ রাত হলে কিনা নিজের টাকা শ্বশুরবাড়িতে পাচার করার ষড়যন্ত্র চলছে! সালমা খানমের কান্না আসে। যে ছেলে তার শাসনের বাইরে দু’কদম ফেলতে দ্বিধাবোধ করতো আজ সে ছেলে নির্ভাবনায় বউয়ের আঁচল তলে লুকিয়ে বাঁচছে। রাগে শরীর জ্বলে ওঠে সালমা খানমের। সকালটা হোক কেবল। অনেক হয়েছে ভালোমানুষি। এবার প্রলয় আসবে, এ বাড়ির চৌকাঠে ঘূর্ণিঝড় উঠবে এবার!

সে রাতে ঝড় উঠলো ঠিকই। প্রচণ্ড ঝড়ে সীমান্তদের বাড়ির সামনে বিরাট একটা গাছ এসে পড়লো। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে সারা বাড়ি পরিণত হলো অন্ধকার পুরীতে। বৃষ্টির প্রকাণ্ড শব্দেও ঘুম ভাঙলো না শর্বরী কিংবা সীমান্তর। বরং বৃষ্টির মন্দমধুর মৃদু হাওয়া যেন আরো গভীর করলো তাদের নিদ্রা। সকালের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো দুজনেরই। সালমা খানম যথারীতি নিচে চেঁচামেচি করছেন। শর্বরী যেতে চাইলে সীমান্ত বাধা দিয়ে নিজেই নিচে গেল। শর্বরীও আর উপরে বসে রইল না। সেও নিচে নামলো। সালমা খানম এতক্ষণ চেঁচামেচি করলেও সীমান্ত এবং শর্বরীকে নামতে দেখে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।

-“কী হয়েছে মা? সকাল সকাল এত চেঁচামেচি?”

-“তোর অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে?”

-“আছে লাখ সাতেক। কেন মা?”

-“টাকাটা আমাকে দে, এক্ষুণি।”

-“এত টাকা তুমি কী করবে এক্ষুণি? তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলো মা।”

-“তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে আমার? বউ চাইলে তো না করতি না! নাকি তোর বউয়ের মতো ঢঙ করে বলা লাগতো আমার? অত রঙঢঙ শিখিনি আমি। লজ্জাও নাই মেয়ের! জামাইয়ের টাকায় বাপ-মাকে খাওয়াতে চাও? ছিঃ!”

-“মা! এসব কেমন কথা? ওনারা আমাদের পরিবারের লোক। বিপদে ওনাদের সাহায্য …”

-“চুপ! তোদের বর বউয়ের নাটক শেষ করে এখন পিরিতির আলাপ শোনানো হচ্ছে আমাকে? আর তোর অ্যাকাউন্টের টাকা শুধুই তোর? তোর বাবা-মায়ের অধিকার নেই ঐ টাকাতে? তোর বউয়ের অধিকার শুধু ওটা?”

সালমা খানম গজগজ করতে থাকলেন। সীমান্তকে কিছু বলার সুযোগটুকু তিনি দিলেন না। শর্বরী সালমা খানমের কথা নিতে না পেরে চুপচাপ মূর্তির ন্যায় উপরে উঠে আসলো। সালমা খানমের বলা একেকটা কথা তার কানের পর্দায় এসে বাজতে লাগতো তীক্ষ্ম শব্দে। সত্যিই তো! সীমান্তর টাকায় তো তার বাবা-মায়ের অধিকারটাই প্রথম। সে কিভাবে এতটা স্বার্থপর হয়ে পড়লো? সীমান্ত একবার টাকা দিবে বলতেই সে কী করে গলে গেল? নিজের ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধটুকুর খাতিরও কেন সে করলো না? নিজের প্রতি প্রচণ্ড তাচ্ছিল্যবোধ জন্মালো শর্বরীর। সালমা খানম যেন এক নিমেষে তাকে অসহায় অবলা পরমুখাপেক্ষী এক স্ত্রীলোক হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার আত্মবিশ্বাসটুকু পায়ে মাড়িয়ে ফেললেন। নিজের দাম্পত্য জীবনের এত অবধি স্মৃতিটুকু ক্রমেই ঝাপসা হয়ে এলো তার সম্মুখে। চোখ বেয়ে নোনাজল গড়ালো ঠিকই, পরক্ষণেই সে জলের ঝাঁঝ টের পেল শর্বরী নিজেও। এবার অন্তত নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে হবে তার। সালমা খানম তাকে যে অস্তিত্বহীন খেতাবে জর্জরিত করেছে তার বেড়াজাল থেকে তো মুক্ত তাকে হতেই হবে। নতুন এক ঝড় শর্বরীর মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে তৎক্ষণাৎ, এক অতি নীরব ঝড়।

চলবে…

#পান_পাতার_বৌ
উনবিংশ_পর্ব
~মিহি

-“সীমান্ত, তোর মাথা গেছে? তুই এই মেয়েটার জন্য বাড়ি ছেড়ে যেতে চাস?”

সালমা খানমের চেঁচানোর মাত্রা বাড়লো। সীমান্তর তাতে কোনো ভাবান্তর ঘটলো না বরং সে নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে আছে। শর্বরীও চুপচাপ। সালমা খানমের রাগ ক্রমশ বাড়ছে।

-“আমি তো ভুল কিছু করছি না, মা। এত বছরের সংসারে বাবা কখনো তোমাকে ছেড়ে থেকেছে? তুমি যা বলেছো, বাবা তাতেই সায় দিয়েছে। তাহলে তোমার ছেলের বেলায় নিয়ম বদলে যাবে কেন মা?”

-“তুই তোর কাজকর্ম ছেড়ে ঐ মেয়ের বাড়ি গিয়ে ঘরজামাই হয়ে বসে থাকবি?”

-“আরে না মা, ট্রান্সফার নিয়ে নিব।”

-“আল্লাহ! এসব শোনার আগে আমার কান কেন বন্ধ হয়ে গেল না? আমার ছেলেটা নিজের মাকে ভুলে গেছে!”

-“মা, তুমি আমার একাউন্টে যা টাকা আছে তার সবটাই রাখো। এসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না।”

-“কিসের টাকা? টাকা দিয়ে কী হয়, হ্যাঁ? তুই আমার ছেলে? তোর দায়িত্ব নেই আমার প্রতি? নিজের মাকে অস্বীকার করে চলে যাচ্ছিস তুই?”

সীমান্ত হাসলো। এমন গুরুগম্ভীর আলোচনার মাঝে সীমান্তর এ হাসি কটূক্তি নাকি তাচ্ছিল্য বুঝে উঠতে পারলেন না সালমা খানম।

-“তুমি হাসছো কেন বেয়াদব ছেলে?”

-“হাসছি তোমার কথা শুনে, মা। তোমার সন্তানের দায়িত্ব আছে অথচ তোমার ছেলের বৌয়ের সন্তান হিসেবে কোনো দায়িত্ব নেই? সে কি ত্যাজ্য করেছে নিজের বাবা-মাকে?”

সালমা খানম চুপ হয়ে গেলেন কিন্তু তার রাগ তখনো কমেনি। বাড়িতে যে যুদ্ধ লেগেছে তাতে সীমান্তর বাবার ভূমিকা নীরব। তিনি কারো পক্ষ নিতে পারছেন না। তার স্ত্রী ভুল কিন্তু স্ত্রীর পক্ষে না থাকলে এ যুদ্ধে পেট্রোল ঢালার সম অপরাধ হবে। তাই তিনি নীরব ভূমিকাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

শর্বরী বেরোলো সবকিছু উপেক্ষা করে। সে অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বাবা-মাকে সে তুচ্ছ করতে পারে না। এ সিদ্ধান্ত সীমান্তরও। শর্বরী বেরোনোর পরপরই সীমান্তও বেরিয়ে যায়। সালমা খানম হতভম্ব হয়ে নিজ স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনিও নির্বাক হয়ে পড়েছেন। সালমা খানম গজগজ করতে করতে সাঈবার নম্বরে কল করলেন।

_____

-“আপনার মনে হয় আম্মা তাড়াতাড়ি আমার দিকটা বুঝবেন?”

-“দেখা যাক কতদিন লাগে।”

-“ততদিন আপনি আসলেই আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবেন? আম্মা যদি ঝামেলা করে?”

-“তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি দিনরাত বাড়িতে থাকি! আপাতত কিছুদিন আমি কোয়ার্টারে এডজাস্ট করে নিব। তুমি চাইলে আমার সাথে ওখানেই শিফট হতে পারো।”

-“না। আগে বাবা-মায়ের ওখানে গিয়ে শানজুর সাথে কথা বলতে হবে।আপনিও চলুন। টাকাটা ও নিয়েছে, ওকেই ফেরত দিতে হবে।”

সীমান্ত মাথা নাড়লো। শর্বরী কী চিন্তাভাবনা করে রেখেছে তা এখন পর্যন্ত জানেনা সীমান্ত তবে মেয়েটা যে কিছু একটা ভেবেছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে। শর্বরীর চোখেমুখে বরফগলা জলের ন্যায় স্তব্ধ শীতলতা। কিছু তো রহস্য আছে এ নিশ্চুপ মুহূর্তের মাঝে। তুফানের আসার পূর্বের নীরবতা কি এটা? সীমান্ত অবান্তর ভাবনাগুলো সরিয়ে রাখে। শর্বরীর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে তার। আপাতত এ মুহূর্তটাই সে সর্বোচ্চ উপভোগ করতে চায়।

-“এভাবে কী দেখছেন?”

-“যে চোখে আমি হারিয়েছিলাম, সে চোখে এখনো আগের মতোই গভীরতা আছে কিনা তাই খুঁজছিলাম।”

-“খুঁজে পেলেন?”

-“উহু..গভীরতা বেড়েছে বোধহয়, খুঁজতে গেলে তলিয়ে যাবো।”

শর্বরী খানিকটা হাসলো। তার ম্লানমুখে হাসির রেশ সীমান্তর হৃদয়ে যে বর্ষণের ধারা বয়ে দিয়ে গেল তা সে আন্দাজটুকুও করতে পারলো না। অবশ্য কিছু অনুভূতি আন্দাজ না করাটাই ভালো নয় কী? সীমান্ত শর্বরীর হাতে হাত রেখে তার কাঁধে মাথা রাখলো। বাসের শোরগোলের কিছুই আর তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। ভাগ্যিস বাইকটা ফেলে এসেছিল, নাহলে এই সুন্দর মুহূর্ত কী করে উপলব্ধি করতো সে?

__________

-“তুই ভাবতে পারছিস সাবু? ঐ মেয়ের জন্য? তোর ভাই ঐ দুদিনের মেয়ের জন্য নিজের মাকে অপমান করে চলে গেল? তুই-ই বল কোন ছেলে নিজের জমানো লাখ টাকা শ্বশুরবাড়িতে দান করে? এত দানশীল কোন জামাই?”

-“মা শান্ত হও। চেঁচামেচি করার কী আছে এখানে? টাকাটা তো ভাইয়ের। সে যখন চাইছেই ভাবীর পরিবারকে হেল্প করতে তখন অসুবিধা কোথায়?”

-“অসুবিধা কোথায় মানে? আমার ছেলে আমার হাত থেকে বের হয়ে যাচ্ছে আর তুই বলিস অসুবিধা কোথায়? তোর লজ্জা করছে না?”

-“মা শোনো, ভাই অন্যায়টা কী করেছে? সে নিজের বউয়ের পাশে আছে। তোমার মেয়ে জামাই যদি আমার পাশে না থাকে, তবে তুমি মেনে নিবা? নিবা না তো। তো যেটা তোমার মেয়ের বেলায় ঠিক, সেটা অন্য বাড়ির মেয়ের বেলায় ভুল কেন হবে? শর্বরীর দিকটাও তো ভাবো।”

সালমা খানম কল কেটে দিলেন। সবাই তাকে জ্ঞান দিতে শুরু করেছে। সবাই জ্ঞানী হয়ে উঠেছে, তিনি একাই যেন রাজ্যের বোকা। যত যাই হোক, ঐ মেয়েকে তিনি আর মানবেন না। কেমন করে তার ছেলেটাকে বশ করে ফেলল! সালমা খানমের চোখ ছলছল করছে। ছেলেটাকে তিনি সবসময় শাসনে আদরে নিজ আঁচলের তলে বড় করেছেন। সে ছেলে বউ টানে ছুটে চললে মায়ের খারাপ লাগবে না? বিয়েও করলো নিজের ইচ্ছেতে তাও তো সালমা কিছু বলেননি, মেয়ের ঘুমে হাঁটার অভ্যেস তাও তিনি চুপ ছিলেন। সবকিছু চুপচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন তিনি। সবার বাড়ির দরজায় টব ভাঙা, শর্বরীকে নিচু দেখানো এসবের উদ্দেশ্য ছিল শর্বরীকে সুস্থ করা। লোকের ভয় না টেলে শর্বরী কীভাবে সুস্থ হতো? এসব সীমান্ত বুঝবে? কুলাঙ্গার ছেলে পেটে ধরেছেন তিনি। বিহিত তো একটা করতেই হবে এখন।

-“তোমার রাগ এখনো কমেনি সালমা?”

-“রাগ কমবে? তোমার ছেলে মেয়ে সব ক’টা অকৃতজ্ঞ! নিজের মায়ের চেয়ে পরের বাড়ির মেয়ে ওদের কাছে প্রিয় হয়ে গেছে আজ। আমার ছেলেকে কেড়ে নিল ঐ মেয়ে!”

সীমান্তর বাবা আলতো করে সালমা খানমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। স্বামীকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সালমা খানম।

-“সালমা, তোমার মনে আছে তখনকার কথা যখন আমরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এ শহরে এলাম?”

-“হুম। তোমার ঐ যৌথ পরিবারের ক্যাঁচ ক্যাঁচ! এখানে এসে একটু শান্তি পেয়েছিলাম।”

-“আমি কি তোমার পাশে ছিলাম সেদিন?”

-“হুম।”

-“তোমার কি মনে হয়েছিল আমি ভুল করছি? আমার তোমায় নিয়ে আলাদা থাকা উচিত না?”

-“তা কেন হবে? আমাদের সংসারে আমাদের একটা ইচ্ছে আছে না?”

-“তোমার ছেলের সংসারে কি তার ইচ্ছে নেই তবে?”

সালমা খানম এতক্ষণে নিজের স্বামীর এই পুরনো কাসুন্দি ঘাটার অর্থ বুঝলেন। তিনি আর হলে বসলেন না। চুপচাপ উঠে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। শব্দটা জোরে হলেও স্বামীকে সেখানেই বসে থাকতে দেখলেন তিনি। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ফ্যান ছেড়ে চিৎকার করে উঠলেন সালমা খানম। তার আধিপত্য কি তবে শেষ? পুঁচকে একটা মেয়ে তার সংসারে দখলদারি করতে এসে পড়েছে?

চলবে…