#পাপমোচন (৫ম পর্ব)
-থানায় পৌঁছানোর পর ওসি সাহেবের রুমে ঢুকতেই তিনি আমাদের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,’ ওহ এসেছেন আপনারা! আসুন ভিতরে আসুন। আপনাদের জন্যই এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।’
বাবা আর আমি দুজনে ভিতরে প্রবেশ করে ওসি সাহেবের সামনের চেয়ারে বসলাম। চেয়ারে বসার পর বাবা উৎকণ্ঠার স্বরে জানতে চেয়ে বললেন,’ স্যার কি হয়ছে? এত জরুরীভাবে ডাকলেন যে! বাচ্চাটার বাবা-মায়ের খোঁজ পেয়েছেন?’
ওসি সাহেব বিরস মুখে উত্তর দিলেন,’ মেয়েটার বাবা-মায়ের খোঁজ এখন পর্যন্ত মিলেনি। মেয়েটার পরিচয় জানতে চেয়ে বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই খোঁজ পেয়ে যাব আশা করছি।’
ওসি সাহেবের এহেন কথা শুনে বাবা এবার দমে গেলেন। তারপর হতাশা জড়ানো কণ্ঠে বললেন,’ তাহলে?’
‘আপনার মেয়ের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টা হাতে পেয়েছি। আপনার মেয়ে জামাই কোথায়? তাকে আসতে বলেন নি?’
আমি উত্তর দিলাম,’ হ্যাঁ স্যার। কল করেছিলাম। এসে পড়বে কিছুক্ষণের ভিতরে।’
আমার কথা শেষ না করতেই ভিতরে হন্তদন্ত হয়ে রিয়াদ ভাইয়া প্রবেশ করলো। তারপর আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতেই তাকে আমার চেয়ারটা ছেড়ে আসন গ্রহণ করতে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি।
রিয়াদ ভাইয়া চেয়ারটায় বসে পড়ে একবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে আমাদের সবার দিকে তাকালো।
ওসি সাহেব চেয়ারে নড়ে-চড়ে নিয়ে বসলেন। তারপর আমাদের তিনজনার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন,’আপনাদেরকে যে জন্য ডেকেছি, আসলে আমার অনুমানই সঠিক। আপনাদের মেয়ে ড্রাগস নিতো। নিতো বললে ভুল হবে, তাকে জোর করেই ইনজেক্ট করা হয়েছে এই কয়দিনে।
আই মিন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে যতটুকু অনুমান করছি, মিসেস সুমনাকে সেদিন রিয়াদ সাহেব অন্য একটা গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয়েছিলো। আর তারপর থেকে তার শরীরে এই কয়দিনে অসংখ্যবার ড্রাগস পুষ করা হয়েছে। এছাড়াও…
বাবা জড়ানো স্বরে জানতে চাইলেন আবার,’ এছাড়াও কি স্যার? সবটা খুলে বলুন। আমি জানতাম আমার মেয়ে এমন খারাপ কাজ কখনোই করবেনা। আমার মেয়ে কোনো খুন করতে পারেনা। নিশ্চয় তাকে কেউ ফাঁসাতে চাইছে। কি হয়েছে স্যার পুরোটা বলুন।’
‘আপনার মেয়ের শরীরে কয়েক জায়গায় সিগারেটের পোড়া দাগ সহ কয়েকজন পুরুষের সিমেন পাওয়া গিয়েছে! এর থেকে স্পষ্ট হয় যে আপনার মেয়ের অপহরণ হয়েছিলো। এবং অপহরণের পর তার শরীরে ড্রাগস দিয়ে অনেকবার জোরপূর্বক শারিরীক মিলন করা হয়েছে।’
ওসি সাহেবের কথাগুলো শুনে আমাদের তিনজনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো এবার! বাবা নিজের মুখ চেপে ধরে কান্না সংবরণ করার চেষ্টা করে বললেন,’ হে খোদা,বাবা হয়ে নিজের মেয়ের এমন খবরও শোনার ছিলো আমার! ওসি সাহেব আমার মেয়েটা কার কি এমন ক্ষতি করেছিলো,যার জন্য তার সাথে এতবড় অন্যায়টা করা হলো।’
‘দেখুন আপনার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু শুধু সিমেন দিয়ে তো এত সহজে ভিক্টিমদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু মিসেস সুমনার অপহরনের সাথে ওই বাচ্চা মেয়েটার খুন হওয়ার সম্পর্কটা ঠিক কি,সেটাই ভাবাচ্ছে আমাকে।
এখন ওই বাচ্চা মেয়েটায় শেষ ভরসা। দেখি ওর বাবা-মায়ের যদি কোনো খোঁজ পাই।
আচ্ছা আপনারা মিসেস সুমনার ডেড বডিটা এখন নিয়ে যেতে পারেন।’
ওসি সাহেবের মুখে কথাগুলো শোনার পর বাবা তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলবার সাথে সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও বোধ হয় হারিয়ে ফেলেছেন। চেয়ারে বসে থরথর করে কাঁপছেন! আমি আর রিয়াদ ভাইয়া দুজন মিলে বাবাকে শান্ত করিয়ে বেরিয়ে আসার সময় বাবা পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে ওসি সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,’ স্যার আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?’
ওসি সাহেব মুখ তুলে তাকালেন। বললেন,’ হ্যাঁ বলুন।’
‘স্যার আমার মেয়ের এই খবরটা আর পাঁচকান করবেন না দয়া করে। মেয়েটা আমার মৃত্যুর আগে না জানি কতই না মানসিক যন্ত্রনা পেয়ে মরেছে। আমি চাই না,মৃত্যুর পরও সবাই আমার মেয়ের নামে বাজেভাবে আঙুল তুলুক। এসব বলাবলি করে তার আত্মার কষ্ট দিক।’
ওসি সাহেব উত্তর দিলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
তারপর বাবাকে সাথে নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে মর্গের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। তিনজন মিলে যখন মর্গে গিয়ে পৌঁছালাম আপুর মৃত শরীরটাকে নেওয়ার জন্য,বাবা তখন আরও বেশি ভেঙে পড়লেন।
মর্গে ঢুকে আপুর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পেয়ে উম্মাদের মত ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা শিশুর মত ডুকরে কেঁদে ফেললো বাবা। গতকাল থেকে সবাইকে সাহস জোগাতে থাকা মানুষটা এখন নিজেই সব নিরবতা ভেঙে হাউ হাউ করে কাঁদছে আপুর মুখটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
দু’জন মিলে কোনরকমে বাবাকে শান্ত করিয়ে তারপর আপুর লাশটাকে মর্গ থেকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। পোস্টমর্টেম করা লাশ বেশিক্ষণ রাখা সম্ভব হলো না। মা’কে শেষবারের মত একবার আপুর মুখটাকে দেখিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আপুকে কবরস্থ করানোর ব্যবস্থা করা হলো।
কবর দেওয়ার পর সবাই যে যার মত করে চলে গেলে; আমি, বাবা,রিয়াদ ভাইয়া সহ তার বাবা বজলুল শিকদার চারজন আপুর কবরের সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম শেষ যাত্রী হয়ে।
আপুর সমস্ত অভিমান,অভিযোগ আর বলতে না পারা কথাগুলোও আপুর সাথে সাথে মাটির নিচে চাপা পড়ে শান্ত হয়ে গিয়েছে।
সদ্য কাঁচা বাঁশের রেলিং ধরে বাবা একনাগাড়ে কেঁদে চলেছে। আমার ছোট মাথায় সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে তোলার মত কোনো শব্দ এইমূহুর্তে আসছেনা। বাবাকে বুঝ দেওয়ার সাধ্যি আমার নেই, মানুষটাকে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখিনি আমি। বাবার কান্না দেখে বার বার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমারো।
বজলুল শিকদার বাবাকে আপুর কবরের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে ধির পায়ে কবরস্থান থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। চলে যাওয়ার সময় সবাই মিলে শেষবারের মত আপুর কবরটাকে দেখলাম আরও একবার। আমাদের সবাইকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে পরম শান্তিতে আপু ঘুমিয়ে আছে।
বাড়ি ফিরে দেখলাম মা সোফার একপাশে পাথরের মূর্তির মত বসে আছে। নির্বিকার অথচ শান্ত মুখের গাল বেয়ে অনবরত টপটপ করে পানি পড়ছে অঝোরে।
জানিনা আপু হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে কতদিন লাগবে তাঁদের ? বা আদৌও আগের মত সবকিছু স্বাভাবিক হবে কি না।
——–
এরপর কেটে গিয়েছে দুইমাস। আপুর মৃত্যুর পর বাবা-মা দুজনেই কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।
বাবা এখন খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হন না। সারাদিন বাড়িতেই মনমরা হয়ে বসে থাকেন। খুব দরকারী কোনো কাজ থাকলে জলদি করে সেরে আবার বাড়ি ফিরে আসেন। যেন এই বাড়িটায় এখন তার শেষ আশ্রয়।
প্রাণোচ্ছল বাড়িটা এখন দিন-রাত বিষাদের চাদরে ঢাকা পড়ে থাকে। প্রথম দিকে বাবার বন্ধু, প্রতিবেশিরা সহ রিয়াদ ভাইয়ার পরিবারের লোকজন এসে বাবা-মা’কে সান্ত্বনা দিতো,সাহস জোগাতো। কালের বিবর্তনে একসপ্তাহ যেতে না যেতেই সবাই আবার নিজ নিজ সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রিয়াদ ভাইয়ার পরিবারও যাতায়াতের পরিবর্তে ফোন কল আর তারপর তা বাড়তে বাড়তে দুদিনে একবার, একসপ্তাহে একবার আর এখন ফোন দেওয়ারই প্রয়োজন মনে করেনা।
এলাকার মানুষজনও এখন আমাদেরকে দেখলে আড়ালে আবডালে কটুকথা বলে। বাবার দিকে আঙুল তুলে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটলে ভিড়ের ভিতরে থেকে বলে ওঠে,’ এই দ্যাখ ড্রাগ ডিলারের ভাই আর বাবা যাচ্ছে। আমাকে দেখলে ব্যঙ্গ ভরে বলে, শ্রাবণ মা*ল হবে নাকি? ব্যাগের ভিতরে কি রে, আপুর মত আবার কারও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছিস না তো?’
বাবাকে অনেকবার বলেছি এইখান থেকে অন্যকোথাও চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাবার একটাই কথা,মেয়েকে হারিয়েছে এখন এলাকার মানুষজনের কটুকথায় মেয়ের শেষ স্মৃতি আর পৈতৃক ভিটা থেকে সে কোথাও সরবে না। এই বাড়িতে জন্ম আর এইখানেই সে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।
কিন্তু এলাকাবাসিদেরকে কে বোঝাবে? তারা মুদ্রার এপিঠের গল্পটা শুনে রিজেরাই নিজেদের মনমত গল্প বানিয়ে নিয়েছে। তারা ধরেই নিয়েছে বাচ্চা শিশুটিকে আপু নেশার ঘোরে খুন করে তারপর ব্যাগে ভরে রেখেছিলো। কিন্তু মুদ্রার ওপিঠের গল্পটা তাদেরকে কে বিশ্বাস করাবে? বিশ্বাস করলেও সেটা স্বাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে বেশিক্ষণ ধোপে টিকেনা। সমাজের চোখে আপু একজন খুনি আর ড্রাগ এডিকক্টেড নারী।
কিন্তু যেই মানুষটা বিশ্বাস করতো,আজকাল সে-ও আর আপুর এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে চাইছে না। শুনলাম কিছুদিন হলো রিয়াদ ভাইয়া তার আগের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে পদোন্নতি নিয়ে নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে। শহরে নতুন বাসা নিয়ে বাবা-মা’কে সাথে নিয়ে সেখানেই থাকছে। নতুন চাকরি নিয়ে ভিষণ রকমের ব্যস্ত দিন পার করছে। আপুর এসব নিয়ে ভাববার ফুরসত কোথায় তার।
বাবার শরীরটাও ক্রমশই আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। একা একা চারদিক সামলাতে গিয়ে দিনকে দিন হাঁপিয়ে উঠছি আমি। এদিকে দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে থানায় যেতে যেতে তাদের প্রতি তিক্ততা এসে গিয়েছে নিজের ভিতরে। তারা এতদিনে না পেরেছে বাচ্চা শিশুটার পরিচয় বার করতে না পেরেছে আপুর কেসের কোনোরকম সুরাহা করতে। শেষমেশ বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে বাচ্চা মেয়েটারও একটা গতি করে দিয়েছে মর্গ কর্তৃপক্ষ।
এখন মাঝেমধ্যে যখন থানায় যায় আপুর কেসটার জন্য ওসি সাহেবের ভিতরে তেমন কোনো হেলদোল দেখিনা। প্রথম প্রথম ওসি সাহেব একটু গুরুত্ব দিলেও দিনকে দিন আপুর কেসটা নিয়ে তার ভিতরেও অনীহা দেখা দিয়েছে৷ আমি গেলেই একগাল হেসে বলে,’ আমরা তদন্ত করছি। এসব কেস কি আর এত জলদি মিটে যায় নাকি।’
রোজ রোজ এসব কথা শুনে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। বাড়ি ফিরতেই বাবা ছোট বাচ্চাদের মত কৌতুহলী চোখে আপুর খুনিদের ব্যাপারে জানতে চাইলে যখন চিরাচরিত একটা বাক্য ‘চেষ্টা করছে এখনো’ কথাটা বলি তখন বাবার মুখটা কালো হয়ে যায়। সেই সাথে পরাজিত আমার মুখ থেকেও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তখন। আদৌও কি থানার লোকজন আপুর আত্মহত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পারবে? নাকি আর দশটা কেসের মত ধুলো জমা লকারে আবব্ধ হয়ে চাপা পড়ে যাবে আজন্মকালের জন্য!
আপুর মৃত্যুর পর থেকে বাবা কাজকাম বন্ধ করে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন একবারে। সারাক্ষণ জড় পদার্থের মত ঘরের ভিতরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে, আর আপুর ঘরে ঢুকে দেওয়ালে ঝুলতে থাকা আপুর ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই কথা বলে। সংসারের দায়িত্ব এখন আমার উপরেই পড়েছে। বাবার জমানো অল্পকিছু যা টাকা ছিলো তা এই দু-মাসে থানা হাজত আর বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়েই ফুরিয়ে গিয়েছে। এখন লেখাপড়া বাদ কারখানায় কাজের পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করে কোনরকম চালিয়ে নিচ্ছি সংসারটাকে।
আজকে মাসের পাঁচ তারিখ,টিউশনির বেতন পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্টুডেন্টের মা’কে নির্লজ্জের মত বেতনের টাকার কথা বলতেই তিনি জানালেন, এমাস টা তাদের একটু টানাপোড়নে যাচ্ছে। আগামীমাসে একসাথে দিয়ে দিবে। ভেবেছিলাম টিউশনির টাকাটা পেলে মায়ের জন্য ঔষুধ কিনে নিয়ে যাব। কয়দিন ধরে মায়ের হাঁপানিটা ভীষণরকমের বেড়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
রাতে মনখারাপ করে বাড়ি ফিরলাম। আজকাল কেন জানি বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করেনা আমার। বাড়ি ফিরলেই মায়ের দুখি মুখ আর বাবার ভেঙে পড়া শরীরটা দেখলে মনটা নিজের অজান্তেই কেঁদে উঠে।
বাড়ি ফিরে কয়েকবার কলিং বেলে চাপ দিলাম। এখন কলিং বেল চাপলেও সাথে সাথে কেউ এসে দরজা খুলে দেয়না। কলিং বেল বাজিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন বাবা-মা কেউ দরজা খুললো না তখন নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
ভিতরে ঢুকে রোজকার মত মা’কে কয়েকবার ডাক দিলাম।
কিন্তু মা কোনো উত্তর করলো না। ভাবলাম হয়তো মায়ের শরীরটা একটু বেশিই খারাপ,তাই বাবা-মা দুজনেই নিজেদের ঘরে আছেন। প্রচন্ডরকম ক্ষুধা পেয়েছে।
নিজের ঘরে ঢুকে কোনরকম হাত-মুখে পানি দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আবার বাবা-মাকে ডাক দিলাম।
‘মা অনেক ক্ষুধা লেগেছে,কিছু খেতে দিবা?’
এবারও কোনো উত্তর এলো না। টেবিল থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে ঢকঢক করে পানি টুকু খেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলাম, বাবা-মা দুজনেই ঘুমোচ্ছেন।
আজ বাড়ি ফিরতে বোধহয় একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছি। ঘুমন্ত বাবা-মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে মায়ের মাথায় হাত দিতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার।
মায়ের মুখ থেকে বুদবুদ করে সাদা ফ্যানা টাইপের কিছু একটা বেরিয়ে ঠোঁটের কোণ বেয়ে বালিশের উপরে গড়িয়ে পড়েছে। বাবার দিকে তাকালাম,বাবারও একই অবস্থা।
বাবা-মায়ের অবস্থা দেখে মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত খেলে গেলো মুহুর্তেই!
‘মা কি হয়েছে তোমার!’
বাবা-মা দুজনেই যেন ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছে। মায়ের হাতে-মুখে হাত দিতেই মনে হলো মায়ের শরীরটা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে! খানিকটা ঝুঁকে পড়ে মায়ের মুখের কাছে নাক রাখতেই নাকে একটা বিশ্রী গন্ধ এসে ধাক্কা খেলো! তারপর চোখ তুলে বাবার দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো বাবার হাতের দিকে। বাবার ডান হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রাখা আছে ছোট্ট একটা কাঁচের শিশি আর সাদা চিরকুট!…
চলবে..
#আশিক_মাহমুদ