পায়ে পায়ে হারিয়ে পর্ব-০৫

0
23
পায়ে_পায়ে_হারিয়ে
পায়ে_পায়ে_হারিয়ে লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান

#পায়ে_পায়ে_হারিয়ে
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৫

নতুন বাসার তিনতলা ভাড়া নিয়েছে আদিয়ান। মালপত্র কিনেছে অল্পস্বল্প। আগের যে খাট ছিল, সেটা ইমরুলের জন্য ছেড়ে দিয়ে নতুন খাট নিয়েছে একটা সিঙ্গেল ও একটা ডাবল। দুটো ছোটো সাইজের ড্রেসিংটেবিল, দুটো আরএফএল ওয়ারড্রব, একটা ডাইনিং টেবিল, ছ’টা চেয়ার আর বেতের একসেট সোফা সাথে টি-টেবিল। এছাড়াও রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সব খরচ করে হিসেব মিলিয়ে দেখল, দেড় লাখ টাকা হাওয়া। খুবই মিতব্যয়ী ও হিসেবী হওয়ার কারণে হুট করে এতগুলো টাকা একসাথে খরচ হওয়াতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল তার। সব মালপত্র দুটো রুম, রান্নাঘর ও ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে, নতুন ঘরটা সাজিয়ে নিল। বাড়িওয়ালী আন্টির কাজের মেয়েটা সব কাজে সাহায্য করেছে। ঘর সাজানো শেষে দু’মাসের অ্যাডভান্স দিয়ে দিল আদিয়ান। ভদ্রমহিলা খুশি হয়ে বললেন,

‘এখুনি টাকা না দিলে চলত, বাবা। কত টাকা খরচ হয়ে গেল আজ তোমার।’

আদিয়ান মুচকি হেসে বলল,
‘অ্যাডভান্স দিতে হয়, এটাই তো নিয়ম, তাই না?’

‘তা ঠিক। শোনো, এখন কিছু রান্না করার দরকার নেই। রুমঝুমকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, খেয়ে নিও।’

এরপর ক্লান্ত-শ্রান্ত রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘যদি রান্না করতে কষ্ট হয়, আমাকে বোলো, কেমন? আমি খাবার পাঠিয়ে দেব। যখন যা খেতে মন চাইবে, মুখফুটে বললেই হবে।’

বাড়িওয়ালী আন্টির এত ভালোমানুষী হাবভাব কিছুটা সন্দেহের মনে হলো। এত অল্পতেই কেউ কারও আপন হয়ে যায়? লজ্জিত হেসে রুমঝুম বলল,

‘আমি রান্না করতে পারি, আন্টি।’

‘তাতে কী? মেয়েকে কি খাওয়াতে পারি না? তুমি তো আমার মেয়েরই মতো।’

এইটুকু বলেই অশ্রুসিক্ত নয়নে রুমঝুমের সম্পূর্ণ চেহারায় হাত বুলিয়ে দিলেন মাজেদা খাতুন। আবেগভরা কণ্ঠে বললেন,
‘দীর্ঘায়ু হও, মা। অনেকদিন বাঁচো। আজ যদি আমার মেয়েটা বেঁচে থাকত, তোমার মতোই হতো।’

ডুকরে কেঁদে উঠলেন ভদ্রমহিলা। রুমঝুম ও আদিয়ান মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। আদিয়ান জানতে চাইল,
‘আপনার মেয়ে বেঁচে নেই?’

‘পাঁচ বছর আগে সুইসাইড করেছে।’

এক মায়ের দুঃখ ও কষ্ট অনুভব করতে পেরে রুমঝুমের কণ্ঠও বসে গেল। সে ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘কেন আন্টি?’

‘একটা ছেলেকে ভালোবাসত। ছেলেটা সনাতন ধর্মাবলম্বী। দু’জনের বয়স অনেক কম, সবে চৌদ্দ। তাছাড়া, দুই ধর্মের বিশাল ব্যবধানের কারণে আমরা কেউ-ই ওদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারিনি। ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিধিনিষেধ মানার মতো ধৈর্য্য ও মনের জোর ওদের ছিল না। আবেগকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে দিল ওরা। এক সকালে, দু’জনেই একসাথে সুইসাইড করে মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছিল।’

পুরনো স্মৃতিকে স্মরণে এনে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মাজেদা খাতুন। কান্নার মাত্রা একসময় বাড়ল। কতকিছু বলে গেলেন তিনি। রুমঝুম কিছুই শুনলো না। শুকনোমুখে আদিয়ানের দিকে তাকাল। তার রাগত্ব দৃষ্টি দেখে বুঝে নিল, এই ছেলে এখন তাকে গিলে খাবে। জীবন নিয়ে একগাদা উপদেশ শুনিয়ে প্রেম-ভালোবাসাকে এক লহমায় তুচ্ছ করে দিয়ে বলবে, ‘মরবি? আয়। তোরা দুটোও একসাথে মর। বেঁচে থেকে কী করবি? মাতাল কোথাকার।’ গত কয়েকমাস আগে তাদের দু’জনার পরিস্থিতি ঠিক এরকমই একটা জায়গায় ছিল, যখন রুমঝুমের কাছে কোনো অপশন ছিল না। শুভ ছিল চরম অসহায়। বাবা-মাকে যখন পছন্দের পাত্রীর কথা জানিয়েছিল, শুভর বাবা এক বাক্যে জানিয়েছেন, ‘যদি ওই মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকো, তাহলে আমার কাছে চিরদিনের জন্য মৃত হয়ে যাবে।’ আর শুভর মা বলেছিলেন, ‘তুই যদি ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখিস, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।’ কেন, কী কারণে, ভালোবাসার মতো সুন্দর একটা অনুভূতির প্রতি মুরব্বি মানুষদের এত বিতৃষ্ণা সেটা শুভ বুঝতে পারেনি। এদিকে রুমঝুমকে ভালোবেসে প্রাণ তার ওষ্ঠাগত। ছেড়ে যাওয়া মানে বিশ্বাসঘাতকতা করা। বিশ্বস্ত মানুষ ও মনের একমাত্র দাবীদার যে তার সাথে ধোঁকাবাজি করার মতো সাহস সে পায়নি বলেই, অপরাধী মন নিয়ে রুমঝুমের কাছে জানতে চেয়েছিল,

‘তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে না, রুমঝুম?’

সম্পর্ককে পরিণয়ের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে শুভ যখন এই কথা বলেছিল, রুমঝুমের মনে হচ্ছিল সে একটা দারুণ কোনো কৌতুক শুনেছে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বলেছিল,

‘ফাজলামি করছ আমার সাথে?’

শুভ সিরিয়াস কণ্ঠে বলেছিল,
‘না… রুমঝুম। সত্যি বলছি। বাবা-মা তোমার আর আমার এই সম্পর্ক মেনে নিবেন না।’

‘কেন?’

‘জানি না।’

‘আংকেল-আন্টি মানতে পারবেন না বলে তুমি আমাকে দূরে সরে যেতে বলছ?’

‘হুম…।’

‘তুমি তোমার বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসো, তাই না?’

‘হুম…।’

‘তাদের জন্য তুমি সব করতে পারো?’

এই কথা শোনার পর রুমঝুমের দিকে সরাসরি দৃষ্টি রেখেছিল শুভ। দেখেছিল, মেয়েটার চোখের কোণ ঘেঁষে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে ভালোবাসার মতো দামী সম্পর্কের সাথে বিচ্ছেদের অশ্রু। সে হাত বাড়িয়ে ঝরে পড়া নোনাজল মুছে দিতে চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই দূরে সরে গেল রুমঝুম। অভিমানী কণ্ঠে বলল,

‘তুমি আর আমার সামনে আসবে না, যাও।’

এরপর ছুটে পালিয়ে গিয়েছিল। সামান্য একটা কথার ওপর ভিত্তি করে, শুভর ভালোবাসাকে তুচ্ছ ও স্বল্পমেয়াদী অনুভূতি ভেবে রাগ-অভিমান দেখিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিতে যাচ্ছিল সে। দু’দিনের ছুটি নিয়ে ওইদিন বিকেলে বাড়ি এসেছিল আদিয়ান। মাঝরাতে দুটো মানুষের আড়ালে দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিল সে। তাই রুমঝুমকে ওভাবে ছুটে যেতে অবাক হয়েছিল। বন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিল ঘটনা কী। শোনে একমুহূর্ত দেরী করেনি সে, ঝড়েরবেগে ঘরে এসে বাড়ির প্রতিটা কোণায় রুমঝুমকে খুঁজেছে। না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখেছিল, ছাদলাগোয়া বিশাল সাইজের আম গাছে সে নাইলনের দঁড়ি দিয়ে ফাঁস দেয়ার আকৃতি দিচ্ছে। হুটহাট এমন দৃশ্য দেখে রাগ চেপে বসলো আদিয়ানের মাথায়। ছুটে গিয়ে দু’চারটে চড়থাপ্পড় মেরেছিল। ব্যথা পেয়ে কেঁদে ফেলেছিল রুমঝুম। বলেছিল,

‘মারো, মেরে ফেলো। আমি বেঁচে থেকে কী করব আর? তুমি তো জানোই, বাবা কোনোদিন প্রেম-ভালোবাসাকে মেনে নিবেন না। যেখানে দুই ফুপি বছরের পর বছর ভালোবেসে বাবার জেদ ও আত্ম-অহমিকার কাছে হেরে গিয়ে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করে জীবন খোয়াতে বাধ্য হয়েছে, সেখানে আমাকেও একদিন ওই একইপথ বেছে নিতে হবে। আমি পারব না, ভালোবাসাবিহীন সম্পর্ক টেনে নিতে। শুভর বাবা-মা’ও ঠিক একই ধরনের মানুষ। ভালোবাসা এদের কাছে তুচ্ছ। বেঁচে থেকে যদি ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বাঁধতে না পারলাম তাহলে এই জীবন দিয়ে আমি কী করব? এরচেয়ে আমার মরে যাওয়া ভালো। মারো, আরও মারো। এতে যদি তোমার মামা বুঝতে পারেন, প্রতিটা মানুষের জীবনের সিদ্ধান্ত কেবল ওই মানুষটারই হওয়া উচিত।’

কাঁদতে কাঁদতে একপর্যায়ে গলায় দঁড়ি দিতে গেলে আদিয়ান বলেছিল,
‘এত হাইপার হোস না, মাথা ঠাণ্ডা রাখ। আমি দেখছি কী করা যায়।’

‘কিছু করতে পারবে না তুমি। কিচ্ছু না। আমাদের আলাদা হতেই হবে। এটাই নিয়তি। কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে না। কেউ না।’

‘তুই টেনশন করিস না। রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে। আগামীকালের মধ্যেই একটা সমাধান পেয়ে যাব।’

অথৈজলে ডুবতে ডুবতে রুমঝুম যেন হঠাৎই প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। জানতে চেয়েছিল,
‘কী করবে?’

আদিয়ান কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলেছিল,
‘সব বাবা-মায়েরাই এরকম করে। প্রথমে কোনো কারণ ছাড়াই প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে না নিয়ে গোয়ার্তমি করে। কিন্তু দুটো মানুষ যখন নিজেরা নিজেরা বিয়ে করে ফেলে, পরবর্তীতে ঠিকই মেনে নেয়।’

‘কী বলতে চাইছ তুমি?’

‘তুই শুভকে চাস তো?’

‘অবশ্যই চাই।’

‘তাহলে পাগলামি বন্ধ করে রুমে যা। আগামীকাল সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

রুমঝুমকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপের পথ থেকে ফিরিয়েছিল আদিয়ান। দুটো মানুষকে এক করার চিন্তায় তখন তার মনে হয়েছিল, যদি ওরা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে ছোটোখাটো একটা ঝামেলা হবে এবং পরবর্তীতে ঠিকই ওরা এক হয়ে যাবে। এজন্যই দুটো মানুষের মধ্যকার ভালোবাসা ও বিশ্বাসের বন্ধনকে মজবুত করতে ঝুঁকি নিয়েছিল সে। ভেবেছিল, বিয়ের কয়েকদিন পর রাশেদুজ্জামানকে মানিয়ে নিবে। কিন্তু তা আর হলো না। পরদিন আসিফ ও মিলিকে সাক্ষী রেখে ওদের বিয়ে দিয়েছিল, বলেছিল সময়-সুযোগে মামাকে সে বুঝাবে। মানাবে। সেই সময়টা আর আসেনি। সে নিজের কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে গ্রামে আসা ছেড়ে দিল। এদিকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে সময় কাটাতে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখা করতে আসত শুভ। কখনও পুকুরপাড়ে, কখনও স্কুলের মাঠে অথবা কখনও কলেজ-ক্যাম্পাসে দেখা করত দু’জনে। আদিয়ান জানত শুভ কাজে ব্যস্ত। কিন্তু দিনের পর দিন যে গ্রামে তার আসা-যাওয়া বেড়ে গেছে এটা সে টের পায়নি, রুমঝুমও তাকে কিচ্ছু বলেনি। বলার কথাও না। দু’জনের মধ্যে সে তখন তৃতীয়জন। তাই তার কোনো গুরুত্ব ছিল না। এরপর যখন শুভর গ্রাম থেকে খবর এলো, বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করে বসে আছেন, সেদিনই সব কথা আদিয়ানের সাথে শেয়ার করল সে। জানাল,

‘রুমঝুমের সাথে সম্পর্কটা এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে সম্পর্কটাকে তুচ্ছ ভাবার কোনো পথ নেই আর।’

শান্তকণ্ঠে জানতে চেয়েছিল আদিয়ান,
‘কী করবি তুই?’

‘বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে সব কথা জানাব।’

‘যদি মেনে না নেন?’

‘ওনাদের ত্যাগ করব।’

‘এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না?’

‘আমি রুমঝুমকে হারাতে চাইছি না।’

‘ওই মেয়েটাকে কী বলবি?’

‘সব সত্যি বলব। এরপর নিজের অপারগতা দেখিয়ে ঢাকায় ফিরে চাকরীতে মনোযোগ দিব আর রুমঝুমকে নিয়ে নতুন করে সংসার সাজাব।’

শুভর চিন্তাভাবনা শোনে নির্ভার কণ্ঠে আদিয়ান বলেছিল,
‘ঠিক আছে। তুই যা। যদি ম্যানেজ করতে না পারিস, ফোন করে জানাবি। ছুটিতে যখন গ্রামে যাব, মামাকে বুঝাব।’

‘ওকে। এখন আয়, আমাকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দে। আমি বিকেলের টিকিট কেটে রেখেছি।’

সেইযে শুভ বিদায় নিল আর তো ফিরে এলো না। হঠাৎ করে বন্ধুর কথা মনে হওয়াতে অদ্ভুত শূণ্যতায় বুক মুচড়ে উঠল আদিয়ানের। মাজেদা খাতুন ও রুমঝুমকে রেখে সে নিজের রুমে চলে গেল। রুমঝুম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘আমাকে আপনি আপনার মেয়ে ভাবতে পারেন, আন্টি। এতে আপনার কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।’

মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে রুমঝুমের কপালে আদর দিলেন তিনি। বললেন,
‘যাও, বিশ্রাম নাও। পরে কথা হবে।’

ভদ্রমহিলা চলে যাওয়ার পর দরজা আটকে নিজের রুমের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল রুমঝুম। বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে হঠাৎই মনে পড়ল, শুভ তো এই শহরেই চাকরি করত। কোন অফিস, কোন জায়গা সেটা? তৎক্ষনাৎ দৌড় দিল অন্যরুমে। ভাবলেশহীন ভঙ্গিমায় ফোনের স্ক্রিন ঘষছিল আদিয়ান। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রুমঝুম বলল,

‘তুমি ওর অফিসে খোঁজ নিয়েছিলে?’

নির্বিকার ভাব নিয়ে আদিয়ান বলল,
‘কাজে ফাঁকি দিয়ে তোর সাথে দেখা কর‍তে যেত বলেই চাকরির বারোটা বেজে গেছে অনেক আগে।’

‘তবুও, ওখানে খোঁজ নিয়ে দেখতে।’

‘নিয়েছি। তোদের বিয়ের পর থেকেই শুভ ওই অফিসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল।’

‘ওহ। আর কি কোনো উপায় নেই, ওকে খুঁজে পাওয়ার?’

‘থাকলে আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম না।’

রুমঝুম চিন্তিতমনে জানতে চাইল,
‘বিদায়বেলা তোমাকে আর কী বলেছে?’

শুভর বাবা-মা তারজন্য পাত্রী দেখেছেন, বিয়ের দিন-তারিখ পাকা করে ফেলেছেন, এটা রুমঝুমকে জানায়নি আদিয়ান। যেহেতু শুভ ম্যানেজ করে নিবে বলেছে, সেহেতু এই অবুঝ মেয়েটাকে বাড়তি আরেকটা ধাক্কা দেয়ার কোনো মানেই ছিল না। এখনও এটা অপ্রয়োজনীয়ই মনে হলো। শুভর ওপর অগাধ বিশ্বাসের ফলই এটা। সে একইভাবে বলল,

‘এক কথা বারবার কেন জানতে চাইছিস?’

রুমঝুম অধৈর্য্য কণ্ঠে বলল,
‘আর কিছুই কি বলেনি?’

‘না… বলেনি।’

‘আমরা কি ওর বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে পারি না?’

‘আমি তো দু’বার ওর গ্রামে গিয়েছিলাম ঝুম, কোনো খোঁজ পাইনি। আংকেল-আন্টিকে বলে এসেছি, যদি শুভ বাড়ি ফিরে আমাকে যেন ফোন করেন। এখনও যেহেতু ফোন আসেনি, তারমানে শুভ বাড়িতে যায়নি। খামোখা অসুস্থ শরীর নিয়ে এত দৌড়ঝাঁপ কেন করবি?’

রুমঝুম আর দাঁড়াল না। চলে গেল নিজের রুমে। এত চিন্তা তার আর ভালো লাগছে না। শরীর ও মন প্রচণ্ড দুর্বল। দু’দণ্ড বিশ্রাম না নিলে হচ্ছে না। সে চলে যাওয়ার পর ফোন রেখে জটিলসব ভাবনায় ডুবে রইলো আদিয়ান। শুভ তার গ্রামের বাড়িতে নেই, এই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। আড়ালে-আবডালে অনেকভাবে খোঁজখবর সে নিয়েছে, নিচ্ছেও। শুভর গ্রামের বাড়ির কাছাকাছি যে থানা, সেই থানাতেও নিখোঁজ হওয়ার খবর জানিয়েছে। শুভকে ওই এলাকায় বা তার আশেপাশে দেখা গেলে, লোকাল থানা থেকে ফোন আসবেই। ভাবনারত অবস্থাতেই আবারও ফোন হাতে তুলে নিয়ে ওই থানার এসআই এর নম্বরে ডায়াল করল সে। রিসিভ হওয়ার পর জানতে চাইল,

‘আমি শুভর আপডেট জানতে চাইছিলাম। ওর কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’

***

চলবে…