#পায়ে_পায়ে_হারিয়ে
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৬
দিন দিনের মতোই অতিবাহিত হলো কিন্তু শুভর কোনো খোঁজ মিলল না। ছুটি শেষ করে আজ থেকে আবারও আদিয়ান নিজের কর্মজীবনে পা রেখেছে। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষ, কাজই তাদের সব। অফিস টাইম শেষ করে রাস্তায় পা রাখতেই বৃষ্টির কবলে পড়ে গেল সে। অসময়ে আজ আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে বৃষ্টি এসেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে যাত্রী ছাউনির নিচে এসে আশ্রয় নিল। ততক্ষণে পরনের পোশাক ভিজেটিজে একাকার। সকালে রোদ ছিল বলে মনেই হয়নি বৃষ্টি আসবে। সঙ্গে ছাতা নেই, রাস্তায় গাড়ি নেই। এইমুহূর্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার। তা-ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছিল সে। হঠাৎই ছাউনি থেকে বেশ কিছুটা দূরে বসের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। হুট করে এইখানে গাড়ি থামানোর কোনো কারণ খুঁজে পেল না। পার্কিং এড়িয়া ছাড়া বস সচরাচর কোথাও গাড়ি থামান না। তিনি খুব নিয়মনীতি মেনে চলা মানুষ। কখনও কোনোকিছুতে ভুলত্রুটি পছন্দ করেন না। একটু রাগী, গম্ভীর আবার কিছুটা বদমেজাজীও। মাঝেমধ্যে কারণে-অকারণে রাগারাগি করেন। খিটমিটে আচরণ করেন। ব্যাপারটা আদিয়ানকে খুব ভাবায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না। বোঝার চেষ্টাও করে না। একধ্যানে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ভাবনার অতলে হারিয়েছিল। কিন্তু মুহূর্তেই তার ধ্যান ভেঙে গেল একটা চমৎকার দৃশ্য দেখে। ঠোঁটের কোণে একটুকরো মুগ্ধতার হাসি ছড়িয়ে পড়ল। দৃশ্যটা শুধু মুগ্ধতার নয়, কিছুটা ভালো লাগার, কিছুটা স্বস্তির ও শান্তিরও বটে।
ফুটপাতেই বসেছিলেন একজন বৃদ্ধা। বৃষ্টির কবলে পড়ে ভিজে গিয়েছেন পুরোটাই। হাতের কাছে একটা মোটা সাইজের পুটলি। সেটা নিয়ে বৃদ্ধার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। একে তো বৃষ্টি বেশি, তারওপর শরীরের অসুস্থতা। দুর্বলতায় ওখানেই নেতিয়ে পড়লেন তিনি। তৎক্ষনাৎ বৃদ্ধার সামনে এসে থামল একটা প্রাইভেট কার। ভেতর থেকে ছাতা হাতে নেমে এলো নীল-সাদা কুর্তির সাথে জিন্স ও স্কার্ফ পরিহিত একটা মেয়ে। বৃদ্ধার কাছে এসে কীসব কথাবার্তা চালিয়ে গেল। একসময় সেই বৃদ্ধাকে গাড়িতে তুলে পিছনের সিটে বসার সুযোগ দিল। পরমুহূর্তেই বস সামনের সিটে গিয়ে বসলেন। ভদ্রলোকের মেজাজের বারোটা বেজে গেছে। কেন সেটা বুঝতে না পারলেও আন্দাজ করতে পারল আদিয়ান। ঠোঁট কামড়ে হাসলো। এভাবেই মাঝেমধ্যে নওমীকে সে দেখে। কখনও ফুটপাতে, কখনও ফুডকর্ণারে, কখনও পার্কে। যতবার দেখা হয়, ততবারই মেয়েটাকে কোনো না কোনো অপরিচিতের সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখে। মনের মধ্যে অদ্ভুত ভালো লাগার জন্ম নেয়। এই নিয়ে মোট পাঁচবার নওমীকে দেখল সে, তা-ও দূরে থেকে। প্রথমবার দেখেছিল, ফুটপাত থেকে ফুল কিনতে। ফুল কিনে মেয়েটাকে ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষধ কিনে দিয়েছিল। দ্বিতীয়বার ফুডকর্ণারে। একটা অবুঝ বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছিল নওমী। এরপর পার্কে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বাদাম খাচ্ছিল। বাদাম কিনে খাওয়ার পর খুচরোর অভাবে হাজার টাকার নোটটাই বাদামওয়ালাকে ধরিয়ে দিয়েছিল মেয়েটা। সেই থেকে যতবার এই মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধতা এসে ভর করে চোখে। এই মুগ্ধতায় শুধু ভালো লাগা লুকিয়ে থাকে না-কি গোপনে তা ভালোবাসা হয়ে গেছে, এখনও নিশ্চিত নয় আদিয়ান। তখনও জানত না, এই মেয়েটা তার বসের একমাত্র মেয়ে। ক’দিন আগেই জেনেছিল। কোনো একটা কাজের জন্য বেশকিছু টাকার দরকার ছিল নওমীর। বাবার অফিসে এসে বলেছিল,
‘বাপি আমার কিছু টাকা লাগবে।’
জরুরী একটা ফাইল নিয়ে আলোচনা করতে বসের সামনেই ছিল আদিয়ান। কেন, কী কারণে, এতগুলো টাকা লাগবে, তার বস সেটা জানতে চাননি। মিনিটের মধ্যেই মেয়ের হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। নওমীও খুশি হয়ে বাপিকে একটু আদর দেখিয়ে চলে গিয়েছিল।
বৃষ্টির তোড়জোড়ের মধ্যেই বাস এসে দাঁড়িয়েছে ছাউনির সামনে। নওমী ততক্ষণে চোখের আড়াল হয়ে গেছে। বাসে উঠে সিটে বসে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে হুটহাট একটা দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেল আদিয়ান। ভাবতে লাগল, আসলে সে নওমীকে ভালোবাসে না-কি শুধু পছন্দ করে। ভালো লাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কী? ভালো লাগা সাময়িক সময়েই স্পষ্ট হয়ে উঠে কিছুক্ষণ তার রেশ ধরে রেখে একসময় হারিয়ে যায়। আর ভালোবাসা হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী অনুভূতি। সময়ে-অসময়ে যে অনুভূতি গভীর থেকেও গভীরতর হয়ে হৃদয়পুরীতে নৈঃশব্দে বিচরণ করে। ধীরে ধীরে সেই অনুভূতি তাকে বিবশ করে দেয়, ব্যস্ত রাখে সীমাহীন ভাবনায়। মেয়েটাকে নিয়ে তার ভাবতে ভালো লাগে। চোখ বন্ধ করে মেয়েটাকে উপলব্ধি করতে ভালো লাগে। ব্যস্ত সময়ের মধ্যে বিনা নিমন্ত্রণে এই মেয়েটার মুখ এসে চোখের পর্দায় নাচানাচি করে। কাজকর্ম ফেলে আদিয়ান ডুবে যায় অন্তহীন ভাবনায়। ইচ্ছে হয়, নওমীর মতো সে-ও এইভাবে কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াক। সামান্য কিছু দিয়ে হলেও সাহায্য করুক। কিন্তু হয়ে উঠে না। পকেটভরা টাকা না থাকার কারণে রাস্তাঘাটে তাকে হিসেব করে চলতে হয়। অকারণে বেহিসেবী টাকা খরচ করতে অপারগ সে। কাউকে সাহায্য করতে চাইলেও মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারবে না। খুচরো যতটা পারে, সেটুকুই দেয়। এদিক থেকে নওমী ও তার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এই কারণেই ভেবে ভেবে ক্লান্ত আদিয়ান জোরপূর্বক নিজেকে বুঝাতে চায়,
‘এই মেয়েটা তোর জন্য নয়, আদি। ভুলে যা। সবকিছু মোহ, সাময়িক ভালো লাগা। এর থেকে বেশিকিছু নয়, হতে পারে না।’
সম্পূর্ণ রাস্তায় এতটুকু ভাবনা ভাবতে গিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদিয়ান। মানুষে মানুষে কত পার্থক্য, এটা বুঝে নিজেকে ও নিজের মনকে শিকলবন্দী করার চেষ্টা করল। সব ভাবনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেল চাপলো। রুমঝুম দরজা খুলে হাসিমুখে বলল,
‘আন্টি আজকে রাজহাঁসের মাংস ভুনা করে রান্না করেছিলেন। তোমার জন্য একবাটি দিয়ে গেছেন। আমি ফ্রিজে তুলে রেখেছিলাম। আহা, তুমি দেখি ভিজে গেছো। ছাতা সঙ্গে ছিল না? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো, জ্বর বাঁধাবে তো।’
আদিয়ান রাজহাঁসের মাংস ভুনা পছন্দ করে, কথায় কথায় মাজেদা খাতুনের সাথে সেটা শেয়ার করেছিল রুমঝুম। আজ ঘরে রান্না হওয়াতে নিজে এসে রুমঝুমের হাতে দিয়ে বলেছিলেন,
‘রাজহাঁসের মাংস। তুমি বলেছিলে না, আদির খুব পছন্দ? আদি এলে দিও। তুমিও খেও।’
কথাগুলো শেয়ার করে রুমঝুম খেয়াল করল আদিয়ানের মুখটা মলিন। কোনো কারণে আপসেট কি-না জানতে চেয়ে বলল,
‘মন খারাপ না-কি তোমার?’
দু’দিকে মাথা নেড়ে ঘরে প্রবেশ করল আদিয়ান। কাঁধের ব্যাগ টেবিলের ওপর রেখে জগ থেকে দু’গ্লাস পানি ঢেলে খেল। রুমঝুম আবারও জানতে চাইল,
‘কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
ভেজা শরীরে চেয়ারে বসে শূণ্যে দৃষ্টি মেলে দিল আদিয়ান। আক্ষেপেভরা স্বর তুলে বলল,
‘তুই বল তো, নওমীকে নিয়ে আমি যা অনুভব করি এটা কি শুধু ভালো লাগা না-কি ভালোবাসাও? আমি যতবার ভাবি শীঘ্রই তাকে মনের কথা জানিয়ে দেব, ততবারই মন বলে উঠে, দু’জনের মাঝখানে অদৃশ্য এক দেয়াল। দেয়ালের একপাশে উচ্চবিত্ত অন্যপাশে মধ্যবিত্ত। মাঝখানের এই দেয়ালটা অদৃশ্য হলেও একটা সম্পর্ককে উঁচুনিচুর দিক দিয়ে বিচার করতে যথেষ্ট। যদি আমি প্রপোজ করি, মুহূর্তেই ফিরিয়ে দিবে। এইমুহূর্তে আমার কী করা উচিত? তুই হলে কী করতি?’
যদিও আদিয়ান জানে, রুমঝুমের কাছে এগুলোর মানে জানতে চাওয়া বৃথা কিন্তু তবুও মনের ভেতরে জমে থাকা হাজারও প্রশ্নের মেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার সামান্য চেষ্টায়ই জানতে চাওয়া। প্রশ্ন শোনে কতক্ষণ চুপ থেকে ভেবে গেল রুমঝুম। এরপর বলল,
‘দু’দিক থেকে পজেটিভ হলে কোনো একটা সমাধান দেয়া যেত। কিন্তু এই ব্যাপারটা একতরফা। তুমি নিজেও নিশ্চিত নও, তুমি তাকে ভালোবাসো কি-না। যদি বাসতে, উঁচুনিচুর এই ভেদাভেদ নিয়ে ভাবতে না। সোজা গিয়ে বলতে, আই লাভ ইউ। অথচ তুমি সেটা করছ না। দূরে থেকে দেখছ, একটু হাসছ, মন খারাপ করছ, ফিরে আসছ। ব্যস, এই তোমার দৌড়। এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিন কোনো মেয়েকে তুমি প্রপোজ করতে পারবে না।’
রুমঝুমের এই সোজাসাপটা কথা শোনে আদিয়ানের মেজাজের বারোটা বেজে গেল। সে বিরক্তিভরা কণ্ঠে বলল,
‘কী বললি তুই? আমার দৌড় এতটুকুই? আমি কি এরচেয়ে বেশি করে দৌড়ে দেখাব?’
‘হ্যাঁ, দেখাবে। কতগুলো ফুল নিয়ে সামনে গিয়ে হাঁটুভেঙে বলবে, ‘এই মেয়ে শোনো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কি আমার বউ হবে?’ এরপর দেখবে, মেয়েটা কীভাবে ফিদা হয় তোমার ওপর।’
রুমঝুম কথা বলার ফাঁকে প্রপোজের ধরনটা শিখাচ্ছিল আদিয়ানকে। এই দৃশ্য দেখে হেসে ফেলল আদিয়ান। বলল,
‘সবকিছুকে সিনেমার মতো ভাবছিস কেন?’
‘এই দিকটা সিনেমার মতোই। সাহস নিয়ে প্রপোজ করতে না পারলে হার নিশ্চিত। তাছাড়া এটা তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত। ভেবে দেখো কী করবে। হারবে না-কি জিতবে!’
রুমঝুম যত সহজে সমাধান দিচ্ছে, ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়। প্রস্তাব পাঠালেই কেউ কেন সাড়া দিবে, তাকে সম্পূর্ণ না চিনে? নওমী তো তাকে সরাসরি দেখেইনি। অফিসে একবার দেখলেও চেহারা মনে নিয়ে বসে নেই। হুট করে যদি গিয়ে ‘ভালোবাসি’ বলে, কেমন যেন হয়ে যাবে সবকিছু। নওমী কিংবা তার অফিসের বস ধরেই নিবে, টাকা-পয়সা দেখে পিছু নিয়েছে। আনমনেই কতকিছু ভেবে আদিয়ান বলল,
‘দেখি, সুযোগ পাই কি-না।’
রুমঝুম হতাশ হয়ে বলল,
‘তুমি সুযোগের অপেক্ষা করবে না-কি সুযোগ তৈরী করবে?’
‘আরেহ্, নিজে থেকে কীভাবে কী করব?’
‘অফিসে যখন আসবে সোজা সামনে দাঁড়িয়ে বলে ফেলবে। আগেপিছে কী আছে দেখবে না। বুঝেছ?’
‘হ্যাঁ, আর বসশুদ্ধ অফিসের সব কর্মকর্তারা আমাকে দৌড়ানি দিক। তোর এই ফালতু বুদ্ধি মোটেও কাজের না। অন্যকিছু ভাবতে হবে।’
‘অন্যকিছু আর কী?’
প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভাবলো রুমঝুম। বলল,
‘ফোন নম্বর নিয়ে অচেনা হয়ে ফোন কোরো, কথা বোলো। নয়তো চিঠি! হ্যাঁ, চিঠি দাও।’
আদিয়ান ভেবে দেখল, এটা যুক্তির। কিন্তু এই যুগে চিঠি! কীভাবে দিবে? আর চিঠি দিলেও নওমী তার চিঠির মূল্যায়ন করবে? কত-শত ভাবনা উঁকি দিল মনে। আদিয়ান শান্তি পেল না, কোনো সমাধানও পেল না। চেয়ার ছেড়ে বলল,
‘ছাড়, ওসব নিয়ে এত ভেবে কাজ নেই। যা হবে পরে দেখা যাবে।’
‘পরে দেখা যাবে মানে? তুমি তাকে জানাবে না? এতে কিন্তু হারানোর চান্স বাড়বে, ভাইয়া।’
এত দুঃশ্চিন্তা আর ভালো লাগছিল না। রিল্যাক্স দরকার। কথা এড়িয়ে যেতে রুমে চলে গেল আদিয়ান। রুমঝুম ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ইচ্ছে হলো, এক্ষুণি নওমীর কাছে ছুটে গিয়ে বলুক, ‘এই মেয়ে আদিয়ান ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। তুমি কি বুঝতে পারো না?’ সব কথা বলা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। কী করা যায়, কী করলে ভালো হবে, এসবই ভাবছিল রুমঝুম। তখুনি রুম থেকে ফোনের আওয়াজ এলো। ছুটে গিয়ে রিসিভ করল সেটা। সালাম দিয়ে জানতে চাইল,
‘কেমন আছো, ফুপি?’
সালামের জবাব দিয়ে আলেয়া বেগম বললেন,
‘তোকে আর কতবার বলব, আমাকে ফুপি নয়, আম্মি ডাক। এখন কি আমি তোর ফুপি আছি আর?’
‘অসুবিধা নেই। আমি তোমাকে ফুপি ডেকেই শান্তি পাই, ফুপিই ডাকব। এখন বোলো, বাবা কেমন আছে?’
‘আমরা খুব ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?’
‘আমরা তো ভালো আছি।’
‘আদি তোর খেয়াল রাখে তো?’
‘হ্যাঁ, রাখে।’
‘নতুন বাসার ঠিকানা দিসনি এখনও।’
‘আমি তো এই এলাকা চিনি না, ফুপি। তোমার ছেলে ফিরলে বলব, ঠিকানা হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করে রাখবে।’
‘আচ্ছা, এখন রাখি। ভালো থাকিস। নিজের ও আদির খেয়াল রাখিস।’
ফোন রাখার পর বুকে ফুঁ দিল রুমঝুম। এতক্ষণ খুব সাবধানে বেছে বেছে শব্দ ব্যবহার করে কথা বলেছে। ভুল করেও যদি ভাইয়া ডাকটা বেরিয়ে যেত কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। সে ব্যস্ত হাতে তড়িঘড়ি টেবিলে খাবার সাজাতে শুরু করল। সবকিছু রেখে গলা ছেড়ে ডাকল,
‘ভাইয়া, খেতে এসো। তুমি খাওয়ার পর আমি একটু বিশ্রাম নেব।’
গোসল শেষ করে পরিপাটি হয়ে ডাইনিংয়ে এলো আদিয়ান। সঙ্গে সঙ্গে তার ফোনটাও আওয়াজ দিল। স্ক্রিনে ভাসলো এস আই এর নম্বর। চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে গেল তার। ঝটপট রিসিভ করে প্রশ্ন করতেই ওপাশ থেকে এস আই কিছু একটা বললে আদিয়ান জানতে চাইল,
‘কাইন্ডলি, ওই ঠিকানাটা যদি বলতেন?’
ঠিকানা জানিয়ে এস আই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে রুমঝুম প্রশ্নবোধক দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে রইল পাশে। আদিয়ান সেই দৃষ্টি দেখে বলল,
‘একটা খোঁজ পাওয়া গেছে। আগে আমি দেখে আসি, ওটা কে! যদি নিশ্চিত হই, পরে তোকে নিয়ে যাব। ঠিক আছে?’
রুমঝুমের বুক কেঁপে উঠল। সে ভয়মিশ্রিত মনে বলল,
‘এখুনি যাবে? বাইরে বৃষ্টি তো।’
‘আজ নয়, কাল যেতে বলেছেন। এখন গেলে দেখা করা যাবে না।’
‘কেন? জায়গাটা কোথায়?’
আদিয়ান বলতে গিয়েও থেমে গেল। এস আই এর কথা কতটুকু সত্যি কে জানে! যদি সত্যি হয়, রুমঝুম কীভাবে এই সত্যি মেনে নিবে? আর যদি মিথ্যে হয়, তাহলে তার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না। দুঃশ্চিন্তায় গলা দিয়ে খাবার নামলো না তার। জোরাজুরি করে সামান্য খাবার খেয়ে অফিসের কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে রুমঝুমকে বিশ্রাম নেয়ার কথা বলে রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে আসিফের নম্বরে ডায়াল করল। রিসিভ হওয়ার পর খুব আস্তে-ধীরে বলল,
‘আসিফ ভাই, তোমার সাহায্যের দরকার। আগামীকাল সকালে আমাকে একটু সময় দিতে পারবে?’
***
চলবে…