পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-৩৬+৩৭

0
32

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৬

~” প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ ইরফান রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। সবাই এসে ডেকে গেলো কিন্তু ইরফান সাড়া ও দিলো না।সেই ভদ্রমহিলা এখনো শোফায় বসে আছে চুপচাপ। নাজিফা বেগম মুখে আচঁল দিয়ে নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। রাবেয়া বেগম তাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। মাহি, অহনা, ফাইজা , সাথে মাহমুদা বেগম ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না কে এই মহিলা কেনই বা এসেছে কি কারণ..? কিছু বুঝতে পারছে না। মাহমুদা বেগম রাবেয়া বেগম কে কয়েক বার আস্তে করে জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু উত্তর পায় নি রাবেয়া বেগম শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছে। নাজিফা বেগম কে কিছু জিজ্ঞেস করার ফুরসত মিলে নি সে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। ইরফান দরজা বন্ধ করার পর থেকেই নাজিফা বেগম কেঁদেই চলেছে থামবার নাম নাম নেই।

~” মাহি মনে মনে ভাবছে হঠাৎ কি হলো ইরফান ভাইয়ের সে তো এমন করেনি কখনো তাহলে আজ কেনো এমন করছে। সকলে গিয়ে ডাকলো তবুও একটিবার সাড়া দিলো না। আমি কি যাবো একবার..? না থাক ভাইয়া গেছে ঠিক বুঝিয়ে আনবে। কিন্তু বাবা আর বড় আব্বু রা কই তারা এখনো আসছে না কেনো..?

~” ফাহাদ গিয়ে ইরফান কে ডাকছে,

~” ভাইয়া দরজা খোলো প্লিজ। উনি কিন্তু এখনো যায় নি বসে আছে।

প্রায় এক ঘন্টা পর ইরফান জ্ববাব দিলো, কেনো বসে আছেন উনি..?

~” তোমার সাথে কথা বলবে তাই।

~” আমি কথা বলতে চাই না চলে যেতে বল তাকে।

~” তোমার সাথে কথা না বলে যাবেন না।

~” সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে ইরফান, একটা কালো শার্ট পড়ে, ওপরের দিকে দুইটা বোটাম খোলা চুল গুলো অগোছালো সাথে ভেজা লাগছে মনে হয় মাত্র সাওয়ার নিয়েছে তবে ইরফান কে বড্ড এলোমেলো লাগছে। হাতা গোটাতে গোটাতে নিচে এসে বসে। ফাহাদ ইরফানের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ইরফানের সরাসরি বসে আছে সেই ভদ্রমহিলা।

— মাহি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইরফান ভাইয়ের দিকে, কেমন জানি লাগছে তাকে। কেনো এমন লাগছে কি হয়েছে তার।

” অহনা হিসহিসিয়ে মাহির কানের কাছে গিয়ে বলে,

–ইরফান ভাই কে অনেক অন্য রকম লাগছে রে কেমন অস্থির হয়ে আছে।

“মাহি অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, হুম আপু ” কিন্তু কেনো বুঝতে পারছি না।

~” চারোদিকে পিনপতন নীরবতা ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, কি ব্যাপার মিসেস দেওয়ান হঠাৎ চৌধুরী বাড়ি তে পা পড়লো যে কারণ টা কি..?

~” বেশ অবাক চোখে তাকালো খাদিজা দেওয়ান, বাড়ির সকলেই বিষ্ময়কর চোখে তাকালো ইরফানের দিকে।

~” খাদিজা দেওয়ান শান্ত কন্ঠে জ্ববাব দিলো, তোমাকে দেখতে এসেছি।

— তা হঠাৎ আমায় দেখতে এলেন যে..?

— ” ইচ্ছে করছিলো। কেনো আসতে পারি না।

~” প্রয়োজন নেই, আমাকে দেখার জন্য আমার পুরো ফ্যামিলি আছে, আমার মা আছে বাইরের কারো প্রয়োজন নেই মিসেস খাদিজা দেওয়ান।

~” নাজিফা বেগম মুখ তুলে তাকালেন ছেলের দিকে চোখের কোণে থাকা পানি টুকু মুখে নিয়ে বলে, এভাবে বলে না বাবা।

~” ইরফান মায়ের দিকে তাকায় এরপর আবার খাদিজা দেওয়ানের দিকে তাকিয়ে নিরেট কন্ঠে বললো,

~” কি চাই আপনার..?

~” আমার ছেলে ”

~” খাদিজা দেওয়ান এর হঠাৎ এমন কথায় মাহমুদা বেগম, মাহি, অহনা, ফাইজা সবাই চোখাচোখি করে, নাজিফা বেগম পাশের চেয়ার টা শক্ত করে ধরে আছে রাবেয়া বেগম নাজিফা বেগম কে ধরে দাঁড়ায়। ফাহাদ মাথা নিচু করে বসে রইলো। শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে খাদিজা দেওয়ান পড়নে সুতি বড় পার ওয়ালা শাড়ি কুচি গুলো সুন্দর করে ভাজ করা খুব পরিপাটি।

~” ইরফান শান্ত স্বরে বললো, তো এখানে এ বাড়িতে কি চাই??

— খাদিজা দেওয়ান এবার একটু নড়ে চড়ে বসলেন এর পর ভাঙা গলায় বলে, পঁচিশ বছর আগে তো এ বাসা তেই রেখে গিয়েছিলাম।

~” ইরফান একটু ঝুঁকে দু হাত উরু তে রেখে বললো, আপনি যাকে রেখে গিয়েছিলেন সে তো মারা গিয়েছে মিসেস দেওয়ান। এতো দিনে তো সে মাটি তে মিশে গেছে এখন এসেছেন আপনি খোজ নিতে। এখন তো তার অস্তিত্ব মুছে গেছে মিসেস দেওয়ান।

~” খাদিজা দেওয়ান উঠে দাঁড়ায়, মাহি অহনা ভরকে গেল, নাজিফা বেগম দ্রুত ছেলের কাছে এসে দাঁড়ায় আর বলে,

~” এসব কি বলছিস বাবা তুই বাজে কথা তোর মুখে আটকালো না বুঝি।

~” খাদিজা দেওয়ান তাচ্ছিল্য হেঁসে নাজিফা বেগম কে বলে, ব্রেন ওয়াশ করিয়েছো দেখছি ছেলে কে এখন এসব নাটক করতে হবে না। ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো, এই মহিলা তোমাকে এসব শিখিয়েছে তাই না।

~” খবরদার আমার মাকে নিয় বাজে কথা বলেছেন তো খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি ভুলে যাবো আপনি আমার মা সমতুল্য বয়সী নারী। ভদ্রতা আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা আর বেয়াদবি আমার নিজ অর্জন করা শিক্ষা দুইটাই ব্যাবহার করি যখন যার সাথে যেটা প্রয়োজন। ইরফানের ঝাজালো কন্ঠে বলা কথায় উপস্থিত সকলেই কেঁপে উঠল।

~” তুমি ভুল বলছো ইরফান আমি তোমার মা সমতুল্য বয়সী নারী নই আমি তোমার গর্ভধারিণী মা। খাদিজা দেওয়ানের শান্ত গলায় বলা কথা টা এখানে উপস্থিত থাকা মাহি, অহনা, ফাইজা, ও মাহমুদা বেগম এর মাথায় বিস্ফোরণের মতো ফাটলো। সকলে উত্তেজিত হয়ে গেলো। ইরফান কিছু বলে না শুধু তীব্র রাগে হাসফাস করতে থাকে। ফাহাদ ইরফানের কাধে হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করে।

এসব কি হচ্ছে কি বলছেন উনি ইরফান ভাইয়ের মা কেনো হতে যাবে না না। ইরফান ভাই তো বড় আম্মু আর বড় আব্বুর এক মাত্র ছেলে। ইরফান ভাই তো এবার আরো রেগে যাবে মাহি মনে মনে বিড়বিড় করলো।

~” অহনা ভাবছে আরে পাগল নাকি উনি এসব আজে বাজে কথা কেনো বলছে। আর বড় মামি মা কেনই বা তাকে কিছু বলছে না।

~” খাদিজা দেওয়ান এবার নরম স্বরে বললো, আমি তোমাকে আমার কাছে রাখতে চাই বাবা। বিশ্বাস করো এ বাসায় আসার আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলো না আমি শুধু তোমাকে চাই বাবা আমার ছেলে কে ফেতর চাই আমি। আমার পেটের সন্তান কে চাই।

~” ইরফান হাতে তালি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ায়, কেমন অদ্ভুত বাঁকা হাঁসালো রাগান্বিত চেহেরাটা ভয়ংকর লাগছে, তবুও ঠোঁটের কিনারায় হাঁদি রেখে বলে,

বাহ মিসেস দেওয়ান বাহ কি বলছেন ছেলে কে চাই.. এবার একটু শব্দ করে হেঁসে চিৎকার দিয়ে বললো,

–” আরে দু বছর বয়সে যে শিশু ছেলে কে ফেলে চলে গিয়েছিলেন আজ পঁচিশ বছর পরে এসে সে ছেলে কে ফেরত চান আপনি।

~” সকলে কম্পিত ভাবে তাকায় ইরফানের দিকে, ইরফান আবার তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে, দু বছরের এক বাচ্চা কোলের শিশু কে রেখে অন্য কারো হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। তখন মনে পড়ে নি এই ছেলের কথা,?? ছেলে মাকে ছাড়া কিভাবে বাচঁবে সে কথা মাথায় আসেনি..? বাচ্চা ছেলে টা বেঁচে আছে কিনা তা খোজ নিয়েছিলেন..? নাহ নেন নি সেদিন আপনি শুধু আপনার সুখের কথা চিন্তা করেছেন আমার কথা না। তাহলে আজ কেনো এসেছেন মা দ্বাবী করতে। শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না।

— খাদিজা দেওয়ান মাথা নি করে নেয়। তার কাছে ইরফানের করা একটা কথার ও জ্ববাব নেই,।

~” কেমন পাগল পাগল লাগছে ইরফান কে, মাহির খুব কান্না পাচ্ছে তার প্রিয় পুরুষের বেদনা দায়ক পাগলামি দেখে। তবে নিজেকে সামলে নিলো কি হচ্ছে এসব কিচ্ছু বোধগম্য হচ্ছে না।

~” ইরফান আবার হাঁসে কি ভয়ংকর লাগলো সে হাঁসি বড় অদ্ভুত লাগছে ইরফান কে নাজিফা বেগম এর হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলে, এই যে এই মানুষ টাকে দেখছেন তো আমার মা…

~” নাজিফা বেগম সজল চোখে তাকালো ছেলের দিকে, ইরফান একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে, আমি যখন ক্ষুদায় কান্না করতাম কিন্তু খেতে চাইতাম না এই মানুষ টাই, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে এটা ওটা বলে আমায় খাওয়াতো ” আমি রাতে ঘুমাতে চাইতাম না সে গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো কখনো কখনো আমার জন্য সে রাতের অর্ধেক টা না ঘুমিয়ে গল্প বলে কাটিয়ে দিয়েছে। ফুপির কাছে শুনেছি আমি ছোট বেলায় ভীষণ দুষ্টু ছিলাম এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতাম কিন্তু এই মানুষ টা সবসময় আমার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করতো পড়ে যেনো একটু ব্যথা না পাই তার জন্য। আমার জন্য সে তার জীবনের অর্ধেক টা পার করে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমি ব্যাথা পেলে আমার মা কষ্ট পায়।

~” কথা গুলো শেষ করতেই নাজিফা বেগম হু হু করে কেদে ফেলে, ইরফান দু হাত দিয়ে আলতো হাতে মায়ের চোখে পানি মুছে দেয় বুড়ো আঙুল দিয়ে এর পর আলতো করে জরিয়ে ধরে মাকে, আর উত্তেজিত কন্ঠে বলতে থাকে,

তুমি কাদছো কেনো মা.?? আমি তোমার ছেলে মা আমি শুধু মাত্র তোমারই ছেলে ।

I am Abrar Irfan Chowdhury, the only son Of
Farhad Chowdhury and Nazifa Begum.

~” You are my mother. And I am your disobedient son.
My mother is the best mother in the world.

~”নাজিফা বেগম হঠাৎ এই জ্বোরে জ্বোরে শ্বাস টানতে লাগলো ইরফান বুঝতে পারলো নাজিফা বেগমের বুকে ব্যাথা শুরু হয়েছে ইরফান নাজিফা বেগম কে ধরে এনে শোফায় বসায়, ফাহাদ ইশারা দিতেই মাহি দ্রুত নাজিফা বেগমের রুমে গিয়ে তার ওষুধের বক্স টা নিয়ে আসে এর পর বক্স টা খুলে ইরফানের হাতে দেয় ইরফান দ্রুত একটি স্প্রে নিয়ে মাকে দিয়ে। শক্ত করে ধরে রাখে নাজিফা বেগমের হাত খানা একটু পর নাজিফা বেগম একটু স্বাভাবিক হয়।

~” পাশেই কাতর চোখে তাকিয়ে আছে খাদিজা দেওয়ান। তার গর্ভে ধারণ করা ছেলে আজ তাকে মা বলে।চেনে না সে আজ নিসন্তান। তথচ অন্য একজন তার ছেলের মা।

~” নাজিফা বেগম কে রুমে শুইয়ে রেখে আসে মাহমুদা বেগম নাজিফা বেগম এর সাথেই থাকেন। বাকিরা সবাই ড্রয়িং রুমেই দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান নাজিফা বেগমের রুম থেকে বেরোতেই খাদিজা দেওয়ান ভাঙা গলায় বললো,

ইরফান দেখো বাবা আমি..

~” পুরো কথা শেষ না হতেই ইরফান চিৎকার দিয়ে বললো, আমি আপনার আর একটা কথা শুনতে রাজি নই। প্লিজ আর কখনো আমার সামনে আসবেন না আপনি। বলেই পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো একটা বার মাহির দিকে তাকালো ইরফান, দুজনে চোখাচোখি হলো ইরফানের চোখ গুলো বড় অস্থির মাহি বুঝতে পারছে।এরপর হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। রাবেয়া বেগম পেছন থেকে ডাকলেন ইরফান বাবা এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস কথা শোন বাবা মাথা ঠান্ডা কর ” কিন্তু কথা গুলো ইরফানের কানে পৌঁছাতে ব্যর্থ।

~” ফাহাদ দ্রুত ইরফানের পেছনে যেতে যেতে বলে, টেনশন করো না আমি যাচ্ছি ভাইয়ার সাথে। রাবেয়া বেগম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। নিরবতা ভেঙে খাদিজা দেওয়ান বলে, এটা তোমার ছেলে রাবেয়া..?

-‘ খাদিজা দেওয়ান মাথা নাড়লো, হুম।

~” এরপর খাদিজা দেওয়ান চোখ ঘুরিয়ে তাকায়, অহনা, মাহি ও ফাইজার দিকে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই –” রাবেয়া বেগম অহনা কে দেখিয়ে বলেন, বড় আপার মেয়ে অহনা, ও মাহি আমার মেয়ে আর এইজে আমাদের ছোট কর্তা মনিরের মেয়ে, বড় ভাবির সাথে বসে আছে যে ওর মা মাহমুদা।

~” সবার পরিচয় পেয়ে খাদিজা দেওয়ান মাহির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ধরে, আসলে খাদিজা দেওয়ান সেদিন ইরফানের সাথে মাহি কে দেখে ভেবেছিলো মাহি হয়তো ইরফানের প্রেমিকা বা হবু বউ কিন্তু মাহি কাশেম চৌধুরীর মেয়ে এটা জানার পর তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো তাই চোখ বুলিয়ে মাহি কে ঘুরেঘুরে দেখলো।

~” রাবেয়া বেগমের তেমন কোনো ইচ্ছে নেই খাদিজা দেওয়ান এর সাথে খুব একটা আলাপ করার কিন্তু বাসায় এসেছে কথা না বললে অপমানিত বোধ করবে তাই যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু কথাই বললো। মাহি ও অহনা ছূটে বড় আম্মুর রুমে চলে গেলো পেছন পেছন ফাইজা ও ছূটলো। তবে মাহির ভেতর টা কেমন উথাল-পাতাল ঢেউ খেলছে। ইরফান ভাই এভাবে কোথায় চলে গেলো ভাইয়া কি তার কাছে আছে..?

~” নাজিফা বেগম কে ঘুমের ওষুধ দেওয়ার কিছুক্ষণ এর মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে, ঘুমানোর আগে কয়েক বার ইরফানের কথা জিজ্ঞেস করেছে, ইরফান যে রাগ করে বেরিয়ে গিয়েছে তা মাহি ও অহনা নাজিফা বেগম কে না জানিয়ে অন্য এটা ওটা বলে বড় আম্মু কে ঘুম পাড়িয়েছে।

~” নাজিফা বেগম ঘুমিয়ে গেলে সবাই বেরিয়ে আসে, ততক্ষণে খাদিজা দেওয়ান চলে গিয়েছেন। মাহি, অহনা, ও মাহমুদা বেগম রাবেয়া বেগম কে চেঁপে ধরলো সব কথা বলার জন্য, আজো স্পষ্ট রাবেয়া বেগম এর চোখে ভাসে সেই দিন গুলো,

~” ইরফান তখন পুরো বাড়ি হেঁটে বেরাতো ছোট ছোট পায়ে কখনো সিঁড়ি বেয়ে উঠে পরতো তো কখনো চেয়ার এর নিচে লুকিয়ে থাকতো। রাবেয়া বেগমের বিয়ে হয়েছে সাত মাস আগেই সে পাঁচ মাসের অন্তসত্তা। হেঁটে হেঁটে ইরফান এসে রাবেয়ার কাছে বসতো আদো আদো গলায় ডাকতো কাকিয়া কাকিয়া। রাবেয়ার খুব ভালো লাগতো ছোট্ট ইরফান কে ইরফানের গায়ের রঙ টা বাবার মতো শ্যামবর্ণ হলেও নাক মুখ চোখ সব ছিলো ওর মা খাদিজার মতোই ইরফান কে খুব ভালো লাগতো মুখে ভীষণ মায়া ছিলো ছেলেটার। ঠোঁটে হাঁসি লেগেই থাকতো।

~” তবে একটা বিষয় বড় অদ্ভুত লাগতো রাবেয়ার কাছে খাদিজা যথেষ্ট সুন্দরী ও রূপবতী ছিলো, তবে খুব একটা হাঁসতে দেখা যেতো না, ফরহাদ চৌধুরীর সাথে খুব একটা কথা বলতো না। ফরহাদ চৌধুরী খেতে বসলে পাতে খাবার বেরে দিতো ঠিকি মুখে না থাকতো হাঁসি না থাকতো বুলি। তবে মনির চৌধুরীর সাথে খুব কথা বলতো। দুজন দুজন কে তুই তুই করে বলতো, ভাই বোনের মতো খাদিজা আর মনির চৌধুরীর সম্পর্ক টা বেশি ভালো লাগতো রাবেয়ার কাছে। বাসায় আর কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলতো না খাদিজা। তবে বাসার সব কাজ নিজের মতো করে করতো রাবেয়া অন্তসত্তা ছিলো তাই তাকে কিছু করতেই দিতো না।

~” হঠাৎ একদিন সকালে ইরফানের অনেক কান্না শুনে রাবেয়া নিজের রুম থেকে ছূটে আসে খাদিজার রুমে ছেলেটা এভাবে কাদছে কেনো। কিন্তু রুমে এসে কাউকে দেখতে পায় না ইরফান ঘুম থেকে উঠে মাকে না দেখতে পেয়ে কাঁদছে রাবেয়া ইরফান কে কোলে তুলে নিলো কিন্তু ইরফানের কান্না থামছে না পুরো বাড়ি খুজলো পেলো না ইরফানের মা কে বাধ্য হয়ে কাশেম চৌধুরী কে ফোন দিলো বড় ভাইয়ের সাথে কোথাও গিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে কিন্তু দুই ভাই অফিসে আছে। তাহলে সে কোথায় গেলো না বলে কোথাও যাওয়ার অভ্যস নেই তার। কিছুক্ষণের মধ্যে দুই ভাই বাসায় এলো ফরহাদ চৌধুরী টেনশনে পরে গেলো চারোদিকে খোজ লাগালো কোথাও পেলো না কোনো রিলেটিভ দের বাসায় ও নেই বউ কে খুব ভালোবাসতো, তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে চিন্তা করলো পুলিশকে ইনফর্ম করা উচিত। রুমে এসে কিছু টাকা বের করার উদ্দেশ্য আলমারি খুলতেই হাতে পেলো খাদিজার চিঠি.. যেখানে লেখা ছিলো,,,

–” আমি সেচ্চায় বাড়ি ছাড়ছি দয়া করে আমাকে খুজবেন না আর হ্যাঁ কখনোই
আমার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করি নি
বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে। তবে ভুল টা আপনার বিয়ের আগে আপনার জানা
প্রয়োজন ছিলো আমার মতামত আছে কিনা বা আমি কি চাই। ইরফান কে আপনার
কাছে রেখে গেলাম আশা করি আপনি ওকে ভালই রাখবেন।

~” এরপর খোজাখুজি বন্ধ করে দিলো, ফরিনা আপা বাসায় এসেছে সিয়াম তখন ইরফানের থেকে একটু বড়, আমি ইরফান কে আমার কাছে রাখতাম কিন্তু ইরফান খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলো ফরিনা আপা ও খাওয়াতে পারতো না। পরে সকলে সিধান্ত নেয় বড় ভাইজান। কে বিয়ে করাবে। কিন্তু বড় ভাইজান রাজি নয় বিয়ে করতে তবে সবাই জ্বোরাজ্বোরি করে বিয়ের ব্যাপারে ইরফানের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাইজান রাজি হয়। সব জেনে শুনেই বড় ভাবি রাজি হয় বিয়েতে। পুরো দু মাস অনেক চেষ্টা রে ইরফানের মন জয় করে নেয় সে এর পর থেকে তাদের মা ছেলের নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। ইরফান ধীরে ধীরে ভুলে যায় তার মায়ের কথা নাজিফা বেগম কেই ভেবে নেয়।

— ” বারেবা বেগমের কথা শেষ হতেই মাহমুদা বেগম বড় নিশ্বাস ফেলে বলে, এই টুকু বাচ্চা ছেলে কে রেখে যেতে পারলো।

— মাহি ছলছল নয়নে তাকায় মায়ের দিকে অহনা রাবেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো, অথচ বড় মামি মা কখনো বুঝতে দেয় নি ইরফান ভাই তার পেটের সন্তান নয়।

~” রাবেয়া বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জ্ববাব দিলো, শুধু তাই নয় সে মা হওয়ার ক্ষমতা থাকতে ও সে মা হওয়ার স্বাধ গ্রহণ করে নি। যদি তার পেটের সন্তান জন্ম নিলে ইরফানের প্রতি ভালোবাসা কমে যায় বা ইরফানের ভালোবাসার ভাগ হয়ে যায় তাই সে নিজেই মা হয় নি। আমি বড় আপা বহু বার বলেছিলাম একটা সন্তান নেওয়ার কথা কিন্তু সে রাজি নয় তার একমাত্র সন্তান ইরফান। আর কোনো সন্তান তার প্রয়োজন নেই।

~” মাহমুদা বেগমের চোখ দিয়ে দু ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, একটা মেয়ের জন্য এটা সব থেকে বড় আত্মত্যাগ। মা হতে পারা সত্ত্বেও মা না হওয়া।

~” মাহি মনে মনে বিড়বিড় করলো, ইরফান ভাই ঠিক বলেছে বড় আম্মু is the best mother in the world.

” প্রায় একটা নাগাদ ফাহাদ ইরফান কে নিয়ে বাড়ি ফিরলো, ইরফান রুমে না গিয়ে মায়ের রুমে উকি দিলো মা ঘুমাচ্ছে দরজা চাপিয়ে দিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই মাহমুদা বেগম ডেকে বলে,

~” খেয়ে নে বাবা।”

ইরফান পেছনে ঘুরে তাকালো মাহমুদা বেগম কে দেখে বলে, তুমি এখনো ঘুমাও নি কেনো কাকি আম্মু। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তুমি এখনো জেগে আছো।

~” এমনিতেই ঘুম আসছিলো না। ফাহাদ ভাইয়া কে নিয়ে খেতে বস আমি খেতে দিচ্ছি।

~” ফাহাদ তুই খেয়ে নে আমি খাবো না ফাহাদ ও জ্ববাব দিলো আমিও।খাবো না কাকি আম্মু তুমি শুয়ে পড়ো পরে খুদা লাগলে নিয়ে খাবো।

~” ইরফান সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে যেতে আবার ঘুরে দাঁড়ালো,

কাকি আম্মু বাবা আসেনি..?

~” বড় ভাইয়া আর মেঝো ভাইয়া তো সন্ধ্যায় এসেছিলো বাসায় কিন্তু এর পর ওনাকে দেখার পর বড় ভাই বেরিয়ে যায় পেছন পেছন মেঝো ভাই ও বেরিয়ে গিয়েছিলো প্রায় এক ঘন্টা আগে ফিরেছে দুই ভাই ছাদে ছিলো মেঝো ভাই নেমে এসেছে একটু আগে বড় ভাই বোধহয় ছাদে থেকে নামেনি এখনো।

~” ঠিক আছে।

~” কি ভাবছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে..?

ইরফানের কথায় ফরহাদ চৌধুরীর নড়ে চড়ে বসলেন, ছাদের এক কোণে বসার একটু লম্বা বেঞ্চ আছে, সেখানেই বসে ছিলো ফরহাদ চৌধুরী, ছেলের দিকে তাকিয়ে জ্ববাব দিলো,

কিছু ভাবছি না।

~” না ঘুমিয়ে এতো ছাদে বসে আছেন যে।

~” তোমার মা এসেছিলেন আজকে।

~” আমার মা ঘুমাচ্ছে রুমে দেখেই এলাম।

~” ইরফান আমি বলতে চাইছি যে সে এসেছিলো খাদিজা।

~” হুম জানি তো..?

~” ফরহাদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

” তা নিয়েই ভাবছি আমি।

~” ইরফান ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ বাকা করে বললো, দেখুন পুরোনো প্রেমিকা কে দেখে যদি আপনার মন গলে যায় আর তার জন্য আমার মাকে আপনি সামান্যতম অবহেলা করেন তাহলে তাহলে আপনাকে তার সাথে ছেড়ে দিয়ে আমরা মা ছেলে চলে যাবো। আশা করি আমি আমার মা কে ভালোই রাখতে পারবো।

~” এতোক্ষণের চিন্তা ভারাক্রান্ত মেজাজ টা চিন্তা বাদ দিয়ে হঠাৎ এই তেতে উঠল ফরহাদ চৌধুরী,

~” বাবা হই তোমার কিসব বলছো তুমি, লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছো..?

~” লজ্জা আমি পাবো কেনো লজ্জা পাওয়া মেয়েদের কাজ। আর আমি ভুল কি বলেছি..?

~” আমার কেন আরেকজন কে দেখে মন গলতে যাবে। আমি তোমার মাকে ভালোবাসি। তোমাকে বলতে চাইলাম এক কথা তুমি বুঝে নিলে আরেক কথা।

~” আপনি আমার মাকে ভালোবাসেন তাহলে আমার মা অসুস্থ হয়ে ঘরে শুয়ে আছে আর আপনি ছাদে এসে Ex কে নিয়ে ভাবছেন.!

~” মুখে তো দেখছি কিচ্ছু আটকাচ্ছে না বাবা ইরফান আমি কি তোমার বেয়াই লাগি..?

-” উহুম আপনি তো আমার না হওয়া বউয়ের এক মাত্র শশুর লাগেন।

~” ফরহাদ চৌধুরী আরো খেপে গেলো, ওমা একি এতো বছরের নম্র ভদ্র ছেলে টা কেমন লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললো , শুনলাম বন্ধুর বিয়ে দিয়ে এলে তা সেখানে কিছু খাও নি তো মানে এলকোহল জাতীয়।

~” ছিহ বাবা আমি ভদ্র ছেলে ”

~” হ্যাঁ তার নমুনা তো দেখছি আমি।

~” দেখাদেখির প্রয়োজন নেই আপনি রুমে যান গিয়ে ঘুমান, আর আমি যদি দেখেছি আমার মায়ের যত্ন আগে থেকে কমেছে তাহলে মায়ের জন্য ভালো পাত্র দেখে মায়ের বিয়ে দিয়ে দেবো। তখন আপনার একুল ওকুল দুইকুল যাবে।

~” ফরহাদ চৌধুরী ভরকে গেল, এ কেমন ছেলে জন্ম দিলাম সে কিনা নিজের মাকে বিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এটা সত্যিই আমার ছেলে তো নাকি আজকে অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে পাল্টাপাল্টি হয়ে গেলো।

~” ইরফান আস্তে আস্তে বলছে, দুনিয়ায় আর কোনো মানুষ খুজে পায় নি বিয়ে করার জন্য। তার EX তার জীবনের তো বারোটা বাজিয়েছেই আবার আমার বিয়ের ও বারোটা বাজাচ্ছে। সাঁত মাস ধরে এসেও বিয়ে করতে পারছি না ওই মহিলার জন্য।

~” ফরহাদ চৌধুরী বুঝতে পারলো ছেলের মাথায় তার হয়তো ছিড়ে টিরে গিয়েছে আরো বেলাহেজ কথা বলে তার সম্মান খোয়ানোর আগেই চলে যাবে তাই ভালো সে নিচে নেমে গেলো। ‘ ইরফানের চঞ্চল মুখ টা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো। বাবা কে এসব না বললে বাবা না ঘুমিয়ে এসব নিয়েই চিন্তা করতো এখানে বসে বসে তাই ইরফান ইচ্ছে করেই বাবা কে খেপিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। তা ছাড়া মায়ের কাছে এখন বাবা কে প্রয়োজন মাও ভেঙে পড়েছে। তবে সেই ছোট্ট বেলায় যে কষ্ট টা মনের মধ্যে ছিলো আজ এতো বছর পরে এসে সেই কষ্ট টা বুকের ভেতর বাসা বেধেছে।

নয় বছর বয়সে ইরফান একদিন খেলতে খেলতে স্টোর রুমে চলে যায়। হাইডেন্সি খেলছিলো ফাহাদ এর সাথে ফাহাদ ইরফান কে খুজতে ব্যস্ত কিন্তু ইরফান তো স্টোর রুমে লুকিয়ে আছে, হঠাৎ সামনে একটা বড় ট্রাংক দেখে ইরফান গিয়ে সেই ট্রাংক টা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে এমন কিছু আগে কখনো দেখেনি তাই। নাড়াচাড়া করতে করতে ট্রাংক টা খুলে যায়। তার মধ্যে অনেক পুরোনো জিনিস পত্র আছে। হঠাৎ এসব কিছুর ভীড়ে ইরফানের চোখ আটকায় একটি ছবি তে ছবি টা হাতে নিয়ে দেখে ইরফান বষ্মিত চোখে তাকায়। ইরফানের বাবার বিয়ের ছবি অথচ মায়ের যায়গায় অন্যকেউ এটা কি করে সম্ভব। সেই ছোট্ট ইরফানের তীক্ষ্ণ মন অনেক কিছু ভেবে নেয়। এরপর ছবি টা লুকিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায়। মাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না বাবা কে ও না কিছুদিন পর ফরিনা বেগম যখন বাসায় বেরাতে আসে ছোট্ট ইরফান তখন ফুপি কে নিয়ে ছবি টা দিয়ে সব জানতে চায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরফান কে সব সত্যি টা তাকে বলতে হয়।

সেদিন থেকে ইরফান অনেক টা ভেঙে পড়েছিল যদিও কখনো কাউকে বুঝতে দেয় নি কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইরফান অনেক টা পুড়ছিলো যা কেউ বুঝতে পারেনি বুঝতে দেয় নি ইরফান। নাজিফা বেগম ইরফান কে খুব ভালোবাসতো আদর করতো যা নিজের পেটের সন্তান কে ও মানুষ এতোটা আদর করতে পারে না বোধহয়। কিন্তু ইরফান সব কিছুর জন্য মনে মনে নিজেকে দ্বায়ী করতো। অথচ তার দু বছর পরে ইরফানের জীবনে এমন কিছু ঘটে এর পর থেকে ইরফান আর নিজেকে দোষারোপ করে না একদিনের একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে এগারো বছরের ইরফানের সব ভুল ধারণা ভেঙে দেয় । সব কিছু ভুলে ইরফান নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করে সাথে একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে কে ভালো রাখতে শুরু করে। আজ এতো বছর পরে এসে সেই অনুভূতি জেগে উঠে আবার ও মনের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে কাউকে বোঝানোর মতো না। মাথা থেকে কিছুতেই বেরোচ্ছে না খাদিজা দেওয়ান এর কথা।

~” মাহির ঘুম আসছে না ইরফান ভাইয়ের এমন পাগলামি দেখে আচ্ছা উনি কি ঘুমিয়েছেন, মাহি উঠে দরজা খুলে চুপিচুপি ইরফানের রুমে উকি দিলো, লাইট জ্বলছে ভেতরে কেউ নেই। তাহলে কি উনি বাসায় ফেরে নি..? নাকি ছাদে..! মাহি আস্তে করে ছাদের দিকে পা বারায় চিলেকোঠার কাছে আসতেই মাহির কানে ইরফানের গলায় গাওয়া গান ভেসে আসছে,

~’ তোকে দেখি শূনশান রাতে চলে আসা চিন্তা হাঠাৎ এ !! ”

!”শান্ত -অশান্ত সময় তুই কেনো থাকিস না সাথে..!! ”

~” বরবাদ হয়েছি আমি তোর অপেক্ষায়..!

–“চুরমার করে দে আরোও কিছু ইশারায় “”!!

–” আমাকে থাকতে দে ডুবে থাকতে দে তোর নাম ধরে..!

-” আমাকে রাস্তা বল কোনো আস্তানা- কোনো বন্দরে..!

~’ বলে দে…! বল আমায়..!!!

~” ইরফান হাটু গেড়ে বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে, বড় বিধ্বস্ত লাগছে, কাছে আসতেই মাহির বুকে হাতুড়ির বাড়ির মতো ধাক্কা খেলো, ইরফান ভাই কাঁদছে। হ্যাঁ ওইতো ওনার চোখে পানি। ইরফান দ্রুত হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে তাকালো । মাহি এসে কাছে বসতেই ইরফান ফ্লোরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো দু হাত মাথার নিচে রেখে দুজনের মাঝামাঝি খুব একটা ডিস্টেন্স নেই দের থেকে দুই ইঞ্চি ফারাক আছে। মাহি চিবুক নামিয়ে উরুতে থুতনি ঠেকিয়ে বসে। তবে বিষ্ময়কর ভাবে তাকিয়ে রইলো ইরফানের দিকে, অন্য দিন হলে তো ইরফান ভাই নিশ্চিত মাহি কে বলতো এতো রাতে ছাদে এসেছিস কেনো এখনো ঘুমাস নি কেনো তবে আজ সেসব কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

~”প্রায় পুরো রাত টা এবাভেই কাটলো দুজনের একজনও কোনো কথা বলে নি শুধু নিরবে একজন আরেকজন কে দেখে গেলো। ইরফান শুধু মনে মনে একটা কথাই আওরালো,,

~’ এভাবেই আমার পাশে থেকে যাস মাহি

সারাটা জীবন সঙ্গী হিসেবে থেকে যাস।

তোকে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না।

i repeat I won’t let you suffer.

~” মাহির ঘুম ভাঙলো বারোটা পনেরো তে এখনো ঘুম ঘুম ভাব চোখে উঠে এসে নিচে নামলো অহনা ছূটে এসে জিজ্ঞেস করলো, কিরে মাহি এতো লেট হলো কেনো ঘুম থেকে উঠতে শরীর ঠিক আছে তো। মাহি চুপ করে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

” কি করে তোমার বলবো আপু আমি যে রাতে ঘুমাই নি ইরফান ভাইয়ের সাথে ছাদে বসে ছিলাম সারারাত ভোর পাঁচ টায় এসে ঘুমিয়েছি।

~” কি হলো..? অহনার ডাকে হুশ ফিরলো মাহির

~” হ্যাঁ,, না কিছু না আজকে খুব ঘুম পাচ্ছিলো জানো তো আপু তাই এতোটা দেরি হয়ে গেলো বুঝতেই পারি নি।

~” আচ্ছা আয় খেতে আয়।

~” তুমি এখনো খাও নি..?

~” না তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম বস।

— ফাইজা কোথায় আপু..?

স্কুলে গেছে।

–কিন্তু আজকে তো শনিবার।

~” এখন থেকে শনিবার ও ক্লাস চলবে শুধু শুক্রবার অফ ডে থাকবে।

~” ওও।

~” দু বোন মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে।রাতের পর আর মাহির সাথে ইরফানের দেখা হয় নি মাহির কেমন জানি অস্থির লাগছে, বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ ইরফান কে খোজাখোজি করলো মাহি কোথাও না দেখে এবার মুখফুটে অহনা কে জিজ্ঞেস করলো,

~” আপু ইরফান ভাই বাসায় নেই.??

~” না তো সেই সকাল সাত টার দিকে বেরিয়েছে আমি ঘুম থেকে উঠে এসে দেখি ইরফান ভাই অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছে।

~” মাহি মনে মনে ভাবছে, সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে বেড়িয়ে গেলো, মানুষ এতো কম ঘুম নিয়ে কিভাবে চলাফেরা করে আমি তো বুঝি না। আমি তো একদিন একটু কম ঘুমালেই মাথা ঘোড়ানো মাথা ব্যাথা সব এসে হাজির।

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৭

আপু আর কিছু দিন থেকে যাও না প্লিজ..!

” ব্যাগ গোছানোর সময় পেছন থেকে হঠাৎ মাহির কাতর কণ্ঠে বলা কথায় ঘুরে তাকালো অহনা এর পর বোনের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেঁসে বলে,

–” নারে বোন সেই কবে এসেছি ভার্সিটির ক্লাস চলছে এর মধ্যে অনেকটা দিন চলে গেছে বই টা পর্যন্ত স্পর্শ করা হয়নি কিছুদিন পর প্রথম ইয়ারের ফাইনাল সেমিস্টার পরিক্ষা। যেতেই হবে থাকার অপশন থাকলে তোদের কাছে থেকে যেতাম।

~”আমি তোমাকে খুব মিস করবো আপু,

-” আমিও তোদের কে খুব খুব খুব মিস করবো। আর ফোনে তো কথা হবেই।

~! আবার কবে আসবে তুমি…?

~” জানি না রে সবাই যখন আসবে তখন। এতদূর চাইলে ও তো একা আশা সম্ভব নয়।

~” আগামী কাল অহনা দিনাজপুর ফিরে যাবে তাই রাতেই সব গোছানো কমপ্লিট করে রাখলো। ইরফান বলেছে ইরফান দিয়ে আসবে।

–“সকালে ইরফান অফিসে গিয়ে একটি ইম্পর্টেন্ট মিটিং এটেন্ট করে কিছু ফাইল সাইন করেই বাসায় এসে দেখে অহনা রেডি হয়ে বসে আছে, ইরফান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে গাড়ি বের করে রোহান কে কল দিয়ে বলে,

~” যাবি নাকি..?

~” রোহান ভাবুক স্বরে বললো, কোথায়..?

~” তোর শশুর বাড়ি.!

~” সেখানে গিয়ে তুই কি করবি..?

~” অহনা বাসায় যাবে ওকে দিয়ে আসতে যাচ্ছি..।

~” রোহান আৎকে উঠে দাঁড়ায় চেঁচিয়ে বলে , কিহ..?

” রোহানের কেবিন রুমের আশে পাশে মানুষ রা এসে উকি দিয়ে দেখলো, কেউ কেউ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রোহানের অভিভূত বোঝার জন্যা, রোহান চারোদিকে তাকিয়ে এমন অবস্থা থেকে ফোন টা মুখের কাছে নিয়ে নিচু স্বরে হিসহিসিয়ে বললো,

~” শালা…! সমন্ধির নাতি মীরজাফর “আমার বউ কে বাসায় দিয়ে আসবি মানে..? আমায় বলেছিস একবার.?

~” এই যে বললাম এখন।

~” বাহ ভাই বাহ আমাকে বউ ছাড়া এতিম বানিয়ে দিয়ে তোরা সবাই বউ নিয়া থাক।

~” ইরফান ভ্রু কিঞ্চিৎ বাকা করে বললো, হুম! আয় দেখ দেখ এইতো বউ কোলে তুলে বসে আছি দেখে যা! শোন তোর ডায়লগ শোনার জন্য কল দেইনি যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে বল না হলে আমরা চলে যাচ্ছি।

~” আরে রেগে যাচ্ছিস কেন ভাই আমি কি বলেছি যাবো না..? যাবো তো।

~” অফিসের বাইরে এসে দাঁড়া পাঁচ মিনিটে আসছি।

বলেই ইরফান কল কেঁটে দিলো। অহনা বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এলো! সবাই অহনার সাথে সাথে বাইরে আসে অহনা কে বিদায় দিতে শুধু ফাইজা বাদে ফাইজা স্কুলে গিয়েছে এসেই অহনা আপু কে না দেখে খুব মন খারাপ করবে। ইরফান গাড়ি স্টার্ট দিলো মাহি মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে অহনা আপুর যাওয়ার দিকে।

হঠাৎ গাড়িতে রোহান কে দেখে অহনা ভরকে গেল রোহান কে তো বলা হয় নি আজ চলে যাবে। তা ছাড়া রোহানের সাথে তো অহনার ফোনে কথা হয় না।

~” ব্যাক সিটে বসে আছে অহনা চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, রোহান লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে এক দৃষ্টি তে অহনা কে দেখছে ” হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো, রোহানের ধ্যান ভাঙলো, ইরফান গাড়ি থেকে নেমে গেলো পিছে পিছে রোহান নামতে নিলে ইরফান বলে,

~” তোরা বস আমি আসছি।

~” রোহান আর নামলো না বসে রইলো, যাই হোক ভালোই হলো এই সুযোগে রাগীনির সাথে একটু কথা বলা যাবে।

~” ইরফান মূলত রোহান কে কথা বলার সু্যোগ করে দেওয়ার জন্যই নেমেছে এমনিতে তেমন কোনো কাজ নেই। আগে ওদের নিজেদের মধ্যে বর্নিং টা ঠিক করুক এরপর নাহয় বিয়ের চিন্তা ভাবনা করা যাবে।

~” রোহান একরাশ অভিযোগের স্বরে বললো, তুমি মেয়ে বড্ড পাষাণ, এভাবে না বলে চলে আসলে।

~” অহনা অপ্রস্তুত হয়ে পরে , ঠিকি তো বলে আসা হয়নি। কিন্তু যাইহোক তা শিকার করা যাবে না তাই অহনা শান্ত গলায় বললো,একটু আমতা আমতা করে,

~” আ.. আমি কেনো বলতে যাবো যার খোজ নেওয়ার সে ঠিক খোজ নিয়ে জেনে নেবে।

~” রোহান নিরেট কন্ঠে বললো, আমি কিভাবে খোজ নিবো আমি ফোন দিলেও তো তুমি বিরক্ত হও তাই তো ফোন দিতে পারি না।

~” অহনা দু’হাত আড়া-আড়ি ভাবে মাঝে ভাজ করে রেখে বলে,

~” আমি যে বিরক্ত হই তা তো কাউকে বলি নি..? কারো ইচ্ছে হলে ফোন দিবে বারণ তো করি নি।

~” রোহান খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে, সত্যি, তার মানে তুমি আমাকে কল করার অনুমতি দিচ্ছো।

~” অহনা অবাক হবার ভাঙ করে ভ্রু জোগাল করে বললো, সেটা কখন বললাম..?

~” রোহান চুপসে গেলো মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, এ মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না।

~” এরি মধ্যে ইরফান এসেছে , অহনার জন্য এক বস্তা খাবার নিয়ে, চিপস চকলেট এসব, প্যাকেট টা পেছনে ঘুরে অহনার হাতে দেয়, রোহান সিটে হেলান দিয়ে বসলো, ইরফান আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো কিছুটা দূরে গিয়ে রোহান কে জিজ্ঞেস করলো, কোন দিক দিয়ে গেলে ভালো হয় সোজা নাকি বাকা,

~” সোজা রাস্তা দিয়ে চল তারাতারি হবে।

~” ইরফান স্ট্রেয়ারিং ঘুড়িয়ে বাকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বলে, ওইদিকে রাস্তা ভাঙা।

~” রোহান বিরক্তি নিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো, নিজের ইচ্ছে মতোই যেহেতু চলিস তো আমায় জিজ্ঞেস করিস কেন..?

~” ইরফান কিছু না বলে গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো।

~” রোহান জ্বোরে বিড়বিড় করে বললো, ভাই বোন সব এক ঘাড় ত্যাড়ার বংশ।

~” রোহান কথা টা এতো জ্বোরে আওড়ালো যে, কথা টা ইরফান ও অহনা দুজনের কানেই গেলো, ইরফানের রিয়েকশন বোঝা না গেলে ও অহনা ঠোঁট চেপে হাসলো হাঁসলো।

” দুপুরে ফাহাদ কল করে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে, ইরফান রা ফুপি দের বাসায় পৌঁছে গেছে ফুপি না খাইয়ে ছাড়বে না খাওয়া দাওয়া শেষ করে রওনা হবে ফিরতে রাত হবে।

~” সাব্বির ওর বিয়ে উপলক্ষে সবাইকে ট্রিট দিবে বলে রেস্টুরেন্টে ইনভাইট করেছে, অহনা তো চলেই গিয়েছে ইরফান ও রোহান তো দিনাজপুর গিয়েছে ফিরতে রাত হবে, তাই ইরফান ফাহাদ কে বলেছে মাহি ও ফাইজা কে নিয়ে যেতে ও যাওয়ার সময় রাইসা কে পিক করে নিয়ে যেতে বলেছে। ফাহাদ ও তাই করলো কিন্তু ফাইজা যেতে পারলো না আর মাত্র দুদিন পর ফাইজার ফাইনাল পরিক্ষা। দিনরাত পরতে হবে তাই এখন ফাইজা ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট করতে চায় না। ফাহাদ মাহি ও রাইসা কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো, যেখানে বড় একটি টেবিল আগে থেকে বুক করে রেখেছিলো সাব্বির।

~” রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতেই রিয়ার সাথে দেখা হতেই রাইসা ছুটে গিয়ে আপু কে জরিয়ে ধরলো রিয়া ও বোন কে খুব আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, মাহি কাছে আসতেই রিয়া মাহি কে জরিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

“”কেমন আছো..?

~” মাহি মিষ্টি হাঁসি দিয়ে বললো,

ভালো আছি আপু তুমি কেমন আছো..?

— খুব ভালো আছি।

— অবশ্য রিয়া কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে রিয়া অনেক খুশি, আগের মতো মুখটা মলিন না মন টা বেশ ফুরফুরে আছে, তা রিয়ার কথা বার্তা আর হাঁসি দেখেই বোঝা গেলো। মাহি ও রাইসা একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা সস্থির হাঁসি দিলো।

~” সাব্বিরের সাথে রিয়া ছিলো দুজন কে দেখে মনে হয় বেশ ভালোই ভাব জমেছে দুজনের মধ্যে এ কদিনের মধ্যেই, নিরব ও এসেছে ফাহাদ চেয়ারে বসে আছে। ফাহাদের পাশে মাহি, মাহির পাশাপাশি রাইসা বসে, অপর দিকে নিরব সাব্বির ও সাব্বিরের পাশে রিয়া, পুরো টেবিল টা ভালোই জমজমাট তবে ইরফান ও রোহাহের অভাব ফিল করা যাচ্ছে, ওরা থাকলে পুরো টেবিলে কথার ফুলঝুরি ফুটতো তার প্রধান কারণ রোহানের আজগুবি প্রশ্ন ও ইরফানের ত্যাড়া ত্যাড়া উত্তর।

~” ফাহাদ পেছনে হেলান দিয়ে রাইসা রে দেখছে, রাইসা কিছুক্ষণ মাহির সাথে কথা বলছে তো কিছুক্ষণ রিয়ার সাথে, নিরব আর সাব্বির কথা বলছে অথচ ফাহাদের নজর রাইসা তেই আটকে রইলো, লাল রঙের একটা গর্জিয়াস থ্রিপিস পড়েছে রাইসা , ফরসা ধপধপে চেহারায়র চিকন চিকন ঠোঁট জোড়ায় রেড কালারের লিপস্টিক পড়েছে, কি দারুণ লাগছে ফাহাদ চোখ নামাতে পারছে না। বিষয় টা আজকে মাহি খেয়াল করলো তবে আবার রাইসার সাথে কথায় মনোযোগ দিলো।

~” হঠাৎ পেছন থেকে ফাহাদ বলে ডেকে ওঠে কেউ, মেয়েলি এক কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে তাকালো ফাহাদ সহ উপস্থিত সকলেই, ফাহাদ পেছনে তাকাতেই দেখলো একটা মেয়ে কাছে আসছে, ফাহাদ সামনে তাকিয়ে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা চালালো কখনো উঠে বাইরে যেতে নেয় তো কখনো টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকার ব্যবস্থা করে, কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা টেবিলের কাছে চলে এসে বলছে,

ফাহাদ তুই এখানে বসে আছিস আর আমরা সকলে ভাবছি তুই হয় তো আসিস নি বোধহয় এমনিতেই তুই যা বেস্ততা দেখাস।

~” ফাহাদের ফেসে যাওয়ার অবস্থা তবুও জ্বোর পূর্বক হেঁসে বলে, আরে রেশমা এখানে তুই…?

~” রেশমা ও ফাহাদ ক্লাসমেইট দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো কারণ দুজনেই ক্লাসের টপার ছিলো, ।তবে রেশমা ফাহাদ কে বরাবরই ভালো বন্ধু ভেবে গিয়েছে তাই হঠাৎ বহুদিন পর রাস্তায় ফাহাদ কে দেখার পর দুজনের আলাপ হয় রেশমা ওর জন্মদিনে ফাহাদ কে ইনভাইট করে।

~” ফাহাদের অবাক ভঙ্গিতে বলা কথায় রেশমা হক চকিয়ে যায় আর বলে, এখানে মানে কেনো তোকে ওইদিন ইনভাইট করে এই রেস্টুরেন্টের কথাই তো বললাম এখানেই আমার বার্থডে পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে, তুই ভুলে গেছিস?? তার মানে তুই আমার বার্ডে অনুষ্ঠানে আসিস নি..?

~” আরে হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো মজা করছিলাম এসেছিলাম তো তোর বার্থডে তেই তবে এই দেখ ভাই দের সাথে দেখা হয়ে গেলো হঠাৎ তাই বসে আলাপ করছিলাম।

~” ও আচ্ছা এই ব্যাপার এর পর রেশমা উপস্থিত সবাই কে সালাম দিয়ে সবার সাথে টুকটাক আলাপ করে পরিচিত হয় ও ফাহাদ কে উদ্দেশ্য করে বললো, ভাইয়া ও আপু দের সবাই কে নিয়ে ভেতরে আয় আর এখন যদি এটা নিয়ে নাটক করিস তো তোর খবর আছে ফাহাদ।

— এরি মধ্যে রেশমার কাজিন এসে ওকে ডাকছে ফাহাদ ধীর কন্ঠে বললো, হ্যাঁ আমরা আসছি তুই যা।

~” রেশমা চলে গেলে মাহি অবাক চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালো, নিরব জিজ্ঞেস করলো কি ফাহাদ ব্যাপার টা কি মিথ্যা বললি কেন মেয়ে টাকে, রাইসা তো খুব বেশি অবাক এমন গম্ভীর মানুষ ও এতো সুন্দর করে সাজিয়ে মিথ্যা কথা বলে দিলো। হঠাৎই ফাহাদের কপালে চিন্তার ভাজ…! একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে,

— সেদিন রাস্তায় হঠাৎ করেই দেখা ওর সাথে কথা বলতে বলতে দাওয়াত দিয়ে বসলো ওর জন্মদিনের রেস্টুরেন্টের নাম ও বলেছে, আমি ভাবলাম আমি তো আর যাবো না এতো মনোযোগ দিয়ে শোনার মানেই নেই, কবে আর কোথায় কিছুতেই মনোযোগ দিলাম না, কিন্তু আগে যদি জানতাম তাহলে কি আমি তোমাদের সাথে এই রেস্টুরেন্টে আসতাম নাকি..? আমার তো মাথা থেকেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো ওসব কথা।

~” সাব্বির বলে, এখন কি করবি এসে পড়েছিস না গেলে খারাপ দেখায়!

__ রেস্টুরেন্টের ভেতরে একটা বড় পার্টি সেন্টার আছে সেখানেই রেশমার র বার্থডে এরেঞ্জ করা হয়েছে ফাহাদ মাহি, রিয়া ও রাইসা কে পার্টি তে দিয়ে সাব্বির আর নিরব কে নিয়ে গিফট আনতে বেরোলো পাশেই অনেক বড় বড় মল আছে,

~” বেশ কিছুক্ষণ পর কেক টেক কাটা হলো, রেশমা কয়েক বার এসে ফাহাদ কে খুজে গেলো, কিন্তু ফাহারা এখনো আসে নি, বড় মোটামুটি একটা পার্টি সব বন্ধু রা ও কাজিন রা মিলে বড় একটি ছয় পাউন্ড এর কেক কাটা হয় আরেকটা স্পেশাল কেক যেটা কিনা রেশমার বয় ফ্রেন্ড এনেছে চকলেট কেক ছোট সাইজ কিন্তু অনেক সুন্দর ডেগারেশন করা।

~” ছোট কেক টা কাটার সময় রেশমা এসে মাহি, রিয়া ও রাইসা কে জ্বোর করে কাছে নিয়ে গেলো, হঠাৎ করেই রাইসার সাথে একটা মেয়ের ধাক্কা লাগে হাত থেকে ড্রিংকস পরে মেয়েটার জুতো তে পরে যদিও ভুল টা মেয়েটার বেশি ছিলো তবুও মেয়েটা উত্তেজিত হয়ে হাত থেকে পুরো জুস টা রাইসার গায়ে ছুরে মারে, রাইসার পুরো ড্রেস টা নষ্ট হয়ে গেলো আকষ্মিক এমন ঘটনায় রাইসা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, রিয়া বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে,

— এমন এক ঘটনায় মাহি ভীষণ রেগে গেলো মেয়ের দোষ থাকা সত্ত্বেও রাইসার সাথে এমন ব্যাবহার টা মাহি মেনে নিতে পারলো না রাগে কটমট করে টেবিলে রাখা স্পেশাল চকলেট কেক টা হাতে তুলেই মেয়েটার মুখে ঠাস করে লাগিয়ে দিলো মেয়েটার পুরো মুখ টায় কেকে লেপ্টে গেলো।

_” এরি মধ্যে ফাহাদ, সাব্বির, নিরব এসে এসব দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলো অদ্ভুত চোখে তাকালো, , এসব কি হচ্ছে, মেয়েটা কে চেনা যাচ্ছে না পুরো মুখে কেক আর কেক। চারোদিকে সবাই অট্টহাসি তে মেতে উঠলো, এটা ওটা কানা ঘোষা শোনা যাচ্ছে। মেয়েটা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতেই সবাই মেয়েটার মুখ দেখতে পেলো । ফাহাদ চিনে ফেলে আরে এটা তো নাতাশা। মেয়েটা রাগে ফোসফাস করে মাহির দিকে তেরে এলে ফাহাদ চলে আসে মাহি ও মেয়েটার মাঝে, ফাহাদ মাহির দিকে তাকালে মাহি ভাইয়া কে সব খুলে বলে।

— মাহি কে হাতে না পেয়ে মেয়েটা গিয়ে রাইসা কে ধাক্কা দিয়ে বললো তোর জন্য আমার এমন অবস্থা হয়েছে সবাই হাঁসছে আমার উপর। সাথে সাথে মেয়েটার কান বরাবর একটা বড়সড় থাপ্পড় খেলো সাথে সাথে মেয়েটার কানে যেনো ছোট খাটো এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো, শো-শো আওয়াজ হচ্ছে। আপাতত দশ মিনিট হয়তো কানে কিছু শুনবে না বলে মনে হচ্ছে। একটা চেয়ার ধরে বসে পরলো নাতাশা।

— নাতাশা হলো রেশমার চাচাতো বোন সাথে আবার দুজন সেম ক্লাসে ফাহাদের সাথেই পড়ে। তবে নাতাশা কিছু বাজে ছেলেদের সাথে মিশে নেশা পানি করতো দুই বার রিহাব সেন্টারে রাখার পরেও খুব একটা উন্নতি হয় নি। মাথা বিগড়ে থাকে সবসময় তা ফাহাদ ও জানে,। ফাহাদ রেশমার হাতে গিফট বক্সটা দিয়ে বললো, ওকে রিহাব থেকে বাসায় কেনো আনে বার বার একেবারে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত না আনাটাই বেটার।

এই বলে ফাহাদ সেই রেস্টুরেন্টে আরেকটা স্পেশাল কেক অর্ডার করে দিয়ে বোন কে বাহু ডোরে আকরে ধরে রাইসার হাত টা ধরে, সবাই কে নিয়ে বেড়িয়ে আসে, আসার আগে রেশমা অনেকবার সরি বলেছে ফাহাদ, মাহি ও রাইসার কাছে নাতাশার এই আরচণের জন্য। কিন্তু এখানে রেশমার তো কোনো দোষ নেই হঠাৎ নাতাশা এমন একটা কান্ড করে ফেলবে তা রেশমা বুঝতে ও পারে নি।

~” রিয়া নিদারুণ দৃষ্টি তে সব টা উপভোগ করলো, সত্যি মাহি ও রাইসার ফ্রেন্ডশিপ টা বেষ্ট। রাইসার জন্য এতোটা সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করে দিলো মাহি। আবার মনে মনে ভাবছে ওদের ফ্রেন্ডশিপের জন্যই রিয়ার জিসান নামক অমানুষ টার সাথে বিয়ে না হয়ে সাব্বির কে পেলো। রিয়া একটা প্রানবন্ত চমৎকার হেঁসে ফেললো আবার ফাহাদেরর দিকে তাকালো এমন একটা ছেলে তার বোনের জীবনে আসলে ওর বোনের জীবন টা ও সুন্দর কাটতো, হঠাৎ এমন কথা মাথায় আসতেই রিয়া মাথা ঝাড়া দিয়ে বললো ধুর এসব কি ভাবছি আমি।

.
.
.
.
.
.
.
.
.

~” বাড়ি ফেরার সময় গাড়ির মধ্যে দুই বান্ধবীর খিলখিলে হাঁসির শব্দ পেয়ে ফাহাদ ওদের দিকে মনোযোগ দিলো। হাঁসির কারণে কোনো কথাই স্পষ্ট বুঝতে পারছে না, তাই ফাহাদ মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

~” মেয়েদের হাঁসি সুন্দর তা মানলাম কিন্তু কথার মাঝে এতো হাঁসলে কথা টা বলে কখন..? আর সেই কথা বোঝে কোন শালায়..?

~” শেষ পর্যন্ত দুজনের কথায় এইটু বুঝতে পারলো যে নাতাশার মুখে কেক লাগানো নিয়েই দুই বান্ধবী হেঁসে যাচ্ছে। বিষয় টা মনে পরতে ফাহাদ ও ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফেললো। রাইসা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফাহাদ ও মাহি বাসায় ফিরলো মাহি রুমে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলো ইরফান ভাইয়ের রুমে লাইট জ্বলছে তার মানে ইরফান ভাই চলে এসেছে।

.

.

.

.

.

~” অনেক দিন পরে ক্লাসে এসেছে মাহি ও রাইসা দুই বান্ধবী, আদিবা ও নিপা বেশ বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে, এতোদিন ক্লাস ফাকি দেওয়ার কোনো মানে হয়…? ক্লাস শেষে বাইরে এসে দাঁড়ায় মাহি, রাইসা, আদিবা ও নিপা। আদিবা ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ কুচকে বললো,

~” এতোদিন দুই বান্ধবীর মিলে কলেজ বন্ধ দেওয়ার কারণ টা কি,

~” চটজলদি মাহি উত্তর দিলো,

” বিয়ের জন্য,।

~” নিপা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, মাহি তুই আমাদের কে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি আদিবা নাক মুখ কুচকে বললো, কই দেখে তো মনে হচ্ছে না।

~! রাইসা ও মাহি দুজনে মুখে হাত চেপে হাঁসছে , হাঁসতে হাঁসতেই মাহি জ্ববাব দিলো, বিয়ে হলে দেখে আবার বোঝা যায় নাকি…?

~” রাইসা এবার হাঁসি নিয়ন্ত্রণ করে বললো, আরে মাহির বিয়ে না।

~” নিপা ভ্রু কুচকে বললো, তাহলে কি তোর বিয়ে।

~” রাইসা বিরক্ত হয়ে বলে,

উফফ মাহি বা আমার দুজনের কারো এই না, আমার আপুর বিয়ে।

~” আদিবা ও নিপা দুজনেই বললো, একবার বলতে পারতি।

~” আরে এমন হঠাৎ করে হয়ে গেলো না সাথে আবার একটু ঝামেলা ছিলো।

~” আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, কি ঝামেলা..?

~” সে অনেক কাহিনি পরে বলবো।

— হঠাৎ ওদের সামনে কিছুটা দূরে একটা বাইক থামে, কালো বাইক টা দেখেই মাহি কাংখিত মানুষ টাকে চিনে ফেলে, কালো রঙের শার্ট তার বোতাম খোলা ভেতরে সাদা টি-শার্ট কালো প্যান্ট কালো হেলমেট সাথে বলিষ্ঠ লম্বা দেহের হাতে .. পাতেক ফিলিপ ষ্টেইনলেস ষ্টিল রেফ. রেফারেন্স ১৫১৮ মডেলের একটা ব্লাক ঘড়ি।

~” ইরফান কে দেখে সালাম দিয়ে আদিবা ও নিপা চলে গেলো মাহি ও রাইসা দাঁড়িয়ে আছে, রাইসা মাহির কাছে বিদায় নিয়ে চলে যেতে নিলে ইরফান বলে,

~” চলো ঘুরতে যাবে।

~” মাহি অবাক চোখে তাকালো ইরফান ভাই এর দিকে ঘুরতে যাবে মানে..? রাইসা মাহির দিকে আড়চোখে তাকায় এর পর ইরফান কে বলে,

না না ভাইয়া আজ না অন্য কোনো দিন, আজকে মা একটু তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে,

~” ঠিক আছে,

~” বলেই ইরফান একটি রিক্সা দাড় করিয়ে রাইসা কে পাঠিয়ে দিলো, এর পর মাহি কে বললো,

….. ” বাইকে বসেন..!

~” মাহি মৃদু স্বরে বললো, কোথায় যাবেন..?

~” ইরফান হেয়ালি করে বললো, পদ্মা সেতু থেকে ঝাপ দিতে যাচ্ছি! আপনি কি আমার সাথে ঝাপ দিয়ে মরতে রাজি আছেন।

~” হ্যাঁ রাজি..! আবেগ প্লুত হয়ে কথা টা বলা মাত্রই মাহি ঠোঁট কামড়ে ধরলো।

— ইরফান মুচকি হেঁসে হাস্কি স্বরে বললো, চলুন মহারানী।

~” মাহি কিভাবে বোঝাবে সে যে এখন দিন রাত্রি ইরফান ভাই কে নিয়ে কল্পনায় থাকে ইরফান ভাইয়ের কাছাকাছি থাকলে মাহির যে কেমন ফিল হয় তা কাউকে বোঝানোর মতো না। মাহি এখন ইরফান ভাইয়ের সাথে মরতে ও রাজি কিন্তু কিভাবে এসব ইরফান ভাইকে বোঝাবে। মাহি চুপচাপ বাইকে উঠে বসে, ইরফান বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে মাহি কে বললো ভালো করে ধরে বসুন, মাহি ইরফানের কাধে শক্ত করে ধরলো তবে ইরফান মাহির হাত টা কাধ থেকে নামিয়ে পেটে রাখলো, মাহির শরীরে শিহরণ বইছে বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়েছে, মাহি হাল্কা করে ইরফানের পেটে হাত রাখলো, হঠাৎ ইরফান জ্বোরে ব্রেক কষলো আচমকা ব্রেক করায় মাহি নিজেকে সামলাতে চোখ বন্ধ করে ইরফান কে চেপে ধরলো, এবার বউ বউ ফিল হচ্ছে ভেবে ইরফান আবার ফ্রেশ মুডে বাইল চালাতে লাগলো। সারা রাস্তায় মাহি ইরফান কে শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।

~” এখন ইরফান এমন এক জায়গায় এসে বাইক থামালো চারোদিকে জন মানব শূণ্য নিরব শুনশান রাস্তা। কেমন এক গা ছমছমে ব্যাপার চারোদিকে বড় বড় গাছ -পালা ভরা অনেকটা বন জংগলের মতো লাগছে, একটু ভেতরে যেতেই ঠান্ডা হাওয়া ছুয়ে যাচ্ছে ওদের কে, মাহি মনে মনে ভাবছে এমন জনমানবহীন জায়গায় কেনো এসেছে ইরফান ভাই। একটু ভেতরে যেতেই মাহির মনে দোতারা বাজানো শুরু করেছে এত্ত সুন্দর একটা জায়গা সামনে বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া কাছে রক্তের মতো গাড় লাল ফুল ফুটে আছে,, গাছটা অনেক টা জায়গা দখল করে আছে চারোদিকে ডালপালা সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, গাছটার নিচে এতো সুন্দর ঠান্ডা হাওয়া এই গরমের মধ্যেও এই গাছের ছায়া আর শীতল বাতাসে অনায়াসে অসম্ভব সুন্দর ঘুম দেওয়া সম্ভব।

~” মাহি ছুটে এসে গাছটার নিচে দু হাত তুলে দাঁড়িয়ে পড়লো চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছে ইরফান নিষ্পলক দৃষ্টি তে দেখে যাচ্ছে। মাহি চোখ খোলে গাছের সামনে লম্বা শরু সিঁড়ি এর পর বিশাল একটা পুকুরের মতো কিছু একটা ঠিক পুকুর বলা যায় না তবে দেখতে পুকুরের মতই তবে তার মধ্যে এক বিন্দু পানির ফোটা পর্যন্ত নেই পুরো পুকুর টা শুকনো মাটি গুলো ফাটল ধরানো যেমনটা অতি খরায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায় তেমন। তবে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে ফাটল ধরা মাটির ভাজে ভাজে সবুজ ঘাস উঠেছে, মাহি এই প্রথম এমন একটা পরিবেশ দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি,

~” ইরফান কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো, মাহি এসে ইরফানের কাছে বসতে বসতে বলে,

~” Thanks ”

–” কেনো..?

~” এতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য,

~” ইরফান নিষ্পলক ভাবে একটি ডালের দিকে বিরবির করে বলে ওঠে,

~” তোকে না পাওয়ার অসুখ আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে মাহি

আমি তোকে আমার করে পেতে চাই ঠিক সেভাবে চাই যেভাবে

… একজন কেন্সার আক্রান্ত মানুষ আশা নিয়ে বাঁচতে চায়।

তুইবিহীন জীবন থেকে মুক্তি চাই তোর নামে থাকতে চাই।

~” মাহি অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো ইরফান ভাইয়ের মুখ পানে। এই মানুষ টাকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছে মাহি তাকে কখনো নিজের করে পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই তবে মনে আছে শুধু এক রাশ আশা আর স্বপ্ন। যদিও মাহির কাছে মনে হয় এটা ওর জন্য নিসিদ্ধ তবুও যদি নাসিবে থাকে তাহলে এই নিসিদ্ধ চাওয়া টা ঠিক পূরণ হবে।

মাহি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয় মেঘে ঢাকা আকাশ ভেঙে এক্ষুনি বৃষ্টি আসবে আহা কি সুন্দর প্রকৃতি কি সুন্দর মনমুগ্ধ কর পরিবেশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোটা পরতে শুরু করেছে মাহির ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে একটা গান গাইতে তাই করলো গলা ঝেড়ে একটি গান ধরলো,

~” চমকিবে ফাগুনের পবনে…! পশিবে আকাশবাণী শ্রবনে..!

চমকিবে ফাগুনের পবনে..! চিত্ত আকুল হবে…!অনুখন অকারণ!!

-” দূর হতে আমি তারে সাধিব..! ! গোপনে বিরহডোরে বাধিব..!!

~” বাধনবিহীন সেই যে বাধঁন..! অকারণ..! মায়াবনবিহারিণী..!!

~” ইরফান নিষ্পাপ দৃষ্টু তে তাকিয়ে রইলো তার প্রেয়সীর মুখ পানে, প্রেয়সীর মধুর সুর ইরফানের মনে প্রনয়ণ শুরু করে দিয়েছে। এক চিত্তে মাহি কে দেখছে ইরফান এদিকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দুজন ভীজে একাকার হয়ে গেলো। এই বৃষ্টির সাথে ভেসে গেলো দুজন মানুষের হৃদয়ের অন্তরালে না বলা কথা গুলো সাথে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো দুজনের প্রনয়নের সুর। যা কেউ কাউকে বলতে পারছে।

চলবে……………..?