#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৪০
~” মরিয়ম বেগম পাথরের মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে রিয়ার কাছে রাইসার খবর পাওয়ার সাথে সাথে মরিয়ম বেগম চলে এসেছিলেন, তবে রাইসার এমন অবস্থা হয়েছে তা তার কল্পনা বিহীন ছিলো। রাইসার কেবিন রুম থেকে একজন মহিলা ডাক্তার কে বের হতে দেখার সাথে সাথে, ফাহাদ পাগলের মতো ছুটে এসে রাইসার কথা জিজ্ঞেস করলো,
— রাই কেমন আছে…? ও ঠিক আছে..? চোখ মেলেছে.?
__” ডাক্তার মহিলা ধীরে শ্বাস ফেলে বললো, সি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার বাট..
~” ফাহাদ শুকনো গলায় বললো, কি ম্যাম..? বলুন..
~” আই থিংক তাকে ধর্ষণের পূর্ণ চেষ্টা করা হয়ে ছিলো ভাগ্য ক্রমে বেঁচে গিয়েছে হয়তো তার দৃঢ় মনবল ও সাহসীকতার জন্য এটা পসিবল হয়েছে, বাকি টা তার মুখ থেকে জানা যাবে…!
__” ইরফান এসে সামনে দাঁড়ালো, ফাহাদ থমেরে দাঁড়িয়ে আছে।
~ ” ডাক্তার ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন মিস্টার চৌধুরী, কোনো এক বড় অঘটন থেকে তাকে বাঁচিয়ে এনেছেন।
_” ইরফান থমথমে গলায় বললো, ওর জ্ঞান ফেরেনি…?
~” হ্যাঁ তবে কিছুটা ট্রমার মধ্যে আছে, কিছু বলছে না ঠিক হতে একটু সময় লাগবে! আর হ্যাঁ কেউ দেখা করতে চাইলে করতে পারেন তবে একজন একজন করে যাবেন প্লিজ। বেশি ভীড় হলে পেশেন্ট এর জন্য প্রবলেম হবে।
~” আচ্ছা! থ্যাংক ইউ ডক্টর।
— ডাক্তার চলে গেলো, প্রথমে মরিয়ম বেগম মেয়ের কাছে গেলেন, মা কে দেখে রাইসা শুধু তাকিয়ে রইলো কিছু বললো না, মরিয়ম বেগম মেয়ের কাছে বসে নিরবে চোখের জল ফেলে গেলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না, রাইসা ও কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো শুধু।
–” ফাহাদ রাইসার জন্য কয়েকটি ড্রেস কিনে এনে মাহির হাতে দিলো, মাহি গিয়ে রাইসা কে চেঞ্জ করিয়ে দেয়, রাইসা কে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো,কিছুক্ষণ মাহি রাইসা কে জরিয়ে ধরে রাখলো,
~” বেশ অনেকটা সময় পরে ফাহাদ রাইসার সাথে দেখা করতে গেলো,
~” রাইসা বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে, কেবিনের জানালা টা খোলা দমকা হাওয়া বইছে, রাইসার মনোযোগ দূর অন্ধকার আকাশে নিবদ্ধ, ফাহাদ এসে রাইসার পাশে বসে অথচ রাইসার হেলদোল নেই রাইসার ধ্যান অন্য কিছুতে, রাইসা কোনো ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে, ফাহাদ গলা খাঁকারি দিলো, হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠ শুনে রাইসা কেঁপে উঠল, পুরো শরীর ঝাকি দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে তাকালো, ফাহাদ কে দেখে বোধহয় একটু সস্থি পেলো। তবে ফাহাদ বুঝতে পারলো রাইসার মনে ভয়ের রেশ কাটেনি এখনো,
–” ফাহাদ নির্বিকার চোখে তাকালো রাইসার দিকে, ফরসা গালে খামচির দাগ গুলো কতোটা বাজে ভাবে ফুটে উঠেছে, ঘাড়ের পাশে কামড়ের দাগ টা দেখে ফাহাদের শিড়া উপশিরা সব ফুলে উঠেছে গা জ্বলে যাচ্ছে, রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে, তবুও নিজেকে সামনে শান্ত চোখে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–” তোমার সাথে এমন টা কে করেছে রাই…?
–” রাইসা চুপ রইলো, মাথা নিচু করে বসে রইলো,
__” ফাহাদ আরেকটু তেজি কন্ঠে বললো, বলো রাই কে করেছে…?
_” রাইসার কোনো জ্ববাব না পেয়ে ফাহাদ উঠে দাঁড়ায় পাশে থাকা দেওয়ালে জ্বোরে জ্বোরে দুটো ঘুষি মারে, কি হয়েছিলো সেখানে বলো রাই কে করবছে এসব…? ফাহাদের আকষ্মাক চিৎকারে কেবিনের সামনে ছুটে আসে সকলে , মাহি রিয়া এসে রাইসার পাশে দাঁড়ায়, মরিয়ম বেগম ও রাবেয়া বেগম দরজার বাইরে থেকে তাকিয়ে রইলো, মাহমুদা বেগম কে নিয়ে নাজিফা বেগম কে পাঠিয়ে দিয়েছে ইরফান রাইসার জ্ঞান ফেরার পর রাইসার সাথে দেখা করেই তবে মাহমুদা বেগম গিয়েছে। মাহি নিজের ভাইয়ের এ রূপ জীবনের প্রথম বার দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে, রাইসা ফাহাদের ক্রোধিত লাল ভয়ানক চোখের দিকে তাকাতেই, কাঁপা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
__” জি.. জিসান ভাই..!
__” রিয়া আকাশচুম্বি নয়নে তাকিয়ে রইলো, মরিয়ম বেগমের যেনো পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠল, ইরফানের ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো, সাব্বির হাসফাস করছে, রোহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো, মাহি রাইসা কে চেঁপে ধরে রাখলো নিজের সাথে যতটুকু সম্ভব।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
~’ রাইসা যখন রিক্সা থেকে নেমে লাইব্রেরী তে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আচমকা পেছন থেকে কেউ একজন রাইসার মুখ চেপে ধরে, রাইসা চিৎকার দিতে চেষ্টা করে অথচ মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় না, লোকটি সাথে সাথে গাড়ি তে উঠে পড়ে, পুরুষালি শক্তির কাছে রাইসা পেরে উঠে না নিজেকে অনেক ভাবে মুক্ত করার চেষ্টা করেও হার মানতে হয় পুরুষালি পশুর মতো লোকটির কাছে, রাইসা লোকটার মুখ টা পর্যন্ত দেখতে পারে নি, কারো সাহায্য নিয়ে লোকটি রাইসার চোখ মুখ হাত সব বেধে ফেলে,।
_” প্রায় ঘন্টা খানেক পর রাইসার চোখ খুলে দিলে রাইসা নিজেকে এক ছোট কুড়ে ঘরে আবিষ্কার করলো, আর সামনে জিসান কে, জিসান নিজের দাতে দাত পিশে বললো,
~” তুই সব নষ্টের মূল শালি..! তোর জন্য রিয়ার সাথে আমার বিয়ে টা হলো না, । আমি সব খোজ নিয়েছি কি ভাবছিস তুই আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না..?
–” রাইসার মুখ বাধা, রাইসা কিছু বলতে পারছে না মুখ থেকে গোঙানির মতো শব্দ হচ্ছে,
~” জিসান পৈশাচিক হাঁসি তে মেতে উঠলো গা দুলিয়ে হাঁসছে,
–” কি হলো কিছু বলছিস না যে, বলেই মুখ থেকে চ শব্দ করে বললো, ওও মুখ তো বাধা দাঁড়া খুলছি এর পর রাইসার মুখ টা খুলে দিলো, রাইসা জ্বোরে জ্বোরে শ্বাস ভেলছে, এমন বন্ধ ঘরে নিজেকে বন্দি অবস্থায় পেয়ে ভয়ে সারা শরীর কেঁপে উঠল। রাইসার গা ছমছম করছে শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।
~” জিসান আবার ও শয়তানি হাঁসি দিয়ে বললো, আজকে তোকেই বিয়ে করবো আমি । তুই শুরু থেকেই বাধা সৃষ্টি করেছিস আমার জীবনে ,।
~” রাইসা ভয় পাচ্ছে অথচ তেজি কন্ঠে বললো, তোর মতো অমানুষকে কে বিয়ে করবে আমি বিয়ে করার আগে শ্বাস আটকে মরে যাবো, তবুও না।
__’ জিসান হুট করে তেরে এসে রাইসার গলা চেপে ধরলো, শ্বাস নালি আটকে গেলো, রাইসা ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে তবে জিসানের কোনো হেলদোল নেই, পশুর মতো চোখ গুলো চিকচিক করছে রাইসার ছটফটানি দেখে খুব তৃপ্তি পাচ্ছে জিসান। জিসানের মোবাইলে কল আসাতে রাইসার গলা ছেড়ে কল রিসিভ করে সরে গেলো জিসান।
~” ছাড়া পেতেই রাইসা হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে বসে পড়ে। বুকের ভিতর যেন কেউ শান দেয়া ছুরি চালাচ্ছে—প্রতিটি শ্বাসে তীব্র জ্বালা। চোখ দিয়ে ঝরছে জলের মতো অশ্রু, কিন্তু সেটা ব্যথার না, এক অসম্ভব আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ।
জিসানের পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়, যেন অন্ধকার কোনো গুহায় ঢুকে পড়ছে কোনো শ্বাপদ। রাইসা কাঁপতে থাকা হাতে গলা ঢাকে, সেখানে লালচে ছাপ—তার প্রতিবাদের চিহ্ন, তার সাহসের দাগ।
চারদিক নীরব, কিন্তু সেই নীরবতায় যেন আতঙ্ক আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করে রাইসা। ঠোঁট কাঁপলেও চোখে এখন আগুন। শ্বাস ফেলে বলে ফেলে আপনমনে,
“এ লড়াই এখন শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু।”
হতবিহ্বলতা এখন ধীরে ধীরে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে প্রতিশোধের অঙ্গীকারকে। জীবনকে আবার ধরে রাখার এই ক্ষীণ মুহূর্তে রাইসা বুঝে যায় ভয় নয়, প্রতিরোধই তার অস্ত্র।
~” প্রায় দুই ঘণ্টা পর ফিরে এলো জিসান। তখন সন্ধ্যা নামার আগমুহূর্ত আকাশ জুড়ে মিশে গেছে ধোঁয়াটে নীল আর ম্লান কমলা। সেই আধো-আলোতে কুড়ে ঘরটা যেন মৃত্যুর এক গা ছমছমে গুহা। রাইসা গুটিশুটি হয়ে কোণে বসে ছিল নিঃশব্দ, নিঃসাড়, তবুও ভেতরে রক্তখেকো কাঁটার মতো কাঁপছে তার মন।
কিন্তু এবার জিসানকে দেখে ভয়ের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায়, টলতে টলতে সামনে এসে দাঁড়ায় সে। চোখ দুটো লাল টকটকে, ঠোঁটের কোণে বিকৃত এক হাসি। যেন হিংস্র শিকারি আর অসহায় শিকারের মাঝের শেষ প্রহর।
রাইসা ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল সাহসের শেষ ভগ্নাংশটুকু দিয়ে। কিন্তু তাতে বরং জিসানের ভেতরের হিংস্রতা আরও উগ্র হয়ে ওঠে। বজ্রের মতো গর্জে উঠে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাইসার ওপর। রাইসা প্রাণপণে লড়াই করে, হাত-পা ছুঁড়ে ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শক্তিতে, দৈহিক ক্ষমতায় জিসান ছিল অনেক বেশি এবং অনেক বেশি পাষণ্ড।
রাইসার মুখে নখের আঁচড় ফেলে জিসান ফর্সা গাল থেকে রক্ত ঝরে পড়ে ধীরে ধীরে, যেন ওটা কেবল রক্ত নয়, রাইসার আত্মমর্যাদার ক্ষরণ। আচমকাই জিসান তার ঘাড়ে বসিয়ে দেয় এক হিংস্র কামড়। তীব্র যন্ত্রণায় রাইসার গোঙানি বেরিয়ে আসে, চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায়। কিন্তু সে হার মানেনি।
লড়াই চলতেই থাকে। কাপড়ের দু-এক জায়গায় ছিঁড়ে যায়, ধস্তাধস্তিতে দু’জনেই এলোমেলো। রাইসা অসহায়, কিন্তু ভেতরে তখনো একটা আগুন জ্বলছে, বেঁচে থাকার, লড়ার, নিজেকে রক্ষার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
হঠাৎই রাইসার হাত পড়ে একটি ইটের টুকরোয়। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সমস্ত শক্তি দিয়ে সেটি ছুঁড়ে মারে জিসানের কপালের ওপর। ‘টুং’ শব্দে মাথা ফেটে যায়, লালচে রক্ত গড়িয়ে পড়ে রাইসার হাতেও। ভয় আর সাহসের সেই সন্ধিক্ষণে রাইসা কাঁপতে কাঁপতে দেখে, আঘাতে জিসান কাতর, তখন আর সে পশু নয়, আহত মানুষ মাত্র।
আত্মরক্ষার প্রবল চেষ্টায় সে দৌড়ে বেরিয়ে যায় কুড়ে ঘরের দরজা ঠেলে। পেছন না তাকিয়েই অন্ধকারে মিলিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য, কিংবা হয়তো সাময়িক আত্মরক্ষার জন্য।
আর তখন সবশেষে রাইসা নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে ব্যথা, গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্ষত। ধীর শ্বাসে, ব্যথাতুর কণ্ঠে শুধু একবার কেঁদে ওঠে সে। তারপর নিস্তেজ দেহটা পড়ে যায় মাটিতে, সেই ভাঙা ঘরের মলিন মেঝেতে।
চারপাশে তখন এক তীব্র নিস্তব্ধতা, শুধু জোনাকি পোকাদের আলো অন্ধকারে ক্ষণিক ঝিলিক দিয়ে জানিয়ে যায় রাইসা এখনো বেঁচে আছে। সেই নিঃশব্দে লুকিয়ে আছে এক অসামান্য বেঁচে থাকার কাহিনি।
~” রাইসার কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে বলা শেষ শব্দগুলো যেন চারপাশের বাতাসকেও থমকে দিলো। নিস্তব্ধ ঘরে তখন নিঃশব্দে ঝরে পড়ে কয়েক ফোঁটা লবণজল, মরিয়ম বেগমের চোখ থেকে। সেই কান্না ছিল না কেবল একজন মায়ের, ছিল গভীর বেদনা, ছিল অপরাধবোধ, আর অসহায় এক হৃদয়ের হাহাকার।
__”ঘরের প্রতিটি কোণে নেমে আসে ভারী নীরবতা। উপস্থিত সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, যেন তারা নিজের চোখে দেখছে রাইসার সেই ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর প্রতিচ্ছবি।
“ফাহাদ… সে কিছু বলছে না। বলার মতো শব্দ নেই তার কাছে। বুকের ভেতর হঠাৎ করে বিস্ফোরিত হয় এক আগ্নেয়গিরির মতো ক্রোধ আর যন্ত্রণা। চোখ জলে ভিজে উঠেনি ঠিক, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে।
_”সে কল্পনা করতে পারে তার রাই, তার প্রিয়তমা, তখন কতটা অসহায়, কতটা বিভীষিকায় ডুবে ছটফট করছিল। যদি আরেকটু আগে পৌঁছাতে পারত! যদি একটু দ্রুত ছুটে আসা যেত! হয়তো সে বাঁচাতে পারত রাইসাকে এই দুঃস্বপ্ন থেকে।
~”ফাহাদের হাত মুঠো হয়ে আসে, নাকের পাটিগুলো ফুলে উঠেছে ক্রোধে। চোখে ঠিকরে পড়ছে আগুন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে,
“জিসান, তোকে আমি ছাড়বো না। আমার রাইয়ের গায়ে হাত! তোর সেই দুই হাতই আমি চুরমার করে দেবো, যেন কখনো আর কোনো নারীর গায়ে হাত তুলতে সাহস না হয়।”
__”ঘরটিতে তখন শুধু ক্ষীণ নিঃশ্বাস আর থমকে যাওয়া সময়ের শব্দ। রাইসার অতীত যখন ফাহাদের সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়ায়, তখন প্রেম এক নতুন রূপ নেয় কেবল ভালোবাসা নয়, দায়িত্ব, প্রতিশ্রুতি, আর প্রতিশোধের এক দীপ্তিময় শপথ।
— নিশীথ রাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক এগারোটা।
রাইসাদের বাসার দিকে ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে গাড়িটি। শহরের নিস্তব্ধতায় গাড়ির মৃদু গর্জন যেন ছিন্ন করছে নিঃশব্দের বুনন। গাড়ির সামনের আসনে বসে আছেন মরিয়ম বেগম, বুকের কাছে ক্লান্ত হয়ে মাথা হেলিয়ে রেখেছে রাইসা। কেমন যেন নিস্তেজ, নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ভার। পাশে বসেছে মাহি আর ফাইজা, চোখেমুখে উদ্বেগের ছায়া। পেছনের সিটে রয়েছে ফাহাদ, রাবেয়া বেগম গাড়ি চালাচ্ছে ইরফান, পাশেই বসে আছে রোহান । আর বাইকে করে পেছনে আসছে রিয়া আর সাব্বির। আজকের রাতটা রিয়া আর শ্বশুরবাড়িতে কাটাবে না, থাকবে রাইসার পাশে।
চারপাশে নিরবতা, যেন নিঃশব্দ এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে আশপাশে।রাইসাদের বাসার সামনেটা ঘিরে রেখেছে অসংখ্য মানুষ।গাড়ি থামতেই সবার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠল।”এত মানুষ?” বলে উঠল ফাইজা চাপা স্বরে।
ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে এল সবাই।রাইসাকে দুই পাশে ধরে নামিয়ে আনল মরিয়ম বেগম আর মাহি।
মেয়েটার শরীর যেন একেবারে ভেঙে পড়েছে, চোখেমুখে ক্লান্তির রেখা।
__”মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টির কেন্দ্রে এখন রাইসা।তীক্ষ্ণ চোখে সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে।বাইক থামিয়ে সাব্বির আর রিয়াও এসে দাঁড়াল।রিয়া বিস্ময়ে চারদিকটা একবার দেখে নিয়ে আঁতকে উঠল
“এত ভিড় কেন!”
ঠিক তখনই ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো রাইসার মামি, জাকিয়া বেগম।
চিৎকার করে কান্নার ভান করে বলে উঠল,
— “নষ্ট মেয়ে! অন্য ছেলের সাথে নষ্টামি করতে গিয়ে আমার ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার জিসানকে শেষ করে দিলো, এই মেয়েটা সাংঘাতিক! কী অসভ্য মেয়ে গো!”
সকলের দৃষ্টি মুহূর্তেই ঘুরে গেল রাইসার দিকে।
চোখেমুখে অবিশ্বাস, ঠোঁটের কোণে কুৎসিত হাসি।
তীব্র রাগে কেঁপে উঠলেন মরিয়ম বেগম।
চিৎকার করে বলে উঠলেন,
— “চুপ করুন ভাবি! খবরদার !
আপনি আমার পবিত্র মেয়ের নামে বাজে কথা বলার আগে নিজের ছেলেকে দেখতেন!
যে ছেলে মেয়েদের সম্মান করতে শেখেনি, তার জন্য আজ আমার মেয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে!?”
কথা শেষ না হতেই জাকিয়া বেগম আবারো নাটকীয় কণ্ঠে বলতে লাগল নানা অভিযোগ,
আর ভিড়ের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল ফিসফাস, কানা-ঘুষো।
বয়স্ক কয়েকজন মহিলা চাপা গলায় বলছে,
“এই মেয়েটা তো চুপচাপ ছিল, হঠাৎ এমন কী করল?”
— “তা নাকি ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে?”
__”সব কথা যেন আগুন হয়ে ঢুকছে ফাহাদের মস্তিষ্কে।রক্ত টগবগ করে ফুটছে তার মাথায়।ইরফান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জাকিয়া বেগমের দিকে, চোখ রক্তবর্ণ।চৌধুরী পরিবারের কেউই আর নিজেকে সংবরণ করতে পারছে না।
~”মাহির নাকের ডগা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। কানের পাশ দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে।তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইসা আজ দাঁড়িয়ে আছে শত মানুষের অপমানের মুখোমুখি।
_” রাইসা নিস্তেজ চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু বলতে পারছে না অসহাত্ত তাকে ঘিরে রেখেছে ।
–মানুষের কৌতূহলে তপ্ত হয়ে উঠেছে চারপাশের বাতাস।কেউ মুখ নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আবার কেউ-বা ঠোঁটে কটুকথার বিষ মেখে ছুঁড়ে দিচ্ছে অপমানের তীর।
এমনই এক মুহূর্তে,
একজন মধ্যবয়সী মহিলা মুখ ভেংচিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল—”এই নষ্ট মেয়েটাকে কে বিয়ে করবে শুনি? ওর তো বিয়ে হবে বলেই মনে হয় না!”
চারদিক যেন মুহূর্তেই গুঞ্জনে ছেঁয়ে গেল।
তখনই দৃঢ় কণ্ঠে গর্জে উঠল ইরফান—
— “সেটা নিয়ে আপনাদের অত চিন্তা করতে হবে না, চাচি।আমার ভাই ফাহাদের সাথে রাইসার বিয়ে হবে,
আর সেটা আগামী তিন দিনের মধ্যেই।আপনারা যারা এখানে উপস্থিত, সবাই আমন্ত্রিত! দাওয়াত রইলো।
এখন আপনারা দয়া করে ফিরে যেতে পারেন।”
কথাগুলো যেন এক ধরণের বিস্ফোরণ ঘটাল ভিড়ের মাঝে।কেউ চোখ কপালে তুলে চুপ হয়ে গেল,
আবার কেউ নিচু গলায় ফিসফিস করতে করতে স্থান ত্যাগ করল।
জাকিয়া বেগমও চারপাশের উত্তেজনার আঁচ টের পেলেন।লোকজনের চোখেমুখে রাগ আর ঘৃণার ছাপ,
যেকোনো মুহূর্তে তাঁর দিকে ছুটে যেতে পারে এই জমে ওঠা রাগ।তিনি ধোঁয়াশা পরিস্থিতি বুঝে চুপিচুপি সরে পড়লেন।
এদিকে ইরফান ধীরে ধীরে রাবেয়া বেগমের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাছে দাঁড়িয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
“আমি কি ভুল করলাম কাকিয়া…? তুমি কি মনে করো ?”
রাবেয়া বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন।তার মনের ভিতর বিদ্যমান এক গাঢ় ভাবনা।আজ যা রাইসার সঙ্গে ঘটল,তা তো তাঁর নিজের মেয়ের সঙ্গেও ঘটতে পারত…তখন তিনি কি করতেন?এই ভাবনাতেই তাঁর চোখে জল টলমল করল।
মৃদু হাসি এনে বললেন না বাবা, তুমি কোনো ভুল করোনি।রাইসাকে আমার ঘরের বউ করতে কোনো আপত্তি নেই।তোর কাকাকে আমি বুঝিয়ে বলবো,মনে হয় না তাঁরও কোনো আপত্তি থাকবে।
তবে ফাহাদ কী চায়, সেটা তুই একটু দেখিস।”
ইরফান মাথা নেড়ে সম্মতির সুরে বলল—
“ঠিক আছে কাকিয়া।”
ফাহাদের দিকে একবার তাকাতেই সব স্পষ্ট হয়ে গেল ইরফানের কাছে।চোখের গভীরে লেখা ছিল এক অদম্য আবেগ,রক্তে ফুঁসে উঠা প্রতিজ্ঞার ভাষা।রাইসার সেই অপমানের মুহূর্তে ফাহাদের প্রতিক্রিয়া,তার ক্রোধ আর রক্ষা করার উন্মত্ততাসবকিছুই বলে দিচ্ছিল,রাইসা তার ভালোবাসা, তার প্রিয় তার ‘রাই’।
আর সে ‘রাই’-কে কোনোভাবেই হারাতে নারাজ ফাহাদ।
এই ভালোবাসা শুধু সম্পর্কের নয়—
এ এক ধরনের দায়, এক অসীম প্রতিজ্ঞা,
যার শুরু হয় অপমানের প্রহরে,
শেষ হয় সম্মানের উজ্জ্বল আলোয়।
চলবে…….?
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৪১
~’ বউ সাজে চুপচাপ বসে আছে রাইসা। লাল জমকালো লেহেঙ্গা, কপালে টিকলি, গলায় ভারী গহনার ভার—সব মিলিয়ে যেন এক অপূর্ব চিত্ররূপে পরিণত হয়েছে সে। চৌধুরী বাড়িতে এর আগেও বহুবার এসেছে সে, তবে মাহির বান্ধবী হিসেবে। সেই সময় এমন কোনো অস্থিরতা তাকে ছুঁয়ে যায়নি। কিন্তু আজ… আজ সে এই পরিবারের বউ হয়ে এসেছে। অনুভবটা অচেনা, গা ছমছমে, আর ঠিক ততটাই কাঁপানো।
এই এক সন্ধ্যায় চৌধুরী পরিবারের সবাই যেভাবে তাকে বরণ করে নিয়েছে, তাতে রাইসার মনে একরাশ কৃতজ্ঞতা। সবাই তাকে আদর করেছে, আপন করে নিয়েছে। অথচ তার ভেতরটা ভারি হয়ে আছে ফাহাদকে নিয়ে। সেই তালপাতার সেপাই… কে জানতো, একদিন এই ছেলেটিই তার স্বামী হবে?
ফাহাদ মানুষ হিসেবে অসাধারণ। রাইসার মনে হয়, সে হয়তো এমন একটা মেয়েকে ডিজার্ভ করে, যার অতীত ঝকঝকে পরিষ্কার। অথচ সে পেয়ে গেছে কলঙ্কিত এক নাম—রাইসা।
মাহি আর ফাইজা যখন রুমে ঢুকে গল্প করছিলো, তখন মুহূর্তটুকু একটু স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। মাহি তো খুশিতে আটখানা—সারা জীবন তার প্রিয় বান্ধবী এখন ভাইয়ের বউ! আর মাহমুদা বেগম, ফাহাদের ছোট আম্মু, মায়ের মতোই সাহস দিয়েছেন তাকে।
কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার পর, নিঃসঙ্গতা চারপাশ ঘিরে ধরে। রাইসা আবার ফিরে যায় সেই ঘটনার পরদিনে—যেদিন সমস্ত অপবাদ তার ঘাড়ে এসে পড়ে, অথচ সে কোনো দোষ করেনি। সে তখনই জানিয়ে দেয়, এ বিয়ে সে করতে চায় না। নিজের অভিশপ্ত জীবনে ফাহাদের মতো ভালো মানুষকে টেনে আনতে চায় না।
তবে সেই রাতে, তালপাতার সেপাইয়ের কণ্ঠে ধরা পড়েছিলো এক অদ্ভুত দৃঢ়তা,
— “শোনো রাই, আমি তোমাকে ইচ্ছা করে বিয়ে করতে চাই। তুমি হয়তো মানতে পারছো না, কিন্তু আমি জানি তুমি কী। তুমি পবিত্র, তুমি একটা বোকা ফুল—আর আমি এই ফুলকে নিয়েই আমার জীবন সাজাতে চাই। যতদিন না তুমি মন থেকে বিয়ে টা মানো, আমি তোমার কোনো অধিকার চাইবো না।”
ফোন রেখে দেয় ফাহাদ। রাইসার বুকের ভেতর শূন্যতা আর আবেগে ঠাঁই মেলে না। সে বুঝতে পারে, ফাহাদ অন্যরকম। ভিন্ন কেউ।
বিয়ে হয়, ঘরোয়া আয়োজন। মরিয়ম বেগম মন থেকে চাননি এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু পরিস্থিতি… কলঙ্কের ছায়া এতটাই ঘন ছিলো যে ইরফান এগিয়ে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে যেন মেয়েটাকে এক চরম অসম্মান থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।
রাত গভীর হলে রাইসা চুপচাপ বসে থাকে। রুমটা এখন শুধু ফাহাদের না—তাদের দু’জনের বৈধ আবাস। হঠাৎ দরজায় শব্দ, ফাহাদ ঢুকে পড়ে। চোখে পড়তেই তার মুখ থমকে যায়, এত সুন্দর বউ তার, প্রেয়সী কে সে এতো তারাতারি পেয়ে যাবে তা সে কল্পনাও করেনি।
চোখ নামিয়ে নেয় ফাহাদ। শান্ত কণ্ঠে বলে,
— “ড্রেসটা খুলে একটু আরামে শুয়ে পড়ো।”
রাইসা একটু চমকে তাকায়। মুখে শুধু একটা শব্দ,
“হু…?”
_ “বললাম, গয়না, লেহেঙ্গা এসব খুলে বিশ্রাম নাও।”
বলেই সে একটা বালিশ হাতে নেয়। রাইসা একটু সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করে—
— “কোথায় যাচ্ছেন?”
— “ঘুমাতে, ওই শোফায়।”
~” “আপনি খাটে না শুয়ে…?”
_ “যেদিন তুমি মন থেকে এই বিয়ে মেনে নিবে, সেদিন ভাববো আমি তোমার পাশে থাকার যোগ্য।”
শব্দ গিলে নেয় রাইসা। কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু গলা শুকিয়ে আসে। নিস্তব্ধতা চারপাশে জমে যায়, যেন কোনো রহস্য অপেক্ষা করছে সময়ের গর্ভে।
—
সকালে মাহি নিচে নেমে দেখে ইরফান ভাই বসে আছেন। ফরমাল ড্রেসে, হয়তো অফিসে যাবেন। ইরফান ভাই, এই এক লোক মাহির রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সে কিছু বলার আগেই ইরফান মৃদু স্বরে বলে—
> “আজকে এক কাপ চা খাওয়াবি মাহি?”
মাহি থমকে যায়, একটু পরে বলে—
_ “তবে চিনি দেবো না?”
ইরফান হেসে জবাব দেয়—
““তুই বানালে চায়ের সাথে চিনি লাগে কিসে? তোর চেয়ে মিষ্টি আর কী হতে পারে মাহি?”
মাহির গাল লাল হয়ে আসে, সে কিছু না বলে চলে যায়।
—
রাইসা সকাল সকাল রান্না ঘরে যায়, যদিও সে খুব একটা রান্না পারে না। কিন্তু চেষ্টার তো কমতি নেই। সেখানে উপস্থিত দুই জা, নাজিফা বেগম ও রাবেয়া বেগম তাকে দেখে হেসে ওঠে।
কিছু লাগবে মা, “কিছু লাগবে মা?”
–” রাইসা আমতা আমতা করে বললো, “আমি হেল্প করতে চাই আন্টি।”
” কোমল কন্ঠে বললো রাবেয়া বেগম,
“আন্টি নয়, মা বলো। তুমি তো আমাদের আরেক মেয়ে।”
রাইসার গলার কাছে দলা পাকায়। মনে হয়, নতুন করে যেন একটা পরিবার পেয়েছে সে। একটি আশ্রয়, একটি স্বীকৃতি।
—
সিয়াম লিসা ও অহনা নিয়ে এসেছে বিয়েতে না আসতে পারলেও তারা আজ এসেছে। সিয়াম ও লিসা কয়েক দিনের মধ্যে USA ফিরে যাবে। রাইসা, মাহি, ফাইজা তিনজন অহনা ও লিসা কে দেখে ভীষণ খুশি, তবে মন খারাপ ও বটে সিয়াম ভাই আর লিসা আপু চলে যাবে কিছুদিন পর। আজকে একটা রাত থেকে কাল সকাল ভোরে চলে যাবে তারা!
.
.
.
.
.
~” অহনার খবর শুনে রোহান ইরফান দের বাসায় যাবে তার প্রিয়তমা রাগিনী কে এক নজর দেখতে তবে রোহানের একমাত্র আপনা সমন্ধী মানে সিয়াম বাসায় আছে একা যাওয়া যাবে না সন্দেহের তালিকায় পরতে পারে তাই কাউকে নিয়ে যাওয়া দরকার,কাকে নিয়ে যাবে..? ভাবতে ভাবতে সাব্বির কে কল করলো রোহান..
–হ্যালো..?
~” ভাই কই আছিস..?
__” বাসায় আছি।
–” বের হবি না…?
__” নাহ আজকে আর বের হবো না।
রোহান ভ্রু কুচকে বললো, শালা বউ পাইয়া আর বাইর হইতে মন চায় না..?
~” সাব্বির রোহান কে জ্বালানোর জন্য নাটকিয় স্বরে বললো, আরে ঘরে পরি থাকলে কি আর কেউ বাইরে জ্বীন এর সাথে ঘোরে…?
__” রোহান মেজাজ চড়া করে বললো, শালা সব কয়টা মীরজাফর।
~” সাব্বির অট্টহাসি দিয়ে আরেকটু জ্বালাতে উঁচু গলায় বললো, ও বউ আজকে আকাশটা মেঘলা মেঘলা একটু খিচুড়ি করো, বউয়ের হাতের খিচুড়ি কি যে স্বাদ তা যাদের বউ নাই তারা বুঝবে না।
~” আজ একটা বউ নেই বলে এত্ত বড় অপমান..!রোহান ফোস করে নিশ্বাস ফেলে কল কেটে দিলো,
~” এরপর নিরব কে কল লাগালো রোহান রিসিভ হতেই রোহান ভাড়ি গলায় বললো,
_” ভাই তুই আবার গোপনে বিয়ে করে রাখিস নাই তো…?
_” হঠাৎ এমন প্রশ্নে নিরব কপাল কুচকে বললো, লাল পানি খাইছিস নাকি..? আমি বিয়ে করলে কি তোরা অজানা থাকতি নাকি..?
~” লাল.. নীল কোনো পানিই খাই নাই সবাই বউ নিয়া বাহাদুরি করে তাই বললাম , আয় একটু ইরফান দের বাসার দিকে যাবো…!
–কোথায় আছিস..?
–” এই তো গলিড় মোরে আছি।
~” দাঁড়া পাঁচ মিনিটে আসছি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
~’ রাত নেমেছে ঢাকার আকাশে—সিটি লাইটের কোলাহলে খানিকটা কুয়াশা-মেশানো ঘুমন্ত চাঁদটাও যেন আজ একটু বেশি উজ্জ্বল। ছাদের রেলিং ঘেঁষে বসে আছে পাঁচটা মুখ—ইরফান, ফাহাদ, সিয়াম, রোহান আর নিরব। হাতে চায়ের কাপ।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙে ইরফান সিয়ামের দিকে তাকিয়ে কিছুটা গম্ভীর অথচ কোমল গলায় বলল,
— “তাহকে ভাইয়া চলে যাচ্ছ…?”
সিয়াম একটু ম্লান হেসে মাথা নাড়ল,
— “হ্যাঁ রে, ছূটি শেষ যেতে হবে, তোরা মাঝে মাঝে যাস বাসার দিকে একটু খেয়াল রাখিস, বোন টাকে দেখে রাখিস।
~” এই কথাটা শুনে রোহান চুপচাপ চায়ের কাপটা ঠোঁটে নিয়ে নিচু গলায়, যেন নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল,
—এই কথাটা শুনে রোহান চুপচাপ চায়ের কাপটা ঠোঁটে নিয়ে নিচু গলায়, যেন নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল,
“অহনা কে দেখে রাখার জন্য আমি আছি ভাই… আপনি মানেন বা না মানেন, বিয়ে তো আমি আপনার বোনকেই করবো।” ইরফান শালা বেইমান ওর দ্বায়িত্বতে আমার অবলা বউ টাকে দিয়ে যাইয়েন না ভাই, কবে জানি কোনো কালা পাঠা ধইরা বিয়ে দিয়ে দেয়।
তার এই নিরব উচ্চারণ বাতাস ছুঁয়ে হয়তো চাঁদের কাছেই পৌঁছাল, কিন্তু ইরফানের কানে এল না। সে চুপচাপ সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে বলল,
— “কোনো টেনশন করো না ভাইয়া, ফুপি আর অহনার খেয়াল রাখার জন্য আমরা আছি।
__ ” যাওয়ার সময় বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে রোহান। এতটুকু আশায় বুক বাঁধা—হয়তো শেষবারের মতো চোখে চোখ পড়বে। আসার পর মাত্র এক ঝলক চোখে পড়েছিল অহনার, তাও দূর থেকে। দু-একটা কথাও হয়নি রাগিনী টার সাথে, সকলে পাশে থাকায় আর সুযোগ হয়নি মুখ খুলে কিছু বলার। ভাবছে, যদি যাওয়ার আগে একবার দেখা হয়, একটুখানি চোখের দেখা, তবে হয়তো মনের ভিতরটা একটু হলেও শান্ত হবে।
সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই, পেছন থেকে ভেসে এলো এক চেনা কণ্ঠস্বর। রোহানের পা থেমে গেল, হৃদয়ের ধুকপুক শব্দ যেন মুহূর্তে কানে বাজতে লাগল।
— “মামি মা, একটু তেঁতুল দাও তো!”
অহনার কণ্ঠ—নরম, কোমল, চিরচেনা।
রাবেয়া বেগম কৌটো থেকে কিছুটা তেঁতুল হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন,
— “বেশি খাস না কিন্তু, অসুখ হবে। মাহিটাও শুধু তেঁতুল খায়, কখন না আবার দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়িস।”
অহনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
— “আরে না, তুমি চিন্তা করো না, কিচ্ছু হবে না।”
দরজার ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে রোহান নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল। মন ভরে দেখল বহুদিনের অদেখা ভালোবাসার মানুষটিকে। অহনা এক ঝলক রোহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল—সঙ্কোচ, কিন্তু তাতে কোনো দ্বিধা নেই, বরং আবেগ জমাট হয়ে আছে সেই এক পলকের ভেতর।
এই অসময়ে অহনার এই আসা কি সত্যিই তেঁতুলের জন্য? নাকি এই আসাটা শুধুই একটা অজুহাত? রোহান বুঝে নেয়, অহনা এসেছে শুধু একটিবার তার দেখা পেতে, একটিবার চোখে চোখ রাখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।
চলবে….?