#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৪৬
~” ঘরটা ভর্তি মানুষ, কিন্তু মাঝখানে বসে থাকা অহনাকে দেখলে মনে হয় যেন সে একা। চারপাশে গুরুগম্ভীর মুখে বসে আছেন পরিবারের বড়রা,পাত্রপক্ষের সবাই এসেছেন আজ অহনাকে দেখতে। অহনার চোখ নামানো, ঠোঁট দুটো একটানা চেপে ধরা, হাতের তালুর ভেতর আরেক হাতের আঙুল প্যাঁচানো, সব মিলিয়ে তার শরীরী ভাষায় স্পষ্ট একটুকরো লজ্জা আর অস্বস্তির ছায়া।
অহনার ঠিক সামনে বসে আছেন রোহানের মা আর কাকি, মুখে মৃদু হাসি। পাশে বসে আছেন রোহানের বাবা ও কাকা, সোজা হয়ে বসা পুরুষদের চেহারায় ক্লান্তি নেই, যেন কোনো এক সামাজিক কর্তব্য পালন করতে এসে মনেও রেখেছেন অভিজাততার ভার।
আর তাদেরই সামান্য দূরে বসে আছেন চৌধুরী বাড়ির তিন কর্তা, ফরহাদ চৌধুরী, কাশেম চৌধুরী আর মনির চৌধুরী, পাত্রপক্ষকে অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন আর আলোচনায় ব্যস্ত তারা, চায়ের কাপে চুমুকের সঙ্গে সঙ্গে একেকটি প্রথাগত কথা উড়ে যাচ্ছে বাতাসে।
আলো-ছায়ার খেলা খেলা ঘরজুড়ে, অথচ অহনার ভেতরে যেন কিছু একটা থমকে আছে।
এ জীবনে প্রথমবার কোনো পাত্রপক্ষের সামনে বসা, যেন পুরো পৃথিবী এক নিমিষে ছোট হয়ে এসেছে, আর সেই কেন্দ্রে গুটিশুটি হয়ে আছে সে নিজে। আত্মীয়দের আলাপ, পাত্রপক্ষের দৃষ্টি, আর তার নিজের বুকের ভেতরের অস্থিরতা, সবকিছু মিলিয়ে মুহূর্তটা হয়ে উঠেছে ভারি, আনচান করা।
~” বেশ কিছুক্ষণ পর, নরম পায়ে ঘরে প্রবেশ করে সাব্বির, নিরব ও রোহান তার একটু পর ফাহাদ ও এসে দাঁড়ায় । বাকিদের ভদ্র সম্ভাষণ জানিয়ে তারা এসে বসে যায় চৌধুরী পরিবারের কর্তাদের এক পাশে। এ এক নিয়মতান্ত্রিক সাজানো পরিবার। কিন্তু এই মাপে বাঁধা কাঠামোর মধ্যেও এক মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এক অদৃশ্য আলোড়ন, রোহানের চোখ পড়েছে অহনার দিকে।
রোহান থেমে যায় একটু, তার দৃষ্টি গেঁথে যায় অহনার শাড়ির ভাঁজে। চোখ চেয়ে থাকে মুগ্ধ বিস্ময়ে, এ যে সেই শাড়ি!
__’সেই ঈদে , যখন সে আর ইরফান মিলে তুমুল ঝগড়া করে, তর্ক করে, শেষে মন জিতিয়ে, একরকম জোর করেই কিনে দিয়েছিল এই শাড়িটা। অহনা তখন রেগে ছিলো, হয়তো এখনো পর্যন্ত অহনা যানে না শাড়ি টা রোহানের দেওয়া একটি ভালোবাসার চিহ্ন কিন্তু আজ… আজ এতদিন পর, এই বিশেষ দিনে, সেই শাড়িই অহনার শরীরে জরানো।
রোহানের বুকের মধ্যে কেমন যেন এক অজানা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। ইচ্ছে করে লাফিয়ে উঠে বলে “এই দেখো! এই শাড়িটা আমার ভালোবাসার চিহ্ন !”
কিন্তু না, এই ঘর, এই পরিবেশ, এইসব গুরুগম্ভীর মুখের সামনে সে শুধু নিজের চোখ নামিয়ে নেয়, ঠোঁটের কোণে একটু হাসি চেপে রাখে।
~” আবার একবার চেয়ে দেখে অহনার দিকে
অহনা মাথা নিচু করে বসে আছে নিঃশব্দে। সে যেন এই সভার মধ্যখানে থাকা কোনো নিঃশব্দ ফুল, নির্বাক, কোমল, নিজেই নিজের ভেতরে সুরক্ষিত। তার চোখ উপরে ওঠে না একবারের জন্যও, এমনভাবে গুটিয়ে বসে আছে, যেন সামান্য স্পর্শেই ভেঙে যাবে।
রোহান মৃদু হেসে, ঠোঁটের কোণে খেলা করা আবেগ গোপন করে নিচু স্বরে সাব্বিরের কানে কানে বলে উঠে,
—”আমার রাগীনির যে এত রাগ, তা তো বোঝাই যাচ্ছে না আজ! নিষ্পাপ ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে দেখ?”
রোহানের কণ্ঠে ছিল এক মিশ্র আবেগ, আদর, প্রশ্রয়, আর অদ্ভুত এক তৃপ্তি। যেন অহনার এমন কোমল চেহারাটার মালিক সে নিজেই।
~” ইরফান একটি জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিল। সময়মতো ফেরার চেষ্টা করেও পারল না,কাজের জটিলতা, দায়িত্বের ভার আর পরিস্থিতির চাপে তার দেরি হয়ে গেল।
দরজার শব্দ হতেই সবার কানে পৌঁছায় তার আগমনের বার্তা। কেউ কিছু না বললেও ঘরের বাতাসে হালকা একটা নড়চড় টের পাওয়া যায়।
ইরফান তাড়াহুড়ো করে ঢুকে, চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু মুখভঙ্গিতে আছে স্থিরতা, সে জানে, আজকের এই মুহূর্ত ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
“একটু ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি,”
–“বলেই সে সোজা উঠে যায় উপরতলায়,
নিচের ঘরভর্তি মানুষ তখনো অপেক্ষারত। চায়ের কাপ নিঃশব্দে ঠোঁটে উঠছে, কিছু কথোপকথন মাঝপথে থেমে যাচ্ছে আবার শুরু হচ্ছে।
চৌধুরী পরিবারের তিন কর্তা, রোহানের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি রোহান নিজেও জানে,ইরফান এলে তবেই শুরু হবে মূল আলোচনা।আজকের এই আনুষ্ঠানিকতা, ভালো লাগা ও ভালোবাসার সম্ভাব্য বন্ধনে গাঁথা হওয়া মুহূর্ত, তার সূচনা যেন অপেক্ষা করছে একজনকেই।
ইরফানের প্রত্যাবর্তন মানেই আলোচনার ছক পাকা হবে। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে আছে এক লাজুক অহনা, নিঃশব্দে।
~” ঘরের এক কোণে মুখ গুঁজে বসে আছে মাহি ও রাইসা। মেয়েলি কৌতূহলে তারা বুঝে গেছে নিচে কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যেটা কানে শোনার আগ পর্যন্ত মন শান্ত থাকবে না।
তারা ঠিক করল, কাউকে পাঠাতে হবে, কিন্তু এমন কাউকে, যে গেলে কারও সন্দেহ হবে না, আর কথাও বলতে হবে না, শুধু চুপচাপ গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে ফিরতে হবে।
দুই বান্ধবীর তাকানো-চাওয়ায় চোখ আটকাল ফাইজার উপরেই।
—”ফাইজা, এক কাজ কর, একটুখানি গিয়ে দেখ তো নিচে কী হচ্ছে, কিন্তু চুপ করে, কেউ যেন টের না পায়!” মাহি বলল চোখ টিপে।
~”রাইসা তাড়াতাড়ি যোগ করল.. “শুনেই চলে আসবে !”
ফাইজা যেতে চাইছিল না। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট অনীহা, কপাল কুঁচকে গেল, বলল—”উফ, আমিই সবসময় গুপ্তচর হই কেন?”
তবুও শেষমেশ খুদে পা ফেলল সিঁড়ির দিকে, গুটি গুটি হেঁটে ধীরে ধীরে এগোল, যেন তার পায়ের শব্দটুকুও বাতাসে বিলীন হয়ে যায়।
সিড়ির কিনারায় দাঁড়িয়ে ফাইজা কৌতূহলে নিচে উঁকি দিল, চোখ বড় হয়ে গেল তার, এত মানুষ, এত চুপচাপ, আর সেই মধ্যে অহনা এক কোণে বসে, যেন নাটকের মঞ্চে নায়িকা।
ঠিক তখনই ভেসে এল গম্ভীর, ভারী এক পুরুষালি কণ্ঠ,
—”এই পিচ্চি! এখানে কি করছো?”
ফাইজা চমকে উঠল। পায়ের নিচে সিড়ির কাঠ যেন হঠাৎই কেঁপে উঠল। ভয় আর লজ্জায় সে প্রায় লাফ দিয়ে সরে গেল পিছনের দিকে, মুখটা লাল হয়ে উঠল মুহূর্তেই।
~” ফাইজা চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলো সেই গম্ভীর কণ্ঠের মালিক আর কেউ নয়, নিরব ভাই ।
~” কি হলো পিচ্চি বলো.. এখানে কি করছো তুমি.?
‘পিচ্চি’ শব্দটা কানে যেতেই ফাইজার ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। মুখে কিছু না বললেও মনের ভিতর বিরবির করে উঠল সে,
“উনি আবার আমায় পিচ্চি বলেন! এই তো আর ক’দিন,.. কলেজে ভর্তি হবো, আর এখনো এই নামে ডাকছেন!”
হালকা রাগ চাপা দিয়ে চোখ নামিয়ে একটানা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—”কিছু না, পথ ভুলে চলে এসেছি।”
নিরব হেসে ফেলল, একটা নরম, চঞ্চল হাসি তার মুখে খেলে গেল।
—”ঘরের ভেতর আবার মানুষ পথ ভুলে?”মৃদু ব্যঙ্গ মেশানো কণ্ঠে বলল সে।
ফাইজার চোখ-মুখ কঠিন করে ফেলল। কপালের মাঝখানে ভাঁজ পড়ে গেলো, ভুরু দুটো কুঁচকে রাগী সুরে বলল,
—”আমি ভুলি। যাই হোক, এখন যাচ্ছি!”
ফাইজা ঘুরে পড়ার ভান করে যখন হাঁটতে শুরু করেছে, তখন পেছন থেকে আবার নিরবের সেই স্বভাবসিদ্ধ স্বর ভেসে এল,
—”শোনো পিচ্চি, ইরফানকে গিয়ে বলো সবাই অপেক্ষা করছে, যেন তাড়াতাড়ি নিচে নামে।”
~” এইবার আর সহ্য হলো না। তৃতীয়বার ‘পিচ্চি’ ডাক শুনে ফাইজা থমকে দাঁড়ায়। ঘুরে তাকায়, চোখে রাগের ঝিলিক, ঠোঁটে অল্প কাঁপুনি,
যেন বলতে চায়, ” নিরব ভাই আপনি আমায় পিচ্চি পচ্চি বলে ডাকছেন কেনো আমি পিচ্চি নই ?”
কিন্তু বলে না কিছুই, শুধু ঠোঁট কামড়ে হালকা গর্জনের মতো বলে ওঠে,
—”আমার নাম ফাইজা। পি-চি-চি না।”
~” ফাইজা ধপধপ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে গেল। পায়ের শব্দগুলো যেন বাড়ির নিস্তব্ধ ঘরের ভেতরেও রাগের ছাপ রেখে গেল।
নিরব দাঁড়িয়ে রইল নিচে, চোখ তুলে তাকাল সিঁড়ির শেষ প্রান্তের দিকে।
একটু হেসে, এক হাত দিয়ে নিজের চুল এলোমেলো করে দিল সে। ভেতরে ভেতরে যেন নিজের সঙ্গেই প্রশ্ন করল,
“এই পিচ্চি এত তেজ দেখিয়ে গেল কেন? কী এমন হলো আমার কথায়? নাম বলেই তো ডাকলাম! পিচ্চি কে পচ্চিই তো বলবো …!”
চোখে-মুখে কিছুটা বিরক্তি, কিছুটা কৌতূহল। আবার একরকম অদ্ভুত আনন্দও লুকিয়ে ছিল, যেন ছোট্ট এক মুখ ভার করা কিশোরীর রাগটা তার মনে বিনা কারণেই দাগ কেটে গেল।
কিন্তু নিরব জানে, এই মেজাজি পিচ্চির ভরসা করে ইরফানকে খবর পৌঁছাবে, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। মুখে যতই বলুক, কে জানে, রাগের মাথায় গিয়ে আর কিছু বলেই না!
তাই সময় নষ্ট না করে পকেট থেকে ফোন বের করল। স্ক্রিনে ইরফানের নাম ভেসে উঠতেই কল টিপে দিল।
—”তারাতারি নিচে আয় ভাই, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে,”নিরবের কণ্ঠে ছিল সোজাসাপটা তাগাদা।
কল কেটে রেখে আবার একবার সিঁড়ির দিকে তাকাল নিরব। মনে মনে হাসল,
“এই পিচ্চিটা মোটেও সাধারণ না। ভাবসাব দেখি, রাগে গলে আগুন!”বলেই চলে গেলো সবার কাছে গিয়ে সাব্বিরের পাশে বসলো
~” ইরফান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ঘরের বাতাস যেন খানিক গাঢ় হলো। সবার চোখ একসঙ্গে ফিরল তার দিকে, কেউ মৃদু হাসল, কেউ কেবল সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।
ইরফান নেমে এসে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়ল। একবার চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে বিনীতভাবে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্ভাষণ জানাল সবার উদ্দেশে।
এমনিতেই তার পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না এখানে।
রোহানের বাবা, কাকা রা আগেই থেকেই ইরফানের সুপরিচিত।বহুবার দেখা, বহু আলাপ, পারিবারিক যোগাযোগ,সব মিলিয়ে সম্পর্কটা বেশ সহজ আর আরামদায়ক।
এক ধরনের স্বস্তির আবহ তৈরি হলো ঘরে।
কথোপকথনের মঞ্চ প্রস্তুত আর অপেক্ষা নেই।
আলোচনা শুরু হলো বিয়ের মূল বিষয় নিয়ে।
~” এবার বাড়ির তিন গিন্নী ও ফরিনা বেগম ও এসে বসলেন । মাহমুদা বেগম একটু এগিয়ে গিয়ে অহনার পাশেই বসলেন অহনার অস্থি দূর করাতে।
তাঁদের আগমনেই ঘরের নারী-আবহটা যেন আরও ঘন হয়ে উঠল, কথার ধরণ বদলে গেল, হাসির ভঙ্গি পেল আরও কোমলতা।
“আলাপ যখন প্রায় শেষের পথে, হঠাৎই রোহানের মা ধীর পায়ে উঠে অহনার সামনে এসে দাঁড়ালেন।ঘরের নীরবতা যেন একটু গাঢ় হলো। সকলের চোখ স্বভাবতই সেদিকে ঘুরে গেল।
রোহানের মা ব্যাগ থেকে ধীরে ধীরে একটি বাক্স বের করলেন। বাক্স খুলতেই তার ভিতর থেকে এক জোড়া সোনার বালা আর একখানা আংটি চকচক করে উঠল।
নরম অথচ দৃঢ় হাতে তিনি অহনার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন, আর কিছু না বলে, অহনার বাঁ হাতে একে একে পরিয়ে দিলেন বালা দুটি।তারপর আঙুলে গুঁজে দিলেন সেই আংটি।
~” অহনার শরীরটা এক মুহূর্তে যেন কাঠ হয়ে গেল।তার ছোট্ট বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে কাঁপতে লাগল, যেন হঠাৎ কোনো অজানা ঝড় এসে তাকে স্পর্শ করেছে।এতক্ষণ যা হচ্ছিল, সবকিছুই ছিল কথার খেলা, সম্ভাবনার বুনন।
কিন্তু বালা আর আংটির সেই স্পর্শ, তা যেন বাস্তবতার মর্মর শব্দ হয়ে তার গায়ে এসে লাগল।
সে প্রস্তুত ছিল না। অন্তত এতটা বাস্তব, এতটা হঠাৎ মুহূর্তের জন্য নয়।
চোখের পাতায় জমে থাকা শঙ্কা আর অচেনা লজ্জার ওজনটা যেন তাকে গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। নিঃশ্বাসটাও যেন আটকে গেছে।
ঠিক তখনই, এক জোড়া স্নেহময় হাত ধরা পড়ল তার হাতের ওপর।মাহবুবা বেগম! অহনার ছোট মামি যখন ধরলেন তাকে আলতোভাবে হাতে সেই ছোঁয়া পড়তেই অহনা একটু নরম হয়, বুকের ভেতরের কাঁপুনি হালকা হয় যেন।
চোখ তুলে চাইল না, কিন্তু অনুভব করলো এই সময়ে মামির হাতের নরম স্পর্শ যেনো তাকে মর
ঝরে পড়া ফুল কুরিয়ে নেওয়ার মতোই মনে হলো।
~” রোহান দের বাসার সবাই বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে ঠিক সেই সময় ফরহাদ চৌধুরী রাইসা, মাহি ও ফাইজা কে ডেকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়,
~” রোহানের পরিবারের সদস্যরা তখন বিদায়ের ভদ্রতা বিনিময়ে ব্যস্ত, কিন্তু যখন মেয়েরা সামনে এলো, রোহানের কাকি হঠাৎই থমকে গেলেন।তাঁর চোখ আটকে গেল মাহির মুখে।
মাহির চোখেমুখে এক ধরনের সৌন্দর্য, নম্রতা আর এক রহস্যময় স্থিরতা, যা চোখে পড়ে আর দৃষ্টি আটকে যায়।
রোহানের কাকি যেন আচমকা মুগ্ধ হয়ে গেলেন। দ্রুত পায়ে হেঁটে এগিয়ে এলেন মাহির দিকে।তারপর এক কোমল হাসি ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—”কোন ক্লাসে পড়ো মা?”
মাহি কিছুটা ভদ্র জড়তা নিয়ে হালকা হেসে বলল,
—”ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।”
কাকির মুখে তখন প্রশংসার উজ্জ্বল রেখা।
তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে এসে মাহির গালে আলতো হাত বুলিয়ে বললেন,
—”অহনার মায়ের মতো তুমিও খুব মিষ্টি মা… একদম মনের মতো!”
মাহি মাথা নিচু করে হাসল, আর রাইসা পাশে দাঁড়িয়ে চোখ টিপে ফাইজাকে ইশারা করল
তারা জানে, এই মুহূর্তে আবার কোনো মজার কিছু হবে।আর ফাইজা? সে তো মনে মনে ভাবছে “এই দেখো, বিয়ের আলোচনা ছাড়িয়ে এবার অন্য লাইনেও কথাবার্তা শুরু হয়ে গেল!”
~” ফাইজার মুখে হালকা চপল হাসি। ঠোঁট কামড়ে কোনোরকমে হাসি চেপে রাখল, যেন কথার আগে মুখই কথা বলে ফেলতে চাইছে।
রাইসার কানের কাছে মুখ নিয়ে বিরবির করে বলল,
—”দেখো ভাবি, মাহি আপুর সাথে কথা বলতে বলতে এই আন্টি হয়তো এখনই তার বিয়ের যোগ্য ছেলের কথা তুলবে। প্রশংসা দিয়ে শুরু, পরে বলবে , বিয়ে করাবো।
রাইসা চোখ বড় বড় করে হেসে ফেলল চাপা গলায়।তার চোখের দৃষ্টি তখন রোহানের কাকির মুখে, আর কাকির মুখে ঠিক তখনই ফুটে উঠল সেই চেনা আশাবাদের হাসি।
—”আমার বড় ছেলেটা খুব ভালো, শান্ত-শিষ্ট আর ভদ্র,”বলতে বলতে কাকি মাহির কাঁধে হাত রাখলেন, যেন মায়ের চোখে মাপছেন ভবিষ্যতের জন্য।
—”চাকরিও করে, খারাপ কোনো সঙ্গেও নেই, আর ঘরের বড়দের অনেক সম্মান করে। মেয়েটা মিষ্টি হলে না, ঘরের সৌন্দর্যটা টিকেই থাকে!”
মাহি অপ্রস্তুত মুখে মাথা নিচু করে নিলো,
রাইসা তখন ফাইজার পিঠে হালকা চাপ দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—”তুই তো দেখি ভবিষ্যতবাণী তে পাকা হয়ে যাচ্ছিস !”
ফাইজা গর্ববোধে কাঁধ টান করে বলল,
—”আমি তো বলেছিলাম!
~” রোহানের কাকি হঠাৎ যেন একটু উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। মুখে এক ঝলক হাসি খেলে গেল, সেই হাসিতে ছিল আনন্দের রেশ, আর সঙ্গে লুকোনো এক তীক্ষ্ণ পরিকল্পনার ইঙ্গিত।
মাহির কাঁধে হাত রেখে হেসে বললেন,
—”এই তো, এখনই আসছে গাড়ি করে আমার ছেলে… ভাইয়ের বিয়ের পাকা কথা শুনেই সে মিষ্টি নিয়েই চলে আসছে!”
তিনি একটু থেমে আবারও বললেন,
—”তুমি এখানেই থেকো মা, তোমার সঙ্গে আজই আমার ছেলের পরিচয় করিয়ে দেবো।
মাহির মুখে এক চিলতে জড়তা আর অসস্থি । সে একটু হকচকিয়ে চাইল রাইসার দিকে।
রাইসা চোখ চেপে হাসি চেপে রাখল, আর ফাইজা তো মুখ ঘুরিয়ে পুরো পেছনে গিয়ে গাছের ডালে পাখি দেখার ভান করল।
~”তবে সবার আনন্দ, হাসি আর কথাবার্তার ভীড়ের মাঝেও কোনো এক তীক্ষ্ণ বাক্য যেন তীর হয়ে এসে বিঁধল ইরফানের কানে।
“তোমার সঙ্গে আজই আমার ছেলের পরিচয় করিয়ে দেবো…”
শব্দগুলো কানে ঢুকতেই, ইরফানের মুখের রঙ পাল্টে যেতে শুরু করল।তার বুকের ভেতর জমে থাকা অজানা ঝড়টা ধীরে ধীরে মাথা পর্যন্ত উঠে এল।মুখে কোনো কথা নেই, কিন্তু চোখে… চোখে যেন আগুন।চোখের সাদা অংশে লাল রেখা ফুটে উঠতে লাগল, রক্তবর্ণ হয়ে উঠল দৃষ্টি, যেন মুহূর্তেই ঝলসে দিতে চায় সবকিছু।
তীব্র রাগে তার দাঁতগুলো আঁকড়ে বসেছে একে অপরকে। নিঃশ্বাস হয়ে উঠেছে ভারী, যেন শরীরের ভেতর গরম ধোঁয়ার ঢেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে।চারপাশে মানুষজন হাসছে, কাকি হাসিমুখে ভবিষ্যতের ছবি আঁকছে, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে ইরফান দাঁড়িয়ে আছে আগ্নেয়গিরির মতো, প্রস্তুত বিস্ফোরণের জন্য।
তার চোখে তখন আর কেউ নেই, না রোহানের কাকি, না মাহি, না আশেপাশের কোনো মুখ।
ছিল কেবল একটাই ভাবনা
মাহি… আর আরেকজন ছেলে?এই অসম্ভব চিন্তাটাই যেন তার হৃদয়ে বিস্ফোরণ ঘটাল নিঃশব্দে।
~” সবকিছু যেন স্বাভাবিকভাবে চলছিল, অথচ সবার অলক্ষে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল ইরফানের চোখে।এক মুহূর্তের সুযোগে সে হঠাৎ করেই মাহির হাত চেপে ধরে তাকে একপ্রকার হ্যাঁচকা টানে ভিড় থেকে একটু দূরে, বারান্দার কোণায় নিয়ে যায়।
মাহি অবাক, কিছু বলার আগেই ইরফান মুখটা একেবারে কাছে এনে কানের পাশে ঠাণ্ডা কিন্তু জ্বলন্ত স্বরে ফিসফিস করে বলে উঠল,
—”দ্রুত রুমে যা। দুনিয়া উল্টে গেলেও এখন আর নিচে আসবি না। আর যদি দেখেছি, ওই মহিলার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে নিচে নেমেছিস… তাহলে তোর ঠ্যাং আমি ভেঙে দেবো।”
স্বরে রাগের আগুন, চোখে তীব্র দাবানল। ইরফানের একেকটা শব্দ যেন মাহির বুক কাঁপিয়ে দিল।সে মুহূর্তেই বোঝে,এখন আর কথা বলার সময় নয়, বরং নিরাপদে সরে যাওয়াই শ্রেয়।
কিছু না বলে মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে উপরের দিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে মাহির মুখে একটা চাপা বিরক্তির ছায়া।মনেই মনেই গজগজ করতে করতে বলে,
“উফ্ বাবা! আমি কি বলেছি কিছু? ওই আন্টিই তো যা বলার বললো, আমি তো শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন আমি নেমে এলেই তার ছেলে আসবে, আমি দেখা করবো, এই সব কল্পনার কী দরকার!”
দরজার কাছে পৌঁছেই মাহি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিচে তাকায়।ইরফান তখনও দাঁড়িয়ে, আগুনভরা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকেই।
মাহি ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগটাও গিলে নেয়, কারণ সে জানে, এই চোখের ভাষার মানে খুব ভালো করেই জানে সে।
~” মাহি রুমে চলে গেলো সাথে পেছন পেছন রাইসা ও ফাইজা ও চলে গেলো, মাহমুদা বেগম অহনা কে নিয়ে চলে গিয়েছেন রুমে।
~” কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন নতুন করে হালকা চাঞ্চল্য দেখা দিল।
রোহানের চাচাতো ভাই, রবিন, এক সুগঠিত গড়ন, সবার মাঝে এসে পড়তেই একে একে বড়দের সালাম জানাল।সঙ্গে ছিলো হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট। ড্রাইভারের হাতেও ছিলো আরেক গুচ্ছ বাক্স।ইরফানের বাসার দুজন কাজের লোক ছুটে গিয়ে প্যাকেটগুলো নিয়ে নিলো সম্মানের সঙ্গে।
রবিন এসে সামনের সোফায় বসতেই রোহানের কাকি, মুখে এক রহস্যময় হাসি নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন।
নজর খুঁজে ফিরছে কারো জন্য, মাহি!
যার প্রশংসায় কিছুক্ষণ আগেই মুখ রাঙিয়ে উঠেছিল তিনি, আজই নিজের ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আদর্শ সময় মনে করছেন।
তাঁর চোখ চকচক করছে উৎসাহে। হঠাৎ করেই বললেন,
—”মাহি কোথায় মা? সে যে একটু আগে এখানে ছিল!”
চারপাশে কেউ সাড়া না দিলে তিনি স্বয়ং এগিয়ে এলেন রাবেয়া বেগমের কাছে।
—” আপা, আপনার মেয়ে কোথায়? আমার রবিন তো এসেছে, ওর সঙ্গে একটু আলাপ করিয়ে দিতেই চাই।”
রাবেয়া বেগম অনাকাঙ্ক্ষিত অনুধাবনে একটু থমকে গেলেন।
কথার ভেতর যে অদৃশ্য বার্তা ছিল, তা তিনি বুঝতে পারলেন না, শুধু মৃদু হেসে বললেন,
—”এইতো, ও হয়তো উপরে রুমে আছে। ডাকছি তাকে।”
তিনি তখন ধীর পায়ে উঠে গেলেন মেয়েকে ডাকার জন্য, অথচ তিনি জানতেন না, সেই রুমের দরজা ঘরের বাইরের হাওয়া ছুঁতে দেয়নি অনেকক্ষণ ধরেই।মাহি তখনো নিজের মধ্যে গুটিয়ে , ভয়ে লজ্জায় বা হতবাক হয়ে, দরজার ভেতরেই চুপ করে বসে আছে।
রাবেয়া বেগম কপালের ভাঁজ নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে কড়া নাড়লেন,
—”মাহি … শুনছিস ? একটু নিচে আয় তো!”
~” অনেকক্ষণ যাবৎ দরজায় কড়া নাড়ার পরও যখন একটুও সাড়া মিলল না, রাবেয়া বেগমের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজছিলেন কাউকে, এমন সময় চোখে পড়ল,রাইসা ঠিক তখনই পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসছে।
রাবেয়া বেগম থামিয়ে দাঁড়ালেন তাকে, উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“মাহি দরজা খুলছে না কেন মা? ওর কি কিছু হয়েছে নাকি?”
রাইসা এক মুহূর্ত থমকে গেল, মনের ভিতরে ঠিকরে উঠলো সন্দেহের ঝলক।একটু আগে ইরফান যেভাবে মাহিকে টেনে নিয়েছিল, তার পরের অভিব্যক্তিগুলো ঠিক স্বাভাবিক ছিল না।কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সামলানোই জরুরি।
তাই রাইসা হালকা হাসি টেনে, ভেতরের অস্থিরতা আড়াল করে স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলল,
—”আসলে মা, একটু আগে ও আমায় বললো ওর খুব ঘুম পাচ্ছে। হয়তো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে… তাই সাড়া দিচ্ছে না।”
রাবেয়া বেগম কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো, তিনি আর কিছু না বলে ধীরে পেছন ফিরে নিচে নেমে গেলেন।
~” নিচে নেমে এসে রাবেয়া বেগম একটু দ্বিধায় পড়ে গেলেন। কীভাবে বলবেন মাহিকে এখন দেখা যাবে না?
তবুও মুখে এক ধরনের নরম সৌজন্য এনে রোহানের কাকি, “রবিনের মার দিকে এগিয়ে গেলেন।নরম কণ্ঠে বললেন,
—” মাহি একটু আগে বলছিল ঘুম পাচ্ছে খুব। মনে হয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দেখা হলে অন্য কোনো দিন আলাপ করিয়ে দেবো ।”
রবিনের মা, সেই সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে, এক গাল হেসে বললেন,
~”আচ্ছা আপা, কোনো সমস্যা নেই। আজ তো কথা হল, বাকি আলাপ পরে হবে,ইনশাআল্লাহ। মেয়েটি মিষ্টি, নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালো বরই রাখবে ওর জন্য।” রাবেয়া বেগম রবিনের মায়ের এইসব হেয়ালি কথার মানে কিছুই বুঝে উঠতে পারে নি তবে,
~”নিচতলার সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে ছিল ইরফান। দৃশ্যপটের মাঝে সে ছিল না, কিন্তু প্রতিটি কথা, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি ইঙ্গিত তার কানে ঠিকই ঢুকছিল।রোহানের কাকির মুখে “আমার ছেলে”, “মিষ্টি মেয়ে”, “পরিচয় করিয়ে দেবো” এই কথাগুলো যেন ইরফানের কানের পর্দা ভেদ করে সোজা গিয়ে আঘাত করছিল হৃদয়ের গভীরতম স্থানে।
তার সমস্ত রক্ত যেন এক মুহূর্তে ফুটে উঠ,চোখ দুটো রক্তাক্ত, নাকে শ্বাস জ্বলন্ত হয়ে উঠেছে।
সবাই হয়তো ভাবছে আজ একটা আনন্দঘন দিন, হাসি-আনন্দে ভরা দিন কিন্তু ইরফান ভাবছে, এই হাসির আড়ালেই কেউ একবার তার মাহিকে দেখতে চাইছে, চোখে চোখ রাখার পরিকল্পনা করছে।
তার মুষ্টিবদ্ধ হাত কাঁপছিল। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলছিল,
“কারও স্পর্শ, কারও দৃষ্টিও সে পাবে না—যতদিন আমি আছি।”
~” কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বিরবির করে বললো,
“তুই শুধু আমার… মাহি… কক্ষনো কারও হতে দিবো না। কেউ তোকে চিনে ওঠার আগেই, আমি তোকে আগলে রেখে দেবো এমনভাবে… যেন তোকে দেখাও অসম্ভব হয়ে যায়।”
~” সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো ইরফান নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সবাই কে বিদায় দিলো যাওয়ার সময় রোহান আজকে আবার ও ইরফানের হাত ধরে বলে গেলো, Thanks ভাই।
~” ইরফান মৃদু হেসে রোহানের কাধে হাত রেখে বলে, Congratz…..
~” সবাই ধীরে ধীরে চলে গেলে , ইরফান সিড়ির প্রতিটি ধাপ ভেঙে উঠতে লাগলো ধীর পায়ে, যেন মনটাও তার ভার হয়ে গেছে হঠাৎ, মাহির রুমের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো সে। হাত বাড়াল না, কড়া নড়ল না,শুধু একবার চোখ তুলে তাকালো বন্ধ দরজাটার দিকে।
মনে হলো, অভিমানী মেয়েটা হয়তো এখনো ওর অভিমান নিয়ে নিরবে বসে আছে ভেতরে। হয়তো জানালার পাশে মাথা ঘুরিয়ে, না বলা হাজার কথার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে চুপ করে আছে। ইরফানের বুকের ভেতরটা হালকা কেঁপে উঠলো। হয়তো কিছু কথা বলা ঠিক হয়নি তখন… সেই মুহূর্তের রাগটা এমন নিষ্ঠুরভাবে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল না।
” একটা দীর্ঘ, গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ইরফান পেছন ফিরে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো সে। ঘরের অন্ধকারে একাকিত্ব যেন চুপিসারে ঢুকে পড়লো, মাথার পাশে নীরবতার মতো ঠায় বসে রইলো।
চলবে…………?
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৪৭
~” সকালের আলো যেন আজ একটু বেশি রঙিন, একটু বেশি খুশিমাখা। অহনার বিয়ের কেনাকাটা আজ শুরু, আর তাই পুরো বাড়িতে একটা চাপা উত্তেজনা, যাওয়ার জন্য সবাই রেডি , তবে মাহি বাদে সকাল থেকে শুয়েই আছে কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলে ভালো লাগছে না আমি যাবো না, ফাহাদ বাইরে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
~” কিরে বোন সবাই রেডি হচ্ছে তুই হচ্ছিস না..?
~” ভেতর থেকে মাহি জ্ববাব দিলো, ভালো লাগছে ভাইয়া আমি যাবো না তোমরা যাও।
~”ইরফান নিচতলায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। কিছু না বলে, ধীরে সিঁড়ি ভাঙতে লাগলো উপরে। তার চোখে চিন্তার ছায়া। সে জানে, মাহির “ভালো না লাগা” কথাটার ভেতর আছে এক বুক অভিমান, তার সেই অভিমানের কারণ টাও ইরফানের জানা।
~” তবে ফাহাদ এসবের কারণ বুঝতে না পারায় মুখে চিন্তার ভাজ পড়লো, হঠাৎ কি হলো মাহির, ফাহাদ মাহির রুমে প্রবেশ করতে নিলেই ইরফান এসে দাঁড়ায় ফাহাদের সামনে,ফাহাদ কে আসস্ত করে বললো, তুই যা আমি দেখছি,
~” ভাইয়া দেখছি বলেছে মানে সে বোন কে রাজি করিয়েই ছাড়বে সে বিশ্বাস নিয়েই ফাহাদ চলে গেলো নিজের রুমে,
~” ইরফান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো এক পরিচিত তীক্ষ্ণ সুবাস,তার ব্যবহৃত পারফিউমের ঘ্রাণ।
সেই চেনা ঘ্রাণেই মাহি চোখ না তুলেই বুঝে নেয়—এই তো, ইরফান ভাই এসে গেছেন।
কিন্তু সে তাকায় না। তাকানোর প্রয়োজনও নেই। হয়তো অভিমান জমে আছে তার চোখের পাতায়।
ইরফান নরম, শান্ত কণ্ঠে বলে ওঠে
—”কিরে, রেডি হসনি এখনো?”
মাহি এবার ধীরভাবে মুখ তুলে তাকায়, ঠোঁটটা একটু ফুলিয়ে অভিমানী স্বরে উত্তর দেয়,
“যাবো না।”
ইরফানের চোখে এক ঝলক কঠোরতা খেলে যায়। গলা ভারি হয়ে আসে, গম্ভীর স্বরে বলে,
“পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আয়।”
মাহি এবার নিজের গলায় খানিকটা সাহস জড়ায়, যেন বহুদিন জমে থাকা প্রতিবাদটুকু খুঁজে পায় অবশেষে। সে দৃঢ়ভাবে বলে
“যাবো না বলেছি, যাবোই না! হুহ!”
” ইরফানের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
চোখে একধরনের অস্থিরতা, মনে একগুচ্ছ প্রশ্নের আনাগোনা।
“মাহি তো কখনো এমন করে না… আমার কথার অবাধ্য হয় না সে।
তাহলে কি সেদিন আমি একটু বেশি কঠিন হয়ে পড়েছিলাম?রোহানের কাকির কথায় উত্তেজিত হয়ে মাহিকে না বুঝেই অনেক কথা বলে ফেলেছিলাম…?”
এই ভাবনায় ভার হয়ে ওঠে তার বুক।
গলার স্বরটা নরম করে, কণ্ঠে এক ধরনের কাতরতা এনে সে বলল
“রাগ করেছিস…?”
মাহি মুখ ফিরিয়েই রাখে, ঠোঁটের কোণে মৃদু ফুলে থাকা অভিমান ঠিকরে পড়ে।
সে ছোট্ট করে জবাব দেয়
“উহুম।”
ইরফান নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেললো, তারপর কোমল গলায় বলে,
“তাহলে চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে…”
মাহি আবারও ঠোঁট নেড়ে একই সুরে বলে,
—”উহুম।”
এই দুটো শব্দ যেন শত কথার ভার বইছে।
ইরফান এবার সামনে এগিয়ে গিয়ে একটু নরম সুরে, যেন অনুতপ্ত শিশুর মতো বলে,
“আচ্ছা সরি।
সত্যি বলছি, সরি বলেছি তো… এবার চল?
আর রাগ করিস না, প্লিজ মাহি। খুব খারাপ লাগছে আমার।”
~” মাহি কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসে রইল।ইরফান আবারও একটু এগিয়ে এলো, গলার সুরটা আগের চেয়েও কোমল, যেন কথার ভেতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে
—”কিরে… বল, যাবি তো?”
এই প্রশ্নে যেন একটু চুইয়ে পড়ে অনুরোধের সুর, অনুতাপের পরশ।মাহি ধীরে মাথা ওপর নিচ করে সম্মতি জানালো।কোনো শব্দ নেই, কেবল মাথা নোয়ানোর ভঙ্গিতেই বলে দিল সে
~” হ্যাঁ, যাবো।
ইরফানের ঠোঁটে তখন এক চিলতে স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে।চোখেমুখে এক অপার্থিব প্রশান্তি।
সে ঘুরে দাঁড়ায়, দরজার দিকে হেঁটে যেতে যেতে পেছন ফিরে একবার তাকিয়ে বলে,
“তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আয়… আমি অপেক্ষা করছি।”
~” ইরফান রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই মাহির মুখে একচিলতে দুষ্টু হাসির আভা খেলে গেল।
চোখে-মুখে যেন বিজয়ের ঝিলিক, একরাশ পরিতৃপ্তি জমে উঠল দৃষ্টিতে।
ধীরে ধীরে নিজের মনে ফিসফিস করে বলতে লাগল,
“আমি জানতাম… ইরফান ভাই আসবেন।
আমি রাগ করে থাকলে, আপনি একদমই সহ্য করতে পারেন না।আপনি আসবেনই, আমার রাগ ভাঙাতে।তাই তো… একটু অভিনয় করলাম অভিমানের।”
মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে ফেলে সে,
“হি হি হি…”
তারপর আবার নিজেই নিজের সঙ্গে কথোপকথনে মগ্ন হয়,
“সেদিন আন্টি যখন তার ছেলের কথা বলছিলেন…আমি ঠিক তখনই আপনার চোখে সেই চেনা ঝলকটা দেখেছিরাগের আড়ালে থাকা ঈর্ষা।আপনি চুপ ছিলেন, কিন্তু আপনার দৃষ্টি বলছিল,আপনি চান না আমি অন্য কোথাও যাই…আমার বিয়ে হোক অন্য কারো সঙ্গে,
তা আপনি কখনোই মেনে নিতে পারবেন না।
তাই তো সবসময় আমাকে আড়ালে রাখতে চান…কিন্তু মুখে কিছু বলেন না।”
একটুখানি বিরতি নেয় মাহি।
তার চোখে তখন একরাশ মায়া আর খুনসুটির উষ্ণতা।
“তাই তো আমি এই ছোট্ট নাটকটা করলাম।
একটুখানি অভিমান, একটুখানি চুপচাপ থাকা,
শুধু চাইছিলাম, আপনি এসে আমাকে আদর করে বলুন,’চল, আর রাগ করিস না’।আর ঠিক সেটাই তো হলো…!”
মাহির মুখে তখন শিশুসুলভ বিজয়ের হাসি।
আর সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকে এক গভীর অনুভব,
~” মাহি এক দুষ্টু বিজয়ের হাসি ঠোঁটে রেখে হঠাৎই চটপট উঠে দাঁড়ায়।যেন তার ছোট্ট এক পরিকল্পনা সার্থক হওয়ার আনন্দে প্রাণটা হালকা হয়ে গেছে।
~” আলমারির দরজাটা খুলে, আগে থেকেই বেছে রাখা ড্রেসটা বের করে নেয়,সকালবেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক ভাবনা-চিন্তা করে এইটাকেই ঠিক রেখে বলেছিল,
~” আজকে এটাই পড়ে যাবো।
ড্রেসটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
চোখেমুখে উচ্ছ্বাসের মৃদু আলো, আর নিজের অজান্তেই মুখে লেগে থাকে এক চিলতে লাজুক হাসি।
ধীরে ধীরে সাজতে শুরু করে মাহি।
চুলটা আলতো করে গুছিয়ে নেয়, তারপর একজোড়া ছোট ঝুমকা তুলে কানে পরে,ঝুমকির নরম দোলায় যেন ওর মুখটাই ঝলমল করে ওঠে।
সাজগোজ শেষে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিয়ে, ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“হুঁ… এবার আমি একদম রেডি।
~” রাইসা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা সাজে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।
স্নিগ্ধ আলোয় তার মুখে ছড়িয়ে পড়ে একরকম শান্ত সৌন্দর্য,যেন কোনো শুদ্ধ কাব্যের নিঃশব্দ উচ্চারণ।
ও পাশেই ফাহাদ দাঁড়িয়ে, হাতঘড়ির বেল্ট বন্ধ করছে ধীর গতিতে।চোখের কোণ দিয়ে হঠাৎই এক নজর তাকায় রাইসার দিকে।
সেই এক দৃষ্টিতে যেন সময় একটু থমকে দাঁড়ায়,
ফাহাদের চোখে ধরা পড়ে, রাইসার ওড়নাটার এক পাশ মেঝেতে পড়ে আছে।নীরবে সরে গেছে কাঁধ থেকে,
একটুখানি থেমে যায় ফাহাদ।একটি ক্ষণিক দ্বিধা এসে জড়ায় তার মনে।
স্বামী হিসেবে তার এখন এগিয়ে গিয়ে তুলে গায়ে জড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিলো ওড়নার আচলটা,চাইলেই একবার ছুঁয়ে দিতে পারত নিজের স্ত্রীকে,
তবু সে ছোঁয় না।বিয়ের এতদিন পরেও ফাহাদ তার স্ত্রীকে একবারও ছুঁয়ে দেখেনি।
রাইসা কখনো বাধা দেয়নি, মুখে কিছু বলেনি,
তবু ফাহাদ নিজেকে থামিয়ে রাখে,
কারণ সে জানে, ভালোবাসার ছোঁয়া তখনই অর্থপূর্ণ,যখন তা আসে পূর্ণ চাওয়ার পর।
সে চায়, যেদিন রাইসা নিজে থেকে সব ভুলে,
পুরনো যন্ত্রণাগুলো ঝেড়ে ফেলে ফাহাদের দিকে একচেটিয়া হাত বাড়াবে,সেদিন সে এই রাইসাকে, তার সমস্ত হাহাকার আর সৌন্দর্যসহ
নিজের জীবনের অনন্ত আশ্রয়ে জড়িয়ে নেবে।
~” ফাহাদ এক মুহূর্ত নিরব দাঁড়িয়ে থেকে কোমল স্বরে ডেকে উঠলো,
“রাই…?”
রাইসা ধীরে ঘুরে তাকায়।
চোখে বিনয়ের দীপ্তি, মুখে এক চিলতে নম্রতা। নরম গলায় জবাব দেয়,
“হ্যাঁ… বলুন?”
ফাহাদ কিছু বলে না।
শুধু চোখের ইশারায় তাকিয়ে দেখায় মেঝেতে পড়ে থাকা রাইসার ওড়নার আচলটা।
রাইসার দৃষ্টি সেখানে ছুটে যায়।
মুহূর্তেই একটু হকচকিয়ে গিয়ে,
দ্রুত আচলটা তুলে নেয়,আবার নিঃশব্দে গুছিয়ে নেয় নিজেকে।
~ ” শহরের প্রাণকেন্দ্রে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেই বিশাল শপিং মলটি,চকচকে কাঁচের দেয়ালে প্রতিফলিত হচ্ছে দুপুরের রোদ,
আর নীচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর ভেতরে জমে উঠছে একরাশ রঙিন পরিকল্পনার ছায়া।
সামনের গেইটের কাছে ধীরে ধীরে থামে গাঢ় কালো রঙের গাড়িটি,গাড়ির দরজা খুলে একে একে নেমে আসে তিনজন,ইরফান, ফাহাদ ও নিরব।ইরফানের চোখে তীক্ষ্ণ মনোযোগ,ফাহাদের মুখে একরাশ নিরব সৌজন্য,আর নিরবের আচরণে সহজাত প্রাণচাঞ্চল্য।
তারা দাঁড়িয়ে যায় গাড়ির একপাশে,
অন্যদিকে গাড়ির উল্টো পাশে নামছে চার জন,
অহনা, মাহি, রাইসা ও ফাইজা।
~” সাব্বির কে বলা হয়েছিল রিয়া কে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু সকাল থেকে রিয়ার শরীর টা একটু অসুস্থ হালকা জ্বর তাই রিয়া আসতে পারলো না, রিয়ার শরীরটা ভালো না থাকায়,
সাব্বির আর মন থেকে পারলো না তাকে একা বাসায় রেখে আসতে।
বউয়ের ক্লান্ত মুখটা বারবার চোখে ভেসে উঠছিল,এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন রিয়ার পাশে থাকা,
“তাই সাব্বির আর এল না।বন্ধুদের মাঝে অনুপস্থিত রইলো সে,
~’ এখন অপেক্ষা শুধু রোহানের, রোহান এলেই মূল কেনাকাটা শুরু হবে,
” হঠাৎই সেই মুহূর্তের শান্ত পরিবেশ টা খানিকটা কেঁপে উঠল।একটা বাইক গর্জন তুলে এসে থামে ঠিক তাদের সামনে।
ধুলোমাখা বাতাসে চুলের একপাশ উড়ে যায় রাইসার,আর সবাই একসাথে তাকায় বাইকের দিকে,
বাইক থেকে নামল রোহান,চেনা ভঙ্গিতে, চোখে চেনা দৃঢ়তা,মুখে সেই হালকা আত্মবিশ্বাসী হাসি।
তবে ওদের বিস্ময়ের জায়গা ছিল রোহান নয়।
ঠিক তার পেছনে, আরেকটি বাইক এসে থামে
চকচকে লাল কালিতে মোড়ানো বাইকটি থেকে নামতে গিয়ে
সে ব্যক্তি প্রথমে কিছুটা রহস্যের মতোই রয়ে যায় সবার কাছে হেলমেট খুলতেই,
চারপাশে যেন মুহূর্তের জন্য একটা স্তব্ধতা নেমে আসে।
রবিন।রোহানের চাচাতো ভাই।
রাইসা ও ফাইজা দু’জনেই একটু চমকে ওঠে।
রবিন যে আজ আসবে, সে খবর তো ছিল না কারো কাছেই।তার উপস্থিতি যেন একেবারে আচমকা নেমে আসা সন্ধ্যার মতো,
রবিন চোখ বুলিয়ে নেয় সবাইকে,
মুখে হাসি খেললেও দৃষ্টিতে ছিল একধরনের নিরাসক্ত দৃঢ়তা।
প্রথম দেখায় যার ভেতরটা বোঝা যায় না,ঠিক তেমন একজন মানুষ সে।
মাহি তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে,
চোখে একটুখানি দ্বিধা নিয়ে রবিনের দিকে তাকায়,ওর সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি, পরিচয়ও না,তবুও একজন অচেনা পুরুষের উপস্থিতি ঠিকই টের পেয়ে যায় ওর ভেতরের সজাগ মন।চুপচাপ এক পা পিছিয়ে দাঁড়ায় সে,আড়াল নিয়ে নেয় নিজের অবস্থান,
~” রবিন ধীরে পা ফেলে এসে দাঁড়ায় সবার সামনে।
চোখে স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস, মুখে সংযত ভদ্রতা,
বাইকের চাবিটা পকেটে রেখে সে একে একে এগিয়ে আসে
ইরফান, ফাহাদ, আর নিরবের দিকে।
সবার সঙ্গে সে সৌজন্যমূলকভাবে করমর্দন করে,
তবে তার চোখে ছিল সম্মান আর কণ্ঠে অনুগ্রহের ভঙ্গি,সামনে থাকা এই তিনজন হয়ত বয়সে বড়,তবে শুধু বয়স নয়, অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিত্বের মায়াজালেও তারা রবিনের চেয়ে একধাপ ওপরে।
“ভাই, সালাম। কেমন আছেন?”
রবিনের কণ্ঠে ছিল একধরনের বিনয়,
ইরফান একটু হাসে, মাথা নেড়ে উত্তর দেয়,
ফাহাদ চোখের কোণে হালকা প্রশ্রয় মেশানো দৃষ্টি নিয়ে তাকায়,আর নিরব চেনা বন্ধুসুলভ ভঙ্গিতে বলে,
“ভালো আছি, তুমি কেমন? রোহানের সঙ্গেই এসেছো বুঝি?”
রবিন মাথা হেঁট করে সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে হাসে।
চব্বিশ-পঁচিশের ছেলে, তবুও নিজের জায়গা বোঝার মতো পরিপক্কতা আছে তার।
~” ইরফান একটু নীরবে চারপাশে তাকায়।
অচেনা আগন্তুকের উপস্থিতিতে মাহির অস্বস্তি তার চোখ এড়ায় না।মাহি একটু আড়ালে সরে দাঁড়িয়েছে,সেই মুহূর্তে,
একটি অভ্যস্ত ভরসা হয়ে ইরফান এক পা এগিয়ে আসে,চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে মাহির ঠিক সামনে,
~” সাবলীল অথচ সজাগ কণ্ঠে বলে ওঠে,
“ফাহাদ, তুই আর রোহান রবিনকে নিয়ে আগে ভেতরে যা।আমি বাকিদের নিয়ে আসছি।”
~’ ফাহাদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়,
রোহান আর রবিনকে ইশারা করে এগিয়ে যায় ভেতরের দিকে।
~’ কেনাকাটার হুল্লোড় চলছে পুরোদমে।
দোকানের আলো-ঝলমলে পরিবেশে রঙিন শাড়ি, লেহেঙ্গা আর জড়ানো কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দে একধরনের উৎসবের ছায়া
সবাই ব্যস্ত নিজের নিজের মতো,
তবুও এই ভিড়ের মাঝে একজন ঠিক অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
বারবার…
রোহান।প্রথমে সে কেবল দেখছিল,
তারপর সে দেখতে থাকলো,
আর এখন…
সে যেন পুরোপুরি হারিয়ে গেছে অহনার রূপে।
প্রতি বার অহনা যখন নতুন একটা লেহেঙ্গা পরে ট্রায়াল রুম থেকে বের হয়ে আসে,
তখন রোহানের চোখে জমে ওঠে একরাশ বিস্ময়।
হলুদ-লাল জরির কাজ করা লেহেঙ্গায় অহনার চোখে একটু খুনসুটি,গাঢ় নীল পাথরের কাজেরটায় কাঁধে চুল সরাতে সরাতে চোখ ঘোরানো ভঙ্গি,প্রতিটি মুহূর্তে রোহান নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।
প্রথম বার রোহান শুধুই তাকিয়ে ছিল,
দ্বিতীয়বার একটু টাস্কি খেল,
তৃতীয়বার সে যেন চুপচাপ ফিদা হয়ে গেল,
মনেই হয়নি সে কেনাকাটার মাঝে এসেছে,
তার চোখে তখন শুধু একটিই দৃশ্য,অহনা,
আর তার প্রতিটি ভঙ্গিমায় ধরা পড়ে একরকম অনবদ্য মাধুর্য।
~” অহনার কেনাকাটা শেষ হতেই রোহানের কেনাকাটা করতে সকলে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো, চলে গেলো শেরওয়ানির শরুমে..!
~” সবার চোখের আড়ালে, ঠিক যেন নিঃশব্দ কোনো ঝড় এসে দাঁড়ায়,এক মুহূর্তেই হঠাৎ করে মাহির সামনে উপস্থিত হয় রবিন।
মাহি থমকে দাঁড়ায়, যেন মুহূর্তের জন্য সময়টাও স্থির হয়ে গেছে।রবিনের চোখে এক ধরনের নরম হাসি,আলতো, একটু রহস্যময়।
সে চোখের গভীরতা দিয়ে তাকিয়ে বললো,
“তুমি… মাহি? আমি ঠিক বলেছি, তাই তো?”
একটি হালকা বাতাস যেন মাহির চুলে স্পর্শ করে যায়, অথচ তার ভেতরে ঝড়।
~’ এতোক্ষণে সবার কথার ভেতরে মাহি বুঝে ফেলেছে সে রোহানের চাচাতো ভাই, আর এটাও বুঝে নিয়েছে সেদিন ওই আন্টি যার কথা বলেছিলো উনিই সে, এখন তার সাথে কথা বলা টা উচিত না অথচ আত্মীয় মানুষ কথার জ্ববাব না দিয়ে একদম উপেক্ষা করে গেলোও শোভনীয় লাগে না, মাহি অসস্থি লুকিয়ে বললো
~” জি আমি মাহি.!
~” এতোক্ষণ ধরে চারপাশের আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে মাহি বুঝে নিয়েছে,এই ছেলেটাই রোহানের চাচাতো ভাই। আর যাঁর কথা সেদিন সেই আন্টি বলেছিলেন, তিনিই তো এই মানুষটি।মাথার ভেতর চিন্তার ঢেউ উঠছে,এ মুহূর্তে তার সঙ্গে কথা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না।
তবুও আত্মীয় মানুষ, একেবারে উপেক্ষা করে যাওয়া কি আর শোভনীয় হয়?
মাহি সামান্য অস্বস্তি লুকিয়ে, চোখ নামিয়ে নিয়ে নরম গলায় বলল,
—“জি, আমি মাহি।”
~” রবিন হালকা করে হাসল।
তার চোখে যেন একরকম প্রশান্ত আত্মবিশ্বাস, আর কণ্ঠে মিশে রইল এক গভীর সৌজন্য।
সে এক দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে ধীরে বলে উঠল,
“মা বলেছিলেন, তুমি নাকি খুব সুন্দর।
কিন্তু এখন তোমায় দেখে মনে হচ্ছে, ‘সুন্দর’ শব্দটা বড়ই সামান্য।
তোমাকে বরং অপূর্ব সুন্দরী… রূপবতী বলা যায়
“তুমি ঠিক তেমনই।”
~”আরো এক স্তর অস্বস্তির চাদরে যেন মাহিকে ঘিরে ধরে মুহূর্তটা।তার চোখে-মুখে হালকা বিব্রত ভাব,।
রবিন ততক্ষণে কথার ভেতরে খানিকটা চতুর ভঙ্গি নিয়ে এগোয়।
একটা নরম হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে সে বলল,
“আমি রবিন… রোহান ভাইয়ার চাচাতো ভাই।
সেদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি বলেই হয়তো চিনতে পারছো না।
তবে আজ হঠাৎ করে তোমার সাথে দেখা হবে, তা ভাবিনি ।
-” মায়ের মুখে তোমার কথা শুনেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল,
যেদিন তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হবে, সেদিন ফুল নিয়ে আসব…
একটা-দুটো নয়, একেবারে আস্ত এক গুচ্ছ।”
একটু থেমে, চোখে খানিকটা রসিক আলো নিয়ে সে আবার বলে,
“তবে এখন তোমাকে সামনে থেকে দেখে মনে হচ্ছে,তোমার হাতে আর কী ফুল দিবো!
তুমি নিজেই তো একটা ফুল…একটা একেবারে খাঁটি গোলাপের মতো, অপার্থিব সুন্দর।”
~”কোথায় লুকাবে, কীভাবে এ মুহূর্তটা থেকে নিজেকে সরাবে,মাহির ভেতরটা দিশেহারা হয়ে পড়ে।রবিনের অতিরিক্ত চতুর বাকচাতুরী যেন ক্রমশ এক অস্বস্তির ঘনজালে বাঁধছিল তাকে।
ঠিক সেই সময়, হঠাৎ করেই বাতাস কেঁপে উঠে বজ্রনিনাদের মতো ভেসে এল এক কণ্ঠস্বর,
কঠিন, গভীর আর নির্দ্বিধায় স্পষ্ট।
—“ফুল সুন্দর, তবে যে গোলাপ যতটা বেশি সুন্দর,সেই গোলাপের ডালে থাকা কাটার ধার কিন্তু ততটাই বেশি।”
গলার এই দৃঢ়তাটুকু মুহূর্তেই পরিবেশকে নিঃশব্দ করে তোলে।রবিন থমকে যায়,চোখে ধরা পড়ে এক মুহূর্তের ভরকানো বিস্ময়।সে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে, যিনি তখন ধীরে এগিয়ে আসছেন।
ইরফান চোখের ইশারায় মাহিকে সরে যেতে বলেন।
মাহি কিছু না বলে, সামান্য মাথা নিচু করে সরে চলে গেলো ।
আর ইরফান,চোখে জ্বলা আগুন নিয়ে রবিনের একদম সামনে এসে দাঁড়ায়।
–“রবিন তখনো ঠোঁটে একরকম অনাবিল, আত্মবিশ্বাসী হাসি রেখে দাঁড়িয়ে থাকে।
চোখে-মুখে যেন একটু কৌতুক, একটু কৌতূহল মেশানো ভাব।
তার কণ্ঠে নরম অথচ চতুর ভঙ্গি, আপনার বোন..?
ইরফান চোখ নামিয়ে এক ঝলক তাকায় রবিনের দিকে,
গলার স্বর চাপা কিন্তু তীক্ষ্ণ
—” কাকার মেয়ে,
রবিন তখন হালকা স্বরে একটু নরম হয়ে বলে,
—“ও চাচাতো বোন! Honestly, she’s stunning! চোখ ধাদানো সৌন্দর্য্য,
ইরফানের চোখ তখন দাবানলের মতো জ্বলছে।
তার শরীরী ভঙ্গি কঠিন হয়ে ওঠে, কণ্ঠ গর্জে ওঠে উচ্চস্বরে,
—“She is MY property!”Even one wrong look at him – I won’t tolerate it. Not even a little bit.” [ “ও আমার সম্পত্তি!” ওর দিকে একবার ভুল করে তাকালেও – আমি তা সহ্য করব না। একটুও না।”]
একটু থেমে, বুকের ভেতর জমে থাকা আগুন ঠেলে আবার বলে ওঠে,
—” I won’t tolerate anyone’s eyes on her.
I don’t care who it is—relative or stranger……!
Respect has a price, Robin. And when it comes to her, I don’t negotiate.”৷ [ আমি কারোর ওর দিকে নজর সহ্য করব না।
আমি কে সেটা পরোয়া করি না—আত্মীয় নাকি অপরিচিত……!
সম্মানের একটা মূল্য আছে, রবিন। আর যখন ওর কথা আসে, আমি কোনও দর কষাকষি করি না।”]
তার কণ্ঠস্বরের প্রতিটি শব্দ যেন চারপাশের বাতাসকে ছিন্ন করে ছড়িয়ে পড়ে।রবিনের ঠোঁটের হাসিটা একেবারে মুছে যায়।
~” ইরফান, রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো রবিনের সামনে থেকে, যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছিটিয়ে গেল চারপাশে। রবিন থতমত খেয়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। খানিকটা হকচকিয়ে মাথা চুলকে সে রোহানের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
— ভাই, পাগল নাকি উনি?
রোহান চমকে উঠে তাকাল তার দিকে। একটু গম্ভীর কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করল,
— কার কথা বলছিস?
রবিন মুখটা টান টান করে, ভ্রু জোড়া করে বলল,
— তোমার সমন্ধী… আবরার ইরফান চৌধুরীর কথা বলছি।
রোহান যেন মুহূর্তেই কিছু আঁচ করতে পারল। চোখে অস্বস্তির ছায়া নেমে এলো। জিজ্ঞেস করল,
— কেন, ওর সাথে তোর আবার কী হয়েছে?
রবিন হালকা বিরক্ত গলায় বলল,
” আরে, তোমার হবু শালী মাহি ওর নাম তো অনেক শুনেছিলাম… মায়ের মুখে এমন প্রশংসা শুনে কৌতূহল তো হবেই। আজ প্রথমবার সামনে দেখলাম, স্বপ্নের মতো সুন্দর! একটু হেসে কথা বলে ভাব জমাতে চাইছিলাম, আর উনি তা চোখে পড়তেই কি না রেগেমেগে আগুন!
একটু থেমে রবিন নিচু গলায় বলল,
“ভাই, সত্যি বলছি… এমন চাহনি, যেন আমি ওর চোখের সামনে কোন অপরাধ করে ফেলেছি!
রোহান একটা শুকনো ঢোক গিলে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” বুঝতে পারছিস না, তুই ভুল দরজায় কড়া নাড়তে গেছিস…
রবিন থমকে গেল।
রোহান তখন চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে যেন আপনমনে বলে উঠল,
“— মাহি শুধু আমার হবু শালী না, রবিন… ও ইরফানের হৃদয়ের রাজ্যেও বহু আগেই সিংহাসনে বসে গেছে। ওর প্রতি কারো দৃষ্টি, কারো ভাবনাও,ইরফান সহ্য করবে না।
একটু থেমে রোহান গভীর দৃষ্টিতে রবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— তাই বলছি, ভাই… ভুলেও আর কখনো সেই দিকে চোখ তুলে তাকাস না।
তারপর যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যোগ করল,
~” নাহলে ইরফান শুধু তোকে না, আমাকেও ভুলে যাবে! আমি যে ওর ফুপাতো বোনের হবু জামাই, সে হিসেবেও আর ছাড় দেবে না!
~” রবিন ব্যাপার টা বুঝতে পেরে, চোখের পাতার কোণায় জমে থাকা সামান্য দুঃখ আর ব্যর্থতা সে এক ঝটকায় ঝেড়ে ফেলল, আর মনে মনে বলল,
“দূরে থাকাই ভালো… রাজার রাণিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে যে শাস্তি শুধু দৃষ্টি দিয়েই লেখা হয়ে যায়, সেটা তো আজ হাড়ে হাড়ে বুঝে গেলাম।”
~” সেই মুহূর্তে মাহির ভাবনা যেন বাতাসে মিশে গেল,এবং রবিন, তার চিরচেনা হাসি ফেরানোর চেষ্টা করল,ঠিক যেন কিছুই হয়নি।
~” বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর, ইরফান আবার ফিরে এল,চোখেমুখে এখনও রাগের ছায়া, তবু কণ্ঠে এক স্তব্ধতার ভার। সে ধীর পায়ে রোহানের কাছে এসে দাঁড়াল।
একটা ভাড়ী, ক্লান্ত নিঃশ্বাস ফেলে নিচু গলায় কিন্তু তীক্ষ্ণ সুরে বলল,
— তোর চাচাতো ভাইটাকে সাবধান করে দিস, রোহান… যেন ভুলেও মাহির দিকে আর নজর না পড়ে ওর।
একটা ক্ষণিকের নীরবতা। তারপর কণ্ঠটা আরও একটু গাঢ় হয়ে উঠল,
— আজ শুধু ওয়ার্নিং দিয়ে গেলাম। কিন্তু পরেরবার… যদি আবার কিছু দেখি বা শুনি, তাহলে ঘটনা ঠিক এমন সহজে শেষ হবে না।
ইরফান সামান্য এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
— তোর বিয়েতে তোর চাচাতো ভাই যদি হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকে, তাহলে দৃশ্যটা খুব একটা ভালো দেখাবে না, বল?
~”রোহান এক গভীর নিশ্বাস ফেলে খানিকটা চুপ করে রইল।তারপর গলা নামিয়ে, গম্ভীর ও সংবেদনশীল কণ্ঠে বলল,
— আমি জানি ভাই… মাহির ব্যাপারে তুই ঠিক কতটা সিরিয়াস।
তা আমি শুধু বুঝি না,রীতিমতো রেস্পেক্ট করি।
চোখে একরাশ সহানুভূতি আর দায়িত্বের ছাপ ফুটে উঠল রোহানের।
সে ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলল,
— আমি রবিনকে বুঝিয়ে দিয়েছি।আর কখনো এমন ভুল করবে না সে, কথা দিচ্ছি তোকে।
~” ওদিকে দোকানের এক কোণে হ্যাঙ্গারে ঝোলানো এক রঙিন গাউন যেন চোখে লেগে গেল ফাইজার।দৃষ্টি জুড়ে বিস্ময় আর আগ্রহ নিয়ে সে ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত এগিয়ে গেল গাউনের দিকে।কিন্তু হাঁটার তালে তালে তার চোখ ছিল শুধু সেই গাউনে, আর সেই ভুলেই টাইসের উপর পা হড়কে গেল তার।
হোঁচট খেতে খেতে সে গিয়ে পড়ল প্রায় নিরবের গায়ের কাছাকাছি।শেষ মুহূর্তে নিরব চটপট হাত বাড়িয়ে ফাইজার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলল।
ফাইজা একটু হকচকিয়ে গেল, কিন্তু নিজের ভারসাম্য ফিরে পেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই নিরব হাত ছেড়ে দিল।
চোখে ছিল এক ধরণের আতঙ্ক , আর মনে বিষ্ময়কর ভাব,
চিন্তিত কণ্ঠে নিরব বলল,
— একটু আস্তে ছুটতে পারো না পিচ্চি মেয়ে?
শুকনো গা-টা নিয়ে এমন ভাবে আছাড় খাচ্ছিলে, ভাবলাম এই বুঝি মাটিতে পড়েই গেলে !পড়লে তো পিচ্চি পিচ্চি হাড়গুলো গুড়ো গুড়ো হয়ে যেত!
~”ফাইজা চোখ মেলে তাকাল নিরবের দিকে
সত্যিই, নিরবের চোখে চোখ রাখতে হলে তাকে মাথা উঁচিয়ে তাকাতে হয়।নিরব এমনই লম্বা, এমনই গম্ভীর ঋজু উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যেন এক আকাশের ডালপালা,আর তার সামনে ফাইজা যেন এক ক্ষণিকের ফুলকি।
নিরবের ঘাড়ের অনেক নিচে পড়ে ফাইজা,
তার চোখের উচ্চতায় পৌঁছতে গিয়ে নিজেকে যেন সত্যিই পিচ্চি মনে হয় তার।এই ছোটখাট গড়নে, চঞ্চল মুখে, আর ঝটপট হেঁটে বেড়ানো ভঙ্গিতে,সে যেন নিরবের ছায়ার নিচে দাঁড়ানো এক বুনো ফুল, তবুও পিচ্চি ডাক শুনে ফাইজা বিরক্ত চোখে তাকালো,
ফাইজা ঠোঁট ফুলিয়ে রাগ দেখানোর ভঙ্গিতে বলল,
” আমায় ‘পিচ্চি’ বলাটা আপনার অভ্যাস নাকি শখ?
নিরব কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে বলল,
” অভ্যাসও না, শখও না… এ তো বাস্তব!
চলবে….?