#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্ব : ১০
~শুক্রবার চৌধুরী বাড়ীতে বরাবরই ভালো রান্না হয় “আজ তো আবার বাসায় নতুন অতিথি এসেছে USA থেকে ” তার জন্য পুরো বাড়িতে হইচই বেঁধে গেছে কি রেখে কি রাঁধবে তা নিয়ে “তিন গিন্নী মিলে রান্নাঘর সামলাতে বেস্ত ” জুম্মার নামাজ শেষ করে তিন ভাই বাসায় ফিরলো ফরহাদ চৌধুরী, কাশেম চৌধুরী ও মণির চৌধুরী সাথে ইরফান ও আসলো বাসায়।
“সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় ইরফান মাহির রুম এর দিকে একবার চোখ বোলালো ” দেখতে পেলো মাহি নিজের পড়ার টেবিলে মাথা রেখে, উদাসীন ভঙ্গিতে কিছু ভাবছে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে। এরপর ইরফান চলে গেলো নিজের রুমে “নিজের ফোন টা বের করে কারো একটা ছবি খুব মনোযোগ সহকারে দেখলো ” এর পর বেলকুনিতে গিয়ে দুপুরে বাইরের নিরর্জন পরিবেশ দেখলো ”
~”দুটো পাখি গাছের ডালে বসে আছে “একটি পাখি সরে গিয়ে কিছু টা দূরে বসলে অপর পাখি টি উরে গিয়ে সেই পাখি টির কাছে গিয়ে গা ঘেসে বসলো ” ইরফান ছোট করে এক চিলতে হাসিঁ দিলো ”
“তোমার দহনে আমার হৃদয় পুরে ছাই
সপ্নে তোমায় কাছে পাই বাস্তবে তো নাই”
“আমার স্বপ্নচারনী ”
“ইরফান এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বড় করে শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো ” ভ্রু কিঞ্চিৎ বাকা করে বললো এই আমার দেহে প্রাণ থাকতে “তোকে আমি অন্য কারো হতে দিবো না ”
I repeat৷ “I won’t let you be someone else’s.
” সকাল থেকে রাইসা কে কল করেও কোনো রেসপন্স না পাওয়ায় মাহির কিচ্ছু ভালো লাগছে না “মাহি সব কথা রাইসা কে আগে বলে ” লিসা আপুর কথা এখনো রাইসা কে জানানো হয়নি “মূলত লিসা আপুর কথা বলার জন্যই মাহি রাইসা কে কল করেছিল ” কিন্তু বিকেল হলো প্রায় এখনো কল ব্যাক করেনি রাইসা।দুপুরের আজকে অনেক দিন পড়ে বাসার সকলে এক সাথে লাঞ্চ করেছে “খাবার টেবিলে ছিল না শুধু ফাহাদ।
“~আসরের নামাজ পড়ে মাহি নিচে নেমে সোফায় বসেছে ” লিসা নিচেই ছিলো “তখন ফাইজা ও নিচে নেমে এলো ” বাবা কাকা রা তিনজন অফিসে গেছে। মনির চৌধুরী চাকরি থেকে বাসায় ফিরলে অবসর সময় ভাই দের সাথে অফিসেই কাটায় বেশি সময়।
“মাহির লিসা আপু কে খুব ভালো লেগেছে ”
“লিসা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো ” ফাহাদ আসেনি না এখনো ”
“ফাইজা ও মাহি অবাক চোখে তাকালো!
” আপু তুমি ফাহাদ ভাইয়া কেও চেনো…..? ফাইজার নির্লুপ্ত জবাবে “এক মুচঁকি হাসিঁ দিয়ে লিসা জবাব দিলো ” হুমমম”
“তোমাদের সবাই কেই চিনি আমি ” আর ফাহাদ এর সাথে তো আমার এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল “ফাহাদ এই তো গাড়ী নিয়ে গিয়ে, আমায় প্রথম রিসিভ করে ” তার পর ইরফান গেলে ফাহাদ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় “ইরফান আর আমি বাসায় চলে আসি।
” এবার মাহির মনে পড়ে ইরফান ভাইয়া তো বাইক নিয়ে গিয়েছিল মাহি দেখেছিল “গাড়ী তে ফিরতে দেখে মাহি অবাক হয়েছিল ” এটাই তাহলে তার কারণ।
“কিছুক্ষণের মধ্যে ফাহাদ বাসায় ফিরলো ” ইরফান বাইরে বের হবে এমন সময় ফাহাদ কে দেখতে পেয়ে ”
“ধমকের স্বরে ফাহাদ কে বললো কোথায় ছিলি সারাদিন ” বাইরে ছিলি ভালো কথা কল করেছি কতোবার কল ধরিস নি কেনো…?কি এমন কাজ কে ১ মিনিট ফোনে কথা বলা যায় না। বাবা কাকা রা কতো বার জিজ্ঞেস করেছে তোর কথা “ফোন ধরে কথা বললে নাহয় কিছু একটা মেনেজ করা যায়।
” পড়ে বলছি ভাইয়া “আগে আমাকে আবার বেরোতে হবে এমারজেন্সি কিছু টাকা লাগবে..!
” ইরফান দ্রুত পায়ে উপরে উঠে একটা সাইন করা চেক এনে ফাহাদ কে দিয়ে বললো “যা লাগবে লিখে নিস,
” মাহি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো “কেনো লাগবে কি করবে কিচ্ছু না জিজ্ঞেস করেই একটা সাইন করা চেক ফাহাদ ভাইয়া কে দিয়ে দিলো ইরফান ভাইয়া…!
” ফাহাদ আবার ও বেড়িয়ে যাওয়ার আগে মাহি কে বললো ”
“তোর বান্ধবী রাইসা হসপিটালে ” ফাইজা কে নিয়ে একবার সিটি হসপিটালে আয় আয় “আমি যাই দেরি হয়ে যাচ্ছে “!
” মাহির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো “আখিঁজোরা টলমল করছে তার ” অধর জোরা তিরতির করে কাপছে ” রাইসা মাহির বেষ্ট ফ্রেন্ড এর থেকেও বেশি ”
“কি হয়েছে রাইসার…?
” অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবনা রা মাহির মাথায় উঁকি দিচ্ছে “চোখঁ বন্ধকরে ফেললো মাহি “লম্বা এক শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে ” চোখঁ মেললো মাহি “ততক্ষণে ফাহাদ চলে গেছে।
” হসপিটালে কেনো… কি হয়েছে ওর “আমি রাইসার কাছে যাবো এক্ষুনি যাবো।
” কাপাঁ কলায় করুণ স্বরে “ইরফান ঘাবড়ে গেলো ”
“ইরফান দুআঙুল দিয়ে নিজের মাথা টা চেপে ধরলো ” মাহির এই বেসামাল অবস্থা তে ইরফান দিসেহারা হয়ে গেলো “এই অবস্থায় মাহি কে ফাইজার সাথে একা ছাড়া টা ঠিক হবে না।
” ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো “ফাইজা তোর তো সামনে SSC এক্সাম একটু পড়ে টিচার আসবে তুই থাক।
” তাহলে মাহি আপু একা কিভাবে যাবে হসপিটাল “?
“আমি নিয়ে যাচ্ছি ”
“আমি যাবো…? লিসা উদগ্রীব হয়ে বললো।
না ” তুই জার্নি করে এসেছিস “একটু রেস্ট নে প্রয়োজন হলে পড়ে এসে নিয়ে যাবো। বলেই ইরফান মাহি কে নিয়ে বয়াইকে করে চলে গেলো।
“রাইসার জ্ঞান ফিরেছে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ” যতক্ষণ জ্ঞান ছিলো না ফাহাদ এর চেহারার দিকে তাকানো যায় নি “চোখদুটো তে আগুন লেগেছে জ্বালা করছে খুব নাক মুখের বেহাল অবস্থা ” মাহি তো কেদেই যাচ্ছে
“মাহির ফোনে রাইসার আপুর নাম্বার ছিলো ” ইরফান মাহি কে দিয়ে রাইসার বাসায় কল করে জানিয়েছে রাইসা মাহির সাথে আছে টেনশন যাতে তারা টেনশন না করে ”
“ফাহাদ নিজেকে নিজে দোষারোপ করছে বারবার ”
“এতোক্ষণে প্রায় বহুবার বলে ফেলেছে ফাহাদ” আমাকে বাচাঁতে গিয়েই রাইসার এই অবস্থা..!
রাইসার নানু অসুস্থ থাকায় প্রায়ই রাইসা ও তার আম্মু নানু বাসায় যেতে হয় “যেদিন রাইসার নানু বেশি অসুস্থ থাকে তখন ওর আম্মু থেকে যায় রাইসার আপু বাসায় একা, তাই রাইসা কে রিক্সায় করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় ” আজকে ও রাইসা রিক্সা করে বাসায় ফেরার পথে দেখতে পায় ফাহাদ রাইসা দের বাসার কাছে টং এর দোকানে চা খাচ্ছে সাথে ফাহাদ এর কিছু ছোট ভাই ব্রাদার রা ফাহাদ এর মবাইলে এক কল আসাতে ফাহাদ দোকান এর বাইরে বের হয়ে কথা বলছিলো রাইসা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে বাড়ীর দিকে হাটা দিতেই দেখতে পেলো একটা গাড়ী ফাহাদ এর পেছনে “ফাহাদ কথার ধ্যানে রাইসা কেও খেয়াল করতে পারলো না ” পেছনের গাড়ী টা মনে হয় ব্রেক ফেইল করেছে এদিক ওদিক আঁকা বাকা ছুটছে ”
“রাইসা দূর থেকে ডাকছে ”
“এইজে শুনছেন “ফাহাদ ভাই ” সরুন রাস্তা থেকে! রাইসার গলা শুকিয়ে এলো গলায় জ্বোর নেই আর। বুকের ভেতর ছ্যাত করে একটা বারি খেলো। গাড়ী টা তো ফাহাদ ভাই এর দিকেই যাচ্ছে।
“আচমকা এক ধাক্কা খেয়ে ফাহাদ তাল সামলাতে পারলো না কিছুটা সরে গেলো যদিও মেয়েলি এক নরম হাতের ধাক্কা টা খুব বেশি একটা জ্বোরে লাগেনি ” কিন্তু হটাৎ এরকম একটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না ফাহাদ!
“পেছনে ফিরতেই ফাহাদ রাইসা কে দেখতে পেলো ” কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গাড়ী টা রাইসা ও ফাহাদ কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও রাইসা বেসামাল হয়ে পড়ে দিয়ে মাথায় আঘাত পেলো “চারদিকে কেউ নেই ফাহাদ ও তার সঙ্গী সাথী রা ছাড়া ” ফাঁকা রাস্তায় একটা রিকশা করে ফাহাদ নিয়ে এলো রাইসা কে হসপিটাল ” হসপিটাল আসার সাথে সাথেই রাইসা চেতনা হারায়।
“জ্ঞান ফেরার পড় থেকে রাইসা বাসায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেলো!
” আপু বাসায় একা আছে আমায় দ্রুত বাসায় যেতে হবে “মাহি আমাকে বাসায় নিয়ে চল প্লিজ।
~” ডক্টর বলেছে তেমন কনো বেপার না মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে জ্ঞান হারিয়েছিলো ভয়ের কনো বেপার নেই মাথা সম্পূর্ণ অক্ষত ও ভালো আছে। কিছুদিন হয়তো একটু ব্যাথা করবে ওষুধ লিখে দিয়েছে আজকে রাতটা ভর্তি রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু রাইসা নাছর বান্দা সে থাকবে না বাসায় যাবে আপু বাসায় একা আম্মু নানু বাসায়।
“ফাহাদ রাইসা কে বাসায় পৌঁছিয়ে দিয়ে আসে ” রাস্তায় দুজনের কয়েকবার চোখাচোখি হলেও কথা হয়না।
“ইরফান মাহি কে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো ” মাঝরাস্তায় বাইক থামিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের দিকে হাটা ঠেকালো তৎক্ষনাৎ মাহি জিজ্ঞাসু স্বরে বললো..
ইরফান ভাইয়া…???
“এই সারাক্ষণ ভাইয়া” ভাইয়া করবি না তো কানে লাগে খুব.. ”
“মাহি চিবুক নামিয়ে নিলো ” এটা আবার কেমন কথা ইরফান ভাইয়া কে ভাইয়া ডাকবো না তো কি ডাকবো মনে মনে ভাবছে ”
“তো কি ডাকবো আপনাকে “??
যা মন চায় ডাক তবু ভাইয়া ডাকিস না! ভাইয়া ডাকার জন্য ফাহাদ আছে “মন চাইলে আরো মানুষ ভাড়া করে এনে দেবো তোকে ভাইয়া ডাকানোর জন্য!
” না না আমার আর কউকে ভাইয়া ডাকার দরকার নেই আপনি শুধু বলুন “আপনাকে ইরফান ভাইয়া না ডাকলে আর কি বলে ডাকবো???
শুধু ইরফান ভাই বলবি তাও ভালো.. ।
“ইরফান ভাইয়া আর ইরফান ভাই একি তো বেপার ” মাহির ছোট্ট জ্ববাব
” না “দুইটার মধ্যে পার্থক্য আছে আপনি তা বুঝবেন না শুরু যা বলেছি তা মনেরাইখেন ” কমল ককন্ঠে ইরফান এর কথা শুনে মাহি ভ্যবাচেকা খেলো একবার।
ইরফান মাহি কে আপনি বলে সম্মধোন করায় মাহি বেশ লজ্জা পেলো “পিছে কিছু বলতে পারলো না ”
“ওইদিকে কেনো যাচ্ছি আমরা “…??
” যেদিকে যাচ্ছি সাথে আসেন.. ”
“মাহি বেশ অবাক ” ইরফান ভাই এর কথায় ”
ইরফান রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো মাহি ও চুপচাপ বসে পড়লো “মাহি কে অবাক করে দিয়ে ইরফান ওয়েটার কে চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম অর্ডার দিলো। মাহির আইসক্রিম ফেভারিট তবে অবশ্যই চকলেট ফ্লেভারের টা ” কিন্তু ইরফান ভাই জানলো।কিভাবে…??হয়তো এমনিতেই।
“আইসক্রিম খাওয়া শেষ ”
“ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে ” এক প্লেট কাচ্চি “বলতে যেতেই মাহি বলে ওঠে ”
“~আমি খাবো না এখন ”
“কেনো..??
” এমনি “ভালোলাগছে না ” এর পর দুই কাপ হট কফি নিলো ”
এককাপ মাহির দিকে একিয়ে দিলো ইরফান ”
“আইসক্রিম খেয়েছেন ভালো কথা এবার কফি টা খেয়ে নিন নাহলে আবার ঠান্ডা লাগবে গলা বসে যাবে ”
তখন আবার পড়ালেখার বারোটা বাজবে।
“ইরফান এর চোখের দিকে তাকিয়ে মাহি বেসামাল হয়ে যাচ্ছে ” ইরফানের নরম চাহনী অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে মাহি ভরকিয়ে যাচ্ছে “বুকের ভেতর দামামা বাজছে ” অষ্টাদশীর হৃদয়ের এই হৃদ যন্র অবাধ্য ভাবে, বেজেই চলেছে “অষ্টাদশীর মনে ঝড় তুলছে ” ইরফানের গা থেকে আসা ঝাঁজালো এই পারফিউম এর ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে গেলো অষ্টাদশীর কোমল হৃদয় “উতালপাতাল ঢেউ খেলছে মনে।
” এগুলো কিসের লক্ষন মাহি তুই কি???…. ছি ছি এসব কি ভাবছিস মাহি পাপ হবে তোর (মনে মনে ভাবছে মাহি)
“ইরফান ফাইজার জন্য ও বাসার সকলের জন্য কিছু খাবার কিনে মাহি কে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।
“মাহি সারা রাস্তায় একবার এর জন্য ও মাথা ওঠায় নি নিচের দিকে তাকিয়ে বাসার চলে গেলো ”
বাসায় ফিরে মাহি ভেতরে যেতে সংকোচ বোধ করে “কে কি প্রশ্ন করবে ” কি বলবে তা নিয়ে ”
ইরফান মাহি কে চিন্তিত দেখে বললো “মাহি কে নামিয়ে দিয়ে বললো “তোর কিছু বলার দরকার নেই তুই সোজা রুমে যাবি ” আমি সবার সাথে কথা বলে নিবো মাহি রুমে প্রবেশ করে দেখলো আসে পাশে কেউ নেই।মাহি নিজের রুমে চলে গেলো ”
“মাহি রুমে ফিরতেই লিসা ও ফাইজা এসে মাহি কে রাইসার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা শুরু করে দিলো ” কি অবস্থা এখন কেমন।কি।করে হলো “ফাইজার কৌতহল একটু বেশি ” ফাইজা ও রাইসা কে খুব ভালোবাসে “মাহি ওদের বলছে সব কিছু।
ফাহাদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ইরফান এর রুমে চলে গেলো ” দুই ভাই এখন অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলবে ”
ওদের কথা কখন শেষ হবে তার কনো সময় নেই “ইরফান USA থাকা অবস্থায় ও মাঝে মাঝে দুই ভাই রাত ভোর ফোনে কথা বলতো ” একজন যেনো আরেকজনের কষ্ট নিজের করে নেয়।
চলবে……..?
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্ব : ১১
~সারারাত অঝোরে বৃষ্টি পড়েছে সকাল হতেই ভোরের স্নিগ্ধ রোদের আলো ফুটেছে আকাশে মেঘ ভেঙে বৃষ্টি ঝরাতে যেনো সকালের হালকা মিষ্টি মাখা রোদে খুঁব রঙিন মনে হচ্ছে”নীল আকাশে সাদা মেঘে রা ছুটে যেনো কোথাও যাচ্ছে..!
“সকাল সকাল শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামছে ইরফান ” ফর্মাল ড্রেস পড়েছে আজ “ইরফান বাসায় এসেছে বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলো ” কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাকে সব সময় হয় সাদা কালো শার্ট অথবা টিশার্ট পরতেই দেখা গিয়েছে “আজ প্রথম ফর্মাল ড্রেস পড়েছে ইরফান ” সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ইরফান এর দিকে চোখ পড়লো মাহির ”
~”উফফ ভাই ফিদা “একটা মানুষ এতোটা কিউট আর হ্যান্ডসাম কিভাবে হতে পারে ভাই (মনে মনে ভাবছে)
” কি হলো খাওয়া বাদ দিয়ে কি ভাবছিস এতো..??গম্ভীর ভাবে বললো ইরফান।
” স্বভাবসুলভ ভাবে মাহি ‘ মাথা নিচু করে মাহি জ্ববাব দিলো “কিছু না ”
~ইরফান তেমন বেস্ত না থাকায় ‘আজ কিছু দিন ধরে মাহি কে ইরফান কলেজ দিয়ে আসে “আবার নিয়ে ও আসে যেহেতু আজ ইরফান কোথাও একটা যাবে তাই ” মাহি কে তারা দিয়ে বললো..
“তারাতারি খেয়ে নে আমি ওয়েট করছি,
_আপনি কোথাও যাচ্ছেন…..?
” হুমমম ”
~”কোথায়…..??
“বলা মাএই মাহি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো ” এই রে এবার নিশ্চয়ই বকা খাবো “আজকাল বেশি কথা বলে ফেলি ( বিরবির করে বললো)
~” আমার কোম্পানির কাজ শুরু হয়েছে তা নিয়েই একটা মিটিং আছে সেখানে যাবো “ইরফানের নির্লিপ্ত জ্ববাব শুনে সাহসা তাকালো মাহি ”
“ইরফান এর কথা শুনে মাহি ভাবতে লাগলো ” একটা মানুষ এতটা পারফেক্ট কিভাবে হয়…?
“~কদিন ধরে এসেই নিজের কোম্পানি চালু করে ফেলছে, আগে বাবা কাকা দের কাজে ইরফান ভাই অনেক হেল্প করতো ” এটা মাহি আব্বু দের থেকে অনেক শুনেছে ইরফান ভাই এর নামে অনেক প্রশংসা ও করতেন বড়রা “সত্যি এমন একজন মানুষ এর প্রশংসা করাই যায়.মানুষ টার দ্বায়িত্ব বোধ ভালো ” কিছু দিন মাহি কে কলেজ দিয়ে আসা নিয়ে আসার মধ্যে মাহির সাথে ইরফান এর একটা সুসম্পর্ক তৈতৈরি হয়েছে বলা যায়..।
~রাইসা এক্সিডেন্ট এর পড়ে এক দিন বাসায় থাকলেও তার পর দিন থেকেই কলেজ এটেন্ড
করেছে “এখন রাইসা পুরো পুরি সুস্থ ” রাইসা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ফাহাদ এর ও দ্বায়িত্ব বেড়েছে “সময় করে তিন বেলা ফোন করে রাইসা কে ওসুধ খেতে বলে” মাঝে মাঝে এটা ওটা কিনে নিয়ে গিয়ে রাইসা দের বাসার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে”রাইসা নিতে চায় না এক প্রকার জ্বোর করেই দিয়ে আসে “রাইসা বুঝে পায় না ফাহাদ কেনো এমন করে ” ফাহাদ কে বাচিঁয়েছে তাই..?? তা ছাড়া ফাহাদ ভাই এর এতো কেয়ার এর অন্য কি কারণেই বা থাকবে..!
~_ক্লাসে মাহি রাইসা ও দুই বান্ধবী বসে আছে আইসিটি টিচার ক্লাসেই “এমন সময় একজন পুরুষালী সুপরিচিত এক কন্ঠে তাকালো মাহি ”
~”আসসালামু আলাইকুম. ম্যাম ”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম _
~_চিনতে পেড়েছেন আমায় ম্যাম_
” আরে তুমি আবরার ইরফান চৌধুরী..!
_হুমমম”
কেমম আছো এতো বছর পরে কি মনে করে বাবা ~
” এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম মাহি কে নিয়ে যাই বাসায় _
“কে মেহরিন নূর মাহি..? তোমার বোন নাকি…??
~না.! আমার কাজিন।
~_আচ্ছা ” মেহরিন তুমি যাও আমি প্রিন্সিপাল স্যার কে বলবো।
“প্রথমে মাহির মাথার উপর দিয়ে গেলে ও সে রাইসার দিকে একবার তাকলো রাইসা চোখ দিয়ে আসস্ত করতেই ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ইরফান ভাই এর সাথে।
” ক্লাস শেষ হলে রাইসা বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য রওনা হলেই দেখতে পেলো গেইট এর বাইরে ফাহাদ বাইক নিয়ে বসে আছে “রাইসার অসস্তি হয় ফাহাদ এর সাথে যেতে ” তাই না দেখার ভঙ্গীতে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্দেতো হতেই ফাহাদ এর আবেগি স্বরে ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো!
“রাই…?
~_রাইসা পেছন ফিরে তাকালো জ্ববাব দিতে ভুলে গেলো ” ফাহাদ এর মুখে এতো সুন্দর ও সুমধুর ভাবে ডাক শুনে কিছুটা ভরকিয়ে গেলো রাইসা।
“বাইকে উঠে বসো..
” রাইসা যথেষ্ট মেচিউর হওয়া সত্ত্বেও ফাহাদ এর সামনে এর কিছু টেকেনা এই যে এখন যেমন অবুঝ বাচ্চাদের মতো ফাহাদ এর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে! ফাহাদ এর কথার পেছনে কিছু বলতে না পারা কাতরতা রাইসার মধ্যে থাকলেও সে চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো বাইকে উঠে বসে “রাইসা খুব ভালো ভাবেই জানে ফাহাদ নাছর বান্দা কথা না মেনে নেওয়া পর্যন্ত উনি শান্ত হবে না ওনাকে বুঝানোর চেষ্টা করা মানেই সময়ের অপচয় করা।
” লিসা ফুচকা খাবে “বলে আবদার করেছে মাহি ও ফাইজার কাছ থেকে ” লিসা এসেছে এই কয়দিন এই সবাই কে আপন।করে নিয়েছে “সবার সাথেই লিসার বেশ ভালো সম্পর্ক ” ফাহাদ ওদের তিন জন কে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে এসেছে “লিসার ঝাল খাওয়ার অভ্যাস খুব কম তাই খাওয়া শেষে লিসা কে পানি খাইয়েও ঠিক রাখা যাচ্ছে না ” ইরফান কোথাও যাচ্ছিল লিসার এই অবস্থা দেখে ফাহাদ কে বললো ওকে পাশের দোকান থেকে ফ্রুটি কিনে খাওয়া ঝাল কম লাগবে “ফাহাদ লিসা কে নিয়েই দোকানে গেলো মাহি ও ফাইজা রাস্তায় সাইড করে দাঁড়ায় ” ফাইজা এবার মাহি কে বললো আপু আমি লিচি ড্রিংকো খাবো ”
তুই যা ফাহাদ ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়ে আয় ”
_আচ্ছা তোমার জন্য ও আনবো.. বলেই ফাইজা রাস্তা পাড় হয়ে যায়!
~ইরফান বাইক স্টার্ট দিলো ” নিমিষেই বাইক টা অনেক টা দূরে চলে গেলো ”
“_অন্য একটা বাইকে তিনজন ছেলে যাচ্ছিলো স্মোক করতে করতে মাহির পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় মাঝেঁ বসা ছেলেটি মাহির দিকে ঘুরে মাহির দিখে সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে হাসতে হাসতে সেই স্থান ত্যাগ করলো।
” অসস্থী তে মাহির গা গুলিয়ে বমি এলো “!
_কিছু টা দূরে গিয়ে বাইক এর উপর হেলান দিয়ে দারিয়ে থাকা ইরফান এর তীক্ষ্ণ নজরে এড়াতে পাড়লো না এইসব ঘটনা ~চোখ থেকে কালো স্নানগ্লাস টা খুলে হাতে নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হতেই স্নানগ্লাস টা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো ”
~_ফাহাদ লিসা ও ফাইজা আসতেই ওরা গাড়ীতে করে বাসায় চলে গেলে “ইরফান বাইক ১৮০ স্পিডে টান দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো _
_বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসে ” মাহি ও ফাইজা পড়ার রুমে গিয়ে পড়তে বসে ”
“প্রায় ২ ঘণ্টা পরে ম্যাম চলে গেলো ” ফাইজা নিজের রুমে চলে গেলে ও মাহি লিসা আপুর কাছে যায় “লিসা আপু কে মাহির খুব পছন্দ হয়েছে ” প্রথম প্রথম মনে একটু অন্য রকম লাগলেও এখন অনেক ভালো লাগে মাহির”লিসা আপুর কথা বলার স্টাইল থেকে শুরু করে সব কিছুই ভালো লাগে “তা ছাড়া সব থেকে বড় বেপার হলো লিসা আপুর বয়ফ্রেন্ড আছে ” এই বেপারে মাহি শিউর সেটা ইরফান ভাই না অন্য কেউ।তার ছবি ও দেখেছে মাহি “কিন্তু ইরফান ভাই এর সাথে হলেই বা মাহির কি..?? সেটাও একটা কথা কিন্তু ইরফান ভাই হলে মানতে কষ্ট হতো হয়তো।
” রাত ১২ টা মাহি রুমে শুয়ে আছে “বাইকের আওয়াজ কানে যেতে উঠে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পড়লো মাহি।এই অভ্যাস টা মাহির নতুন হয়েছে ইরফান রাতে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত মাহির ঘুম আসে না ” প্রতি দিন ১১ টার দিকে চলে আসলেও আজ ইরফান এর ফিরতে এক ঘণ্টা দেরি হলো তাই “মাহি চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকালো ” ইরফান বাইক থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করার সময় মাহি “বেশ সময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো!
” ইরফান ভেতরে আসতেই নাজিফা বেগম এসে বললেন খেতে বস বাবা
” ইরফান ও বাধ্য ছেলের মতো খেতে বসে পরলো! খেতে খেতে মা কে বলে,
মা তোমার হাতের রান্নার স্বাধ অসাধারণ ” USA থাকতে অনেক মিস করতাম তোমার রান্না গুলো।
~” ছেলের কথা শুনে নাজিফা বেগম একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ঠিকি তো কতগুলো বছর ছেলে টা দূরে ছিলো কি খেয়েছে না খেয়ে কে জানে।
কাল তোর পছন্দের সব খাবার রান্না করবো বাবা।
~” বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই শুধু তোমার হাতের সরিষা ইলিশ হলেই চলবে।
~ নাজিফা বেগম এক সস্থির হাসি দিয়ে বললো ”
ঠিক আছে বাবা কাল তোর বাবা কে বাজারের সব থেকে বড় ইলিশ মাছ নিয়ে আসতে বলবো …।
~” ইরফান খাওয়া শেষ করে মায়ের আচঁল দিয়ে মুখ মুছে উপরে চলে গেলো।
~” নাজিফা বেগম ছেলের যাওয়ার পানে তৃপ্তির হাঁসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এর পর নিজের রুমে চলে গেলো।
চলবে………..?