পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-২১+২২+২৩

0
29

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২১

~রাত, এক অদ্ভুত, শান্ত, নিরিবিলি ও চিন্তার সময়। এই সময়টা অনেকের কাছেই অন্যরকম মনে হয়। কেউ রাতে স্বপ্ন দেখে, কেউবা ভাবনাচিন্তায় ডুবে থাকে। রাতের এই রহস্যময় পরিবেশ আমাদের মনকে অনেক কিছু বলতে চায়। রাত প্রায় ২ টা বাজে ইরফান ও ফাহাদ ছাদে বসে দুই ভাই কিছুক্ষণ গল্প করছে কিছূক্ষণ হাসছে আবার কিছুক্ষণ নিরব দৃষ্টি তে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে ” বেশ কিছুটা সময় চুপচাপ থাকার পড়ে ইরফান জোৎস্না মাখা চাঁদের দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে গান গাইতে শুরু করেছে..

>কতো দিন < !!ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায়!! !! ক্লান্ত হীন!! !! তুমি ছিলে আমার কল্পনায় !!... !!সেই ছবি উঠলো ভেসে!! ! !চোখেরই পাতায়! আমি শুধু চেয়েছি তোমায়। ইরফান এর কন্ঠ বরাবরই খুব ভালো ছোটো বেলা থেকে বেশ ভালো গান গাইতে পারে সাথে গিটার ও ছোট বেলায় ইরফান গিটার বাজিয়ে গান গাইতো " ফাহাদ মেকি স্বরে বললো, ভাইয়া তোমার মনে আছে ছোট বেলায় তুমি তোমার পছন্দের গিটার টা ভেঙে ফেলেছিলে..! "হুম মনে আছে " " তোমার কষ্ট হয়নি...? "না ওই গিটার এর জন্য তোর বোন কান্না করেছিলো " আমার পছন্দের গিটার এর থেকেও তোর বোনের এক ফোটা চোখের পানি বেশি মূল্যবান। "তাই তো বড় ভাই হিসেবে স্বজ্ঞানে আমার বোনের দায়িত্ব আমি তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। আমি জানি আমার বোন তোমার কাছে সব থেকে বেশি নিরাপদ থাকবে " তুমি ওকে সব সুখ এনে দেবে যেটা ভাই হিসেবে প্রটিটা মানুষ চায় তার বোনের জীবনে এমন কেউ আসুক যে তার বোন কে পুরো পৃথিবী উজাড় করে ভালোবাসবে "তুমি আমার বোন এর জন্য পারফেক্ট। প্রটিটা ভাই তার বোনের জন্য বেষ্ট টা চায় আমিও তাই চেয়েছি। ভাইয়া তুমি কখনো আমার বোন কে কষ্ট দিও না প্লিজ। তোমার অবর্তমানে আমি আমার বোনের সম্পুর্ন খেয়াল রাখছি নজরদারি করেছি যাতে ওর জীবনে তো দূরে থাক ওর ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতে না পারে। ~ভরসা নেই আমার উপর..? আছে তবুও আমি তো ওর বড় ভাই " ___________________________________★____________________________ ~প্রায় ১১ বছর আগে মাহি বেশ ছোট একদিন খেলতে খেলতে ইরফান এর রুমে চলে যায় সাথে ছিলো ফাইজা "ফাইজা মাহির ২ বছরের ছোট হওয়ায় তখন ফাইজার বুঝ খমতা ছিলো খুব কম.. না বললেই চলে " ইরফান এর খাটের পাশে রাখা ওয়ার্ড্রপ এর উপরে ছিলো ইরফানের নতুন গিটার " গিটার এর প্রতি ছিলো ইরফানের এর অন্য রকম টান "ইরফানের হাতে গিটার এর স্বুর ছিলো অসম্ভব সুন্দর। -- ইরফানের ছোট চাচ্চু মনির চৌধুরী ইরফান কে এই গিটার টি গিফট দিয়েছিল তারপর থেকে ইরফান গিটার টা স্বযত্নে আগলে রাখতো মাঝে মাঝে ফ্রি থাকলে গিটার টা বাজাতো আর গান করতো। ~কিন্তু চঞ্চল মাহি গিটার টা ছুতে চায় " অনেকটা ছোট হওয়ায় মাহি গিটার টা ছুতে পারছিলো না হাতের নাগালে না পেয়ে মাহি একটি চেয়ার টেনে নিয়ে গিটার টা নিতে চাইলো কিন্তু গিটার টা তোলার পড়ে ছোট্ট মাহি গিটার এর ভার সামলাতে না পেরে তাল হারিয়ে পড়ে গেলো মেঝে তে "শক্ত টাইলসে পড়ে পায়ে অনেকটা ব্যাথা পেলো মাহি! ফাইজা ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে " কি হয়েছে বুঝতে পারলো না "নিচে পড়ে মাহি এক চিৎকার দিয়ে " হু,,হু করে কান্না শুরু করে দিয়েছে! ফাইজা দৌড়ে এসে মাহবুবা বেগম কে বলে মা..মা আপু কাদচে মাহি আপু কাদচে মাহবুবা বেগম রাবেয়া বেগম দুজনেই ছুটে গেলেন মাহির কাছে.. রাবেয়া বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে আদর করছে " সবাই এসে মাহির এই অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেলো "মাহি বেশ অনেটা সময় নিয়ে কান্না করলো " ইরফান দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলো মাহির কান্না ভেজা চোখ " ইরফানের বুক টা ছিরে গেলো নিজে ব্যাথা পেলেও এতোটা কষ্ট পেতো না বোধহয় "ইরফানের হৃদয়ের অন্তরালে অদ্ভুত এক চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো। মাহির কান্না থামছেই না.... ইরফানের শিরা উপশিরা দপদপ করে ব্যাথা শুরু হলো মাথা টা মনে হচ্ছে ফেটেই যাবে " দু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে সামলানোর মিথ্যা চেষ্টা চালালো। ফাইজার ছোট্ট মস্তিষ্ক থেকে শুধু একটা কথাই বের হলো "এই গিটার টার জন্যই আপু বেতা পেলো ওটা পচা! ~সবাই মাহি কে নিয়ে বাইরে চলে গেলে ইরফান নিজের রুমের মেঝেতে পড়ে থাকা গিটার টা তুলে নিয়ে রাগে ফোঁসফোঁস করে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে গিটার টা কে আছার মারলো "ফাহাদ এসে ইরফান এর কাধে হাত রাখলো কিন্তু ইরফান থামলো না " একটা দুটো তিনটা এভাবে পড়পড় ৮ বাড় আছার মারলো ইরফান গিটার টা কে পুরোপুরি নষ্ট করে তবেই শ্বাস নিলো। ~ফাহাদ ইরফান কে দু হাত দিয়ে চেপে ধরলো " __ভাইয়া তুমি কি পাগল হয়ে গেছো গিটার টা তোমার পছন্দের তা ছাড়া বোন দুষ্টুমি করতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে "গিটার টা কেনো নষ্ট করলে তুমি। " যে জিনিস এর জন্য ও ব্যাথা পাবে সে জিনিস ছুড়ে ফেলে দেবো আমি। ~যেখানে মাহির চোখের এক ফোটা জলে ইরফানের মাথায় রক্তক্ষরণ করতে সক্ষম সেখানে টানা ১০ মিনিট যাবৎ কান্না করা মাহি কে দেখে ইরফান যেনো উন্মাদ হয়ে উঠেছিলো "ইরফান তখন ১৮ বছরের তাগড়া যুবক মাথার রক্ত টগবগে গরম, মাহির ব্যাপারে কনো কিছুর সাথে আপস করতে রাজী নয় ইরফান " ________________________★_____________________ নির্জন রাতে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে দুইভাই নিরবতা ওদের সঙ্গি আপাতত ফাহাদ এর মোবাইলে ফোন আসাতে ধ্যান ভাঙে দুই ভাইয়ের " সিয়াম ভাইয়া কল করেছে আড়মোড়া ভেঙে কল টা রিসিভ করলো ফাহাদ "সচারাচর ফাহাদ এর সাথে সিয়াম এর খুব একটা কথা হয় না " মাঝে সাঝে দুই এক দিন সিয়াম ফাহাদ এর একটু বেশি এই সিনিয়র ইরফানের ৩ বছরের বড় সিয়াম "ফাহাদ সিয়ামের ৫ বছরের ছোট "তাই ওদের একটু কম কথা হয় কিন্তু ইরফান এর সাথে সিয়াম এর বেশ ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক " USA তে দুই ভাই কাছাকাছি থাকাতে আরো ভালো বন্ডিং ওদের। "ফাহাদ সালাম দিলো " আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন। সালামের উত্তর দিয়ে সিয়াম বললো হুম ভালো " তুই কেমন আছিস আর বাসার সবাই কেমন আছে..? ~আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো "আপনার খবর কি ভাইয়া..? " আমার খবর তো ভালই কিন্তু তোদের দুই ভাইয়ের খবর কি এখনো ঘুমাস নি গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে, সেহেরির সময় ও তো মনে হয় হয়ে গেলো আর ইরফান কি করে ফোন কোথায় ফেলে এসেছে কল ধরছে না কেনো..? ~ভাইয়া এখানেই আমার কাছে ফোন বোধহয় রুমে রেখে এসেছে কথা বলুন ভাইয়ার সাথে "বলেই ইরফানের দিকে ফোন টা এগিয়ে দিলো। " হ্যাঁ ভাই কেমন আছো? ~ভালো "তুই "" এইতো আছি ভালো "তা দেশে কবে ফিরছো.. ~ভাবছিলাম ঈদ এর ৭ দিন পড়ে আসবো " লিসার পাগলামি তে এখন ঈদ এর পরের দিনই ফিরতে হচ্ছে। ~ভালই তো দেশে ফিরে তারাতারি বিয়ে টা করে নেও "-- মৃদু হেঁসে ইরফান বললো, আমার বান্ধবী বেচারা টা কতদিন ধরে বিয়ের প্লানিং করছে আর তুমি ওখানে বসে বসে কি কাজ করছো তারাতারি দেশে আসলে ঈদ এর ৭ দিন পড়েই তোমাদের বিয়ের ব্যাবস্থা করবো।আর ফুপি তো তার ছেলের বউ কে ঘরে তোলার জন্য মড়িয়া হয়ে উঠেছে "প্রায়ই আমাকে কল দিয়ে তোমায় আসার জন্য তারা দিতে বলে। --স্বশব্দে হেঁসে ফেললো সিয়াম " আচ্ছা রাখছি একটু কাজ আছে পড়ে কথা হবে। "ওকে " _সেহেরির সময় হয়ে গেছে দুই ভাই নিচে নেমে এসে এমন নাটক করলো যেনো মাত্র ঘুম থেকে উঠে আসলো! ________________ ~মায়ের ডাকে অহনার ঘুম ভাঙলো ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে বসলো অহনা চোখে এখনো ঘুমের রেস কাটেনি " রাত ০১:৩০ এসাইনমেন্ট শেষ করে ঘুমিয়েছিলো "ঠিক মতো না ঘুমাতেই আবার সেহেরিতে ওঠায় অহনার চোখে ঘুমের তাপ বেশি ".. এরি মধ্যে অহনার ফোন বাজছে " অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে "কল টা রিসিভ করে অলস ভঙ্গিতে অহনা বললো... --" হ্যালো..! ~"ঘুম ভেঙেছে....? --কে..? -- ছিহ রাগিনী তুমি আমায় এতো তারাতাড়ি ভুলে গিয়েছ "। ~রাগিনী কথাটা মাথায় ঢুকতেই এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে পড়লো অহনা এই নামে একজনি ডাকে অহনা কে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই অসভ্য লোকটা অহনার ফোন নাম্বার ও জোগার করে ফেলেছে ভাবা যায় কি মাত্রায় বেয়াদব। --কি হলো চুপ করে আছো কেনো "কয়েকটা বকা দেও " সেহেরির সময় তোমার বকা খেলে সারাদিনে আর ক্ষুধা লাগবে না। _চুপকরুন অসভ্য লোক "এতো রাতে কেনো ফোন দিয়েছেন..? --রোহান একটু অনুষ্ণ কন্ঠে বললো.. তোমার কথা মনে খুব পড়ছিল তুমি তো আর আমাকে কল দিবে না তাই আমিই কল দিলাম " তা সত্যি করে বলো মিস করোনি আমায়..?? -- আপনার মতো পাগল কে মিস করবো সরি আমার এতোটাও খারাপ দিন চলে আসে নি মিস্টার অসভ্য আহমেদ বেয়াদব। ~এই রাগিনী তুমি এমন কাল নাগিনীর মতো কথা বলছো কেনো "আর কি সমস্যা তোমার সব সময় এই দেখি সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে থাকো " বংশের কেউ সাপ টাপ আছে নাকি। --কি... কি বললেন আপনি! আপনি... আপনি একটা ভেরা "তীব্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলো বললো অহনা। রোহান কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলো অহনা। _ওপাশ থেকে কল কাটার আওয়াজ পেয়ে রোহান বুঝে ফেললো পটাতে গিয়ে আবার ও অহনা কে রাগিয়ে দিয়েছে রোহান এখন আর কল দিয়েও লাভ নেই " রাগ না কমা পর্যন্ত অহনা যে রোহান এর ফোন আর রিসিভ করবে না তা বেশ ভালো বুঝতে পারলো রোহান "। চলবে........?? #পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে #লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম #পর্বঃ ২২ ~~আজকের সকাল টায় থমথমে পরিবেশ "কেমন এক ভ্যাপসা গরম পড়েছে সাথে আবার কিছুক্ষণ পর পর ঠান্ডা হাওয়ায় বইছে, ঘুম থেকে উঠে মাহি কোচিং ক্লাসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলো " নেমে সামনে তাকাতেই চোখের সামনে দেখতে পেলো ইরফান ভাই কে! ---সাদা শার্ট ইন করে পড়া তার সাথে একটা নেবি ব্লু কালারের ব্লেজার ও কালো ফরমাল প্যান্ট "বেশ পরিপাটি চুল " গাল ভর্তি হালকা ছোট ছোট চাপদাড়ি এই শ্যাম পুরুষের জন্য হাজার মেয়ে লাইন লেগে থাকা টাই স্বাভাবিক অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগে এই যুবক টাকে এক হাতে রোলেক্স ব্রান্ড এর বিদেশি একটা ঘড়ি -ডান হাতের তর্জনী আঙুলে বাইকের চাবির রিং টা নিয়ে চাবি টা চারদিকে ঘুরাচ্ছে। "!---পেছন থেকে মাহি ডাক দিলো "ইরফান ভাই! " ----ইরফান পেছনে না তাকিয়েই বলল " !"হুম "! ~মাহি একটু নরম স্বরে বললো " ~"আজকে আমাকে কোচিং দিয়ে আসবেন প্লিজ, আমার দেরি হয়ে গেছে তাই আর কি না পাড়লে সমস্যা নেই, গাড়ী করেই চলে যেতে পাড়বো "! ~" ফাহাদ শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে নিচে নামলো.. "!ভাইয়া তুমি অফিস যাও আজ আমি মাহি কে দিয়ে আসি " ~তুই যে কাজে যাচ্ছিলি যা "আমার অফিস টাইম দেড়ি আছে মাহি কে নামিয়ে দিয়ে যাবো " "!মনে মনে বিড়বিড় করলো ইরফান " প্রথম বার মাহি মুখফুটে কিছু আবদার করলো তাও আবার নিজের ইচ্ছায় আমার সাথে যেতে চাইলো, আর তুই আসছিস কিনা বেগড়া দিতে স্বমন্ধী না হয়ে শালা হলে বুঝিয়ে দিতাম "দুলাভাইয়ের প্রেমে বাধা দিলে কি হয় " বলেই ইরফান মাহি কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো!" __ফাহাদ বেচারা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো "দুদিন ধরে রাইসার সাথে দেখা হয় না মাহি কে দিয়ে আসতে গেলে সেই সুবাদে রাইসা কে এক নজর দেখা হবে সেই ইচ্ছা ছিলো ফাহাদের কিন্তু ইরফান সেই আশায় পানি ঢেলে চলে গেলো " ---মাহি কে কলেজ গেইটে নামিয়ে দিয়ে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ইরফান মাহি কিছুটা গিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালো ইরফান ভাই কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার ঘুরে হাটা ঠেকালো তৎক্ষনাৎ ইরফান আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো " --" এই যে মহারানী । " --এই ডাকে আকাশ সমান আবেগ অনুভূতি মিশে আছে হৃদয়ের অন্তস্থলে কম্পন সৃষ্টি করতে বাধ্য। এই একটা শব্দে সম্মহিত হয়ে গেলো মাহি ইরফানের কাছে আদুরে শব্দে কিছু কিছু কথা মাহির অন্তর জুড়ে আসে "মাহি নিঃশব্দে ইরফানের অভিমুখে তাকালো।" "ইরফান ছোট করে বললো "আমি এসে নিয়ে যাবো ততক্ষণ সাবধানে থাকবেন। --মাহি ঘাড় কাত করে হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ায়। " ইরফানের দুর্বোধ্য দৃষ্টি মাহি তে আবদ্ধ রইলো "মাহি নিষ্পলক চোখে তাকালো ইরফানের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলো, ওই চোখের দিকে তাকাতে নেই " এই চোখে তাকালেই মাহির ভেতরে ঝড় সৃষ্টি হয় সব উলোট- পালোট হয়ে যায় । শ্বাস বন্ধ করে মাহি দ্রুত ভেতরে চলে গেলো। ~~আজকে ১ টা ক্লাস হয়নি তাই তারাতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে মাহি দের, ইরফান ভাই বলেছে নিতে আসবে সে তো আর জানে না আজকে এতো তারাতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে তাই নিজের ফোন টা বের করে মাহি ইরফান ভাইয়া কে কল দেওয়ার জন্য উদ্দোত হয় কিন্তু এর পর ভাবে যদি ইরফান ভাই কোনো মিটিং এ থেকেন যদি বিজি থাকে মাহির কল পেয়ে বিরক্ত হয় তাই মাহি কল না দিয়ে ফোন টা ব্যাগে রেখে দেয় "রাইসা মাহি কে জিজ্ঞেস করে " কিরে নিতে আসবে কে তোকে..? মাহি সাহসা জ্ববাব দিলো ইরফান ভাই! --"আদিবা ও নিপা এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে আদিবা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল...আজকে যেহেতু তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে চল সবাই বসে একটু গল্প করি। --মাহি, রাইসা, নিপা সবাই সম্মতি জানালো " " সবাই বসলো এক সাথে গোল হয়ে । নিপা মাহি কে জিজ্ঞেস করলো "--কিরে মাহি তোর ইরফান ভাইয়ের কি খবর শুনি, মাহি যেনো ফুটন্ত তেলে পানি পড়ার মতো ছ্যাঁত করে উঠলো., --তোকে বলেছি না তুই আমার ইরফান ভাই এর নাম ও নিবি না " বলেই ফোসফোস করতে লাগলো মাহি। --উপস্থিত সকলেই হাঁ করে তাকিয়ে রইলো সেই দিন নিপা ফাইজলামি করে যেই কথা টা বলেছিলো সেই কথা টা যেনো মাহির মস্তিষ্কে এখনো গেথে রেখেছে। তাই আজ নিপার মুখে ইরফান ভাইয়ের নাম টা শুনলে ও মাহির মাথায় রক্তক্ষরণ হয়। "এরি মধ্যে রিফাত আর সাগর এসে বসলো ফুচকার দোকানে " ওরা দুজন মাহি ও রাইসার সেই স্কুল লাইফ এর ফ্রেন্ড বেশ ভালো ফ্রেন্ড বলা যায় কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি কথা হয় না "মাঝে মাঝে কথা হয় একি কলেজেও ভর্তি হওয়ার সুবাদে ফ্রেন্ডশিপ টা এখনো আছে কলেজে ওঠার পর নতুন কলেজ থেকেই আদিবা ও নিপার সাথে পরিচয় মাহি ও রাইসার , তার থেকে ওরা চারজনের বন্ধুত্ব বেশ ভালই গভীর হয়েছে " সাথে সাগর ও রিফাত ও আছে সবাই যখন এক সাথে বসে আড্ডা দেয় তখন সাগর আর রিফাত ও এসে ওদের সাথে যোগ দেয় " রিফাত ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলো, কিরে কি হয়েছে তোরা কি নিয়ে এতো কথা বলছিস...?এক গাল হেঁসে সাগর ও বললো, হ্যাঁ তাই তো আমাদের ও বল আমরাও একটু শুনি। "মাহি ইরফান ভাই কে ভালোবাসে কিন্তু ইরফান ভাই এর মনের খবর এখনো পর্যন্ত জানা যায় নি তাই এখন এসব কথা সাগর, রিফাত ওদের জানানো যাবে না আর এখন যে মাহি নিপার সাথে ইরফান ভাই এর ব্যাপারে কথা বলছে এটা জানতে পারলে ওরা বুঝে যাবে " কথা গুলো একমনে ভেবে রাইসা কথা কাটাতে বললো.., ~কিরে তোরা দুজন ওইদিন যে আদিবা কে কি বলেছিলি ইরফান ভাই এর ব্যাপারে। আমাদেরকে একটু বুঝিয়ে বল তো। --মাহি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইরফান ভাই এর ব্যাপারে আবার ওরা কি বলেছে আর ওরা কিভাবে চিনলো..! মাহির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো বেশ আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি বলেছিলো ইরফান ভাই এর নামে আর তোরা চিনলি কিভাবে..? --নিজের শার্টের কলার টেনে বেশ ভাব নিয়ে বুক ফুলিয়ে বললো রিফাত "আরে চিনি চিনি আমরা সবাই কেই চিনি " আর কে কি করে না করে সবই জানি " ~মাহি ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বললো "দেখ একদম বাজে কথা বলবি না ইরফান ভাই খুব ভালো সে কোনো খারাপ কাজ করে না " তার ব্যাপারে কনো ধারণা নেই তোদের। --আদিবা চোখ ছোট করে রহস্যময়ী ভাবে তাকিয়ে বললো "ওদের ধারণা আছে মাহি তোর এখনো ধারণা হয় নি। " মানে..? ---সেদিন যে ওই বদমাশ লোকগুলা কে মারলো ইরফান ভাই তাও আবার কলেজ প্লাঙ্গনের মধ্যে কিন্তু কলেজের কোনো স্যার মেডাম তো দূরের কথা প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত ইরফান ভাই কে কিছু বলে নি "এটা কি স্বাভাবিক মাহি " যে কেউ এসে কলেজে মারামারি করবে কারণ যাই হোক তা কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যার মেনে নেবে না। সেখানে তারা ইরফান ভাইয়ের সাথে এতো সুন্দর ভাবে কেনো কথা বলছিলো। "মাহি আনমনে সেদিন এর ঘটনার কথা ভাবল! " "! ঠিকি তো এটা কিভাবে সম্ভব অন্য যেকোনো জায়গায় মারধোর করা সম্ভব কেউ নাহয় কিছু না বললো কিন্তু কলেজ মাঠে তাও প্রিন্সিপাল স্যার কিছু বললোই না " আবার কলেজ এর সব টিচার রাই কম বেশ ইরফান ভাই কে চেনে কি করে সম্ভব এতোবছর পড় একজন ছাত্র কে এক নজর দেখেই চিনে ফেলা তো অসম্ভব। _"তোরা সবাই থাম " ওরা কি বলতে চায় শুনতে দে এই রিফাত কি জানিস ওইটা বল বাজে কথা বাদ দিয়ে, এক নিশ্বাসে কথা গুলো শেষ করলো রাইসা " -- রিফাত ধীর কন্ঠে বললো আরে কথা না শুনেই ওরা বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছে এখন আমরা কি করবো ..? কোমল গলায় মাহি বললো "আচ্ছা তুই বল আমরা আর কথার মাঝে কথা বলবো না তুই বল ইরফান ভায়ের ব্যাপারে তোরা কি জানিস..? ---শোন ইরফান ভাই কে এখানে এই কলেজে সবাই চেনে কারণ ইরফান ভাইয়ের সাথে এই কলেজের সকলের সঙ্গে আগের থেকে পরিচয় আছে.. "। " কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বললো রাইসা "কিভাবে আর কবে থেকে! ~" অনেক আগে থেকেই আর ইরফান ভাই আমাদের কলেজে ওনেক টাকা ডোনেশন করে "আমাদের কলেজ এর যেই আর্থিক তহবিল থেকে যারা দারিদ্র্য স্টুডেন্ট আছে টাকার জন্য ফি দিতে পারে না ফলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিতে হয় তাদের সাহায্য করা হয়। সেই টাকা ইরফান ভাই দেয় " তা ছাড়া কলেজে যেকোনো কে কোনো অনুষ্ঠানে সব থেকে বেষ্ট এমাউন্ট ইরফান ভাই দেয়। প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে ইরফান ভাই এর ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক বলা যায়। ~"উপস্থিত সকলে নিজেদের মধ্যে চাওয়া চাওয়ী করলো "সবাই বেশ একটা শক খেলো "! মাহির চোখ দুটি সজল হলো বিস্ময়কর ভাবে এক দূর আকাশে নিস্পলক ভাবে চেয়ে রইলো " মনে মনে ভাবছে ইরফান ভাই এতো ভালো কাজ করে অথচ কাউকে বলে না মানুষ একটা ভালো কাজ করলেই শো - অফ করে দুনিয়া ছড়িয়ে দেয় আর ইরফান ভাই তা গোপনে করেন..! এতো ভালো মানুষ উনি। "ইরফান ভাই আপনি বেষ্ট " মাহির পাতলা চিকন ঠোঁট জোড়া হালকা বাকা হাঁসি দিলো। "!--সাগর ভীতু গলায় বললো "মাহি তুই আবার ইরফান ভাই কে কিছু জিজ্ঞেস করিস না আমরা যে বলেছি তা বলিস না কিন্তু ~" না বলবো না সে যেহেতু নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেনি আমিও বলে তার এই গোপনীয়তা নষ্ট করতে চাই না " তার এই ভালো গুন গুলো অপ্রকাশিতই থাক বরং! --বেশ অনেকটা সময় পরে "৬ জন গেইট এর সামনে এসে দাঁড়ায় নিপার বাবা আসলে নিপা চলে গেলো " এর মধ্যেই ফাহাদ উপস্থিত হয় ওদের ৫ জন এর সামনে ,লম্বা দেহ তবে অনেকটা চিকন ফাহাদ হালকা ফরসা গায়ের রঙ টান টান চুলগুলো স্টাইল করে কাটা মাথার উপরি ভাগের চুলগুলো একটু বড় হওয়ার বাতাসে অবাধ্য ভাবে উরে < "আজকে বাইক নিয়ে আসে নি।ফাহাদ বাসার সাদা রঙের BMW টা নিয়ে এসেছে। " সাগর আর রিফাত ফাহাদ কে দেখে লম্বা এক সালাম দিলো ফাহাদ সালাম এর উত্তর দিতেই ওরা দুজন ব্যাগ কাধে হেটে চলে গেলো "আদিবা ও রাইসা কিছুটা হেটে কিছু টা সামনে চলে গেলো, রিকশার খোজে " --মাহি ফাহাদ এর কাছে গিয়ে বলে "ভাইয়া তুমি " কিন্তু ইরফান ভাই তো বলেছিলো আসবে..! "ভাইয়া কাজে বিজি তাই আমায় আসতে বললো " "ওও আচ্ছা " বলেই মাহি গাড়ীতে উঠে বসলো "রাইসা কে একটা ডাক দিলো " ~আয় চল এক সাথে যাবো "রাইসা মাথা নেড়ে না সূচক মাথা নাড়লো "ফাহাদ গাড়ী স্টার্ট দিয়ে রাইসার কাছে গিয়ে থামালো " গাড়ী থেকে নেমে গাড়ীর দরজা টা খুলে দিয়ে রাইসা কে বললো ওঠ তারাতাড়ি., "! " চলে যেতে পারবো আমি। ফাহাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকালো "ফাহাদের অভিভক্তি দেখেই বোঝা গেলো রাইসার কথা টা ফাহাদ এর একদমই পছন্দ হয় নি " রাইসা চুপসে গেলো "মাথা নিচু করে চুপচাপ গাড়ীতে উঠে বসলো " ফাহাদ প্রফুল্লচিত্তে ছুটে এসে গাড়ীতে স্টেয়ারিং ঘুড়ালো "লোকিং গ্লাসে এক জনর তাকিয়ে রাইসার দিকে তাকালো " এখনো মাথা টা নিচু করেই আছে "মাহি একটু হেঁসে বলছে আমি ডাক দিয়েছি আসলি না দেখলি তো ভাইয়ার সাথে তো পেরে উঠলি না ভাইয়ার সামনে একদম চুপ হয়ে গেলি তো তোকে ফাহাদ ভাইয়ার মতো একজন রাগী ছেলের সাথেই বিয়ে দে..... "! কথা টা শেষ না হতেই ফাহাদ কাশতে শুরু করলো " মাহি ফাহাদ এর দিকে পানির বটল টা এগিয়ে দিয়ে বললো "কি হলো ভাইয়া তুমি এমন শুকনোর ওপর বিষম খেলে কেনো..? রাইসার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক বুঝে ফেললো মাহির কথা টা অবশ্যই ফাহাদ ভাই শুনে ফেলেছে মাহি যা অবুঝ বাচ্চাদের মতো কথা বলে শুনে যে কেউ বিষম খাবে " ভেবেই রাইসা মাথা টা আরো নুয়িয়ে ফেলে। #পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে #লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম #পর্বঃ ২৩ ~"সকালে আজ ঘুম থেকে অনেকটা দেরি করে উঠে মাহি ফাইজা ও দেরি করে উঠলো মাহির কোচিং ও ফাইজার স্কুল বন্ধ দিয়েছে তিন-চার দিন হলো প্রায় 'ঘুম থেকে উঠে অজু করে এসে মাহি চাশত নামাজ আদায় করে, এরপর বেশ কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতে বসে 'ফাইজা মাহির রুমে এসে বসে আছে অনেকক্ষণ হলো "বেশ অনেকটা সময় পরে মাহি এসে ফাইজার কাছে বসে জিজ্ঞেস করলো " "কি হলো কিছু বলবি...? ~ফাইজা উপর নিচ হ্যাঁ সূচক মাথা নাডায় এরপর বলে আপ ছাদে যাবে "কদিন হলো খুব একটা যাওয়া হয় না..! মাহি ধীর কন্ঠে বললো "হুম এতোদিন কোচিং ক্লাস থাকায় খুব একটা আমল করা হয়নি" এখন কদিন হলো বন্ধ দেওয়ায় একট ইবাদত পালন করার চেষ্টা করি তাই সময় করে ছাদে যাওয়া হয় না "দেখ বোন রমজান তো প্রায় শেষ আর মাত্র কয়েকটি আছে দেখতে দেখতে চলে যাবে" তুই জানিস এই মাসে একটু খানি আমল করলে তার অনেক ফজিলত আছে "রমজান অনেক ফজিলত পূর্ণ মাস। প্রতি বছর আমাদের মাঝে এই মাসটি ফিরে আসে আবার চলে যায়। নিজেকে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহ কাছে তওবা করার অত্যন্ত উপযুক্ত মাস এটি। এ মাসে আমাদের উচিত বেশী বেশী ইবাদত করা এবং নিজের গোনাহ সমূহকে মাফ করে নেওয়া। --ফাইজা শান্ত স্বরে বলে ওঠে, তাহলে আজ থেকে আমিও বেশি বেশি আমল করবো ও তওবা করবো। ~মাহি এক মিষ্টি হাঁসি দিয়ে বললো " ঠিক আছে বোন আমার "এবার চল ছাদে যাই। "! হুম চলো " ছাদে যেতে যেতে মাহি বললো "জানিস ফাইজা আমর খুব লিসা আপুর কথা মনে পড়ছে লিসা আপু বাসায় থাকলে ভালো লাগে তাই না " উদাস ভঙ্গিতে বললো "হুম আপু " লিসা আপু কে কেনো এসে নিয়ে গেলো ওরা বলতো..! আমার ভালো লাগছে না। লিসার মামা বাসা ঢাকাতেই " লিসা দেশে ফেরার পর থেকে এতোদিন এখানে ছিলো এ বাড়ীর মানুষ দের সাথে মেশার সুযোগ পাওয়ার জন্য সাথে সিয়াম এর মা ফরিনা বেগম এর সাথেও দেখা হলো বেশ ভাব জমে গেলো ওদের সাথে ফরিনা বেগম নিজেই মোড়িয়া হয়ে গেছে লিসা কে ছেলের বউ বানানোর জন্য "ইরফান যে প্ল্যান করে লিসা কে বাসায় এনেছে তা সার্থক হয়েছে। এখন লিসার মামা -মাহি এসে লিসা কে নিয়ে গেছে তাদের বাসায় " ঈদ টা লিসার মামা বাড়ীতেই কাটাবে লিসা "লিসার ও এতোদিন মাহি দের সাথে কাটিয়ে খুব ভালো লেগেছে যাওয়ার সময় মন খারাপ হয়েছে ঠিকি কিন্তু মামা -মামির মন রক্ষার্থে যেতে হয়েছে। --বিকেলে নাজিফা বেগম , রাবেয়া বেগম ও মাহবুবা বেগম চৌধুরী পরিবারের তিন গিন্নী এক সাথে মার্কেটে গিয়েছে সাথে মাহি ও ফাইজা কে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইরফান মানা করেছে বলেছে তোমরা যাও গিয়ে মার্কেট করে আসো ওদের আমি সন্ধ্যার পড়ে নিয়ে যাবো ..! তাই তারা তিনজন চলে গিয়েছে " --সন্ধ্যার আগে মাহি কিচেনে গিয়ে এটা ওটা করছে "কিছু বুঝতে পাড়ছে না কি রেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না "এর আগে কখনো মাহি টুকটাক হালকা পাললা রান্না পারে কিন্তু মা -আম্মু রা কেউ মাহি কে তেমন ভাবে কিছু করতে দেয়না তাই হঠাৎ করে ইফতারের পুরো দায়িত্ব মাহির কাধে আসাতে একটু অন্যরকম লাগছে ইরফান আসর এর নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে দেখে মাহি কিচেনে "কোমড়ে ওড়না বেধে কিছু একটা করছে "কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে মাহি কিচেনে কি করছিস..? -- মাহি এক পলক তাকালো এর পর চপ ভাজার জন্য বেসন বাটিতে নিয়ে গুলতে গুলতে বললো "" মা ফোন করেছিলো বললো আজকে বাবা কে বাইরে থেকে ইফতারি কিনে নিয়ে আসতে তাদের আসতে হয়তো দেরি হবে ইফতার তারা বাইরে করবে! মাহি গালের কাছে উড়ে আসা চুলগুলো উল্টো পাশ দিয়ে সড়িয়ে আবার বলতে লাগলো, বাবা কে ফোন দেওয়ার পড়ে শুনলাম বড় আব্বু ও বাবা দুজনেই আজ অফিসে ইফতার করবে তাই আর কিছু বলি নি আর বাসায় আমরা মাত্র চারজন এর জন্য বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনার প্রয়োজন দেখলাম না " আমি যা পারি তাই খাবেন আজ খুব বেশি কিছু পারি না। ~মাহির পাকা গিন্নী দের মতো কথা শুনে ইরফান এক নজর দেখলো এরপর আড়ালে ঠোঁট কামড়ে একটু হাঁসি দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো "এদিকে আসুন মাহি ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ বাকা করে বললো.. বলুন আপনি শুনতেছি বেশি সময় নেই" যাওয়া যাবে না। ~ইরফান আবার ও গম্ভীর কণ্ঠে বললো , আসতে বলেছি কিন্তু! --মাহি এবার বেসন মাখা হাত মুঠি করে উচিয়ে ইরফানের সামনে এসে দাঁড়ায় "ইরফান শান্ত কন্ঠে বললো " আয়নায় মুখ টা দেখে হাত টা ধুয়ে আসেন তারাতড়ি " ~মাহি বড় বড় চোছে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে "কেনো..? " গিয়েই দেখুন। ~মাহি হন্তদন্ত হয়ে এসে আয়নায় তাকালো "কপালে গালে ও চুলে ও লেগে আছে মাহির হাতের বেসন লেপ্টে আছে " ইরফান ভাই মাহিকে এই হালে দেখে মনে মনে কি ভেবেছে আল্লাহ জানে ভেবেই মাহি নিজের মাথা টা নামিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো "হাত মুখ ধুয়ে মাহি কিচেনে আসতেই দেখলো ইরফান চপ ভাজছে! ফাহাদ ও চলে এসেছে সরবত তৈরি করছে " ফাইজা দূরে দাঁড়িয়ে ওদের কাজ দেখছে মাহি গিয়ে ফাইজার সামনে দাঁড়ায়! ফাইজা হিসহিসিয়ে বললো "আপু দেখো ভাইয়ারা কি করছে...! আমি সরবত বানানোর জন্য গিয়েছিলাম ফাহাদ ভাইয়া দিলো না " আর ইরফান ভাইয়া চপ ভাজি করছে..? মাহি একটু কাছে গিয়ে বলে "আপনি সরুন আমি ভেজে নিয়ে আসছি " "চুপচাপ গিয়ে দুই বোন বস " হয়ে গেছে প্রায়। ইরফানের সোজাসাপ্টা জ্ববাব শুনে মাহি দাঁড়িয়ে রইলো। _ ফাহাদ ও উষ্ণ স্বরে বললো "হ্যাঁ " আমরা আছি তো তোরা বস গিয়ে। --ইফতার শেষ করে যে যার মতো নামাজ পড়তে চলে গেলো "ইরফান ও ফাহাদ মসজিদে চলে গেলো " নামাজ শেষ করে বাসায় এসে সোফায় বসলো দুই ভাই "সাথে সাথে মাহি দুই কাপ কফি এনে হাজির করে ওদের সামনে " ইরফান ঘুরে তাকালো মাহির দিকে "একটা কালো রঙের ওড়নায় মাথায় ঘোমটা টানা অর্ধেক টা মুখ ওড়নায় জরিয়ে ঢেকে আছে মুখের বাকি অংশ গুলো উজ্জ্বলতায় চকচক ফরসা ধপধপে চেহারায় আজকে এক নতুন গ্লো দেখা মিলছে এটা কিসের গ্লো সারা বাড়ি মাতিয়ে তোলা মেয়েটা আজ হঠাৎ করে অঅন্যরকম লাগছে কেমন জানি বউ বউ লাগছে! ভাবতে ভাবতেই মাহির চোখে চোখ পড়লো ইরফান সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো " মাহি চলে গেলে ইরফান কফি তে এক চুমুক দিতেই চোখ বন্ধ করে নেয়! কি হয়েছে ভাইয়া কফি টা ভালো লাগে নি! শান্ত কন্ঠে বললো ফাহাদ। --খুব ভালো হয়েছে খেয়ে দেখ। "ফাহাদ একটু খেয়ে বলে হুম বোন কে তো রান্না ঘরে ঢুকতে দেওয়াই হয় না " তারপরেও ভালই বানিয়েছে কি বলো ভাইয়া..! দেখতে হবে তো কার বোন..! __উহুম কার বউ তা দেখ । বলেই ইরফান ঠোঁট জোড়া সজল করে হালকা বাকা হাঁসি দিলো। -- নাজিফা বেগম, রাবেয়া বেগম ও মাহবুবা বেগম বাসায় ফিরলে ইরফান ও ফাহাদ, মাহি ও ফাইজা কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো মার্কেট এর উদ্দেশ্য। বের হওয়ার সময় ইরফান মাহি ও ফাইজা দুবোন কে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবে মার্কেট করতে "দুজন এক সঙ্গে জ্ববাব দিলো কিন্তু দুজনের উত্তর দুই রকম মাহি বলেছে বসুন্ধরা সিটি মার্কেট আর ফাইজা বলেছে জমুনা ফিউচার পার্ক! একজন আরেকজন জন এর কথা শুনে ভ্যবাচেকা খেলো কারণ মাহি বা ফাইজা বুঝে উঠতে পারেনি দুজন দুইরকম টা বলে ফেলবে দুবোন।এক সাথে চোখাচোখি করে তার পড়ে মাহি বলে " না না ফাইজা যেখানে যাবে আমি সেখানেই যাবো ফাইজা ও বলে ওঠে না মাহি আপু যেখানে যাবে আমি সেখানেই যাবো। দু বোন কে নিয়ে এবার ভাবনায় পড়ে গেলো ফাহাদ! দুজন এক সাথেই মতামত জানিয়েছে আগে থেকে জানলে হয়তো দুজন মিলে ডিসিশন নিয়ে এক জায়গায়র নাম বলতো কিন্তু এখন দুজন দুই জায়গায় বলেছে কোথায় নিয়ে যাবে ওরা ! "চিন্তায় পড়লো না ইরফান " ফাহাদ কে বললো তুই ফাইজা কে নিয়ে যা জমুনা ফিউচার পার্ক থেকে মার্কেট করিয়ে নিয়ে আয় "দেখিস যেনো কনো কিছু বাকি না থাকে " ফাইজা কে উদ্দেশ্য করে বললো পিচ্চি বোন আমার তোর যা যা ভালো লাগে সব কিনবি বুঝলি। এরপর ফাহাদ কে নিজের একটা ব্যাংক কার্ড ধরিয়ে দিয়ে মাহি কে নিয়ে বসুন্ধরা মার্কেট এর দিকে চললো।মাহি আসতে করে বললো ইরফান ভাই চলুন না ওদের সাথে এক সাথেই যাই আমার একা ভালো লাগবে না..! "ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো " একা কোথায় আমি আছি তো "এর পড় আর কিছু বলার সাহসে কুলালো না মাহির, নিজের করা বোকামির জন্য নিজেই আফসোস করছে " কেনো যে বলতে গেলো বসুন্ধরা সিটি মার্কেট এর কথা ফাইজা কে আগে বলতে দিলেই হতো তাহলে দুজন এক সাথে যেতে পারতো "এই প্রথম ইরফান ভাই এর সাথে ঈদ শপিং করতে যাচ্ছে মা -আম্মু রা কেউ সাথে নেই। মাহির কেমন জানি অস্থির লাগছে। " ~আজকে দুই ভাই বাইকে না গিয়ে বাড়ীর দুটো গাড়ী নিয়ে গেলো " সাথে ড্রাইভার আংকেল কে নিলো না নিজেরাই ড্রাইভ করলো। ---শপিং মলে এসে " ইরফান ফিক্সড প্রাইস ট্যাগওয়ালা সব চেয়ে বড় দোকান টায় নিয়ে গেলো মাহি কে ড্রেস পছন্দ করতে বলে নিজে পেছনে দাঁড়িয়ে হাতে মোবাইল নিয়ে দেখছে "এতো গুলো ড্রেস এর মাঝে মাহি কনফিউজড হয়ে গেলো কোনটা রেখে কোনটা নেবে আয়নার সামনে এসে একটা একটা করে দেখছে কোনটা বেশি সুন্দর কোনটায় মাহি কে ভালো মানাচ্ছে একটা করে দেখছে আর রাখছে । ইরফান দূর থেকে দাঁড়িয়ে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখছে সব গুলো ড্রেসেই মাহি কে অপরুপ সুন্দর লাগছে হয়তো মাহি বুঝতে পারছে না কিন্তু ইরফান এর রিদ স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে " ইরফানের নিশ্বাস ভারী হচ্ছে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো ইরফান.... মাই ডিয়ার স্বপ্নচারনী..! স্বপ্নের জগৎ এর রানী তুমি তাইতো স্বপ্নে বিভোর আমি। প্রায় চল্লিশ টা ড্রেস ঘাটাঘাটি করার পড়ে সেখান থেকে পাঁচ টা ড্রেস বেছে নেয় মাহি এই পাঁচ টা ড্রেসের মধ্যে থেকে কোন দুইটা নেবে সেটাই ডিসিশন নিতে পারছে না। তাই ইরফান ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো আমি ডিসিশন নিতে পারছি না আপনি একটু হেল্প করুন প্লিজ ইরফান কাছে এসে সব গুলো ড্রেস এক সাথে রাখলো সাথে যেই ড্রেস গুলো মাহি গায়ে জরিয়ে দেখছিলো সেগুলো ও সাইডে রেখে বললো এগুলো পড়ে দেখছি এখন জোতার দোকানে চল..! --জোতার দোকানে গিয়ে মাহি প্রথমে একটা জোতা পছন্দ করে দোকান এর একটা হেল্পম্যান এসে মাহি কে জোতা টা পড়িয়ে দিতে চাইলে ইরফান এসে তাকে বাধা দিয়ে ইরফান হাটু গেরে বসে পড়ে মাহির সামনে মাহি ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে ইরফান হাত বারিয়ে মাহির পা টা ছুতে চাইলে মাহি এক ঝটকায় নিজের পা টা সড়িয়ে নিলো "ইরফান মেকি স্বরে বললো " এদিকে আয় পড়িয়ে দেখি পায়ে ফিট হয় কিনা "মাহি অসস্তি নিয়ে বলে, না না সরুন আপনি আমি পড়তে পারবো। " এদিকে আয় বলছি..! "ছি.. ছি ইরফান ভাই কি বলছেন এসব! আ..আপনি আমার পায়ে হাত দিলে পাপ হবে আমার। --ছোট বেলায় এই পায়ে আলতা দিয়ে দেওয়া থেকে নুপুর পড়িয়ে দেওয়া সব এই হাতে করেছি " তখন পাপ হয়নি! এখন তুই আমাকে পাপ শিখাতে আসছিস "এদিকে আয় বলছি। " মাহি যেনো আকাশ থেকে পড়লো, এই মানুষ টার সাথে কখনো কথায় পেরে ওঠা সম্ভব নয় "ছোট বেলায় ইরফান ভাই মাহি কে আলতা পড়িয়ে দিতো কিন্তু এগুলো মাহির মনে নেই কেনো "। ইরফান কাছে এসে মাহির পা টা নিজের উরুতে নিয়ে জোতা টা পড়িয়ে দিলো " অস্থিরতা মাহি কে ঘিরে ফেললো এতোক্ষণ ইরফান ভাইয়ের সাথে থেকে যে অস্তিরতা মাহি কে ছুতে পারেনি ইরফান ভাইয়ের আলতো হাতে স্পর্শে মাহির পুরো শরীরে ঝঙ্কার তুলে দিয়ে কম্পন সৃষ্টি হলো। -- পর পর সাত জোড়া জোতা থেকে মাহি দুই জোড়া জোতা বেছে নিলো। ইরফান সাত জোড়া জোতা প্যাকেট করতে বললো সাথে সেখান থেকে তিন জোড়া জোতার আরো একটা করে কালার ছিলো তাই সেগুলো ও নিলো মোট ১০ জোড়া জোতা! মাহির বাছাই করা পাঁচটা ড্রেস নিলো সাথে গায়ে জরিয়ে চেক করা পঁয়ত্রিশ টি ড্রেস প্রতিটি ড্রেস প্যাক করে নিলো ইরফান " মাহি কয়েকবার বলেছে এতো গুলা নেওয়ার প্রয়োজন নেই "ইরফান মাহির কথা যেনো শোনেই নি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মাহি "কিছু বলার সাহস ও নেই।আগে জানলে দুইটার বেশি ড্রেস হাত দিতাম এই না..!(মনে মনে বিড়বিড় করলো মাহি) সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে কসমেটিক শপে গিয়ে ইরফান মাহি কে বললো.., " যা যা পছন্দ হয় নিয়ে নে "আমি এগুলো বুঝি না কিন্তু এবার মাহি দোকানের কিছুতেই হাত দিবে না " চুপচাপ কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে "আসতে করে বললো আমার এগুলো লাগবে না।এবার চলুন বাড়ী যাবো .! __ইরফান নিজের ইচ্চে মতো অনেক গুলো জিনিস কিনে দিলো " মাহির বারণ করা সত্ত্বেও ইরফান প্রতিটি ড্রেস এর সাথে ম্যাচিং করে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে বেড়োলো" --রাত প্রায় নয়টা বেজে চলেছে ইরফান মাহি কে নিয়ে শপিংমল থেকে বেরিয়ে গেলো ফাহাদ কে কল দিলে ফাহাদ রিসিভ করে জানালো ওরা রাস্তায় আছে একটু জ্যামে আটকা পড়ে গেছে "ইরফান ফাহাদ কে একটা পরিচিত একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলে মাহি কে নিয়ে সেখানে গেলো " কিছুক্ষণ পর ফাহাদ ফাইজা কে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় "ফাইজা ও মাহি কে কাচ্ছি খাইয়ে ইরফান ফাহাদ কে দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে বলে " আমাদের হবু ভাবীর জন্য কিছু কিনা-কাটা করে দিয়ে আসি তুই ওদের নিয়ে যা! ~"ফাইজা মুখছোট করে বললো "ভাইয়া লিসা আপু কে কবে বাসায় নিয়ে আসবা "! " ~ইরফান মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করে বলে, ঈদ এর পড়েই নিয়ে আসবো। "আচ্ছা বিয়ে কোন বাসা তে হবে " উদাসীন ভঙ্গিতে বললো ফাইজা। মাহি চুপচাপ নিরব হয়ে ওদের কথা শুনছে। "~কোন বাসাতে হলে খুশি হবি..! -" আমাদের বাসায় হবে খুব ভালো হবে.. খুব খুশি হবো আমরা "তাই না আপু বলো " মাহির দিকে তাকিয়ে কথা টা বলে ফাইজা! "মাহি এক চিলতে হাঁসি দিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। --ইরফান আবেগি কন্ঠে বললো " তোদের খুশি দেখতে সব শর্ত কবুল । -- ফাইজা উল্লাসে চেচিয়ে উঠলো ইএএএএ! Thank you ভাইয়া। --বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশ টা বেজে গেলো ফাইজা রুমে চলে গেলো মাহি রুমে প্রবেশ করার আগে দেখলো ফাহাদ এর হাতে দুটি শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে যাচ্ছে "মাহি তেমন কিছু না ভেবে রুমে চলে গেলো। চলবে....?