পারমিতা পর্ব-০৫

0
75

#পারমিতা
#পর্ব_৫
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

প্রতিটা মানুষের জীবনে একবার করে হলেও এরকম একটা সিচুয়েশনর সম্মুখীন হতে হয় যেখানে নিজের দোষ নেই জানা সত্ত্বেও নিজেকে সব থেকে বড় দোষী মনে হয়।

ইন্টারে পড়ুয়া পারমিতা কাজিনদের মধ্যে বয়সে সবার ছোট হলেও বুদ্ধি আর জ্ঞানে কারো থেকে কম নয়। আফরিনের চলে যাওয়াতে যে পারমিতার কোনো হাত বা দোষ নেই তা পারমিতা নিজেও ভালো করে জানে কিন্তু তাও কেনো যেন নিজেকে বার বার দোষী মনে হচ্ছে। প্রতিটা মুহুর্তে মনে হয় ” তখন যদি আমি না করে দিতাম তাহলে?? তাহলে হয়তো সব ঠিক থাকতো।”

সবাই মিলে বাড়িতে আসতে আসতে সকাল হয়ে গিয়েছে। ওয়াহিদ চৌধুরীর গাড়ি পার্ক করতেই পিছনে হাবিব চৌধুরীর গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে পারমিতা আর আবরার নেমে অপেক্ষা করে সবার নামার জন্য। গাড়ি থেকে সবাই সরাসরি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। গাড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পারমিতার দিকে কিছুক্ষণ মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে আবরার।

–মন খারাপ করিস না, আফরিন ভাবিকে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আব্বু আর চাচ্চু।

–হুম।

–চল ভিতরে চল।

পারমিতার কাধে হাত রেখে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায় আবরার। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। মায়া চৌধুরীর দিকে কেনো মুখ তুলে তাকাতেও পারছে না মিতা।

–আমি আইজিপি এর সাথে কথা বলেছি, যেভাবে যা করার সব করেই আফরিন আর ঐ ছেলেকে খুজে বের করবে বলে জানিয়েছে।
বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–এই মেয়েকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
রাগ হয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ড্রয়িং রুমের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিতা, আবরার গিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসেছে। বিয়ের প্রোগ্রাম নিয়ে গত ৮/১০ দিন ধরে ঝড় যাচ্ছিলো আবরারের উপর। মনে হচ্ছে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। মিতা একবার চোখ বুলিয়ে পুরো বাড়িতে অরিয়নকে খুজতে থাকে কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। “তবে কি নিজের রুমে? ” মনে মনে ভাবে মিতা।

–অরিয়ন কোথায়??
পানি নিয়ে আসা কাজের মেয়ে শায়লাকে দেখে জিজ্ঞেস করে আনিকা চৌধুরী।

–ছোট স্যার তো বাসায় আসে নি ম্যাম।
জবাব দেয় শায়লা।

–আসেনি মানে? ভোরে আসেনি?? চেক করেছিলে সব কিছু??
চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করে আনিকা চৌধুরী।

–জি ম্যাম। সকাল বেলাই সবার বেডরুম রেডি করে এসেছি তখনও দেখিনি স্যারকে।
আবারও বলে শায়লা।

আনিকা চৌধুরী আর কোনো কথা না বলে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে করতে নিজের রুমে চলে যান।

–আমাদের ক্ষমা করবেন হাবিব ভাই, জীবনেও ভাবতে পারিনি এরকম একটা সিচুয়েশনে আফরিন আমাদের সবাইকে রেখে পালিয়ে যাবে।
কথাটা বলতেই চোখ ভিজে আসে মায়া চৌধুরীর।

মিতা মায়া চৌধুরীর অবস্থা দেখে তার পাশে গিয়ে বসে। নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মায়া চৌধুরীকে।

–তুমি কান্না করো না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ভরসা দিয়ে বলে মিতা।

–কিছুই ঠিক হবে না মিতা।
জবাব দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আমার মনে হয় দু একদিন তোরা এখানে থেকে গেলে ভালো হবে। মিতা আর অরিয়নের ব্যাপারটা একটু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য।
ওয়াহিদ চৌধুরীর হাতে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।

ওয়াহিদ চৌধুরী বড় ভাইয়ের কথা শুনে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকায়। মায়া চৌধুরীরও মত আছে বুঝতে পারলে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–শায়লা, ওয়াহিদের রুম খুলে দেও।

–জি স্যার।

কথাটা বলেই হাবিব চৌধুরী নিজের রুমে যান।

–তুমি একটু রেস্ট করে নেও মায়া।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–হ্যাঁ মা, বাবা ঠিক বলেছে। তুমি একটু রেস্ট নিয়ে নেও।

–তুই ও নিয়ে নে মিতা। আর পারলে…পারলে আমাকে মাফ করে দিস।
কথাটা বলেই সোফা থেকে উঠে চলে যায় মায়া চৌধুরী।

–আমাকেও মাফ করে দিস মিতা, আমি যে নিরুপায় ছিলাম।

–বাবা, এভাবে বলো না প্লিজ। তোমরা আমার জন্য যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছো আর তাতে আমি একটু ও কষ্ট পাইনি।
ওয়াহিদ চৌধুরীর হাত ধরে বলে মিতা।

–যা হয়েছে তা কারো জন্যই ভালো হয়নি মিতা, তবে সব কিছু বাঁচানোর জন্য এই একটা পথই খোলা ছিলো আমাদের।
মাথা নিচু করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

মিতা কিছু বললো না। কি বলবে তা জানা নেই। যা হয়েছে তা যে ভালো হয়নি তা মিতা নিজেও ভালো করে জানে।

–রেস্ট করে নে।
মিতার মাথায় হাত দিয়ে কথাটা বলেই চলে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

চেয়ারে বসা আবরার সব কিছু চুপচাপ দেখে গেলো। ওয়াহিদ চৌধুরীকে চলে যেতে দেখলেই ধীরে পায়ে হেটে এসে মিতার পাশে গিয়ে বসে।

–অরিয়ন ভাইয়া আফরিন ভাবিকে ভালোবাসে কথাটা সত্যি..

আবরারের কথা শুনে মিতা তাকিয়ে থাকে আবরারের দিকে। কি বলতে চাচ্ছে তা বোঝার জন্য।

–তবে..আফরিন ভাবি যদি একবার বলতো উনি অন্য একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে তাহলে ভাইয়া ভাবিকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিয়ে দিতো।

–হুম।
আবরারের কথায় সায় দেয় মিতা।

বর্তমান যুগে অরিয়নের মতো ছেলে পাওয়া ভাগ্যের বেপার। এক কথায় বলা যায় একটা জলন্ত গ্রীনফ্ল্যাগ হচ্ছে অরিয়ন।

–তবে আফরিন ভাবি লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করবে তা বিশ্বাস হচ্ছে না। কাজটা উনি ভালো করেন নি, ভাইয়াকে ভেতর থেকে একদম ভেঙ্গে দিয়েছে।
কথাটা বলতেই যেন মন খারাপ হয়ে আসলো আবরারের।

–তুই এই বিয়ে নিয়ে অযথা টেনশন করিস না। সব ঠিক হলে দেখবি অরিয়ন ভাইয়া সব সমাধান করে দিবে। আর তুই…তুই নিজেও একটা ভালো ছেলের সাথে জীবন শুরু করতে পারবি যে তোকে ভালোবাসবে।
মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে আবরার।

“আমি তোকে খুব ভালো রাখবো মিতা” মনে মনে বলে আবরার।

মিতা আবরারের কথার কোনো উত্তর দিলো না। মৃদু এক হাসি দেয়।

****************

রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। এই রুম মিতার খুব পরিচিত। অনেক রাত এই রুমে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে মিতা আর আফরিন। এই বাড়িতে বেড়াতে আসলেই এই রুমটা সব সময় আফরিন আর মিতার জন্য গুছিয়ে রাখা হতো। তাই হাবিব চৌধুরী শখ করে রুমটা ওদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়েছিলো।

নিজের কোনো মেয়ে নেই বলে হাবিব চৌধুরী সর্বদাই মিতা আর আফরিনকে নিজের মেয়ের মতো আদর করে গেছে। যার কারণে এই বাড়ির কিছু দেখলে বা বেড়াতে আসলে কখনো ওদের দুজনের মনে হয়নি এটা নিজের বাড়ি নয়।

আস্তে আস্তে হেটে বিছানায় গিয়ে বসে মিতা। বেডের পাশে থাকা ছবির ফ্রেমটা হাতে তুলে নেয়। ছবিতে মিতা আর আবরার হাটু ভেঙ্গে নিচে বসে আছে, মুখে বিশাল এক হাসি দুজনের। মিতার পিছনে আফরিন আর আফরিনের পাশে অরিয়ন। আফরিন নিজের এক হাত দিয়ে মিতাকে ধরে রেখেছে অন্য হাত দিয়ে নিজের গাল স্পর্শ করে জিহবা বের করে দেখাতে ব্যস্ত। পাশে বসে থাকা অরিয়নের এক হাত প্যান্টের পকেটে অন্য হাত আবরারের কাধে। কিন্তু ছবিতে অরিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে। অরিয়নের চোখে যেন শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।

“কি করে পারলি তুই আপু?? সত্যি কি তুই কাউকে ভালোবেসে ন্যায়, অন্যায় সব ভুলে গেলি?? এই মানুষটকে কীভাবে ছেড়ে দিতে পারলি তুই??” ছবিতে থাকা আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

কেনো যেন বাসর ঘরে আর কুমিল্লাতে দেখা অরিয়নের চেহারা ক্ষণিকের জন্যও ভুলতে পারছে না মিতা। কতটা অসহায় লেগেছিলো অরিয়নকে। মনে হচ্ছিলো কেউ কারো বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটা কেরে নিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই মিতার চোখে পানি চলে আসে।

“কাজটা তুই ভালো করিসনি আপু, ভালো করিসনি” বার বার কথাটা বলতে বলতে ছবির ফ্রেমসহ বিছানায় শুয়ে পড়ে মিতা।

***************

২ দিন পর।

–জানোয়ারগুলোর মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করো রাজিব।

–না, না। আমি শুধু চাই নিউজ থেকে এসব কিছু সরিয়ে দেওয়া হোক।

–এক কাজ করো তুমি, যেকোনো সামাজিক ফাউন্ডেশনে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান দিয়ে তা নিউজে দিয়ে দেও, মানুষ তাহলে এসব ভুলে যাবে।

মোবাইলে নিজের পিএ এর সাথে কথা বলছিলেন হাবিব চৌধুরী। তখনি হাতে কফি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আনিকা চৌধুরী।

–তোমার কফি।
হাবিব চৌধুরীর সামনে ধরে বলে আনিকা চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরী চোখের ইশারায় বোঝায় টেবিলে রাখতে। আনিকা চৌধুরী তাই করলো। অপেক্ষা করতে থাকে কথা শেষ হওয়ার।

–কি হয়েছে??
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–মোবাইল নেও নি সকাল থেকে??
উলটো প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–না কেনো??
কথাটা বলেই মোবাইল হাতে তুলে নেয় আনিকা চৌধুরী।

–নিউজ দেখো।
কফি হাতে নিতে নিতে বলে হাবিব চৌধুরী।

নিউজ চ্যানেলে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় শিরোনামে বড় করে লেখা : বিশিষ্ট শিল্পপতি হাবিব চৌধুরীর ছেলে অরিয়ন আফনান চৌধুরী প্রেম করেছেন চাচাতো বোন মেহেরিন আফরিন চৌধুরীর সাথে কিন্তু বিয়ে করেছেন আরেক চাচাতো বোন পারমিতা মেহরোজ চৌধুরীকে কারণ কি? অর্থ?? বড়লোকদের কাছে বেশি মূল্যবান কি ভালোবাসা নাকি অর্থ??

চোখে দেখে যেন নিজের ই বিশ্বাস হচ্ছে না আনিকা চৌধুরীর। বড় বড় চোখ করে তাকায় হাবিব চৌধুরীর দিকে।

–ওরা সাহস করলো কীভা..

–আমার রাইভালের কাজ এটা। ওদের লোক দিয়ে এই নিউজ ছাপিয়েছে।
দাঁত কিরমির করে বলে হাবিব চৌধুরী।

–এখন??

–এখন কিছুই না। এসব কিভাবে সামলাতে হয় সব জানা আছে আমার।

–অরিয়নের কি খবর??
বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–জানিনা। তোমার ছেলে যোগাযোগ করছে না। রাজিব থেকে জানতে পেরেছি ফার্ম হাউজে আছে।
জবাব দেয় আনিকা চৌধুরী।

–আচ্ছা অকে কিছুদিন সময় দেও সব সামলে নিতে।

–হুম।

–আমি যাচ্ছি।
কফির কাপ রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।

–আচ্ছা।

****************

অরিয়নের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। শায়লা ভুল করে মিতার একটা ব্রিফকেস অরিয়নের রুমে রেখে দিয়েছে এটা ভেবে যে মিতা এখন থেকে অরিয়নের রুমে থাকবে।
সেই ব্রিফকেস নিতেই এসেছে মিতা কিন্তু রুমে কেউ নেই জেনেও ভয় লাগছে মিতার।

এই দুইদিনে অরিয়ন বাড়িতে ফিরেনি। কেমন আছে, কোথায় আছে, কী করছে তা জানেনা মিতা। আফরিনের থেকে বিচ্ছেদ হওয়াটা মেনে নিতে পারছে না অরিয়ন। ধীরে ধীরে হ্যান্ডেল ধরে লক খুলে ভেতরে ঢুকে মিতা।

রুমটা যেমন দেখে গিয়েছিলো ঠিক তেমনই আছে। অরিয়নের রাগে যে ফ্রেমটা ভেঙ্গেছিলো সেটা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। পরিপাটি রুমটায় আজ আফরিন থাকতো যদি সব ঠিক থাকতো। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্রিফকেসটা খোজার চেষ্টা করে। ড্রেসিং টেবিলের এক পাশে গিয়ে চোখ আটকায় মিতার। কালো রঙের ব্রিফকেসটা একপাশ করে রাখা। দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে হেটে ব্রিফকেসটা হাতে নিতেই চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা ফুলের দিকে। গোলাপ ফুল।

গোলাপ আফরিনের পছন্দ না তা মিতা ভালোই জানে। তবে অরিয়নের পছন্দ বলে কখনো মুখ ফুটে আনতে না করেনি আফরিন। সব সময় আফরিনের আশেপাশে ফুল দেখাটা যেন একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিলো মিতার।

ফুলটা দু দিন আগের। হয়তো এক ফাঁকে অরিয়ন রেখে গিয়েছিলো যেন আফরিন রুমে আসলেই দেখতে পায় তাই। তাজা ফুল তার নিজস্ব রঙ হারিয়েছে, হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। শুকিয়ে যাওয়া ফুলটা হাতে তুলে নেয় মিতা। ধীরে ধীরে নিজের কানের কাছে নিয়ে নিজের চুলে গুজে দেয় ফুলটা।

দরজা খোলার শব্দে চমকে যায় মিতা। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। পরণে কালো শার্ট আর প্যান্ট। উপরের বোতাম দুটো খোলা। চুলগুলো এলোমেলো। চোখ দেখে মনে হচ্ছে ঘুমায় না অনেকদিন। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অরিয়নের অবস্থা দেখে যেন বুকের মধ্যে কেমন এক অদ্ভুত ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো মিতার।

–তুই এখানে।
মিতাকে দেখে অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।

–এটা নিতে এসেছিলাম।
ব্রিফকেস দেখিয়ে বলে মিতা।

অরিয়ন আর কিছু না বলে হেটে বিছানার গিয়ে বসে। মিতাও ব্রিফকেস হাতে নিয়ে হাটা শুরু করে।

–পরী।
নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ডাক দেয় অরিয়ন।

–জ্বি?
অরিয়নের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় মিতা।

–সেদিন যা বলেছিলাম তার জন স..
কথাগুলো বলতে বলতেই মাথা তুলে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।

ক্ষণিকেই যেন চেহারা ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে গেলো অরিয়নের। দু কদমে হেটে চলে আসে মিতার কাছাকাছি।

–উফফ..

এক টানে মিতার চুল থেকে টান দিয়ে ফুলটা সরিয়ে নেয় অরিয়ন।

–এতো বড় সাহস তোর, আফরিনের জিনিসে হাত দিস তুই।
মিতার বাহু ধরে চেচিয়ে বলে অরিয়ন।

–আমি…আমি শুধু দেখ…দেখছিলাম।
কাঁপতে কাঁপতে বলে মিতা।

–খবরদার যদি আফরিনের কিছুতে হাত দিয়েছিস। ঐগুলো শুধুমাত্র ওর জন্য।

–হ্যাঁ।
মাথা নিচু করে বলে মিতা।

–আর কখনো ওর কিছুতে হাত দিতে দেখলে ভুলে যাবো তোকে আমি স্নেহ করি তা। আমার পছন্দ না কেউ ওর জিনিসে হাত দিক।

–আর দিবো না অরিয়ন ভাইয়া, ব্যাথা লাগছে।
কথাটা বলতেই কেঁদে দেয় মিতা।

মিতার কথা শুনে বুঝতে পারে মিতার বাহুতে নিজের শক্তি প্রয়োগ করছে অরিয়ন। নিজের হাত ছেড়ে দিয়ে মিতার হাত ধরে একহাত দিয়ে অন্য হাত দিয়ে ব্রিফকেস নিয়ে হাটতে শুরু করে অরিয়ন।

–নেক্সট টাইম থেকে অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করবি না।
কথাটা বলেই ব্রিফকেস বাইরে রেখে মিতাকেও বের করে দেয় অরিয়ন।

মিতার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয় অরিয়ন। দরজার এপাশে থাকা মিতার চোখে সব কিছু কল্পনা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। মিতার সেই অরিয়ন ভাইয়া কোথায় গেলো?? এতো রাগ, ঘৃণা কোথা থেকে আসলো অরিয়নের মধ্যে??

এসব কিছুর থেকেও যা মিতাকে একটু ও শান্তি দিচ্ছে না তা হলো অরিয়নের চেহারায় ভেসে থাকা কষ্ট, ধোকা আর অসহায়ত্বতা।

চলবে….