পারমিতা পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
103

#পারমিতা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

মিতা বিছানায় শুয়ে নিজের হাতের কব্জির দিকে তাকিয়ে আছে। শক্ত করে চেপে ধরাতে অরিয়নের আঙ্গুলের ছাপ বসে রয়েছে। অরিয়নের এই রূপটা তো কোনদিন দেখেনি মিতা। আফরিনের শরীরে কোনোদিন কোনো ফুলের টোকাও দিতে দেখেনি মিতা। “আমি আফরিন না তাই?” কথাটা বিরবির করে বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মিতা।

“ভালোবাসলে কি এতোটাই কষ্ট হয়? তার অবহেলা কেনো সহ্য করা যায় না?” ভাবতে থাকে মিতা।
” আফরিনের সাথে অরিয়নের সম্পর্ক ৬ বছরের ছিলো মিতা, ও কীভাবে সহ্য করছে আফরিনের চলে যাওয়া? তাও অন্যের সাথে?তোর কষ্ট কি ওর থেকেও বেশি?” নিজের মন প্রশ্ন করে মিতাকে। “আমি সব জানি, আমি জানি আপুকে ভুলা সম্ভব নয়, আমি ভুলে যেতে বলছিও না। আমি শুধু বলছি তুমি মুভ অন করো, যেভাবে আপু করেছে, তোমার মনের কোণে আমাকে একটু জায়গা দাও” নিজের মনের করা প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজেই দেয় মিতা।

ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ বন্ধ হতেই নিজের চোখ মুছে উঠে বসে মিতা। গতকাল রাতে ক্লান্ত থাকার কারণে রুম বা আশে পাশের কিছুই ভালো ভাবে খেয়াল করেনি মিতা। তবে এখন যখন বিছানায় উঠে বসলো তখন সব কিছু একবার ভালো করে দেখে নিচ্ছে। রুমটা আকারে অনেক বড়। ডাবল বেড, ড্রেসিং টেবিল, কাপড় রাখার জন্য আলমারি, একপাশে সোফা সেট রাখা। রুমের দেওয়াল গ্রে কালারের। বেড সীট থেকে শুরু করে সব আসবাবপত্র সাদা রঙের। রুমের আসবাবপত্র আর ইন্টোরিয়র দেখে মনে হচ্ছে রুমটা সাজানো হয়েছে ১৮শতকের থিমে। একেবারে পুরাতন ডিজাইনের নয় আবার একদম নতুন ও নয়। রুমটা একটা এলিগেন্ট এলিগেন্ট ভাব দিচ্ছে।

অরিয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও আর না তাকিয়ে সরাসরি নিজের কাপড় নিতে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেবি ব্লু কালারের শার্ট আর নেভি ব্লু কালারের প্যান্ট বের করে পরে নেয়। মিতা আড় চোখে দেখছে অরিয়ন কি করছে। অরিয়নের কাপড় পরা হলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আচরিয়ে নেয়। সোফার পাশেই রাখা টেলিফোন নিয়ে কল দেয় অরিয়ন।

–Bonjour, service en chambre ?
(হ্যালো, রুম সার্ভিস?)

–Je veux commander le petit-déjeune.
(ব্রেকফাস্ট অর্ডার করতে চাই)

–405.

–Un verre de lait, des crêpes, une omelette aux œufs, des fruits et de l’eau.
(এক গ্লাস দুধ, প্যানকেকস, ডিমের অমলেট, ফল এবং পানি)

অরিয়ন ফোনে কি কথা বললো মিতা কিছুই বুঝেনি। তবে এটা ফ্রান্সের ভাষাই হবে বলে মনে হচ্ছে মিতার। অরিয়ন অন্য ভাষা বলতে পারে সে সম্পর্কে কোনো আইডিয়াও ছিলো না মিতার। সব থেকে বড় কথা ভাষাটা যেন একদম বেমানানও লাগলো না অরিয়নের মুখে।

অরিয়ন ফোন রেখে কোনো কথা না বলে আবারও আলমারি থেকে নিজের জ্যাকেট বের করে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। এই অচেনা শহরে বা এই রুমে মিতা কি করবে তা যেন একবারও ভাবলো না অরিয়ন।

অরিয়ন রুম থেকে বের হতেই মিতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে যেতে দু পা এগোতেই আবারও দু পা পেছনে এসে সামনের দিকে তাকাতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো মিতার। সামনের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে প্যারিসের সেই বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার। ছবিতে না যত সুন্দর লাগতো এই দিনের আলোতে জানালা থেকে দেখতে তা যেন আরও হাজারগুন বেড়ে গেলো। গতকাল রাতে রুমে প্রবেশ করে কোনোদিকে তাকানোর সুযোগ হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিতা কিন্তু আজ চোখের সামনে সব স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছে।

জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে আশে পাশের জায়গা গুলো ভালো করে দেখে নিচ্ছে মিতা। সামান্য রাস্তাঘাটও এতোটা সুন্দর হতে পারে তা জানা ছিলো না মিতার। সবকিছু যেন শিল্পীর আকাঁ ছবি মনে হচ্ছে।
দরজায় নক করতেই ঘোর কাটে মিতার। অরিয়ন ভেবে দরজা খুলতে চলে যায় মিতা। দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পায় সুদর্শন এক পুরুষকে। লোকটির পরনের পোশাক দেখে বুঝতে পারে সে এই হোটেলের একজন। হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রে তে কি আছে তা দেখা যাচ্ছে না।

–Bonjour. Your breakfast mam.
মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে লোকটি।

ব্রেকফাস্ট? মিতা তো কোনোকিছু অর্ডার করেনি। পরক্ষণেই মনে পড়ে অরিয়ন ফোন করেছিলো। তাহলে হয়তো দু জনের জন্য ব্রেকফাস্ট আনিয়েছে, ভাবে মিতা।

–May i?
মিতা কিছু বলার আগেই লোকটি রুমে ট্রে নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি চায়।

মিতা মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দেয়। ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করে সোফার সাথে রাখা টি টেবিলের কাছাকাছি ট্রে রাখে লোকটি।

–Thank you mam.

আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় লোকটি। রুমের দরজা আটকিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় মিতা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ট্রে যেমন ছিলো তেমন ই রাখা দেখে বুঝতে পারে অরিয়ন আসেনি। অরিয়ন আসলে একসাথে খাওয়া শুরু করবে বলে বেলকনিতে রাখা সোফায় গিয়ে বসে মিতা। ডিসেম্বরের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া এক অন্য রকম অনুভূতি দিচ্ছে। বড়দিন উপলক্ষে আশে পাশের সব কিছু খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, তা এখন সোফায় বসে বসে খেয়াল করলো মিতা।

মোবাইলে কল বাজতেই আশপাশ থেকে নিজের ধ্যান সরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায় মিতা। মায়া চৌধুরী কল করেছে।

–হ্যালো, মা।

–আমি ভালো আছি, তুমি আর বাবা কেমন আছো?

–না তেমন খারাপ লাগেনি, অরিয়ন ভাইয়া আমাকে দেখে রেখেছিলো।

–হ্যাঁ আনন্দ করবো, হ্যাঁ হ্যাঁ পিকও পাঠাবো।

–ওকে মা, আল্লাহ হাফেজ।

কল কেটে মিতা কতক্ষণ সোফায় বসে সব কিছু দেখতে ব্যস্ত ছিলো জানেনা। শুধু জানে পেটে প্রচন্ড খুদা আর অরিয়নেরও আসার কোনো নাম নেই। নিজের জায়গা থেকে উঠে ট্রে থেকে ঢাকনা সরাতেই যেন মন ভেঙ্গে গেলো মিতার। আর কতবার মন ভাঙ্গবে মিতার? ট্রে তে খাবার শুধু একজনের। তার মানে অরিয়ন রুমে মিতার সাথে খাবে না তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।

নিজে নাস্তা শেষ করে বসে রইল মিতা। দুপুরে দরজায় নক শুনতেই অরিয়ন এসেছে ভেবে দৌড়ে দরজা খুলে মিতা। দুপুরের খাবার নিয়ে আবারও এসেছিলো লোকটি, যাওয়ার সময় সকালের ট্রে নিয়ে গেছে।

“কেয়ার যখন করোই না, তাহলে খাই না খাই তার এতো চিন্তা কেনো” মনে মনে ভাবে মিতা। দুপুরে একা একাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মিতা। অচেনা শহরে আর কি করবে জানেনা। যেমন রাগ হচ্ছে তেমন ইচ্ছে করছে অরিয়নকে কামড়ে ধরে ইচ্ছামতো শাস্তি দিতে।

রুমের মধ্যে শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা। সোফায় বসে নিজের জুতার ফিতা খুলতে ব্যস্ত অরিয়ন। “দরজা তো লক? তাহলে কি চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে এসেছে?” ভাবতে ভাবতে জানালার দিকে তাকায় মিতা। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে না। “সন্ধ্যা হয়ে গেলো আর বুঝতেই পারলাম না?” মনে মনে ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা।
অরিয়নের সামনে গিয়ে কোমরে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অরিয়ন মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার অভিনয় করে নিজের জুতা খুলে একপাশে রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে টিপতে থাকে।

মিতাও কিছু না বলে ভ্রু কুচকে, দাঁতে দাঁত চেপে অরিয়নের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল।

–কি হয়েছে? ঘাড়ের উপর এসে দাঁড়িয়েছিস কেনো?
মিতাকে আর ইগনোর করতে না পেরে শেষমেষ মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

মিতা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ গম্ভীর করে নিজের দু হাত দিয়ে অরিয়নের চুলগুলো মুঠকরে ধরে টানতে থাকে রাগে।

–কি হয়েছে জানোনা? কেনো দাঁড়িয়েছি বলছি দাঁড়াও।
রাগন্ত মিতা চুল টানতে টানতে বলে।

মিতার এহেন কাজে যেন অপ্রস্তুত হয়ে পরে অরিয়ন। মিতা এমন কিছু করবে তা ভাবতেও পারেনা অরিয়ন। নিজের মাথায় ব্যাথা অনুভব করতেই নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত ধরে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে অরিয়ন।

–কি করছিস ছাড়, ছাড় বলছি পরী।
নিজের হাত দিয়ে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন।

–সারাদিন আমি রুমের মধ্যে বন্ধি ছিলাম।
কথাটা বলে আরও জোরে চুল টানতে থাকে মিতা।

অরিয়ন আর মিতার টানাটানিতে সোফায় বসে থাকা অরিয়নের কোলের উপর উঠে বসেছে মিতা। তাও চুল ছাড়াতে পারছে না অরিয়ন।

–ছাড় বলছি পরী, না হয়..না হয়।
কথাটা বলেই নিজের ডান হাত দিয়ে পরীর চুল মুঠ করে টেনে ধরে অরিয়ন।

মিতা এবার নিজের মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলেও অরিয়নের চুল ছাড়লো না।

–ছাড়, না হয় কীভাবে ছাড়…
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিয়নের কানের নিচের দিকে গলায় কামড় বসিয়ে দেয় মিতা।

–ফা**
মিতার চুল শক্ত করে টেনে ধরে গোংরানি দিয়ে উঠে অরিয়ন।

অরিয়নের এতোক্ষণ চুল ছাড়ানো যেন সবটাই অভিনয় ছিলো, মিতার হাত নিমিষেই চুল থেকে ছাড়িয়ে মিতাকে সোফার উপর ঠাস করে শুয়িয়ে দেয়। পরক্ষণেই নিজের হাত দিয়ে মিতার মুখ চেপে ধরে। রাগন্ত চোখে মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতাও যেন অরিয়নকে দেখে ভয় পেলো না, রাগে গা শিরশির করছে মিতার। নিজেও রাগন্ত চোখে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে।

–এতো বড় সাহস তোর।
মিতার দু গাল নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে অরিয়ন।

–যা করেছি বেশ করেছি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে মিতা।

মিতার সাহস দেখে যেন অরিয়নের রাগ আরও বেড়ে গেলো। মাথায় কি চাপলো নিজেও জানে না।

–আহ..
হুট করে অরিয়ন মিতার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়, ব্যাথায় মিতাও চিৎকার করে উঠে।

এখন যখন নিজে ব্যাথা অনুভব করছে তখন ভাবছে কেনই বা অরিয়নকে কামড়ানোর বুদ্ধিটা আসলো মিতার মাথায়। রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। অরিয়নের কামড়ে মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে কেউ মাংস তুলে নিতে চাচ্ছে।
নিজের থেকে অরিয়নকে ছাড়ানোর জন্য আবারও নিজের হাত অরিয়নের পেছনের চুলগুলো শক্ত করে ধরে।

মিতার গলার মাংস দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতেই যেন মিষ্টি এক ঘ্রাণ এসে পৌঁছালো অরিয়নের নাকে। ঘ্রাণটা যেন নেশার মতো কাজ করছে হঠাৎ করে। সব কিছু যেন নিজের জায়গায় চুপ করে রইল। নিজের চুলে মিতার টান অনুভব করতেই যেন এক অন্যরকম কিছু অনুভব করতে শুরু করলো অরিয়ন। কামড়ানো জায়গায় নিজের ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করতেই নড়েচড়ে উঠে মিতা।

এতোক্ষণ যেখানে কামড়ের কারণে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছিলো মিতা এখন সেখানেই অরিয়নের চুমু দেওয়া অনুভব করছে মিতা।

–অরিয়ন?
ধীরে ধীরে বলে উঠে মিতা।

অরিয়ন যেন কিছুই শুনতে পেলো না। গলাতে একের পর এক চুমু দিয়ে যাচ্ছে।

–অরিয়ন?
আবারও ডাক দেয় মিতা।

অরিয়ন এবার একটু নড়েচড়ে উঠে। মনে হচ্ছে ডাক দেওয়াতে বিরক্ত হচ্ছে। শরীরের অঙ্গভঙ্গিতে তেমনই মনে হলো মিতার।

–অরিয়ন?
এবার জোরে ডাক দেয় মিতা।

মিতার ডাক শুনে যেন ঘোর কেটে গেলো অরিয়নের। কি করছিলো তা যেন পাথরের মতো এসে মাথায় আঘাত করলো। তার থেকে বড় কথা কার সাথে করছিলো তা। এক লাফে মিতার উপর থেকে উঠে গিয়ে সোফার এক কর্ণারে গিয়ে বসে অরিয়ন।

অরিয়ন সরে যেতেই মিতাও উঠে বসে সোফাতে। এক কর্ণারে বসে থাকা অরিয়নের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পায় নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে সোফা ধরে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরা, মাথা আর গলার রগগুলো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে রাগ উঠার কারণে।

–রেডি হয়ে নে।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।

–কেনো?
জিজ্ঞেস করে মিতা।

–কেনো জানিস না? এখানে এসেছি কি কামড়াকামড়ি করতে? বাইরে বের হবো তাই।
রাগ হয়ে চেচিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।

রাগটা কি মিতার উপর হচ্ছে নাকি নিজের উপর তা নিজেই বুঝতে পারছে না অরিয়ন।

মিতার আর কোনো কথা না বলে নিজের জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

****************

মিতা আর অরিয়ন যখন হোটেল থেকে বের হলো তখন রাত হয়ে গিয়েছে। মিতা জিন্স, টপস আর ওভারকোট পরে বের হয়েছে। হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা পড়ায় ওভারকোট পরতে হয়েছে। ভীরের মধ্যে এক পাশ করে হাটতে হাটতে আশেপাশের সব কিছু আগ্রহ নিয়ে দেখছে মিতা।

কোথায় যাচ্ছে তা মিতা ভালোই জানে। ডিসেম্বরে প্যারিসে প্রচুর ভীর হয়। যার কারণে গাড়ি নেওয়ার থেকে কাছের পথ হাটা বেস্ট। তাই অরিয়ন আর মিতা হাটা শুরু করেছে আইফেল টাওয়ার এর উদ্দেশ্যে। বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হওয়ার সময় জানালার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পায়, রাতের আইফেল টাওয়ার। যার সৌন্দর্য বর্ণনা করা কথায় অসম্ভব। হঠাৎ করেই কয়েক মিনিটের জন্য পুরো আইফেল টাওয়ারের লাইট গুলো ক্রমাগত জ্বলতে ও নিভতে থাকে, যার কারণে আইফেল টাওয়ার দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগে।

রাস্তায় হাটতে থাকা মিতা যতো হাটছে ততোই আইফেল টাওয়ারের কাছাকাছি যাচ্ছে। মিতার পিছনে হাটতে থাকা অরিয়নের দৃষ্টি যেন ক্ষণিকের জন্যও মিতার থেকে সরছে না। মিতার হাত, চোখ যেখানে যেখানে যাচ্ছে অরিয়নের দৃষ্টিও যেন সেখানে সেখানে যাচ্ছে। আনমনে হাটতে থাকা মিতা পেছনের দিকে তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নেয় অরিয়ন।

এই প্রথমবার, অরিয়নের সামনে হাটতে থাকা পরীকে দেখে মনে হয়নি, সেই ৫ বছরের ছোট পরী হাটছে। মনে হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারী হাটছে। যেই নারীর দিকে আকর্ষণ নিয়ে কোনো পুরুষ তাকাতে পারে।

সব কিছু থেকে বেখবর মিতা লক্ষ্য করেনি,গম্ভীর মুখ করা চেহারায় এক অজানা হাসি ফুটে উঠেছে।

চলবে…….

#পারমিতা
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

মিতা হোটেল থেকে কতক্ষণে হেটে আইফেল টাওয়ারের সামনে এসেছে তা খেয়াল করার সময় পায় নি। চারিদিকের সৌন্দর্য দেখে যেন এক মিনিটের জন্যও চোখ সরাতে পারছে না। আইফেল টাওয়ারের একটু কাছাকাছি আসতেই আলোক সজ্জা আবারও জ্বলতে শুরু করেছে। যেমনটা মিতা হোটেলে রেডি হওয়ার সময় ও দেখেছিলো।

আবারও আলোক সজ্জা হতে দেখেই কাধ ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়ি করে মোবাইল বের করে নেয় মিতা। উদ্দেশ্য সুন্দর কিছু ছবি তুলে রাখা, নিজের ফ্রেন্ডদের আর মায়া চৌধুরীকে পাঠাতে হবে। মোবাইলের ক্যামেরা অন করতেই নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে মিতা। ঘুরে তাকাতেই অরিয়নকে দেখতে পায়। অরিয়নের দিকে তাকাতেই অরিয়ন মিতার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়।

–কি? ছবি তুলবো তাড়াতাড়ি দেও।
বিরক্ত হয়ে বলে মিতা।

মিতা যেন এক মিনিটের জন্যও অপেক্ষা করতে পারছে না। অধৈর্য্য হয়ে পরছে।

–কি হলো দেও, এখনি আবার বন্ধ হয়ে যাবে এরকম করা।
রাগে হাত পা অরিয়নের দিকে ছুড়ে দিতে দিতে আইফেল টাওয়ারের দিকে তাকায় মিতা।

–বিনা অনুমতিতে আলোক সজ্জার সময় ছবি তোলা নিষেধ।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–কিহ?
অবাক হয়ে বলে মিতা।

–হ্যাঁ। এটা ওদের নিয়ম।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–ধুর, এখন?
মন খারাপ করে বলে মিতা।

–এখন কিছু না, অনুমতি নিয়ে পিক তুলে দিবো।
বলে অরিয়ন।

–সত্যি?
খুশি হয়ে বলে মিতা।

–হ্যাঁ, তবে আজ না।

–কেনো?
মন খারাপ করে জবাব দেয় মিতা।

–কারণ কাল আবার আসতে হবে, টাওয়ারের উপরে উঠবি না?
মিতার মোবাইল নিজের পকেটে ঢুকিয়ে হাটতে হাটতে বলে অরিয়ন।

–আইফেল টাওয়ারের উপরে উঠা যায়?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–হ্যাঁ।

–তাহলে এখন কোথায় যাবো আমরা?
অরিয়নের পিছন পিছন হাটতে হাটতে বলে মিতা।

–আশপাশ ঘুরে দেখবি এরপর ডিনার করবি এরপর চলে যাব।
বলে অরিয়ন।

*****************

রেস্টুরেন্টে বসে আছে মিতা। ওয়েটার একে একে খাবার দিয়ে গেছে। হাতে চামচ নিয়ে খাবারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিতা। অরিয়নকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
মিতা হঠাৎ করে চামচ নিয়ে একা একা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। রাগে মুখের মধ্যে খাবার একের পর এক নিয়ে নিচ্ছে, ঠিক মতো চাবাতেও পারছে না মিতা, তাও গিলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অরিয়ন যখন ডিনার করার কথা বলেছিলো, মিতা ভেবেছিলো একসাথে ডিনার করবে কিন্তু মিতার ভুল ভাঙ্গে যখন খাবার অর্ডার দিয়েই অরিয়ন “তুই খা,আমি আসছি একটুপর” বলেই বের হয়ে যায়। নিজের বোকামি দেখে যেন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না মিতার। ভালো নাই বাসতে পারে তাই বলে কি নর্মাল কাজিনদের মতো খাবারটাও এক সাথে খেতে পারেনি অরিয়ন?

একের পর এক খাবার মুখের মধ্যে ঢুকানোর কারণে খাবার দিয়ে গাল ফুলে আছে মিতার। দুঃখে, কষ্টে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে।

রেষ্টুরেন্টের বাইরে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। সেইন নদী ঘিরে তৈরি এই বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার দেখতে এবারই প্রথম আসেনি অরিয়ন। এর আগেও এসেছিলো, এসেছিলো নিজের হবু বউ, নিজের লাইফপার্টনার, নিজের জিএফ আফরিনকে নিয়ে। এই নদী, এই টাওয়ার, প্যারিসের এই রাস্তাঘাট যেন বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে সব কিছুতে আফরিনের ছোঁয়া রয়েছে। তার উপর পরী, পরীর মুখটা দেখলেই ইদানীং অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে অরিয়নের। চোখে ফুঁটে উঠা সেই তীব্র ভালোবাসা দেখলেই নিজেকে একটা ব্যর্থ পুরুষ মনে হয় অরিয়নের। অন্য কাউকে ভালোবাসা দেওয়ার মতো, নিজের মধ্যে আর কিছুই নেই অরিয়নের। যা আছে তা হলো শুধুই দুঃখ,কষ্ট, নিজের ভাঙ্গা মন, যেই মন ভালোবাসতে জানেনা। পরীকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে চায় না বলেই যতোটা পারছে পরীর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে অরিয়ন। সিগারেটে টান দিতে দিতেই নিজের মোবাইল বের করে অরিয়ন, গ্যালারি খুলে আফরিনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।

সিগারেট খাওয়া শেষ হতেই রেস্টুরেন্টে ফিরে আসে অরিয়ন। ভিতরে প্রবেশ করে টেবিলের কাছে পরীকে দেখতে না পেয়ে প্রথমে একটু ঘাবড়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত হয় ওয়াশরুমে গিয়েছে ভেবে। চেয়ার টেনে বসে অপেক্ষা করছে অরিয়ন। একটু পরেই ওয়েটার এসে টেবিল পরিষ্কার করতে থাকে।

–Apportez la facture.(বিলটা নিয়ে আসুন)
ওয়েটারের উদ্দেশ্যে বলে অরিয়ন।

–La facture est payée, monsieur.(বিল পরিশোধ করা হয়ে গেছে, স্যার)
জবাব দেয় ওয়েটার।

ওয়েটারের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায় অরিয়ন। “বিল পরিশোধ করলো কে? আর পরী?” কথাটা ভাবতে ভাবতেই দৌড়ে লেডিস ওয়াশরুমের কাছে চলে যায় অরিয়ন। দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কোনো মহিলার বের হওয়ার, পাশাপাশি মোবাইলে পরীকে অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে অরিয়ন। “পিক আউ দা কল, পিক আপ, পিক আপ” বিরবির করে বলতে বলতে নিজের চুল টেনে ধরেছে অরিয়ন। কিন্তু অপর পাশ থেকে কল রিসিভ হলো না। ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে ২০/২২ বছরের এক তরুণী।

–Avez-vous vu une fille à l’intérieur ? Il existe des jeans et des hauts, ainsi que des pardessus.
(ভিতরে কী একটা মেয়েকে দেখতে পেয়েছেন? জিন্স আর টপস পরা, সাথে ওভারকোটও আছে।)
মেয়েটির সামনে গিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে অরিয়ন।

–Il n’y a personne à l’intérieur.
(ভিতরে কেউ নেই)

মেয়েটির জবাব শুনেই দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পরে অরিয়ন। রাস্তা থেকে শুরু করে আশেপাশের সব জায়গায় পাগলের মতো খুজতে থাকে পরীকে।

*****************

হোটেল রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে মিতা। ওভারকোট খুলে সোফায় ছুরে ফেলে দেয়। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। বিছানার উপর বসতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

“কেনো ওদের বিয়েটা হলো না? কেনো ওর প্রতি আমার সম্মান,শ্রদ্ধাকে ভালোবাসায় রূপ দিলেন,কেনো প্রথম থেকেই ওর মনে আমার জন্য কিছু দিলেন না,কেনো ও আমার সাথে নর্মাল মানুষের মতো ব্যবহার করতে পারে না? কেন? কেন? কেন?” কাঁদতে কাঁদতে ভাবতে থাকে মিতা।
বিধাতার এই নিষ্ঠুর পরীক্ষা মিতার আর সহ্য হচ্ছে না।

” আই হেট ইউ অরিয়ন, বাট আই হেট মাইসেল্ফ মোর ফর লাভিং ইউ দিস মাচ” কাঁদতে কাঁদতে বিরবির করে বলে মিতা।

রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় অরিয়ন ছিলো না বলেই রাগ করে নিজেই হোটেলে একা একা চলে এসেছে মিতা। ভাগ্যিস বাংলাদেশ থেকে আসার সময় হাবিব চৌধুরী মিতাকে ইউরো ( ফ্রান্সের মুদ্রার নাম) দিয়ে দিয়েছিলো, তা দিয়েই বিল পরিশোধ করে চলে আসে মিতা। এতোই যখন একা একা থাকার শখ তাহলে আর কোথাও অরিয়নের সাথে যাবে না বলে ঠিক করেছে মিতা।

***************

রেস্টুরেন্ট আর হোটেলের আশেপাশে যত জায়গা আছে সব কিছু তন্নতন্ন করে খুজে ফেলেছে অরিয়ন। কম করে হলেও হাজারবার কল করেছে মিতাকে কিন্তু মিতা কল ধরেনি। একা একা চিনে হোটেলে পৌছাতে পেরেছে কি না তাও জানেনা অরিয়ন। তাড়াতাড়ি করে হোটেল রুমে প্রবেশ করতে গিয়েই সামনে হাটতে থাকা লোকের সাথে ধাক্কা খায় অরিয়ন।

–সরি, ম্যান।
তাড়াতাড়ি করে সরি বলে অরিয়ন।

–ইটস ওকে।
জবাব দেয় লোকটি।

নিজের রুমের লক খুলতে খুলতেই দেখতে পায় ধাক্কা খাওয়া লোকটি পাশের রুমে প্রবেশ করেছে।
লক খুলতেই যেন অরিয়নের রাগ আকাশ ছুয়ে নিলো। যত টেনশন ছিলো তা সব পরিনত হয়েছে রাগে। বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে মিতা।

–আর ইউ ফা*কং সিরিয়াস।
দাঁতে দাঁত চেপে রাগে মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।

দরজা খোলার শব্দেই বুঝতে পেরেছিলো অরিয়ন এসেছে। তাও রাগ করেছিল বলেই কথা বলতে ইচ্ছা করেনি মিতার। অরিয়নের কথা শুনে মোবাইল রেখে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা।

–তোকে আমি পাগলের মতো এখানে সেখানে খুজেছি, আর তুই…তুই না বলে এখানে এসে বসে আছিস।
মিতার আরও কাছাকাছি গিয়ে বলে অরিয়ন।

–ওহ, নিজেকে এখন পাগল মনে হচ্ছে?
বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জবাব দেয় মিতা।

–যখন আমাকে এই অচেনা দেশে রুমের মধ্যে একা ফেলে চলে গিয়েছিলে তখন মনে হয়নি আমার কেমন লাগবে? যখন অচেনা রেস্টুরেন্টে একটা অচেনা মানুষের মতো রেখে চলে গেলে তখন মনে হয়নি আমার কেমন লাগবে? এখন নিজের সময় নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে?
দাঁতে দাঁত চেপে মিতাও কথাগুলো বলে।

–তাই কল রিসিভ করিস নি।
শান্ত গলায় বলে অরিয়ন।

–হ্যাঁ, তাই করিনি। করিনি কারণ তোমার মতো অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।

–আমি অচেনা তোর?

–হ্যাঁ,অচেনা। তোমাকে তো চিনিনা আমি। কে তুমি? এই অরিয়ন তো আমার সেই অরিয়ন ভাইয়া না! যে আমার চোখের পানি দেখলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিতো। যে আমার সাথে একদিন কথা না বলে থাকতেই পারতো না। যে আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। তুমি আমার সেই অরিয়ন ভাইয়া নও।
কথাগুলো বলে থেমে যায় মিতা, প্রতিটা কথা যেন বার বার গলায় আটকে যাচ্ছে।

–তুমি শুধুমাত্র একজন সেলফিশ, ব্যর্থ প্রেমিক। যার কাছে আমাদের কারো মূল্য নেই।
আবারও বলে উঠে মিতা।

–কি এমন ক্ষতি করেছি আমি, হ্যাঁ? তুমি একটা নর্মাল মানুষের মতো আমার সাথে বসে খাওয়া দাওয়াও করতে পারো না? আমার সাথে বসে কথা বলতে পারো না? আই এম ইউর ওয়াইফ অরিয়ন,ওয়াইফ।
চেচিয়ে বলে মিতা।

–পরী!!
চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।

–ঐ নামে ডাকবে না আমাকে। ঐ নাম আমার কাছে এখন হাস্যকর মনে হয়।
মিতাও চেচিয়ে বলে।

–কি বললি তুই?
দু পা মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।

–বলেছি আমাকে পরী ডাকবে না। আমার নাম পারমিতা, হয় মিতা ডাকবে আর না হয় পারমিতা কিন্তু প…

অরিয়নের কি হলো জানেনা, শুধু জানে পরী ডাকতে না করাটা শুনতেই যেন মাথায় আগুন উঠে গেলো। নিমিষেই নিজের হাত দিয়ে মিতার গলা চে*পে ধরেছে দেওয়ালের সাথে।

–পরী ডাকতে পারবো না আমি? আমি…অরিয়ন.. তোর অরিয়ন ভাইয়া তোকে পরী ডাকতে পারবো না?
তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে মিতার কাছাকাছি নিজের মুখ নিয়ে বলে অরিয়ন।

–তুমি কবে থেকে আমার হলে?
তাচ্ছিল্যের সুরে মিতাও বলে।

–আমি তোর কি না তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু তুই..তুই আমার পরী।
মিতার গ*লায় প্রেসার দিয়ে চে*পে ধরে বলে অরিয়ন।

–তোর মা, তোর বাবা এমনকি তোর নিজেরও অধিকার নেই আমাকে পরী ডাকতে না করার।
মিতার নাকের সাথে নিজের নাম স্পর্শ করিয়ে বলে অরিয়ন।

গ*লায় চা*প পড়ার কারণে মিতার জন্য শ্বাস নেওয়াটা ধীরে ধীরে কষ্টকর হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তার উপর অরিয়নের কথা শুনে আর অরিয়নের চোখের দিকে তাকায়েই যেন মিতার আত্না কেঁপে উঠলো ভয়ে। নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের বুকে ধাক্কা দিতেই সরে যায় অরিয়ন।

মিতার ধাক্কায় যেন ঘোর কাটলো অরিয়নের। কি করছিলো তা যেন নিজেও জানেনা। অবাক হয়ে একবার নিজের হাতের দিকে আবার একবার মিতার দিকে তাকিয়ে রইল। মিতার মুখ থেকে গলায় দিকে চোখ যেতেই অরিয়নের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। নিজের আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট ভেসে আছে মিতার গলায়।

–আই এম সরি পরী, আই এম সো সরি, কি হলো আমি জানিনা।
নিজের হাত দিয়ে মিতার গলায় আলতো করে ছুঁয়ে বলতে থাকে অরিয়ন।

মিতা কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না। অরিয়নের এইরূপ ব্যবহার তো কখনো দেখেনি মিতা।

–হোয়াই আর ইউ বিহেভিং লাইক দিস?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–লাইক হোয়াট?
মিতার থেকে দু কদম পিছিয়ে এসে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–লাইক এ টক্সিক ম্যান।
বলে ফেলে মিতা।

অবাক হয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন।

চলবে….

#পারমিতা
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

রাত ৩ টা।

বিছানায় ঘুমিয়ে আছে মিতা। অরিয়নের সাথে আর ঝগড়া করতে মন চাচ্ছিলো না, তাই লাইট অফ করে শুয়ে পরে মিতা। ডীম লাইটের আলোতে সব কিছু পরিষ্কার দেখা না গেলেও, আবছা আবছা সব কিছুই দেখা যাচ্ছে।
সোফায় বসে আছে অরিয়ন। দু চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ঘুমন্ত মিতার দিকে।

“লাইক এ টক্সিক ম্যান”

“আমাকে পরী ডাকবে না”

“লাইক এ টক্সিক ম্যান”

“আমাকে পরী ডাকবে না”

“লাইক এ টক্সিক ম্যান”

মিতার কথাগুলো বার বার চোখের সামনে ভাসছে অরিয়নের। মিতাকে এতোটা অভিমান করতে দেখেনি কখনো অরিয়ন। মিতার এই অভিমান দেখে অরিয়নের কষ্ট পাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু মনের এক কোণে পৈঁচাশিক এক আনন্দ অনুভব করছে অরিয়ন। এই আনন্দ কেনো তা অরিয়ন জানেনা, শুধু জানে এই পৃথিবীর কারো শক্তি নেই অরিয়নকে পরী ডাকা থেকে নিষেধ করার। পরীর নিজেরও না।

সোফা থেকে উঠে মিতার দিকে এগিয়ে যায় অরিয়ন। এক মুহূর্তের জন্যও যেন মিতা থেকে চোখ সরছে না অরিয়নের। মিতার কাছাকাছি গিয়ে বসে অরিয়ন। সন্ধায় মিতার গলায় কামড় বসিয়ে দিয়েছিলো অরিয়ন, তা মনে পড়তেই নিজের হাত দিয়ে কামড়ের জায়গা স্পর্শ করে অরিয়ন। ঘুমন্ত মিতা গলায় কিছু অনুভব করতেই নড়েচড়ে ঘুমায়।

এমন নয় আজ প্রথম ই ঘুমন্ত মিতাকে দেখছে অরিয়ন, ছোটবেলায় অরিয়নের কোলে কতবার ঘুমিয়েছে মিতা তার ঠিক নেই। অরিয়নের বাড়িতে বেড়াতে আসলেও আফরিন আর মিতাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছে অরিয়ন। কিন্তু আজ, আজ এক অজানা অনুভূতি কাজ করছে মিতাকে দেখে। কেনো নিজের থেকে ১১ বছরের ছোট মিতাকে এতো সুন্দর লাগছে, কেনো মিতাকে একজন নারী হিসেবে কাছে পেতে ইচ্ছা করছে তা মাথায় ঢুকছে না অরিয়নের।

“তোমার বিচ্ছেদ কী আমাকে মানসিক ভাবে পাগল করে দিলো,আফরিন?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন।

গলার থেকে হাত সরিয়ে মিতার গাল স্পর্শ করে অরিয়ন। গালে কিছু অনুভব করতেই মিতা তাতে যেন আরও নিজের মুখ গুজে দিলো। অরিয়ন অবাক আর মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ঘুমন্ত মিতার দিকে।

“আমার পরী” বিরবির করে বলে উঠে অরিয়ন।

**************

মিতার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখনও সোফায় বসে আছে অরিয়ন। নিউজপেপার পড়তে ব্যস্ত অরিয়নের সামনে ব্রেকফাস্ট রাখা। মিতা বিছানা থেকে উঠে অরিয়নকে এক প্রকার ইগনোর করেই ফ্রেশ হতে চলে যায়। অরিয়নের ফোনে কল আসতেই রিসিভ করে কথা বলতে থাকে অরিয়ন।

–এইতো একটু পরেই ঘুরতে বের হবো বাবা।
মিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শুনতে পায় অরিয়ন এখনো মোবাইলে কথা বলছে।

–মা, আমি ঠিক আছি। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো আমরা।
বলে অরিয়ন।

–না বাবা, আমি তোমার মিতাকে শাসন করছি না, উলটা ও আমাকে…
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই মোবাইল হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে যায় মিতা।

–হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু।

–জ্বি আমি ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো?

–চাচ্চু, অরিয়ন ভাইয়া মিথ্যে বলছে, সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করে আর আমাকে..আমাকে রুমের মধ্যে একা রেখে কোথায় জানি চ..
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই মোবাইল কেড়ে নিয়ে কল কেটে দেয় অরিয়ন।

মিতার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন।

–তুই কি মনে করিস, তোর চাচ্চুকে আমি ভয় পাই?
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।

–হ্যাঁ পাও।
জবাব দেয় মিতা।

অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে মিতার উত্তর দেওয়া যেন এড়িয়ে যেতে পারলো না অরিয়ন। মিতার দিকে তাকিয়ে রইল। এখন যখন এতো কাছ থেকে মিতাকে দেখছে তখন খেয়াল করলো, মুখ ধুয়ে আসাতে চোখের পাপড়িতে এখনো ফোটা ফোটা পানি জমে আছে। ঠোঁটের কোণে পানি একফোঁটা জমে আছে। নিজের অজান্তেই অরিয়নের হাত চলে গেলো মিতার ঠোঁটে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট থেকে পানি মুছে ফেললেও অরিয়ন চোখ মিনিটের জন্যও মিতার ঠোঁট থেকে সরছে না।

অরিয়নের মোবাইলে আবারও কল বাজতেই ঘোর কাটে দুজনের। অরিয়ন তাড়াহুড়ো করে কল রিসিভ করে আর মিতা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের চুল আচরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

–হ্যালো, হ্যাঁ বলো..
কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে যায় অরিয়ন।

****************

আইফেল টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন আর মিতা। দু জনে চুপচাপ বসে সকালের নাস্তা খেয়েই চলে এসেছে।

–টিকিটের এতো বড় লাইন। কম হলেও ২/১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
মন খারাপ করে বলে মিতা।

–হবে না, ঐদিক টায় চল। ঐদিক দিয়ে লিফটে উঠতে হবে।
লিফট দেখিয়ে বলে অরিয়ন।

–কেনো অপেক্ষা করতে হবে না?
প্রশ্ন করে মিতা।

–কারণ টিকিট অনলাইনে আগেই কেটে রেখেছিলাম।
জবাব দেয় অরিয়ন।

**************

এতো মানুষের ভীরে আইফেল টাওয়ারের এতো এতো উপরে উঠে পুরো প্যারিস শহরটা যেন একটা দৃশ্য মনে হচ্ছে। উপর থেকে দেখতে এতো সুন্দর হবে তা ভাবতেই পারেনি মিতা। অরিয়নকে দিয়ে কত ছবি তুলে নিয়েছে তার হিসাব নেই। নামার সময় আইফেল টাওয়ারের ২য় তলায় বসে কফি পান করে নিয়েছে অরিয়ন আর মিতা।

–এখন কোথায় যাবো?
লিফট থেকে নামতে নামতে বলে মিতা।

–এখন বোর্টে উঠবো। সেইন নদীটা ঘুরে দেখবি।

–ওকে।
খুশি হয়ে জবাব দেয় মিতা।

বোর্টের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। অন্য কোণে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। চলমান বোর্ট থেকে আইফেল টাওয়ার ভিডিও করতে ব্যস্ত মিতার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। যেন গতকালের সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে গেছে। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে মিতা কি করছে তা দেখতে ব্যস্ত। হালকা বাতাসে মিতার চুলগুলো উড়ছে, দু একটা চুল মাঝে মধ্যে গিয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মিতার ঠোঁটের মধ্যে। তাতে বিরক্ত হয়ে উঠছে মিতা। থু,থু করে চুল বের করতেই হেসে দেয় অরিয়ন। “আমার পরী” মনে মনে বলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে অরিয়নের।

***************

বোর্টে ঘুরা শেষ হলে দুপুরের লাঞ্চ করে নেয় অরিয়ন আর মিতা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে যায় সো দে মারস ও লুভর মিউজিয়াম ঘুরতে। সব কিছু ঘুরে বের হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায় দুজনের। ঘুরাঘুরি শেষ করে চলে যায় শপিং করতে।
নিজের ফ্রেন্ড থেকে শুরু করে পরিবারের সবার জন্য শপিং শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে নেয় অরিয়ন আর মিতা।

কারে করে হোটেল ফিরছে মিতা আর অরিয়ন। সারাদিন ঘুরাঘুরি আর শপিং এর কারণে ক্লান্ত মিতা গাড়িতে চোখ বন্ধ করে রেখে। অরিয়ন ও সিটের সাথে হেলান দিয়ে রয়েছে। এতোগুলো শপিং ব্যাগ সব কিছু একা একা বয়ে বেড়াতে হয়েছে অরিয়নের। মেয়েরা যে কি পরিমানে শপিং করতে পারে তার একটা ধারণা হয়েছে অরিয়নের।

–La voiture derrière semble nous suivre. ( পিছনের গাড়িটা আমাদের ফলো করছে মনে হচ্ছে)
ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে অরিয়ন।

–Je le pense aussi.(আমারও তাই মনে হচ্ছে)
জবাব দেয় ড্রাইভার।

–Conduis lentement, mon oncle.( গাড়ি স্লো করে চালান তো, চাচা)
ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে অরিয়ন।

–তোমরা কি কথা বলছো?
অরিয়ন আর ড্রাইভারের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মিতা।

–তেমন কিছু না।

–অহ।

–Ils roulent également lentement.(ওরাও গাড়ি স্লো করে চালাচ্ছে)
রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে ড্রাইভার।

–Augmentez la vitesse. (স্পীড বাড়িয়ে দিন।)

অরিয়ন কথাটা বলতেই ড্রাইভার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে গাড়ির স্পীড বেড়ে যাওয়াতে চোখ খুলে তাকায় মিতা। অরিয়নের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অনেক বেশি টেনশন করছে কিছু একটা নিয়ে। বার বার পেছনের দিকে তাকাচ্ছে অরিয়ন।

–কি হয়েছে? এরকম লাগছে কেনো তোমাকে?
প্রশ্ন করে মিতা।

–পেছনের গাড়িটা আমাদের অনেকক্ষন ধরে ফলো করছে।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–ফলো করছে মানে? কেনো? কি করেছি আমরা?
পেছনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–কিছুই জানিনা। তুই ভয় পাস না, আমি থাকতে তোর কিছু হবে না।
মিতার হাত ধরে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বলতে যাবে এর আগেই পেছনের গাড়ি এসে স্বজোরে ধাক্কা দেয় মিতাদের গাড়িতে।

–ফা*কং বা*স্টার্ড।
মিতাকে জড়িয়ে ধরে চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।

–ভয় পাস না, আমি আছি। আমি কিছু হতে দিবো না তোর।
মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে অরিয়ন।

মিতা ভয়ে কাঁপছে অনবরত। অচেনা জায়গা তার উপর এতো রাতে রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কিছু একটা হয়ে গেলেও সাহায্য করার জন্য কে এগিয়ে আসবে?

–Conduis vite, mon oncle. (দ্রুত চালান,চাচা)
বলে অরিয়ন।

–I am trying.
বলে ড্রাইভার।

পেছনের গাড়ি আবারও এসে ধাক্কা লাগায় গাড়িতে।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়া।
ভয়ে চেচিয়ে উঠে মিতা।

–হিসসসসস,হিসসসস লাভ, কিছু হবে না। আমি আছি তো লাভ। ভয় পায় না। আমি আছি।
অরিয়ন অনবরত মিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথাগুলো বলছে মিতাকে শান্ত করার জন্য।

–Mon oncle, va-t’en. je conduis.

অরিয়ন কথাটা বলেই মিতাকে ছেড়ে ড্রাইভার সিটের দিকে এগিয়ে যায়। ড্রাইভার ও তাড়াতাড়ি করে নিজের সীট থেকে সরে জায়গা করে দেয় অরিয়নের জন্য। অরিয়ন ড্রাইভিং সীটে বসতেই রিয়ার ভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে উঠে-

–পরী..আমার দিকে তাকা।

সীটের এক কোণায় ভয়ে গুটিমেরে বসে থাকা মিতা অরিয়নের কণ্ঠ শুনে আয়নার দিকে তাকায়। অরিয়নের সাথে চোখে চোখ পড়ে।

–আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোর চুলও বাঁকা করতে পারবে না।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।

মিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয় অরিয়ন।

পেছনের কালো রঙের গাড়ি সামনা-সামনি আসলে অরিয়ন বামে, বামে আসলে গাড়ি ডানে নিয়ে গিয়ে এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকে। প্রতিনিয়ত গাড়ির দিক পরিবর্তন করার কারণে প্রতিবারই গাড়ির জানালার সাথে গিয়ে ধাক্কা খেতে থাকে মিতা। রিয়ার ভিউ মিররে সবই দেখতে পারছে অরিয়ন। প্রতিবার মিতার অবস্থা দেখে রাগে গাড়ির স্টিয়ারিং শক্ত করে চেপে ধরেছে অরিয়ন।

–তোদের আমি নিজের হাতে খুন করবো ফা**র।
পেছনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে থাকে অরিয়ন।

***************

গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে হোটেলের সামনে। এটার্ক করা গাড়িটি যখন দেখলো অরিয়ন নিজদের গাড়ি থেকে অনেকটা দূরত্ব তৈরি করতে পেরেছে তখন হুট করেই অন্যদিকে টার্ন নিয়ে চলে যায়। গাড়ি থেকে নেমেই অরিয়ন ড্রাইভারকে বিশাল এমাউন্টের টাকা দেয় যেন গাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে তা মিটিয়ে নিতে পারে। ধন্যবাদ জানিয়ে পেছনের সীটের দিকে গিয়ে দরজা খুলতেই মিতাকে গুটি মেরে বসে থাকতে দেখে। নিজের মুখ দু হাটুর মধ্যে গুজে রেখেছে মিতা, ভয়ে শরীর অনবরত কাঁপছে মিতার।

–পরী?
গাড়ির মধ্যে ঢুকে ডাক দেয় অরিয়ন।

অরিয়নের ডাক শুনতেই মাথা তুলে তাকায় মিতা। গাড়ি থামতে দেখেই জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে।

–অরিয়ন ভাইয়া।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।

–আমরা সেইফ আছি, হোটেলে চলে এসেছি আমরা। আর ভয় নেই তোর।
মিতার মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে অরিয়ন।

–ওরা আমাদের মা*রতে চাইছিলো কেনো? কে ওরা?
প্রশ্ন করে মিতা।

–কিছুই জানিনা, তবে মনে হচ্ছে আমাদের কোনো রাইভাল হবে। গাড়িতে আমি আছি ভেবেই মা*রতে এসেছিলো। বাকিটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।
কথাটা বলেই মিতাকে কোলে তুলে নেয় অরিয়ন। গাড়ি থেকে বের হয়ে নিজেদের রুমের দিকে এগোতে থাকে। মিতা নিজের মুখ গুজে দিয়েছে অরিয়নের ঘাড়ে। নিজের দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে অরিয়নকে।

–এখানেই থাকো প্লিজ।
মিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে উঠে যেতে নিতেই অরিয়নের হাত ধরে বলে মিতা।

–এখানেই আছি আমি, কোথাও যাচ্ছি না।
মিতার পাশে বসে মিতার হাত ধরে বলে অরিয়ন।

কতক্ষণ একই জায়গায় একই ভাবে অরিয়ন বসে ছিলো তা জানা নেই অরিয়নের। তবে, মিতার চোখ লেগে যেতেই ধীরে ধীরে হেটে বাইরে আসে অরিয়ন। নিজের মোবাইল বের করে কল দিয়েই মোবাইল নিজের কানের কাছে ধরে।

–ওরা এখানেও চলে এসেছে।
কল রিসিভ হতেই বলে উঠে অরিয়ন।

–ওরা ভুলে যাচ্ছে ওরা কাদের সাথে শত্রুতায় জড়াচ্ছে।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে অরিয়ন।

–যা করার তুমি করো, আমরা আগামীকালই বাংলাদেশে ফিরে আসছি।
কথাটা বলেই কল কেটে আবারও রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন।

ঘুমন্ত মিতার দিকে চোখ যেতেই লক্ষ্য করে জানালার সাথে ধাক্কা খাওয়ার জন্য কপালের একপাশে লাল হয়ে আছে, একটু কেটেও গেছে।
ক্ষত স্থান লক্ষ্য করতেই তাড়াতাড়ি করে সেভলন আর তুলো নিয়ে আসে অরিয়ন। মিতার পাশে বসে ধীরে ধীরে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দেয়। ক্ষতস্থানে সেভলন লাগতেই নড়েচড়ে উঠে মিতা। ব্যাথায় ঘুমের চোখেই শব্দ করে উঠে মিতা। ক্ষণিকেই অরিয়নের চোখ লাল হয়ে উঠে রাগে।

–ওরা ভুলে গেছে তুই এখন আর পারমিতা চৌধুরী না, তুই মিসেস পারমিতা অরিয়ন চৌধুরী। আর ওদের ভুলের মাশুল ওদের জীবন দিয়ে দিতে হবে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্ষতস্থানে তাকিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।

চলবে…..