পারমিতা পর্ব-৩৭+৩৮

0
98

#পারমিতা
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

–পারমিতা?
পেছন থেকে কেউ মিতার কাঁধে স্পর্শ করে মিতার পুরো নাম ধরে ডাক দেয়।
অপরিচিত কারো কন্ঠ শুনতেই পেছনের দিকে ফিরে তাকায় মিতা।

মিতার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একজন বয়স্ক লোক। চুল আর দাঁড়ি পেকে সাদা হয়ে আছে। চোখে চশমা। সাদা রঙ্গের পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরিহিত। দেখে মনে হচ্ছে ভালো পরিবার থেকে বিলং করে।

–আপনি?
বৃদ্ধ লোককে চিনতে না পেরে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।

–আমার নাম কবির রহমান।
মিতার হাত ধরে মিতাকে টেনে দাঁড় করিয়ে বলে লোকটি।

–আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি আমার নাম জানেন কীভাবে?
প্রশ্ন করে মিতা।

মিতার প্রশ্ন শুনতেই লোকটির মুখে ফুঁটে উঠে আলতো এক হাসি। হাসির মাঝখান দিয়ে চোখেও পানি দেখা যাচ্ছে।

–যার নামটা আমি রেখেছি তাকে আমি চিনবো না?
বলে লোকটি।

পারমিতা নাম রেখেছে? কি বলছেন উনি? কিছুই যেন মিতার মাথায় ঢুকছে না। একের পর কী হচ্ছে মিতার সাথে তা বুঝতে পারছে না মিতা।

–মানে? আমার নাম আপনি কেন রাখবেন? আমার নাম রেখেছে আমার মা।
বলে মিতা।

–রাস্তায় দাঁড়িয়ে না থেকে কোথাও বসে কথা বলি? বয়স্ক মানুষ বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা।
বলে কবির রহমান।

–অপরিচিত মানুষের সাথে আমি কোথাও যাই না।
জবাব দেয় মিতা।

দেখতে ভদ্র পরিবারের মতো লাগলেই যে সে ভদ্র হবে তেমন কোনো কথা নেই। আর মিতা যখন জানেই কেউ মিতাকে মা*রার চেষ্টা করছে সেহেতু অপরিচিত মানুষের থেকে দু চারটা ইমোশনাল কথা শুনে ভুল করার মানুষ নয় মিতা।

–ঠিক আছে। অন্য কোথাও যেতে হবে না। পাশের চায়ের দোকানটায় বসি?
হাত দিয়ে পাশের চায়ের দোকান দেখিয়ে বলে কবির রহমান।

এবার বিষয়টা মিতার কাছে খারাপ মনে হলো না। মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই দু জনে হাটা শুরু করে। চায়ের দোকানের শেষ টেবিলে বসে দু জনে।

–দুই কাপ চা দিন।
দোকানদারকে বলে কবির রহমান।

মিতা কিছু বললো না। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো কবির রহমানকে।

–আপনি আমাকে কীভাবে চিনেন? আপনাকে আমি কখনো দেখিনি।
কবির রহমান এদিকে তাকাতেই সাথে সাথে প্রশ্ন করে মিতা।

–তুমি বললে তোমার নাম রেখেছে তোমার মা। তোমার মায়ের নাম কী?
প্রশ্ন করে কবির রহমান।

মিতা ভ্রু কুঁচকে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। মিথ্যে বলবে নাকি সত্যি সেটা ভাবছে।

–মায়া চৌধুরী।
জবাব দেয় মিতা।

মিতার জবাব শুনে তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিলো কবির রহমান।

–আমি তোমাকে তোমার মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেছি,পারমিতা। তোমার চাচীর না।

–আপনি কীভাবে…
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো মিতা। সামনে বসে থাকা এই বয়স্ক লোক যে কিনা নিজেকে কবির রহমান বলে দাবী করছেন সে মিতার লাইফ সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন বলে মিতার ধারণা হচ্ছে।

–সুমাইয়া চৌধুরী।
জবাব দেয় মিতা।

–তোমার মার আসল নাম কী?
প্রশ্ন করে কবির রহমান।

–সুমাইয়া রহমান।
জবাব দেয় মিতা।

কবির রহমানের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে তিনি কি বলতে চাচ্ছেন।

–পৃথিবীতে হাজারো রহমান আছে তার মানে এই না যে সবাই আমার মার রিলেটিভ।
বুদ্ধি খাটিয়ে বলে মিতা।

এবার কবির রহমান আবারও একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছু খুজতে লাগলেন। একটু পরেই মোবাইল এগিয়ে দিলেন মিতার দিকে।

মোবাইল ধীরে ধীরে হাতে তুলে নেয় মিতা। স্ক্রিনে একটা ছবি ভাসছে। ছবিটা মিতা এর আগে কখনো দেখেনি। তবে ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুবক বয়সের কবির রহমানকে। পরনে একটা কালো শার্ট। মিতা চোখ তুলে একবার কবির রহমান এর দিকে তাকায়। এরপর আবারও ছবির দিকে তাকায়। ছবিতে কবির রহমানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে ১৬/১৭ বছরের এক তরুণী।

–এই ছবির মানে কী?
প্রশ্ন করে মিতা।

–আরও আছে।
কথাটা বলতেই মিতা একের পর এক ছবি দেখতে থাকে। প্রতিটা ছবিতে কবির রহমানের সাথে ২/৩, ১০/১২, ১৮/১৯ বছরের সুমাইয়া রহমানকে দেখা যাচ্ছে।

–আমি তোমার হতভাগা নানা। সুমাইয়ার বাবা কবির রহমান।
নরম সুরে বলে কবির রহমান।

*****************

আনিকা চৌধুরী যখন কেবিনে প্রবেশ করলো অরিয়ন তখন বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। মিতা কেবিন থেকে বের হওয়ার পর থেকেই বুকটা কেমন যেন আনচান করছে অরিয়নের।

“আমাকে আর আটকাতে পারবে না” পরীর এই কথাটা বার বার মনে পড়ছে অরিয়নের। এভাবে বলার কী প্রয়োজন ছিলো?

–অরিয়ন?
স্নেহভরা কন্ঠে ডাক দেন আনিকা চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরীর কন্ঠ শুনতেই চোখ খুলে তাকায় অরিয়ন। নিজের মায়ের মুখে মিষ্টি এক হাসি ফুটে উঠেছে।

আনিকা চৌধুরী বেডের পাশে টুল টেনে বসতেই অরিয়ন আনিকা চৌধুরীর দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

–কিছু বলবি?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–পরীর গায়ে হাত তুলেছো কেন?
গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

অরিয়নের প্রশ্ন শুনতেই মুখ থেকে হাসিটা সরে যায় আনিকা চৌধুরীর। চোখেমুখে ফুঁটে উঠেছে বিরক্ততা।

–কী হলো জবাব দেও?
একটু রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।

–কারণ ওর জন্য তুই ম*রতে বসেছিলি।
উত্তর দেয় আনিকা চৌধুরী।

–ও কী আমাকে বলেছিলো,আমাকে বাঁচাও? আমি নিজের ইচ্ছায় ওকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম,মা।
বলে অরিয়ন।

–সেই একই কথা।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–না, একই কথা নয়।
কথাটা বলে একটু বড় করে শ্বাস নেয় অরিয়ন। মনে হচ্ছে ব্যাথাটা আবার বাড়ছে।

–একটা মানুষকে আর কত অপমান আর কত শাস্তি দিবে তুমি?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–কী বলতে চাচ্ছিস তুই?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে আনিকা চৌধুরী।

–বলতে চাচ্ছি, মিতার সাথে তুমি আর খারাপ ব্যবহার করবে না।

–অরিয়ন…
অবাক হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–সব কিছু জানার পরও তুই এই কথা বলতে পারলি?
আবারও কথাটা বলতেই গলা ভিজে আসলো আনিকা চৌধুরীর।

— হ্যাঁ, সব কিছু জানার পরও বলছি। অহনার মৃত্যুতে ওর কোনো হাত ছিলো না,মা। ও তখন একটা অবুঝ বাচ্চা। যে নিজের বাবার কাছে কিছু নিয়ে আবদার করছিলো। আর কেন ভুলে যাও? ও নিজের ওর মা বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে।

–ওর কারণে আমার অহনা ম…

–না। ওর কারণে আমাদের অহনা আমাদের ছেড়ে যায় নি। যদি তাই হতো তাহলে অহনা নিজে বের না হয়ে পরীকে বের করতো না,মা। মেয়ে হারানোর কষ্ট হয়তো আমরা কেউ বুঝবো না, তোমার কষ্ট হয়তো আমরা কেউ বুঝবো না ভেবেই কেউ কোনোদিন তোমাকে কিছু বলিনি। কিন্তু মা, এখন তুমি সীমার বাইরে চলে যাচ্ছো।

–আমরা ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে তোমার রাগ অভিমান কমে যাবে। কিন্তু তা যে এতো ভয়াবহ রূপ নিবে তা বুঝতেও পারিনি। সব কিছুর জন্য শুধু পরীকেই দোষারোপ করো তু…
অরিয়নের কথাগুলো শেষ করার আগেই নিজের হাত দেখিয়ে থামতে বলে আনিকা চৌধুরী।
চোখে তার পানি ছলছল করছে।

–এখন মা থেকে বউয়ের কষ্ট বেশি চোখে লাগছে?
বলে আনিকা চৌধুরী।

–মা। কিসব আজেবাজে কথা বলছো তুমি?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।

–যা বুঝার আমি তা বুঝে গেছি।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় আনিকা চৌধুরী।

–মা, ওয়েট। মা?
ডাকতে থাকে অরিয়ন কিন্তু আনিকা চৌধুরী আর অপেক্ষা করলো না। চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

–শি*।
বিরবির করে বলে অরিয়ন।

****************

–আমি তোমার হতভাগা নানা। সুমাইয়ার বাবা কবির রহমান।
নরম সুরে বলে কবির রহমান।

–আর কিছু লাগবো আপনাগো?
টেবিলের উপর দু কাপ চা দিয়েই জিজ্ঞেস করে দোকানদার।

–না। লাগলে বলবো।
বলে কবির রহমান।

মিতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কবির রহমান এর দিকে। কি বলতে বুঝতে পারছে না।

–আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।

–বিশ্বাস না করাটাই স্বাভাবিক। জন্মের পর থেকে কখনো আমাকে দেখোনি। আজ হঠাৎ সামনে এসে বললে অন্য কেউ হলেও বিশ্বাস করতো না।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে কবির রহমান।

–আপনি যদি আমার নানাভাই হয়েই থাকেন তাহলে এতোদিন কেন খোজ নেন নি?
প্রশ্ন করে মিতা।

–তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। তবে এতোটুকু জেনে রাখো যে, তোমার মায়ের বিয়েতে আমার মত ছিলোনা।
বলে কবির রহমান।

–আমার কথাগুলো হয়তো তোমার আজ বিশ্বাস হবে না। তবে তোমার চাচা ওয়াহিদ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করবে আমার কথা। যদি আমাকে বিশ্বাস হয় তাহলে এই নাম্বারে কল করো। অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে।
আবারও বলে কবির রহমান।

–তবে একটা কথা জেনে রাখো। যাদের তুমি তোমার পরিবার ভাবছো, যাদের তুমি এতো ভালোবাসছো, এতো বিশ্বাস করছো তারা এসবের যোগ্য নয়। বিশেষ করে হাবিব চৌধুরী।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় কবির রহমান।

–মানে? কী বলছেন আপনি এসব? কেনো নয়?
মিতাও দাঁড়াতে দাঁড়াতে প্রশ্ন করে।

–এখন বললে বিশ্বাস করবে না। আগে নিজের বাবা থেকে নিশ্চিত হও কবির রহমান কে। এরপর না হয় বলবো।
কথাটা বলেই মিতার মাথায় হাত রাখে কবির রহমান।

মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোকানদারের সামনে দিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দেয়।

–বাকিটা বকসিস।
কথাটা বলেই চলে যায় কবির রহমান।

দোকানদারের চোখেমুখে আনন্দ ফুঁটে উঠেছে। মিতা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল দোকানে। মিতা জীবনটা যেন একটা সার্কাসে পরিনত হয়েছে।
ধীরপায়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ে মিতা।

*******************

দুপুরে অরিয়নের খাবার নিয়ে কেবিনে এসেছে আফরিন আর আবরার। হাবিব চৌধুরী পুলিশের সাথে কথা বলছে বাইরে। মায়া চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরীকে বাড়িতে দিয়ে আসছে গিয়েছে ওয়াহিদ চৌধুরী।

আবরার এসে বেডটা একটু উঁচু করে দেয়। আফরিন অরিয়নের খাবার একেক করে বক্স থেকে বের করছে। অরিয়নের চোখ দরজার দিকে তাক করা। অপেক্ষা করছে মিতার রুমে প্রবেশ করার।

–ডাক্তার বলেছে সাদামাটা খাবার দিতে। তাই স্যুপ করে নিয়ে এসেছি আর…

–পরী কোথায়?
আফরিনের কথার মাঝেই আবরারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–বাসায় গেছে।
জবাব দেয় আবরার।

–বাসায় গেছে মানে? আমি হাসপাতালে আছি জেনেও ও বাসায় চলে গেছে?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–সকালে বের হওয়ার সময় তো তাই বললো। ওর নাকি ভালো লাগছিলো না। বললো ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিবে।
বলে আবরার।

–সকালে? সকালে মানে এই কেবিন থেকে বের হওয়ার পর?
অধৈর্য্য হয়ে বলে অরিয়ন।

–হ্যাঁ। কেন?
জবাব দেয় আবরার।

–আর ইউ এ ফা*কিং ফুল?
বেড থেকে উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন।

–আফনান,বিছানা থেকে উঠো না। শুয়ে থাকো। তোমাকে রেস্ট নিতে বলেছে ডাক্তার।
অরিয়নের বাহু ধরে বলে আফরিন।

–আরিয়ান, পরীকে কল দে। ফোন দিয়ে দেখ পরী কোথায়।
আফরিনের কথা ইগনোর করে বসতে বসতে বলে অরিয়ন।

–আচ্ছা আমি দিচ্ছি তুই খেয়ে নে আগে।
বলে আবরার।

–কল দিতে বলেছি, তুই চুপচাপ কল দে। বেশি কথা বলবি না।
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।

–আরিয়ান কল দিতে দিতে তুমি খেয়ে নাও। এভাবে থাকলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
বলে আফরিন।

–আফরিন প্লিজ, এখন ভালো লাগছে না। আর তুই মিতাকে কল দে।
আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

আবরার কল দিয়ে ফোন কানের কাছে ধরে।

–মিতার মোবাইল তো বন্ধ।
একটু পরেই বলে আবরার।

–বন্ধ? বন্ধ কেন? মায়া চাচীকে কল দে তো।
চিন্তিত অরিয়ন ঘাবড়ে গিয়ে বলে।

এবার মায়া চৌধুরীর ফোনে কল দেয় আবরার।

–হ্যালো চাচী মিতা কোথায়?
প্রশ্ন করে আবরার।

–ও আচ্ছা।
বলে আবরার।

–কী হয়েছে? পরী বাসায় আছে তো?
আবরার কল কাটার আগেই প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–চাচী বললো উনারা এখনো বাসায় পৌঁছায় নি। কেয়ারটেকার কে ফোন করে জানাচ্ছে আছে নাকি।
বলে আবরার।

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সকলেই। আবরার মায়া চৌধুরীকে ফোন করেছে গুনে গুনে ৩ মিনিট হবে। এই তিন মিনিট যেন ৩ দিন মনে হচ্ছে অরিয়নের কাছে। মনে হচ্ছে প্রতি সেকেন্ড গুনতে পারছে। সময় যতোই যাচ্ছে ধৈর্য্য যেন ততোই কমে আসছে অরিয়নের।

আবরারের ফোন বাজতেই সকলে যেন লাফিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করে আবরার। ফোন কানের কাছে নেওয়ার আগেই হাত থেকে কেরে নেয় অরিয়ন।

–হ্যালো চাচী?

–জ্বি আমি এখন ভালো আছি।

–চাচী পরীর কি খবর?

–কিহ?

অপর পাশ থেকে মায়া চৌধুরীর উত্তর শুনে মোবাইল আবরারের হাতে তুলে দেয় অরিয়ন। হাতে থাকা ক্যানোলা এক টানে খুলে ফেলে। র*ক্ত সাথে সাথেই ছিটকে র*ক্ত পড়া শুরু হয়েছে অরিয়নের হাত থেকে।

–ভাইয়া কী করছিস তুই? এগুলা খুলে ফেলছিস কেন?
প্রশ্ন করে আবরার।

–আফনান। কী হয়েছে? কী বলেছে মা? এরকম পাগলামি করছো কেন?
অরিয়নের হাত ধরে টেনে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে কর‍তে বলে আফরিন।

–পরী…পরী বাসায় নেই।
বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে অরিয়ন।

–কিহ?
এক সাথে প্রশ্ন করে উঠে আবরার আর আফরিন।

অরিয়ন আর কোনো কথা না বলেই আফরিন থেকে হাত ছাড়িয়ে র*ক্তাক্ত হাত দিয়েই বুক হালকা চেপে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পেছন পেছন দৌড়ে যায় আবরার আর আফরিন।

চলবে……

#পারমিতা
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

অরিয়নের হাতের র*ক্ত দিয়ে বুকের ব্যান্ডেজ প্রায় ভিজে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে যেন অরিয়নের কোনো খেয়াল নেই।

–ভাইয়া কোথায় যাচ্ছিস? তোকে রেস্ট নিতে বলা হয়েছে। আমি মিতার খোজ করছি। দাঁড়া। অরিয়নের পেছন পেছন হাটতে হাটতে বলে আবরার।
আবরারের পাশেই হাটছে আফরিন।চোখে মুখে আতংক আফরিনের।

আবরারের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায় অরিয়ন। একই সাথে দাঁড়ায় আবরার আর আফরিন। আবরার কিছু বলে উঠার আগেই আবরারের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় অরিয়ন। আর কোনো কথা না বলেই আবারও হাটতে থাকে।

–ভাইয়া কী করছিস তুই? ওয়েট।
পেছন থেকে বলতে থাকে অরিয়ন।

–ও কী পাগল হয়ে গেলো?
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে আবরার।

–তাই তো মনে হচ্ছে।
জবাব দেয় আফরিন।

–পরীর জন্য পাগল।
বিষন্নতার এক হাসি দিয়ে বলে আফরিন।

আফরিনের কথাটা শুনতেই যেন আবরারের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে পড়লো। ছোট থেকেই মিতার প্রতি অরিয়নের স্নেহ সবসময় বেশি ছিলো। কত ভাবে আনিকা চৌধুরীর রাগ আর কু কথা থেকে মিতাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো তা একমাত্র আবরারই জানে। কারণ? কারণ মিতার সব কিছুতে যে আবরার মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকতো। মিতার প্রতি অরিয়নের স্নেহ যে দিন দিন অন্য কিছুতে রূপ নিচ্ছে তা বুঝতেও আবরারের সময় লাগেনি। দ্রুত অরিয়নের পেছন পেছন হাটতে লাগলো দু জন।

হাসপাতালের সিড়ি বেয়ে নামতে নামতেই ড্রাইভারকে কল দেয় অরিয়ন। আফরিন আর আবরার হাসপাতালে আছে তার মানে একজন ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সব সময় বাইরে অপেক্ষা করবে তা অরিয়নের জানা। বিপদ আপদের সময় যেন কোনো কিছুর কমতি না থাকে তাই সবসময় এমন কাজ করে থাকেন হাবিব চৌধুরী।

–কাকা, দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের সামনে আসুন।
কলে ড্রাইভারকে বলতে বলতে দৌড়ে হাসপাতালের সিড়ি বেয়ে নামে অরিয়ন। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই ঔষধের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। বুকের ব্যান্ডেজ প্রায় ভিজে গেছে র*ক্তে।

–দুটো ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ দিন তো।
ঔষধের দোকানের লোককে বলে অরিয়ন।

দোকানকার কিছুক্ষণ অরিয়নের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। যেন চোখের সামনে মানুষ নয় ভূত দেখছে।

–তাড়াতাড়ি করুন।
দোকানদারকে নড়তে না দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।

দোকানদার দৌড়ে চলে যায় ভেতরে। একটু পরেই ফিরে আসে দুটো ব্যান্ডেজ হাতে।

–নেন।
হাত এগিয়ে দিয়ে বলে দোকানদার।

–এই ভাই, টাকা?
ব্যান্ডেজ হাতে নিয়েই এক পা এগোতেই পেছন থেকে ডাক দেয় দোকানদার।

–ওহ, সরি।
অরিয়নের কাছে এখন এক পয়সাও নেই। গু*লি লাগার পর সব অরিয়নের থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অরিয়ন ব্যান্ডেজ হাতে এদিক ওদিক তাকিয়ে ড্রাইভার কাকাকে খুজতে লাগলো। চোখে নিজেদের গাড়ি আর ড্রাইভারকে দেখতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অরিয়ন।

–ওয়েট।
দোকানদারকে কথাটা বলেই ড্রাইভারের কাছে চলে যায় অরিয়ন। পেছনের সিট খুলে গাড়িতে উঠে বসে।

–কাকা, ঐ দোকানে ব্যান্ডেজের টাকাটা দিয়ে আসুন তো।
গাড়িতে বসে নিজের র*ক্তাক্ত হাতে ব্যান্ডেজ লাগাতে লাগাতে বলে অরিয়ন।

–ঐ তো ভাইয়া।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অরিয়নকে কোথাও দেখতে না পেয়ে খুজতে থাকে আবরার আর আফরিন। চোখের সামনে গাড়ি আসতেই বলে উঠে আবরার।

দ্রুত হেটে গাড়ির দিকে যাওয়ার আগেই গাড়ি ছেরে দেয়।

–শি*।
গাড়ি চলে যেতে দেখে বলে উঠে আবরার।

*************

–কোথায় যাবো স্যার?
প্রশ্ন করে ড্রাইভার।

–চাচ্চুর বাসায়।
গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে অরিয়ন।

ব্যান্ডেজ লাগানোর ফলে র*ক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বুকের ব্যাথাটা ক্ষণিকের জন্যও বন্ধ হচ্ছে না।

–প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
বিরবির করে বলে অরিয়ন।

এই প্লিজ দিয়ে কি বুঝাচ্ছে তা জানেনা অরিয়ন। শুধু জানে এই অস্থিরতা দূর করতে হবে। মিতা বাড়িতে ঠিক মতো আছে তা জানতে হবে। ক্ষত জায়গা থেকেও র*ক্ত বের হতে শুরু করেছে কিন্তু সেই ব্যাথাটা যেন বুকের ব্যাথাটার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না অরিয়ন।

২০ মিনিটের মধ্যে আফরিনদের বাড়িতে এসে পৌঁছায় অরিয়নের গাড়ি। গাড়ি স্লো হতেই দ্রুত নেমে পড়ে অরিয়ন। গাড়ি থেকে নামতেই নিজের বুক চেপে ধরে গাড়ির সাথে হেলান দেয় অরিয়ন। ক্ষতস্থানের ব্যাথাটা বেড়েই চলেছে।

–আর একটু সময়, আর একটু সময়।
গাড়ির সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে অরিয়ন।

নিজেকে একটু সামলে নিয়েই দ্রুত বাড়িতে ঢুকে পড়ে।

–পরী? পরী?

–পরী?
বার বার ডাকতে থাকে অরিয়ন।

–অরিয়ন? তুই এখানে। এ কি অবস্থা তোর।
ড্রয়িং রুমে অরিয়নকে দেখে চমকে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–চাচ্চু…
একটু বড় করে শ্বাস নেয় অরিয়ন।

–পরী কোথায়?
তাড়াতাড়ি ওয়াহিদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–ও তো এখনো বাসায় আসেনি। তুই এখানে কেনো? ডাক্তার তোকে বের হতে দিলো কী..

–পরী সব জেনে গেছে।
ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কী বলছিস তুই? কীভাবে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ও….ও মা…মা থেকে শুনেছিলো কিছু। বাকিটা….উফ.

–অরিয়ন, তোর ডাক্তারের প্রয়োজন বাবা।
অরিয়নকে ধরে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

অরিয়নের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। কথা বলতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে অরিয়নের।

–বাকিটা..আমি বলেছি।
নিজের কথা শেষ করে অরিয়ন।

–সবটা জানে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।

অরিয়ন মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।

–তুই…তুই আগে ডাক্তারের কাছে চল। মিতাকে খুজে আমরা বের করছি।
অরিয়নের হাত ধরে বাইরের দিকে যেতে যেতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–না। পরীর খবর না পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে যাচ্ছি না আমি।
জানিয়ে দেয় অরিয়ন।

–পাগলামি করিস না অরিয়ন।
গম্ভীর হয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ড্রয়িং রুমের ফোন বাজতেই দু জনে তাকায় ফোনের দিকে। ওয়াহিদ চৌধুরী গিয়ে ফোন রিসিভ করে।

–হ্যালো?
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–হ্যাঁ আছে তো, কেন?
আবারও বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ওহ, খেয়াল করিনি।

–সত্যি?

–আচ্ছা ঠিক আছে।

ওয়াহিদ চৌধুরী কথা বলতে থাকলে অরিয়ন একটু এগিয়ে আসে। অধীর আগ্রহ নিয়ে শুনছে ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা।

–মিতা তোদের বাড়িতে।
ফোন রেখে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কিহ?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–হ্যাঁ। আবরার আর আফরিন বাড়িতে গিয়ে মিতাকে পেয়েছে। তোকে কল করেছিলো, তুই হয়তো মোবাইল গাড়িতেই রেখে এসেছিস।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা শুনতেই হাফ ছাড়লো অরিয়ন। ধুপ করে বসে পড়লো সামনে থাকা সোফায়। সোফার সাথে হেলান দিতেই আলতো এক হাসি ফুটে উঠলো অরিয়নের ঠোঁটে।

–এই মেয়ে আমাকে মে*রেই শান্ত হবে।
বলে অরিয়ন।

–উঠ, এখন হাসপাতালে যাবি। চল।
অরিয়নের হাত ধরে টেনে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–নাহ। আমি বাসায় যাচ্ছি। ডাক্তার আর নার্সকে বলো বাসায় চলে আসতে।
উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে অরিয়ন।

–আমি ও যাবো তোর সাথে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–কিন্তু মায়া চাচী?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–মায়া একটু রেস্ট নিচ্ছে। আমি ফোন করে সব জানিয়ে দিবো ওকে। দরকার হলে ও ঐ বাড়িতে চলে যাবে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–আচ্ছা।
কথাটা বলেই হাটা শুরু করে অরিয়ন।

******************

নিজের মা বাবার দুর্ঘটনা আর অহনার ব্যাপারটা জানার পর মিতার মন চাচ্ছিলো যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যেতে। সেই উদ্দেশ্যেই হাসপাতাল থেকে বের হয়েছিলো মিতা। তবে মিতার সেই উদ্দেশ্য থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে আসল সত্য জানা। অহনার ব্যাপার থেকেও এমন কি জিনিস আছে যা মিতা জানেনা? কবির রহমানই কেন এতো বছর পর হাজির হলো? হাবিব চৌধুরীর সম্পর্কে কেনই বা এমনটা বললো কবির রহমান? তবে কি হাবিব চৌধুরী তেমনটা নয় যেমনটা দেখাচ্ছে?

হাজারো প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে মিতার মাথায়। সব প্রশ্নের জবাব জানতেই সিএনজি করে অরিয়নদের বাড়িতে চলে এসেছে মিতা। ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা চলে যায় হাবিব চৌধুরীর স্টাডি রুমে। স্টাডি রুম খালি। হাবিব চৌধুরীকে হাসপাতালে দেখে এসেছিলো মিতা। ভেবেছিলো এতোক্ষণে চলে আসবে। কিন্তু আসেনি।

এই রুমে মিতা খুব কম এসেছে। কোনোদিন আসার তেমন প্রয়োজন পড়েনি। মাঝে মধ্যে ওয়াহিদ চৌধুরী যদি ডাকতে পাঠাতো তবেই আসতো মিতা। কি ভেবে টেবিলের সামনে গিয়ে একের পর এক ড্রয়ার খুলতে লাগলো মিতা তা জানেনা। হয়তো কিছু খুজে পাওয়ার আশায়। শেষের ড্রয়ার খুলতেই দেখতে পায় ছবির একটা ফ্রেম। উলটো করে রাখা। ধীরে ধীরে তা তুলে নেয় মিতা। সোজা করতেই বুকে ব্যাথা অনুভব করলো মিতা।

হাবিব চৌধুরীর পরিবারের ছবি এটা। এই ছবিতে সবার সাথে ছোট একটা মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে। ছোট মেয়েটার পড়নে গোলাপি রং এর একটা ড্রেস। আনিকা চৌধুরী আর হাবিব চৌধুরী জড়িয়ে ধরে রেখেছে মেয়েকে। অন্যদিকে, অরিয়ন আনিকা চৌধুরীকে ও আবরার হাবিব চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেছে। মিতার আর বুঝতে বাকি রইল না এই মেয়েটাই তাদের অহনা।

ছোট এই অহনার মায়াতে যেন এক দেখাতেই জড়িয়ে পড়লো মিতা। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে মিতার। কেন আনকা চৌধুরী মিতাকে এতো ঘৃণা করে তাও বুঝতে পারছে। এমন একটা ফুটফুটে মেয়ে আজ এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই শুধু মাত্র মিতার জন্য। নিজের চোখের সামনে নিজের মেয়ে বেঁচে না থাকার কারণ যদি ঘুরতে থাকে তাহলে তা হয়তো পৃথিবীর কোনো মা-ই সহ্য করতে পারবেন না। কিন্তু যা মিতাকে ভাবাচ্ছে তা হলো এতো বছরে মিতা কোনোদিন অহনার কথা বা অহনার ছবি দেখেনি এই বাড়িতে। তার কারণ কী হতে পারে তা বুঝতে পারছে না মিতা।

–মা…অরিয়ন ভাইয়া কী এসেছে?
দূর থেকে আবরারের আবছা আবছা আওয়াজ শুনতে পায় মিতা।

–অরিয়ন এখানে কেন আসবে?
ভেসে আসে আনিকা চৌধুরীর আওয়াজ।

তাড়াতাড়ি করে ড্রয়ারে ছবির ফ্রেমটা রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে মিতা।

–ভাইয়া হাসপাতে নেই। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেছে।
স্পষ্ট শুনতে পায় আবরারের কথা।

–মানে? ও কী হাটার মতো অবস্থায় আছে যে বেরিয়ে গেছে? তোরা কী করছিলি সেখানে?
চেঁচিয়ে উঠে আনিকা চৌধুরী।

আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিতাকে দেখে চুপ হয়ে যায়। মিতাকে দেখে যেন মাথার উপর থেকে বিশাল বড় এক বোঝা নেমে গেলো আবরারের। তাড়াতাড়ি করে ফোন বের করেই একের পর এক কল দিতে থাকে।

আবরার কথা বলা বন্ধ করতেই মিতা আর অপেক্ষা করলো না। নিজের রুমে চলে যায়। নিজের রুম বললে ভুল হবে, গেস্ট রুমে চলে যায়। আফরিন মিতাকে হাটতে দেখেই পিছন পিছন যায়।

–মিতা?
ডাক দেয় আফরিন।

–জ্বি আপু?
আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

–কোথায় ছিলি তুই? অরিয়ন একটা পা…

–তুই কেন আমাকে কোনোদিন বাবা-মার কথাটা বলিস নি আপু?
আফরিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে মিতা।

আফরিন হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে। মাথা নিচু করে রইল আফরিন।

–তুই তো আমার সব থেকে কাছের ছিলি। কেন তুই আমাকে একবারও সত্যটা বলার প্রয়োজন মনে করলি না? বললে..বললে হয়তো আনিকা আন্টির কষ্টটা আমি কমাতে পারতাম। তার চোখের সামনে সারাদিন ঘুরতাম না। তার ছেলেকে বিয়ে করে তার বাড়িতে এসে পড়তাম না।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।

–এখন যখন জানতে পেরেছিস, তখন ভালো আছিস তুই?
প্রশ্ন করে আফরিন।

আফরিনের কথা শুনে অবাক হয়ে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল মিতা।

–ছোট থেকে আমরা তোকে চিনি। মাত্র ৫ বছরের ছিলি যখন বাবা তোকে চিরতরে বাসায় নিয়ে আসে। এরপর এতোটা বছর তোর সাথে থেকে আমরা তোকে তোর থেকেও ভালো চিনতে পেরেছি।
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে আফরিন।

–ছোট অবুজ মিতা এই কথা কোনদিন মেনে নিতে পারতো না। তার শৈশব কেটে যেত নিজেকে দোষারোপ করতে করতে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম তোর বড় হওয়ার। আমরা জানি তোর মনটা কতটা কোমল…এতোটাই কোমল যে তুই ভালো খারাপ বুঝতে চাস না।
মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে আফরিন।

মিতার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। কী করবে? কাকে কী বলবে? এই মানুষগুলা মিতার ভালোই তো চেয়েছিলো, তবে এই ভালো চাওয়াটা কেন এতো কষ্ট দিচ্ছে মিতাকে। সব কিছুর জবাব আর সব প্রশ্নের উত্তর যে মিতার জানতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।

চলবে….