#পারমিতা
#পর্ব_৪৫
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
২ মাস পর।
খাটের উপরে বসে আছেন মায়া চৌধুরী। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। তাকিয়ে আছে নিজের হাতে থাকা ছবির ফ্রেমটির দিকে। ছবিতে ছোটবেলার আফরিন আর মিতাকে দেখা যাচ্ছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। দু জনের মুখেই বিশাল হাসি।
–মা?
মায়া চৌধুরীর কাঁধে হাত রেখে পেছন থেকে ডাক দিয়ে উঠে আফরিন।
আফরিনের ডাক শুনে ফিরে তাকায় মায়া চৌধুরী। আফরিনের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখের পানি যেন দ্রুত গতিতে পড়তে শুরু করেছে।
–নিজেকে একটু সামলাও মা, তা না হলে তুমি যে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
মায়া চৌধুরীর পাশে বসতে বসতে বলে আফরিন।
–আমাকে কোন পাপের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? প্রথমে তোকে নিয়ে এরপর মিতাকে নিয়ে।
কাঁদতে কাঁদতে বলেন মায়া চৌধুরী।
–এভাবে বলো না মা! উপরওয়ালার পরীক্ষা সব কিছুই।
নিজের মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে আফরিন।
–আর কত পরীক্ষার সম্মুখীন হবো আমি? আর কত ধৈর্য্য ধরলে আমার মিতা আমার কাছে ফিরে আসবে?
কাঁদতে কাঁদতে বলেন মায়া চৌধুরী। নিজের হাত দিয়ে ছবির ফ্রেমটি শক্ত করে ধরে রেখেছেন তিনি।
–জানিনা মা, কিছুই জানিনা।
মায়া চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে আফরিন।
মায়া চৌধুরী আর কিছু বললো না। আফরিনের কাঁধে মাথা রেখেই চুপ করে রইল। আফরিনও কিছু না বলে কিছুটা ভাবতে লাগলো। ক্ষণিকেই যেন গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো আফরিন।
******************
রাত ১১ টা ৩০ মিনিট।
ব্লাক কালারের গাড়ি থামে চৌধুরী মেনশনের সামনে। চাবি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে অরিয়ন। কালো রঙের স্যুট প্যান্ট পরা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। চোখের নিচে কালো দাগ, মনে হচ্ছে কতরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তার ঠিক নেই। মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়েছে। ডান হাতে মাঝারি সাইজের একটা বক্স ও শপিং ব্যাগ।
চৌধুরী মেনশনের সবাই ঘুমিয়ে আছে। পুরো বাড়ি অন্ধকার। অরিয়নের গাড়ির শব্দ পেতেই একজন কাজের লোক তড়িঘড়ি করে এসে বাড়ির দরজা খুলে দাঁড়ায়। শায়লা ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
–স্যার খাবার গরম করে দিবো?
অরিয়ন ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই বলে উঠে শায়লা।
–না।
হাটতে হাটতে জবাব দেয় অরিয়ন।
শায়লা আর কিছু না বলেই খাবার গুলো ঢেকে নিজের রুমে ঘুমাতে চলে যায়।
সরাসরি নিজের রুমে গিয়ে ঢুকে অরিয়ন। দরজা লক করেই বেডের কাছে গিয়ে হাতের বক্স ও শপিং ব্যাগ বেডের উপরে রাখে। পরণের স্যুট আর টাই খুলে বিছানার উপর রাখে। আলমারি থেকে নিজের জন্য একসেট কাপড় বের করে ফ্রেশ হতে চলে যায় অরিয়ন।
তোয়ালে হাতে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে অরিয়ন। পরণে সাদা রঙের টি শার্ট ও ট্রাউজার। তোয়ালে দিয়ে নিজের ভিজা চুল মুছতে মুছতে এসে দাঁড়ায় বেডের সামনে। বেডের উপর থাকা ব্যাগের উপর চোখ যায় অরিয়নের। ক্ষণিকেই তোয়ালে থাকা হাতটা যেন স্থির হয়ে রইল। এক নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ব্যাগটার দিকে। ধীরে ধীরে নিজের হাতে থাকা তোয়ালে ছুড়ে কাউচের উপর রাখে অরিয়ন। গিয়ে বসে বেডে। বেড সাইডের টেবিলের উপর থাকা ছবির ফ্রেমটা হাতে তুলে নেয়। এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। ছবিটা কে তুলেছে অরিয়ন জানে না। শুধু জানে ছবিটা অরিয়ন আর মিতার বিয়ের দিনের ছবি। ছবিতে স্টেজে মিতা আর অরিয়ন বসে আছে, দুজনের মুখেই মিথ্যে অভিনয়ের হাসি। বউ রূপে থাকা মিতাকে সেদিন কতটা অপরূপ লেগেছিলো তা একবারের জন্যও খেয়াল করেনি অরিয়ন। কিন্তু এখন? এখন মনে হচ্ছে নিজের সব থেকে সুন্দর একটা মুহূর্ত নষ্ট করে ফেলেছে অরিয়ন।
–খুব ভালো আছিস আমাকে ছাড়া, তাই না?
ছবিতে থাকা মিতার দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কিন্তু তোর রিয়ন একটু ও ভালো নেই তোকে ছাড়া।
নিজেকে নিজে বলে অরিয়ন। কথাটা বলতেই যেন কণ্ঠ ভারী হয়ে আসলো অরিয়নের।
–তোকে ভালো না বেসেও তোর কাছে দেওয়া কথা আমি রেখেছিলাম, বলেছিলাম তোর প্রতি লয়াল থাকবো আর তাই ছিলাম। আফরিন ফিরে আসার পরও ওর দিকে আমি তাকাইনি। আর তুই?
কথাগুলো নিম্নস্বরে বলে অরিয়ন। ইচ্ছে করেই বললো নাকি গলা ভারী হয়ে যাওয়ার কারণে এমন শোনা যাচ্ছে তা বুঝা মুশকিল।
–তুই বলেছিলি তুই আমাকে কখনো ছেড়ে যাবিনা। বলেছিলি তুই আমাকে সব সময় ভালোবাসবি। কী হলো তার?
কথাগুলো বলতে বলতেই অরিয়নের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে মিতার ছবিতে।
–আর যখন তোকে ভালোবেসে নিজের করতে চাইলাম, তুই মিথ্যে আশা দেখিয়ে চো*রের মতো পালিয়ে গেলি।
ছবির ফ্রেমটা শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন। যেন ছবিতে থাকা মিতাকেও পালিয়ে যেতে দিবে না অরিয়ন।
–যার সাথে পালিয়েছিস তার সাথে খুব ভালো আছিস তাই না?
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে অরিয়ন। এতোক্ষণ অরিয়নের কন্ঠে ফুঁটে উঠা অভিমান বা দুর্বলতা যেন ক্ষণিকেই সরে গেল। ভেসে উঠেছে গাম্ভীর্যতা। কথাগুলো কর্কশ লাগছে শুনতে।
–ভালো থেকে নে। যতোদিন পারিস ভালো থেকে নে।
মৃদু হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–তোর আশিকের র*ক্তে তোকে গোসল করিয়ে, পবিত্র করেই বাড়িতে নিয়ে আসবো।
কথাটা বলতেই হাসি সরে যায় অরিয়নের মুখ থেকে।
–বাই দা ওয়ে, শুভ জন্মদিন মাই লাভ।
ছবিটার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–তোর জন্য কী এনেছি দেখ!
খাটের উপর থাকা বক্স হাতে নিতে নিতে বলে অরিয়ন।
মিতার ছবিটা বালিশের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড় করায় অরিয়ন। অতি আগ্রহ নিয়ে বক্স খুলতেই বেরিয়ে আসে ছোট একটা কেক। যেখানে সুন্দর করে লিখা ” HAPPY BIRTHDAY, MY LOVELY WIFE”।
–তুই নেই বলে কি তোর জন্মদিন ভুলতে পারি আমি? কোনদিন কী ভুলেছি? এবারও ভুলিনি।
কেকটা মিতার ছবির দিকে এগিয়ে রেখে বলে অরিয়ন।
নিজে নিজে কেক কাটে অরিয়ন। ছবিতে থাকা মিতার দিকে এক পিস কেক এগিয়ে দেয় অরিয়ন।
–মনে আছে তোর? গত বছর আমার কাছে বায়না ধরেছিলি একটা ডায়মন্ডের নেকলেসের জন্য?
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন। কেকের পিসটা আবারও নিজের যায়গায় রেখে দেয়।
–আর তোর প্রিয় অনিয়ন তোকে সেটা দিয়েছিলো, তোর ১৮তম জন্মদিনে। মনে আছে তোর?
–এবার ও স্পেশাল গিফট চাই তাই না?
অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–নিয়ে এসেছি তো, তোর রিয়ন তোর জন্য স্পেশাল গিফট নিয়ে এসেছে।
কথাটা বলেই শপিং ব্যাগটা খুলে অরিয়ন।
–টাডা…
কথাটা বলেই শপিং ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে ছবিটার সামনে ধরে অরিয়ন।
–এটা কী এনেছি সেটা ভাবছিস তাই তো?
ভ্রু কুঁচকে বলে অরিয়ন।
–এটা হচ্ছে দড়ি।
বিশাল এক হাস দিয়ে বলে অরিয়ন।
–আমি ও কী বোকা! এটা কি সেটা তো তুই জানিস ই। কেন এনেছি সেটাই ভাবছিস তাই তো?
নিজের মাথায় নিজের হাত দিয়ে থাপ্পড় মে*রে বলে অরিয়ন।
–এটা তোর নতুন নেকলেস।এটা দিয়ে তোকে বেঁধে রাখবো, যেন কখনো চাইলেও আমাকে ছেড়ে যেতে না পারিস… তোর ধোঁকায় একবার পা দিয়েছি সেই ভুল আর দ্বিতীয় বার করছি না আমি।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন। মুখ থেকে হাসি বা অভিমান সব সরে গিয়ে শুধুই গাম্ভীর্যতা প্রকাশ পাচ্ছে।
–এবার আমার থেকে তোকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, কেউ না৷ তুই নিজেও না।
কথাটা বলে মিতার ছবির পাশে থাকা বালিশে মাথা রাখতে রাখতে বলে অরিয়ন।
–শুধুমাত্র একটা সুযোগের অপেক্ষায়। শুধুমাত্র একবার জানতে পারলেই হচ্ছে কোথায় আছিস তুই।
বিরবির করে বলতে বলতে মিতার ছবিটা নিজের বুকে চেপে ধরে অরিয়ন।
–তোকে ফিরিয়ে আনবোই, ফিরিয়ে আনবোই। YOU WILL BE MINE. YOU WILL BE MINE ONLY.
বিরবির করে বলতে বলতেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে অরিয়নের।
********************
আরও ৪ মাস পর।
–কী বা*লের ডিটেকটিভিটি করেন আপনারা? ১৯ বছরের একটা মেয়ের সন্ধান বের করতে পারছেন না!
রাগান্বিত অরিয়ন টেবিলের উপর রাখা ফাইল ছুড়ে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে।
–আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি কিন্তু ম্যামকে খুজে বের করার কোনো রাস্তাই খোলা নেই।
জবাব দেয় ৪৮ বছরের এক মধ্য বয়স্ক লোক।
–এই কথা আরও ৬ মাস আগে থেকে শুনে আসছি আমি। আমাকে নতুন কিছু শুনান।
বিরক্তি প্রকাশ করে বলে অরিয়ন।
–নতুন কিছু শুনানোর মতো কোনো খবর নেই স্যার। আমরা কোনো ভাবেই সফল হতে পা..
–চুপ থাকুন।
চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন। দু কদমে এগিয়ে যায় লোকটির সামনে। ভয়ে কাচুমাচু করতে থাকে বয়স্ক লোকটি।
–আপনি বয়সে আমার থেকে বড়, তা ভুলে যাওয়ার আগেই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যান। না হয়…না হয় আমি কি করে বসবো ইউ হেভ নো আইডিয়া
দাঁত কিরমির করে বলে অরিয়ন। অরিয়নের কথা শেষ হতেই তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় লোকটি।
নিজের অফিস রুমে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। মিতার খবর নেই ৬ মাস হয়ে গেছে। এই ৬ মাস অরিয়ন কীভাবে প্রতিটা দিন পার করেছে তা একমাত্র অরিয়ন নিজেই জানে। যতো দিন যাচ্ছে ততোই ইচ্ছে করছে মিতাকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার। ডিটেকটিভ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ১৯ বছরের একটা মেয়ে কীভাবে সব কিছু এভাবে সাজিয়েছে তা মাথায় ঢুকছে না অরিয়নের।
–তোকে আমি খুজে বের করবোই, খুজে বের করবোই।
রুমের মধ্যে পায়তারা করতে করতে বলে অরিয়ন।
–আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না তুই, শুনতে পারছিস? আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না। ছেড়ে যেতে দেবো না আমি।
অরিয়নের কন্ঠে শুধু বেকুলতা প্রকাশ পাচ্ছে। ক্ষণি চেচামেচি করছে তো ক্ষণি চুপ করে থাকছে।
***************
কিছুক্ষণ পর।
চেয়ারে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে বসে আছে অরিয়ন। ডিটেকটিভ যাওয়ার পর থেকে এভাবেই বসে আছে। নিজেকে আজ বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। এতো টাকা পয়সা কোনো কিছুই যেন মিতাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারছে না। রুমের মধ্যে সব কিছু এলোমেলো ভাবে পরে আছে। পরিষ্কার করতে আসলেও অরিয়নের ভয়ে রুমে থাকার সাহস করেনি কাজের লোক।
দরজা খোলার শব্দ শুনতেই চোখ মেলে তাকায় অরিয়ন। সাথে সাথেই বিগরে যায় মেজাজ।
— Get out.
মাথা তুলে তাকানোর আগেই চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আফরিন। পড়নে সাদা রঙের থ্রি পিস। ওড়না গলায় ঝুলছে। চুলগুলো ছাড়া। আফরিনও যে মিতাকে ছাড়া খুব ভালো নেই তা আফরিনের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। অরিয়ন মাথা তুলতেই দেখতে পায় দাঁড়িয়ে থাকা আফরিনকে। আফরিনকে দেখে কিছু বললো না। নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। আফরিন রুমটা একবার ভালোভাবে দেখে নিলো। ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।
অরিয়নের অপজিটে থাকা চেয়ার টেনে বসে আফরিন। এবার আফরিনের দৃষ্টি শুধুমাত্র অরিয়নের দিকে। খুব ভালো করে লক্ষ্য করছে অরিয়নকে। এভাবে অরিয়নকে দেখেই বুকের মধ্যে যেন চিনচিন করতে শুরু করলো আফরিনের।
আফরিন চেয়ারে বসতেই আবারও আফরিনের দিকে তাকায় অরিয়ন।
–কেন?
হুট করেই বলে উঠে আফরিন।
আফরিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না অরিয়ন। ভ্রু কুঁচকে তাকায় আফরিনের দিকে। কী বলতে চাচ্ছে বোঝায় চেষ্টা করে।
আফরিনও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে অরিয়নের দিকে।
–কেন আমাকে ভুলতে পারলে আর মিতাকে পারছো না?
প্রশ্ন করে আফরিন। ক্ষণিকের জন্যও চোখ সরছে না আফরিনের।
অরিয়ন অবাক হয়ে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। “তাই তো!” মনে মনে ভাবে অরিয়ন। কী জবাব দিবে জানেনা। শুধু জানে এমনটা আর কখনো অনুভব করেনি অরিয়ন।
–কেন আমার পালিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারলেও মিতার পালিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছো না?
আবারও প্রশ্ন করে আফরিন।
অরিয়ন এক দৃষ্টিতে বড় বড় চোখ করে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। মিতার পালিয়ে যাওয়ার কথাটা শুনতেই চোখমুখ কঠোর হয়ে যায়। যেন এই বাস্তবতাটা মানতেই পারছে না অরিয়ন।
–কেন এভাবে আমাকে ভালোবাসতে পারলে না?
করুণ সুরে বলে আফরিন। আফরিনের চোখ ভিজে এসেছে। আজ কথাগুলো না বলে আর থাকতে পারলো না আফরিন। মন যে কোনো ভাবেই মানতে চায় না। মানতে চায় না,অরিয়ন মুভ অন করে নিয়েছে। এতো সহজে আফরিনকে কেনই ভুলে গেল? কেন একই অরিয়ন দুটি মানুষকে দুভাবে ভালোবাসলো তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে আফরিনের।
না, আফরিন অরিয়নের কাছে ফিরে যেতে চায় না। শুধু চায় কিছু প্রশ্নের জবাব। যেন নিজের মনকে বোঝাতে পারে সে কারও থেকে কম নয়। সেও ভালোবাসার যোগ্য। সেও এরকম ভালোবাসার যোগ্য।
অরিয়ন অসহায়ের মতো আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। আফরিনের চোখের কোণের পানি ঠিকি দেখতে পারছে অরিয়ন। হঠাৎ করেই রাগ হচ্ছে অরিয়নের। নিজের উপর। কেন হচ্ছে জানেনা। কিছুই জানেনা। শুধু জানে মিতাকে ওর চাই। মিতার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলেও মিতাকে ওর চাই। মিতার বিয়ে হয়ে যদি বাচ্চাও হয়ে যায় তাও মিতাকে অরিয়নের চাই। কোনো কিছুই যেন মিতাকে ভুলে যাওয়ার খেয়াল মাথায় ঢোকাতে পারছে না অরিয়নের।
–আমি জানিনা, আমি জানিনা।
অধৈর্য্য অরিয়ন নিজের চুল টেনে ধরে চেঁচিয়ে উঠে।
–আমি কিছুই জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি এমনটা আর কখনো অনুভব করিনি। আমি ওকে ভুলতে পারছি না।
চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলে অরিয়ন।
–আমাকে ক্ষমা করো। যদি তোমার সাথে আমি অন্যায় করে থাকি তবে আমাকে ক্ষমা করো, আফরিন।
আফরিনের দিকে মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।
ভালোবাসায় তো জোর খাটে না। তাই বলে আফরিনকে অযোগ্য বলেও প্রমাণ করতে চায় নি অরিয়ন। কেন সব এমন উলোটপালোট হয়ে গেল বুঝতে পারছে না।
–হয়তো তুমি….
কথাটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে রইল আফরিন।
নিজের এক হাত দিয়ে অন্য হাতের নখগুলো খুটিয়েই যাচ্ছে।
দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়ন সবটাই লক্ষ্য করছে। আফরিনের এটা ছোটবেলার অভ্যাশ। নার্ভাস হলেই হাত দিয়ে নখের উপর অত্যাচার চালায়।
–হয়তো তুমি আমাকে কোনোদিন ভালোই বাসোনি।
মাথা নিচু করা আফরিন আস্তে করে বলে উঠে। অরিয়ন সবটাই শুনেছে।
–আফরিন…
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।
“কী বলছে আফরিন এসব? ভালোবাসিনি?”
–হয়তো আমি তোমার সেই বন্ধু ছিলাম, যার প্রতি লয়াল থেকে বাকিটা জীবন তো পার করা যায় কিন্তু তার দূরত্ব তোমাকে ততোটা ব্যাকুল করতে পারেনা, যতোটা ব্যাকুল জীবনসঙ্গিনী হারালে হয়।
মাথা নিচু থাকা অবস্থায় বলে আফরিন।
–হয়তো মিতাই তোমার সেই জীবনসঙ্গিনী।
মাথা তুলে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে আফরিন।
আফরিনের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
অরিয়ন কিছু বললো না। আফরিন যে, একেবারে ভুলও বলেনি তা বুঝতে পারছে অরিয়ন।
–I am so sorry, I am so sorry.
চেয়ারে গিয়ে বসতে বসতে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের চোখেমুখে অপরাধবোধ ফুঁটে উঠেছে। কী জন্য জানেনা।
–এমনটা কখনো ভেবেনো যে, তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছো। তোমার সাথে কাটানো ৬ টা বছর তুমি আমাকে সেভাবেই সম্মান দিয়েছো যেভাবে আমি তার প্রাপ্য ছিলাম। তোমাকে দেখেই এতোকিছুর পরও আমি ছেলেদের বিশ্বাস করতে পারছি, আফনান।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে আফরিন।
–তোমার মতো ছেলেদের দেখেই মেয়েরা ভালোবাসতে শিখে।
মৃদু হেসে বলে আফরিন।
–আমি চাই তুমি আর মিতা খুব ভালো থাকো। কখনো আমাকে দেখে যেন তোমার মন খারাপ না হয় অথবা তোমাকে দেখে আমার মন খারায় না হয়,সেই জন্যই সব কিছু ক্লিয়ার করতে এসেছি আমি।
–বন্ধু হিসেবে সব সময় আমাকে তোমাদের পাশে পাবে।
কথাটা বলতে বলতেই উঠে দাঁড়ায় আফরিন।
অরিয়ন আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। অবাক হয়ে। বন্ধু হিসেবে অথবা এক সময়ের প্রেমিকা হিসেবে ভুল মানুষকে বাছাই করেনি ভেবেই। আফরিনের প্রতি সম্মান যেন হাজারগুন বেড়ে গেল অরিয়নের।
–আজ যাই।
বলে আফরিন।
–ধন্যবাদ তোমাকে। আমাকে এতোটা বুঝার জন্য।
বলে অরিয়ন।
আফরিন কিছু বললো না। আলতো করে এক হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে……
#পারমিতা
#পর্ব_৪৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে আজ। আশেপাশের সব কিছু যেন এই বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে আরও দু তিনদিন এভাবেই বৃষ্টি পড়বে।
সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। গতকাল রাত ৩ টায় বাড়িতে ফিরেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই প্রচন্ডরকম মাথা ব্যাথা করছে। ঔষধ খেলেও মাথা ব্যাথা কমার কোনো নাম গন্ধ নেই। তাই আজ বিকালেই অফিস থেকে বাসায় চলে এসেছে অরিয়ন।
সন্ধ্যার পর ঘুম ভাঙ্গতেই বুঝতে পারে মাথা ব্যাথা এখনো কমেনি। পাশেই রাখা রং চা। কে বা কখন দিয়ে গেছে কিছুই জানেনা তবে চা দেখে মনে হচ্ছে অনেক আগেই দিয়ে গেছে। পানির মতো ঠান্ডা হয়ে আছে পুরো।
বিছানার উপর বসে থাকা অরিয়ন জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে এখনো বৃষ্টি পড়ছে। কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন। হাটতে হাটতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির গতি এখনো আগের মতোই, আকাশে চাঁদের আলো কম। মেঘে প্রায় পুরোটাই ঢেকে যাচ্ছে। বাইরে জ্বলছে লাইটের আলো। সব কিছু এই বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেলেও অরিয়নের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগ হচ্ছে এটা ভেবে যে, এই বৃষ্টি সব কিছু সুন্দর করে দিতে পারলেও অরিয়নের জীবনটা সুন্দর করে দিতে পারেনি। অরিয়নের পরী এখনো অরিয়নের কাছে ফিরে আসেনি।
কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজের শক্তি আর সামর্থ্য দিয়ে সবটাই চেষ্টা করে দেখেছে অরিয়ন তাও মিতার কোনো সন্ধান পায়নি।
–কোন অপরাধের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছিস আমাকে?
আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে অরিয়ন।
–আমার প্রতি কী একটু করুণাও হয় না তোর? এতো নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি তুই?
আবারও বলে অরিয়ন।
–প্লিজ ক্যাম বেক, প্লিজ।
কথাটা বলতেই যেন সব বাধা ভেঙ্গে পড়লো। অরিয়নের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে। এবার অরিয়ন নিজেকে সামলানোর বা মন শক্ত করার কোনো চেষ্টাও করলো না। স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেও কেঁদে যাচ্ছে।
–প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ আল্লাহ। আমার উপর একটু করুণা করুন। পরীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন,প্লিজ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় চোখ বন্ধ করে অনুরোধের সুরে বলতে থাকে অরিয়ন।
*****************
নিজের রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় আবরার। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে।
–ফা*ক ইউ ভাইয়া, ফা*ক ইউ।
হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে উঠে আবরার।
একটু আগেই বিজনেস নিয়ে অরিয়নের সাথে কথা বলার জন্য অরিয়নের রুমে গিয়েছিলো আবরার। দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। অনুরোধের সুরে পরীকে ফিরে আসার অনুরোধ করছে। নিজের ভাইকে এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে আর সহ্য করতে পারেনি আবরার। চলে আসে নিজের রুমে।
ছোটবেলা থেকেই অরিয়নকে দেখে এসেছে একজন আদর্শ ছেলে হিসেবে, একজন আদর্শ ভাই হিসেবে। এরপর একজন বয়ফ্রেন্ড হিসেবে। মনে মনে ইচ্ছা ছিলো নিজেও অরিয়নের মতো হবে। কিন্তু এখন? এখন সেই অরিয়নকে এভাবে দেখে তা কীভাবে সহ্য করবে আবরার? আর মিতার কথাই বা কীভাবে ভুলে যাবে? অরিয়ন আর মিতা দুজনেই যে আবরারের খুব প্রিয়।
–ফরগিভ মি, ফরগিভ মি।
নিজে নিজে বলতে বলতেই টেবিলের উপর থেকে নিজের ওয়ালেট তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবরার।
*******************
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে নিয়েছে অরিয়ন। গতকাল রাতেও ঘুমাতে পারেনি অরিয়ন, চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় কানে ফিসফিস করে মিতা কথা বলছে। এই রুমে শুধু মিতার স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়ায় অরিয়নকে। তাই যতোটা সম্ভব অফিসেই থাকার চেষ্টা করে। দু/চারদিনের মধ্যে আর বাসায় আসবে না ঠিক করেছে অরিয়ন। টাই বাঁধতে বাঁধতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে অরিয়ন।
সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনি লক্ষ্য করে আবরারের রুমের দরজা একটু করে খোলা। ৬/৭ দিন আগে শেষবার দেখা হয়েছিলো আবরারের সাথে। মিতাকে খুঁজে বের করতে এতোটাই মরিয়া হয়ে পড়েছিলো যে, পরিবারের কারো সাথেই তেমন ভাবে আর যোগাযোগ হয়নি অরিয়নের। আবরার যে নিজের জীবনের চাইতেও অরিয়নকে ভালোবাসে তা খুব ভালোই জানে অরিয়ন। দু /চারদিন আর বাড়িতে ফিরবে না বলেই ঠিক করলো আবরারের সাথে একবার দেখা করেই অফিসে যাবে।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে ৬:১০ বাজে। এতো সকালে আবরারকে হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় পাবে তাও আজ খুব ইচ্ছে করছে এক নজরের জন্য হলেও নিজের ভাইকে দেখতে। এতো কিছু না ভেবে আবরারের রুমের দিকে হাটা শুরু করে অরিয়ন। আবরার হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ভেবে দরজায় কড়া নাড়ে অরিয়ন। দরজায় কড়া নেড়ে একটু অপেক্ষা করলেও জবাব আসলো না । কিছু না ভেবেই দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় বিছানা খালি। বেডের দিকে এগিয়ে যেতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুম থেকে শব্দ শোনা যাচ্ছে। অপেক্ষা করবে নাকি চলে যাবে বুঝতে পারছে না অরিয়ন। বিছানার উপর একটু ইতস্তত বোধ করতে করতেই বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।
আবরারের মোবাইল বিছানায় পড়া। হুট করেই কল বাজাতে একটু চমকে যায় অরিয়ন। মোবাইলের দিকে চোখ যেতেই লক্ষ্য করে কল এসেছে। স্ক্রিনে নাম নেই শুধু তিনটে লাভ দেওয়া। অরিয়নের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, আবরারও এবার সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে গেছে। আলতো করে একটু হাসি ফুঁটলো অরিয়নের ঠোঁটে।
মোবাইলে একের পর এক কল বেজেই যাচ্ছে নন স্টপ। আর্জেন্ট ভেবে মোবাইল হাতে তুলে নেয় অরিয়ন,বিছানা থেকে উঠে দু কদম এগোতেই কল বাজা বন্ধ হয়। ভেবেছিলো ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে আবরারকে মোবাইলটা দিয়ে আসবে কিন্তু অরিয়ন দাঁড়াতেই বন্ধ হয়ে গেল। আবারও বিছানার দিকে এগোতেই কলে মেসেজের নোটিফিকেশন শব্দ শুনতে পায় অরিয়ন। ছোট ভাইয়ের প্রেমিকার মেসেজ না দেখার জন্য কোনোমতে অন্যদিকে চোখ দিয়ে রাখে। আবারও বিছানার উপর মোবাইল রেখে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়ন।
আবারও কল বাজা শুরু হয়। এবার একটু বিরক্ত হয় অরিয়ন। ‘ কী এক অবস্থা, একটু সময় ও দিচ্ছে না মেয়েটা। একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে, পাগল নাকি!’ মনে মনে ভাবে অরিয়ন। রাগে মোবাইল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।
-তো..
মুখ থেকে বাকি কথা বের হওয়ার আগেই আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে অরিয়ন। ইচ্ছে করছে এক আছাড়ে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলতে।
মোবাইলে আবারও শব্দ হতেই সাথে সাথেই চোখ যায় মোবাইলের দিকে। এবার লজ্জা সরম ভুলে মেসেজে কী বললো তা দেখে অরিয়ন। স্ক্রিনে চোখ যেতেই যেন আশেপাশের সব কিছু থেমে গেল। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল মোবাইলের দিকে।
“মিতা বলেছে তোমাকে একটা কথা বলতে,আর্জেন্ট”
চোখে দেখা মেসেজটি যেন বিশ্বাস করতে পারছে না অরিয়ন। কিছু না ভেবেই কল করার উদ্দেশ্যে লক খোলার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় অরিয়ন। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে কি সব বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে নিজেও জানেনা। অরিয়নের ঘোর কাটলো যখন ঐ নাম্বার থেকে আবারও কল আসা শুরু করে তখন। কল আসার সাথে সাথেই রিসিভ করে অরিয়ন।
–কোথায় থাকো তুমি? হ্যাঁ? মিতা হাজারটা কল করেছে আমাকে আর আমি তোমাকে। মিতার ব্যাপারে কথা আছে বললাম না?
অপর পাশ থেকে অল্প বয়সী এক মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে আসে।
মেয়েটা যা বলছে তা যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে অরিয়নের কাছে। কোথায় খোঁজ করেনি অরিয়ন? আর সেই মিতা নাকি অরিয়নের এতো চোখের সামনে লুকিয়ে ছিলো।
–কী হয়েছে, কথা বলছো না কেন?
আবারও বলে মেয়েটি।
–মেহু হিরো নাম্বার ওয়া….ফা*ক।
গান গাইতে গাইতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই অরিয়নকে সামনে দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠে আবরার।
–তুই এখানে কী করছিস? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
বুকের উপর হাত রাখতে রাখতে বলে আবরার।
অরিয়ন আবরারের কথার কোনো জবাব দিলো না। বড় বড় চোখ করে আবরারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অন্যদিকে, আবরার অরিয়নের এভাবে তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কানের কাছে মোবাইল ধরা অবস্থায় এভাবে কেন ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারছে না আবরার।
–কী হয়েছে? এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? খেয়ে ফেলবি নাকি?
হাসতে হাসতে বলে আবরার।
অরিয়নকে ইগনোর করে বিছানার দিকে দু কদম এগোতেই চোখ যায় বিছানার উপর। বিছানার উপর রাখা আবরারের মোবাইল আর বিছানায় নেই। মুখ থেকে হাসি সরে যায় আবরারের। বিছানা ও এর আশেপাশের টেবিলে চোখ বুলিয়ে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করে।
–WHERE IS SHE?
পেছন থেকে অরিয়নের গম্ভীর কন্ঠ শুনতে পায় আবরার।
ক্ষণিকেই ঘুরে তাকায় অরিয়নের দিকে। এক দৌড়ে গিয়ে অরিয়নের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় আবরার। স্ক্রীনে চোখ যেতেই থতমত খেয়ে যায় আবরার।
–WHERE IS SHE?
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আবারও প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–Who?
না বুঝার ভান করে উলটো প্রশ্ন করে আবরার।
–I aked where is she?
আবরারের দিকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন। প্রতিনিয়ত অরিয়নের ধৈর্যের সীমা যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে।
–And i said who?
–YOU FU*KING BUST*ARD.
ক্ষণিকেই অরিয়নের দু হাত গিয়ে আবরারের শার্টের কলার চেপে ধরে। আবরার যেন কিছু বুঝে উঠার সময়ও পেলো না।
–তুই জানিস না কার কথা বলছি? জানিস না? আমার পরী কোথায়?
নিজের শক্তি দিয়ে আবরারের শার্টের কলার টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলে অরিয়ন।
–কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ওকে? বল।
রাগান্বিত অরিয়ন আবারও প্রশ্ন করে।
–আমি কিছু জানিনা।
জবাব দেয় আবরার।
অরিয়ন আর কিছু বললো না। মুহূর্তেই আবরারের মুখে ঘুষি মারে অরিয়ন। সাথে সাথে ঠোঁট কেটে র*ক্ত বের হওয়া শুরু হয় আবরারের।
–পরী কোথায়? কোথায় ও?
চেঁচিয়ে বলতে থাকে অরিয়ন।
আবরার কোনো উত্তর দিলো না। চুপ করেই থাকলো।
–আরিয়ান, আমি কিন্তু ভুলে যাব তুই আমার ভাই। পরী কোথায় বল!
কলার ধরা অবস্থায় কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে অরিয়ন। অরিয়নের পুরো শরীর অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে।
–আমি জানিনা।
মাথা নিচু করে জবাব দেয় আবরার।
আবরারের কথা শুনে যেন ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললো অরিয়ন। পরক্ষণেই একের পর এক ঘুষি মারতে থাকে আবরারের কলার ধরে।
–তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই না। এটা সেই মিতা না, ভাইয়া।
বলে আবরার।
–Don’t you fu*king dare… Dare to lie, Abrar.
কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় নিচতলার ড্রয়িং রুমে।
–আমি মিথ্যা বলছি না।
জবাব দেয় আবরার।
অরিয়ন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আবরারের শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে একটু পিছিয়ে আসে। কতক্ষণ মাথা নিচু করে রাখলো জানেনা তবে যখন মাথা উঁচু করে আবরারের দিকে তাকালো, তখন যেন আবরারের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু হয়েছে। আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়নের চোখ প্রায় ভেজা। মনে হচ্ছে রাগে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না। অরিয়নকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সবকিছু হারিয়ে নিস্ব হয়ে গেছে।
–প্লিজ, আমি তোর কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি। পরী কোথায় আমাকে বল,প্লিজ।
আবরারের কাছে এসে আবরারের হাত ধরে বলে অরিয়ন।
আবরার শুধু অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না।
–প্লিজ আরিয়ান। পরী কোথায় আছে আমাকে বল, প্লিজ। তোর পায়ে ধরতে হবে? ধরতে রাজি আছি। তাও বল পরী কোথায়।
বলে অরিয়ন।
–এভাবে বলিস না প্লিজ, ভাই।
বলে আবরার।
–তাহলে বল পরী কোথায়?
উৎসুক দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মনের মধ্যে যেই আশা জেগেছে তা কোনো মতেই আর দমাতে পারছে না অরিয়ন।আবরারকে দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে বলে দিবে সব কিছু। যতই হোক আবরার যে অরিয়নের কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তা অরিয়ন ভালো করেই জানে।
মৃদু হাসি দিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়ন।
–আমি জানিনা।
আবরারের জবাবে অরিয়নের মুখে থাকা মৃদু হাসিটা ক্ষণিকেই মলিন হয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন। কি করবে বুঝতে পারছে না। মাথায় যেন র*ক্ত উঠে যাচ্ছে অরিয়নের। ক্ষণিকেই ঝাপিয়ে পড়ে আবরারের উপর। এক ঘুষিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবরার,শুয়ে থাকা আবরারের উপর একের পর এক আঘাত করতে থাকে অরিয়ন।
–বল পরী কোথায়? বল। আমার পরী কোথায় বল তা না হলে আমি পাগল হয়ে যাব।
আবরারকে আঘাত করতে করতে বলতে থাকে অরিয়ন।
আবরার নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টাই করে যাচ্ছে কিন্তু অরিয়নের উপর যেন অজানা শক্তি ভর করেছে। কোনো মতেই অরিয়ন থেকে ছুটে আসতে পারছে না আবরার।
–পরী কোথায় বল? পরী কোথায়? ফা*কার বল, আমার পরী কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস পরীকে বল।
পাগলের মতো চেঁচিয়ে যাচ্ছে আর আবরারকে আঘাত করে যাচ্ছে অরিয়ন।
আবরারের নাক মুখ দিয়ে র*ক্ত প্রবল ভাবে পড়তে শুরু করেছে কিন্তু সেদিকে যেন অরিয়নের চোখ গেলো না। অরিয়নের মাথায় শুধু এক কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ” ও জানে আমার পরী কোথায়”।
–তুই কী ভেবেছিস, আমার পরীকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যাবি? পারবি না কখনো,পারবি না।
আবরারকে আঘাত করতে করতে বলে অরিয়ন।
— এতো চেঁচামেচি কি….
–কী হলো সকাল স…
হাবিব চৌধুরী আর আনিকা চৌধুরী রুমের মধ্যে আবছা আবছা চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসে। সকাল সকাল কাজের লোকদের মধ্যে কী নিয়ে ঝামেলা লাগলো তা নিয়ে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়েই আবরার আর অরিয়নকে এই অবস্থায় দেখে যেন দুজনেই পাথর হয়ে রইল।
–অরিয়ন কি করছিস তুই বাবা।
আনিকা চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে অরিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
–অরিয়ন, কী হচ্ছে এসব। ছাড়ো আরিয়ানকে।
অরিয়নের কাঁধে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।
–বল আমার পরী কোথায়, কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস বল।
এক হাত দিয়ে আবরারের কলার ধরে অন্য হাত দিয়ে আবরারকে ঘুষি মারতে মারতে বলে অরিয়ন।
–মিতা?
অবাক হয়ে বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।
–ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
হাবিব চৌধুরী অরিয়নকে টেনে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই চেঁচাতে থাকে অরিয়ন।
–ছাড় ওকে, কী হয়েছে আমাকে বল।
অরিয়নকে সরিয়ে নিয়ে এসে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কী হয়েছে তা তোমার গুনধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো। ও জানে পরী কোথায়। পরীকে ও লুকিয়ে রেখেছে।
আবরারের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন। হাবিব কোনো মতেই যেন অরিয়নকে ধরে রাখতে পারছে না। আনিকা চৌধুরী গিয়ে আবরারের পাশে বসেছে।
–আরিয়ান, কী বলছে অরিয়ন এসব।
জিজ্ঞেস করে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কিছু বললো না।
–ওর গার্লফ্রেন্ড জানে মিতার কথা। দু জনে মিলে কী চালাকি করছে জিজ্ঞেস করো ওকে।
বলে অরিয়ন।
–গার্লফ্রেন্ড? কে গার্লফ্রেন্ড?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–আমি জানিনা। ওকে বলো পরী কোথায় বলতে।
বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন যা বলছে তা কী সত্যি? তুই কী জানিস মিতা কোথায় আছে?
আবরারের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কিছু বললো না। মাথা নিচু করেই রইল। জীবনে কোনোদিন নিজের মা বাবার কাছে মিথ্যা কথা বলেনি আবরার। আজও কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না।
আবরারের চুপ থাকা দেখে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় হাবিব চৌধুরীর কাছে।
–ওর থেকে কিছু জানতে হবে না। ওর মোবাইল কোথায়?
আশেপাশে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করতে করতে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় আবরারের।
–মোবাইল কী জন্য লাগবে? মিতা কোথায় আমি জানিনা বললাম তো।
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আবরার।
–তোমার কিছু আর জানতে হবে না। যা জানার এখন তোমার গার্লফ্রেন্ড থেকেই যেনে নি…
–খবরদার বাবা, খবরদার এসব কিছুতে যদি ওকে জড়িয়েছো।
অপরিচিত এক কণ্ঠে বলে উঠে আবরার।
–পরীকে তো আমি খুজে বের করবোই কিন্তু তোর প্রেমিকাকে যেন কোনোদিন খুজে না পাস সেই ব্যবস্থাও করে দিবো আমি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–আমি বেঁচে থাকতে পারলে করে দেখাস। ভাই বলে এতোক্ষণ কিছু বলিনি কিন্তু ওকে টানলে ভুলে যাব তুই বড় ভাই হস।
অরিয়নের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে আবরার কিন্তু আনিকা চৌধুরী দু হাত দিয়ে ধরে রেখেছে আবরারকে।
–তাহলে এটা ভালোই জানো আমি কী করতে পারি? পারলে আমাকে ঠেকাস।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–বাবা…
পরাজয়ের সুরে বলে উঠে আবরার।
–হয় মিতা আর না হয় তোমার গার্লফ্রেন্ড। ভেবে নেও কে বেশি ইম্পোর্টান্ট।
বলে হাবিব চৌধুরী।
আবরার চুপ করে রইল। মুখ ফুঁটে কিছু বলার চেষ্টা করলো না।
–হ্যালো? আবরারের কল লিস্ট চেক করে আজ সকালে যেই মেয়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে তার সব ডিটেইলস আমাকে সে…
–বাবা।
হাবিব চৌধুরী ফোনে কাউকে পুরো কথা শেষ করার আগেই অনুরোধের সুরে বলে উঠে আবরার।
–যেই হোক ২০ মিনিটের মধ্যে টেনেহিঁচড়ে হলেও ঐ মেয়েকে আমার বাড়িতে চাই আমি।
আবরারের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে ফোনে বলে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল হাবিব চৌধুরীর দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরেছে।
–পরী ঢাকায় আছে।
বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে মাটিতে বসে পড়ে অরিয়ন। এই ৬ টা মাস কীভাবে পার করেছে তা একমাত্র অরিয়ন নিজেই জানে। সেই মিতার খবর জানতে পেরে নিজেকে যেন আর সামলাতে পারলো না অরিয়ন। মৃদু হাসি ফুঁটে অরিয়নের ঠোঁটে।
–I am coming. Coming.
বিরবির করে বলে অরিয়ন।
চলবে…
#পারমিতা
#পর্ব_৪৭
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
–ফা*ক ইউ ফাহমিদা, ফা*ক ইউ।
রাগান্বিত আবরার নিজের রুমে প্রবেশ করতেই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।
র*ক্তাক্ত আবরারের চেহারা ভালো করে চেনাও যাচ্ছে না। এতো মার খাওয়ার পরও মুখ খুলেনি আবরার কিন্তু ফাহমিদার কথা উঠতেই যেন মাথা খারাপ হয়ে গেল। না চাইতেও সব বলে দিতে হয়েছে।
ফাহমিদা। মিতার বান্ধুবী। কী থেকে কী হয়ে গেল কিছুই মাথায় ঢুকছে না আবরারের। শুধু এইটুকু জানে, ফাহমিদার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ তুলে নিবে আবরার।
ফ্ল্যাশব্যাক :
সবাইকে না বলে মিতা যেন কোথায় চলে গেছে আজ ১৫ দিন। বাড়ির সবাই বিশেষ করে অরিয়ন পাগলের মতো খুঁজেও মিতার কোনো খোঁজ পায়নি। হাবিব চৌধুরী তো দিন-রাত এক করে দিচ্ছে শুধুমাত্র মিতার সন্ধান পাওয়ার জন্য কিন্তু মনে হচ্ছে ভাগ্যও চায় না মিতাকে কেউ খুঁজে পাক, তাই তো সবার চেষ্টাই বৃথা যাচ্ছে।
আবরার নিজের কেবিনে বসে ফাইল চেক করতে ব্যস্ত। অরিয়ন মিতাকে খুঁজতে এতোটাই মরিয়া হয়ে পড়েছে যে,অফিসে টাইম দেওয়া অরিয়নের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই হাবিব চৌধুরী আবরারকে অফিসে বসিয়েছে।
যদিও আবরারের মন চাচ্ছে না এখানে থাকতে, ইচ্ছে করছে নিজের বাবা আর ভাইয়ের সাথে মিতাকে খুঁজতে কিন্তু হাবিব চৌধুরী আবরারের কোনো কথা শুনতেই চাইলেন না। বাধ্য হয়েই কাজ করছে আবরার।
–ফাইলটা আমাকে গতকাল চেক করে দেওয়ার কথা ছিলো আর আপনারা, আপনারা আজকেও পারেননি চেক করে দিতে!
সামনে বসে থাকা দুজন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে আবরার।
–সরি স্যার। এরকম আর হবেনা।
দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠে।
–ভাইয়া আর বাবা না থাকার ভালোই সুযোগ নিচ্ছেন দেখছি। নেক্সট টাইম থেকে কাজে অবহেলা করলে চাকরি হারাতে হবে বলে দিলাম।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে কাচুমাচু করতে থাকে তারা। কিছুটা ভয় পেয়েছে বলেও মনে হলো।
–সরি স্যার। আর হবে না। সন্ধ্যার আগেই ফাইল দিয়ে যাবো।
সামনে বসা লোকটি বলে।
–হুম। এখন যেতে পারেন।
কথাটা বলেই নিজের ফাইলের দিকে মন দেয় আবরার।
লোক দুজন একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মোবাইলে রিং বাজার শব্দ শুনতেই ফাইল থেকে মাথা তুলে মোবাইল হাতে নেয় আবরার। স্ক্রিনে চোখ যেতেই দেখতে পায় আননোন নাম্বার। একবার ইচ্ছে করলো রিসিভ না করতে, এরপর কী ভেবে যেন কল রিসিভ করে আবরার।
–হ্যালো?
বলে আবরার।
–আসসালামু আলাইকুম।
অপর পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ বলে উঠে।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম। Who is this?
কন্ঠ শুনে চিনতে না পেরে প্রশ্ন করে আবরার।
–আমি ফাহমিদা।
বলে মেয়েটি।
–কোন মিদা?
ভ্রু কুঁচকে বলে আবরার।
–ফাহমিদা।
আবারও শান্ত গলায় বলে মেয়েটি।
–এই নামের কাউকে আমি চিনিনা। রঙ নাম্বার।
বলেই কল কেটে দিতে নেয় আবরার।
–ওয়েট। প্লিজ কল কাটবেন না।
অনুরোধের সুরে বলে ফাহমিদা।
আবরার কিছু বললো না, কানের কাছে মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো মেয়েটির কথা বলার।
–আপনি আরিয়ান ভাইয়া না?
প্রশ্ন করে মেয়েটি।
–হুম।
সায় দেয় আবরার।
–আমি পারমিতার বান্ধুবী।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠে মেয়েটি। মেয়েটির কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে একটু একটু ভয় পাচ্ছে।
–ওহ, তো সেটা আগে বলবে না? এখন ই কে না কে ভেবে কেটে দিতাম কল।
একটু রিলাক্স হয়ে বলে আবরার। মিতার বান্ধুবী আর বয়সে ছোট হবে ভেবেই তুমি করে বলে আবরার।
–তো কী জন্য কল করেছে? আসলে মিতা কিছুদিনের জন্য বাইরে বেড়াতে গিয়েছে তাই তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তোমার কথা আমি ওকে বলবো। টেনশন নিও না তুমি।
একটু নর্মাল ভাবেই বলার চেষ্টা করে আবরার। মিতার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কাউকে জানাতে না করেছে হাবিব চৌধুরী।
–আপনার থেকে একটু হেল্প লাগবে,ভাইয়া।
বলে ফাহমিদা।
ফাহমিদার কথা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকায় আবরার। কিসের হেল্প লাগতে পাবে বুঝতে পারছে না।
–কী হেল্প? বিনা সংকোচে বলে ফেলতে পারো।
সুন্দরভাবেই বলে আবরার।
–মিতার ইন্টারমিডিয়েটের রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটা লাগবে আমার। যদি একটু ম্যানেজ করে দিতেন।
ধীরে ধীরে বলে ফাহমিদা।
–মিতার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড তোমার কেন লাগবে?
প্রশ্ন করে আবরার।
–আসলে…আসলে…
কাঁচুমাচু করতে থাকলো ফাহমিদা।
–আসলে কী? আর কথা স্পষ্ট ভাবে বলো। এভাবে তোতলাচ্ছো কেন? তোতলা তুমি?
একটু বিরক্ত হয়ে বলে আবরার।
–আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?
কন্ঠস্বর একটু উঁচু করে বলে ফাহমিদা। মনে হচ্ছে রেগে যাচ্ছে।
–কারণ আমার এসব আসলে…আসলে শোনার মতো টাইম নেই। যা বলার দ্রুত বলো আর না হয় রাখলাম।
ফাইলের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলে আবরার।
–না রাখবেন না। আসলে কার্ডটা লাগবে মিতার এডমিট কার্ড নেওয়ার জন্য।
এক নিঃশ্বাসে বলে ফাহমিদা।
–কিসের এডমিট কার্ড?
প্রশ্ন করে আবরার।
–এইচ.এসসি পরীক্ষার।
ফাহমিদার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবরার। সব কথা পানির মতো ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে আবরারের কাছে।
–তুমি জানো মিতা কোথায়, তাই না?
বলে উঠে আবরার।
ফাহমিদা কিছু বললো না। চুপ করেই থাকে। মাঝমধ্যে চুপ থাকা সে সম্মতির লক্ষণ তা ঠিকি বুঝতে পারছে আবরার।
–কোথায় আছে মিতা? আর তুমি কীভাবে জানলে?
–মিতা বলেছে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে। মিতাই নাম্বার দিয়েছে।
বলে ফাহমিদা।
ফোনে কথা বলার পর ঠিক করা হয় তারা দেখা করবে। দেখা করে কার্ড নিয়ে যাবে ফাহমিদা আর আবরারও তার প্রশ্নের উত্তর পাবে।
********************
বর্তমান।
আবরার থেকে মিতার ঠিকানা জানতে পারেনি কেউ। বিগত ৬ মাস আবরারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে মিতা। শুধু এতোটুকু জেনেছে যে, মিতা ঢাকাতে আছে। কার সাথে আছে? অরিয়ন জানেনা। ঢাকা কী জন্য আছে? তাও জানেনা। অবশেষে আবরারের গার্লফ্রেন্ড এর ভয় দেখিয়ে মিতার সাথে দেখা করার সময় ঠিক করা হয়েছে। মিতা জানে আগামীকাল ঢাকা যাবে আবরার, দেখা করবে মিতার সাথে। যেহেতু সব সময় মেসেজের মাধ্যমে কথা হয়েছে তাই মিতাও সন্দেহ করতে পারেনি কিছু।
মিতার সাথে আগামীকাল সকাল ১০ টায় পার্কে দেখা করার সময় ঠিক হয়েছে কিন্তু অরিয়ন আজ রাতের ফ্লাইটে ঢাকা চলে এসেছে। অন্য কোথাও না গিয়ে সরাসরি হোটেলে রুম বুক করেছে অরিয়ন। হোটেল রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। বাইরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে। আজ আকাশে চাঁদের কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে অরিয়নের মনের মতো আকাশটাও আজ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।
মিতার খবর জানতে পেরে তো খুশি হওয়ার কথা ছিলো অরিয়নের কিন্তু খুশি হতে পারেনি। ৬ টা মাস কী পরিমান যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে অরিয়নকে আর মিতা? মিতা আবরারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। কেন নিজের স্বামীকে ছেড়ে আবরারের সাথে যোগাযোগ রাখলো মিতা? কেনই বা পালিয়ে গেল মিতা? সব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না অরিয়ন।
************************
রাত ১২ টা।
বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। যেই পোশাক পরে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলো সেই পোশাক এখনো পরা। পায়ের জুতোটাও খোলার প্রয়োজন মনে করেনি। এক দৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। আজকের রাতটা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম মনে হচ্ছে অরিয়নের কাছে। মাথার মধ্যে এতো এতো প্রশ্ন, এতো এতো চিন্তা দুচোখ এক করতে দিচ্ছে না অরিয়নকে।
–আমাকে দেখে কী খুশি হবি তুই? সব অভিমান ভুলে কী জড়িয়ে ধরবি?
নিজে নিজে বলে উঠে অরিয়ন।
–তোকে দেখলে কী করবো আমি জানিনা। শুধু জানি সব অশান্তির, অস্বস্তির অবশান ঘটবে। আমার পরী, আমার শান্তি আমার কাছে ফিরে আসবে।
আবারও বলে উঠে অরিয়ন।
–আমার অভিমান দেখে কিন্তু রাগ করিস না তুই। যাই বলি আমি যে, তোকে কখনো কষ্ট দিতে পারবো না। তোকে দেখতেই সব রাগ অভিমান ভুলে যাব আমি। তুই ও কী যাবি?
ক্ষণিকের জন্যও যেন সিলিং থেকে চোখ সরছে না অরিয়নের। যেন উপরের দিকেই মিতাকে দেখতে পারছে অরিয়ন।
–আমার পরী।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে অরিয়ন।
*******************
গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি অরিয়ন। একটু পর পর রুমের মধ্যে অস্থিরতা করতে করতে শুধু হাটাহাটি করেছে আর সময় দেখেছে। কখম ভোরের আলো ফুঁটবে সেই অপেক্ষা করেছে শুধু।
ভোরের আলো ফুঁটতেই ফ্রেশ হয়ে নেয় অরিয়ন। পরণের কাপড় চেঞ্জ করে টি শার্ট আর প্যান্ট পরে নেয়। একদিকে মিতাকে দেখলে কি করবে তা যেমন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক তেমনি মিতার সামনে কীভাবে যাবে বুঝতে পারছে না। তাই নিজেকে পরিপাটি করে নিয়েছে অরিয়ন। চুল আচরিয়ে ৯ টা করে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে।
গাড়ি দেখে যদি মিতার সন্দেহ হয় তাই অরিয়ন নিজের গাড়ি আনেনি। উবারে কার ঠিক করেছে। রাতে ভালো ভাবে বৃষ্টি হলেও এখন আবার সেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি পড়া শুরু করলেই বুকের মধ্যে চাপ দিয়ে উঠছে অরিয়নের। বৃষ্টি দেখে যদি মিতা না আসলো তাহলে? এই চিন্তা যেন মাথা থেকে যাচ্ছেই না অরিয়নের।
–প্লিজ বন্ধ হ।
বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিরবির করে বলে অরিয়ন।
বৃষ্টি যেন অরিয়নের কথা বুঝতে পারলো। নিজের গতি কমানোর জায়গায় উলটো বাড়িয়ে দিয়েছে। টিপটিপ বৃষ্টি এখন ঝুম বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টির গতি দেখে অরিয়ন হতাশ হয়েই গাড়ির সাথে হেলান দেয়। চোখ বন্ধ করে রাখে। ড্রাইভাই এই ওয়েদার আরও মনোরম করার জন্য গাড়িতে গান চালু করে দিয়েছে।
Yeh Mausam KI Baarish
Yeh Baarish Ka Paani
Yeh Paani Ki Boondein
Tujhe Hi Toh Dhundein
Yeh Milne Ki Khwahish
Yeh Khwahish purani
Ho Puri Tujhi se Meri Yeh Kaahani
জ্যামে বসে গান শুনতে ব্যস্ত ড্রাইভার। ইচ্ছে না করলেও সব গানই শুনে যাচ্ছে অরিয়ন। বৃষ্টির দিনে ঢাকায় জ্যামের অবস্থা যে কী তা আর না বললেই হয়। পার্কের ঠিকানা অনুযায়ী ১০ টায় থাকার কথা অরিয়নের। এখন ১০ টা ০৫। গাড়ি যেন নিজের জায়গা থেকে এক মিনিয়ের জন্যও নড়ছে না।
–আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন।
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।
–এখানেই নেমে যাবেন? সামনে নামাই দেই? বৃষ্টিতে তো একদম ভিজে যাবেন ভাই।
বলে ড্রাইভার।
–না এখানেই দেন। সামনের অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যাবে। ভাড়াটা রাখুন।
৫০০ টাকার নোট বের করে ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–সকাল সকাল এতো বড় নোট। ভাংতি নাই ভাই?
ড্রাইভারের মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কথাটা বলতেই। তার কাছে ভাংতি নেই বুঝতে পারলো অরিয়ন।
–পুরোটাই রেখে দিন।
–কিন্তু ভা…
ড্রাইভারের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে যায় অরিয়ন। হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ম্যাপ দেখে নেয় একবার। এখান থেকে পার্কের দূরত্ব পায়ে হেটে ৩০ মিনিট দেখাচ্ছে। যদি ভালো ভাবে দৌড়ায় তাহলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে অরিয়ন। আর অপেক্ষা না করে মোবাইল প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়েই দৌড়াতে শুরু করে অরিয়ন।
আশেপাশের পথচারী আর গাড়ির মধ্যে বসে থাকা লোকদের কাছে ব্যাপাটা মজার লাগছে। তারা আগ্রহ নিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কোনো একটা প্রতিযোগিতায় জিতার জন্য দৌড়াচ্ছে আর রাস্তার সবাই দর্শক।
পার্কের সামনে আসতে আসতে অরিয়ন পুরো ভিজে গেছে। গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই হাটুতে হাত রেখে বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে থাকে। দৌড়ানোর কারণে গলা শুকিয়ে গেছে অরিয়নের। মোবাইল বের করতেই দেখতে পায় ১০ টা ২১ বাজে।
–ফা*ক।
বলেই তাড়াতাড়ি করে পার্কে প্রবেশ করে অরিয়ন।
–চলে যাস না, চলে যাস না, চলে যাস না।
পার্কের এখানে সেখানে খুজতে খুজতে বিরবির করে একা একা বলতে থাকে অরিয়ন।
পার্কের কোথাও দেখা যাচ্ছে না মিতাকে। যতোই ভিতরে প্রবেশ করছে ততোই যেন মন ভেঙ্গে যাচ্ছে অরিয়নের। বৃষ্টির কারণ পার্কে দারোয়ান ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। মিতাকেও কোথাও দেখতে পারছে না অরিয়ন।
–নো নো নো নো, এতো কাছে এসেও তুই যেতে পারিস না।
ফ্রাসট্রেডেড অরিয়ন বলতে থাকে।
পার্কের শেষ দিকে যেতেই যেন আশার আলো জাগলো অরিয়নের মনে। দূর থেকে লাল রঙের একটা ছাতা দেখতে পায় অরিয়ন। বৃষ্টিতে ভিজার কারণে এমনিতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে অরিয়নের,এরমধ্যে কেউ এখনো আছে পার্কে ভাবতেই যেন হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে অরিয়নের। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে ছাতা থাকা ব্যক্তিটির দিকে।
একটু কাছাকাছি যেতেই অরিয়ন লক্ষ্য করে, ছাতার জন্য ব্যক্তিটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে পোশাক দেখে বুঝা যাচ্ছে মেয়ে। এতে যেন অরিয়নের হার্টবিট আরও বেড়ে গেল। আবারও এগিয়ে যাওয়া শুরু করে অরিয়ন।
মেয়েটি নিজের দু হাত দিয়ে শক্ত করে ছাতা ধরে রেখেছে। সিমেন্টের সীটের উপর বসে আছে সে। নোংরা পানি দিয়ে অনবরত পা ভেজাচ্ছে। আশেপাশে যে কেউ এগিয়ে এসেছে সে দিকে খেয়াল নেই তাই। সামনের দিকে এগোতে থাকা অরিয়ন সব কিছুই লক্ষ্য করছে। মেয়েটির থেকে ৩/৪ হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে যায় অরিয়ন।
মেয়েটিও তার পা নাড়ানো বন্ধ করে দেয়। মনে হচ্ছে এতোক্ষণে খেয়াল হয়েছে কেউ এগিয়ে এসেছে।
–পরী?
উৎসুক অরিয়ন আলতো করে ডাক দেয়।
পরী নিজের নাম শুনতেই লাফিয়ে উঠে বসা থেকে। ছাতা সরাতেই দেখতে পায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন।
ছাতা সরাতেই দেখতে পায় পরীকে। পরীকে দেখা মাত্রই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অরিয়ন। এই দীর্ঘশ্বাস দেখে মনে হচ্ছে নিজে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে রেখেছিলো এতোক্ষণ। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতা যে স্বপ্ন নয় বাস্তব তা বিশ্বাসই করতে পারছে না অরিয়ন। মিতার ঠোঁটে থাকা আলতো হাসিটা অরিয়নকে দেখতেই যেন সরে গেল।
–রিয়ন!!!!!!
নিজের অজান্তেই মিতার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।
চলবে….