#পারমিতা
#পর্ব_৫১
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
মিতার মুখের উপর ঠান্ডা পানি ঝাপটে পড়তেই চোখ খুলে তাকায় মিতা। নিজেকে সামলে নেওয়ার আগেই আবারও ঠান্ডা পানি এসে পড়ে। ভয়ে,আতংকে মাথা নাড়িয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করে। ঠান্ডা পানি দূর থেকে ছুড়ে মা*রার কারণে প্রতিনিয়ত মনে হচ্ছে একেকটা বরফের টুকরো এসে মিতার মুখের উপর পড়ছে। ক্ষতস্থানে অতিরিক্ত যন্ত্রণা অনুভব করছে মিতা।
–প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।
অনুরোধের সুরে বলতে থাকে মিতা।
এতো টর্চার আর সহ্য হচ্ছে না মিতার। একেবারে মে*রে ফেললেই ভালো হতো। বড় বড় করে শ্বাস নেয় মিতা। গতকাল রাত থেকে ফ্লোরেই পড়ে আছে। একপাশ করে পড়ে থাকতে থাকতে মাথায়, ঘাড়ে অসহ্য ব্যাথা করছে মিতার।
গতকাল রাতের ৩ জন আবারও এসেছে। দুজন গিয়ে চেয়ার ধরে টেনে উঠায় মিতাকে। গতকাল সকালে খেয়েছিলো এরপর একফোঁটা পানিও পান করতে পারেনি। তৃষ্ণায় গলা ফেটে যাচ্ছে মিতার।
–পানি…পানি..পানিইই…
বিরবির করে বলে মিতা। জিহবা দিয়ে ঠোঁট থেকে পানি নিয়ে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করে মিতা।
–সাইন কর। পানি, খাবার সবকিছু দেওয়া হবে।
বলে জসিম।
জসিমের কন্ঠ শুনতেই ভয়ে হাতপা কাঁপছে মিতার। আর কতটা সহ্য করতে পারবে তা জানেনা।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–চর্বি গলে নাই এখনো? অনেক তেল তাই না?
জসিমের পেঁছন থেকে একজন বলে।
–কত টাকা দিয়েছে তোমাদের? আমি তোমাদের তার থেকে বেশি….বেশি দিবো। আমাকে ছেড়ে দেও।
অনুরোধ করে মিতা।
লোকগুলো একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো। চোখে লোভ-লালসা দেখা যাচ্ছে।
–যত চাইবে ততোই দিবো। সত্যি, বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেও।
জসিমের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
লোকগুলো কিছু বললো না। মিতার মনে এতে আশার আলো দেখা দিচ্ছে। এসব মানুষ টাকার জন্য সব করতে পারে তা জানে মিতা।
তিনজন মিতার সামনে থেকে সরে একটু কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে কথা বলে।
–বস পাইলে মে*রেই ফেলবে আমাদের।
বলে জসিম।
–কিন্তু বস। যত চামু ততোই দিবো কইতাছে। অন্য জায়গায় পলায় যামু গা।
বলে সাব্বির নামের লোকটা।
সাব্বিরের কথা শুনে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো মিতা।
–বস আমাদের ঠিকি খুজে বের করবে। বেইমানি করলে বাঁচার সুযোগ নাই।
বলে আরেকজন।
–জাহাঙ্গির ঠিক বলতাছে। ওর ফাঁদে পা দেওয়া যাইবো না।
বলে জসিম।
জসিমের কথা শুনতেই আত্নকে উঠে মিতা। তবে কী আল্লাহও চায় না মিতা বাঁচুক? এভাবেই কী মৃত্যু লেখা আছে মিতার। তিনজন এসে আবারও দাঁড়ায় মিতার সামনে। মিতার চোখেমুখে সেই ভয় আবারও ফুঁটে উঠেছে। কেন এতো বোকামি করলো? পালিয়ে আসলেই বেঁচে যাবে? কিন্তু তার কিছুই হলো না। একবার ভেবেছিলো কবির রহমানের নামে সব লিখে দিবে কিন্তু শেষ বয়সে বৃদ্ধ লোকটির জীবন নিয়েও যদি টানাটানি শুরু করে হাবিব চৌধুরী, তাহলে? যে নিচের ভাতিজির প্রাণ নিতে চায় তার কাছে কবির রহমান আর কি!
–৩০ মিনিট।
বলে জসিম। বলে একটু থামে। মিতা তাকায় জসিমের দিকে।
–৩০ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে যদি সাইন না করস তাহলে…
কথাটা বলে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা একহাসি দেয় জসিম।
–তাহলে তোরে রে*ইপ কইরা তার ভিডিও ছাইড়া দিমু নেটে। তারপর বাঁচার কত শখ তোর তা দেখমু।
কথাটা বলতে বলতেই মিতার বুকের দিকে তাকায় জসিম।
মনের মধ্যে যতটুকু সাহস বাকি ছিলো তাও যেন শেষ হয়ে গেল মিতার। ৩ জনের চোখের এই চাহনি,কতই না কুৎসিত। মনে হচ্ছে পারলে এক্ষুনি খুবলে খুবলে খেয়ে নিবে মিতাকে। হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে মিতা।
মিতার দিকে তাকিয়ে কুৎসিত এক হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ৩ জন। ৩০ মিনিট, এই ৩০ মিনিট যেন জীবনেও শেষ না হয় সেই প্রার্থনা করছে মিতা। আশেপাশে এমন কিছু খোঁজার চেষ্টা করে যা দিয়ে দড়িটা কাটা যাবে। বা যা দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে পারবে। রে*ইপ হওয়ার চেয়ে ম*রে যাওয়া পছন্দ করবে মিতা।
–প্লিজ আল্লাহ, রে*ইপ না। আল্লাহ ওদের হাত থেকে বাঁচাও, প্লিজ আল্লাহ। করুণা করো আমার উপর।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
**********************
সকালের আলো ফুঁটতেই পুলিশের গাড়ি এসে হাজির হয় অরিয়নদের বাড়ির সামনে। গতকাল সারারাত কেউ ঘুমায়নি। মায়া চৌধুরী সারারাত পার করে দিয়েছে জায়নামাজে। অরিয়ন আর বাকি সকলেই বসে বসে সময় পার করেছে। অপেক্ষা করছিলো গাড়ি নিয়ে পুলিশের তথ্যের অপেক্ষায়। পুলিশের গাড়ি আসতেই তাড়াতাড়ি করে বের হয় সকলে।
–কি হয়েছে ইন্সপেক্টর? জানতে পারলেন কার গাড়ি?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হ্যাঁ। গাড়িটি নাছির নামের এক লোকের। তাকে আমরা গ্রেফতার করতে একটি টিম পাঠিয়ে দিয়েছি।
–একটু ধৈর্য্য ধরুন, আমরা পারমিতা ম্যামকে খুঁজে বের করবোই।
আবারও বলে পুলিশ।
গাড়ির মালিকের ঠিকানা জানা গেছে জানতে পেরে একটু হলেও স্বস্তি পাওয়ার কথা ছিলো অরিয়নের,কিন্তু সময় যতো যাচ্ছে ততোই যেন অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। কী সব আজেবাজে খেয়াল আসতে শুরু করেছে অরিয়নের মাথায়।
–আমিও যাবো। টিমকে কোথায় পাঠিয়েছেন?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–স্যার, আপনি গিয়ে কী করবেন? নাছিরকে আমরা ধরে আনলে আপনি আমাদের সাথে পুলিশ স্টেশনে না হয় থাকবেন।
–কতক্ষণ লাগতে পারে? আমাদের কাছে বেশি সময় নেই।
–বেশিক্ষণ লাগবে না। ৩০-৪০ মিনিট বড়জোর।
জানায় পুলিশ।
–ঠিক আছে।
অরিয়ন গিয়ে আবারও সোফায় বসে। একটু পরেই সকলের জন্য চা নিয়ে হাজির হয় আফরিন। গতকাল রাত থেকে কারও মুখে একটা দানাও যায়নি। এভাবে থাকলে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে ভেবে একটু চা আর বিস্কুট নিয়ে আসে আফরিন।
–খাবো না। নিয়ে যা আফরিন।
বলে মায়া চৌধুরী।
–একটু করে খেয়ে নেও মা। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে মিতার জন্য কে দোয়া করবে? মিতা ফিরে এসে কী বলবে?
–আমার মিতাকে আমি চাই। আমার মিতা কেন ফিরে আসছে না? কে আমার মিতার এতো বড় ক্ষতি করতে চায়? আল্লাহ তার বুকটাও তুমি এভাবে খালি করে দিও।
কান্না করতে করতে বলেন মায়া চৌধুরী।
আফরিন নিজের মায়ের মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একজন মাকে কীভাবে স্বান্তনা দিবে তার ভাষা জানা নেই আফরিনের। আফরিনের ঘটনার পর থেকে যেন একটার পর একটা দুর্ঘটনা হয়েই যাচ্ছে। কে আর কেনই বা এভাবে এই বাড়ির পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে তা আজও পরিষ্কার নয়।
এখন শুধু উপরওয়ালার ভরসায় বসে আছেন সবাই। তার করুণায় যদি মিতাকে পাওয়া সম্ভব হয়।
*******************
মিতার জীবনের সবচেয়ে দ্রুতগামী ৩০ মিনিট ছিলো এটা। চোখের পলকেই যেন তা শেষ হয়ে গেছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে জসিম ও তার সঙ্গিরা। একেকটাকে হিংস্র পশুর মতো লাগছে।
–আমাকে মে*রে ফেলো। একেবারে শেষ করে ফেলো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।
–তারমানে তুই সাইন করবি না? ঠিক আছে। জাহাঙ্গীর ওর হাত পায়ের বাধন খুল।
–না না না না। ছেড়ে দে আমাকে। নায়ায়ায়া…ছাড় বলছি ছাড়।
জসিমের কথা অনুয়ায়ী বাকি দুজন মিতার হাত পায়ের বাধন খুলতে থাকে। জসিম এগিয়ে গিয়ে মিতার গলা থেকে একটানে ওড়না সরিয়ে ফেলে।
–নায়ায়ায়ায়ায়ায়া….নায়ায়ায়ায়ায়ায়া…ছাড়, ছাড় আমাকেএএএএএএ।
চিৎকার করতে থাকে মিতা।
জসিমের কানে মিতার কোনো চিৎকারই গেলো না। ওড়না সরিয়ে মিতার গলায় স্পর্শ করতেই পিঁছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে মিতা।
–ওর শরীরটা কি নরম।
বলে জসিম।
বমি আসছে মিতার সাথে প্রচন্ড রকমের মাথা ঘুরাচ্ছে। এই জা*নোয়ারগুলো থেকে করুণা আশা করা বোকামি। ম*রে যাওয়া ভালো কিন্তু এরা সহজে মিতাকে ম*রতেও দিবে না।
–ঠিক আছে। ঠিক আছে। সাইন করবো আমি..সাইন করবোওওওও। আমাকে ছুঁবে না। ছাড়ো আমাকে।
মাথা নাড়িয়ে চিৎকার করতে করতে বলে মিতা।
–এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই শরীরের স্বাদ না নিয়ে তোরে ছাড়ছি না। হেব্বি মা*ল তুই।
–না না না না…বলেছিলে আমি সাইন করলে ছেড়ে দিবে। আমি সাইন করবো। আমাকে ছাড়…ছাড় আমাকে কু*ত্তা।
মিতার হাত পায়ের বাধন খুলতেই টেনে দাঁড় করায় জাহাঙ্গীর ও সাব্বির।
–পাশের রুমে নিয়ে চল।
বলে জসিম।
–নায়ায়ায়ায়ায়ায়া….নায়ায়ায়ায়া..।
মিতার নিজের শক্তি প্রয়োগ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে তবে ৩ জন সামর্থ্যবান পুরুষের সাথে পেরে উঠা মিতার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। খুব সহজেই মিতাকে আবারও টেনে দাঁড় করিয়ে ফেলছে তারা।
মিতাকে টেনে হিচড়ে দরজার সামনে নিতেই হঠাৎ করে দরজা খুলে যায়। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
সামনেই দাঁড়িয়ে আছে হাবিব চৌধুরী। এই লোকটির কোলে বসে খাবার খেয়েছে মিতা। স্কুলের পেরেন্টস মিটিংয়ে কোনোদিন ওয়াহিদ চৌধুরী যেতে না পারলে, হাবিব চৌধুরী গিয়েছে। মিতাকে সব থেকে বেশি আদর করা হাবিব চৌধুরী কবে থেকে মিতাকে মা*রার জন্য উঠে পড়ে লাগলো? হাবিব চৌধুরীকে দেখে মিতার যেন বুক ফেঁটে কান্না আসছে।
–আমি তো বলেছি সব সাইন করে দিবো। তাও আমাকে ছাড়ছে না কেন ওরা? আমাকে ছাড়তে বলোওওওওওওও।
চিৎকার করে বলে মিতা।
মিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই হাবিব চৌধুরী মিতার দিকে দু কদমে এগিয়ে যায়। জসিমের মুখে স্বজোরে এক ঘুষি বসায়। হঠাৎ করে ঘুষি খাওয়ায় মাটিতে পড়ে যায় জসিম। মিতা মাথা তুলে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকাতেই সাব্বির আর জাহাঙ্গীর গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে হাবিব চৌধুরীর দিকে।
–আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিস, এতো বড় সাহস তোদের। তোদের এই হাত আমি কু*ত্তাকে খাওয়াবো।
৫৭ বছরের হাবিব চৌধুরীর যেন যুবকদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ৩০/৩২ বছরের লোকগুলো হাবিব চৌধুরীর সাথে মা*রা*মারি পারছেই না। মিতা অবাক হয়ে তাদের মা*রামা*রি দেখছে। হাবিব চৌধুরী কেন এদের মা*রছে তা বুঝতে পারছে না মিতা। “ধরা পড়ে এখন ভালো সাজতে এসেছে” মনে মনে ভাবে মিতা।
জসিমসহ ওর সঙ্গীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই হাবিব চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে মিতার হাত ধরে।
–তাড়াতাড়ি চল। এখান থেকে বের হতে হবে।
–ছাড়ো আমাকে।
এক টানে মিতা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
হাবিব চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।
–কী হয়েছে তোর? পাগল হয়েছিস? এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা।
মিতার হাত ধরতে হাত বাড়িয়ে দেয় হাবিব চৌধুরী।
–তাই নাকি? আর অভিনয় করবে চাচ্চু? আমি তো তোমাকে বাবা ভেবেছিলাম..আর তুমি….আর তুমি আমাকেই খু*ন করতে মরিয়া হয়ে গেলে?
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–কি সব আজেবাজে বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর?
–মাথা খারাপ আমার? মাথা খারাপ?
কথাটা বলে মিতা চেয়ারের দিকে এগিয়ে যায়। চেয়ারের পাশেই পরে থাকা দলিল হাতে তুলে নেয় মিতা। এগিয়ে আসে হাবিব চৌধুরীর সামনে। হাবিব চৌধুরীর চোখের সামনে দলিল খুলে ধরে মিতা।
–আমি পাগল হলে এসব কী? জবাব আছে তার?
প্রশ্ন করে মিতা।
হাবিব চৌধুরী হাত বাড়িয়ে দলিল নেয়। পড়তেই যেন চোখ বড় বড় হয়ে আসলো তার।
–এসবের কিছুই আমি জানিনা। আমি কিছুই করিনি।
অবাক হয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমি কেন এসব করতে যাবো? তুই শুধু আমার ভাতিজি নস। আমার অরিয়নের ওয়াইফ। আমার ছেলের ভালোবাসা। আমি কেন এসব করতে যাবো?
বিনয় কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।
মিতা কিছু বলছে না। হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও হাবিব চৌধুরীর একটা কথাও বিশ্বাস করতে চাইছে না মিতা তাও মনটা কেমন যেন আনচান করছে।
–মিতা,ওয়াসিম আমার ভাই। আমার আদরের ছোট ভাই। আমার মেয়ে তুই। আমি এসব জীবনেও ভাবতে পারিনি। কেউ…. কেউ এসব ইচ্ছে করে করছে।
মিতার দু বাহু আলতো করে ধরে বলে হাবিব চৌধুরী।
–তুমি না করলে আর কে? আর কে চাইবে এসব করতে কারণ আমাকে তো ব….
মিতা কথাগুলো বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কিছু একটা ভাবতে লাগলো।
–ওহ হোওও…একই সাথে ছেলের বউ আর শ্বশুর।
অন্যপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে।
মিতা আর হাবিব চৌধুরী একই সাথে কন্ঠস্বরের দিকে তাকাতেই মিতা দু পা পিছিয়ে পড়ে। মিতার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। অবিশ্বাসের সহিত তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কবির রহমানের দিকে।
সামনেই দাঁড়িয়ে আছে কবির রহমান। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ১০/১৫ জন। সবার হাতেই কিছু না কিছু আছে।
–এতো সুন্দর নাজারা দেখতে পারবো তা ভাবিনি।
রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে করতে বলেন কবির রহমান।
–এই গাধাটাকে ৬ মাস আমার বাসায় রাখাই ভুল ছিলো। শুধুমাত্র উইল আছে বলে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম তা না হলে..
কথা বলতে বলতেই চেয়ারের উপর গিয়ে বসেন তিনি।
–তুমি…তুমি মিথ্যে বলেছিলি!!
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–তুমি এখানে কী করছো করিম?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
মিতা বড় বড় চোখ করে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকায়।
–কিসের করিম? উনি তো কবির রহমান। আমার নানাভাই।
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে অবাক হয় হাবিব চৌধুরী।
–কী সব আজেবাজে বলছিস? উনি তোর নানাভাই নন। উনি তোর নানার চাচাতো ভাই করিম, করিম রহমান।
মিতাকে বলে হাবিব চৌধুরী।
–নানাভাই নন?
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে মিতা।
–হাহাহায়াহাহাহাহাহহায়াহহায়াহহা।
বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে থাকে করিম রহমান।
***********************
নাছিরকে ধরে পুলিশস্টেশন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটু আগেই ইন্সপেক্টরের কল এসেছে। অরিয়ন আর আফরিন রেডি হয়ে নিয়েছে। এক্ষুনি বের হয়ে যাবে। অরিয়ন তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে দরজার সামনে যেতেই প্রাইভেট কার এসে থাকে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আবরার।
–কোথায় ছিলি তুই? মিতাকে যেই গাড়িতে করে তুলে নেওয়া হয়েছে তার মালিকের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখানেই যাচ্ছি।
বলে অরিয়ন।
–সেখানে আর যেতে হবে না।
বলে আবরার।
–মানে? কেন?
ভ্রু কুঁচকে বলে অরিয়ন।
–কারণ মিতার খবর আমি নিয়ে এসেছি। বাবা সেখানেই আছে।
জবাব দেয় আবরার।
–কিহ? বাবা সেখানে আছে?
–শুধু তাই নয়। ছোট চাচ্চুও ওখানে আছে। মানে লুকিয়ে আছে। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সেখানে যেতে হবে। পুলিশকে কল কর।
বলে আবরার।
–কি বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না। পরীর খোঁজ তোরা কীভাবে পেলি?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–গাড়িতে সব বলবো। এখন তাড়াতাড়ি চল। হাতে একদম সময় নেই।
কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসে আবরার।
–তুমি এখানেই থাকো।
আফরিনকে বলে গাড়িতে গিয়ে বসে অরিয়ন।
যেভাবেই হোক এবার মিতাকে হারাতে দিবে না অরিয়ন।
চলবে…..