পারমিতা পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
96

#পারমিতা
#পর্ব_৫২
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

হাওয়ার গতিতে গাড়ি ছুটে চলেছে। গাড়ি ছেড়েছে ৫ মিনিটের মতো হবে কিন্তু এর মধ্যেই হাজার খানেক প্রশ্ন করে ফেলেছে অরিয়ন।
কীভাবে হাবিব চৌধুরী মিতার খবর জানতে পারলো? আবরারই বা কেন চট্টগ্রাম থেকে হুট করে ঢাকা চলে আসলো? আর সব কিছু জেনে থাকলে কেনই বা তা অরিয়নকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি কেউ?

–কিছু কি বলবি নাকি এভাবেই বসে থাকবি?
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।

–তুমি ঢাকাতে চলে আসার পর বাবা ঠিক করেন উনি ও ঢাকা যাবেন। কী কারণে মিতা চলে গেল তা জানতে চাচ্ছিলেন উনি।
বলে আবরার।

–বাবা ঠিক করেছিলো পার্কে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে তুমি যদি মিতাকে নিয়ে না ফিরো, তাহলে উনি জোর করে হলেও মিতাকে নিয়ে আসবে। তোমার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিলেন না বাবা।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।

–বাবা যখন পার্কে পৌঁছালেন তখন মিতাকে কারা যেন জোর করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছিলেন। কোনো কিছু না ভেবেই তাদের গাড়ির পেঁছনে ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দেন বাবা। এরপর পার্ক থেকে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

–তোমাকে হাসপাতালে রেখেই আমাদের কল করেন। আমি আর মা চলে আসতেই বাবা আমাকে সব কিছু খুলে বলেন। আমি সাথে সাথে ছোট চাচ্চুকে সবটা জানাই। এরপর তোমাকে হাসপাতালে রেখেই আমি আর বাবা রওয়ানা রই মিতাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে।

–তারপর?
জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–ড্রাইভারের দেওয়া ঠিকানা অনুয়ায়ী আমরা নারায়নগঞ্জে পৌঁছাই। মিতাকে এক নতুন তৈরি করা বিল্ডিংয়ে রাখা হয়েছে। এলাকাটা এখনো জনশূন্য। মানুষের আনাগোনা প্রায় নেই বললেই চলে।

–তোরা একটা রাত অপেক্ষা করলি? পুলিশকে ফোন দিয়ে জানালি না কেন? তাহলে আজ মিতা এখানে থাকতো।
রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।

–মিতার ঠিকানায় পৌঁছাতেই আমাদের মধ্য রাত হয়ে গিয়েছিলো। ওরা কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করে নিয়ে এসেছে মিতাকে। গাড়িতে ৫/৬ জনের মতো থাকলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ওরা সংখ্যায় ২০/২৫ জন হবে। দু চার জনের হাতে অ*স্ত্র। গতকাল থেকেই ওরা বিল্ডিংয়ে আছে,সারারাতেও বিল্ডিং থেকে বের হয়নি।

–সকালে অর্ধেকের বেশি লোক বেরিয়ে যেতেই আমরা ঠিক করি মিতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। কিন্তু ওদের মধ্যে একজন কথা বলায় আমরা জানতে পারি এসব কোনো দূর্ঘটনা বা ছিন*তাইকারীর কাজ নয়।এরা সকলেই ভাড়া করা স*ন্ত্রাসী। কারো নির্দেশে মিতাকে তুলে এনেছে।

–কি বলছিস এসব? তাহলে কী এসব ওরাই করেছে?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে আবরার।

–বাবা আমাকে আর ছোট চাচ্চুকে পাঠিয়ে দেন। পুলিশের সাহায্য ছাড়া মিতাকে ছাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব নয় তা বুঝতে পারি আমরা। বাবা বুঝতে পারছিলেন দেরি করলে হয়তো এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। তাই আমাকে আর চাচ্চুকে জোর করে পাঠিয়ে দেন।

ফ্ল্যাশব্যাক : আজ ভোরবেলা

— তুই আর ওয়াহিদ গিয়ে পুলিশ আর অরিয়নকে সব জানা। আমি এখানে ওদের উপর চোখ রাখছি। এখানে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে ফোন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বলেন আতংকিত হাবিব চৌধুরী।

–কিন্তু ভাইয়া,তোমার এখানে একা থাকা উচিত হবে না। আরিয়ান থাকুক তোমার সাথে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–না। সমস্যা নেই। আমি এখানে লুকিয়ে থাকবো। তুই পুলিশের কাছে সরাসরি চলে যাবি। আর আরিয়ান তুই, তুই গিয়ে অরিয়নকে সবটা বুঝিয়ে বলবি।

–কিন্তু বাবা তুমি একা এখানে..

–কোনো কিন্তু মিন্তু না। এক কাজ দু’জনে করতে গেলে খুব দেরি হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ নিয়ে আয়।

–তুমি সাবধানে থেকো।
চিন্তিত আবরার বলে।

–হুম।

********************

বর্তমান

চেয়ারে বসে আছেন করিম রহমান। মুখে তার বিজয়ের হাসি। অন্যদিকে অবাক হয়ে করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে মিতা। নিজের দু চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না কিছু।

–কী চাই তোমার? মিতাকে কেন ব*ন্দী করেছো?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–কী চাই তা সবটা তো তোমার জানা, হাবিব। নাকি মেয়েকে কষ্ট দিতে চাও না বলে এবারও লুকাবে?
ভ্রু কুঁচকে বলতে থাকেন করিম রহমান।

–তুমি…তুমি আমা…আমার নানাভাই না?
এক পা এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।

–এতোদিন…এতোদিন তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছিলে?

–এতোদিন মানে?
মিতার কাছে গিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।

–এতোদিন তুই এর সাথে ছিলি?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

মিতা কিছু না বলেই করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। করিম রহমান আগ্রহ নিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে দেখছে। মনে হচ্ছে তার সামনে কোনো নাট্যমঞ্চ চলছে। মিতা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে।

–মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমা দেখছি, তাই না জসিম?
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।

করিম রহমানের কথাটা বলতেই রুমের সকলে একযোগে হাসতে শুরু করে।

–ঐ ওদের আপ্যায়ন কর ভালো করে।

কথাটা বলতেই কয়েকজন গিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে ধরে ফেলে। চেষ্টা করে লাভ নেই জেনে চুপ করে রইল হাবিব চৌধুরী।

কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারে বেঁধে ফেলা হয় মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে।

–নেও নানাভাই, এখানে সাইনটা করে ফেলো।
মিতার দিকে দলিল এগিয়ে দিয়ে বলে করিম রহমান।

রাগে, ঘৃণায় মিতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

–থুহ….
কোনো জবাব না দিয়েই করিম রহমানের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে মিতা।

–ঠাসসসসসসসস।
সাথে সাথে চ*ড় মাসে করিম রহমান।

–তোরে তো আ..
করিম রহমানের কথা শেষ হওয়ার আগেই মোবাইলে কল বাজতে শুরু করে।

মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসি দেন করিম রহমান।

–হ্যালো এমপি সাহেব…
কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় করিম রহমান।

থা*প্পড়ের কারণে মিতার ঠোঁটের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে শুরু করেছে। চোখের কোণে পানি, ব্যাথার চাইতেও ধোঁকা খাওয়ার কষ্ট যেন মানতে পারছে না মিতা।

–উনি যে আমার নানাভাই না তা কীভাবে জানলে তুমি?
নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে মিতা।

–তোর জন্মের আগে একবার তোর মার সাথে গিয়েছিলাম তোর নানুবাড়ি। তোর বাবা-মার ভালোবাসার বিয়েটা উনি মেনে নিতে পারেন নি। ওয়াসিমের অভিভাবক হিসেবে গিয়েছিলাম তাকে রাজি করাতে, কিন্তু উনি কিছুই শুনতে চাচ্ছিলেন না। তখন কবির রহমানের সাথেই ছিলো করিম রহমান। তোর মা জানালেন করিম রহমান তার সৎ চাচা।

–তারপর?

–তারপর তোর ১৮তম জন্মদিনের আগে আমরা জানতে পারি তোর নানা আর এই পৃথিবীতে নেই। মৃত্যুর আগে তার সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিয়ে গেছে।

–ওহ।
মিতার চোখদিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে।

–কিছুদিন পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করি তোর উপর বিভিন্ন এর্টাক হতে থাকে। যা প্রথমে দূর্ঘটনা মনে করলেও পরে লক্ষ্য করতে পারি ঘটনা বিপরীত।
কথাগুলো বলে একটু থামে হাবিব চৌধুরী।

–আমরা তোর নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন ছিলো সবটাই করেছি। তোকে কখনো বুঝতে দেই নি। এরপর, একদিন..

–একদিন?

–একদিন কুরিয়ারে আমাদের কাছে একটা উইল আসলো। তাতে লেখা ছিলো কবির রহমানের সব সম্পত্তির মালিক অস্থায়ীভাবে তোর অভিভাবক হবে, যতোদিন না তুই ২১ বছরে পা দিচ্ছিস ততোদিন। ২১ বছর হলেই সব সম্পত্তি অফিসিয়ালি তোর হয়ে যাবে। ২১ বছরের আগে তুই বা তোর অভিভাবকের কিছু হয়ে গেলে সব সম্পত্তি চ্যারিটিতে চলে যাবে। কেউ হয়তো পুরোটা না জেনেই তোকে মা*রার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা বুঝতে পারি আমরা। তাই ঠিক করি, অরিয়নের বিয়ের পর তোকে আরিয়ানের সাথে বিয়ে দিবো।

–কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চাচ্ছিলো। আফরিন চলে গেল, নিজের সম্মান বাঁচাতে আমি আরিয়ানের জায়গায় অরিয়নের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিলাম। অরিয়নকে সবটা খুলে বলার পর কেন যেন “না” বলতে পারেনি ও।

হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে মিতা যেন আরও কান্নায় ভেঙে পড়লো। কত বড় ভূল করেছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না। অরিয়নকে, হাবিব চৌধুরীকে অবিশ্বাস করেছে মিতা। ভালো হতো যদি হাবিব চৌধুরী আসার আগেই মৃত্যু গ্রাস করে নিতো মিতাকে।

–এরপর যেদিন তোকে বাঁচাতে গিয়ে অরিয়নের বুকে গু*লি লাগলো,সেদিন আমরা কনফার্ম হই সবটা আসলে করিম রহমানের কাজ। এর আগেও আমাদের সন্দেহ হয়েছিলো তবে, আমরা প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম।

–আমাকে কেন বলোনি?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

–জানিনা। তবে চাচ্ছিলাম না তুই নিজেকে সব কিছুর জন্য দোষারোপ করিস। নিজের মা বাবার মৃত্যুর জন্য নিজেকে অলক্ষি ভাবতিস তুই। তার উপর অহনার বিষয়টাও জেনে গিয়েছিলি। তোর ছোট মনে এতো কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম না আমরা কেউ।

মিতা কষ্টে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। কি করলে এই অপরাধবোধ থেকে বেঁচে ফিরবে তা জানেনা। কতবড় পাপ করেছে মিতা তাই বুঝতে পারছে।

–এই জন্যই হঠাৎ করে আমাকে খু*ন করার আইডিয়া বাদ দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেল। যেন সব সম্পত্তি আমি নিজে থেকে তার নামে লিখে দি।
কঠোর কন্ঠে বলে মিতা।

–তোর উচিৎ ছিলো আমাদের জিজ্ঞেস করা।
মন খারাপ করে বলে হাবিব চৌধুরী।

–আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাকে। তুমি বলেছিলে এই নামে কাউকে চিনো না।

–কারণ আমি রাগ ছিলাম তোর নানার উপর। ওয়াসিম আর সুমাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনেও তিনি আসেন নি একটিবার। তাই না বলেছিলাম।

–আর আমি বাবাকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছেন নানাভাইয়ের নাম কবির রহমান।

–ভুল তো বলেনি। তোর বুঝায় ভুল ছিলো।

–হ্যাঁ। আমার বিশ্বাসের এতো বড় সুযোগ নিবে তা বুঝতে পারিনি আমি। মার সাথে উনার ছবি দেখে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।

–যা হয়েছে তো হয়েছে। এখন শুধু দোয়া কর। ওরা কিছু করে ফেলার আগেই যেন পুলিশকে নিয়ে আরিয়ান চলে আসতে পারে।
বলে হাবিব চৌধুরী।

*******************

খালি এক মাঠের প্রান্তে এসে গাড়ি থামায় আবরার।

–এখানে কেন রাখলি?
আশেপাশে কিছু দেখতে না পেয়ে বলে অরিয়ন।

–এখান থেকে হেটে যেতে হবে তা না হলে ওরা বুঝে যাবে।
বলে আবরার।

প্রায় ২০ মিনিট হাটার পর চোখের সামনে দুই/তিনটা বিল্ডিং দেখতে পায় অরিয়ন। সবগুলাই এখনো পুরো কমপ্লিট হয়নি।

–ঐ টায় রাখা হয়েছে মিতাকে।
একটা ৪ তলা ভবন দেখিয়ে বলে আবরার।

–আগে বাবার সাথে দেখা করতে হবে।

–হুম।

অরিয়ন আর আবরার লুকিয়ে লুকিয়ে ভবনের পিঁছনে গিয়ে হাবিব চৌধুরীকে দেখতে না পেয়েই চমকে যায়।

–বাবার তো এখানেই থাকার কথা ছিলো।

–এখানে থাকার কথা থাকলে কোথায় গেল?

–আবার মিতার কাছে যায়নি তো?

–একা একা?
বলে অরিয়ন।

–আগে দেখি মিতাকে কোথায় রেখেছে।

–চল।

দুই ভাই একসাথে যতোটা পারছে লুকিয়ে লুকিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে খোঁজার চেষ্টা করতে লাগল। নিচ তলায় কাউকে দেখতে না পেয়ে দ্বিতীয় তলায় ধীরে ধীরে উঠে দু’জন।

–ভাইয়……

–হুসসসসসসস।
নিজের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে অরিয়ন। ইশারা দিয়ে কিছু দেখাতেই বুঝতে পারে আবছা আবছা কথা শোনা যাচ্ছে।

–এখানেই আছে ওরা।
ফিসফিস করে বলে অরিয়ন।

–হ্যাঁ।
জবাব দেয় আবরার।

********************

তড়িঘড়ি করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে করিম রহমান। চেয়ারায় বিরক্তির ছাঁপ। হঠাৎ করে এরকম করার মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না মিতা।

–সাইন করছে?
জিজ্ঞেস করে করিম রহমান।

স*ন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন মাথা নাড়িয়ে না বলে।

–তুই হারামজাদা। আমাদের ফলো করছিলি তাই না?
হাবিব চৌধুরীর কাছাকাছি গিয়ে বলে করিম রহমান।

হাবিব চৌধুরী কিছু বললো না। আলতো করে একটা হাসি দিলো।

–ঐ ওর সাইন লাগবে না। টিপসই নিবো। কালির ব্যবস্থা কর। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ও একা এসেছে নাকি তাও নিশ্চিত বলতে পারছি না।
বলে করিম রহমান।

–কী বলেন স্যার!
জিজ্ঞেস করে আতংকিত জসিম।

–এমপি সাহেব কল দিছিলেন। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। উনি বেশি ঝামেলায় জড়াতে চান না। যতোটুকু দরকার হেল্প করবেন বলেছেন। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
জবাব দেয় করিম রহমান।

–টিপসই নিলে কেউ বিশ্বাস করবে? ওরা তো কেসও করতে পারে।

–তুই চুপ থাক। দরকার পড়লে ওর হাত ভেঙ্গে দিবো কাজ শেষে।
বলে করিম রহমান।

–সারাজীবন তোর নানার সাথে ছাঁয়ার মতো থাকছি, সব কাজ আমি করে দিছি আর ও…ও ম*রার আগে সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিলো। আর তুই…

–আহ..
মিতার পায়ে নিজের পা দিয়ে চাপ দেয় করিম রহমান।

–ভেবেছিলাম তুই সাইন করে সব খেলা শেষ করবি, কিন্তু করলি না। তোর মা বাবার সাথে সেদিন তুই মরলে আর এতো অভিনয় করতে হতো না আমাকে। সেদিনের প্লানও ভেস্তে গেছে, কিন্তু আজ কিছুতেই হার মানবো না আমি।

করিম রহমানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিতা। হাবিব চৌধুরী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো করিম রহমানের দিকে।

–কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–বলতে চাচ্ছি, তোর ভাই,ভাবি আর আদরের মেয়েকে আমি ই খু*ন করিয়েছি…হাহায়াহাহাহহা।
কথাটা বলেই হাসতে থাকে করিম রহমান।

–করিমমমমমমম…
চিৎকার করে উঠে হাবিব চৌধুরী। চেষ্টা করেও হাতের বাধণ ছাড়াতে পারছেন না।

********************

–ভাইয়া, চাচ্চু কল করেছে।
ফিসফিস করে বলে আবরার।

আবরারের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে এক কোণায় চলে যায় দুজনে। রিসিভ করে কানে ধরে অরিয়ন।

–হ্যাঁ চাচ্চু, বলো! কোথায় তুমি?
ফিসফিস করে বলে অরিয়ন।

–ঠিক আছে। আমরা দো-তলায় আছি।

–কী বলে?
প্রশ্ন করে আবরার।

–পুলিশ ফোর্স নিয়ে চাচ্চু চলে এসেছে। ওরাও হেটে আসতেছে। তা না হলে ওরা সাবধান হয়ে যেতে পারে তাই।

–ওকে।

“আয়ায়ায়ায়ায়া…চাচ্চুউউউউউউউউউউ”
হঠাৎ করে মিতার চিৎকার শুনতে পায় আবরার ও অরিয়ন।

সাথে সাথেই কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ে তৃতীয় তলায় উঠে যায় দুই ভাই। মিতার চিৎকার শুনে বুকের মধ্যে ভয় কাজ করছে দুজনের।

অরিয়ন আর আবরার সিড়ি বেয়ে উপরের উঠতেই দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। অরিয়ন আর আবরারকে দেখে থতমত খেয়ে যায় দুজনে। কোনো কিছু না ভেবেই অরিয়ন আর আবরার ঝাপিয়ে পড়ে তাদের উপর। একে অপরকে আঘাত করতে ব্যস্ত হয়ে যায় সবাই। অরিয়ন একজনকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে পি*টাচ্ছে অন্যদিকে, আবরার অন্যজনের পেটে একের পর একে লা*থি মা*রছে। মা*রামা*রির শব্দ শুনে নিমিশেই চারপাঁচ জন অন্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

–বসকে গিয়ে বল।
একজন দৌড়ে আবরারকে ধরতে গিয়ে অন্যজনের উদ্দেশ্যে বলে।

আবরারের বয়সি যুবকটা ক্ষণিকেই আবরারকে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অরিয়ন দৌড়ে যায় আবরারকে ছাড়াতে। একে একে ৬/৭ জন ঘিরে ধরে আবরার আর অরিয়নকে। স*ন্ত্রাসীদের মধ্যে দুজন অরিয়ন্নের দু হাত ধরে রেখেছে। অন্য দিকে একজন অরিয়নকে প্রতিনিয়ত আঘাত করতে থাকে। অরিয়নের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় আবরার। এভাবে আর কিছুক্ষণ মা*র খেলে অরিয়নের মৃত্যু নিশ্চিত। কোনো কিছু না ভেবেই ফ্লোরে পরে থাকা ভাঙ্গা ইট হাতে তুলে নেয় আবরার।

বুকের উপর বসে থাকা স*ন্ত্রাসীর মাথায় আঘাত করেই লাফিয়ে উঠে আবরার। দৌড়ে গিয়ে অরিয়নকে ধরে রাখা স*ন্ত্রাসীদের হাতে থাকা ইট দিয়ে আঘাত করে। অরিয়নও আবরারের দেখাদেখি নিজেকে বাঁচাতে রড তুলে নেয়।

–দাঁড়া, নইলে গু*লি করমু।

পি*স্তল হাতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে একজন। সাথে সাথেই সোঁজা হয়ে দাঁড়ায় আবরার আর অরিয়ন।

পি*স্তল হাতে থাকা লোকটি এগিয়ে আসে। আবরারের মাথার সাথে ব*ন্দুক ঠেকিয়ে অরিয়নের দিকে তাকায়।

–চল।

অরিয়নকে ধাক্কা দিয়ে বলে লোকটি। অরিয়ন আর আবরার কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করে।

**********************

অহনার মৃত্যু কোনো দূর্ঘটনা ছিলো না। সবটাই প্ল্যান করা। কথাগুলো শুনতেই আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারেনি হাবিব চৌধুরী। পা দিয়ে স্বজোরে এক লা*থি মারে করিম রহমানকে। যদিও তা ভালো ভাবে লাগেনি তাও এই লা*থি যেন করিম রহমানের ইগোতে গিয়ে লাগলো।

–তোর এতো বড় সাহস!
কথাটা বলেই হাবিব চৌধুরীর মুখে ঘুষি মা*রতে থাকে করিম রহমান।

–আয়ায়ায়ায়ায়া…..চাচ্চুউউউউউউউউ।
চেঁচিয়ে উঠে মিতা।

–ছেড়ে দেও। আমার চাচ্চুকে ছেড়ে দেও। আমি সাইন করে দিচ্ছি। তোমার যা চাই সব নিয়ে নেও। আমার চাচ্চুকে ছেড়ে দেও প্লিজ।
অনুরোধের সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।

–গুড গার্ল। আগে সাইনটা করে দিলে এতো কষ্ট পেতে হতো না কাউকে।
একজনকে ইশারা দিয়ে কিছু একটা বলে করিম রহমান।

–বস, বস।
রুমের মধ্যে দৌড়ে একজন প্রবেশ করতে করতে বলে।

–কি হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে বলে করিম রহমান।

–দুইজন ছেলে এখানে চলে আসছে। আমাদের লোকদের সাথে মা*রামা*রি করতাছে। আপনি বললে ওদের জানে খতম করে দেই?

–অরিয়ন আর আবরার!!
নিজের অজান্তেই বলে ফেলে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর কথা শুনতেই মুচকি হাসি দেয় করিম রহমান।

–আজ তাহলে পুরো খেলাই শেষ করে যাবো। ওদের এখানে নিয়ে আয়।

–ওকে বস।

***************

আবরার আর অরিয়ন রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই থমকে দাঁড়ায়। হাবিব চৌধুরীকে চেনা যাচ্ছে না। হাত পা বাধা অবস্থায় তাকে যে খুব পে*টানো হয়েছে তা মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। মিতা ফ্লোরে পড়ে আছে। পড়ে আছে বলতে কাত হয়ে শুয়ে আছে। দু হাত পিছনে নিয়ে বাঁধা। পা বাঁধা। গায়ে উড়না নেই। পুরো জামা ভিজা। একটা মেয়েকে ঠিক কতোটা নি*র্যাতন করলে এরকম অবস্থা হতে পারে তা ভাবতেও পারছে না অরিয়ন। মিতার পিঠের উপর এক পা দিয়ে পাড়া দিয়ে রেখেছে করিম রহমান। মুখে তার বিশাল এক ব্যাঙ্গাত্মক হাসি।

নিজের বাবা আর ওয়াইফে এই অবস্থায় দেখতেই শরীরে আগুন জ্বলে উঠে অরিয়নের। আবরারও রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরেছে।

–ওয়েলকাম। তোমাদেরই কমতি ছিলো।
বলে করিম রহমান।

–কেমন লাগছে ওদের? সুন্দর তাই না?
কথাটা বলেই করিম রহমান নিজের পা মিতার পিঠ থেকে সরিয়ে মাথায় চেপে ধরে।

মিতা চোখ বন্ধ করে আছে। এই মুখ অরিয়নকে দেখাতে চাচ্ছে না। অরিয়নের চোখের সাথে কীভাবে চোখ মিলাবে তাও জানেনা। তাই কষ্ট হলেও মুখ থেকে কোনো সাড়াশব্দ বের হলো না মিতার।

–পা সরা।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।

–কষ্ট লাগছে বুঝি? এই মেয়ের জন্য যে কিনা তোকে একটুও বিশ্বাস করলো না? আমার কথায় তোদের খু*নি ভাবলো তার জন্য?
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।

কথাগুলোর মাধ্যমে করিম রহমান যে কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটা মা*রছে তা সকলেই বুঝতে পারছে।

–তুই কী ভেবেছিস! এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবি?
বলে আবরার।

–তাড়াতাড়ি ওর টিপসই নে। আমরা এখুনি বের হয়ে যাবো।

করিম রহমান কথাটা বলতেই জসিম দলিল সহ মিতার দিকে এগিয়ে যায়। বাহু ধরে টান দিয়ে বসায় মিতাকে। হাতের বাধন খুলতেই মিতা আস্তে করে নিজের চোখ খুলে।

মিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ডান হাত ধরে দলিলে টিপসই বসায় জসিম।

–হাহাহাহাহাহহাহাহাহা…….
কোমড়ে দু হাত রেখে হাসতে থাকে অরিয়ন।

সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো অরিয়নের দিকে। হঠাৎ করে পাগলের মতো কেন এভাবে হাসছে তা বুঝতে পারছে না।

— তুই কি নিশ্চিত যে, সব সম্পত্তির মালিক পরী?
হাসি থামিয়ে বলে অরিয়ন।

–মানে?
প্রশ্ন ছুড়ে করিম রহমান।

–মানে সব সম্পত্তি অনেক আগেই আমার নামে হয়ে গেছে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।

–তুই মিথ্যে বলছিস।
চেঁচিয়ে উঠে করিম রহমান। রাগে তার শরীর জ্বলছে।

–বিশ্বাস না হলে উইল চেক কর। রেজিস্ট্রারে এখন সব সম্পত্তি আমার নামে।

–তাহলে তো এরা আমার কোনো কাজের ই না। জসিম পি*স্তল দে। সবার আগে এদের শেষ করবো। শুধু শুধু আমার ৬ টা মাস নষ্ট করেছে।
দাঁত কিরমির করতে করতে বলে করিম রহমান।

জসিম পি*স্তল এগিয়ে দিতেই করিম রহমান গিয়ে মিতার কাছাকাছি দাঁড়ায়। অরিয়ন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এতোক্ষণে তো পুলিশের পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিলো। তাও কেন আসছে না তা বুঝতে পারছে না।

–আগে কাকে শেষ করবো বল? তোর বাপ নাকি তোর বউ?

–তোর যা চাই সব আমি দিয়ে দিবো। ওদের ছেড়ে দে।
বলে অরিয়ন।

–সেটা তো আমি নিবই। তবে আজ এক মজার খেলা খেলবো। দেখবো তোর কাছে কে বড়! বাপ নাকি বউ!

–ভালো করে ভাব। বাপ ম*রলে বাপ পাবিনা কিন্তু বউ ম*রলে বউ পাবি।
হাসতে হাসতে বলে জসিম।

–আমাকে মা*র। ওদের যেতে দে।
হাবিব চৌধুরী বলে।

–না না না না….চাচ্চুকে ছেড়ে দেও। আমাকে মা*রো। সব দোষ আমার, আমাকে মা*রো।
বলে মিতা।

–এতো পুরাই বাংলা সিনেমা।
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।

–যাহ, আমি ই ঠিক করি কে আগে ম*রবে।

–তুই..।
মিতার মাথায় পি*স্তল ঠেকিয়ে বলে করিম রহমান।

চলবে…….

#পারমিতা
#পর্ব_৫৩
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

–তুই।
মিতার মাথায় পি*স্তল ঠেকিয়ে বলে করিম রহমান।

হাবিব চৌধুরী, আবরার ও অরিয়ন সকলেই করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। মিতার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনে শান্তি পেয়েছে মিতা। চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছে সব কিছু শেষ হওয়ার জন্য। মিতার মুখে শান্তির প্রতিচ্ছবি দেখে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে অরিয়ন।

হঠাৎ করেই অরিয়ন কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়ে গিয়ে করিম রহমানের হাত ধরে ফেলে। অরিয়নকে দৌড় দিতে দেখেই ঘুরে পিঁছনে থাকা লোককে ধাক্কা দেয় আবরার। সাথে সাথেই ব্যালেন্স হারিয়ে নিচে পড়ে যায় লোকটি,ছিটকে কিছুটা দূরে পড়ে ব*ন্দুক। ছিটকে পড়া ব*ন্দুক নিতে দৌড় দেয় আবরার। গু*লি করার জন্য প্রস্তুত থাকা করিম রহমানের হাত ধরতেই তা অন্যদিকে ঘুরে যায়।

অরিয়ন আর করিম রহমান হাতাপায়ি করতেই রুমের মধ্যে থাকা কয়েকজন দৌড়ে অরিয়নকে ধরে টানতে থাকে। বাকি কয়েকজন যায় আবরারকে ধরতে। আবরার বন্দুকে হাত দিতেই মাটিতে পরে থাকা লোকটিও দৌড়ে গিয়ে বন্দুক ধরে ফেলে।
দুজনে মিলে ব*ন্দুক ধরে উঠে দাঁড়ায়,টানাটানি করতে থাকে দুজনেই।

মিতা আতংকিত ভাবে সব কিছু দেখছে। হাবিব চৌধুরী আর মিতা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। যদিও হাবিব চৌধুরী নিজের হাতের বাধণ খোলার চেষ্টা করছে তাও খুলতে সফল হচ্ছে না।

–আহহহ……

এতো কিছুর মধ্যে হঠাৎ করেই ফায়ারিং এর শব্দ শুনতেই সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। অরিয়ন ব*ন্দুক ধরা অবস্থাতেই পিঁছনের দিকে ফিরে তাকায়।

–আরিয়ান ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া…
চিৎকার করে উঠে মিতা।

অরিয়ন আর করিম রহমানের হাতাপায়িতে ট্রিগারে চাপ পড়তেই গু*লি গিয়ে আঘাত করে আরিয়ানের উরুতে। বন্দুক ধরে রাখা অবস্থায় ই গুজিয়ে পড়ে আবরার। হাতে থাকা ব*ন্দুকে টান অনুভব করতেই শক্ত করে চেপে ধরে ব*ন্দুক।

আবারও ফায়ারিং এর শব্দ হয়।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া….
আবারও চিৎকার করে উঠে মিতা।

এবার আর অরিয়নের সাহস হচ্ছে না আবরারের দিকে তাকানোর। নিজের শরীর যেন আপনা-আপনি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাও মাথা তুলে আবরারের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় অরিয়নের।

আবরার অবাক দৃষ্টিতে আগে থেকেই অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

গু*লি আবরারের গায়ে লাগেনি।

পরক্ষণেই চোখ যায় চেয়ারে বসে থাকা হাবিব চৌধুরীর দিকে। হাবিব চৌধুরীর পেটে গিয়ে লেগেছে।

আবরার আর বন্দুক ধরে রাখা লোকের টানাটানি এবার গুলি ছুরেছে এই বন্দুক থেকে, যা গিয়ে আঘাত করেছে হাবিব চৌধুরীকে।

হাবিব চৌধুরী গু*লি লাগার সাথে সাথেই সেন্স হারিয়ে ফেলেছে। বয়স্ক শরীর এতো টর্চার এর পাশাপাশি ব*ন্দুকের গু*লি সহ্য করতে পারেনি। মুখ দিয়ে লালার মতো করে র*ক্ত পড়তে শুরু করেছে হাবিব চৌধুরীর।

–চাচ্চুউউউউউউউ….

–বাবায়ায়ায়ায়ায়ায়া…
একই সাথে অরিয়ন আর আবরার চেঁচিয়ে উঠে।

নিজের বাবার এ অবস্থা দেখে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে দুজনের। সাথে সাথেই ব*ন্দুক ধরে রাখা দুজনেই ধাক্কা দেয় দুই ভাইকে।

–কু*ত্তার বাচ্চা।
মাটিতে পড়ে থাকা অরিয়নকে গালি দেয় করিম রহমান। হাতে তার ব*ন্দুক।

–না না না না, ওকে ছেড়ে দেও। ওদেফ ছেড়ে দেও। আমি সব লিখে দিবো। আমাকে মে*রে ফেলো। ওদের ছাড়ো প্লিজ।
অনুরোধের সুরে কাঁদতে থাকে মিতা। হাত পা বাধা থাকার কারণে অরিয়নের কাছেও দৌড়ে যেতে পারছে না মিতা।

উরু বেড়ে র*ক্ত পায়ের পাতাতে চলে এসেছে আবরারের। যেখানে অরিয়ন আর আবরার ২০ মিনিটে এখানে চলে আসতে পেরেছে সেখানে পুলিশের কেন এতো সময় লাগছে তা বুঝতে পারছে না আবরার। তবে কী আজ কেউই বেঁচে ফিরতে পারবে না?

–সবার আগে তোকেই শেষ করবো। বাপ আর ভাইকে তো নিজেরাই করলি শেষ।
ব*ন্দুক অরিয়নের দিকে তাক করে বলে করিম রহমান।

মিতার আহাজারি কেউ যেন শুনতেই পারছে না।

অরিয়নের দৃষ্টি আঁটকে আছে জ্ঞানহারা হাবিব চৌধুরীর দিকে।

আবারও ফায়ারিং হয়।

–রিয়ননননননননন…..

–ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া…..

একসাথে রুহ কাঁপানোর মতো করে চিৎকার করে উঠে মিতা আর আবরার।

আবারও ফায়ারিং হয়।

করিম রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আবরারের পাশে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিও মাটিতে পড়ে যায়। অস্ত্রহীন সকলেই ভয়ে হাত উপরে উঠিয়ে আত্নসমর্পণ করে।

পুলিশ এসে পৌঁছেছে। ওয়াহিদ চৌধুরী পুলিশের পিঁছনেই দাঁড়িয়ে আছে। আজ একটুর জন্য ম*রতে গিয়েছিলো।

করিম রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই অরিয়ন দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। দৌড়ে যায় হাবিব চৌধুরীর দিকে। ইচ্ছে করছে করিম রহমানকে জ্যান্ত মাটিতে পু*তে ফেলতে। কিন্তু এখন হাবিব চৌধুরী আর আবরারের চাইতে কেউ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় ভেবেই সরে যায় অরিয়ন।

–বাবা? বাবা?? বাবা কথা বলো।

–বাবা?
বলে আবরার।

–আরিয়ান, তোর অবস্থাও তো ভালো না। চাচ্চু….

পুলিশ ফোর্সের সবাই একেক জনকে ধরতে ব্যস্ত। সকলের হাতে রাইফেল। ওয়াহিদ চৌধুরী মিতার হাতের বাধণ খুলতে ব্যস্ত। অরিয়নের ডাক শুনতেই ঘুরে তাকায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–ভয় পাস না। ফায়ারিং এর শব্দ শুনতেই আমরা এম্বুলেন্সে কল করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
মিতার পায়ের বাধণ খুলতে খুলতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

অরিয়ন দ্রুত হাবিব চৌধুরীর শরীর থেকে বাধণ খুলে তাকে নিজের কোলে তুলে নেয়। দুজন পুলিশ এসে আবরারকে ধরে। মিতা আর ওয়াহিদ চৌধুরী অরিয়নের পিঁছন পিঁছন হাটছে।

মিতা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। সবগুলো গু*লি মিতার গায়ে লাগলে হয়তো নিজের পাপের ফল ভোগ করতে পারতো মিতা,কিন্তু এখন নিজেকে আরও বেশি পাপি মনে হচ্ছে মিতার। হাবিব চৌধুরী আর আবরারের এবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী মিতা। ওয়াহিদ চৌধুরী মেয়ের মায়ায় মেয়েকে কিছুই বললো না। উলটো বুকে জড়িয়ে ধরেছে। অরিয়ন দ্রুত বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যায় হাবিব চৌধুরীকে নিয়ে। বিল্ডিং এর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে এম্বুলেন্স। তাড়াতাড়ি করে তাতে উঠে যায় অরিয়ন আর আবরার।

মিতা আর ওয়াহিদ চৌধুরীকে পেঁছনে ফেলেই এম্বুলেন্স তার গতিতে ছুটতে শুরু করেছে।
মিতা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখের পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে না।

–দ্রুত চল, মা। ওদের মাথা ঠিক নেই ভাইয়াকে এই অবস্থায় দেখে। কষ্ট পাস না তুই।
মিতার মাথায় হাত রেখে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

পুলিশের গাড়িতে উঠে বসে মিতা আর হাবিব চৌধুরী। কিছুক্ষণের মধ্যে সকলকেই নিচে নামিয়ে আসে পুলিশ। করিম রহমানের পায়ে গু*লি করেছে পুলিশ। তাও টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছে পুলিশ।

একে একে সকলকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে পুলিশ। একটু পরেই গাড়ি চলতে শুরু করে।

***********************

সকলেই সোফায় বসে আছে। মায়া চৌধুরী, আনিকা চৌধুরী, আফরিন সবাই বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করা নেই তাদের। মোবাইল টি টেবিলের উপর রাখা। ফোনে কল বাজতেই লাফিয়ে উঠে সবাই। আফরিন দ্রুত রিসিভ করে। অন্যরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে।

–কিহ?
কথাটা বলতেই আফরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে।

–আম….আমরা এক্ষুনি আস…আসছি।
কথাটা বলে মোবাইল কাটে আফরিন।

–কি হয়েছে আফরিন? তুই কাঁদছিস কেন? কার ফোন ছিলো?
জিজ্ঞেস করে মায়া চৌধুরী।

–কি হয়েছে? বলো কাঁদছো কেন?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–আফনান কল করেছিলো।

–কি বললো?
মায়া চৌধুরী কিছু বলার আগেই বলে উঠে আনিকা চৌধুরী। মনের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে তার।

–বড় চাচ্চু…

–হাবিবের কী?
আনিকা চৌধুরীর নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে পানি চলে এসেছে তার।

–বলো আফরিন…

–বড় চাচ্চু আর আরিয়ানের গু*লি লেগেছে..

–নায়ায়ায়ায়ায়ায়া…
দু পা পিছিয়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠে আনিকা চৌধুরী।

–এখন হাসপাতালে যাচ্ছে ওরা।

–কি বলছিস তুই, আফরিন!
বলে মায়া চৌধুরী।

–তোমার মেয়ে এসব কী বলছে, মায়া? হ্যাঁ? ওদের কিছু হয়নি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে আনিকা চৌধুরী।

–নিজেকে সামলান আন্টি। আমাদের এক্ষুণি যেতে হবে।

–নিজেকে সামলান আপা। ওদের কিছু হবে না।

–তোমার মেয়ে…তোমার মেয়ে এখন আমার স্বামী আর ছেলের পিঁছনে লেগেছে। আমার মেয়েকে খেয়ে ওর মন ভরেনি, মায়া।
কাঁদতে কাঁদতে বলে আনিকা চৌধুরী।

মায়া চৌধুরী কিছু বললো না। কী বলবে জানা নেই তার। এবস্থায় যে কেউ মিতাকেই দোষারোপ করবে।

–চলুন আপা। আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

–ওদের কিছু হলে,ওদের কিছু হলে আমি তোমার মেয়েকে কোনোদিনও ক্ষমা করবো না, মায়া।

–চলুন আপা।

মায়া চৌধুরী আর আফরিন, আনিকা চৌধুরীকে ধরে গাড়িতে বসায়। নারায়নগঞ্জের **** হাসপাতালে যাচ্ছে অরিয়ন। সেখানেই যাবে এখন তারা।

*************************

এম্বুলেন্সে শুয়ে আছে হাবিব চৌধুরী। সেন্স এখন একটু ও নেই। রক্ত পড়ার জায়গায় নিজের শার্ট খুলে চেপে ধরেছে অরিয়ন। অরিয়নের পাশেই বসে আছে আবরার। পা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি এখনো। মুখটা ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে আসছে দু জনের।

–আই এম সো সরি বাবা, সো সরি।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।

সীটের সাথে হেলান দিয়ে থাকা আবরার,অরিয়নের কথা শুনতেই চোখ খুলে তাকায়। অরিয়ন মাথা নিচু করে আছে। নিজের হাত রাখে অরিয়নের কাঁধে।

–তোর কোনো দোষ নেই।
বলে আবরার।

–হুম।
সায় দেয় অরিয়ন।

**************************

অপারেশন করে গু*লি বের করে নেওয়া হয়েছে দুজনেরই। ডাক্তার জানিয়েছে ভয়ের কিছু নেই। হঠাৎ গু*লির ব্যাথা সহ্য করতে পারেনি হাবিব চৌধুরী, তাই সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। গু*লি পেটে লাগলেও তেমন কোনো মারাত্মক ক্ষতি করতে পারেনি।

পুলিশ প্রসেসিং এর যা করার তা পরে গিয়ে করবে বলে জানিয়েছে অরিয়ন। হাবিব চৌধুরী ঠিক হলেই সবটা ঠিক করা হবে। বর্তমানে থানাতেই রাখা হয়েছে করিম রহমান ও তার সাথীদের।

হাবিব চৌধুরীর সাথে বসে আছে আনিকা চৌধুরী। অবস্থা ভালো আছে যেনে কান্নাকাটি একটু থেমেছে তার।

অরিয়ন আর আফরিন, আবরারের রুমে আছে। মিতাকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াহিদ চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর অপারেশন শুরু হওয়ার একটু পরেই একজন নার্স এসে মিতার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে গেছে। হাবিব চৌধুরী বা আবরার কারো রুমেই যেতে ইচ্ছে করছে না মিতার। মনের মধ্যে কেমন যেন ভয় কাজ করছে মিতার সাথে অনুশোচনাও।

–বাড়িতে চলে যা। এখানে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি?
হাবিব চৌধুরীর রুম থেকে বেড়িয়ে বলে মায়া চৌধুরী।

–না, মা। আমি ঠিক আছি।
জবাব দেয় মিতা।

–কিছু ভুল আমাদের হুশ ফিরিয়ে আনে। হিতাহিত জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। মনে করিস এটা তোর জন্য সেরকম একটা ঘটনা ছিলো।
বলে মায়া চৌধুরী।

–হুম।
মাথা নিচু করে বলে মিতা।

–ওর জন্য খাবারের কিছু নিয়ে আসো ওয়াহিদ।
মায়া চৌধুরীর কথা শুনতেই দ্রুত হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।

–যা করেছিস তার জন্য খুব সহজেই ক্ষমা কামনা করিস না।
মিতার কাছাকাছি গিয়ে বলে মায়া চৌধুরী।

–সরি মা।
জবাব দেয় মিতা।

–সেটা ওদের ফিল করাস। কতটা অনুশোচনা বোধ করছি তা। তোর জন্য আনিকা আপা আজ সব হারাতে বসেছিলো।

মায়া চৌধুরীর কথা শুনতেই মাথা তুলে তাকায় মিতা।

–আশা করি এরকম ভুল আর কোনোদিন করবি না।

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায় মিতা। মায়া চৌধুরী আবারও রুমে প্রবেশ করে।

***********************

গরম গরম কফি আর স্যান্ডউইচ নিয়ে হাজির হয় ওয়াহিদ চৌধুরী। বাইরে রাখা চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছে মিতা। কিসের অপেক্ষা করছে জানেনা। সবাই মোটামুটি ভালো আছে এখন। তাও কেন বা কার জন্য অপেক্ষা করছে মিতা?

–খেয়ে নে।
মিতার সামনে কফি এগিয়ে দিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–মিতা হাত বাড়িয়ে শুধু কফিটাই নেয়।

ওয়াহিদ চৌধুরী মিতার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে।

–আমাকে কী ওরা ক্ষমা করবে, বাবা?
নিম্নস্বরে বলে মিতা।

–অবশ্যই করবে। তুই তো ইচ্ছে করে করিস নি কিছু। মানুষ মাত্রই ভুল মিতা।
জবাব দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।

মিতা আর কিছু বললো না। ওয়াহিদ চৌধুরীর বাহুর সাথে হেলান দিয়ে নিজের মাথা তার কাঁধে রাখলো। এতো বড় শাস্তি কেন পাচ্ছে মিতা?

********************

ওয়াহিদ চৌধুরীর নড়াচড়া অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকায় মিতা। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা বুঝতে পারেনি। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। ওয়াহিদ চৌধুরীর সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। ঘুম ঘুম চোখে সব স্পষ্ট শুনতে পারছে না মিতা। মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায় মিতা।

অরিয়ন মিতার দিকে তাকালো না।

–আমি বাসায় যাচ্ছি। তুমি একটু এদিকে খেয়াল রেখো।
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–আচ্ছা। টেনশন করিস না তুই।
জবাব দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।

অরিয়ন মিতার দিকে না তাকিয়েই হাটা শুরু করেছে। মিতাও অরিয়নের পিছন পিছন হাটা শুরু করেছে।

পার্কিং-এ গিয়ে গাড়িতে বসতেই মিতা দ্রুত গিয়ে পাশের সীটে বসে। অরিয়ন একবার মিতাকে দেখে নেয়। মিতা আলতো এক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে। অরিয়ন সেদিকে নজর দিলো না। গাড়ি স্টার্ট করে।

****************************

বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামতেই অরিয়ন দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসে। অরিয়নের দেখাদেখি মিতাও নেমে যায়। অরিয়নের সাথে আজ হাটাও যেন পারছে না মিতা। কোনোদিকে না তাকিয়ে সরাসরি নিজের রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন।

ঢাকার এই বাড়িতে মাঝে মধ্যেই এসে থাকে হাবিব চৌধুরীর পরিবার। তাই সকলের মন মতো করে রুম সাজানো আছে এখানে।

অরিয়নের সাথে সাথে মিতাও রুমে প্রবেশ করে।

–রিয়…

–শাট দা ফা*ক আপ।
চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।

হঠাৎ করে চেঁচানোর ফলে লাফিয়ে উঠে মিতা।

–ইউ নো হোয়াট? ইউ আর এ ফুল, ইউ আর সাচ এ ফুল।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। রাগে অরিয়নের শরীর কেমন করছে তা অরিয়ন নিজেও বলতে পারছে না। জিদ করে খাটের পায়াতে এক লা*থি মা*রে।

–ফুল,ফুল,ফুল,ফুল।
একের পর এক লা*থি মা*রতে মা*রতে বলে অরিয়ন।

মিতার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ে যাচ্ছে। অরিয়ন তো ঠিকি বলেছে। মিতার বোকামির জন্য আজ বিশাল বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো।

–তোর জন্য, শুধুমাত্র তোর জন্য….
কথাটা বলেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা টুল ধরে আছার মা*রে অরিয়ন।

–তোর জন্য, তোর জন্য।
আছার মা*রতে মা*রতে বলে অরিয়ন।

–রি….রিয়ন।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।

মিতার কণ্ঠ শুনে অরিয়নের রাগ যেন আকাশ ছুলো। মিতার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় অরিয়ন। দু কদমে মিতার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে মিতার বাহু শক্ত করে ধরে।

–আহ…
ব্যাথায় শব্দ করে উঠে মিতা।

–তোকে আমি এতো ভালোবেসেছি আর তুই…তুই আর তোর বোকামির জন্য আমি আজ আমার বাবাকে, আমার ভাইকে হারাতাম।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।

–তোর কারণে আজ আমার বাপ, ভাই ম*রতে বসেছিলো।

–শুধুমাত্র তোর বেশি বুঝা আর বোকামির কারণে।
আবারও বলে অরিয়ন।

মিতা কিছু বলছে না। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ে যাচ্ছে।

–সত্যি কথা কি জানিস?
কথাটা বলে একটু থাকে অরিয়ন।

–তুই আমার ভালোবাসার যোগ্য না।
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

চলবে…..

#পারমিতা
#পর্ব_৫৪
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

–তুই আমার ভালোবাসার যোগ্য না।
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–রিয়ন।
অবাক হয়ে বলে মিতা।

–তোর বোকামির কারণে দুটো মানুষ তাদের প্রাণ হারাতে বসেছিলো।

–বাবা, ছোটবেলা থেকে তোকে এতো আদর করেছে। কখনো ভাইয়ের মেয়ে বলে তোকে অবহেলা করেনি। আরিয়ান, তোকে কতোটা স্নেহ করে সব ভুলে গেলি তুই? তোর ভুলের জন্য কী হতে যাচ্ছিলো একবার ভেবেছিস তুই?
বলে অরিয়ন।

–সরি, সরি, আমি বুঝতে পারিনি। আমি তো… আমি তো শুধু বিশ্বাস করেছিলাম।

–বিশ্বাস? কাকে করেছিলি বিশ্বাস? দুই দিনের আসা এই লোককে?
তাচ্ছিল্যের সুরে বলে অরিয়ন।

–আর আমাদের? আমাদের কী করলি তুই? তোর সাথে তো আমাদের সম্পর্ক জন্ম থেকে।
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

মিতা কিছু বললো না। বলার মতো কোনো ভাষা নেই মিতার। ঠিকি তো বলেছে অরিয়ন। নিচের দিকে তাকিয়ে রইল মিতা।

–ভালোবাসার সম্পর্ক এভাবে চলে না, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এভাবে চলে না, পরী।

–রিয়ন…আমি…আমি বুঝতে পারিনি উনি…. উনি আমাকে এভাবে ধোঁকা দিবে।
কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।

–আমি তা….তাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
হেঁচকি দিতে দিতে বলে মিতা।

–এই বিশ্বাসটা তুই আমাকে করতে পারতি! তুই আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতি! সেদিন…আমি যখন তোকে আমার অনুভূতির কথা খুলে বলেছিলাম তখন তুই আমাকে প্রশ্ন করতে পারতি, পরী।

–জানিনা আমার কি হয়েছিলো। সেদিন তুমি আর চাচ্চু একা একা…. একা একা…
কথাগুলো মিতার গলায় আঁটকে আসছে। ঠিক মতো বলতেও পারছে না।

–একা একা কী যেন কথা বলেছিলে তোমরা। এরপরই… এরপরই আমাকে ভালোবাসি বললে। আ…আমি ভেবেছিলাম তুমি মিথ্যে বলছো। হয়তো কিছু প্ল্যান করেছো তোমরা।

–হাহ…আমরা ঠিক করেছিলাম সবকিছু তোকে জানাবো। আর সেটা নিয়েই কথা বলেছিলাম আমরা।
হাসি দিয়ে মিতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেয় অরিয়ন।

–রিয়ন?
অরিয়নকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে এগিয়ে যায় মিতা।

হাত ছাড়িয়ে নেই অরিয়ন।

–রিয়ন?
অরিয়নের হাত ধরে মিতার দিকে ফেরায় অরিয়নকে।

–যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তোমাকে ভালোবাসি, তখন থেকে শুধু অপেক্ষায় ছিলাম তোমার মুখ থেকে তা শোনার।
অরিয়নের হাত শক্ত করে ধরে বলে মিতা।

–সেদিন, সেদিন তুমি হঠাৎ করেই ভালোবাসি বললে। যখন….যখন আমাকে বোঝানো হলো চাচ্চু সব করেছে শুধুমাত্র টাকার জন্য। চাচ্চুর সাথে তোমার এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আবার দুজনে একা একা কী যেন বললে। তাই….তাই আমি বিশ্বাস করতে পারিনি তোমাকে।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কথা খুলে বলে মিতা।

–স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এমন একটা সম্পর্ক যেখানে সন্দেহ বা কোনো প্রশ্ন উঠলে তা সরাসরি কথা বলে সমাধান করতে হয়। মনে মনে রেখে কিছুই ঠিক হয় না। উলটো সেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী হিসেবে না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম? সেই হিসেবে কী তুই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলি? কথা বলেছিলি আমার সাথে?
মিতার থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে অরিয়ন।

মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।

–তোকে ছাড়া ৬ টা মাস আমি কীভাবে কাটিয়েছি তা শুধুমাত্র আমি জানি। আর যখন তোর সাথে দেখা হলো তখন? তখন আবারও মিথ্যে বললি তুই। তখন কী পারতি না সবটা খুলে বলতে?

–রিয়ন!!

–সবার মনে কষ্ট দিয়েছিস তুই।

–রিয়ন!!

–আমার মনে কষ্ট দিয়েছিস তুই।

–সরি,সরি।

অরিয়ন মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছু বলতে চেয়েও যেন মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। মিতার অবস্থাও যে ভালো না তা স্বচোক্ষে দেখতে পারছে অরিয়ন। তবে মিতা আজ যে ভুল করেছে তার জন্য অরিয়নের কি করা উচিৎ তা অরিয়ন বুঝতে পারছে না।
গু*লিগুলো যদি ওদের গায়ে না গেলে অরিয়নের গায়ে লাগতো তাহলেও হয়তো অরিয়ন বিনাদ্বিধায় মিতাকে মাফ করে দিতো।

–রি….
অরিয়ন কোনো কথা না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিতা ডাকতে নিয়েও চুপ হয়ে গেল।

অরিয়ন রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়ে মিতা। মাটিতে বসে নিজের হাত দিয়ে কপাল ধরে কাঁদতে থাকে। মিতা যে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। নিজেকে নিজেই ক্ষমা করতে পারছে না।

***********************

পরের দিন সকাল।

বিছানায় বসে আছে মিতা। পা মেলে খাটের মাথার সাথে হেলান দিয়ে আছে। চোখ বন্ধ।

গতকাল রাতে বাড়িতে কেউ আসেনি। ১ ঘন্টার জন্য শুধুমাত্র মায়া চৌধুরী এসেছিলেন। মিতাকে জোর করে খাবার খায়িয়ে, বক্সে করে সবার জন্য খাবার নিয়ে যান তিনি। মিতা সাথে করে যেতে চাইলেও মায়া চৌধুরীর না বলাতে থেকে যায় মিতা।

আফরিনের সাথে কিছুক্ষণ পর পরই কথা হয়েছে মিতার। হাবিব চৌধুরী আর আবরার দুজনেই আগের থেকে ভালো আছে। আজ বিকালে আবরারকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে৷ হাবিব চৌধুরীকে আরও দু চারদিন রাখা হবে হাসপাতালে। রাতে হাসপাতালে অরিয়ন ছিলো না। বাসায় ও ফেরেনি। কোথায় ছিলো কেউ জানেনা।

অরিয়নের সাথে শেষ গতকাল দেখা হয়েছিলো মিতার। এরপর আর কলও করেনি। কতটা কষ্ট পেয়ে অরিয়ন,মিতাকে ইগনোর করছে তা বুঝতে পারছে মিতা।

দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলে মিতা। অরিয়ন রুমে প্রবেশ করেছে। অরিয়নের সাথে চোখাচোখি হতেই হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে মিতা। মিতাকে দেখেও যেন দেখলো না অরিয়ন। সরাসরি আলমারির কাছে গিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অরিয়ন ওয়াশরুম যেতেই দ্রুত খাট থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা। ওয়াশরুমের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়নের জন্য।

********************

দরজা খুলে অরিয়ন বের হতেই এগিয়ে যায় মিতা।

–কি অবস্থা এখন সবার? আর তুমি…তুমি কোথায় ছিলে রাতে?
প্রশ্ন করে মিতা।

–ভালো আছে।
জবাব দিয়ে সরে যায় অরিয়ন।

–রাতে বাসায় আসোনি কেন?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে যায় মিতা।

অরিয়ন কিছু জবাব দিলো না। আলমারিতে টাই খুজতে লাগলো।

–বলো? তুমি কি এখন আমার মুখটাও দেখতে চাও না?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে টাই শক্ত করে ধরে অরিয়ন। মিতার দিকে ফিরে তাকায়। মিতার চোখে পানি ছলছল করছে।

–আই এম সরি, রিয়ন। তুমি তো আমাকে বুঝো। আমি তো ইচ্ছে ক…..
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাটা শুরু করে অরিয়ন।

নিমিষেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিতা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলো মূর্তির মতো।

******************

বিকালে আবরারকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অরিয়ন আর আফরিন মিলে আবরারকে নিয়ে আসে। হাবিব চৌধুরীর সাথে বাড়ির বড়রা থেকে গেছেন।

হুয়িল চেয়ারে আবরার বসা। উরুতে গু*লি লাগার কারণে কিছুদিন হাটাহাটি বন্ধ রাখতে বলেছে ডাক্তার।

গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতেই তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে মিতা। ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন আর আফরিন। পাশেই হুয়িল চেয়ারে আবরার বসা। অরিয়ন আর আফরিনের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলতে ব্যস্ত। মিতা সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে রইল। সাহস করে এগিয়ে গেলো না।

–কিরে, ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে আয়।
হঠাৎ করে মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে আবরার।

আবরারের কথা শুনে সবাই মিতার দিকে তাকায়। আফরিনের মুখে আলতো এক হাসি ফুঁটেছে মিতাকে দেখে। অরিয়নের চেহারার এক্সপ্রেশন কোনো পরিবর্তন হলো না। মিতাকে দেখেও যেন দেখলো না।

মিতা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। আবরারের কাছাকাছি আসতেই হাটু ভেঙ্গে বসে। আবরারকে দেখতেই নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে মিতার। শুধুমাত্র মিতার ভুলের কারণেই আবরারের আজ এই অবস্থা। কথাগুলা ভাবতেই মিতার চোখ ভিজে আসে।

–সরি, পারলে ক্ষমা করে দিও।
আস্তে আস্তে বলে মিতা।

–ধুর পাগলি, কি বলছিস এসব?
জবাব দেয় আবরার।

আবরারের কথা শুনে আবরারের দিকে তাকায় মিতা। চোখের কোণ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো মিতার।

–তুই কেন সরি বলছিস? তুই তো ইচ্ছে করে কিছুই করিস নি।
বলে আবরার।

–তাও….আমি উনাকে বিশ্বাস না করলে এরকম কিছুই হতো না।

–তুই বিশ্বাস করেছিস কারণ তুই সহজ-সরল। তোর মনে কোনো কালি ছিলো না তাই।
পেঁছন থেকে বলে উঠে আফরিন।

–আফরিন আপু ঠিকি বলছে। গু*লি আমাকে না গেলে তোরও লাগতে পারতো। তাই বলে কি সব দোষ তোকে দিলেই হবে? তোকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ছিলো, আর সেটাই করেছি আমরা।
মিতার মাথায় হাত রেখে বলে আবরার।

আবরারের কথা শুনে মিতার মন হালকা হয় কিছুটা। আড় চোখে অরিয়নের দিকে তাকায়। অরিয়নের চেহারা এখনো আগের মতোই আছে।

“তুমি কি মাফ করবে না আমাকে?” মনে মনে ভাবে মিতা।

********************

ড্রেসিং টেবিলের কাছে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে মিতা, তখনি রুমে ঢুকে অরিয়ন। আবরারকে বাসায় দিয়ে বের হয়েছিলো। এরপর আর বাসায় আসেনি। এখন প্রায় রাত ১২ টা। মিতা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে অরিয়নের জন্য। অরিয়নকে দেখতেই উঠে দাঁড়ায় মিতা।

–খাবার গরম করে আনছি।
বলে মিতা।

–খেয়ে এসেছি আমি।
জুতার ফিতা খুলতে খুলতে বলে অরিয়ন।

মিতা গিয়ে অরিয়নের পাশে বসে। অরিয়নের হাতের উপর নিজের হাত রাখে।

নিজের হাতের উপর মিতার হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মিতা কিছু বলার আগেই হাত সরিয়ে নেয়। তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

মিতা খাটের উপর বসে অপেক্ষা করলেও অরিয়ন যখন ফ্রেশ হয়ে আসলো, তখন কিছু না বলেই খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মিতাকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকে অরিয়ন। মিতার চোখ দিয়ে শুধু অঝোর ধারায় পানি পড়তেই থাকলো।

*******************

২ দিন পর।

আজ হাবিব চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ১১ টা করে বাসায় চলে আসলে বিকালের ফ্লাইটেই চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছে সবাই।

এই দুইদিনে অরিয়ন আর মিতার মধ্যে কিছুই ঠিক হয়নি। মিতা যতোটা অরিয়নের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে অরিয়ন ততোই ইগনোর করে গেছে মিতাকে। যদিও আফরিন মিতাকে বুঝিয়েছে যে,সব ঠিক হতে সময় লাগবে। অরিয়নও যে কষ্ট পেয়েছে তা অতিক্রম করতে অরিয়নের সময়ের প্রয়োজন। সব বুঝেও মিতার মন কিছুতেই অরিয়নের এরূপ অবহেলা সহ্য করতে পারছে না।

–ভাই, আপনি বেশি উত্তেজিত হবেন না। অরিয়ন তো সবটা সামলে নিচ্ছে।
ড্রয়িং রুমে বসে বলে মায়া চৌধুরী

১১:৩০ টা করে বাড়িতে চলে এসেছে হাবিব চৌধুরী।

— অরিয়ন একা আর সবটা কীভাবে সামলাবে, মায়া। আমি আর আবরার এখানেই আছি। মিটিংগুলো একের পর এক ডিলে করা হচ্ছে।
জবাব দেয় হাবিব চৌধুরী।

–আহা, হাবিব। আজ চট্টগ্রাম পৌঁছালেই অরিয়ন সব সামলে নিবে। টেনশন নিও না তুমি।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–আর ওয়াহিদ তো সব নিজে থেকেই দেখে নিচ্ছে।
বলে মায়া চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরী বাসায় এসেছেন প্রায় ১০ মিনিটের মতো হবে। এর মধ্যে মিতা নিজের রুম থেকে বের হয়নি। আনিকা চৌধুরীর ভয়ে বের হয়নি। মিতাকে এমনিতেই পছন্দ করেন না আনিকা চৌধুরী, এখন যখন এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে তখন আনিকা চৌধুরীর রিয়েকশন কী হবে সেটা ভেবেই কূল পাচ্ছে না মিতা।

–মিতা??
দরজায় নক করে আফরিন।

আফরিনের কণ্ঠ শুনে দরজা খুলে মিতা।

–চাচ্চু চলে এসেছে তো।
বলে মিতা।

–জানি।
জবাব দেয় মিতা।

–জানলে এখানে কী করছিস? চল, দেখা করে আসবি।
মিতার হাত ধরে বলে আফরিন।

মিতা নিজের জায়গায় থেকে নড়লো না। অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

–কী হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে আফরিন।

–আনিকা আন্টি!
ভয়ে ভয়ে বলে মিতা।

–আনিকা আন্টি কিছুই না। কে কী বললো তাতে কিছুই যায় আসে না। তুই কিছুই ইচ্ছে করে করিসনি। সো এখানে সব দোষ তোর নয়।
মিতাকে আশ্বাস দিয়ে বলে আফরিন।

–কিন্তু চাচ্চু…যদি চাচ্চুও রাগ করেন?

–করবেন না। চাচ্চু কেমন তা কী তুই জানিস না?

–হুম।

–হুম নয়, চল তাড়াতাড়ি।
মিতার হাত ধরে হাঁটা শুরু করে আফরিন।

******************

ড্রয়িং রুমে সবাই বসা। সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন হাবিব চৌধুরী। তার পাশেই আনিকা চৌধুরী বসা। হাবিব চৌধুরীর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। মায়া চৌধুরী বা অরিয়নকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

মিতা আর আফরিন সিড়ি বেয়ে নামতেই হাবিব চৌধুরীর চোখ যায় মিতার দিকে। মিতাকে দেখে মিষ্টি এক হাসি দেয় হাবিব চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর হাসি দেখে মন হালকা হয় মিতার। এগিয়ে যেতে যেতে নিজেও এক হাসি ফিরিয়ে দেয়। হাবিব চৌধুরী থেকে চোখ ফিরতেই চোখ যায় আনিকা চৌধুরীর দিকে। গম্ভীরমুখে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। মিতার মুখ থেকে হাসিটা যেন আপনা-আপনি সরে গেল। নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে যা পাওয়ানা তা শুনার জন্য।

–তুমি এখনো এখানেই আছো? অরিয়ন যে বললো ও চলে গেছে।
মিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে আনিকা চৌধুরী।

–চলে গেছে মানে? আমরা সবাই এখানে। তাহলে ও কোথায় যাবে?
কপাল কুঁচকে বলে হাবিব চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরীর কথা কিছুই বুঝতে পারছে না হাবিব চৌধুরী।

–কেমন আছো তুমি?
হাবিব চৌধুরীর সামনে আসতেই বলে মিতা।

–বেঁচে আছে।
জবাব দেয় আনিকা চৌধুরী।

–আনিকা!!
রাগ করে বলে হাবিব চৌধুরী।

মিতা মাথা নিচু করে রাখলো।

–রাগ হচ্ছে তোমার? ওকে কিছু বললেই রাগ হয় তোমার। আর ওর জন্য আমার মেয়ে ম*রেছে। একটুর জন্য তুমি আর আরিয়ান ম*রতে বসেছিলো। এর আগে অরিয়নকে আধ-ম*রা অবস্থায় এনেছিলে ভুলে গেছো? তাতে আমার রাগ হবে না?
সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–ওর জন্য অহনাকে আমরা হারাই নি, আনিকা।
শান্ত কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।

–কি!!!
অবাক হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

–মিতাসহ সবাইকে মা*রতে গাড়ির ব্রেকফেল করিয়েছিলো করিম রহমান। এখানে মিতার কোনো দোষ নেই। মিতা ওয়াসিমের সাথে খেলা না করলেও গাড়ির এক্সিডেন্ট হতো।

–করিম রহমান কার শত্রু? কাদের মা*রার জন্য ব্রেকফেল করা হয়েছিলো?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।

–আনিকা…

–একটা মাথামোটা মেয়ে ছাড়া আর কিছুই না ও। তোমরা এতো বিশ্বাস করেছো আর তার বিনিময়ে কিছুই দিতে পারেনি।
কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করে আনিকা চৌধুরী।

আফরিন মিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।

চলবে…….