পারমিতা পর্ব-৭+৮

0
103

#পারমিতা
#পর্ব_৭
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

কলেজের সামনে গাড়ি এসে দাঁড়াতেই মিতা বেড়িয়ে আসে গাড়ি থেকে।

–বাই অরিয়ন ভাইয়া।
আলতো এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।

–বাই।
জবাব দেয় অরিয়ন।

–চলেন কাকা।
ড্রাইভারকে বলে অরিয়ন।

গাড়ি মিতার নজরের আড়াল হলেই কলেজে প্রবেশ করে মিতা।

ক্লাসে ঢুকতেই মিতার নজর খুজতে থাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ফাহমিদা, সুমাইয়া ও ফয়সালকে।

–সুমা, পারু আসছে।
সুমাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে মিতাকে দেখিয়ে বলে ফাহমিদা।

কথা শুনে মিতার দিকে তাকিয়ে মিতাকে দেখেই এই বিশাল হাসি দিয়ে উঠে সুমাইয়া । নিজের সব বন্ধুদের এক সাথে বসে থাকতে দেখে খুশিতে মিতাও দৌড়ে চলে যায় তাদের বেঞ্চের কাছে।

–আমাকে ছাড়া কি আড্ডা দিচ্ছিস হ্যাঁ??
ফাহমিদার কাধের উপর ঢলে পড়ে সবাইকে বলে মিতা।

–লল, দেখ কি করছি।
ফয়সাল সরে যেতেই বেঞ্চের উপর বই আর হাতে কলম নিয়ে বসে থাকা সুমাইয়ার দিকে চোখ যায় মিতার।

–কিচ্ছু পারিনা ভাই, আজ নিশ্চিত আমি ফেল করবো তাই চোরামি করতেছি।
হাসতে হাসতে বলে সুমাইয়া।

–তুই পড়িস না কেনো তাহলে, ফাজিল।
সুমাইয়ার পাশে গিয়ে বসে বলে মিতা।

–পড়তে মন চায় না। বই নিয়ে বসলেই আমার শুধু ঘুম আসে।
জবাব দেয় সুমাইয়া।

–অকে শুধু বাদরামি করতে দে, দেখবি সবার আগে থাকবে।
বলে ফয়সাল।

–তুই আমাদের সাথে বসলে ভালো হতো কিন্তু ঐ পাজি স্যার, সব সময় তোকে আলাদা বসায়।
বলে ফাহমিদা।

–আমি ও তো চাই তোদের সাথে বসতে কিন্তু স্যারটা বেশি খারাপ।
বলে মিতা।

ক্লাস শুরুর ঘণ্টা বাজতেই ঘড়ির দিকে তাকায় সবাই।

–ওকে, ফেল করার টাইম চলে এসেছে।
মুখ ভেংচি দিয়ে বলে সুমাইয়া।

সুমাইয়ার রিয়েকশন দেখে সবাই হাসতে থাকে।

****************

সব সময়ের মতো আজও মিতার এক্সাম ভালো হয়েছে। বাসায় আসতে আসতে বিকাল হয়েছে মিতার। একটু রেস্ট নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর টিভি দেখছে মিতা।

কলিং বেলের আওয়াজ শুনতেই ঠিক করে বসে মিতা। একটু পরেই প্রবেশ করে আনিকা চৌধুরী। চোখে সানগ্লাস, হাতে গুচির ব্যাগ। মোবাইল টিপতে টিপতে আনমনে হাটছে আনিকা চৌধুরী।

–আন্টি??
আনিকার পেছন পেছন গিয়ে ডাকতে থাকে মিতা।

–আন্টি??
আবারও ডাক দেয়। কিন্তু আনিকা চৌধুরী থেকে কোনো রিয়েকশন না পেয়েই বুঝতে পারে কানে ব্লুটুথ থাকার কারণে মিতার ডাক শুনতে পাচ্ছে না। তাই নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করে আনিকা চৌধুরীকে।

–আন্টি??

নিজের শরীরে কারো স্পর্শ অনুভব করতেই ফিরে তাকায় আনিকা চৌধুরী। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পারমিতাকে দেখেই বিরক্তি প্রকাশ পায় চেহারায়। কান থেকে ব্লুটুথ খুলে ভ্রু কুচকে বলে-

–কি হয়েছে? ডাকছিস কেনো?? আর গায়ে হাত দিতে কতবার না করেছি তোকে??

–ড্রাইভার আংকেল অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে তোমাকে।
নিজের হাত দিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভারকে দেখিয়ে বলে মিতা।

–আচ্ছা আচ্ছা।
কথাটা বলেই দরজার কাছে চলে যায় আনিকা চৌধুরী।

নিজের জায়গায় গিয়ে আবারও বসে পড়ে মিতা। আগে স্কুল কলেজ থেকে ফিরলেই বাকি সময় আফরিন বা মায়া চৌধুরীর সাথে কেটে যেত। কিন্তু এই বাড়িতে আসার পর থেকে বেশিরভাগ সময় একা একাই কাটাতে হচ্ছে মিতার। আনিকা চৌধুরী মিতাকে দেখলে যেন এক প্রকার এড়িয়েই চলে। হাবিব চৌধুরীর সাথে সকালে ছাড়া দেখাই হওয়ার সুযোগ হয় না মিতার। আর আফরিনের ঘটনার পর থেকে অরিয়ন কাজে নিজেকে এতোটা ব্যস্ত করে নিয়েছে যে নিজের মতো একাই রুমে সময় পার করে দেয়। একমাত্র আবরারের সাথেই সময় কাটাতে পারে মিতা।

টিভি দেখতে থাকা মিতার আনিকা চৌধুরীর চেহারাটা সামনে ভাসতেই চোখে পানি চলে। “এমন নয় তুমি সবার সাথে এরকম, তাহলে আমার সাথেই এরকম কেন?? কেনো অন্যদের পছন্দ করো আর আমাকে দেখলে এতো ঘৃণা প্রকাশ পায়?” নিজে নিজে ভাবে মিতা।

*************

নিজের রুমের টেবিলে বসে পড়ছে মিতা। মোবাইলে মেসেজের নোটিফিকেশন শুনলেও পরে দেখবে ভেবে পড়া পড়তে থাকে মিতা। আগামীকাল উচ্চতর গনিত পরীক্ষা মিতার। এই ম্যাথটাই মিতার জীবন কঠিন করে তুলেছে তাই বার বার চেষ্টা করে আর টিউশন টিচার থেকে সব বুঝে নিয়েছে মিতা।

–উফফ..সব শেষ কালকের পড়া।
হাত পা টান করতে করতে খুশি হয়ে বলে মিতা।

ঘড়িতে ১০:৩০ টা বাজে। যদিও শায়লা খাবার খাওয়ার জন্য ডেকেছিলো কিন্তু পড়ার মাঝখানে যেতে চায়নি মিতা। এখন ডিনার শেষ করেই শুয়ে পড়বে।

খুশিতে মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় টান হয়ে শুয়ে পড়ে মিতা। মোবাইলের লক খুলে ওয়াইফাই অন করতেই একের পর এক মেসেজ আসতেই থাকে গ্রুপে।

“এতো কথা কীভাবে বলিস তোরা?”মনে মনে ভাবে মিতা।

বেস্টু গ্যাং 😍😚🐸❤️ (২৪০+)

কি এতো কথা হচ্ছে জানার জন্য ইনবক্সে প্রবেশ মিতা।

সাল্লু 🤣( ফায়সাল) : ঐ কবিরের উপর গ/জব পড়বে।

সুম্মু 🤫 ( সুমাইয়া) : আমি নিশ্চিত স্যারের তার বউয়ের সাথে ঝড়গা হইছে।

মিদা 😪 ( ফাহমিদা) : আমি দোয়া করি কাল স্যারের পেট খাবার হোক। আল্লাহ বিচার করুক উনার।

স্যারকে এতো গা/লি দিচ্ছে দেখে হেসে ফেলে মিতা।

পারু উইথয়াউট দেবদাস🐸 (মিতা) : কি হয়েছে তোদের?? স্যারকে এতো গা/লি দিচ্ছিস কেনো??🤣

সাল্লু 🤣 : বেটা গা/লি খাওয়ার কাজ করছে তাই।

সুম্মু 😚 : কেনো জানিস না কি করছে??

পারু উইথয়াউট দেবদাস 🐸 : নাহ, কি হয়েছে??🙄

মিদা 😪 : মিতা কাল সত্যি সত্যি পারু হয়ে যাবে 🤣🤣🤣।

সাল্লু 🤣 : 🤣🤣😭

পারু উইথয়াউট দেবদাস 🐸 : কি হয়েছে বলবি তো😒😒।

সুম্মু 😚 : স্যার কাল এক চ্যাপ্টার বাড়াই দিছে এক্সামের জন্য🥲।

পারু উইথয়াউট দেবদাস 🐸 : কিইইইইইইই?কখন আমি জানিনা কেনো??

সাল্লু 🤣 : সন্ধ্যায়, কাল আমাদের সাথে ফেলের লাইনে পারু ও থাকবে😌। শুনেই খুশি লাগছে।

পারু উইথয়াউট দেবদাস 🐸 : আল্লাহ বিচার করবে এই স্যারের। সব সময় এমন প্যাঁচ লাগায় উনি🙂। আগে কেনো বলেন না😡। সবগুলা পড়তে যা এখন😡😡।

মিতা আর কোনো কথা না বলেই স্যারের সাথে এড থাকা গ্রুপে গিয়ে ম্যাথের অধ্যায় দেখেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এই অধ্যায়টা এখনো ধরেনি মিতা। যখন স্যার করিয়েছিলো তখন বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কলেজ যেতে পারেনি। এতো রাতে স্যারকেই বা কিভাবে কল দিবে। “কবির স্যার, আপনি একটা খবিস ” রাগ হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে মিতা।
তাড়াতাড়ি করে বই, খাতা আর কলম নিয়ে দৌড়ে চলে যায় আবরারের রুমের সামনে।

–আরিয়ান ভাইয়া??
দরজায় নক করে বলে মিতা।

–আরিয়ান ভাইয়া??

–আরিয়ান ভাইয়া??

কোনো জবাব আসতে না দেখে হ্যান্ডেল ধরে পুশ করতেই দরজা খুলে যায়। রুমের মধ্যে ঘোর অন্ধকার। আবরার রুমে। ড্রয়িং রুমে আছে ভেবে নিচে নেমে আসে মিতা। আবরারকে কোথাও দেখতে না পেয়ে শায়লার কাছে চলে যায় মিতা।

–শায়লা আপু।

–কি হয়েছে মিতা?? খাবার দিবো এখন??
জিজ্ঞেস করে শায়লা।

শায়লা এই বাড়ির হেল্পিংহ্যান্ড হিসেবে কাজ করছে ২ বছর ধরে। বয়স ২৯/৩০ হবে।

–আরিয়ান ভাইয়া কি বাসায় আসেনি এখনো??

–না, কেনো??

–না এমনিতেই। একটু হেল্প লাগতো তাই।
মন খারাপ করে বলে মিতা। পরক্ষণেই কিছু ভাবতে খুশি হয়ে যায়।

–শায়লা আপু আমাকে একটু হেল্প করবে??
শায়লার কাছাকাছি গিয়ে বলে মিতা।

–কি হেল্প? যা বলবে তাই করবো।
আলতো এক হাসি দিয়ে বলে শায়লা।

–আমাকে ম্যাথ করে দিতে পারবে? এইযে এই অধ্যায়।

–মিতা…মিতা.. তুমি তো জানোই আমি আর্টস নিয়ে পড়েছি। ম্যাথে একদম কাঁচা আমি।
মন খারাপ করে বলে শায়লা।

–পারবে না.??
মন খারাপ করে বলে মিতা।

মাথা নাড়িয়ে না বোঝায় শায়লা।

–ওকে, আরিয়ান ভাইয়া আসলে আমাকে ডাক দিও।

–ওকে।

কথা বলেই নিজের রুমের দিকে আগাতে থাকে মিতা। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে আগাতেই চোখ যায় এক কর্ণারের শেষের রুমের আলো জ্বলতে দেখে। রুমটা অরিয়নের। “একবার কি গিয়ে দেখবো?” মনে মনে ভাবে মিতা। আগে অনেক বারই মিতাকে পড়ালেখায় হেল্প করেছে অরিয়ন।

ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় মিতা। নক করতে গিয়েও যেন সাহস পাচ্ছে না মিতা। ” থাক লাগবে না” কথাটা ভেবে চলে যেতেই হাতে থাকা উচ্চতর গণিত বইয়ের দিকে চোখ যেতেই আবারও দাঁড়িয়ে পড়ে মিতা।
“আই হেট ইউ কবির স্যার” রাগ হয়ে মিনমিন করে বলে মিতা।

ভয় ভুলে দরজায় নক করে মিতা। কোনো উত্তর আসে না। আবারও নক করে মিতা। এবার ও কোনো উত্তর আসে না। তৃতীয়বার নক করেও কোনো উত্তর না পেয়ে চলে যেতে নেয় মিতা।

–কাম ইন।
ভেতর থেকে উত্তর আসে।

অরিয়নের কথা শুনে আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে মিতা। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। পরণে শুধু ট্রাউজার। দেখে মনে হচ্ছে মাত্র গোসল করে এসেছে। তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে ব্যস্ত অরিয়ন মিতাকে এখনো খেয়াল করেনি। নিজের জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো মিতা। অপেক্ষা করছে অরিয়নের ঘুরে তাকানোর।

অরিয়ন ঘুরে তাকাতেই মিতাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। এতো রাতে কি করতে এসেছে বুঝতে পারছে না অরিয়ন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতার চুল খোপা করা, খোপার এক পাশে কলম গুজা। পরণে পাজামা স্যুট।

–কি হয়েছে? এতো রাতে এখানে কেনো এসেছিস?
আলমারি থেকে নিজের টি শার্ট বের করে পরতে পরতে বলে অরিয়ন।

–কাল উচ্চতর গণিত পরীক্ষা।
ধীরে ধীরে বলে মিতা।

–তো?? স্যার কিছু করিয়ে দেয় নি??
বিছানার উপর বসে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–করিয়েছিল কিন্তু কলেজের স্যার নতুন অধ্যায় দিয়েছে আমি পারিনা সেটা।
মাথা নিচু করে বলে মিতা।

–আরিয়ানের কাছে যা।
কথাটা বলে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে অরিয়ন।

–আরিয়ান ভাইয়া বাসায় আসেনি এখনো।
জবাব দেয় মিতা।

–তাহলে আসলে করিস, এখন যা। আমি হেল্প করতে পারবো না ।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় মিতার। “এতো আদর করতে কি শুধু আফরিন আপুর জন্যই? আপু নেই তাই কি আমার প্রতি আদর ও নেই??” মনে মনে ভাবে মিতা। অরিয়নের এরকম ব্যবহার কেনো যেন খুব কষ্ট দেয় মিতাকে। মন খারাপ করে বেড়িয়ে যেতে নেয় মিতা।

–পরী??
পেছন থেকে অরিয়নের কথা শুনেই মুখে হাসি ফুটে উঠে মিতার।

পরী, পরী বলে মিতাকে আর কেউ ডাকে না। অরিয়ন কেনো পরী ডাকে তাও মিতা জানেনা। শুধু জানে অরিয়নের মুখ থেকে প্রতিবার পরী ডাকটা শুনলেই মন ভালো হয়ে যায় মিতার।

–জি অনিয়ন ভাইয়া।
খুশি হয়ে বলে মিতা।

–যাবার সময় দরজা লক করে যাস।
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনতেই যেন মুখ থেকে হাসিটা নাই হয়ে গেলো মিতার। হয়তো অরিয়ন আবার আগের মতো হয়ে গেছে ভেবেছিলো মিতা।

“আচ্ছা প্রথম ভালোবাসা কি এমনই?? প্রথম ভালোবাসা কি মানুষকে সত্যিই পরিবর্তন করে দেয়?? প্রথম ভালোবাসা কি সত্যিই ভুলা যায় না? অরিয়ন ভাইয়া কি আর আগের মতো হবে না??” কথাগুলো ভাবতেই চোখের কোণে পানি চলে আসে মিতার। দরজা লক করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে মিতা।

অরিয়ন হারিয়েছে আফরিনকে।
আর মিতা??
মিতা হারিয়েছে তার আইডল আফরিনকে,
তার বেস্টফ্রেন্ড অনিয়ন ভাইয়াকে।

চলবে…..

#পারমিতা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে হাটতে বেড়িয়েছে অরিয়ন। খালি পায়ে ভোরের শিশির পা স্পর্শ করতেই যেন কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। চারপাশ এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি, কুয়াশায় ঝাপসা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে দূরের সব কিছু।

বাগানে হেটে প্রবেশ করতেই কারো উপস্থিতির টের পায় অরিয়ন। ফিসফিস করে কেউ কথা বলছে তবে কি বলছে তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন।

–আমাদের তাড়াতাড়ি সরে যেতে হবে এখান থেকে।

ঝাপসা ঝাপসা পরিচিত কণ্ঠে কথাগুলো শুনতে পায় অরিয়ন।

–কেউ দেখলে সমস্যা হবে। দেখার আগেই চলে যেতে হবে।
আবারও বলে উঠে পরিচিত সেই ব্যক্তি।

কোনদিক থেকে শব্দ আসছে শুনার জন্য দ্রুত হাটা শুরু করে অরিয়ন। বাগানের শেষ মাথাতে আসতেই দু জনের অবয়ব দেখতে পায় অরিয়ন।

–কে? কে ওখানে?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

অরিয়নের কথা শুনেই যেন দু জনে চমকে গেলো। ক্ষণিকের মধ্যেই কুয়াশা কেটে গিয়ে আশপাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে যেন পা থেকে মাটি সরে গেলো অরিয়নের।

–আফরিন?
অবিশ্বাসের সুরে বলে উঠে অরিয়ন।

সামনেই চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছে আফরিন। পাশেই চাদর দিয়ে মুখ ঢাকা একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে যে একজন পুরুষ তা বুঝতে সময় লাগেনি অরিয়নের।

–আফরিন?
খুশি হয়ে বলে উঠে অরিয়ন।

–ওখানে কি করছো? চলে আসো। তোমাকে ছাড়া কত কষ্ট হয়েছে আমার। কাম ব্যাক বেব।
নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।

–সবাই আশার আগেই আমাদের পালাতে হবে।
আফরিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের হাত ধরে বলে উঠে আফরিন।

আফরিনের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অরিয়ন। ক্ষণিকেই চেহারায় চিন্তার ছাপ পড়ে।

–আফরিন?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।

–আই এম সরি আফনান বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে আফরিন।

–আফরিন!
আফরিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।

–সো সরি, আই হেভ টু গো।
কথাটা বলেই ছেলেটির হাত ধরে হাটতে শুরু করে আফরিন।

অরিয়ন যেন নিজের জায়গায় থেকে নড়তে পারছে না। মাটি যেন নিজের মধ্যে তলিয়ে নিচ্ছে অরিয়নকে।

–আফরিন, প্লিজ প্লিজ প্লিজ বেব, প্লিজ কাম ব্যাক।
অরিয়নের শত ডাক যেন আফরিনের কানে পৌঁছালো না, নিজের মতো চলে যাচ্ছেই।

–আফরিননননননননননন।
আফরিনের নাম ধরে চিৎকার করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে অরিয়ন।

স্বপ্ন, এ কেমন স্বপ্ন দেখলো অরিয়ন? আফরিনের চলে যাওয়াটা কি যথেষ্ট নয়? প্রতিদিন একই স্বপ্ন যে পাগল করে দিচ্ছে অরিয়নকে। বিছানায় বসে থাকা অরিয়নের কপাল ভিজে গেছে ঘামে, হাত অনবরত কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পানি পান করেনা কয়েক বছর। পাশের টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢালতে নিতেই দেখতে পায় জগ খালি। পাশে রাখা ঘড়িতে এখন ৪:১০ বাজে।

জগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে অরিয়ন। সিড়ি বেয়ে নেমে সরাসরি চলে যায় রান্নাঘরের ফ্রিজের কাছে। বোতল থেকে পানি পান করে ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে জগটা ভরে নিয়ে আবারও নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করে।

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে যেতেই চোখ পড়ে মিতার রুমের দরজার দিকে। দরজাটা খোলা। আসার সময় খোলা ছিলো নাকি তা খেয়াল করেনি অরিয়ন। ঘুমের ঘোরে অতোদিকে নজর দেয়নি। এখন যখন ঘুম পুরোপুরি কেটেছে তখন এই রাতের বেলা দরজা খোলা দেখে একটু টেনশন হলো অরিয়নের।

রুমে উঁকি দিতেই ডিম লাইটের আলোতে দেখতে পায় বিছানায় গুটি মেরে শুয়ে আছে মিতা। পাশেই উচ্চতর গণিত বই, খাতা, ম্যাথ গাইড কলম সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ম্যাথ করার চেষ্টা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছে মিতা। “হয়তো কোনো এক ফাকে শায়লা এসে লাইট অফ করে দিয়েছিলো” ভাবে অরিয়ন। রুমে প্রবেশ করে লাইট অন করে মিতার দিকে এগিয়ে যায় অরিয়ন। শরীর থেকে কম্বলটা সরে গেছে। কোমরের এক পাশ থেকে জামাটা উঠে পেট বের হয়ে আছে মিতার।

পেটের দিকে নজর যেতেই চোখ সরিয়ে নেয় অরিয়ন। ধীরে ধীরে বিছানায় গিয়ে বসে। চোখ তুলে মিতার মুখের দিকে তাকায়। মিতা নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে। মিতার মুখের দিকে তাকাতেই যেন খারাপ লাগা কাজ করছে অরিয়নের মধ্যে। তখন ম্যাথটা না করে দেওয়াতে নিজেকে এখন একটা এ*হোল মনে হচ্ছে অরিয়নের। নিজের হাত দিয়ে পায়ের কাছ থেকে কম্বলটা টেনে নিয়ে শরীরে দিতে নিলেই আবারও চোখ যায় পেটের সেই খালি অংশে। সাদা ধবধবে গায়ের রঙের এক পাশে বড় একটা কালো তিল দেখতে পাচ্ছে অরিয়ন। সাদা কাপড়ে যেমন একফোঁটা কালো দাগ স্পষ্টভাবে দেখা যায় ঠিক তেমন লাগছে মিতার তিলটা।

কম্বল শরীরে দিয়ে মিতার দিকে আবারও তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতার মুখটা যেন আজ অন্য রকম লাগছে অরিয়নের কাছে। কেমন? তা অরিয়ন জানে না। শুধু জানে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে। কিছুক্ষণ আগেও যেই অস্থিরতা ছিলো সেই অস্থিরতাটা যেন কিছুটা হলেও কমে এসেছে।

–পরী।
মিতার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠে অরিয়ন।

*********************

মোবাইলে এলার্ম বাজতেই লাফিয়ে উঠে মিতা। এলার্ম অফ করতে মোবাইল হাতে নিতেই চোখ যায় সময়ের দিকে। ৭ টা।

–না না না। আমি ম্যাথ করবো কখন।
নিজে নিজে বলতে থাকে মিতা।

–৫ টার এলার্ম দিয়েছিলাম বাজলো না কেনো।
নিজে নিজে বলতে বলতেই বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা।

গতকাল ১২ টা পর্যন্ত আবরারের জন্য অপেক্ষা করলেও আবরার আসেনি। পরে জানতে পেরেছে একটা কনর্সাটে গিয়েছে আবরার তাই আসতে পারবে না। অপেক্ষা করছিলো সকালে উঠে এরপর ম্যাথ করে আসবে। এখন এলার্ম না বাজার কারণে তাও হলো না।

তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়ে টেবিলের কাছে যেতেই অবাক হয় মিতা। গতকাল রাতে বই খাতা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিতা কিন্তু খাতা বই সব কিছু এখন সুন্দর করে টেবিলের উপর রাখা। খাতার মাঝখানে কলম রাখা। তাড়াতাড়ি করে খাতা খুলতেই অবাক হয়ে যায় মিতা। পুরো খাতা জুড়ে ম্যাথ করা। কীভাবে কী হবে, কোনটার পর কী করবে সব কিছু শর্ট নোট করে দিয়েছে। মিতার মতো মেধাবী ছাত্রীর জন্য এর থেকে বেশি আর কিছুই লাগবে না।

–অরিয়ন ভাইয়া।
বলে উঠে মিতা।

হাতের লেখা, এই হাতের লেখা খুব চেনা মিতার। আফরিনের সাথে বসে অনেক চিঠি পড়েছে মিতা যা অরিয়ন নিজের হাতে লিখেছিলো। আর মাঝে মধ্যে মিতাকেও এটা সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার কারণে অরিয়নের হাতের লেখা চিনে মিতা। সব কিছু অরিয়ন করে দিয়েছে কথাটা ভাবতেই নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে মিতার মুখে।

*********************

আজ নাস্তার টেবিলে অরিয়নের সাথে দেখা হয়নি মিতার। অরিয়ন আরও সকালেই চলে গেছে অফিসে। হাবিব চৌধুরী ও একটু আগেই চলে গিয়েছে নাস্তা করেই। টেবিলে একা বসেই নাস্তা করছে মিতা।

–আরিয়ান ভাইয়া বাসায় এসেছে কখন??
শায়লাকে জিজ্ঞেস করে মিতা।

–আবরাত স্যার তো প্রায় ৪ টা করে এসেছিলো।
মিতার প্লেটে ডিম অম্লেট দিতে দিতে বলে শায়লা।

–শায়লা আমার গ্রিন টি।
পেছন থেকে আনিকা চৌধুরী কথাটা বলেই টেবিলে বসে।

–গুড মর্নিং আন্টি।
আনিকা চৌধুরীকে দেখে বলে মিতা।

মিতাকে দেখেও না দেখার মতো করে রইল আনিকা চৌধুরী। মিতা আর কিছু না বলে নিজের নাস্তা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

–তুই এখানে আর কতদিন থাকবি??
হুট করে বলে আনিকা চৌধুরী।

–সেটা তো আমি বলতে পারছি না।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।

–না পারার কি আছে? এখানে ভালো লাগে না থাকতে সেটা বললেই তোকে নিয়ে যাবে মায়া আর ওয়াহিদ।
বলে আনিকা চৌধুরী।

–আমি তো বলেছিলাম কিন্তু..

–ন্যাকামো বাদ দে। মায়া আর ওয়াহিদের ভালো ব্যবহারের সুযোগ নিস না। তাদের মেয়ের সংসারে তুই বিয়ে করে এসে বসেছিস সেটা কি ভালো লাগবে তাদের? আর আফরিন? আফরিনের কথা ভুলে গেলি তুই? আফরিন ফিরে এসে যদি জানতে পারে তুই অরিয়নকে বিয়ে করেছিস তাহলে কি হবে একবার ভেবেছিস??
রাগ হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।

আনিকা চৌধুরীর কথাগুলো শুনে মিতার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। “অরিয়ন ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা কি আমার দোষ? আমি তো বিয়ে করতে চাইনি” কথাগুলো মুখে মুখে থাকলেও বেয়াদবি করতে চায়নি বলেই চুপ করে থাকে মিতা।

–শুধু ন্যাকা কান্না।
মিতার চোখের পানি দেখে কথাটা বলেই গ্রিন টি নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে যায় আনিকা চৌধুরী।

–মন খারাপ করিস না।
মিতাকে বলে শায়লা।

–হুম।
জবাব দেয় মিতা।

***************

পুডিং হাতে অরিয়নের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। অরিয়নের করে দেওয়া নোটের কারণে আজ মিতার উচ্চতর গণিত পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। তাই খুশি হয়ে সবার জন্য পুডিং করেছে মিতা।

অরিয়ন আজ অফিস থেকে সন্ধ্যার পর চলে এসেছে। তাই ধন্যবাদ জানানোর জন্য মিতাই পুডিং নিয়ে এসেছে। দরজায় নক করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় অরিয়ন।

চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে অরিয়ন। টেবিলের এক কর্ণারে টবে তাজা কতগুলো গোলাপ রাখা। পুডিং হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মিতার নজরে ফুলগুলো আসতেই যেন মুখ থেকে মৃদু হাসিটা বিলিন হয়ে গেলো।

–কি হয়েছে?
মিতাকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

–তোমার জন্য পুডিং নিয়ে এসেছিলাম।
জবাব দেয় মিতা।

–ভুলে গেছিস? আমি পুডিং খাই না পরী।
কথাটা বলেই আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দেয় অরিয়ন।

মিতা অরিয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা পুডিং এর প্লেটটা এগিয়ে দেয় অরিয়নের দিকে।
পুডিং দেখে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।

–বললাম তো আমি খাই না। নিয়ে যা।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–তুমি খাও না কারণ আফরিন আপুর পছন্দ না কিন্তু তোমার খুব পছন্দ তা আমি জানি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অরিয়ন। অরিয়ন পুডিং খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় ৫ বছর ধরে শুধুমাত্র আফরিনের পছন্দ না তাই। আফরিনের নাম শুনতেই দেয়ালে লাগানো আফরিনের ছবিটার দিকে তাকায় অরিয়ন। ছোটবেলা থেকেই মিতা লক্ষ্য করেছে পুডিং দিলে অরিয়ন খুব মজা করে সেটা খেত। এরপর একদিন হঠাৎ করেই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথমে কারণ বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকি বুঝতে পেরেছে যখন দেখলো আফরিনের পছন্দের সব কিছু নিজের পছন্দ আর অপছন্দগুলো নিজের অপছন্দ করে নিয়েছে অরিয়ন।

–তুই খেয়াল করেছিলি??
মৃদু এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।

অরিয়নের হাসি দেখে যেন আশপাশের সব থেমে গেলো মিতার। ঠোঁটে হাসি ফুটতেই তা ফুটে উঠেছে চোখে। অরিয়নের চুলগুলো চোখের মাঝ বরাবর এসে পরেছে। হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে অরিয়ন সুন্দর। এক সুদর্শন পুরুষ।

–তোমার কোনো কিছুই আমার নজরের বাইরে যায় না।
এক দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।

মিতার কথা শুনে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মুখ থেকে হাসিটা বিলিন হয়ে গিয়েছে। এক অজানা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিতার দিকে।
দরজায় কড়া নাড়া শুনে ঘোর কাটে অরিয়ন ও মিতার।

–কাম ইন।
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।

–অরিয়ন স্যার, ডিনার করতে ম্যাম ডাকছে।
ভিতরে ডুকে বলে শায়লা।

–আর পরী তু..

–কি বললে শায়লা?
শায়লার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে অরিয়ন।

–ডিনার করতে ডাকছে।

–না, এরপর।

–মিতাকেও ডাকছে।

–হুম। মা কে বলো আসছি আমি।
বলে অরিয়ন।

–জি স্যার।
বলে শায়লা।

মিতা নিজের জায়গায় চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইল। অরিয়নের কথার মধ্যে কেউ কথা বলাটা একদম পছন্দ করে না অরিয়ন। তাই চুপ করেই রইল মিতা।

–শায়লা…

শায়লা চলে যেতে নিলেই ডাক দেয় অরিয়ন। অরিয়নের ডাক শুনে ফিরে তাকায় শায়লা।

–জি স্যার!

–পরীকে আমি ছাড়া আর কেউ পরী ডাকে না। কেউ না। নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবে।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।

–জি স্যার।
ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় শায়লা।

অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা। অরিয়নের এরুপ কথা শুনে কেনো যেন মনের মধ্যে এক অজানা আনন্দ অনুভব করছে মিতা। অরিয়ন আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিতেই মিতা আর অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

**************

–তোমার জন্য আমি কাল রাতে ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।
ভ্রু কুচকে আবরারকে বলে মিতা।

–আরে কাল ই আমাকে তোর প্রয়োজন হবে তা কি আমি জানতাম? কনসার্টটা সেই হয়েছে মিতা।
দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে আবরার।

–রাখো তোমার কনসার্ট। অরিয়ন ভাইয়া না থাকলে আজ আমি এক্সামে লাড্ডু মারতাম।
আবরারের হাতে চিমটি কেটে বলে মিতা।

–আউচ…
ব্যাথা পাবার অভিনয় করে শব্দ করে উঠে আবরার।

ডিনার টেবিলে মিতা আর আবরার মিলে সবার জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরেই একে একে সবাই চলে আসে। সবাই আসতেই শায়লা ও অন্যান্য কাজের লোক খাবার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়এ। আবরারের অপজিটে বসেছে অরিয়ন ও আনিকা চৌধুরী। মাঝখানের চেয়ারে হাবিব চৌধুরী বসা।

–ধন্যবাদ ভাইয়া।
হঠাৎ করে বলে উঠে আবরার।

–কি জন্য??
ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে বলে অরিয়ন।

–মিতাকে কাল গণিতে হেল্প করার জন্য, তা না হলে আজ নিশ্চিত ও ফেল করতো।
কথাটা বলেই হেসে দেয় আবরার।

–তুমি তো..
কথাটা বলেই আবরারের বাহুতে এক চড় বসায় মিতা।

টেবিলে বসে সব কিছু দেখে হাসি ফুটে উঠে হাবিব চৌধুরীর মুখে। অন্যদিকে আনিকা চৌধুরী বিরক্তবোধ করছেন।

–ধন্যবাদ অরিয়ন ভাইয়া, তুমি না থাকলে আমি নি..

–মিতা!!
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।

–জি চাচ্চু।
হাবিব চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলে মিতা।

–অরিয়ন এখন আর তোমার কাজিন নয়, তোমার স্বামী। তাই ভাইয়া বলা বন্ধ করো। শুনতে বাজে লাগে।
অনায়াসে কথাটা বলে ফেলে হাবিব চৌধুরী।

হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে খাবার খাওয়া বন্ধ করে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতাও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কিছুক্ষণ হাবিব চৌধুরী ও কিছুক্ষণ অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। হাবিব চৌধুরীর কথাটা বলতেই আবরারের হাতে থাকা চামচটা শক্ত করে ধরে আবরার।

অরিয়ন কোনো কথা না বলেই ধাক্কা দিয়ে প্লেট সরিয়ে দিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে যায়। হঠাৎ করে অরিয়ন এমন করাতে লাফিয়ে উঠে মিতা। পাশে থাকা আবরার মিতার কাধে হাত দিয়ে নর্মাল করার চেষ্টা করে।

মিতার যখনি মনে হয় অরিয়ন একটু স্বাভাবিক হচ্ছে তখনি কিছু না কিছু অরিয়নকে আবার সেই নিজের জায়গায় টেনে নিয়ে আসে।

চলবে….