#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
অক্ষরের জ্ঞান ফেরার পর সে মধুজাকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পায়। মধুজা অক্ষরের দিকে তাকিয়ে ছিল। অক্ষর গতকাল রাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করে। যতদূর তার মনে পড়ে কেউ তার সামনে এসে কোনকিছু স্প্রে করে। তারপর কিছুই আর অক্ষরের মনে নেই।
অক্ষর তাই মধুজাকে প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা গতকাল রাতে কি হয়েছিলে? তুমি কি তাকে ধরতে পেরেছ যে আমার ক্ষতি করতে চায়?’
মধুজা না জানার ভান করে বলে,
‘আমি তো কাউকেই দেখতে পাইনি। আমি গিয়ে দেখতে পাই আপনি ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। তারপর বর্ণর সাহায্যে আপনাকে রুমে নিয়ে আসি।’
বর্ণর কথা শুনে অক্ষরের সন্দেহ হয়৷ তার মনে পড়ে যায় বর্ণর গাতে গতকাল লাল, লাল কিছু দেখতে পেয়েছিল।
‘আচ্ছা বর্ণকে কোথায় পেলে তুমি?’
‘ও তো বাগানের দিকে ছিল।’
‘ও। আচ্ছা এখন তো মনে হয় অনেক বেলা হয়ে গেছে। আমাকে হসপিটালে যেতে হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।’
মধুজা অক্ষরের কথার কোন উত্তর না দিয়ে গম্ভীরমুখ করে বসে থাকে। অক্ষর বুঝতে পারে না মধুজা হঠাৎ করে এত চুপ হয়ে গেল কেন। চুপ থাকার মেয়ে তো মধুজা নয়।
অক্ষর মধুজাকে আর ঘাটায় না। নিজের মতো রেডি হয়ে হাসপাতালে চলে যায়। অক্ষর চলে যেতেই মধুজা নিজের ফোন থেকে কাউকে একটা কল করে। কল রিসিভ করামাত্রই মধুজা বলে,
‘তোমাকে যেই নিউজটা পাঠিয়েছিলাম সেটা ছাপিয়েছ তো?’
বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে,
‘জ্বি, ম্যাডাম। আপনি যেই নিউজটা দিয়েছিলেন সেটা পত্রিকার একেবারে মূল পাতায় ছাপানো হয়েছে। কিন্তু আমার ভয় করছে। এত ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এরকম নিউজের ফল ভালো হবে না।’
‘সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মনে রেখো আমরা সাংবাদিক। আমাদের সাহসী হতে হবে। দেশ ও জাতির কাছে এই ধরনের নিউজ তুলে ধরাই আমাদের দায়িত্ব। বাকিটা আমি সামলে নেব।’
কথা বলা শেষ করে ফোনটা রেখে দেয় মধুজা। একটু পরেই কেউ একজন এসে মধুজার দরজায় নক করে। অনুমতি চায় ভেতরে আসার। মধুজা তাকে ভেতরে আসতে বলে। সে ভেতরে আসার পর মধুজা তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
‘নিউজটা ছাপানো হয়েছে। এবার সব সত্যি সবার সামনে আসবে। অন্যায়কারীদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
সে মধুজাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়। মধুজা ঘরে টাঙানো অক্ষরের একটি ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আপনার ভালো মানুষির পেছনে যে এরকম একটা কদর্য রূপ লুকিয়ে ছিল আমি জানতাম না পাগলা ডাক্তার,, সরি আপনি হলেন একটা শয়তান ডাক্তার। আপনাকে আপনার অপকর্মের শাস্তি পেতেই হবে।’
কথাটা বলে মৃদু হাসে মধুজা। তারপর আবার বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। এখন যে তার বিশ্রামের খুব প্রয়োজন। সামনে অনেক বড় লড়াই আছে তার।
২৯.
অক্ষর হাসপাতালে পৌছে কয়েকটা রোগীর চেকআপ করে। নিজের কেবিনে আসামাত্রই ডাক্তার কেয়া এসে তাকে বলে,
‘রুহুল স্যার আপনাকে তার কেবিনে ডাকছে।’
‘আচ্ছা চলুন।’
অক্ষর যাওয়ার সময় ডাক্তার কেয়ার হাতের দিকে আবার তাকায়। তার হাতে র্যাশগুলো অনেকটাই গায়েব হয়ে গেছে। তবে অক্ষরের চোখ আটকে যায় কেয়ার হাতের একটি আংটিতে। এইরকম আংটি সে কোথায় যেন দেখেছে। সেটা ভালো ভাবে মনে করতে পারছিল না। এই প্রসঙ্গে তার মনে পড়ে যায় গতকাল রাতে যে তার মুখে স্প্রে করেছিল তার হাতেও আংটি দেখেছিল। কেয়ার প্রতি অক্ষরের সন্দেহ প্রবল হয়। কিন্তু কোন প্রমাণ ছাড়া কিছু বলতেও পারছিল না সে।
ডাক্তার রুহুল আমিনের কেবিনের সামনে এসে ডক্টর কেয়া বলে,
‘স্যার ডক্টর অক্ষর চৌধুরী এসে গেছেন।’
রুহুল আমিন অক্ষরকে দেখে বলে,
‘তুমি ভিতরে আসো। আর কেয়া তুমি এখন আসতে পারো।’
ডাক্তার কেয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। অক্ষর ভেতরে এসে বলে,
‘কিছু বলবেন স্যার?’
‘হ্যা, তার আগে তুমি বসো।’
অক্ষর চেয়ারে বসে পড়ে। রুহুল আমিন একটি নিউজ পেপার বের করে অক্ষরের দিকে বাড়িয়ে বলে,
‘দেখো কিসব নিউজ বেড়িয়েছে আমাদের হসপিটালের বিরুদ্ধে। এখানে নাকি রোগীদের কিডনি,লিভার এগুলো বের করে নিয়ে পাচার করা হয়। আর এসবের মূলে নাকি রয়েছ তুমি। দুই বছর আগের একটি ঘটনা উদ্বৃত্ত করে এই নিউজ করা হয়েছে। সুমি নামের একটি মেয়ে যে নাকি তোমার তত্ত্বাবধানে ছিল তার চিকিৎসার নাম করে নাকি তুমি লিভার বের করে নিয়েছিলে।’
‘এসব তো ভুল নিউজ স্যার। আমাদের উচিৎ এখুনি স্টেপ নেওয়া। বাট এই নিউজ করল টা কে?’
‘একজন নতুন সাংবাদিক। নাম কি যেন দেখো দেওয়া আছে। মনিরা তাবাসসুম না কি যেন।’
অক্ষরের কাছে মনিরা তাবাসসুম নামটা শোনা শোনা লাগে। কোথায় যেন শুনেছিল সে। তবে এখন মনে পড়ছে না।
ডাক্তার কেয়া কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে তাদের সব কথোপকথন শুনে ফেলে। তারপর কাউকে একটা ফোন করে কথা বলে। একজন নার্সকে ছুটে আসতে দেখে কেবিনের সামনে থেকে সরে যায় ডাক্তার কেয়া। নার্সটি দৌড়ে দৌড়ে ডাক্তার রুহুল আমিনের কেবিনের সামনে এসে বলে,
‘স্যার হাসপাতালে প্রেসের লোকজন চলে এসেছে। তারা ডাক্তার অক্ষর চৌধুরীর সাথে কথা বলতে চায়।’
‘ওহ গড, যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই সত্যি হলো। অক্ষর তুমি এখন ওদের সামনে যেও না। আমি দেখছি বিষয়টা কিভাবে সামলানো যায়।’
‘ওকে স্যার।’
৩০.
অক্ষর সাবধানের সাথে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছে। রুহুল আমিনের নির্দেশেই একপ্রকার গোপনে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছে সে।এখন গন্তব্য তার বাড়ির দিকে। বাড়ি পৌছেই মমতা চৌধুরীর মুখোমুখি হয় সে। মমতা চৌধুরী সকালে খবরের পেপার পড়েছেন। তাই খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। অক্ষরকে দেখামাত্র তিনি বলেন,
‘তুই ঠিক আছিস তো। নিউজ পেপার পড়ার পর থেকেই আমার টেনশন হচ্ছিল। একটু আগে দেখলে টিভিতেও নিউজ দেখাচ্ছে এসব নিয়ে। কে তোকে এভাবে ফাসাচ্ছে বল তো?’
‘মনিরা তাবাসসুম নামে কেউ একজন। তুমি এটা নিয়ে কোন টেনশন করিও না আম্মু। আমি সবকিছু সামলে নিবো।’
অক্ষর আর কিছু বলে না। নিজের রুমে চলে যায়। মধুজা রুমে শুয়ে ছিল। অক্ষরকে দেখে উঠে দাড়ায়। জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি আজ হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে?’
অক্ষর মধুজাকে হাসপাতালে কি কি হয়েছে সব বলে। মধুজা সবকিছু মনযোগ দিয়ে শোনে। অক্ষর আচমকা মধুজার কাছে চলে আসে। তাকে প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা তুমি কি মনিরা তাবাসসুম নামে কাউকে চিনো? ‘
মধুজা প্রথমদিকে একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘কই নাতো।’
‘না মানে এই সাংবাদিকও তো প্রথম আলো পত্রিকার তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
‘আমি তো কাজে নতুন জয়েন করেছি। সবার নামও তো জানি না।’
‘সেটা ঠিক। হোয়াট এভার, আমি নিচে যাচ্ছি লাঞ্চ করতে। তোমাকে আর নিচে আসতে হবে না। আম্মুকে বলছি রাওনাফকে দিয়ে তোমার খাবার উপরে পাঠিয়ে দিবে।’
‘আচ্ছা।’
অক্ষর ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় লাঞ্চ করতে। অক্ষরের সাথে সাথে অনীল চৌধুরীও খেতে বসে। অক্ষরের নামে যেসব খবর বেরিয়েছে সেসব নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে। অনীল চৌধুরীর তাই খুব ভয় হচ্ছে নিজের ছেলেকে নিয়ে। খেতে বসে তিনি অক্ষরকে বলেন,
‘তুই একটু সবদিকে খেয়াল রাখিস অক্ষর। আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমি জানি তুই এরকম কোন কাজ করতে পারিস না। কেউ হয়তো তোকে ফাসাতে চাইছে।’
‘তুমি টেনশন করো না আব্বু। আমি সব ষড়যন্ত্রকারীদের সামনে আনব।’
একটু পর বর্ণ বাইরে থেকে আসে। মমতা চৌধুরী তাকে দেখে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসতে বলে। বর্ণ তার কথা মতো ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে। খাওয়া শেষ করে অক্ষর বর্ণকে বলে,
‘তুই সবার থেকে কি লুকাতে চাইছিস বর্ণ?’
বর্ণ নিজের হাতটা গুটিয়ে নেয়। অক্ষর মৃদু হেসে বলে,
‘আর লুকানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি অলরেডি জেনে গেছি সবকিছু। তোর হাতের এই দাগই তার প্রমাণ।’
সবাই বর্ণের হাতের দিকে তাকায়। বর্ণ নিজের সত্য ধরা পড়ার ভয়ে চুপসে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨