পারলে ঠেকাও পর্ব-১৮

0
308

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা ও সিরাজ একটু সামনে গিয়ে একজন নার্সের সাথে কথা বলছিল। মধুজা বলছিল,
‘সবকিছু তো স্বাভাবিক মনে হলো। যদি এখানে অরগান ট্রাফিকিং করা হতো তাহলে তো ভুল রেজাল্ট দিত।’

নার্সটি বলে,
‘আমার মনে হয় ওরা শুধু দরিদ্র ও অসহায় মেয়েদের টার্গেট করে।’

সিরাজ বলে,
‘হ্যা ঠিক বলেছ। এরপর আমরা একবার গরীবের গেটআপ নিয়ে আসব। তাহলে সব বোঝা যাবে।’

সিরাজ ও মধুজা চলে যায়। অক্ষর দূর দাড়িয়ে সবকিছু দেখছিল। তাদের কথোপকথন শুনতে না পারলেও নার্সটিকে সন্দেহ হয় অক্ষরের। কারণ নার্সটিকে সে হাসপাতালে আগে কখনো দেখেনি। সন্দেহ থেকে নার্সটির পিছু নেয় অক্ষর। সে হাসপাতালের একটি কেবিনে যায়। নার্সের পোশাক বদলে বাইরে চলে আসে। তাকে দেখে হতবাক হয়ে যায় অক্ষর। কারণ নার্সটি হলো তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে রাওনাফ। অক্ষর ভাবছিল,
‘রাওনাফ কেন ছদ্মবেশ নিয়ে এখানে এসেছে? কি চাইছে ও? তাহলে কি মধুজার সাথে মিলে রাওনাফ আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এতে কি লাভ ওর?’

এসব ভাবার সময় অক্ষরের নজর যায় রাওনাফের হাতের দিকে। তার হাতে র‍্যাশ উঠেছে। অক্ষরের কাছে এবার আস্তে আস্তে সবকিছু পরিস্কার হতে থাকে।
‘এজন্যই তাহলে রাওনাফ এতদিন আমার সামনে আসেনি। অনেক বুদ্ধিমতী মেয়েটা। তাহলে আমার আসল শত্রু ও যে আমার পিছু নিত, এমনকি আমাকে মা’রার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এসব করে ওর লাভ কি? আমাকে সবকিছু জানতে হবে।’

রাওনাফ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে যায়। বাইরে বেরিয়ে এসে একটি কম্পিউটারে কিছু দেখার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
‘এটা কি হচ্ছে? আমি তো ডাক্তার অক্ষর চৌধুরীর কেবিনে হিডেন ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলাম। তাহলে সেটা এখন কাজ করছে না কেন? উফ কত কষ্ট করে ছদ্মবেশ নিয়ে ওনার কেবিনে ঢুকে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়ে আসলাম। এখন কি হবে? আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না ঐ ডাক্তার কেয়া না কি যেন ও আজ কেন ডাক্তার অক্ষরের সাথে লেগে ছিল সবসময়। তাহলে কি ডাক্তার কেয়াও অক্ষর চৌধুরীর সাথে মিলে রয়েছে? আমাকে সবটা জানতে হবে।’

রাওনাফ বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ডাক্তার কেয়া হাসপাতালের ছাদে দাড়িয়ে রাওনাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তুমি নিজেকে খুব চালাক ভেবেছ? তোমার সব গতিবিধির উপর আমার নজর রয়েছে। কিন্তু ঐ দুজন কে ছিল যে এই মেয়েটার সাথে ছিল? আমাকে সবকিছু খুজে বের করতে হবে। আপাতত এই হিডেন ক্যামেরার একটা ব্যবস্থা করি।’

বলেই ক্যামেরাটা দূরে ছু’ড়ে মা’রে।

৩৫.
মধুজা বাড়িতে ফিরে শুয়ে ছিল। তার মনে পড়ে যায় রাওনাফের সাথে সেদিন রাতে দেখে হওয়ার ঘটনাটা।

সেদিন রাতে যখন রাওনাফ অক্ষরের পে’টে ছু’রি ঢোকাতে চেয়েছিল তখন মধুজা তাকে ধরে ফেলে। রাওনাফকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল মধুজা। প্রশ্ন করেছিল,
‘তুমি কেন ওনার ক্ষতি করতে চাইছ?’

তখন রাওনাফ কাদতে কাদতে বলেছিল,
‘কারণ উনি আমার বোনের খু’নি। আমার বোন সুমিকে মে’রে ফেলেছেন উনি।’

মধুজা কিছু বুঝতে পারছিল না। তখন রাওনাফ তাকে নিজের বোন সুমির সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে। যে কিভাবে হার্টের সমস্যার কথা বলে তার লিভার বের করে নেওয়া হয়েছিল। সাথে এও বলেছিল,
‘আইনের কাছে বিচার না পেয়ে আমি সুযোগ বুঝে কাজের লোকের পরিচয়ে এই বাড়িতে ঢুকি। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করি। যাতে নিজের হাতে অক্ষর চৌধুরীকে শে’ষ করে নিজের বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারি। আজ সেই সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু,, ‘

তখন মধুজা বলে,
‘এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিওনা। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার বোনকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে আমি তোমাকে সাহায্য করব। কিন্তু তার তোমাকে আমাকে প্রমাণ দিতে হবে যে অক্ষর চৌধুরী তোমার বোনের সাথে যা হয়েছে তার জন্য দায়ী।’

রাওনাফ নিজের রুম থেকে কিছু কাগজপত্র এনে মধুজার হাতে দেয়। যেখানে সুমির রিপোর্ট কার্ড ছিল৷ সেসব দেখেই মধুজা বুঝতে পারে যে রাওনাফ সত্যি বলছে।

এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘ শ্বাস নেয় মধুজা। এখন তার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক অক্ষরের বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ সংগ্রহ করা। কাল সিরাজের সাথে আবার হাসপাতালে যেতে হবে মধুজাকে।

আচমকা অক্ষর রুমে প্রবেশ করে। সাথে করে রাওনাফকে নিয়ে এসেছে সে। অক্ষরকে রাওনাফের সাথে দেখে চমকে যায় মধুজা। তার মনে ভয় জাগে তাহলে কি অক্ষর সব জেনে গেল।

মধুজা কিছু বলতে যাবে তখনই অক্ষর বলে,
‘আমি তোমাদের ব্যাপারে সব জেনে গেছি। তুমি কেন আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছ সেটাও আমি জেনে গেছি। রাওনাফ আমায় সব বলেছে। কিন্তু আমি কোন অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত নই। এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে।’

রাওনাফ অক্ষরের দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘আমরা কিভাবে আপনাকে বিশ্বাস করব? আপনি তো আমার আপুর অপারেশন করেছিলেন। তাহলে আপনার প্রতি সন্দেহ আসাটা কি স্বাভাবিক নয়?’

‘এটা ঠিক যে অপারেশন আমি করেছিলাম, অপারেশন করে আমি দেখেছিলাম যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সেইসময় আমি রিপোর্ট ভালোভাবে চেক করি। দেখি যে রিপোর্টে ভুল আছে। এই জন্য সেদিন আমি মাঝখানে বন্ধ করি এবং আবার তার কা’টা স্থান সেলাই করে দিয়েছিলাম। এই নিয়ে হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলেছিলাম তারা এটাকে ভুল বলে রোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছিল। তাই আমি আর এই নিয়ে কথা বাড়াই নি। এরপর কি হয়েছিল সেটা সম্পর্কে আমি কিছু জানিও না।’

৩৬.
অক্ষরের বয়ান শুনে মধুজা ও রাওনাফ একে অপরের দিকে তাকায়। মধুজারও এবার মনে হয় অক্ষর হয়তো সত্য বলছে কিন্তু রাওনাফ অক্ষরকে বিশ্বাস করতে পারে না।

‘আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করি না ডাক্তার অক্ষর।’

‘তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও রাওনাফ৷ আমি আসল অপরাধীকে করে আনব।’

মধুজাও অক্ষরের সাথে সহমত জানিয়ে বলে,
‘হ্যা ওনাকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিৎ। কাল আমি আর সিরাজ দরিদ্র ও অসহায় রোগী সেজে আপনার কাছে চিকিৎসা করতে যাব। আপনি একটা কাজ করবেন আমাদের চেকআপ করতে বলবেন। তারপর আমরা দেখব কি রিপোর্ট আসে। যদি রিপোর্টে আসে আমার সমস্যা আসে তাহলে আমরা অপারেশন পর্যন্ত ওয়েট করব। তারপর অপারেশন কেবিনে গিয়ে সব প্রমাণ সংগ্রহ করব।’

অক্ষর মধুজাকে মানা করে বলে,
‘এটা একটু বেশি ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে হানি। আমি তোমাকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে পারব না।’

‘আপনি বোঝার চেষ্টা করুন পাগলা ডাক্তার এছাড়া আমাদের কাছে আর কোন উপায় নেই।’

‘আজ কতদিন পর তুমি আমায় পাগলা ডাক্তার বললা।’

মধুজা খানিকটা লজ্জা পায়। কথা ঘোরানোর জন্য বলে,
‘আচ্ছা তো, কাল কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আচ্ছা রাওনাফ তোমার কি হাসপাতালে কারো আচরণে কোন সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে?’

‘হ্যা ডাক্তার কেয়া নামে একজনের আচরণ আমি লক্ষ্য করেছি। উনি বেশ রহস্যময়ী।’

অক্ষরও বলে,
‘সেইদিনের ঐ ঘটনার পর কোন গরীব বা দরিদ্র কোন রোগীর দায়িত্ব আমাকে আর দেওয়া হয়না। সবার অপা’রেশন ডাক্তার কেয়াই করে।’

মধুজার সন্দেহ হয় ডাক্তার কেয়ার উপর।
‘তারমানে ডাক্তার কেয়ার হাত থাকতে পারে এসবের পেছনে। তবে আমার মনে হয় সে একা এতকিছু করতে পারবে না। হাসপাতালে অন্য কেউ আছে যে কেয়াকে সাহায্য করছে। আর সে ক্ষমতাশালী কেউ। যার মদতে এসব হচ্ছে। আমার মনে হয় ডাক্তার কেয়া এখানে দাবার গুটি মাত্র। তার পেছনে অন্য কারো হাত আছে এবং আমাদের কাজ হচ্ছে তাকে খুজে বের করা।’

অক্ষর, রাওনাফ ও মধুজা একসাথে হাত মেলায়। এখন তাদের লক্ষ্য এসবের পেছনে আসল দোষীকে সবার সামনে আনা।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨