#পাষাণী_তুই
#পর্ব_২০
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
নতুন সকালের সূচনা হয়। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মেঘ ইনায়া। মর্ম ঘুম থেকে উঠে মাঝখানে বসে আছে। একবার ইনায়ার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার মেঘের দিকে। ছোট্ট মর্ম কি করবে বুঝতে না পেরে আচমকা চিল্লিয়ে কেঁদে ওঠে। সহসা এমন হওয়ায় ধড়ফড়িয়ে ওঠে মেঘ ইনায়া। ইনায়া কিছু বলার আগেই মেঘ মর্ম কে নিজের কাছে নিয়ে বলল,
“- কি হয়েছে মা? কাদছো কেন? কোথায় ব্যথা পেয়েছো পাপা কে বলো?
মেঘের কথা’য় যেন আহ্লাদে আধখানা হয়ে যায় মর্ম। মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদে। ইনায়া ফ্যালফ্যাল করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনায়া হাত বাড়িয়ে মর্ম কে কাছে ডাকে। মর্ম মাথা ঝাকিয়ে না বলে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মর্ম ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“- আমি পাপা’র কাছে থাকবো! পাপা’র আদর খাবো।
মর্মের কথায় ইনায়া আকাশ থেকে পড়লো। ইনায়া অবাক হয়ে বলল,
“- বাহ্! আমাকেই ভুলে গেলি মর্ম! আমি তোর মাম্মাম মর্ম! আমার কাছে আসবি না।
মেঘ মিটিমিটি হাসছে! মর্ম মেঘের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ইনায়া কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে সোজা রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইনায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘ হাসছে। মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে মর্মও হাসছে। মেঘ মর্ম র গাল টেনে দিয়ে বলল,
“- মাম্মাম কিন্তু খুব রেগে গেছে মা।
মর্ম খিলখিল করে হেসে দেয়। মেঘ মর্ম কে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মর্ম কে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। তারপর রুমে রেখে মেঘ ফ্রেশ হতে যায়। মর্ম গুড গার্ল হয়ে বসে আছে।
মেঘ একটু পরে ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে মর্ম কে নিয়ে রুম থেকে বের হয়। সর্বপ্রথম ইনায়ার রুমে যায়। ইনায়া সবে ফ্রেশ হয়ে এসে ডেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথা চিরুনি করবে। তখনই রুমে আসে মেঘ মর্ম। মর্ম বলল,
“- মাম্মাম আমার চুল বেঁধে দাও।
ইনায়া মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
“- আমার কাছে কেন আসছিস! যা না পাপা’র কাছে যা! পাপা চুল বেঁধে দিবে।
ইনায়া র কথা’য় মর্ম ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। অতি আবেগী হলে যা হয় আরকি। মর্ম কেঁদে দেয়। সহসা এমন হওয়ায় চমকে ওঠে দু’জনেই। ইনায়া চিরুনি ফেলে মর্ম কে নিজের কোলে নেয়। ইনায়া সান্ত্বনার সুরে বলল,
“- কাঁদে না মা। মাম্মাম তো তোমাকে মজা করে বলেছে। মাম্মামের কথা’য় কাদতে হয় মা।
মর্ম ফুপিয়ে বলল,
“- আমি পাপা’র কাছে যাবো তুমি পঁচা!
ইনায়ার মেজাজ সত্যি এবার খুব খারাপ হয়ে যায়। যাকে সে এত গুলো বছর নিজের মতো করে মানুষ করল আজ সেই কি না তাকে ছাড়া আরেক জন কে তার থেকে বেশি প্রায়োটি দিচ্ছে।
মেঘ ফট করে হেসে ফেলে। ইনায়া রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। মেঘ হাসি থামিয়ে চুপসে যায়। মেঘ ইনায়ার কাছে এগিয়ে আসল। তারপর আস্তে করে বলে,
“- দেখলি মর্ম ‘র একটা বাবার প্রয়োজন ছিল ইনায়া । এতদিন যা তুই ওকে দিতে পারিস নি আজ বাবা হিসেবে আমি ওকে সেই জিনিস গুলো দেবো। মা মা’ই হয় আর বাবা বাবা-ই হয়। কেউ কারোর জায়গা কোনো দিন ও নিতে পারে না। দিনশেষে একটা বাচ্চার বাবা’র প্রয়োজন হবেই। এটায় হয়ে আসছে ইনায়া। বাবা-র মতো কেউ হয় না আর মায়ের মতো ও কেউ হয় না। দু’জন মানুষই দরকার পরে একটা মেয়ের।
ইনায়া শুনল। কিছু বলল না। মেঘ ভুল কিছু বলেনি। যা বলেছে সব সত্যি। সে চাইলেই মর্ম কে বাবার ভালোবাসা টাহ দিতে পারতো না। মর্ম মেঘ কে যে ভাবে নিজের বাবা মনে করে কাছে টেনে নিছে আর মেঘ ও যেভাবে মর্ম কে নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছে। সত্যি বিষয় টা খুবই ভালোর। এখন মনে হচ্ছে তার মেয়ে টা একটা বাবা পেয়েছে।
ইনায়া সযত্নে চোখের পানি মুছে নেয়। তারপর হালকা হেঁসে বলল,
“- তুমি ঠিকই বলেছো। আমার মেয়ে টা কে আমি কখনোই বাবার ভালোবাসা দিতে পারতাম না। সবকিছু পারলেও এই একটা জিনিসের অভাব কখনো ই পূরণ করতে পারতাম না আমি।
মেঘ ইনায়ার কোল থেকে মর্ম কে নেয়। তারপর একটা টুলের উপর বসিয়ে দেয়। টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে মর্ম’র মাথা আছড়িয়ে দেয়। তারপর সুন্দর করে দুপাশে উঁচু করে চুল বেঁধে দেয়।
ইনায়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেঘের চুল বাঁধা দেখছিল। মেঘ যে এত সুন্দর চুল বাঁধতে পারে তা কস্মিনকালেও ভাবে নি ইনায়া। ইনায়া অবাক হয়ে বলল,
“- বাহ্! তুমি তো খুব ভালো চুল বাঁধতে পারো? শিখলে কিভাবে? বাই দ্য ওয়ে তুমি কি আগে কখনো কোনো মেয়ের চুল বেঁধে দিছো এভাবে? লাস্টের কথা ভ্রু নাচিয়ে বলল ইনায়া।
মেঘ ইনায়ার কথা শুনে বাঁকা হেসে বলে,
“- বাই এনি চান্স যদি কোনো মেয়ের চুল বেঁধে থাকি। তাহলে….
ইনায়া মুখ কালো করে বলল,
“- তুমি না আমাকে ভালোবাসতে……?
তাহলে……
“- আর ইউ জেলাসস!
ইনায়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“- মোটেও না। আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। আগে কখনো এত সুন্দর করে চুল বাঁধতে দেখিনি তাই।
“- জানি তো…!
মর্ম টুলের উপর বসে বলল,
“- তোমরা দু’জন কি শুধু গল্প ই করবে নাকি আমাকে নিচে নিয়ে যাবে। আমার তো খিদে পেয়েছে। খাবো আমি।
মেঘ মর্ম কে কোলে নিয়ে বলল,
“- চলো মা। আমি আর তুমি একসাথে খাবো।
“- চলো পাপা।
অতঃপর তিন জনে একসাথে নিচে নামে।
সকাল নয়টা। সকালের নাশতা করার জন্য সবাই টেবিলে বসেছে। তাসলিমা চৌধুরী আর ফিরোজা চৌধুরী খাবার দিচ্ছেন। ইনায়া মর্ম কে খাইয়ে দিতে চাইলে মর্ম না করে দেয়। সে নাকি নিজের হাতে নাস্তা করবে। মেয়ের আবদার মেনে নেয় ইনায়া।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
সানায়া ভার্সিটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। তার সাথে সঙ্গ দিছে তার বান্ধবী সাথী৷ দুই বান্ধবী গল্প করছে আর হাঁটছে। মাঝে বেশ কয়েকদিন সানায়া ভার্সিটি আসে না। বোনের বিয়ে নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিল। বিয়ে টা যতোই ঘরোয়া ভাবে হোক না কেন? বিয়ে তো বিয়েই। সানায়া প্রায় ভার্সিটির কাছেই চলো এসেছে। তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে তাদের সামনে চলে আসে। সহসা এমন হওয়ায় ঘাবড়ে গেলো দু’জন। ছেলেটার গড়ন দেখে তাদের জুনিয়র মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের কাছে কেন এসেছে। মনে মনে আওড়ায় সানায়া। সানায়া ভদ্র ভাবে জিজ্ঞেস করে,
“- আপনি কে? আর হুট করে আমাদের সামনে আসার কারণ কি?
ছেলে টা লাজুক হেঁসে বলল,
“- হুট করে সামনে আসার জন্য স্যরি ভাবি।
ভাবি সম্বোধন শুনে দুই বান্ধবী একে অপরের দিকে তাকালো। মানে তারা কিছু ই বুঝল না। সানায়া তেজি গলায় বলল,
“- ভাবি মানে…? কিসব আবোলতাবোল বকছেন আপনি?
ছেলেটা মাথা চুলকে বলল,
“- স্যরি আপু বলতে গিয়ে ভাবি সম্বোধন করে ফেলছি। কিছু মনে করবেন না আপু।।আর আমি আপনাদের ছোটো তাই তুমি করে বললে ভালো লাগবে।
সাথী চিল্লিয়ে বলল,
“- কে রে ভাই তুই? হুট করে সামনে এসে নাটক করছিস কেন?
“- কারণ তোমাকে আমার ভাবি বানাবো!
ছেলেটার কথায় সাথী হা হয়ে যায়। ছেলে টা এসব কি বলে। তাদের দুই বান্ধবী কে কি পাগল মনে হয়। দু’জন কেই ভাবি ডাকে। সানায়া সাথী কে বলল,
“- আহ্ সাথী চিল্লাছিস কেন? আর ভাই তুমি কে? আর আমাদের কাছে তোমার কি কাজ?
ছেলে টা কিছু না বলে পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ আর একটা চিরকুট সানায়া’র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“- এটা আপনার জন্য পাঠিয়েছে। এখানে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আছে। বলে চলে গেল ছেলেটা। সানায়া অবাক হয়ে ছেলেটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে~