#পিঞ্জিরা
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমি কলেজ যাব। লেইট হচ্ছে আমার।যেদিন আমায় রিহান ভাই।”
মিরা রিহান এর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রিহান?সে কি ছাড়ার পাত্র? উঁহু। রিহান শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“দেবো না।কি করবি তুই?”
-“আম্মা জানলে আমায় মারবে।”
রিহান মিরা’র কথা শুনে ওর দিকে ফিরে তাকালো।আগের ন্যায় কণ্ঠে বলে,
-“তোর মা জানলে তো মারবে!
-“আমার কলেজের লেইট হচ্ছে রিহান ভাই ছাড়ুন।যেতে দিন আমায়।”
রিহান ফের হাঁটা ধরে। গাড়ির কাছে আসতেই আবার অভিমানী কণ্ঠে বললো।
রিহান এবার চাপা কঠিন স্বরে বলে,
-“দেব না।কি করবি তুই?তোর কলিজা কত বড় আজ আমি দেখবো।রিহান শেখ কে ইগনোর করিস?আমার কথা শুনিস না।খবর পাঠানোর পরেও এলি না?”
বলতে বলতে গাড়িতে বসায় মিরা কে।মিরা ধস্তাধস্তি করেও কোনো রকম সুবিধা করতে পারে না। মিরা ভালোই বুঝতে পারছে রিহান এতো সহজে মানবে না।তাকে এতো সহজে ছাড়বে না। তাই আর কোনো কথা বলার সাহস পায় না।তারচেয়ে ও বড় কথা মিরা মুখে মুখে যতই এটা সেটা বলুক। কিন্তু সত্যি তো এটাই রিহান ভাই কে ও যমের মতো ভয় পায়।মাঝেমধ্যে ভেবে পায় না এমন একটা মানুষ কে কি করে ওর মতো এমন নরম মনের মানুষ ভালোবাসতে পারে। মন দিতে পারে।
কাজল ইফাদ গাড়ি থেকে নেমেছে সেই কখন। রিহান গাড়ি স্টার্ট করার আগে দুজন কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“কোনো সমস্যা হলে জানাবি আমায়।বাগানবাড়িতে থাকবো আমি।”
অতঃপর রিহান গাড়ি স্টার্ট করে। এক হাতে ড্রাইভিং করে অন্য হাতে মিরা’র দুই হাত নিজের মুঠোয় পুরো রাখে।মিরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে পাশে বসা পুরুষ টার মুখের বা সাইডে। রিহান ভাই তাকে নিয়ে বাগান বাড়ি কেনো যাচ্ছে? ওটা তো গ্রামের একদম শেষপ্রান্তে আর ওই দিক টা বেশ নিরিবিলি জায়গা।
মানুষজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে।মিরা একবার সেখানে গিয়েছিল। তখন মিরা সেভেনে পড়তো।রিহান ভাই এর বোন তিথীর সাথে। তিথী আর শাহনাজ আপা একই ক্লাসে পড়ে।
তখন একদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে তিনজনই এখানে ছিলো সারাদিন। তারপর স্কুল ছুটি হওয়ার আগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলো।যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
মিরা এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছে বুঝতে পারে নি। তাই তো তারা যে বাড়িতে চলে আসছে সেদিকেও খেয়াল নেই। গাড়ি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থামতেই মিরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
রিহান ফোন হাতে কাউ কে কল করে।কিছু বললো।মিরা’র সেদিকে নজর নেই।ওর নজর তো বাড়িটার উপর। গেইট এর উপর দিয়ে যে একটুখানি একতলা বাড়ি টা দেখা যায় সেটাই যেকারো নজর কারে।রিহান এরমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে এসে মিরাকে নামতে সাহায্য করে। মিরা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। রিহান চশমা টা খুলতেই মিরা’র বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।রিহান ভাই রাতে ঘুমায় না? না-কি শরীর ভালো না মানুষ টার?
এমন কেনো দেখাচ্ছে? মিরা কিছু জিগ্যেস করবে তার আগেই একজন পুরুষ এলো।বয়স টা হয়তো পঞ্চাশ এর ঘর ছাড়িয়েছে।মিরা ওনাকে চিনি। এই বাগান বাড়ির কেয়ারটেকার নাম মজিবুর।ওনি দেখাশোনা করে এই বাড়ির।রিহান মফিজুর এর হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বলে,
-“বাড়ির ভেতর রাখুন গাড়ি টা।বিকেলে চলে যাব।”
-“খাওন দাওন এর ব্যবস্থা করুম আব্বা?”
মজিবুর মিয়া জিগ্যেস করে।রিহান নম্রতা সহকারে নাকচ করে দেয়,
-“নাহ চাচা।
যা আছে আমি কিছু একটা করে ম্যানেজ করে নেব।”
মজিবুর মিয়া ঘাড় নাড়ে। যার অর্থ এটা হয় না।তিনি কিছু করতে চান।রমজান শেখ রাগী মানুষ। বড়ো নাতি এসেছিল।আর তার আদর আপ্যায়ন হয় নি।জানলে দুই চাট্টে কথা শুনিয়েই ছাড়বে।তাছাড়া তিনি নিজেও চান না রিহান খালি মুখে এ বাড়ি থেকে ফিরে যায়।যেখানে ওনার পরিবার চলে এই পরিবার এর সহয়তায়।তিনি বললো,
-“এটা হয় না আব্বা। কিছু একটা আমি সখির মায়ের দিয়া কইরা আনি। বড়ো সাহেব জানবার পারলে ও আমার লগে ঝামেলা করবো।আমি কিছু ব্যবস্থা করি।”
রিহান বুঝতে পারে দাদাজান এর কথা টা যে এমনিতেই বলেছে মজিবুর। তারপরও মজিবুর কে সতর্ক করে বলে,
-“দাদাজান জানবে না। আপনি বলার প্রয়োজন নেই। আমি এখানে এসেছি।”
কথা বাড়ায় না রিহান আর।মিরা’র হাত ধরে বাড়ির ভেতর হাঁটা ধরে।বাড়িটার একপাশে রয়েছে সুন্দর একটা পুকুর। আরেক পাশে রয়েছে বাগান আর গাড়ি রাখা জন্য জায়গা।ফুলের বাগান টা দেখলে মিরা’র লোভ হয়।প্রথম বার এখানে এসছে সবচেয়ে বেশি নজর কেঁড়েছে এই ফুলের বাগান টা।কত রকম ফুলের গাছ।বাগান টা দেখলে বোঝা যায় এটা কে রোজ পরিচর্যা করা হয়।সেইজন্য এটার সৌন্দর্য একটুও কমে না।
যত্নে যে রত্ন মিলে এই বাগান সেটার প্রমাণ। যত্ন নিলে কিছু জিনিস এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমন আবার অন্য জিনিসের ক্ষেত্রে সেটা ফিরিয়ে দেয়।
রিহান মিরা কে নিয়ে একটা রুমে গেলো।যথেষ্ট সুন্দর আর পরিপাটি গোছানো একটা রুম।মিরা এই রুম টায় আগে কখনো আসে নি।পুরো রুম জুড়ে ল্যাভেন্ডার কালার। পর্দা, বেডশিট।সোফার কভার, কার্পেট, দেয়াল সব কিছু।মিরা হা করে তাকিয়ে রইলো।
পাশে রিহান গায়ের জ্যাকেট খুলে সোফায় রাখে।মিরা চারদিক দেখতে এতোটা বিভোর যে আশেপাশে কি হচ্ছে বা কিছু সময় আগেও যে মনে ভয় টা ছিলো সব ভুলে বসেছে মেয়ে টা।হঠাৎ হাতে হেঁচকা টান পড়তে মিরা চমকে উঠলো।রিহান বিছানায় শুয়ে ওর হাত টেনে ধরেছে।মিরা আচমকাই এমন হওয়াতে স্থান বুঝতে সক্ষম হয় না।তবে পর মূহুর্তে মস্তিষ্ক জানান দেয় রিহান ভাই এর ঘনকালো চুলের মাথা টা তার কোলে।বুকের অস্বাভাবিক দ্রিমদ্রিম শব্দে মিরা’র মনে হলো হৃদপিণ্ড বুঝি এক্ষুনি বেরিয়ে জমিনে ছিটকে পড়বে।রিহান ভাই এর উষ্ণ নিঃশ্বাস মিরা’র কোমড় স্পর্শ করতে মিরা ঠেলেঠুলে পুরুষ টাকে সরাতে চাইলো।কিন্তু সে ব্যার্থ হলো।মানুষ টাকে একটু ও নড়াতে সক্ষম হয় না সে।সব সময় তোতাপাখির ন্যায় মুখ চলতে থাকা মিরা’র কথা এলো না কণ্ঠনালী দিয়ে।যৌবনে পা দেওয়ার পর এই প্রথম কোনো পুরুষের এতো টা সন্নিকটে সে।মিরা’র শরীর শিরশির করে।মৃদু কম্পন হয় শরীর জুড়ে।রিহান টের পায়।মাথা তোলে মিরা’র কোলের উপরে থুঁতনি ঠেকায়।মিরা মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।মাঝে সিঁথি কেটে দুই পাশে লম্বা চুলের বিনুনি গেঁথে রেখেছে মেয়ে টা।গলায় একটা স্কার্ট।খাঁড়া চিকন নাক।ভ্রু জোড়া চিকন। চোখ গুলো বড়ো বড়ো। চোখের পাপড়ি বেশ বড়ো।চিকন গোলাপি আভা অধর।ঠোঁটের উপরে বা দিকে একটা তিল।ব্যাস আর কি লাগে রিহান শেখ এর?এতেই তো ঘায়েল সে।রিহান স্বল্প আওয়াজে আদেশ করে,
-“আমার দিকে তাকা তোতাপাখি।”
-“নাহ।”
-“তাকাতে বলেছি!”
মিরা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় পুরুষ টার দিকে। আর অমনি ধ্বক করে উঠলো বুকের বা পাশ টায়।রিহান মিরা’র মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে নিচু করে কপালে চুমু খেলো। মিরা ফের চোখ বন্ধ করে নেয়।রিহান ভাই এসব কেনো করছে?তবে কি সে সব সময় রিহান ভাই কে নিয়ে যা ভাবে সব সত্যি?বিষয় টা ঘোলাটে। এর উত্তর তবেই সম্পূর্ণ পরিষ্কার হবে যেদিন রিহান ভাই নিজ মুখে এসবের উত্তর দিবে।
মিরা’র বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে রিহান মৃদু স্বরে বলে উঠলো,
-“ভয় নেই কিছু করবো না। শুধু একটু ঘুমবো।আজ তিনদিন ধরে ঘুমাই না আমি।এখন একটু ঘুমতে চাই।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]