#পিঞ্জিরা
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমরা বাড়ি কখন যাব রিহান ভাই?”
কিছু সময় আগে রিহান এর ঘুম ভেঙ্গেছে। উঠে হালকা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে এসছে।মিরা অবাক হয়েছে তাকে পাত্তা দিলো না পুরুষ টা।তার মতো আস্ত একটা মানুষ যেন মানুষ টা নজরে আসে নি।যার কোলে মাথা রেখে পুরো সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমালো তাকেই পাত্তা দিলো না?মিরা’র মন খারাপ হয়।একই ভাবে বসে, হেলান দিয়ে থেকে এখন কোমড় ব্যাথা করছে।যদিও সে অনেক টায় আরাম আয়েশ করে বসে ছিলো।তবুও একটানা অনেক সময় বসে ছিলো।মানুষ টার যেন ঘুমে অসুবিধা না হয় খেয়াল রেখেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। আর এখন তাকেই ইগনোর করা হচ্ছে? ফোঁস ফোঁস করে মিরা রিহান এর পেছনে পেছনে এসে উপরোক্ত প্রশ্নখানা করে।রিহান কিছু সময় চুপ করে কোমড়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আচমকাই বলে,
-“বিকেলে।
কি খাবি তুই?চা,কফি,পাস্তা, নুডলস?”
পরপরই এক সাথে প্রশ্ন করে। মিরা এতো সময় রাগ রিহান নামক পুরুষ টার শান্ত কণ্ঠে চুপসে গেলো। হঠাৎ পুরুষ টার এমন আচরণে চিন্তার কারণ। তাই মিনমিন করে বললো,
-“আমি বাড়ি যাব রিহান ভাই।
দাদি চিন্তা করছেন হয়তো।”
-“করবে না।”
-“করবে।”
-“বিশ্বাস হচ্ছে না?
ওয়েট।”
রিহান পকেট থেকে ফোন বের করে কাউ কে কল দিলো।কল টা স্পিকার বাড়িয়ে মিরা’র সামনে ধরলো।দুই বার রিং হওয়ার পর কল টা রিসিভ হলো।ওপ্রান্ত থেকে কাজল বলে উঠলো,
-“হ্যাঁ রিহান শাহনাজ বলে এসছে আজ শাহনাজ মিরা কে নিয়ে ঘুরতে যাবে।সারাদিন ওর সাথে থাকবে।”
কাজল এর কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরা চিন্তিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“আর যদি শাহনাজ আপা বাড়ি চলে যায়?দাদি যদি দেখে ফেলে?”
কাজল হয়তো কিছু টা অবাক হয়েছে মিরা’র কণ্ঠ শোনে।তবে পরক্ষণেই নিজে কে সামলে বললো,
-“ওহ আচ্ছা মিরা বেগম! শাহনাজ আমার সাথে আছে।বাড়ি যাবে না।”
কাজল মিরা কে সব সময় মিরা ব’লে ডাকে।মিরা চিন্তিত হয় সেক্ষেত্রে তাকে কেনো বেগম বলে কাজল ভাই? তার তো এখনো বিয়ে হয়নি।তাই তো প্রতিবার প্রতিবাদী করে।আর এবারও প্রতিবারই মতো প্রতিবাদী স্বরে বলে,
-“আমার বিয়ে হয় নি এখনো কাজল ভাই।”
-“বিয়ে করার ইচ্ছে আছে না-কি?”
কাজল জিগ্যেস করলো। মিরা থমথম খেলো।রিহান এর দিকে কোণ চোখে চাইলো। মিরা কিছু বলার আগেই রিহান ফোন টা নিজের দিকে নিয়ে ফোন কানে ধরে বললো,
-“চার টা বাজে মোড়ে উপস্থিত থাকবি।”
কাজল কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিহান ফোন কেটে দিলো।মিরা চুপ করে পাশে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো।মানুষ টা বড্ড চতুর।নিশ্চিত আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছে।রিহান নুডলস আর নিজের জন্য কফি করলো।ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মিরা কে ডেকে বললো,
-“আমার সাথে আয়।”
রিহান কে অনুসরণ করে মিরা ডাইনিং-এ এলো।রিহান ফিরে গিয়ে পানির বোতল আনে।মিরা চেয়ারে বসে। একটা ঘড়ি আছে দেয়ালে।মিরা সেটায় তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে নিলো।দুপুর দুই টার বেশি সময় বাজে।এতো সময় ঘুমিয়েছে রিহান ভাই? এইজন্যই বুঝি ওর পেট টা জ্বলছে।সেই সকাল আটটা বাজে খেয়েছে ক্ষুধা তো লাগবে।রিহান নুডলস এর বাটি সামনে রাখতেই মিরা একপলক রিহান এর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে উঠলো,
-“আপনি খাবেন না রিহান ভাই?”
-“না।”
রিহান কফির মগে চুমুক দিয়ে সোজাসাপটা জবাব দেয়। মিরা নড়েচড়ে বসে।মন টা বড্ড খশখশ করছে।
একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কথাখানা জিগ্যেস করবে কি-না ভেবে পাচ্ছে না। তবে যত ভাবনা তত বেশি চিন্তা। মিরা’র একদম এ-সব পছন্দ নয়।চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে মিরা।অতশত ভাবাভাবির কিছু নেই।যা হবে পরে দেখা যাবে।আঁড়চোখে রিহান এর দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি বাড়ি কবে এসছেন?”
-“আজ পাঁচ দিন ধরে রোজ আসি।”
শান্ত কণ্ঠে জানালো রিহান।মিরা চমকে উঠলো। কি বলে রিহান ভাই? রোজ গ্রামে আসে। এতো পথ জার্নি করে?তবে যে ওর সাথে এক দিন দেখা করলো না!গত পরশু শুধু শাহনাজ আপা কে দিয়ে খবর পাঠালও।তবুও মিরা অভিমান করে ছিলো বিধায় আসে নি।এখনো অভিমান করে বললো,
-“আমার সাথে দেখা করেন নি।”
-“এইজন্য অভিমান?”
রিহান জিগ্যেস করলো। মিরা মাথা নিচু করে ঘাড় নেড়ে জানায়,
-“হ্যাঁ।”
-“এতে আমার কিছু যায়-আসে না।”
রিহান ঠোঁট টিপে হাসে।মিরা মাথা নিচু নজরে আসে না। হাতের চামচ টুং করে শব্দ হয়।রিহান দেখে।মেয়ে টা রাগে চামচ টেবিলে রেখেছে। কাচের টেবিলে শব্দ হয়।হঠাৎ মাথা উঁচু করে রিহান এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“আপনি পাষাণ পুরুষ।চিরতা আপনি। নিমপাতার চেয়ে তেতো।”
রিহান হঠাৎ মিরা’র এমন রূপ তব্দা খেলো।কি থেকে কি হলো বুঝতে সময় লাগলো। তবে বুঝতে সক্ষম হয়ে রয়েসয়ে জানায়,
-“জানি।”
মিরা কে আর পায় কে।ঠাশ করে চেয়ার পেছনে ঠেলে উঠে দাঁড়ালো। চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই রিহান ওর হাত টেনে ধরলো।মিরা ছাড়াতে চায়।কিন্তু পারে না।রিহান এর দিকে ফিরে না।উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। রিহান পেছন থেকে হাত ধরে রেখে ওর খুব নিকটে দাঁড়িয়ে মিরা অনুভব করতে পারছে।নিজের ঘাড়ে রিহান ভাই এর উষ্ণ নিঃশ্বাস মিরা’র চোখ বন্ধ হয়ে আসে।রিহান কি বুঝতে পারলো সেটা?হয়তো।ছেড়ে দিলো মিরা কে।মিরা পেছনে না তাকিয়ে এক দৌড়ে যেই রুমে এতো সময় ছিলো সেখানে চলে গেলো। রিহান পেছনে গেলো না।টেবিলের উপর থেকে নুডলস এর বাটি আর নিজের কফির মগ হাতে তবেই রুমে এলো।মিরা তখন সব এই রুমের সাথে এডজাস্ট করা ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসছে।রিহান কে দেখে লজ্জায় অস্বস্তি চোখ মাথ নিচু করে। ছি একটু আগে কি সব ভাবছিলো মিরা।ভাবতেই মিরা’র গাল লাল হয়।কান গরম হয়ে আসে।রিহান ভাই যদি জানতে পারে মিরা তাকে নিয়ে রোমাঞ্চ কারার ধান্দায় ঘুরছে।কিংবা এসব কল্পনা করে তাহলে মিরা’র গালে নিশ্চিত দু’টো থাপ্পড় পড়বে।
-“আমার বউ না তুই।
এভাবে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।তোর মতো পুঁচকে মেয়ের সাথে রোমাঞ্চ হবে না।”
হঠাৎ রিহান এমন কিছু বলবে মিরা ভাবে নি। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মেয়ে টা।রিহান মিরা কে ঠিক মতো ভাবতেও দিলো না। তার আগেই বলে,
-“খাবার খেয়ে রেডি হয়ে নে।”
রিহান এর কথায় মিরা’র সর্বপ্রথম প্রশ্ন হলো এখন তো চার টা বাজতে অনেক দেরী তাহলে? বলে উঠলো,
-“এখন তো সবে মাত্র তিন টা বাজে রিহান ভাই?”
-“তো তোর কি এখানে আরো থাকতে ইচ্ছে করছে না-কি?”
রিহান গায়ে জ্যাকেট জড়াতে জড়াতে উলটো প্রশ্ন করে। মিরা থমথম খায়। দেয়ালের সাথে এডজাস্ট করা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। স্কার্ফ ঠিকঠাক করে ব্যাগ কাঁধে তুলে।রিহান কে অনুসরণ করে।
——
শাহনাজ কাজল ইফাদ অপেক্ষা করছিল রিহান মিরা’র জন্য।মিরা আসতেই শাহনাজ আর মিরা বাড়ির পথে হাঁটা ধরে। মিরা বারকয়েক পেছনে তাকায়।আসার সময় অদ্ভুত এক কান্ড ঘটেছে। রিহান মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে মিরা কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে ছিলো অনেক সময়। মিরা সেই থেকে ঘোরে আছে। রিহান নিজে থেকে কিছু বলে নি।মিরাও না।মিরা দৃষ্টির আড়াল হতেই কাজল বললো,
-“নানাজান বাবা-র সাথে কথা বলেছে। এবার এমপি নমিনেশন তোকে দেওয়ার বন্দবস্ত করছে।”
রিহান চোয়াল শক্ত করে নেয়।আজ এসব নিয়ে কথা বলতে হবে রমজান শেখ এর সাথে। ওনি নিজের ইচ্ছে এভাবে অন্যের উপর চাপাতে কি করে পারে রিহান ভেবে পায় না।
রিহান গাড়িতে বসে।কাজল ইফাদ ও উঠে বসে।রিহান গাড়ি স্টার্ট করে।
—-
-“আব্বা গ্রামে আসো প্রতিদিন। বাড়ি আসো না।শরীর টার কি অবস্থা হয়েছে।আল্লাহ।”
রিহান বাড়ি এসে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মাত্র ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসছে।আর তখুনি নজরে আসে মা কে।রেহনুমা বেগম ছেলে কে দেখে বিছানা ঠিকঠাক করা বাদ দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে করুণ স্বরে কথা গুলো বলে।রিহান চট করে টাওয়াল রাখে পাশের চেয়ারে। মায়ের মুখ দুই হাতে আগলে নিয়ে চুমু খায় কপালে। অতঃপর মুচকি হেঁসে বলে উঠলো,
-“আজ সারাদিন তোমার ছেলে বউয়ের সাথে ছিলাম আম্মু।”
-“মিরা?”
-“হ্যাঁ।”
-“রোকেয়া আপা?”
-“বাড়ি ছিলো না।”
রেহনুমা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। পরপরই কিছু মনে পড়তে বলে উঠলো,
-“আব্বা তোমার দাদাজান দেখা করতে বলেছে।খবর পাঠিয়েছে। রেগে আছেন মানুষ টা।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]