পিঞ্জিরা পর্ব-১০

0
4

#পিঞ্জিরা
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

-“ঔষধ রোগের সময় খেলে অমৃত রোগ সেরে গেলে সেটা খেলে তা হয় শরীরে এর জন্য বিশ।
জীবনে একটা সময় চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব নয়।আমাদের কাছেই থাকে জিনিস গুলো। কিন্তু সেগুলো আমাদের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া ভালো তখন।”

মিরা কি কিছু বুঝতে পারলো রিহান ভাই এর গভীর কথার মানে?হয়তো হ্যাঁ আবার হয়তো না।মিরা চুপ করে আছে। রিহান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। সে-তো ভেবেছে সে দূরে থাকলে হয়তো মিরা’র ভালো হবে। কিন্তু না।এই ক’দিনে যা বোঝা গিয়েছে সেটা হচ্ছে লুকিয়ে কিংবা দূরে থেকে নয়।সরাসরি মিরা কে বুঝিয়ে বললেই মিরা বুঝবে।যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে মিরা।বাবা ছাড়া দুনিয়া বড্ড কঠিন। তারউপর একটা ভাই পর্যন্ত নেই।রোকেয়ার এতো পরিশ্রম সব এই মিরা’র জন্য। মিরা নিজেও জানে সেটা।কিন্তু মেয়ে টা নিজের অনুভূতির কাছে গিয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না।
রিহান টেস্ট এর রেজাল্ট দেখেছে। আর আজ অফিস শেষ সেইজন্যই গ্রামে ছুটে আসা।রিহান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,

-“মিরা?লিসেন মিরা লুক এট মি। আমাকে দেখে।কথা দিচ্ছি আমি শুধু তোমার থাকবো।কিন্তু সেটা যদি তুমি চাও সত্যি হয় তবে তোমাকে আমার কথা মানতে হবে।”

রিহান এর হঠাৎ এমন কথায় মিরা’র চোখ কপালে উঠে।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে রিহান নামক সুদর্শন পুরুষ টার মুখের দিকে। যে আপাতত এলোমেলো। বিধস্ত।ক্লান্ত। কিন্তু এতেও পুরুষ টাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।
রিহান আবার বললো,

-“লিসেন মিরা ফুপিমণি অনেক কষ্ট করছে।তুমি দেখছো তো!তোমার জন্য সব।”

মিরা যেন ঘোরে আছে।এতো বড় ঝটকা মস্তিষ্ক নিতে পারলেও মন যেন মানতে পারছে না কিংবা বিশ্বাস করতে চাইছে না। রিহান এবার আরো একটু এগিয়ে বসলো।ঘনিষ্ঠ করলো মেয়ে টাকে নিজের সাথে। মিরা চমকে উঠলো। আশেপাশে তাকালো। নাহ অন্ধকার।কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রিহান গাড়ির ভেতর জ্বলতে থাকা লাইট ও অফ করে। এবার পুরোপুরি অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। আবছা দেখা যাচ্ছে সামনের পুরুষ টাকে।মিরা’র বুক ধুকপুক করে। বলে,

-“আমি এখন থেকে ভালো করে পড়বো রিহান ভাই।কিন্তু,,

মেয়ে টা থামে।রিহান ভ্রু কুঁচকে নেয়।অস্থির সে।কিছুতেই চায় না তার অবহেলায় তাকে ভালোবাসার অপরাধে মেয়ে টার কোনো ক্ষতি হয়।কণ্ঠে অস্থিরতা এনে জিজ্ঞেস করলো,

-“কিন্তু কি?বলো!”

মিরা’র রিহান ভাই এর কথা যেন সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। তুমি করে বলছে মানুষ টা তাকে।শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায়। জানতে চাইলো,

-“আপনি সত্যি বলছেন?”

রিহান হতভম্ব। কি বলে মেয়ে টা?তাকে বিশ্বাস করছে না?না-কি নিজের কাছে নিজেই শিওর হতে চাইছে?
রিহান দুই অধর বিন্দুর ন্যায় গুলো করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার আচমকাই মনে হলো গরম প্রচুর।শরীর দিয়ে যেন ধোঁয়া বেড় হচ্ছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।মুখের সামনে এক জোড়া ডাগর ডাগর আঁখি আর চিকন সরু নাক টার নিচের অধর জোড়া চোখের সামনে খুব নিকটে আছে এটা দেখে মনে পড়লো গরম লাগার উৎস যে সে সাথে নিয়ে বসে আছে। গরম লাগার ই কথা এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।রিহান মিরা কে আলগোছে ছেড়ে দিলো।মিরা নড়েচড়ে নিজে নিদিষ্ট স্থানে বসলো।রিহান স্টেয়ারিং-এ দুই হাত রাখে।সামনে আবছা আলোয়ে দূরে থাকা শাহনাজ কাজল এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

-“প্রমাণ চাই?”

মিরা হ্যাঁ না কিছু বললো না। শুধু রিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ভাবলেশহীন ভাবে।
রিহান নিজের শার্ট এর পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে। অন্ধকারে মিরা সেটা দেখলো।হয়তো খয়েরী রঙের হবে। তবে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সেটা কালো হয়ে চোখে ধরা দিলো।রিহান বক্স টা খুলে মিরা’র সামনে ধরলো।চিকচিক করে কিছু জ্বলজ্বল করছে। রিহান সেটা হাতে নিতে লম্বা হয়ে মিরা’র সামনে ঝুলে পড়ে। মিরা অবাক হলো।দেখে মনে হচ্ছে বেশ দামী একটা অলংকার। মিরা বুঝতে পারছে না রিহান ভাই এটা কেনো বের করেছে এখন? রিহান বক্স রেখে মিরা কে টেনে সামান্য ঘুরিয়ে বসাল।ওড়না সরিয়ে গলায় চেইন টা পড়িয়ে দিলো। মিরা পাথর ন্যায় শক্ত হয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। মিনিট সময় ব্যবধানে কি হলো বিষয় টা বুঝতে পেরে অনুভব করলো রিহান ভাই তার মাথায় ফের ওড়না তুলে দিচ্ছে। মিরা ঘাড় ফিরিয়ে রিহান এর দিকে তাকানোর আগেই রিহান বাঁধা দিলো।বললো,

-“উঁহু। তাকাস না।এটা আমার কথা রাখার প্রথম চিহ্ন। দ্বিতীয় চিহ্ন সেটা দু’বছর পর।দু’বছর পরপর আমাদের কোম্পানিতে আজকের তারিখে তারিখে একটা সার্কুলার দেওয়া হবে। আর সেটার মধ্যে পেয়ে যাবি।তাই বলে এটা ভাবিস না কোম্পানি আমার বলে চাকরি টা তোকে এমন দেওয়া হবে। এমন টা ভাবলে বোকামি বৈ আর কিছু না। নিজের যোগ্যতায় তোকে চাকরি টা পেতে হবে। আর তৃতীয় চিহ্ন তার ঠিক এক মাস আমি তোকে আমার করে নেবো।আর যদি ভাবিস বিয়ে পর লেখা পড়া করবি না।শুধু চাকরি করবে সেটা হবে না। লেখা পড়া করতে হবে। আরো উচ্চ পদে চাকরি নিতে হবে। তারজন্য তোর যতোটা সাহায্যের প্রয়োজন সেটা স্বামী হিসাবে রিহান শেখ তোর পাশে থেকে নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে করবে।”

মিরা চুপ করে বসে আছে। কেনো জানি এতোকিছুর পরেও মন ভালো হচ্ছে না। কেনো মন টা কু ডাকছে? কেনো মনে হচ্ছে রিহান ভাই এর দেখা সে খুব সহজে পাবে না!

-“আপনি আর গ্রামে আসবেন না রিহাব ভাই?”

রিহান এপর্যায়ে এসে চুপ করে গেলো। কোন জবাব দিলো না। কাজল তখন এসে মিরা’র সাইড দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আসবে।তুমি বাড়ি যাও মিরা বেগম।শাহনাজ অপেক্ষা করছে।”

মিরা কাজল এর দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে একপলক রিহান কে দেখে ধীরগতিতে চলে গেলো। রিহান চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।কাজল কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“মিরাকে বলিস নি তুই দুই বছর এ,,,

-“চাই না ও জানুক।”

রিহান চোখ বন্ধ রেখে শান্ত কণ্ঠে বলে।কাজল অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো। অবাক হয়।এসব কোন ধরণের পাগলামি করছে রিহান বুঝতে পারছে? এতো বড় একটা খবর। আর মেয়ে টাকে জানতেও দিবে না!পরে জানতে পারলে কত টা কষ্ট পাবে মেয়ে টা কোনো ধারণা আছে এই ছেলের? কাজল অবাক কণ্ঠে বললো,

-“কিন্তু রিহান তুই বুঝতে পারছিস না।পরে মেয়ে টা এতো বড় নিউজ নিতে পারবে না।”

রিহান চোখ মেলে তাকালো। কাজল কে গাড়িতে বসতে ইশারা করে। কাজল উঠে বসে। কাজল জানে এখন রিহান সিগারেট টানবে।তাই আগে আগে লাইটার এগিয়ে দেয়।রিহান সিগারেট বেড় করে সেটায় আগুন লাগালো।ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে দুই তিন বার টান দিয়ে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে।কাজল তাকিয়ে আছে রিহান কি বলবে সেই অপেক্ষায়। রিহান সিগারেট অর্ধেক টানলো।কাজল বসে থাকে চুপ করে।রিহান সিগারেট ফেলে গাড়ি স্টার্ট করে। গন্তব্য তার শেখ বাড়ি।এখান থেকে যেতে সাত আট মিনিট লাগবে।গাড়ি চলে শাঁই শাঁই করে। জিপগাড়ি হওয়ার দরুনে বাতাস একটু বেশি লাগে। গাড়িতে জ্বলতে থাকা ছোট বাতিটা কিছু টা হলদে রঙের।সেই হলদে আলোয়ে দুই প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকদের কি চমৎকার দেখাচ্ছে সেটা হয়তো তারা নিজেরাও জানে না।সাদা শার্ট গায়ে পুরুষ টাকে মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে। কাজলের মনে হলো সে যদি মেয়ে হতো তবে নিশ্চিত এই পুরুষের সৌন্দর্যে, ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়তো।যদিও কথা টা বড্ড হাস্যকর তবে সত্যি টা তো আর মিথ্যা হয়ে যাবে না। সত্যি এটাই রিহান শেখ নিঃসন্দেহে একজন সুদর্শন পুরুষ।এখন পাশে যদি কাজল এর বদলে একটা সুন্দরী নারী থাকতো তবে নিশ্চিত এই পুরুষের সৌন্দর্যে এর কাছে নারী নিজেই নিজের সুন্দর রূপ কে তুচ্ছ মনে করতো। কাজল কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিহান কি বুঝলো কে জানে।হাসলো সে।তবে মূহুর্তে নিজে কে সামলে নেয়। রয়েসয়ে বলে,

-“এখন জানালে পাগলামি করতো।পরে জানলে তেমন কিছু হবে না। জানি অভিমান করবে। রেগে থাকবে।কিন্তু কোনো ব্যাপার না।সব ঠিক করে নেবো আমি।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]