পিঞ্জিরা পর্ব-২০

0
317

#পিঞ্জিরা
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

-“ছাড়ুন রিহান ভাই। কেউ এসছে।”

মিরা বহু কষ্টে কণ্ঠনালি দিয়ে শব্দ গুলো বেড় করেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মেয়ে টার। শরীর অবশ। একটু নড়াচড়া করবার সুযোগ সায় কিছু পাচ্ছে না। রিহান মিরা’র কোমড়ে এক হাত রেখে আরেক হাতে মিরা’র এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো। অতঃপর নিজের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ করে গলায় মুখ গুঁজে আছে। মিরা’র কথা রিহান যেন শুনতে পাচ্ছে না কিছু। উন্মাদ সে। এদিকে কেউ একজন দরজায় নক করছে।
মিরা শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে রিহান এর চুল খামচে ধরে। এতক্ষণও ধরে ছিলো। তবে এবার শক্তি প্রয়োগ করে। যার ফলে ব্যথা পায় রিহান। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে মাথা তুলে বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,

-“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

মিরা দূরে যেতে চাইলো। রিহান সেটা হতে দিলো না। মিরা দরজার দিকে তাকালো। রিহান মিরা’র দৃষ্টি অনুসরণ করে। চরম বিরক্ত হয় সে। চোখ বন্ধ করে বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। মিরা কে ছেড়ে দিয়ে গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে আদেশ করলো,

-“এখানে বোস।”

বলেই উঠে গেলো রিহান। শার্ট এর অর্ধেক বোতাম লাগিয়ে দরজা খুলে দেখলো দু’জন সার্ভেন্ট।
রিহান তাদের দরজায় দাঁড়াতে বলে রুমে এলো। একজনের হাতের ট্রে নি। সেটা রেখে আবার ফিরে এসে আরেকটা নিলো। মিরা রুমে এলোমেলো বসে আছে। রিহান দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে মিরা’র কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মিরা’র ঘাড়ে হাত রেখে মুখ টা নিজের দিকে টেনে আলতো করে মিরা’র অধর ছুঁয়ে দিলো। মিরা’র নিঃশ্বাস আঁটকে রইলো। রিহান ছেড়ে দিলো। মিরা’র চোখের দিকে তাকিয়ে রাশভারী কণ্ঠে ধমকে উঠে,

-“নিঃশ্বাস নে বেয়াদব।”

মিরা মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো। সত্যি মিরা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায় যখন রিহান ভাই তার আশেপাশে থাকে। রিহান উঠে গেলো। সব খাবার নিয়ে বিছানায় এসে বসলো। মিরা মিনমিন করে বললো,

-“ওয়াশ রুম যাই?”

-“তাড়াতাড়ি আসবি।”

মিরা একটু দেরি করে না। দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেলো। মিনিট তিন এর মাথায় মিরা বেরিয়ে এলো। ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিচ্ছে। মিরা বেরুতেই রিহান গেলো। সে-ও ফ্রেশ হয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো। রিহান এসেই দেখলো মিরা খাবার নিচ্ছে প্লেটে। রিহান এসে সামনে বসলো। প্লেট টেনে নিজের কাছে নিলো। অতঃপর নিজেই ভাত মেখে লুকমা দিলো মিরা কে।
মিরা চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাবার শেষ রিহান সব রেখে এসে মিরা’র কোলে ফের মাথা রাখলো। উবু হয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে নাক ঘেঁষে মিরা’র কামিজ এর উপর দিয়ে পেটে। মিরা রিহান এর চুল খামচে ধরে। রিহান শান্ত স্বরে বললো,

-“বিয়ে তো করে নিলাম। কিন্তু বাসর টা হচ্ছে না।”

মিরা মুখ খুলে কিছু বললো না। লজ্জায় কান গরম হয়। কিছু সময় চুপ থেকে বললো,

-“আপনার না মাথা ব্যথা! ঘুমান। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

মিরা চুল টেনে দেয় আস্তে আস্তে। রিহান কিছু সময় ব্যবধানে ঘুমিয়ে পড়ে।

—-

শাহনাজ এর একটা পরীক্ষা ছিলো। শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পাঁচ টাস বাজলো। এখন পাঁচ টা মানে একদম সন্ধ্যা। শাহনাজ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো ভার্সিটি থেকে। অনেক স্টুডেন্ট। গাড়ি নেই। এদিকে শাহনাজ কোনো গাড়ি পাচ্ছে না। ওর এক ফ্রেন্ড ওকে জোর করে নিয়ে গেলো একটা চটপটি স্টলে। সেখানে ভেতরে বাহিরে বসার যায়গা আছে। শাহনাজ বাহিরে বসলো। ওর ফ্রেন্ড গেলো ভেতরে অর্ডার করতে। তখন শাহনাজ এর ফোনে কল এলো। শাহনাজ ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো একটা বিদেশি নাম্বার। কল টা দেখে শাহনাজ অবাক হলো। হাত কাঁপতে লাগলো। কল টা কতক্ষণ বাজার পর কেটে গেলো। আর কল টা কাটা মাত্র শাহনাজ এর হুঁশ এলো। এতোক্ষণ যেন ঘোরে ছিলো। ছাব্বিশ টা কল এই একই নাম্বার থেকে সেই চার টা থেকে কল আসছে। শাহনাজ এর ভাবনার মাঝে আবার কল এলো। শাহনাজ দ্রুত কল রিসিভ করে নিলো।
কাজল ফোনের ওপাশ থেকে রাশভারী কণ্ঠে,

-“অনেক গুলো কল দিয়েছি।”

কতদিন পর পুরুষ টার স্বর শুনতে পেলো। শাহনাজ থম মেরে গেলো। ব্যাগ নিয়ে উঠে হাঁটা ধরে স্টেশনের দিকে। হাঁটার শব্দ হয়তো শুনতে পাচ্ছে কাজল। শাহনাজ অনেক্ক্ষণ পর মিনমিন করে বললো,

-“আমি এক্সাম হলে ছিলাম।”

-“ওহ আচ্ছা। এক্সাম কেমন হলো?”

কাজল শান্ত স্বরে জানতে চাইলে। তবে ভেতরে ভেতরে পুরুষ টা এলোমেলো হচ্ছে। এতোদিন কিভাবে নিজে কে সামলেছ সে নিজেও জানে না। আজ যখন রিহান কল করে শাহনাজ এর সাথে যোগাযোগ করতে বললো তখন থেকে তো কল লাগাচ্ছিল মেয়ে টাকে। কিন্তু মেয়ের তো খবর নেই। কাজল এর ভাবনার মাঝে শাহনাজ ভেবেচিন্তে জবাব দিলো,

-“উম ভালো।”

তারপরও অনেকদিন কথা না বলায় দু’জনের মাঝেই জড়তা কাজ করছিলো। তবে অনেক্ক্ষণ কথা বলতে বলতে দু’জনে আবার আগের মতো স্বাভাবিক হলো। কথা বলতে বলতে শাহনাজ প্রায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর কাজল কে জানিয়ে দিলো। কাজল কিছু সময় নীরবতা পালন করলো এরপর একপর্যায়ে বলে উঠলো,

-“আমি এই মাসে লাস্ট বাংলাদেশ ব্যাক করবো শাহনাজ। বাবা-মা কে বলবে রিহান তোমার কথা। তুমি কি বলো?”

-“আপনার যা ভালো মনে হয়।”

কাজল মৃদু হাসলো। মেয়ে টা সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। শাহনাজ মোড়ের কাছে অটো থামতে কাজল কে বলে কল কাটলো। কাজল কল কেটে ফোন টা বুকে চেপে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে শাহনাজ এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে ব্যাস্ত হলো।
কোমড় সমান লম্বা চুল। কাজল কালো চোখ। কপালে ছোট কালো একটা টিপ। জোড়া ভ্রুর মাঝে দারুণ সুন্দর লাগে ওই টিপ। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। মায়াবী চোখ জোড়ায় একদম নেশা ধরে যাওয়ার মতো। কাজল চোখ বন্ধ করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

——

মিরা’র শোয়া থেকে উঠে বসে চারদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখলো। মাথা টা অল্প ভার লাগছে। দেয়ালে দামী ঘড়ি টার দিকে নজর পড়তে দেখলো সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টা বাজে। মিরা অবাক হলো। এতো সময় ঘুমিয়েছে! তখন তো বিকেল চার টা ছিলো। আর রিহান ভাই ঘুমিয়ে ছিলো। সে কোথায়? আর নিজেই বা কখন ঘুমালো? মিরা’র হঠাৎ মনে ভয় ধরলো। এতো বড় একটা রুমে সে একা ঘুমিয়ে আছে। তারউপর ঘুম ভেঙ্গেছে খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে। তাই ভীতু চোখে এদিক-ওদিক তাকালো। মিরা যখন ভয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে ব্যস্ত রিহান রুমে প্রবেশ করে অধর কোণে মুচকি হাসি নিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে বলে উঠলো

-” আমি এখানে জান।”

মিরা ঘাড় ঘুরিয়ে রিহান কে দেখলো। হাতে দুই টা মগ। হয়তো কফি হবে। তবে মিরা সে-সব না ভেবে উঠে দাঁড়ালো বিছানা ছেড়ে। ঝড়ের বেগে এসে রিহান এর বুকে আলগোছে মাথা রাখলো। রিহান একটু অপ্রস্তুত হয়ে পিছিয়ে গেলো। তবে নিজে কে সামলে নিলো। হাতের মগ সাইডে টেবিলে রেখে মিরা কে জড়িয়ে নিলো। মিরা রিহান এর বুকে নাক ঘষে। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,

-“আমরা বাড়ি যাব না রিহান ভাই?”

রিহান বিছানায় পড়ে থাকা ওড়নার দিকে তাকিয়ে অধর বাঁকিয়ে হাসে। মেয়ে টা কি ভয় পেয়েছে তাকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পেয়ে? এমন ভুল তো করার কথা নয়। নিজে কে সব সময় পরিপাটি করে রাখার মেয়ে আর ওড়না নেয় নি! রিহান নিচু হয়ে মিরা’র কানের কাছে মুখ নিলো। ফিসফিস করে বললো,

-“আজ বাড়ি যাব না। কফি টা খেয়ে রেডি হয়ে নে। মামণি তেকে শাড়ী পড়িয়ে দিবে।”

মেয়ে টা তার বুক থেকে মাথা তুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আজ সকালে শাড়ী পড়তে নিষেধ করে আবার এখন বলছে শাড়ী পড়তে! মিরা সত্যি রিহান ভাই এর মতিগতি বুঝতে পারে না। মিরা বলে উঠলো,

-“কিন্তু আপনি না শাড়ী পড়তে নিষেধ করলেন!”

-“হ্যাঁ। কিন্তু আমার সামনে তো পড়াই যাবে।”

বলতে বলতে এক টা মগ হাতে নিয়ে সেটা চুমুক দিলো। তারপর মগ টা রেখে মিরা’র মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে মিরা’র অধর নিজের অধর এর ভাঁজে নিয়ে কফি টা মিরা’র মুখে দিয়ে দিলো।
ঘটনা টা এতো দ্রুত ঘটলো মিরা আচমকাই কিছু বুঝতে পারে না। মস্তিষ্ক বিষয় টা বুঝতে একটু সময় নিলো। যতক্ষণ বুঝতে পারে ততক্ষণে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো। রিহান কফি মুখে দিয়ে ক্ষান্ত হলো না। দীর্ঘ এক অধর চুম্বনে লিপ্ত হলো। সময় গড়ালো। মিরা’র দম বন্ধ হয়ে আসে। ছটফট করতে রিহান ছাড়লো মিরা কে। বাঁকা হাসলো। মিরা জোরে জোরে শ্বাস টানে। রিহান তখন ও মিরা’র কোমড় জড়িয়ে ধরে। ঘনিষ্ঠ করে রেখেছে নিজের দেহের সাথে। মিরা কিছু সময় অতিক্রম হলে চোখ খুলে। রিহান তখন মিরা’র কপালে চুমু খেলো ফের। অতঃপর অধর অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো,

-“গুড ইভিনিং মাই ওমেন। অর গেট রেডি ফর এ সারপ্রাইজ।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]