পিঞ্জিরা পর্ব-২১

0
271

#পিঞ্জিরা
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

[রোমান্টিক পর্ব। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“আমি এই শাড়ী পড়বো না রিহান ভাই।”

রিহান মাত্র রুমে প্রবেশ করেছে। তার উপস্থিতি টের পেয়ে মিরা মাথা নিচু করে মিনমিন করে উপরোক্ত কথা টা বলে। রিহান ফোন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়নায় মিরা’র দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

-“কেনো?”

মিরা হুট করে মাথা তুলে রিহান এর দিকে তাকালো। তার চোখে মুখে চঞ্চলতা ফুটে উঠেছে। লজ্জায় গাল অল্প গরম হয়েছে। মিরা বা হাত গালে ছুঁয়ে দেখলো সত্যি। গরম হয়েছে। তবে এই শাড়ী দেখে মেয়ের লজ্জা করছে যখন এটা পড়বে তখন কি অবস্থা হবে? রিহান ভাই এর সামনে কি করে আসবে? মিরা নিজের হাতের শাড়ী টার দিকে আবার তাকালো। কালো রঙের চমৎকার দেখতে জর্জেট একটা শাড়ী। ব্লাউজ ম্যাচিং। তার সাথে রয়েছে ডায়মন্ড এর একটা কণ্ঠ নেকলেস। এক জোড়া দুল। মিরা সব কিছু ভালো লাগলেও শাড়ী ভীষণ পাতলা দেখে আর ভালো লাগলো না। আগের ন্যায় কণ্ঠে আবার মিরা ঝটপট বলে উঠলো,

-“এটা এটা! আপনি বুঝতে পারছে না। এটা ভীষণ পাতলা।”

-“তো?”

রিহান ততক্ষণে নিজের গা উন্মুক্ত করে ফেলেছে। পুরুষ টার গায়ে এখন শুধু প্যান্ট। মিরা মুখ ঘুরিয়ে রাখে। রিহান ওর থুঁতনিতে দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। মিরা অল্প ব্যথা পায়। তবে শব্দ করে না কোনো।
রিহান এর উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে মেয়ে টার হৃদপিণ্ড দ্রুত লাফালাফি করছে। শরীর শিরশির অনুভূতি হয়। জানালো,

-“আমার লজ্জা করবে।”

-“নো প্রবলেম। তোর লজ্জা রাতে আমি এমনিতেই ভেঙ্গে দেবো। সো চিল জান। যা দ্রুত রেডি হয়ে আয়।”

রিহান নিজের অধর গোল করে ফু দেয় মেয়ে টার অধরে। অতঃপর মিরা’র পুরো মুখের দিকে এলোমেলো দৃষ্টি বুলিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো।

মিরা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আর যখন চোখ খুলে তখন পুরো রুম ফাঁকা ছিলো। অবাক হয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখলো দরজা দিয়ে কারিরা বেগম রুমে প্রবেশ করছেন। মিরা উনাকে দেখে আরো লজ্জায় মিইয়ে গেলো। কারিরা বেগম শাড়ী পড়াতে এসছে মিরা কে। মিরা উনাকে দেখে না চাই তেও জোর করে হাসলো। কারিরা বেগম নিজেও চমৎকার হাসলেন। অতঃপর দরজা বন্ধ করে এসে মিরা’র শাড়ী নিয়ে বললো,

-“তুই যা। ফ্রেশ হয়ে এগুলো পড়ে আয়। আমি অপেক্ষা করছি।”

মিরা নিজের হাতে শাড়ির সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো। ফিরা এলো মিনিট দশ মিনিট এর মাথায়। কালো ব্লাউজ এর উপর শুভ্র রঙের টাওয়াল জড়িয়েছে। কারিরা বেগম হাসলেন। খুব সুন্দর করে শাড়ী পড়িয়ে দিলো মিরা কে। মিরা অবাক হয়। এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়েছেন মিরা’র একটু অস্বস্তি হচ্ছে না। শাড়ী পাতলা হলেও কি সুন্দর পেট পিঠ ঠেকে দিয়েছেন। কারিরা বেগম হালকা করে মেক-আপ ও করিয়ে দিলো মিরা কে। অতঃপর কপালে চুমু খেলো। মুচকি হাসলো। বললো,

-“পছন্দ আছে ছেলের। সুখী হও।”

বলতে বলতে মিরা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। মিরা মৃদু হাসে। কারিরা বেগম চলে গেলে মিরা আয়নায় নিজে কে ঘুরে-ফিরে দেখতে লাগলো। কতক্ষণ পর একজন সার্ভেন্ট এলো। মিরা কে বলে গেলো রিহান তাকে পাশের রুমে যেতে বলেছে। মিরা সার্ভেন্ট কে যেতে বলে শাড়ির আঁচল সুন্দর করে পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের শরীর এর উন্মুক্ত স্থান গুলো আড়াল করে নিলো। পাশের রুমের টা গেস্ট রুমে। মিরা এসেছে পরে এমন টাই জেনেছে। ভয়ে ভয়ে দরজা টা বাহির থেকে ঠেলে দিতে এটা ভেতরের দিকে চলে গেলো।
মিরা দেখলো পুরো রুম অন্ধকার। তবে নাসারন্ধ্রে গিয়ে ফুলের গন্ধ তীব্র ভাবে ঠেকালো।
মিরা ফুলের গন্ধে গা ঘুলিয়ে আসে। এতো কড়া গন্ধ। মিরা নাক শাড়ির আঁচলে দিয়ে চেপে ধরে। যার ফলে মসৃণ পেট উন্মুক্ত হয়। ভীতি নিয়ে ডাকলো,

-“রিহান ভাই?”

এক বার দুই বার পরপর চার বার ডাকলো। সাড়াশব্দ না পেয়ে মিরা’র এবার কান্না পেয়ে গেলো। ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিবে দিবে ভাব তখন পেটে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেলো। মিরা’র হৃদপিণ্ডের গতি দিগুণ হলো। নিজের হাত সেই হাতের উপর আলতো করে রাখলো। অন্ধকারে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে মিনমিন করে বলে উঠলো,

-“ভয়ে পেয়েছিলাম আমি। আপনি এখানে ছিলেন?”

-“আমি এখানে ছিলাম।”

বলে রিহান মিরা’র কোমড় টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দরজা বন্ধ করে। এরপর দরজার কাছে সুইচ টিপে লাইট অনক করে। মিরা’র সর্বপ্রথম নজর পড়লো স্যুট-বুট পড়া রিহান ভাই এর দিকে। সুন্দর শরীরে কালো রঙের প্যান্ট কালো ব্লেজার সাদা শার্ট হাতে কালো রঙের একটা দামী ঘড়ি। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এলোমেলো চুল মিরা সামনে রিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।
আশেপাশে তাকাতে ভুলেছে মেয়ে টা। রিহান মিরা’র কোমড় এক রাখা অবস্থায় আরেক হাতের তর্জনী আঙ্গুল নিজের কপালে ঘষে ঠোঁট কামড়ে হাসে। রিহান এর অধর কোণে হাসি দেখে মিরা লজ্জা পায়। দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে গেলো রিহান এর সৌন্দর্যে। কিন্তু হঠাৎ আবার মনে পড়ে এতো ফুলের সুবাস কোথায় থেকে আসছে! তাই ঘাড় বাঁকিয়ে এবার পেছনে বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। কাচের দেয়ালের পাশে সাদা বিছানায় লাল গোলাপ আর বেলীফুলের সৌন্দর্যের আরো দিগুণ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে বিছানা। আর পাশে একটা সেন্টার টেবিলে যেটা সাদা একটা কেক রাখা। মিরা সেদিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় রিহান মোলায়েম স্বরে কানের কাছে বলে উঠলো,

-“হ্যাপি বার্থডে মাই ওমেন।”

মিরা অবাক হলো। সে তো ভুলেই গিয়েছিল আজ তার জন্মদিন।
রিহান মিরা কে নিয়ে কেক টার কাছে গেলো। নিচু হয়ে বউ কে নিয়ে কেক কাটতে উদ্যত হয়। এদিকে মিরা মুগ্ধ হয়ে রিহান এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রিহান এটা দেখে ফের হাসে। মিরা’র যেন জান যায় যায় অবস্থা। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে কেক কাটে। রিহান কে খাইয়ে দেয়। রিহান নিজে ও একটু কেক মিরা’র মুখে দেয়। পরপর দু’বার দিতে মিরা খেয়ে নিলো। রিহান বিরক্ত হলো। এই মেয়ে একটু ও রোমান্টিক নয়। শুধু লজ্জা ষোলকলা। যেটা করার ইচ্ছে হচ্ছে সেটা এই মেয়ে কে দিয়ে হবে না। অগত্যা বাধ্য হয়ে নিজের মুখে একটু কেক নিয়ে ত্বরিতগতিে বউয়ের অধর আঁকড়ে ধরে। মিরা’র চোখ অটোমেটিক বেশ গোলগোল আকৃতি ধারণ করলো। রিহান সময় নিলো। সময় টা অংক কষার মতো অবস্থায় কেউ রইলো না। ছাড়া পেয়ে মিরা উলটো ঘুরে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে ব্যস্ত হলো। রিহান প্যান্ট এর পকেটে হাত গুঁজে ধপাস করে কাঁচে দেয়ালে ঠেশ দিয়ে দাঁড়ালো। মিনিট তিন এক সময় নিয়ে মিরা নিজে কে শান্ত করলো। তবে ভেতর থেকে পুরোপুরি নয়। রিহান ভাই যে তাকে শান্ত হতে আজ দিবেও না সেটা মিরা ভালো করে বুঝতে পারছে। মিরা শাড়ির আঁচল ঠিক করে রিহান এর দিকে ঘুরে দাঁড়াতে রিহান দেয়ালের ঠেশ ছেড়ে এক ঝটকায় মেয়ে টাকে কোলে তুলে নিলো। মিরা চমকে গিয়ে নিজের এক হাত পুরুষ টার কাঁধে দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে বুকের কাছের ব্লেজার খামচে ধরে। রিহান মিরা’র দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে ধীরপায়ে এগিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো মিরা কে।
মিরা’র সর্বাঙ্গে ঝাঁকুনি খেলো। নরম তুলতে গদিতে একটু ব্যথা পায় না মেয়ে টা। ভীতি নিয়ে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টাকে গায়ের ব্লেজার খুলতে দেখে লজ্জা এসে মুখশ্রী এসে ভর করলো। রিহান ব্লেজার খুলে নিচে ফেলে টাই ইন খুলে শার্ট এর বোতাম অর্ধেক খুলে বিছানা এসে মিরা’র উপর নিজের ভর ছাড়ে। ঘাড়ে হাত রেখে মাথা উঁচু করে নিজের মুখের কাছে নিলো। দুই জোড়া অধরে অধর স্পর্শ করছে এমন অবস্থায় রয়েছে। দু’জনের নিঃশ্বাস এর গতিবিধি শনাক্ত করতে পারছে দু’জন। মিরা আলগোছে নিজের দুই হাতে রিহান এর গলা জড়িয়ে ধরে। রিহান ওর আস্কারা পেয়ে সেকেন্ড সময় অপেক্ষা করলো না। সাথে সাথে বউয়ের অধর মেতে উঠলো। দীর্ঘ এক চুম্বন করে বউ কে ছাড়লো। সাথে নিজের বেহায়া হাতের স্পর্শ চলমান।
মিরা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মেয়ে টা একটুতে হাঁপিয়ে যায়। সামনের পুরুষ টা বুঝতে পারে মেয়ে টা তাকে সামলাতে হিমশিম খায়। কিন্তু এতে যেন পুরুষ টা আনন্দিত হয়। দিগন্ত ঘনিষ্ঠ করলো নিজের সাথে মেয়ে টাকে। গলা মুখ গুঁজে টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। অতঃপর থামলো নিজেই বলে উঠলো,

-“কাছে চাই জান।”

মিরা এমন মাতাল অবস্থায় অবাক হলো। জোরে বেশ কয়েকবার শ্বাস টেনে মিহি স্বরে বললো,

-“কাছেই তো আমি।”

রিহান মিরা’র গলায় মুখ গুঁজা অবস্থায় মাদকাসক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আরো কাছে।”

পরপরই মেয়ে টাকে নিজের শরীরে সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো।

শেষ রাতের দিকে রিহান ক্লান্ত হলো। বউকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। মিরা নাক ঘষে রিহান এর উন্মুক্ত বুকে। রিহান আড়ালে হাসলো। পরক্ষণেই জিজ্ঞেস করলো,

-“খারাপ লাগছে?”

-“বাজে আপনি।”

মিরা মিনমিন করে বলে উঠলো। রিহান বউয়ের মুখ নিজের বুকের উপর থেকে তুলে অধর আঁকড়ে ধরলো। অনেক্ক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে মিরা’র কপালে চুমু খেয়ে শান্ত স্বরে বললো,

-“এটার জন্য তুমি দায়ী। পাগলে করে দিচ্ছিলে।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]