পিঞ্জিরা পর্ব-২৭

0
326

#পিঞ্জিরা
#পর্ব_২৭
#জান্নাত_সুলতানা

শাহনাজ অন্ধকারে এদিক-ওদিক তাকালো। সন্ধ্যা পেরিয়ে অনেক টা রাত হয়েছে। কাজল গ্রামে আছে। দেখা করবে বলেছে। কত দিন পুরুষ টা কে স্বচক্ষে দেখে না। আজ পাঁচ মাস পর দেখবে। কিন্তু এখনো আসছে না দেখে শাহনাজ এর মন টা একটু একটু খারাপ হলো। কিন্তু আসবে শাহনাজ জানে। কাজল যখন একবার আসবে বলেছে তারমানে আসবে। শাহনাজ অস্থির হয়ে বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ঠিক তক্ষুণি কাজল এসে হুট করে ভাউ করে উঠলো। শাহনাজ আকস্মিক ভয়ে চমকে উঠলো। ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে পরে যাচ্ছিল। কিন্তু কাজল ধরে নিলো। বেশ নিকটে চলে এলো দু’জন। কাজল নিজেও বেচারা এখন ঘটনা টায় অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। শাহনাজ এর অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস এর গতিবিধি লক্ষ্য করে কাজল দূরে সরে দাঁড়ালো। শাহনাজ ছাড়া পেয়ে নিজে কে সামলে নিলো।
বহুদিন পর তাদের সাক্ষাৎ। কিছু টা লজ্জা অস্বস্তি হচ্ছে দু’জন এর। জড়তা-সংকোচ ভেঙে শাহনাজ জিজ্ঞেস করলো,

-“কেমন আছেন?”

কাজল দুই হাত ছড়িয়ে দুই দিকে মেলে ধরলো। আকাশ পানে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। এরপর আবার শাহনাজ এর দিকে তাকিয়ে মিহি স্বরে বলে উঠলো,

-“এই মূহুর্তে কেমন আছি বলতে পারছি না। তবে এতোদিন ভালো ছিলাম না।”

শাহনাজ ঠোঁট টিপে হাসে। এরপর চঞ্চল হলো। হাতে ওড়নার কোণ পেঁচাতে পেঁচাতে রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-“আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না?”

-“তুমি ও ভালো ছিলে না।”

অন্ধকারে শাহনাজ এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কাজল। শাহনাজ নাকচ করে কাজল এর জবাব কে। বলে উঠলো,

-“একদম ভুল কথা।
আমি ভালো ছিলাম।”

কাজল অধর এলিয়ে হাসে। মেয়ে টা মজা করছে তার সাথে। শাহনাজ নিজেও হাসে। নীরবতা চলে অনেক সময়। আবছা আলোয়ে তাকিয়ে আছে কাজল শাহনাজ এর মুখের দিকে। শাহনাজ দৃষ্টি নিচের দিকে তবে একটু পর পর তাকাচ্ছে কাজল এর দিকে। চোখে চোখে যেন কথার আদান-প্রদান করছে দুই কপোত-কপোতী। কত দিন মাস পর দেখা। কাজল এগিয়ে এসে শাহনাজ এর ঘোমটা দেওয়া ওড়নার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা কিছু চুল আনমনে গুঁজে দিলো কানের পিঠে। শাহনাজ এর অনুভূতি জাগ্রত হলো। নড়েচড়ে উঠলো মেয়ে টা। কাজল অবশ্য ব্যাপার টা পাত্তা দিলো না। সে শহরে থেকেছে তার কাছে এসব খুব কমন হলেও শাহনাজ গ্রামের মেয়ে। যদিও এখনকার যা যুগ পড়েছে গ্রাম শহর সব মেয়েরাই এসবে পটু। কিন্তু কাজল শাহনাজ কে সবার সাথে তুলনা করে না। সবাই এক নয়। তেমন কাজল ও সবার মতো নয়। সে একটু ভিন্ন রকম। কাজল এর কাছে ভিন্ন। তাই তো মনে ধরেছে। হৃদয়ের গোপনে পৌঁছাতে পেরেছে মেয়ে টা। হৃদয় স্পর্শ করেছে।
কথা হলো দু’জন এর মাঝে। রাত বাড়লো। শাহনাজ ছটফট করে। যাওয়ার কথা এদিকে কাজল ভুলে বসেছে। কথাই বলে যাচ্ছে শুধু। কত কাহিনি। সুইজারল্যান্ড কি করেছে কি হয়েছে। সব। শাহনাজ শুনে। কাজল চুপ করতে শাহনাজ মিনমিন করে বলে,

-“বাড়ি যেতে হবে। বেশি দেরি হলে আম্মা বকবে।”

কাজল এর হঠাৎ মনে হলো সত্যি। অনেক রাত হয়েছে। তবুও সে কথার প্রসঙ্গ পালটে বললো,

-“রিহান সুস্থ হলে বাবা কে নিয়ে তোমাদের বাড়িতে যাব।”

-“আম্মা কাল জিজ্ঞেস করেছিলো এব্যাপারে।”

শাহনাজ জানালো।
কাজল ঘাড় নাড়ে। বলে,

-“বলে দিও তুমি। এখন বাড়ি যাও।”

শাহনাজ মাথা দুলিয়ে আচ্ছা বলে হাঁটা ধরে। দুই কদম এগুতে কাজল পেছন থেকে ফের ডেকে উঠলো,

-“শোনো!”

শাহনাজ অবাক হলো। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা কিছু আছে কাজল এর হাতে। কাজল একটু এগিয়ে এসে শাহনাজ এর হাতে দিলো সেটা। একটা ফুল। আচমকাই বলে উঠলো,

-“ভালোবাসি শাহনাজ।”

এরপর মুচকি হেঁসে সামন চলে গেলো। অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো পুরুষ টা। শাহনাজ বিস্ময় নিয়ে তখনো দাঁড়িয়ে আছে। মিনিটখানেক সময় পর ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি এক হাসির রেখে ফুটে। ফুল টা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকে। এরপর মুখে মুচকি হাসি নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো

——-

রাতে ঘুম ভেঙ্গে মিরা দেখলো রিহান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হলো। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে উঠে বসে চোখ কচলে দেয়াল ঘড়ি দেখলো। রাত তখন দুই টার কোঠায় পৌঁছেছে। রিহান তখনো ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-“আপনি জেগে আছেন কেনো রিহান,,,

কথার মাঝে হঠাৎ করে মিরা থামলো। অসহায় বোধ করলো নিজে কে। ভাগ্য ভালো ভাই টা বলতে গিয়ে বলে নি। সন্ধ্যায় যা ধমক দিয়েছে রিহান। এখন আর সাহসে কুলোয় নি ভাই বলতে। রিহান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। সন্ধ্যার ঔষধ তবে কাজে দিয়েছে।
মিরা আবার জিজ্ঞেস করে,

-“আপনি এভাবে জেগে আছেন? ঘুমানো উচিৎ আপনার। শরীর খারাপ করবে।”

-“করবে না।”

বলে পা একটু এগিয়ে এলো মিরা’র দিকে। শোয়া থেকে টেনে নিজের পাশে শুইয়ে দিলো মেয়ে টাকে। আচমকাই এমন ঘটনায় মিরা চমকে উঠলো। শোয়া মাত্র অস্থির হলো মেয়ে টা। তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করে বলে উঠলো,

-“কি করছেন আপনি? পায়ে লেগে যাবে। শুনুন!”

রিহান শুনলে তো। টেনে ধরে রাখে। বুকে ভারী বস্তুর চাপ যেন না পরে ডক্টর সতর্ক করে দিয়েছে। রিহান বাহুর উপর নিলো মিরা কে।
মিরা চুপ করে শান্ত হয়ে পড়ে থাকে সেভাবে। এখন এটা ছাড়া আর কিছু করলে যে রিহান আর ধস্তাধস্তি করবে মিরা ভালো করে জানে। আর জোর খাটালে পায়ে বা বুকে আঘাত লাগতে পারে যেটা মিরা একদম চাইছে না।
রিহান নিজে ও চুপচাপ। শুধু একে-অপরের নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে পাচ্ছে। রিহান অনেক সময় পর বলে উঠলো,

-“তুমি নিঃসন্দেহে একজন সুন্দরী। আমার সুন্দরী বউ।”

মিরা’র হৃদপিণ্ড হঠাৎ ত্বরিতে ছুটছে মেয়ে টা উপলব্ধি করলো। হৃদয়ে ভালো লাগায় দুলিয়ে উঠলো। কথা ফুঁড়িয়েছে মেয়ে টার। গলা দিয়ে শব্দ যেন বেরুতে চায় না। পুরুষ টা তার প্রশংসা করছে। যার মুখে দিয়ে আজ পর্যন্ত ভালোবাসার কথা বেরুলো না। তার মুখে প্রশংসা মিরা একটু না অনেক টা অবাক হয়েছে। লাগামহীন কাজকর্ম পুরুষ টা প্রায়ই করে। অন্তরে ভালোবাসা পুরুষ টার মিরা’র জন্য আকাশসম পুষে। কিন্তু মুখে তার বিশ। সারাক্ষণ গম্ভীর। মিরা আজো ভেবে পায় না এই পুরুষ টাকে সে ভালো কি করে বেসে ফেললো। মিরা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার হঠাৎ করে কেমন অস্থির লাগছে। মিনমিন শব্দ উচ্চারণ করলো,

-“আপনার তুলনায় তুচ্ছ শেখ সাহেব।”

রিহান হেঁসে উঠলো। আচমকাই নিস্তব্ধ রাতে হাসি শব্দ ঝংকার তুললো। মিরা’র কানে বাজে সেই হাসি। অবাক হয়। রাতের স্বল্প অন্ধকারে দারুণ সেই হাসি মিরা’র চোখে বড়োই চমৎকার দেখালো। চিকচিক করে চোখ। রিহান হঠাৎ গম্ভীর হলো আগের ন্যায়। স্বভাবসুলভ মুখের ভাবভঙ্গি পূর্বের ন্যায় গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“ভার্সিটিতে যে বাংলা এসছে তোমার। ভর্তির জন্য যাবে কাল। সময় সীমিত।”

মিরা’র মনঃক্ষুণ্ন হলো। এমন রোমান্টিক মূহুর্তে সে এসব কথা মোটেও আশা করে নি। ইচ্ছে ও নাই এসব নিয়ে আপাতত ডিসকাস করার।
প্রসঙ্গ পালটে অদ্ভুত কাজ করলো। রিহান এর বুকের কাছের টি-শার্ট সরিয়ে অধর স্পর্শ করতে রিহান মেয়ে টাকে এক হাতে চেপে ধরলো। নিজের দখলে নিলো পুরো টা। বউ কে সে খুব ভালো করে চিনে। বউ তার লেখা পড়া নিয়ে ফাঁকিবাজি করে। অমনোযোগী। কিন্তু এমন টা হলে হবে না। রিহান চায় মিরা নিজে কিছু করুক। আর এতে সে নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করবে।
তবে আপাতত সে ও এসব আর কিছু বললো না। মিরা’র একটু আগে মুখে না বলা ইচ্ছে পূরণ করতে ব্যস্ত হলো।

#চলবে…..