#পিঞ্জিরা
#পর্ব_২৮
#জান্নাত_সুলতানা
রিহান অসুস্থ তারপরও এতোদিন যাবত ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ তারপর ভিডিও কলে মিটিং কোনো টাই বাদ দেয় নি সে। এটার চেয়েও বড় কথা যখন সে এ-সব করে তখন মিরা কে রুম থেকে বেড় করে দেয়। কিংবা হঠাৎ করে মিরা চলে এলেও কেমন রেগে ধমক দেয়। এই সামন্য কারণে কেনো রিহান তাকে ধমকায় বা রেগে যায় মিরা বুঝতে পারে না।
এটা নিয়ে আজ দুপুর থেকে মন টা বড্ড খারাপ সাথে চিন্তায় আছে। রুমে ও যায় নি। রিহান ব্যালকনিতে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে সে একবার উঁকি দিয়ে দেখে এসছে।
মিরা লিভিং রুমে সোফায় বসে ভাবনায় মগ্ন। রোকেয়া আজ সপ্তাহ খানিক আগে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। স্কুল যেতে হয়। মায়ের স্কুল এর কথা মাথায় আসতে মিরা’র নিজের পড়ালেখার কথা মনে পড়লো। মায়ের শরীর দাদির শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। মিরা কি মনে করে উঠে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। বইখাতা বের করে লিভিং রুমে এসে সোফায় পড়তে বসলো। বেরিয়ে আসার সময় অবশ্য রিহান ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিলো। মিরা ভাবলো হয়তো রুমে এসছে সেইজন্য এমন ভাবে তাকিয়েছে। এটা ভেবে আরো কান্না পায় মেয়ে টার। তবে মন শক্ত করে অনেক সময় পড়লো। দু’দিন আগে কাজল ওকে ভর্তি করে দিয়েছে।
আর গতকাল সে ঢাকা ফিরেছে। কারণ আগামীকাল তারা শাহনাজ এর বাড়িতে আসবে।
মিরা ভাবলো আজ রাতে রিহান এর সাথে কথা বলবে। কেনো হঠাৎ এমন ব্যবহার করছে বুঝতে পারছে না।
আষাঢ় যখন এসব ভাবছিল তখন শিশির এলো। দুপুরে খেতে আসে নি। মিরা শিশির কে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলো। শিশির অবশ্য বললো কাজের মহিলা কে বলবে। কিন্তু মিরা’র এটা ভালো লাগে নি। মেহমান শিশির এ বাড়ির। তার যত্ন-আত্তি করা দায়িত্ব তার। শিশির কে বসিয়ে খাবার আনতে গেলো মিরা। এরপর শিশির কে খেতে দিয়ে পাশে বসলো। শিশির খাবার খেতে লাগলো। মিরা কিছু সময় চুপ থেকে হঠাৎ বললো,
-“ইফাদ ভাইয়া কাল রাত থেকে খাবার খাচ্ছে না।”
শিশির এর হাত মুখ সব থেমে গেলো। স্থির হয়ে বসে রইলো। মিনিটখানেক সময় পর উঠে হনহনিয়ে উপরে গেলো। মিরা পেছন থেকে ডাকলেও শুনলো না।
মিরা নিচে অস্থির হয়ে পায়চারি করতে লাগলো। তার ঠিক কয়েক মিনিট পর মিরা হতভম্ব হয়ে গেলো। শিশির ইফাদ এক সাথে আসছে।
দু’জনে কে দেখে মিরা স্বস্তি পায়। শিশির যা রাগী কোনো অঘটন ঘটায় নি এটা ভেবে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এরপর দু’জন কে খেতে দিলো।
——–
রাতে খাবার শেষ মিরা অনেক রাতে রুমে ফিরলো। রিহান তখনও ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। মিরা একবার দেখে আলগোছে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাতের পোশাক বদলে এসে কোনো শব্দ না করে সাবধানে গিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো।
চোখের কোঠায় চিকচিক করে জল। বিড়বিড় করে আনমনে বলে উঠলো,
-“কাঙ্খিত জিনিস পাওয়ার পর মানুষ সেটার কদর করতে ভুলে যায়।”
এরপর চোখ বন্ধ করে নিলো। মনে মনে ঠিক করলো এখন থেকে এ-সব নিয়ে মন খারাপ করবে না। পড়ালেখায় ফোকাস করবে। মায়ের জন্য দাদীর জন্য সে কিছু করবে। মা কে বেশি আর কষ্ট করতে দিবে না। এ-সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মেয়ে টা। তবে শরীরে জড়ানোর পোশাক এর মাঝের খণ্ডিত অংশ ভেদ করে পেটের উপর শীতল হাতের স্পর্শ পেতে তন্দ্রা ছুটে গেলো। ঘাড়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস আর গায়ে অল্পস্বল্প ভার অনুভব করে মেয়ে টার বুঝতে বেগ পেতে হলো না এটা যে নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামী। মিরা রিহান এর স্পর্শে সায় দিলো। রিহান ধীরে ধীরে বউ কে নিজের আয়ত্তে নিলো। নিজের সব টা দিয়ে বউ কে ভালোবাসে। রাতের শেষ প্রহরে মিরা শাওয়ার শেষ যখন বেরিয়ে এলো রিহান চাইলো ওর চুল গুলো মুছে দিতে। কিন্তু মিরা দিলো না। তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠলো,
-“আপনার যা চাই তা তো পাচ্ছেন। এর বেশি কিছু করতে হবে না আপনার।”
রিহান হতভম্ব। কি থেকে কি বললো মেয়ে টা কিছু ই আগামাথা বুঝে আসে না। মিরা মনপ্রাণ দিয়ে চাইছিলো সব সময় এর মতো এক ধমক দিয়ে রিহান ভাই তার থেকে টাওয়াল নিয়ে যত্ন করে চুল মুছে দিক। কিন্তু এমন কিছু ই হলো না। মিরা’র মন যাতে আরো ব্যাতিত হলো। চোখ জ্বলে। কান্না পায়। মিরা নিজে ই চুল মুছে টাওয়াল রেখে এলো। এরপর বিছানায় এসে রিহান কে বললো,
-“শুয়ে পড়ুন। আবার কাল কাজ করতে হবে তো।”
মিরা ভেবেছিলো রিহান হয়তো এই কথা গুলো শুনে রেগে যাবে। মিরা কে ধমক দিবে। কিন্তু এবারও তেমন কিছু ই হলো না। রিহান শুয়ে পড়লো পাশ ফিরে।
মিরা’র কান্না গুলো গলায় আঁটকে শ্বাসরুদ্ধ হলো। মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে রাখলো।
——-
শাহনাজদের বাড়ি খুব বেশি বড় নয়। রাস্তার সাথে ই পাকা একতলা দালান। জায়গায় খুব স্বল্প। একটা রুমে কাজলদের বসতে দেওয়া হয়েছে। শাহনাজ কে আতিক চৌধুরী আর কারিরা বেগম দেখতে এসছে আজ। শাহনাজ কে তাদের পছন্দ হয়েছে। তবে পরিবেশ আর ভাই নেই তারউপর আতিক চৌধুরীর তুলনায় সামন্য অর্থসম্পদ তাদের। ডাকনাম সব দিক দিয়ে ভাবনা চিন্তা করলে শাহনাজ কে কোনো ভাবে আতিক চৌধুরীর পছন্দ হওয়ার কথা নয়। তবে ওই যে ছেলে। ছেলের ভালোবাসা। তার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছে। তবে বিয়ে টা ঘরোয়া ভাবে আজ ই দিতে চান তিনি।
এতে অবশ্য কারোর সমস্যা নেই। শুধু শাহনাজ এর মায়ের একটু চাপ হয়ে গেলো। স্বামী নেই বাড়িতে। পুরুষ বলতে নিজের ওই চাচাতো বোনের জামাই আর তার ছেলে কিছু দিন আগে বিদেশ থেকে ফিরেছে সে এসছে। আর পাশের বাড়ির কয়েকজন মুরব্বি।
রাতে বিয়ে পড়ানো হবে।
শাহনাজ কে একটা রুমে সাজাচ্ছে শিশির ঈশিতা। মিরা বসে আছে একপাশে। এসবে তার মন নেই। মন তার উদাসীন। সে আজ সকালে বাড়ি থেকে বেরুনোর পর আর একবার ও রিহান এর সাথে কথা বলে নি। দেখা হয়েছে। চোখাচোখি হয়েছে। তবে এতো মানুষের ভীড়ে রিহান মিরা কে একবার এর জন্য ও নিজের কাছে পায় নি। মূলত মিরা নিজেই যায় নি। দূরে দূরে রয়েছে। এরমধ্যে একটা মেয়ে এসে বলে গেলো রোকেয়া বেগম তাকে ডাকছে বাড়ি যেতে। মিরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ি যেতে ই দেখলো পুরো বাড়ি অন্ধকার। এখন সন্ধ্যার একটু পর। বাড়িতে কেউ নেই। মিরা’র এটা দেখে রাগ লাগলো। সে এতোটাই ভাবনায় মগ্ন ছিলো রিহান কে নিয়ে যে বাড়িতে কেউ নেই এটাও ভুলে গিয়েছিলো।
কিন্তু মেয়ে টা তাকে মিথ্যা কথা কেনো বললো ভেবে পেলো না মিরা। উঠোনের শেষপ্রান্তে গিয়ে টিনের গেইট খুলে বেরুতে নিলে একটা হাতের স্পর্শ পেলো কোমড়ে। জামার উপর দিয়ে ই কেউ পেট বরাবর কোমড় স্পর্শ করেছে। ভয়ে জমে গেলো মেয়ে টা। গা ঘিনঘিন করে। মূহুর্তের মধ্যে মিরা ঝটকায় মেরে হাত টা সরিয়ে দিলো। আবছা আলোয়ে একটা পুরুষালী অবয়ব দেখতে পেয়ে কঠিন স্বরে বলে উঠলো,
-“শিক্ষার অভাব রয়েছে? এভাবে কোনো মেয়ে কে টাচ করার সাহস কোথায় পান? কে আপনি? বাড়ির ভেতর কি করে প্রবেশ করলেন?”
বলতে বলতে মিরা গেইট এর বাহিরে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালো। ছেলে টা কিছু বলতে যাচ্ছিল। তবে তার আগে ই সেখানে এসে উপস্থিত হলো রিহান। সে অনেক টা জোরে জোরে শ্বাস টানছে। মিরা কে দেখে কোনো কথা না বলে টেনে নিজের সাথে চেপে ধরলো। আর গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“এটা ইরফান। শাহনাজ এর খালাতো ভাই। তুমি চিনবে না। ওহ হ্যাঁ শালা বাবু এটা আমার বউ আপনার বোন।”
শেষ এর কথা টা দাঁত কিড়মিড় করে বলে। মিরা হঠাৎ রিহান এর এরূপ ব্যবহারে কিছু ই বুঝতে পারে না।
ওদিকে অন্ধকারের মাঝে-ও ছেলে টার মুখ দেখতে না পেলে ও মিরা ঠিকই বুঝতে সক্ষম হলো ছেলে টা মিরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]