#পিঞ্জিরা
#পর্ব_২৯
#জান্নাত_সুলতানা
মিরা রিহান কে জড়িয়ে ধরে সমান তালে কেঁদে ই যাচ্ছে। বেচারি ভয় পেয়েছিলো। স্বামী ব্যতিত পরপুরুষ এর এমন বাজে স্পর্শ নিজের শরীরে মেনে নিতে পারছে না মেয়ে টা। রিহান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিরা তাকে জড়িয়ে ধরে রাখলে ও সে মূর্তির ন্যায় একদম সোজা। দুই হাত সে মুঠো করে রেখেছে। রাগে তার সব কিছু তচনচ করে দিতে ইচ্ছে করছে সব। শুধু বিয়ে একটু পর সেইজন্য কিছু করতে পারছে না।
মিরা হঠাৎ কান্না বন্ধ করে রিহান কে ছেড়ে দিয়ে রিহান এর দিকে একবার অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। রিহান পাশে একটা গাছে লাত্থি মারে। সে কত টা ভয়ংকর হতে পারে এই রমণীর জন্য আতিক চৌধুরীর কোনো ধারণা হয়তো এখনো হয় নি।
এরপর রিহান দ্রুত কদম ফেলে মসজিদের দিকে গেলো। আতিক চৌধুরী ওইদিক থেকে আসছিলো। সাথে উনার এসিস্ট্যান্ট। রিহান হাতে ইশারা করতে ছেলে টা চলে গেলো। আতিক চৌধুরী বুঝে গেলেন উনার হাতে আর কিছু নেই। রিহান সব নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে। রিহান খুব শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“ইরফান কে আপনি কেনো এনেছেন মিস্টার চৌধুরী?”
রিহান এর কণ্ঠ স্বর খুব শান্ত। কিন্তু আতিক চৌধুরীর কাছে বড্ড অশান্ত আর অস্বাভাবিক শোনালো। তবে বিশেষ পাত্তা দিলো না। তিনি নিজে ও খুব স্বাভাবিক ভাবে সিগারেট বের করে পকেট থেকে এরপর সেটা দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিয়ে টানতে লাগলেন। রিহান এর রাগের চোটে চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠোবন্দী করে দাঁড়িয়ে আছে। তার জীবনে এমন জঘন্য একটা অধ্যায় আসবে সে কখনো ভাবে নি।
রিহান খুব বিচক্ষণ। আতিক চৌধুরী এইজন্যই হাতে হাতে রেখে আসছে রিহান কে। কিন্তু ইদানীং বিগড়ে যাচ্ছিলো ছেলে টা। মিরা কে ভালোবেসে ছেলে টা এই এক বছরে খুব বেশি ই ওনার লস করিয়েছে। তবুও তিনি চুপচাপ সব হজম করছে। কারণ একটাই। নিজের হাতে রাখতে হবে রিহান কে। নয়তো বিরাট লস হবে ওনার। কিন্তু রিহান যেনো দিন কি দিন বদলে যাচ্ছে। তার পিঠ পিছে অনেক টাই নিজের শক্ত একটা স্থান তৈরী করে নিয়েছে।
এতে তিনি ক্ষিপ্ত। ক্রোধিত। তবুও শান্ত রাখতে চাইছে নিজে কে।
আর করলেন ও তাই। বললো,
-“শেখ সাহেব রিলাক্স। আপনার স্ত্রী, আম্মা, দাদী রয়েছে এখানে। কেউ যদি সব শুনে ফে,,,,”
রিহান আতিক চৌধুরী কে থামিয়ে দিলো। ভুল সে একবার করেছে আর না। সে মরতে মরতে দুই বার ফিরে এসছে। কিন্তু সে পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু এখন তো তার বউ কে টানা হচ্ছে। সে এবার এর একটা হেস্তনেস্ত করে তবে ই ছাড়বে। হয় সে এই পথ ছাড়বে না হয় একবারে আঁকড়ে ধরবে সেই বিপজ্জনক রাস্তা।
রিহান মাথা দুলাল। আতিক চৌধুরী ঘাবড়ে গেলেন। তিনি জানে রিহান এর এই ঘাড় নাড়ার স্টাইল যে সাধারণ কোনো ইংগিত নয়। রিহান ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। ডান হাত উঁচু তার। আতিক চৌধুরী কে কথা বলতে নিষেধ করেছে। সেই হাত টা নামিয়ে নিলো। মাথা নাড়তে নাড়তে বলে উঠলো,
-“খুব বড়ো ভুল করলেন আপনি। আপনি এখন থেকে দেখবেন নিজের হাতে তৈরী করা পুতুল টা এখন থেকে কিভাবে আপনাকে নাচায়।”
বলেই রিহান এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না। এক হাত প্যান্ট এর পকেটে ঢুকিয়ে সোজা বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
আতিক চৌধুরী পেছন দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলেন। সে ভাবে নি রিহান এতো দ্রুত নিজের ভালো টা বুঝে যাবে।
কিন্তু ছেলে টার ব্যাক্তিত্বের প্রসংশা না করলে নয়। যেমন তার কথাবার্তা তেমন তার চলাফেরার স্টাইল সাথে বুদ্ধির তারিফ না করলেই নয়। তার ডুবন্ত বিজনেস কিভাবে দাঁড় করিয়াছে পুনরায়। এটার আশা তো তিনি ছেড়ে ই দিয়ে ছিলেন। তবে রিহান কিভাবে আবার সব ঠিক করে দিলো। কিন্তু মাঝে ছেলে টা দুই দুই বার মরতে মরতে বেঁচে এসছে। কিন্তু এতে তো তার কোনো দোষ নেই। রিহান নিজে ই এতো টা দ্রুত এগিয়েছে নিজের সাফল্যের দিকে যে এখন তার জীবন নিয়ে টানাটানি পড়লো। সেক্ষেত্রে হঠাৎ সব কিছু ছাড়তে গেলে ঝামেলা তো হবে ই। এখন না আছে পিছু ফিরে আসার আর না পারছে বেচারা সামনে যেতে।
কিন্তু তিনি নিজের লস কিছুতেই করবে না। রিহান কে সে নিজের হাতে তৈরী করেছে আর নিজের মতো করে ই রাখবে। আদৌও তিনি এতে আগের মতো সফল হবে কি না জানে না। আতিক চৌধুরী মুচকি হাসলেন। রিহান কে তিনি কিছুতেই হাত ছাড়া করবেন না। এরজন্য যা করতে হয় তিনি তাই করবেন।
——-
মিরা কে রিহান এরপর পুরো টা সময় নজরে নজরে রাখলো। ইরফান এর সাথে মিরা’র বিয়ের কথা বলেছিলো শাহনাজ এর মা। রিহান সে খবর ও জানে। ছেলে টা সুবিধার না। রিহান রাগে ফেটে পড়ছে ভেতরে ভেতরে। যখন মিরা ওকে ধরে কান্না করছিলো ইরফান ওকে নোংরা ভাবে টাচ করেছে সেইজন্য রিহান তখন থেকে শুধু দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে।
শাহনাজ আর কাজল এর বিয়ে খুব ভালো করে মিটলো। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ রাত নয় টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলো চৌধুরী পরিবার। শেখ বাড়ির তারা ও ফিরে গিয়েছে। শাহনাজ এর মায়ের সাথে উনার চাচাতো বোন থাকবে। কাল তারা সবাই ঢাকা যাবে।
——–
শাহনাজ চৌধুরী বাড়ি দেখে বিস্ময় কিছু কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে গেলো। এতো বড় বাড়ি আর এতো গার্ড। শাহনাজ ভয়ে শিশির এর হাত জড়িয়ে ধরে আছে। কারিরা বেগম ছেলের বউয়ের মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। ও বাড়িতে শাহনাজ কাঁদতে কাঁদতে বেহাল অবস্থা করে ফেলেছিলো নিজের। খাবার খেতে পারে নি। কারিরা বেগম সব টা নজরে রেখেছিলেন। তাকে এতো টা আদর করতে দেখে এতে শাহনাজ অনেক টা অকোয়ার্ড ফিল করলে ও বেচারি এটা ভেবে ভালো লাগছে এতো সুন্দর মনের মানুষ গুলো সে নিজের জীবনে পেয়েছে।
রাতে সাড়ে বারো টার দিকে শাহনাজ কে বিয়ের সাজেই শিশির কাজল এর রুমে রেখে গেলো।
কাজল রুমে বসে ছিলো। শিশির যেতেই ওর হাতে একটা শাড়ী দিয়ে বলে উঠলো,
-“ফ্রেশ হয়ে এসো। ওই দিকে ওয়াশ রুম। কিছু প্রয়োজন হলে ডেকো। যাও।”
শাহনাজ মাথা নেড়ে চলে গেলো। সাত আট মিনিট এর মধ্যে মেয়ে টা বেরিয়ে এলো। খুব সুন্দর করে শাড়ীতে ডেকেছে নিজে কে। শাহনাজ লজ্জা পাচ্ছে। কাজল মিটমিট হাসে। এতে বেচারি আরো লজ্জায় পড়ে। আর নিজের লজ্জা রাঙা মুখ লুকাতে আশ্রয় হিসেবে কাজল কে জড়িয়ে ধরলো। কাজল হাসতে লাগলো। অনেক সময় পর কাজল শাহনাজ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কপালে চুমু খেলো। মোলায়েম স্বরে বললো,
-“চলো ঘুমিয়ে পড়ি। ক্লান্ত তুমি।”
শাহনাজ এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো। তাকে মিরা’র দাদি আজ অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন তো ব্যাপার উলটো বেচারি কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই চুপ রইলো। কাজল নিজের পকেট থেকে একটা রিং বেড় করলো। চকচক করে সেটা। ডায়মন্ড দেখে ই বোঝা যাচ্ছে। শাহনাজ এর হাত টেনে সামনে নিলো। এরপর সেটা হাতে পড়িয়ে দিলো। কিছু টা ঝুঁকে শাহনাজ এর হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলো। এরপর বলে উঠলো,
-“ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে পেতে ভাগ্য লাগে। আর আমি ও ভাগ্যবান।”
শাহনাজ মুগ্ধ হলো। নিজে ও জড়তা ঠেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কাজল কে। বুক ভরে প্রশান্তির নিঃশ্বাস টানে। সে নিজে ও ভাগ্যবতী।
——
রিহান এর খোঁজ নেই। রাত বাজে একটা। মিরা চিন্তায় অস্থির। বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মিরা ভাবলো একবার রেহনুমা বেগম কে ডাকবে। কিন্তু পরক্ষণেই দরজায় কলিং বেল বাজে। মিরা দ্রুত গেলো। দরজা খুলে দেখলো রিহান। তবে প্রথমে খুশি হলে-ও রিহান শরীর এর অবস্থা দেখে চমকে উঠলো। এই শীতে পুরুষ টা ঘামে ভিজে জবুথুবু হয়ে আছে।
মিরা কিছু বুঝে উঠার আগেই রিহান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আচমকা। এরপর ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-“ওর সাহস বেশি ছিলো। একটু কমিয়ে দিলাম তাই।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]