#পিঞ্জিরা
#পর্ব_৩০
#জান্নাত_সুলতানা
[রোমান্টিক পর্ব পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
মিরা শরীর কাঁপছে। ভয়ে মেয়ে টার শরীর এর বল ছেড়ে দিলো। রিহান বউয়ের অবস্থা বেগতিক দেখে ঝট করে বউ কে কোলে তুলে নিলো। একজন বুয়া তাদের থেকে বেশ অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। রিহান সেদিকে একবার তাকালো না পর্যন্ত। বউ নিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। পেছনে বুয়া দরজা বন্ধ করলো।
রুমের সামনে এসে রিহান পা দিয়ে দরজা ফাঁকা করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো। এরপর মিরা কে নিয়ে সোফায় বসলো। মিরা তখন ও রিহান এর গলা জড়িয়ে ধরে।
খুব বেশি পরিশ্রম করলেই শরীর থেকে এমন ঘাম ঝরাড় কথা। অন্যথায় এমন নভেম্বর মাসে ও পুরুষ টা জুবুথুবু হয়ে এলো কোত্থেকে? তারউপর তখন এর কথার অর্থ বুঝে না মেয়ে টা। কিন্তু একটু হলে-ও আন্দাজ করতে পারছে ইরফান এর কথাই বলেছিলো রিহান।
মিরা রিহান এর গালে হাত রাখে। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“আপনি ইরফান কে মেরেছেন?”
রিহান শুধু অল্প করে অধর বাঁকিয়ে হাসলো। এরপর মিরা’র অধরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এমনিতেই ভয়ে ছিলো মিরা। তারমধ্যে পুরুষ টার এমন উন্মাদনায় অনেক টা অপ্রস্তুত হলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই রিহান নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। মিরা মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ পেলে না। কিন্তু অভিমান মনে পাহাড় সমান। এই কয় দিনে অনেক বেশি ইগনোর করেছে রিহান তাকে। দিনে যেমন-তেমন রাতে সে এক রত্তির ছাড় দিতো না নিজের অধিকার খাটাতে। নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে তবে ক্ষান্ত হতো। মিরা এখন অনেক টাই অবাক হয়। রিহান শেখ আগে থেকে এমন ছিলো না-কি বদলে গিয়েছে। না-কি সে পুরুষ টাকে চিনতে ভুল করলো! এর উত্তর যেন এই ক’দিন রিহান নিজের ব্যবহার এর মধ্যে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মিরা চায় এগুলো একটা ও সত্যি না হোক। স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন হোক।
পুরুষ টা শুধু তাকে ভালোবাসুক। আগের মতো এমন ভোলাভালা হয়ে সব সময় মিরা কে আগলে রাখুক।
গুন্ডামী করে না।
চোখের কাজল গায়ের শাড়ী শক্ত করে বেঁধে বন্দী করে রাখা লম্বা চুল সব টা ই এলোমেলো করে দিয়ে পুরুষ টা নিঃশব্দে বউ কে কোলে তুলে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। গত কয়েকদিন আগের সব কিছু মিরা’র স্মৃতিতে হালকা হলো।
হয়তো ভুলে ও যাবে। সত্যি কি ভুলে যাবে!
——–
-“এসব কোন ধরণের পাগলামি ইফাদ ভাই? আপনি আবার কেনো ঢাকা এসছেন? আর আবার কি নাটক শুরু করেছেন এসব?”
ইফাদ ছাঁদের একদম কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দুই দিকে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। একটু এদিক-ওদিক হলেই তিন তলা থেকে সোজা নিজে জমিনে। শিশির এর ভয় লাগছে। বুকের ভেতর দুরদুর করছে। কিন্তু তবুও মুখের ভাবভঙ্গি এমন করে রেখেছে যেনো সে ভীষণ বিরক্ত ইফাদ এর এসব কর্মকান্ডে। একটু আগে শিশির নিজের ল্যাপটপে কিছু করছিলো। আর তখনই ইফাদ ম্যাসেজ করে ওকে ছাঁদে ঢেকেছিল। কিন্তু শিশির তো আসার পাত্রী নয়। তাই তো সুইসাইড করার হুমকি দিয়েছে। তবেই না রমণীর মন নরম হলো।
ইফাদ মলিন হাসে। এক মাসের বেশি সময় হতে চললো আজও শিশির ওর প্রতি একটু ও মায়া দেখালো না। এমন ভোলাভালা মেয়ে টা কিভাবে এতো কঠোর হয়ে গেলো ইফাদ ভেবে ভেবে হয়রান। ইফাদ আস্তে করে সেখান থেকে সরে এলো। রাত বাজে দুই টা। ছাঁদে লাইট এর আলোয়ে আলোকিত হয়ে আছে। সব কিছু স্পষ্ট। শিশির ইফাদ কে কার্নিশ থেকে সরে আসতে দেখে আঁটকে রাখা নিঃশ্বাস টা ছাড়লো। ইফাদ ধীরপায়ে এসে ঠিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিশির এর মুখের দিকে। শিশির এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকায়। সে কিছুতেই নিজে কে ইফাদ এর প্রতি দুর্বল দেখাতে চায় না। তাই বিরক্তিকর মুখে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু ইফাদ ওকে আটকে দিলো। দুই হাতে মেয়ে টার কোমড় জড়িয়ে ধরলো আচমকাই। শিশির এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। মোচড়ামুচড়ি করে ছোটার চেষ্টা করতে ই ইফাদ হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় করলো। একে-অপরের শরীর ছুঁই ছুঁই করছে। ইফাদ এর উষ্ণ নিঃশ্বাস শিশির এর চোখ-মুখে পড়ছে। শিশির তবুও দমার নয়। সে ভেতর ভেতর এলোমেলো হলে-ও উপ-রে ঠিকই নিজে কে শক্ত রাখলো। ইফাদ মেয়ে টার কানের পাশ দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে গলায় এসে থামলো। শিশির এর ঘামে ভেজা চিকচিক করতে থাকা গলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বেশ শান্ত স্বরে বললো,
-“তোর এই গলা টা না! এটা যখন ঘামে ভিজে উঠে। আমার দুনিয়া এখানে এসে থমকে যায়। তোর এই লোভনীয় ঘামে ভেজা গলা টা দেখার জন্য হলে-ও আমার তোকে চাই।”
শিশির মূহুর্তে চমকে উঠলো। ঝটফট হাত দিয়ে চেক করলো গলা। সত্যি ঘামে ভেজা। ইফাদ ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালো। ট্রাউজার এর পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। আগে পুরুষ টা বাড়িতে সারাক্ষণ থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ঘুরঘুর করতো। চরিত্রের সাথে মিলতো। কেমন প্লেবয় টাইপ একটা ভাবসাব বহন করতো পুরুষ টার পোশাকআশাক। যেটা ইদানীং করে না। লম্বা ট্রাউজার টি-শার্ট পড়ার পর অসাধারণ লাগে পুরুষ টাকে। আগে থেকে অনেক টা চেঞ্জ হয়েছে। গম্ভীর থাকে। কথাবার্তা তেমন হেয়ালি করে না। আগে ক্লিন শেইভ করতো এখন গালে দাঁড়ি আছে খোঁচা খোঁচা। শিশির এর মাথা ভোঁ ভোঁ করে। সে শরীর এর তাল ঠিক রাখতে পারে না। কেনো জানি পা গুলো অবশ হয়ে আসে। পরে যেতে নিলেই ইফাদ ওকে আবার ধরে নিলো। বাঁকা হেঁসে মেয়ে টার কপালে টোকা লাগালো। এরপর বলে উঠলো,
-“তুই কি ভেবেছিস আমি মরতে এসছি? একদম না। তোকে এমনিতে তো কথা বলার জন্য পাওয়া খুব কঠিন। সেইজন্য শান্ত রেখে কথা বলার জন্য এই পদ্ধতি। যা-ই হোক। আমার ফোন চেক করেছিলি তুই সেদিন। যেটা করা মোটও ঠিক হয় নি। এটলিস্ট ভালোবাসলে বিশ্বাস টা অন্তত জরুরি। এখন তোর তো আমার উপর বিশ্বাস নেই। ভুল তো ঠিকই বুঝে নিলি। এখন আমায় তোর ভুল টা ভাঙতে হবে। কাল সত্যি টা জেনে যাবি।”
ইফাদ এর কথার আগামাথা শিশির কিছু ই বুঝতে পারে না। ইফাদ ওকে নিয়ে ই নিচে এলো। রুমে দিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে গেলো। আর শিশির ঘোর থেকে বেরিয়ে রিহান কে ম্যাসেজ লাগালো।
——–
-“কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
মিরা বিছানা ছেড়ে উঠার জন্য উদ্যত হতেই রিহান পেছন থেকে প্রশ্নো টা করে উঠলো। মিরা’র কেনো জানি সকাল থেকে অস্থির লাগছে। কিছু সময় এর জন্য পুরুষ টার ভালোবাসায় মাথা থেকে আগের ঘটনা গুলো চাপা পরে গিয়েছিল। তবে ঘুমুতে গিয়ে কেনো জানি মন টা বড্ড অস্থির হচ্ছে। তাই তো না ঘুমিয়ে রিহান এর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতো সময়। ঘড়ির কাঁটায় আটটার ঘরে পৌঁছাতে উঠে বসলো। মিরা বিছানায় বসা তখন। রিহান এক টানে বউ কে নিজের উপর নিলো। কম্ফোর্টার দিয়ে দু’জন কে মুড়িয়ে নিলো। মিরা’র আমতা আমতা করে। সেভাবে চুপটি করে পড়ে রইলো। এরপর হঠাৎ অধর কাঁপতে লাগলো। ঠান্ডা বাহিরে। মিরা দুই ঠোঁট এক সাথে কাঁপছে। তাই কথা টা ভেঙে ভেঙে এলো।
-“নিচ নিচে।”
রিহান এর গম্ভীর মুখ। বউ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরো নিজের নিকটে টানে। পেছন থেকে গলায় মুখ গুঁজে বলে উঠলো,
-“যেতে হবে না।”
মিরা টুঁশব্দ করলো না। এভাবে অনেক সময় পর মিরা ঘুমিয়ে গেলো। রিহান থেকে থেকে বউয়ের গালে গলায়। ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছি। এমনি একবার করার পর হঠাৎ ফোনে শব্দ হলো। রিহান ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নিতে দেখলো শিশির রাতে ম্যাসেজ করেছে। রিহান শিশির কে রিপ্লাই করে আরেকটা আইডিতে গেলো সেখানে হোয়াটসঅ্যাপে কিছু একটা দেখে রিহান বাঁকা হাসে।
এরপর ফোন রেখে বউ কে পুনরায় দিগুণ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে বললো, “আমি যেমন ই হই না কেনো! তোকে আমার কাছে থাকতে হবে। এবং শুধু আমার হয়ে।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]