#পিঞ্জিরা
#পর্ব_৩২
#জান্নাত_সুলতানা
মিরা ছটফট করছে। ভয়ে মেয়ে টার দেহ থেকে আত্মা বেড়িয়ে আসার জোগাড়। ওদিকে নড়তে ও পারছে না। কিছুক্ষণ আগে আরো গাড়ির শব্দ শোনা গেলো। মনে হয় আরো মানুষ এসছে রিহান কে মারতে। মিরা হাতের বাঁধন অনেক সময় ধরে ট্রাই করে ও খুলতে পারছে না। মিরা যখন এসব করতে ব্যাস্ত তখন ঠাশঠাশ করে কিছুর বিকট শব্দ মেয়ে টার অন্তর কেঁপে উঠলো। ভয়ে লাফিয়ে উঠতেই গাড়ির স্টিয়ারিং লেগে গেলো হাতে বাঁধা টাই। মিরা’র হাতগুলো সরালো না। একটু শান্ত হয়ে হাত টা আস্তে আস্তে খুলে নিলো। অবশ্য সময় অনেক টা লাগলো। এরপর ঝটপট চোখের বাঁধন কানে গুঁজে রাখা টিস্যু সব কিছু খুলে গাড়ি থেকে নেমে চার পাঁচ কদম এগিয়ে এসে থমকে গেলো মেয়ে টা। একটা গাড়ির হেডলাইট এর আলোয়ে রিহান এর দিকে তাকিয়ে রইলো ভীতু চোখে। রিহান নিজেও হয়তো ভাবে নি এমন কিছু হবে। একবার নিজের শরীর এর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে এক হাত কোমড়ে রাখলো। রাগ হচ্ছে নিজের উপর। পেছন দাঁড়িয়ে আছে আরো কয়েকজন লোক। সাথে ইফাদ। ইফাদ কে দেখে মিরা আরো অবাক হলো। আর একটু আগে এখানে কত মানুষ ছিলো এখন কেউ নেই কেনো? কোথায় সবাই? মেয়ে টা আচমকাই চমকে উঠে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। ফুঁপিয়ে উঠলো। রিহান এর কিছু হয়েছে ভেবে মেয়ে টা অস্থির ভঙ্গিতে এসে রিহান কে চেক করতে লাগলো। শরীর হাতিয়ে দেখলো কোথাও আঘাত লেগে রক্ত বেরুচ্ছে ভেবে। কিন্তু না কোথাও কোনো আঘাত নেই। এগুলো রিহান এর শরীর থেকে বেরোয় নি। মিরা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে দেখে রিহান কে। তবে কি? মিরা সাথে সাথে ভাঙ্গা স্বরে বলে উঠলো,
-“সবাই কোথায়? আর আপনার শরীরে এতো রক্ত কেনো?”
ইফাদ এগিয়ে এসে মিরা কে ধরতে নিলেই মিরা দূরে সরে গেলো। হাত উঁচু করে থামিয়ে দিলো ইফাদ কে। রিহান তখন চোখ বন্ধ। মিরা সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে। ইফাদ কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগে রিহান বলে উঠলো,
-“এদের সায়েস্তা করে দিবি। রিহান শেখ এর সাথে পাঙ্গা নিতে আসে! আর চৌধুরী সাহেব এর সাথে কাল রাতে মিটিং ডিল করবো।”
এরপর বা খুঁড়িয়ে দুলতে দুলতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। বিনাবাক্যে গাড়ি স্টার্ট করলো।
চল্লিশ পয়তাল্লিশ মিনিট এর মধ্যে ওরা এসে শেখ বাড়িতে পৌঁছালো। গাড়ি থেকে নেমে মিরা সিট থেকে ব্লেজার টা হাতে তুলে নিলো। এরপর রিহান কে পড়িয়ে দিয়ে কিছু না বলে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
রিহান অবাক হলো। ভেবেছিলো মিরা হয়তো এ নিয়ে অনেক বেশি ভয় পাবে। কিংবা রিহান কে ইগনোর করবে। কিন্তু তেমন কিছু তো হচ্ছে না মেয়ে টার মধ্যে। রিহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাড়ির ভেতর পা বাড়ায়। মিরা তাকে কাভার করতে ব্লেজার টা পড়িয়ে দিয়ে গেলো। রিহান হেলে-দুলে রুমে গেলো। লিভিং রুমে অবশ্য মা দাদির সাথে দেখা হয়েছে তবে তারা তেমন ভালো করে লক্ষ্য করে নি। তাই রিহান এর তেমন ঝামেলা হলো না। সোজা নিজের রুমের দিকে গেলো।
——–
শাহনাজ অনুষ্ঠানের পোষাক ছেড়ে একটা সুতির শাড়ী পড়েছে। শাড়ী টা কাজল এর মায়ের। কারিরা বেগম এর অনেক আগের শাড়ীর কালেকশন। শাড়ী টা বেশ সুন্দর দেখতে। শাহনাজ এর প্রথম দেখায় ভালো লেগে গিয়েছে। তাই তো লোভ সামলাতে না পেরে আজকেই পড়ে নিয়েছে।
তারপর অল্প করে সেজেছে ও।
কাজল মাত্র ইফাদ এর সাথে কথা বলেছে। একটু চিন্তিত সে। তার বাবা-র সম্পর্কে সে জানে না এমন না। শুধু এ-সব নিয়ে তার কখনো মাথাব্যথা ছিলো না। কিন্তু এখন যেন না ভাবলেই নয় এ-সব নিয়ে। একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে তার বাবা। রিহান এর সাথে দ্বন্দ্ব সে কখনো মেনে নিবে না।
বাবা-র সাথে কথা বলবে এ নিয়ে।
চিন্তিত মুখে রুমে প্রবেশ করে বউ কে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো।
দরজা বন্ধ করে আস্তে-ধীরে বউয়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
শাহনাজ আলতো হেঁসে কাজল এর গালে হাত রাখে। লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ গুলো একটু বেশি সুন্দর। দূরে থেকে-ও একে-অপরকে ভালোবাসা অনুভব করা। সেখানে তারা এখন এক সাথে হয়েছে। অনুভূতি গাঢ় হতে প্রগাঢ় রূপ ধারণ করেছে। একটু লজ্জা বেশি আঁকড়ে ধরে ভেতর থেকে। তবে এটাও ভালো। লজ্জা পাওয়া ও ভালো। তবেই না সম্পর্কে মধুময় হয়ে উঠবে সুন্দর হবে আরো। ভালো লাগা ভালোবাসা একজন আরেকজন এর প্রতি দিগুণ হবে।
কাজল শাহনাজ এর বদ্ধ চুল গুলো উন্মুক্ত করতে কাজল কেঁপে উঠলো।
একটু আগে অতি যত্নে দেওয়া চোখে কাজল। ঠোঁটে লিপস্টিক সুন্দর করে বেঁধে রাখা চুল। আর যত্ন নিয়ে পরিহিত শাড়ী সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো মূহুর্তের মধ্যে। বাহিরে অর্ধ চাঁদ কাজল এর ভালোবাসা দেখে লজ্জায় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো। শাহনাজ লজ্জায় মুখ লুকালো নিজের ভালোবাসার মানুষ প্রাণপ্রিয় স্বামীর বক্ষে।
———–
রিহান রুমে এসে দেখলো মিরা ওয়াশরুমে যাচ্ছে। মেয়ে টা দরজা বন্ধ করার আগেই রিহান ধরে নিলো। মিরা আলগোছে দরজা ছেড়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। রিহান জানতো এমন কিছু ই হবে। মেয়ে টা রোজকার ন্যায় আজকের আর ধস্তাধস্তি করবে না তার সাথে। রিহান দরজা লক করে মিরা কে টেনে নিয়ে ঝর্ণার নিচে দাঁড়ালো। হাতের কাপড় ততক্ষণে মিরা রেখে দিয়েছে। তাই আর বাঁধা দিলো না। রিহান বউয়ের ভেজা চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে নাক ঘষে সেখানে। বললো,
-“আমার এই রূপ টা তোর সামনে আসুক কোনো দিন চাই নি। সেইজন্য ওই পথ থেকে একটু একটু করে নিজে কে গুটিয়ে ও নিচ্ছিলাম। আমি অন্যায় এর সামিল হয়েছি। কিন্তু যতক্ষণে বুঝতে পারলাম এটা ঠিক না তখন আতিক চৌধুরী নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলো। আমাকে নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে নিলো।”
রিহান গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে মেয়ে টার ঘাড়ে। মিরা খামচে ধরে রিহান এর শার্ট। টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় অধর স্পর্শ করে যাচ্ছে রিহান। অনেক সময় পর মিরা রিহান এর গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
-“আপনি অসুস্থ রিহান!”
আচমকাই রিহান থেমে গেলো। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো মিরা কে। নিচে পরে ভালোই চোট পেলো বেচারি। এরমধ্যে রিহান হঠাৎ আক্রমণ করে বসলো ওকে। ঝুঁকে এসে এক হাঁটু ফ্লোরে ভর দিয়ে বসে মিরা’র টুঁটি চেপে ধরলো। রাগে মূহুর্তে মধ্যে পুরুষ টার চোখ মুখ ভয়ংকর হয়ে গেলো। মিরা ব্যাথা পাচ্ছে। তবে এটার থেকে ও বেশি ব্যাথা মনে হচ্ছে। বুকের ভেতর যেন কেউ সুই ফোটাচ্ছে। রিহান এর জন্য মায়া হচ্ছে। কষ্ট বুক চৌচির মেয়ে টার। আতিক চৌধুরী সত্যি ই বলেছিলো। রিহান অসুস্থ। বানিয়েছে তাকে অসুস্থ। আতিক চৌধুরী। মিরা’র হাউমাউ করে কাঁদতে মন চাচ্ছে। কেনো রিহান আগে সব জানতে পারলো না। এখন যে বড্ড দেরি হয়ে গেলো মনে হচ্ছে। মিরা নিজে কে ভেতর থেকে শান্ত করে। কিচ্ছু হতে দিবে না এই পুরুষ টার। যা প্রয়োজন এরজন্য সে তাই করবে। তবুও এই মানুষ টাকে তার চাই। মিরা যখন ভাবনায় মত্ত রিহান তখন ধমকে উঠলো,
-“এই চুপ। একদম চুপ। আমি অসুস্থ না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। কতবার বলবো আমি অসুস্থ না। তোর থেকে দূরে যাব না আমি।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]