পিঞ্জিরা পর্ব-৩৪

0
7

#পিঞ্জিরা
#পর্ব_৩৪
#জান্নাত_সুলতানা

মিরা বহুবার চেষ্টা করেও রিহান এর বাঁধন থেকে মুক্ত করতে পারলো না নিজে কে।
রিহান অন্য দিনের তুলনায় আজকে এই সময় টায় একটু বেশি ডেস্পারেট। নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে মিরা’র সাথে জোরজবরদস্তি করে চলেছে। মিরা প্রথমে এটা নিয়ে রিহান এর উপর রাগ লাগলো। কিন্তু পরক্ষণেই সেটা ফিকে হলো। শান্ত হয়ে রিহান এর সঙ্গ দিলো। রিহান এর হয়তো এখন হুঁশ নেই। কিন্তু পরে ঠিকই এটা নিয়ে অনুতপ্ত হবে।
প্রায় সকাল নয় টার দিকে রিহান শান্ত হলো। পুরো দেড় ঘন্টা মেয়ে টার সাথে পুরুষ টার জোরজবরদস্তি চলেছে।
নিজে বিছানায় বালিশে শুয়ে মিরা কে বুকের উপর টেনে নিলো। কম্ফোর্টার দিয়ে দু’জন কে সুন্দর করে ডেকে নিলো। মিরা’র শরীর একদম চলছে না। নিঃশ্বাস টা কোনো রকম যেন চলছে। রিহান বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবার চুমুও খাচ্ছে একটু পর পর মাথার তালুতে। মিরা মৃদু হাসলো আড়ালে। বেশ কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর রিহান বললো,

-“শাওয়ার নিতে হবে।”

-“আপনি আগে যান।”

মেয়ে টা কোনো রকম বলে। রিহান মিরা’র কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের মর্জি অনুযায়ী বলে উঠলো,

-“এক সাথে চলো।”

মিরা চেয়েও বাঁধা দিতে পারলো না। রিহান বউ কে কোলে তুলে ওয়াশ রুম গেলো। পুরো সময় নীরব থেকে গোসল দিতে বউ কে সাহায্য করলো।

———-

আতিক চৌধুরী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। খুব খারাপ অবস্থা উনার। শেখ পরিবারের অলরেডি খবর পেয়ে গিয়েছে রিহান এর সাথে আতিক চৌধুরীর করা অন্যায়ের কথা। তারপরও সবাই ঢাকা এসছেন। রিহান এর খোঁজ নেই। রিয়াজ শেখ ছেলে কে লাগাতার কল করে যাচ্ছে। রিহান এর এসিস্ট্যান্ট সিয়াম এর ও কোনো খোঁজ নেই। ছেলে টা সবাই কে খবর গুলো দিয়ে গেলো কোথায় বুঝে উঠতে পারে না রিয়াজ শেখ।

——

মিরা কে খাবার দিয়ে ব্যাথার ঔষধ এর সাথে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে রিহান। মিরা ঘুমানোর কিছুক্ষণ পর রিহান বেরিয়ে এলো রুম থেকে। বাহিরে ছোট লিভিং রুম টায় এলো। সিয়াম বসা সেখানে। রিহান যেতেই সিয়াম বলে উঠলো,

-“স্যার ম্যাডামের অনার্স ফার্স্ট ইয়ার এর ফাইনাল এক্সাম দুই সপ্তাহ পর। রুটিন দেওয়া হয়েছে।”

-“এডমিট কার্ড নিয়ে নিও। আর আমাদের সিঙ্গাপুর যাওয়ার বন্দবস্ত করো।”

রিহান এর কথা শুনে যেন আসমান থেকে টপকালো সিয়াম। কি বলে তার স্যার? এ যেন ভুতের মুখে রামনাম। যে পাগল নিজে এই সত্যি টা মানতে নারাজ সেই পাগল নিজেই না-কি ডক্টর দেখাবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সিয়াম এর। এটা কোনো ভাবে তার স্বপ্ন নয় তো? অবাক হয়ে শুধালো,

-“আপনি যাবেন স্যার ট্রিটমেন্ট এর জন্য?”

সিয়াম এর এমন লুক দেখে রিহান থমথমে খেলো। গম্ভীর মুখ টা আরো গম্ভীর করে নিলো। অন্যমনস্ক হয়ে সকালে হওয়া মিরা’র সাথে চুক্তিবদ্ধর কথা মনে পড়লো।
মিরা ই তাকে রাজি করিয়েছে এব্যাপারে। অবশ্য এতো দ্রুত মিরা এসব জানার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রিহান যে সিঙ্গাপুরের এক ডক্টর এর সাথে এই নিয়ে অনেক আগে থেকে চিকিৎসা নিয়ে পরামর্শ করে আসছে। তাই খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নি মিরা’র এব্যাপারে জানার জন্য। খুব জলদি হবে রিহান এর চিকিৎসা। মিরা বহুকষ্টে তবেই রাজি করিয়েছে রিহান কে। রাজি করানোর টেকনিক টা রিহান আপাতত মনে করতে চাইছে না।
সিয়াম এর সাথে শর্টকাট আলাপ শেষ করলো। এরপর রেডি হয়ে মিরা কে রুমে তালাবদ্ধ করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলো।

———

সময় খুব দ্রুতই চলে। এটা কারোর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না। সর্বদা নিজের গতিপথ অনুসরণ করতে থাকে।
দেখতে দেখতে আজ এক সপ্তাহ হলো আতিক চৌধুরী হসপিটাল। এখন কিছু টা সুস্থ। তবে তিনি কাউ কে তেমন একটা চিনতে পারছেন না। ব্রেইন টিউমার হয়েছে। একদম যে ঘোরতর অবস্থা তেমন নয়। তবে থেরাপির জন্য বিভিন্ন প্রভাব পরেছে উনার ব্রেইনে। তারউপর হৃদরোগে আক্রান্ত তিনি। ব্যাস আর কি লাগে। আগে থেকে এই হার্ট দুর্বল তারউপর এখন মরণব্যাধি। মিরা’র ভীষণ কষ্ট হলো এসব শুনে। শিশির কাজল দুই ভাই-বোন সাথে কারিরা বেগম সবাই যেন বাকরূদ্ধ। কথা ছিলো মানুষ টার সাথে আর তারা এক ছাঁদের তলায় থাকবে না। কত জঘন্য জঘন্য কাজ করেছে। অথচ এখন এমন একটা মূহুর্তে পুরুষ টার পাপ কর্মের জন্য ঘৃণার চেয়ে মায়া বেশি হচ্ছে। অদ্ভুত এই বিধান। কখনো পুরুষ টার এমন একটা রূপ প্রকাশ্যে আসবে ভাবে নি কেউ। আর এসেও যেন এখন আবার লাভ হলো না। সবাই দেখলো আতিক চৌধুরী কে। শরীর ভার হয়েছে। হাতে পায়ে শরীরে পানিতে টলটল করে পুরুষ টার সর্বাঙ্গ। শেখ বাড়ির সবাই একটা ঘোরে রয়েছে। রেহনুমা বেগম নিজের ছেলের ক্ষতি করেছে ভাই সেই শোকে ভাই কে ঘৃণা করবে শাস্তি দেবেন না-কি ভাইয়ের অবস্থার জন্য দুঃখ পাবেন তাহার মস্তিষ্ক ইহা স্থির করিতে পাড়িল না।
আতিক চৌধুরী কে বাড়ি দিয়ে শেখ বাড়ির সবাই গ্রামে ফিরে এলো।
সপ্তাহ কেটে যায়। সব স্বাভাবিক হয়ে ও যেন অস্বাভাবিক। রিহান নিজের মতো বাবা-র সাথে চাচার সাথে নিজেদের ব্যবসায় মনোযোগী। মিরা’র পরীক্ষা ও কাল থেকে শুরু। কিন্তু তার যেন এসবে মন নেই। তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে অন্য ভাবনার বিচরণ ঘটতে থাকে সারাক্ষণ। রিহান সে-সব লক্ষ্য করেও যেন করছে না। সে জানে মেয়ে টার যতো দুনিয়ার চিন্তা তাকে ঘিরে।
রিহান সোফায় বসা। কোলে তার ল্যাপটপ। মিরা পড়ার টেবিলে বসা। অথচ দৃষ্টি তার সামনের দেয়ালে স্থির। রিহান বিষয় টা খুব ভালো করে লক্ষ্য করছে কিছুক্ষণ সময় হলো। কিন্তু মিরা’র কোনো ভাবান্তর ঘটেনা।
রিহান ভ্রু কুঁচকে আছে। ইদানীং এতোটাই ইগনোর সে বউ কে করছে সেটা শুধু সে নিজেই জানে। অবশ্য ইগনোর করবার ও তো পাকাপোক্ত কারণ রয়েছে। সে কেনো সেদিন সকালে এমন করলো! এতো বেশি হাইপার কেনো হলো? রিহান কে ফাঁসিয়ে নিলো। এতে রিহান কিছু টা মন ভার করে আছে।
কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না গম্ভীর থাকা। আর তো কিছু দিন এরপর তো চলেই যাবে। তাই শুধু শুধু অভিমান করে সময় গুলো নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না।
রিহান ল্যাপটপ রেখে ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে মিরা’র পেছনে দাঁড়িয়ে চেয়ারের হাতলের উপর হাত রেখে ঝুঁকে গেলো। মিরা চমকে উঠলো। রিহান নিজের থুঁতনি টা মিরা’র মাথায় ঠেকিয়ে বলে উঠলো,

-“পড়ছো না তো তুমি!”

-“হ্ হ্যাঁ পড়ছি তো।
আপনার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যান না!”

যেহেতু মিরা অন্যমনস্ক ছিলো সেহেতু একটু হকচকিয়ে জবাব দিলো। রিহান নিরদ্বিধায় বললো,

-“তুমি ও এসো।”

-“আচ্ছা।”

ভণিতা ছাড়াই রাজি হয়ে গেলো মিরা। এরপর ওয়াশ রুম গিয়ে রাতের পোশাক চেঞ্জ করে এসে দেখলো রিহান বিছানায় অলরেডি শুয়ে আছে। মিরা লাইট অফ করে বিছানায় শোয়া মাত্র রিহান বরাবর এর মতো বউ কে টেনে নিজের শক্তপোক্ত বুকের উপর টেনে নিলো। দু’জন কে কম্ফোর্টার দিয়ে ঢেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মিরা চোখ বন্ধ করে রাখলো। শুধু শুধু কেনো জানি মেয়ে টার মন টা বড্ড খারাপ হচ্ছে। উঁহু। মোটেও শুধু শুধু মন খারাপ হচ্ছে না। যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই-যে এই স্থান টা সে কিছু দিন পর আর পাবে না। কবে পাবে সেটারও নিদিষ্ট কোনো সময় সে জানে না।
তবুও সে থেকে যাবে একটু লোভ আশায় অপেক্ষায় পুরুষ টার সাথে সুন্দর একটা সুখের সংসার এর আশায়। সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা দিন সপ্তাহ মাস বছর এর পর বছর অপেক্ষা করে থাকবে শুধু এই মানুষ টা সুস্থ হয়ে তার কাছে ফিরে আসার অপেক্ষা।

———-

ইফাদ খুব বেশি সাপোর্ট করছে শিশির কে। কিন্তু শিশির বারবার এভয়ড করছে ইফাদ কে। অবশ্য মাঝে কিছু টা ঠিক হয়ে ছিলো শিশির। কিন্তু সেদিন সব জানার পর আবার কেমন হয়ে গেলো। ঠিকঠাক কথা বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর করে না। কেমন গুটিয়ে গেলো মেয়ে টা। সবটাই কি নিজের বাবা-র কর্মকাণ্ডের জন্য না-কি ইফাদ বুঝতে পারছে না। এমন টা যদি হয় তাহলে খুব খারাপ হবে। ভুল পাপ যেটাই হউক আতিক চৌধুরী করেছেন তার শাস্তি ও তিনি পাচ্ছেন। তাহলে আবার এসব নিয়ে শিশির কেনো গুটিয়ে রাখছে নিজে কে শেখ পরিবার থেকে ইফাদ বুঝে পায় না।
লাগাতার আজ চারদিন মেয়ে টা কথা বলছে না। ইফাদ ঠিকই ওর সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করছে।
রাত বাজে তিন টা। ইফাদ তখন ও কল ম্যাসেজ করে যাচ্ছে শিশির কে।
বিরক্ত হচ্ছে না। কিন্তু রাগ হচ্ছে তার শিশির এর উপর। একটা সময় কল রিসিভ হলো। শিশির উদাস কণ্ঠে অপরপ্রান্ত হতে বলে উঠলো,

-“হ্যালো!”

শিশির যতোটা শান্ত ভাবে কথা টা বললো। ইফাদ ঠিক তার দশ গুণ বেশি তেতে উঠলো। ধমক দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলে উঠলো,

-“তোর হ্যালোর আমি একশো। কাল কে আসছি আমি বিয়ে করতে। তোর এই নাটক ক’দিন পর পর আমার জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিচ্ছে বেয়াদব মেয়ে মানুষ কোথাকার।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]