পুনর্মিলন পর্ব-০৯

0
66

#পুনর্মিলন
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_৯

“ওরা ছু’ড়ি কু’ড়া’ল নিয়ে আমার দিকে তে’ড়ে’ফুঁ’ড়ে আসছিলো আমায় কু’পি’য়ে মারবে বলে আর তুমি আড়ালে দাঁড়িয়ে সেটা ভিডিও করছিলে? তোমার হাত কাঁপে নি? যদি ওরা আমায় সত্যি সত্যি মে’রে ফেলতো তাহলে বুঝি খুশি হতে? ভিডিও টা আরও বেশি পোক্ত হতো আর ওই লোকগুলোকে জেলের ভাত খাওয়াতেও বেশ সুবিধা হতো তাই না? তুমি আসলেই একটা পাষাণ। মন বলতে কিছু নেই তোমার ভেতরে।”

“আপনি এখন এসব বলার জন্য আমায় টেনে নিয়ে এসেছেন? ওখানে কতো মানুষজন ছিলো সে খেয়াল আছে?”

“যাদের আমি চিনি না জানি না তাদের খেয়াল করে আমি কি করবো? আমি তোমায় চিনি তোমায় জানি তাই খেয়াল করে টেনে এনেছি তোমার খেয়াল রাখার জন্য। এবার খামখেয়ালি না করে আমার কথার জবাব গুলো দাও।”

“ভেতরে এমন একটা সিচুয়েশন আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আমার সাথে এ ধরনের কথা নিয়ে ঝগড়া করছেন।”

জাগ্রত এবার মাথায় হাত দিয়ে হাসফাস করে বলে উঠলো,

“সমস্যাই তো এখানে। তোমার জায়গায় এখানে অন্যকেউ হলে আমার লাস্ট কথাগুলো তার কাছে ঝগড়া নয় রসিকতা মনে হতো। কিন্তু তোমার মনে হচ্ছে ঝগড়া। আমি একটা বিয়ে করে নিয়ে এলেও তোমার মনে হবে আমি শুধুমাত্র তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য বিয়ে করেছি আর বাটি হাতে রাস্তায় বসে গেলেও তোমার মনে হবে আমি শুধুমাত্র তোমার সাথে ঝগড়ার উদ্দেশ্যেই ভিক্ষে করতে নেমেছি। আসলে তুমি ঝগড়া ছাড়া কিছু চেনোই না। তুমি স্বপ্নেও…”

“আপনি একটু চুপ করবেন! কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলেন আপনি? ভেতরে এখন কি হচ্ছে, সামনে কি হবে সেই চিন্তায় আমার মাথা ফেটে পড়ছে আর আপনি আমাকে এখানে এনে ফাজলামো শুরু করেছেন।”

“ওদের চিন্তা তোমায় করতে হবে না। এতোক্ষণে এটুকু নিশ্চয়ই বুঝে গেছো ওদের সম্পর্ক আমাদের মতো ঠুনকো নয়। আমি তো কিছুক্ষণ ধরে দেখছি ওদের। তাতেই ভরসা হচ্ছে ওদের সম্পর্কের জোর দেখে। তুমি তো বোধহয় আরও আগে থেকে চেনো, তোমার ভরসা নেই ওদের ভালোবাসার উপর? আঁখি মেয়েটা তো নিসান এর এক কথায় পরিবার ও ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো। মেয়েটা কতো ভরসা করে আর ভালোবাসে ছেলেটাকে। এমন দুজনকে নিয়ে তোমার মতো কাউকে না ভাবলেও চলবে।”

“আমার মতো মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি খুব খারাপ? আমি স্বার্থপর? আমি আপনার কথা শুনতাম না? আমি ভালোবাসিনি আপনাকে?”

শেষ কথাটায় দুজনেই থমকে গেছে। একজন নিজের শ্রবণেন্দ্রিয়কে বিশ্বাস করতে পারছে না এমন কথা শুনতে পেয়ে। আরেকজন তো চোখ বন্ধ করে নিয়েছে রাগে আর কষ্টে। মুখ ফস্কে এমন কথা বেরিয়ে যাওয়ায় রাগ হচ্ছে নিজের ওপর আর কষ্ট হচ্ছে জাগ্রতর মুখ থেকে শোনা শেষ কথায়। জাগ্রত কিছু বলবে করে মুখ খুলতেই ফাল্গুনী হাওয়ার বেগে জায়গা ত্যাগ করে নিলো। দাঁড়ালো না এক মুহুর্তও। জাগ্রত হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর নিজ মনে কিছু ভেবে পা বাড়ালো বাড়ির ভেতরে।

________________

আঁখি আর নিসান এর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এলাকার মন্দিরে। এলাকার কিছু সাধারণ মানুষ, চেয়ারম্যান, কিছু সংখ্যক নেতা ও পুলিশের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে নির্বিঘ্নে। আঁখিকে সম্প্রদান করেছে আঁখির ভাই শুভ। আঁখির বাবাকে এলাউ করে নি নিসান। মন্দিরের আশেপাশেও বাড়ির কাউকে আসতে মানা করে দিয়েছে। শুধুমাত্র আঁখির মা আর ভাই ছিলো সেখানে।

বিয়ে শেষ হতে হতে বেলা প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। এখনও সকালের খাওয়া হয়নি কারও। চেয়ারম্যান খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে চাইলেন সবার। নিসান হাত জোড় করে অনুমতি চাইলো এই দায়িত্বটা নিজে নেওয়ার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান তা মানলেন না। তিনি নিজ খরচে সবার খাওয়ার ব্যাবস্থা করলেন।

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো নিসান আর আঁখি খাওয়া দাওয়া করার কিছুক্ষণ পরেই রওয়ানা করবে নিসান এর বাড়ির উদ্দেশ্যে। নিসান এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চায় না আঁখিকে নিয়ে তাই এমন সিদ্ধান্ত। চেয়ারম্যান সব ব্যাবস্থা করে দিয়ে চলে গেছেন নিজ কাজে। পুলিশরাও চলে গেছে বিয়ে সম্পন্ন হলে। তবে ফাল্গুনী তাদের মধ্যে একজনের কাছে বিরিয়ানির কয়েকটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছে তাদের চলে যাওয়ার আগে।

খাবারের ব্যাবস্থা করা হলে সবাইকে খাবার পরিবেশনে হাত লাগিয়েছে নিসান, জাগ্রত। দুজনের পরিচয় ঘটেছে বিয়ের কিছুক্ষণ আগে। মন্দিরের পাশের বাড়িতে করা হয়েছে এই আয়োজন। সেই বাড়ির কয়েকজন মানুষ, কিছু সংখ্যক নেতা, আর নিজেদের জন্য এই আয়োজন। আঁখি আর ফাল্গুনী এক ঘরে আলাদা
খেতে বসেছে। দুজনের মনে চলছে দু রকমের ঝড়। ফাল্গুনীর মন খেয়ে যাচ্ছে তখন জাগ্রতকে বলা শেষ কথার জন্য। জাগ্রতর সামনাসামনি হতে পারছে না কিছুতেই। আর আঁখির মনে চলছে পরবর্তীতে কি হবে তা নিয়ে অসংখ্য চিন্তা ভাবনা। মনে ভয় হচ্ছে নিসান কে নিয়ে। নিসান তো একবারও জানতে চাইলো না ওইদিন কার সাথে সে পালিয়েছিলো। সবাই তো নিসান এর কথা জানে আর সবাই তো নিসানকেই দোষারোপ করেছে সব কিছুর জন্য। কিন্তু নিসান কেনো এখনো কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। তার তো হাজারও প্রশ্ন করার কথা ওই রাত নিয়ে।

আঁখির ঘোর ভাঙলো নিসান এর ডাকে। নিসান এসেছে ঘরে। সাথে জাগ্রতও আছে। জাগ্রত এসে ফাল্গুনীর দিকে শুধু চেয়ে রইলো কিছু বললো না। নিসান আঁখির দিকে চেয়েও দেখলো না, সরাসরি ফাল্গুনীকে জিজ্ঞেস করলো,

“ফাল্গুনী, কিছু লাগবে? সবাইকে দেওয়া হয়েছে। এবার আমি আর জাগ্রত দা বসে পড়বো। তোমাদের দিয়ে তারপর বসি।”

“কিছু লাগবে না নিসান দা। আপনারা বসে পড়ুন।”

নিসানকে না করার পরে নিসান এর চোখ এবার আঁখির দিকে গেলো। আঁখি ও আগে থেকেই তাকিয়ে ছিলো। তাই চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনের। আঁখিকে নতুন করে জিজ্ঞেস করতে হলো না কিছু। সে মাথা নেড়ে না করে দিলো চোখাচোখি হতেই। নিসান সাথে সাথেই বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। থেকে গেলো জাগ্রত, ফাল্গুনীর দিকে চেয়ে আছে সে অপলক। যেনো কোন ঘোড়ে ডুবে আছে। মনে মনে ভাবছে ফাল্গুনীর বলা তখনকার ভালোবাসার কথা। নিসান আবার ফিরে এলো ঘরের সামনে আর জাগ্রত কে ডেকে উঠলো। জাগ্রত হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেলো ডাক শুনতেই। নিসান হাসি মুখ করে বললো,

“কিছু বলার ছিলো ফাল্গুনী দি কে?”

জাগ্রত মাথা নেড়ে না করে চলে গেলো যেখানে খাবার রাখা আছে সেখানে। নিসান ও চলে এলো সেখানে। সেখানে আসতেই দেখা হলো নতুন এক মুখের সাথে। একজন মহিলা জাগ্রতর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে থমকানো মুখভঙ্গিতে। জাগ্রতর মুখভঙ্গি দেখতে পেলো না নিসান। তাই খানিক এগিয়ে গেলো জাগ্রতর দিকে। নিসান এগিয়ে যেতেই ভদ্রমহিলা নিসানকে জিজ্ঞেস করলো আঁখির কথা। ভদ্রমহিলার গলার স্বর কাঁপা শোনালো নিসান এর কাছে তাই তার পরিচয় চাওয়া হলো না। আঁখির রুম দেখিয়ে দিলো আঙ্গুলের ইশারায়। ভদ্রমহিলা চলে গেলো তৎক্ষনাৎ। জাগ্রতও নিসান কে এড়িয়ে পা বাড়ালো আবার ওই ঘরের দিকে।

আঁখি আর ফাল্গুনী খাওয়া শেষ করে সবে উঠে বসেছে। এর মধ্যেই ঘরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো দরজার কপাট জোড়ার দিকে। চোখে পড়লো সাদা ধবধবে শাড়ি পরিহিতা এক অর্ধবয়স্ক নারী দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর হয়ে। ফাল্গুনী চমকালো। থমকে গেলো নয়ন জোড়া। ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে ডেকে উঠলো মা বলে।

বিলাসি দেবী আরও এক দফা চমকালেন। চোখ জোড়া জ্বালা করে উঠলো ভীষণ। এসেছিলেন আঁখির খবর শুনে কিন্তু ক্রমশ অবাঞ্ছনীয় কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে জাগ্রত তারপর ফাল্গুনী। ফাল্গুনী কেনো এসেছে? তার জন্যই কি এলো মেয়েটা? কিন্তু দুজনে একসাথে এক জায়গায় কি করে?

~চলবে