পুনর্মিলন পর্ব-১২+১৩

0
146

#পুনর্মিলন
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_১২

“আমার কিছু বলার ছিলো পিসিমনি। আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটু আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনে কথা বলতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে…”

“আমাদের জীবনটাই তো ছন্নছাড়া বাবা, ব্যক্তিগত আর কি আছে। তুমি বলো আমি শুনছি।”

“আমি আপনাদের অতীত সম্পর্কে কিছুই জানি না পিসিমনি তাই জোর দিয়ে বলার মতো কিছুই নেই। তবে আমি যেটুকু দেখেছি সেটুকু অবশ্যই বলতে চাই। ফাল্গুনী, জাগ্রত আর আমি একসাথে এক বাসে করেই এসেছি। ওদের দুজনের পিছনের সিটেই আমি বসেছিলাম। প্রথম থেকে শুরু করে শেষ অব্দি ওদের সমস্ত কথোপকথন শুনেছি। দুজনের প্রতিটা কথা আর কাজে দুজনের ভেতরের বিচ্ছিন্নতা বেরিয়ে আসতে দেখেছি। দুজনেই দুজনকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু জেদের বসে কেউ কারো মনের অবস্থা একে অপরকে বুঝতে দিচ্ছিলো না। কিন্তু এখন তো জাগ্রত দা নিজের জেদ ছেড়ে দিয়ে ফিরে পেতে চাইছে ফাল্গুনীকে। নিজের রাগ, অভিমান, জেদসহ নিজেকে সঁপে দিয়েছে ফাল্গুনীর কাছে; কিন্তু ফাল্গুনী জাগ্রত দা কে মানতে পারছে না। অথচ ফাল্গুনীর কথা আর কাজে ঠিকই প্রকাশ পাচ্ছে সে নিজেও জাগ্রতর দা’র প্রতি কতোটা দুর্বল। তবে দুর্বলতা আর ক্ষুদ্র কিছু অনুভূতি আছে বলেই যে একসাথে হতে বলছি বা ওদের জোর করে এক করে দিতে হবে তা কিন্তু না। একটা সম্পর্কে বোঝাপড়াটা খুব জরুরি। ওদের সেই বোঝাপড়াটা পোক্ত করতে হলে মনের যতো রাগ, অভিমান আর একে অপরের প্রতি অভিযোগ আছে তা সামনাসামনি খোলাসা করতে হবে। একে অপরকে নিজেদের অভিযোগ করার ও শোনার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে সমাধানের পথ এমনিই বেরিয়ে আসবে।”

নিসান কথা শেষ করে সবার মনোভাব বিবেচনা করতে একে একে যাচাই করলো সবার মুখাবয়ব। জাগ্রত গম্ভীরমুখে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। যেনো মাটির সাথে কথা বলছে সে। বিলাসি দেবীও একইভাবে মুর্তিমান হয়ে বসে আছেন। আঁখি আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। নিসান বিলাসি দেবী কে ডেকে উঠলো,

“পিসিমনি।”

বিলাসি দেবী চোখ তুলে তাকালেন নিসান এর দিকে। নিসান বললো,

“আপনি কি চান পিসিমনি? আপনার কি ইচ্ছে? আপনি চান না ওরা আবার এক হয়ে যাক। ভালো থাকুক একসাথে। আপনি চাইলে…..”

“আমার স্বামীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছিলো জানো নিসান?”

নিসান এর কথার মাঝখানে বিলাসি দেবীর এমন কথা হজম হলো না নিসান আর জাগ্রতর। আঁখির মুখটা এবার চুপসে গেলো। সে অতীতের কথা খানিকটা জানে তাই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো তার। জাগ্রতর মনে খানিক শঙ্কা হলো। তবুও বলে উঠলো, “আমি জানতে চাই মা। আপনি বলুন।”
বলে শঙ্কিত, দ্বিধান্বিত মুখমন্ডল নিয়ে তাকিয়ে রইলো জাগ্রত। বিলাসি দেবী দীর্ঘ এক শ্বাস টেনে নিলেন। তারপর বলে উঠলেন,

“যেদিন কোর্টের কাজ শেষ হলো, তোমাদের একবছর আলাদা থাকার আর্জি মঞ্জুর করা হলো, সেদিন ফেরার পথে ফাল্গুনীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। রাস্তার মানুষদের সাহায্যে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছিলো ফাল্গুনী। তারপর আমাকে খবর দিলে আমি ছুটে যাই হাসপাতালে। গিয়ে শুনি ফাল্গুনীর বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে। আমাকে দেখে তিনি বারবার শুধু একটাই কথা বলছিলেন,

‘আমার মেয়েটার জীবন আমি নিজ হাতে শেষ করে দিলাম বিলাসি, বাবা হয়ে মেয়ের জীবন টা শেষ করে দিলাম, অন্ধকারে ঠেলে দিলাম মেয়েটাকে। আমার এক কথায় মেয়েটা এক মিনিট ও সময় না নিয়ে রাজি হয়ে গেলো বিয়েতে, সেই বিয়ে ওর কপালে সুখ এনে দিতে পারলো না। দিলো শুধু মানসিক অশান্তি।’

এই এক কথা বলতে বলতেই আমার সামনে শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ছিলো না সে নিঃশ্বাস। তবে সময় টা দীর্ঘ ছিলো। ফুরাচ্ছিলোই না। আকুল পাথারে ডুবে গেছিলাম একলা আমি। ফাল্গুনী ইনজেকশন আর কিছু ওষুধপত্র আনতে বাইরে গেছিলো। ও এসে ওর বাবাকে পায়নি। পেয়েছিলো ওর বাবার নিথর পরে থাকা দেহখানি। সে-সময় আমাদের পাশে সবচেয়ে আপন মানুষগুলোই কেউ ছিলো না। আমার ভাসুরের সাথে তো আরও আগেই মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছিলো; সেটার কারণও ছিলো জাগ্রতের পরিবার। সেসবের রেষ ধরে আমাদের দুঃসময়ে তারা ফিরে চেয়েও দেখেনি। আমার ভাইয়েরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার ভয়ে ফিরে তাকায়নি আমাদের দিকে। আমাদের পাশে ছিলো শুধু ফাল্গুনীর বাবার একজন বন্ধু আর আমার বৃদ্ধা মাসি। ফাল্গুনীর বাবার বন্ধু গৌতম দা আমাদের অন্ধকার থেকে টেনে তুলেছেন। সবদিক থেকে আমাদের সহায়তা করে গেছেন। ফাল্গুনীর বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই গৌতম দা’র বদলি হয়ে যায় বরিশালে। তার বদলির জন্য আবেদন করা ছিলো আরও আগেই, সেই বদলির খবরে আমরা আরও বেশি আকুল পাথারে পরি। তিনি আমাদের মা মেয়ে দুজনকে তার সাথে বরিশাল নিয়ে যেতে চান। আমি যাই নি। আমার বৃদ্ধা মাসিকে সাথে নিয়ে থেকে যাই আর ফাল্গুনীকে পাঠিয়ে দেই তাদের সাথে। দীপা বৌদি খুব ভালোবাসতো ফাল্গুনীকে, কোন সন্তান নেই তাদের। তার ভরসাতেই ফাল্গুনীকে পাঠাই সেখানে। গত চার বছর যাবত আমি এখানে আমার মাসির সাথে আছি আর ফাল্গুনী ছিলো বরিশাল। সেখানেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। ওর বাবার অফিস থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম আর কিছু টাকা পেয়েছিলাম একটা ব্যাংক থেকে। ওর বাবার একটা একাউন্ট ছিলো আর তাতে কিছু সেভিংস ছিলো। এই নিয়ে চলে যাচ্ছে আমাদের।”

বিলাসি দেবী থামলেন। বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে ভিজে আসা চোখের কোল মুছলেন। জাগ্রত নির্বাক। বিবেক-দংশনে দংশিত হচ্ছে বারংবার, হাজারবার। অনুতাপসূচক চিন্তা চেতনা দখল করে নিয়েছে তার পুরো মস্তিষ্ক আর মন। নিসান চেয়ে আছে জাগ্রতের দিকে। চাইছে জাগ্রত কিছু বলুক। এখন তার নয় জাগ্রতর কথা বলার সময়। জাগ্রত চুপ করে আছে দেখে নিসান ডেকে উঠলো জাগ্রতকে। বললো, “কিছু বলতে চাও না জাগ্রত দা?”

জাগ্রত সোজা বিলাসি দেবীর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো, বিলাসি দেবী চমকে উঠে সরে দাঁড়ালেন দু হাত। জাগ্রত অনুতাপ করে বললো,

“বাবার মৃত্যুর জন্য কি আপনি আমাকে দায়ী মনে করেন মা?”

“আমি তা একবারও বলি নি জাগ্রত। আমরা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। যা হয়েছে তাতে কারো হাত ছিলো না। তোমারও না।”

“বিশ্বাস করুন মা আমি নিরুপায় ছিলাম। নিরুপায় ছিলাম আমি।”

“এখন এসব থাক……”

“আমার ভুল ছিলো মা, অনেক ভুল ছিলো। আমি হাজারও ভুল করেছি। আমি নিরুপায় ছিলাম মা। সংসারের জাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে ছিলো আমার চোখ, কান, মন, মস্তিষ্ক; তাই নিজের কানে না কিছু শুনেছি আর না নিজের চোখে কিছু দেখেছি। আর নিজের মনটাকে তো কবেই হারিয়ে বসেছিলাম। পরিস্থিতি হাতড়ে খুঁজে পাইনি নিজের হৃদয় আর না খুঁজে পেয়েছি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হৃদয়ানুভূতি গুলো। আমি ফাল্গুনীর খেয়াল রাখতে পারি নি, ওকে ভালোবাসতে পারি নি, ওর প্রাপ্য সম্মান টুকুনিও ওকে দিতে পারি নি। আমাদের বিয়েটা যদি আর পাঁচটা বিয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে হতো তাহলে কি এমন হতো মা? হতো না।”

জাগ্রত থেমে গেলো। পাথরের মতো থমকে রইলো কিছুক্ষণ। নিষ্পলক চোখে চেয়ে রইলো নির্বাক। আচমকা কঠিন হলো তার মুখাবয়ব। অতীতের স্মৃতিচারণে ব্যপৃত হলো মন মস্তিষ্ক। ঔদাসিন হয়ে বলতে লাগল পুরুষ হৃদয়ের না বলতে পারা কথাগুলো।

“আমি ইন্জিনিয়ারিং শেষ করার আগেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। আমি তখন বেকার। বাবার অবস্থা ক্রমশ এমন হলো যে শরীরে তার অসুখ রাখার জায়গাও যেনো কম পড়তে লাগলো। পরিক্ষার পর পরিক্ষা করা হতো আর রোগের পর রোগ ধরা পরতো। কেউ জিজ্ঞেস করলে গুলিয়ে ফেলতাম কোনটা দিয়ে শুরু করবো, কি বললে কেউ বুঝবে আমাদের অসহায়বোধ। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হিমসিম খাচ্ছিলাম আমরা। বাবার যা জমানো টাকা ছিলো সব খরচ করেও জমি বিক্রি করতে হয়েছিলো শেষমেশ। আত্মীয়রাও যথেষ্ট সাহায্য করতো। কিন্তু কতোই আর করবে। তাদেরও নিজস্ব জীবন আছে। আমিও খুব কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। দুবছর এভাবেই টানাটানি আর বাবার মৃত্যু ভয় নিয়ে পার হয়। বাবার কোন পরিবর্তন হয় না। উল্টে অসুখের পরিমাণ যেনো বাড়তে থাকে। বাবা শুধু বলতো আমাকে বিয়ে করে নিতে, সে তার ছেলের বউ দেখবে। আমি বোনের বিয়ে আর চাকরির দোহাই দিয়ে সময় পার করতে থাকি। একসময় মামার সাহায্যে একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাই। বোনেরও বিয়ে হয়ে যায়। চাকরি পেতে না পেতেই মা বিয়ের জন্য জোড়াজুড়ি করতে শুরু করে। বাবাও হাতে ধরে কান্নাকাটি করে বলে ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে চান। নাতি-নাতনীদের মাথায় হাত রেখে মরতে চান। ততদিনে আমাদের আর্থিক অবস্থাও আবার উন্নতি হতে থাকে। তারপর আমি মা কে দায়িত্ব দিই মেয়ে দেখার। ছেড়ে দিই সবটা মা আর বোনের উপর। মা তার ভাই-বোনদের নিয়ে হাজারটা মেয়ে দেখে পছন্দ করে ঝিমলি কে। ঝিমলি চোখ ধাঁধানো সুন্দরী ছিলো। সবদিকেই নিখুঁত ছিলো সে। আমারও খুব পছন্দ হয় ঝিমলি কে। বিয়ের কথা আগায় দুই পরিবারের মত নিয়ে। বাবার খুশি দেখে কে! ঝিলমির ছবি দেখলেই খুশি হয়ে যেতো বাবা। যেদিন বিয়ে করতে বের হই বাড়ি থেকে সেদিনও বাবা বারবার বলেছে আমার বিয়েটা হয়ে গেলে সে প্রাণ এর মায়া ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে মৃত্যুর প্রহর গুনবে। দু-হাত মেলে অপেক্ষা করবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে। তার নাকি নাতিনাতনির মুখ দেখা পর্যন্ত সময় হবে না। আমি বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে পরি নতুন বর বেশে বিয়ে করতে। আর বিয়ে বাড়ি পৌঁছাতেই শুনতে পাই ঝিমলি পালিয়েছে। সে নাকি রাজি ছিলো না এই বিয়েতে। আমার শুধু বাবার মুখটা মনে পরছিলো বারবার। এদিকে খবরটা সবার কানে যেতেই মামা, পিসি আর মাসিরা মিলে ঝামেলা করে বসে। বিয়ে বাড়ির পরিস্থিতি বিগড়ে যায় চোখের পলকে। বাবার কথা চিন্তা করে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় ওই মন্ডপেই আমার বিয়ে হবে। ঝিমলির বাবাই প্রথম ফাল্গুনীর কথা তোলে সর্বসমক্ষে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন তার ভাইয়ের একমাত্র মেয়ের সাথে ওই মণ্ডপেই আমার বিয়ে হবে। মামা আর বাকিরাও রাজি হয়ে যায়। ওদিকে ফাল্গুনীকে কি বলা হয়েছিলো আর কিভাবে রাজি করানে হয়েছিলো আমি জানি না। আমি শুধু জানি বাবার কথা ভেবে বাড়ির লোকের কথায় আমি ফাল্গুনীকে বিয়ে করি। একটি ষোল বছর বয়সী মেয়েকে নিজের জীবনের বোঝা সঁপে দিয়ে নিয়ে যাই নিজের বাড়িতে। বাবার মনে কি ছিলো জানি না আমি। কোন অভিযোগ শুনিনি তার মুখ থেকে। হাসি মুখে ফাল্গুনীর মাথায় হাত রেখে আর্শিবাদ করতে দেখেছি তাকে। কিন্তু মায়ের চোখেমুখে লেপ্টে ছিলো অপছন্দের রেষ। নিজের ভাইবোনের সাথেও মন কষাকষি করে কথা বন্ধ করে দেয়। আমাকে হাজারো অভিযোগ করে ফাল্গুনীকে নিয়ে। আমি অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে শান্ত করি মাকে। তারপর দিন কাটতে থাকে আর সংসারের অশান্তি বাড়তে থাকে। আমি সারাদিন অফিস করে আসতে না আসতেই দুজনে রেষারেষি আর অভিযোগ এর খাতা খুলে বসতো। প্রথম কয় মাস শুধু মা এমন করতো। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ফাল্গুনীও এমন করতে শুরু করে। বাড়িতে কি হতো কিভাবে হতো আমি জানি না। দু’জনের কথা শুনতে শুনতে বিরক্তি চলে আসে সংসারের উপর। তবে আমার কাছে সবসময় ফাল্গুনীর চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেতো মায়ের কথা। কারণ ছিলো দুটো। মা সবসময় ধীরেসুস্থে দুঃখ প্রকাশ করে অথবা কান্না করে ফাল্গুনীর নামে অভিযোগ করতো আর আরেকটা কারণ ছিলো বাবার অসুস্থতা। আর ফাল্গুনী যাই বলতো হাইপার হয়ে বলতো। শান্ত হয়ে কিছু বলতেই পারতো না ও। ওর অশান্ত স্বভাব আমার মন মেজাজ নষ্ট করে দিতো। আমাদের বিয়ের পর প্রথম ছ’মাস এভাবেই কাটে। পরিস্থিতি প্রতিদিন একটু একটু করে খুব খারাপ এর দিকে যায়। আর আমিও রাগের বসে একদিন বড় একটা ভুল করে বসি। মা আর বোনের কথায় ফাল্গুনীকে বের করে দেই বাড়ি থেকে। বিবেকশূন্য হয়ে চরম ভুল করে বসি।”

~চলবে

#পুনর্মিলন
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_১৩

“ফাল্গুনী যাই বলতো হাইপার হয়ে বলতো। শান্ত হয়ে কিছু বলতেই পারতো না ও। ওর অশান্ত স্বভাব আমার মন মেজাজ নষ্ট করে দিতো। আমাদের বিয়ের পর প্রথম ছ’মাস এভাবেই কাটে। পরিস্থিতি প্রতিদিন একটু একটু করে খুব খারাপ এর দিকে যায়। আর আমিও রাগের বসে একদিন বড় একটা ভুল করে বসি। মা আর বোনের কথায় ফাল্গুনীকে বের করে দেই বাড়ি থেকে। বিবেকশূন্য হয়ে চরম ভুল করে বসি।
আমি সে সময়টায় ঝামেলা এড়াতে দেরি করে বাড়ি ফিরতাম। সেদিনও আমার ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেছিলো। বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই দেখি ফাল্গুনী একাই চিৎকার করছে আমার মা আর বোনের সামনে দাঁড়িয়ে। আমার মা চোখ ভর্তি জল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতো আর আমার বোন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাকে সান্তনা দিচ্ছে। আমার বাবা ভেতরের ঘরে শোয়া ছিলো। শুয়ে শুয়ে চিৎকার করছিলো ফাল্গুনীর নাম ধরে। ডাকছিলো আর চুপ করতে বলছিলো ওকে। এমনিতেই মন মেজাজ উঠে যাচ্ছিলো সংসার থেকে তার ওপর আবার বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই এমন পরিবেশ দেখে মাথা বিগড়ে যায়। তার থেকেও বেশি বিগড়ে যায় ফাল্গুনীর কথা শুনে। আমাকে দেখতে পেয়েই আমার সামনে এসে চিৎকার করে আমাকে বলে, ‘আপনার মা একজন বাজে ও স্বার্থপর মহিলা। মনে শুধু বিষ আর বিষ। তিনি শুধু মা নয় একজন মেয়ে জাতির কলঙ্ক।’ এটুকু কথা শুনেই ওকে ধমক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করি আমি। এর মধ্যেই মা দাঁড়ানো থেকে পড়ে যেতে নেয়, ধরে ফেলে আমার বোন জিনিয়া। বোনের মুখে মা মা বলে চিৎকার শুনে ওদিকে বাবাও নেমে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যায়। আমি মাকে রেখে বাবার কাছে যাই। বাবাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে জল খাইয়িয়ে বাইরে মায়ের কাছে আসি। মা অজ্ঞান হয়নি কিন্তু কেমন চুপ করে ছিলো আর মায়ের চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছিলো। এতো কিছুর পর মা একটা কথাই বলেছিলো, ‘এ বাড়িতে হয় আমি থাকবো নয়তো ও থাকবে।’ পুরোটা সময়ে মা শুধু ওই একটা কথাই বলেছিলো। বোন ও বলছিলো ও একই কথা। ফাল্গুনীর নামে অভিযোগ করে যাচ্ছিলো অনবরত। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না এসব। নিজেকে পাগলের মতো লাগছিলো। ফাল্গুনীকে তখন আমার জীবনের সবথেকে বড়ো ভুল মনে হচ্ছিলো। রাগের বসে তৎক্ষনাৎ ওকে অনেক কথা শোনাই। বলি, ‘তুমি আমার যোগ্য নও। কারও যোগ্য নও তুমি। তোমার মতো মেয়ে কখনো অন্যের জীবনে অশান্তি ছাড়া আর কিছু বয়ে আনতে পারে না।’ আরও না জানি কতো কি বলে বের করে দিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। বের করার আগে ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম তাদের মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা। আধ ঘন্টার রাস্তা সে বিশ মিনিটে চলে এসেছিলো। ফাল্গুনী সে অবধি ঘরের বাইরে গেটের সামনে বসেছিলো। একটা কথাও বলেনি। নিজের স্বপক্ষে না কোন যুক্তি দেখিয়েছে আর না কোন অভিযোগ করেছে। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি বাবা আর মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে। বাবা বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার কারনে হাতে আর মাথায় ব্যাথা পেয়েছিলো। মায়ের তেমন কিছু না হলেও বি পি লো হয়ে গেছিলো। সেসবের জন্য ডাক্তার ডাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফাল্গুনীর বাবা আসার পর গেটের বাইরে ফাল্গুনীকে বসে থাকতে দেখে ওকে হয়তো জিজ্ঞেস করেছিলো কিছু। দুইএকটা কথা বলতে দেখেছি ঘর থেকেই। ফাল্গুনীকে নিয়ে বাবা চলে যায় বাড়ির গেট থেকেই। কি কথা বলেছিলো শুনিনি। আর আমিও এগিয়ে যাইনি ওদিকে। ভেবেছিলাম হয়তো ভেতরে আসবেন কিন্তু তিনি ভেতরেও আসেন নি। বাইরে থেকেই চলে গেছেন। সেদিন আর কোন কথা হয়নি আমার কারও সাথে। পরের দিন অফিস যাওয়ার আগে বাবা আমার সাথে একা কথা বলতে চায়। আমার খাবার যেহেতু মা নিজে হাতে সবসময় করতো তাই আমি মাকে পরোটার কথা বলে ব্যস্ত রেখে বাবার সাথে আলাদা কথা বলি কিছুটা লুকিয়ে চুরিয়ে। আমাকে একলা পেয়েই বাবা বুকে আর মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে উঠে আর বলে,

‘ফাল্গুনীর কোন দোষ ছিলো না, ও পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র। তোর মা প্রতিটা দিন ওর সাথে রেষারেষি করে, কথায় কথায় গায়ের রঙ আর কাজ না পারা নিয়ে কথা শোনায়। বাড়িতে যেই আসে তার সাথেই ফাল্গুনীকে নিয়ে সমালোচনা করে। ঝিমলির সাথে তুলনা করে ওকে ছোট করে। পড়াশোনার দুর্বলতা নিয়েও যা খুশি বলে। মেয়েটা বাইরের লোকের সামনে কোন কথা শুনে সহ্য করতে পারে না, বারবার বলে ঘরের কথা ঘরে বলতে বাইরের মানুষের সামনে কিছু না বলতে তবুও তোর মা আরও বেশি করে করে ওকে বাইরের লোকের সামনে কথা শোনায়। আর গতকাল তো সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তোর মা। বলেছে তোর আবার বিয়ে দেবে। এমন মেয়ে আনবে যে সুন্দরী হবে, গায়ের রঙ হবে ঝিমলির মতো দুধে আলতা, সংসারের কাজ না করুক তবে জানা থাকবে সব কাজ, আর বিয়ের পর পরেই নাতি-নাতনীর মুখ দেখাতে প্রস্তুত থাকবে এমন মেয়েই ঘরে আনবে। আরও বলেছে ফাল্গুনীর বাবা একটা জোচ্চোর। ধোকা দিয়ে এতো সুন্দর ছেলের গলায় শ্যামলা মেয়ে গছিয়ে দিয়েছে। পারিবারিক শিক্ষা নিয়েও যা নয় তাই বলেছে। এখন তুই বল বাবা, কোন বউ তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনলে অধৈর্য হবে না আর কোন মেয়ে তার বাবার সম্পর্কে মিথ্যে অশালীন তিরস্কার শুনলে চুপ করে থাকবে? ফাল্গুনী সারাদিন চুপ করেছিলো। তোর মায়ের বাইরের মানুষের সামনে তিরস্কারে অতিষ্ট হয়ে শুধু বলেছিলো তুই এলে তারপর সামনাসামনি এ বিষয়ে ও কথা বলবে রাতে। কিন্তু তুই রাতে আসতে দেরি করলি। তোর মা ফাল্গুনীর বাবা-মা তুলে আর তোর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কথা শোনালো, তখনই ফাল্গুনী রেগে গিয়ে তোর মাকে বলছিলো,

‘আপনি মা নামের ক’ল’ঙ্ক! নিজের ছেলের সুখও আপনার সহ্য হয় না। একটা কালসাপ আপনি। নিজের ছেলে কি চায় না চায় তা জিজ্ঞেস না করেই চাপিয়ে দেন নিজের সব ইচ্ছে আকাঙ্খা। আর স্বামীর অসুস্থতার দোহাই দিয়ে উসুল করে নেন অন্যায় আবদার গুলো। আপনার মতো বিষ মনে রাখা মানুষ যে কি না নিজের স্বামী সন্তানের ভালোই চায় না সে অন্যের বাড়ির মেয়ের ভালো আর কি চাইবে!’

আমি তোর মাকে বারবার চুপ করতে বলছিলাম ডেকে, তারপর তোর বাইকের শব্দ শুনে ফাল্গুনীকে চুপ করতে বলি বারবার। আমার মন বলছিলো তুই ফাল্গুনীর একার কথা শুনে ফাল্গুনীকে ভুল বুঝবি। শেষমেশ তাই হলো। ঘরের দরজা খোলা ছিলো তুই এসে শুধু ফাল্গুনীর মুখের কথাগুলো শুনলি তারপর তোর মাকে অসুস্থ হতে দেখে আরও বেশি রেগে গেলি আর মেয়েটাকে এতো রাতে অপমান করে বের করে দিলি বাড়ি থেকে। মেয়েটা মোটেও খারাপ নয় আর না অধৈর্য। মেয়েটা বড্ড লক্ষ্মীমন্ত। তুই ফিরিয়ে আন মেয়েটাকে। আমি তো বাবা ঘরের বোঝা। তোর মা আমাকে দয়া করে বোঝার মতো টানছে। বিছানা থেকে বাথরুম পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছি এক বছর হলো। আমি তো তোর মায়ের সামনে তোর মায়ের বিরোধিতা করে কথা বলতে পারি না রে বাবা। আমার দিন ফুরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। তুই তো আমার মতো নোস বাবা। তুই লক্ষ্মীটাকে ফিরিয়ে আন।’

সেদিন সকালে বাবার কথা শুনে আর এক মুহুর্তও দেরি করি নি। অফিসে না গিয়ে ছুটে বের হয়ে যাই ফাল্গুনীর কাছে যাবো বলে। বড্ড অনুশোচনা হয় নিজের কাজের জন্য। সত্যি বলতে ছ’মাসের সংসারে অশান্তি, ছুট খাট ঝামেলা আর চারপাশের নানান ক্লেশে পরে ফাল্গুনীকে কখনো আপন করে নেওয়ার চেষ্টাই করি নি। কখনো ভালোবাসার চেষ্টা করিনি মেয়েটাকে। ভালোবাসা তো দূর ওর কোন সমস্যা হচ্ছে কি না বা রোজকারের এতো অশান্তির কি কারণ, এসবে ওর কতোটা ভূমিকা আর ওর স্বপক্ষে সাফাই বা কি তা জানতে চেয়ে সমাধান করার চেষ্টা করি নি কখনো। সেদিন এক বুক অনুতাপের অনলে দগ্ধ হতে হতে ফাল্গুনীদের বাড়ি যাই। আমি যাওয়ার পর ফাল্গুনীর বাবা-মা কেউ আমার সাথে না খারাপ আচরণ করেছিলো আর না আন্তরিক ব্যাবহার করেছিলো। আমি হতাশ হইনি তাতে। বরং মুগ্ধ হয়েছি তাদের ধৈর্য দেখে। তাদের মনের অবস্থা টা আমি বুঝতে পেরেছি তাই বাবা মা দুজনের হাতে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। কিন্তু ফাল্গুনী! তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাইনি। সে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। একমাস নাগাদ হাজার চেষ্টা করে ওর মুখটাও দেখতে পারি নি, কথা বলা তো দূরেই থাক। সেই এক মাসের প্রতিটা মুহুর্ত অনুভব করেছি ফাল্গুনীকে। অনুতাপ থেকে অনুভূতির বহর পাল্টেছে সেই একমাসে। অনুভব করেছি ওকে দূর থেকেই রোজ। আগের মতো অফিস শেষে বন্ধুমহলের আড্ডা ছেড়ে দিলাম। রোজ অফিস থেকে চলে যেতাম ফাল্গুনীদের বাড়ি। এক ঘন্টা বসে থেকে চলে আসতাম। তবুও ওর দেখা পেতাম না। অফিস কামাই দিয়ে দুই একদিন ওর স্কুল কোচিং এর সামনেও দাঁড়িয়েছি কিন্তু দেখা পাই নি। আমি যে রোজ কাঙ্গালের মতো ও বাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম তাতে বাবা-মা কখনো অনাদর করেন নি আমায় আর না কখনো কোন কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। ফাল্গুনী দরজা আটকে বসে থেকেছে পুরোটা সময়। সেই একমাস এভাবেই কেটে গেলে তারপর আমি দু’দিন আর যাই নি ও বাড়ি। তিনদিনের দিন ফাল্গুনীর বাবা আমায় ফোন দিয়ে যেতে বলে ও বাড়িতে। আমি ও বাড়িতে পা রাখতেই প্রথমে চোখে পড়ে ফাল্গুনীকে। ওই দরজা খুলেছিলো। কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভেতরে আসতে বলে। আমি ভেতরে গিয়ে দেখতে পাই আমার মামা, আর পিসেমশাই ও ভেতরে বসা। তারপর কথা হয় সবাই মিলে। আলোচনা হয় ফাল্গুনীকে আর আমাকে সামনে রেখেই। আলোচনার তাৎপর্য ছিলো, ফাল্গুনী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এভাবে ওর পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে আর সংসারেরও ক্ষতি হচ্ছে। কোনটাই পূর্ণতা পাচ্ছে না। আমি যদি ওকে নিয়েই সংসার করতে চাই তাহলে ওর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে ওর জন্য। সে পর্যন্ত আঠারো বছরও পূর্ণ হয়ে যাবে ওর আর সংসারের কাজকর্মও শিখে নিতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত নাকি ফাল্গুনীর নিজের ছিলো। আমি দ্বিমত পোষণ না করে স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নেই। শুধু শর্ত জুড়ে দেই একটাই, আমি রোজ অফিস শেষে ও বাড়িতে যাবো। ফাল্গুনী ঘরবন্দী থাকতে পারবে না। শুধু চোখের দেখা দেখে আর ওর হাতের এক কাপ চা খেয়েই চলে আসবো। শর্তের কথায় সবাই হেসে দিলেও ফাল্গুনী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া করেছিলো। তবে মেনেও নিয়েছিলো আমার শর্ত। তারপর দিন চলতে লাগলো বিবাহিত ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে। মা মাঝে মাঝে বিয়ে নিয়ে ছোট করে আওয়াজ দিতো। আমি প্রথম প্রথম এড়িয়ে গেলেও পরে প্রতিবাদ করতে শুরু করি। ফাল্গুনীকে ছেড়ে দেওয়া তো দূর ওকে যে আমি ভালোবাসি তাও বারবার বলতে থাকি। কি কপাল দেখো, বউকে ভালোবাসি তা বউকে জানানোর আগে মায়ের কানে মাইক বাজিয়ে বলতে হয়। তাও আবার রোজ নিয়ম করে উঠতে বসতে দু’বেলা। এভাবে চলতে চলতে মা চুপ করে যায় কয়েক মাসে। এমনকি ফাল্গুনীকেও ফিরিয়ে আনতে বলে বারবার। আমি বলে দেই ফাল্গুনী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়ে এ বাড়ি আসবে না। একসময় এটাও মেনে নেয়। ওদিকে ফাল্গুনীর সাথে দেখা করতে প্রথম দুয়েক দিন গেলেও তারপর যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ ছিলো সামনে ওর মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই ফাল্গুনীর বাবাকে বলি আমি ওর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর খুব একটা যাবো না। কিন্তু পনের দিন না যেতেই ফাল্গুনী আমায় ফোন করে বসে ওর মায়ের ফোন দিয়ে। কান্নায় দলা পাকানো আঁটকে যাওয়া গলায় অভিযোগ করে আমি কি তবে আমার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি, তাই যাচ্ছি না আর ওর সাথে দেখা করতে। আমি সেদিন বিশ্বজয়ের তৃপ্তি নিয়ে হেসেছিলাম। আর ও লুকিয়ে চুড়িয়ে ফোনের ও পাশে অধৈর্য্য হয়ে নাক টানছিলো। আমায় সেদিন কথাও শুনিয়ে ছিলো আচ্ছা মতো। সেদিন আমি বুঝিয়ে সুজিয়ে পরিক্ষার কথা বলে ফোন রেখে দিই। তারপর ওর পরিক্ষা হয়ে গেলে আবার অফিস শেষে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে দু’বার করে ও বাড়ি যাওয়া শুরু করি। এভাবে দুই বছরেরও বেশি পার হয়। ওর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়। আমাদের সম্পর্কটা একটু স্বাভাবিক হয়। সহজ হয় ও নিজেও। কিন্তু মন খুলে কখনো কথা হতো না দুজনের। কেউ কারো সামনাসামনি কখনো হেসে কথা বলা হয়নি। তবুও কথা হতো। খুব সাধারণ আর অদরকারী কথাই হতো দুজনের। যা না বললে কারও ক্ষতি হবে না বা বললে কারও উপকারও হবে না। প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি সময় পার হয় এভাবে। ওর বয়স তখন আঠারো পেরিয়ে উনিশ। ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি আমার বাড়িতে। আবার শুরু হয় দুজনের সংসার। তবে এই নতুন করে শুরু করা সংসার ও ছয় মাসে থমকে যায়। হেরে যাই আমি। তবে এবার শুধু আমি একা হেরে যাই নি। ফাল্গুনীও হেরে যায়। দুজনের ব্যার্থতা মিলে বাক নেয় বিচ্ছেদের পথে। ছয় মাস করে দু’বারে একবছর। একবছরের সংসার গিয়ে দাঁড়ায় কোর্টের দোরগোড়ায়।”

~চলবে