পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-১০+১১

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১০

রাত আটটা বাজে চন্দ্র তড়িঘড়ি করে বাসার মেইন গেট খুলতেই ড্রয়িং রুমে বাবা চাচাদের বসা দেখতে পায়।
কামরুল সাহেবরা কেউ আজ আর গ্রামে ফিরে যায় নি। পারভেজ সাহেব পুনম নিশাকে নিয়ে চলে গেছে রোজিনা বেগম বাসায় একা দেখে।
মিরাজ সাহেব কাল চলে যাবেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে তার কর্মস্থল সেখানেই।

ড্রয়িং রুমে গম্ভীর কামরুল সাহেবকে দেখে এগিয়ে যায় চন্দ্র। তার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে — কি হয়েছে বাবা??

চন্দ্রর কথা শেষ হতে দেরী কামরুল সাহেবের থাপ্পড় মারতে দেরী নেই। রক্ত চোক্ষু নিয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে

— কি হয়েছে তুমি জানো না বাড়িতে থাকতে আমি তোমাকে প্রথম দিনেই সাবধান করেছিলাম তারপরও কেন নিশার হাতে তুমি এরকম করেছ??

— নিশা আমার গালে হাত দিয়েছিল তোমরা সবাই জানো আমি নিজের গায়ে কারো ছোঁয়া মেনে নিতে পারিনা।

— তাই বলে মেয়েটার হাতের এই অবস্থা করবে। আমি তোমাকে সাবধান করছি চন্দ্র তুমি যদি এরকমই বেপরোয়া থাকো আমি তোমার থেকে পুনমকে সরাতে বাধ‍্য হবো পারভেজকে দিয়ে পুনমকে অন‍্য জায়গাই সরাতে বাধ‍্য হবো।।।

কামরুল সাহেবের কথা শেষ হতেই গ্লাস ভাঙ্গার ঝনঝন আওয়াজে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই কেপে ওঠে।

— এই বাবা তোমরা জানো না পুনম আমার জন‍্য কি?? হ‍্যা তুমি এই কথাটা কিভাবে বলতে পারলা বলো তো।। আমি আমি পুনম বিহীন নিশ্চিন্ন সেটা তোমরা জানো না,,

বলতে বলতে ড্রয়িং রুমের এদিক ওদিক পায়চারি করছে আর নিজের চুল খামচে ধরছে। চাদনী বেগম নিপা বেগম চন্দ্রের এই রূপ দেখে আচল মুখে গুজে কেদেঁ দেয়।
কামরুল সাহেব ইশারা করতে শিহাব রিশান এসে চন্দ্রের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করতে চন্দ্র শিহাবের দিকে তাকিয়ে ঢলে পড়ে।

শিহাব রিশান মিলে চন্দ্রকে ধরে তার ঘরে শুয়িয়ে দেয়। কামরুল সাহেব ধপ করে বসে পড়ে সোফায়। মিরাজ সাহেব সেদিকে একবার তাকিয়ে বলল — আমি বলি কি ভাইজান পারভেজ ভাইকে একবার সব বলেই দেখেন চন্দ্রকে পারভেজ ভাই অনেক ভালোবাসে সব জেনে অমত করবে না। কত দিন তাদের থেকে লুকিয়ে রাখবেন।

— কি বলব মিরাজ এইটা বলব যে আমার ছেলের ওসিডি আছে আমার ছেলে মা বোন আর পুনম বিহীন কোনো নারী সহ‍্য করতে পারে না নাকি এটা বলব যে সে একসময় ড্রাগ অ‍্যাডিক্টেড ছিলো??

।। থেমে আবার বললেন — একটা মাত্র ছেলে আমার কি হাল হয়েছিল সেটা আমিই জানি এক মাত্র পুনমের উছিলায় ভালো আছে বর্তমানে। পারভেজ জানলে সেই ভালো থাকাটাও কেড়ে নিয়ে যাবে

— এভাবে আর কতো দিন??

— যতদিন পারি।।

আর কেউ কোনো কথা বলল না মুক্তি ঘরে বসে ভাইয়ের জন‍্য কাদছে। তার পাশে ঝিনুক ও রিমিও কাদছে। শিহাব রিশান চন্দ্রের পাশে বসে আছে। ঘুমের ঘরেও উঠে কোথাও চলে যেতে পারে এই ছেলে।

— চন্দ্র ভাই,,,,,

রাইয়‍্যান দৌড়ে চন্দ্রের ঘরে যেতে নিলে তাকে থামায় নিপা বেগম।
— বাবা চন্দ্র ভাই এখন ঘুমাচ্ছে সে অসুস্থ তো তাই তাকে ডিসটার্ব করা যাবে না।

রাইয়‍্যান মাথা নাড়িয়ে আবার তার আপ্পির কাছে চলে যায়।

__________________________

পারভেজ সাহেবকে একা আসতে দেখে রোজিনা বেগম থমকে যায়।
— রুপশা আর জামাই আসেনি??

রোজিনা বেগমের প্রশ্নে পারভেজ সাহেব তাচ্ছিল্য হেসে বলল — বড়লোক ঘরে বিয়ে দিয়েছ তারা কি এই গরীবের বাড়িতে পা দিবে। পরোক্ষনেই আবার গম্ভীর স্বরে বলল — জামাই আসতে পারবে না,, সে কাল কক্সবাজার যাবে রুপশাকে নিয়ে।

রোজিনা বেগমের চোখে মুখে আধার নামে নিশা দৌড়ে এসে কত কথা বলে বড় আপার শশুর বাড়ির সেগুলো কানে যায় না রোজিনা বেগমের। যেতো কক্সবাজার তারা না করত নাকি তবে একটা দিন মেয়েটাকে এখানে নিয়ে আসতো পরে যেতো।
পরেই মাথায় চিন্তা আসে সে কি ভুল করল নাকি মেয়ে এখানে বিয়ে দিয়ে,,,??

মাথায় নানান চিন্তা আসলেও তা ঝেড়ে ফেলে রোজিনা রাতের খাবারের আয়োজন করে হালকা পাতলা।

পুনম এসেই সবার আগে ঘরে ঢুকেছে। ড্রেস চেঞ্জ করে বাইরে বের হয় রান্নাঘরে উকি দিয়ে দেখে রোজিনা বেগম উদাসীন ভঙ্গিতে কিছু ভাবছে আর রান্না করছে,,,;

— আম্মু আমি সাহায্য করি তোমার তো হাতে ব‍্যাথা,,,

পুনমের কথায় ধ‍্যান ভাঙ্গে রোজিনা বেগমের সে বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। পুনম নিরবতা সম্মতি ভেবে পাশে বসে এটা সেটা এগিয়ে দেয়। মনোযোগ দিয়ে রান্না দেখে।

— আম্মু আম্মু রুপশা আপুর মোবাইলটা কোই???

নিশার চিল্লাচিল্লিতে আরো বিরক্ত হয় রোজিনা। নিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — কেনো ওর মোবাইল দিয়ে তুমি কি করবা??

— রুপশা আপু ওর মোবাইলটা আমারে নিতে বলছে ওরে দুলাভাই নতুন মোবাইল কিনে দিব।।

— ঐটা এখন তোমারে দেয়া যাবে না আপাতত আমার কাছেই থাক পুনম এসএসসি পরীক্ষা দিলে ওরে দিব,,

মায়ের গম্ভীর স্বরে নিশা কিছু বলল না তবে পুনমের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যায়। পুনম নিশার ঔদ্ধত‍্য দেখে ভরকে যায়। এই মেয়েটা বয়সের আগে পেকে গেছে একে এখন সামলানোর দরকার ।

____________

রাত এগারোটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হাত মুখে ময়শ্চরাইজার লাগাচ্ছিল রূপশা তখন ঘরে ঢোকে লিমন।

রূপশা সেদিকে একপল তাকিয়ে আবার নিজের কাজ করতে থাকে। লিমন সেদিকে দেখে চলে যায় ওয়াশরুমে। খানিকক্ষণ পর বের হয়ে রুপশার পিছন বরাবর দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে বলল — এগুলো মেখে লাভ কি সেই একটু পরতো উঠেই যাবে,,,,

লিমনের কথার মানে বুঝতে পেরে রূপশা আড়চোখে সেদিকে তাকায়। রুপশাকে আড়চোখে তাকাতে দেখে হাসে লিমন। হেসেই বলে — আমার বউটা কি রাগ করেছে?? বাপের বাড়ী যেতে দেইনি বলে।

লিমনের কথা শুনে রুপশা ফুপিয়ে ওঠে। এই লিমনকে তার অচেনা ফোনে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা লিমন না ইনি। রাপশার কেনো জানি মনে হচ্ছে যে এতোদিন যার আদুরে কথায় গা ভাসিয়েছে লিমন সে না। এই লিমন গম্ভীর কেমন জানি কথার ধাত।

লিমনের আদুরে ছোঁয়ায় ঘোর ভাঙ্গে রুপশার।
— আজ বাবার বাসায় গিয়ে কাল চলে আসতাম তাহলেই হতো,,,;

— উহু আমার হতো না
রুপশাতে মত্ত্ব থেকেই বলল লিমন। রুপশা আবার কিছু বলতে যাবে লিমন নিজস্ব ভঙ্গিতে চুপ করিয়ে দেয়। মিনিট খানিকক্ষণ পর ছেড়ে গম্ভীর স্বরে বলে — আমার কথার বিপরীতে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। তাহলে ফলাফল ভালো হবে না।

রুপশা ভয় পায়। ভীতু চোখে তাকাতেই লিমন চোখের পাতায় চুমু খায়। আলগোছে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে রুপশার তনুতে।
অন্ধকারের রুপশার চোখে এক ফোটা জল পড়ে এ কোথায় পড়ল সে।
এরকম বন্দী জীবন রূপশার কোনোকালে পছন্দ ছিলো না। বাবার বাড়িতে স্বাধীন ভাবেই চলাফেরা করেছে । আর রুপশা এখানে একেকটা কদম মনে হয় লিমনের অনুমতি নিয়ে দিতে হয় রুপশার। এই দুইদিনেই রূপশার অসহ‍্য হয়ে গেছে বাকী জীবন সে কিভাবে কাটাবে ভেবে পায় না।।

____________________

অন্ধকার রাত পেরিয়ে স্নিগ্ধ সকালের আনাগোনা। আজ বুঝি একটু বেশীই শীত পড়েছে। সকাল সকাল বাবার ফোন থেকে পুনম চাচা চাচীদের ফোন দিয়েছে।
চন্দ্রদের বাড়িতে রাতে কেউ ঘুমাতে পারেননি। সবাই চিন্তিত ছিলো। তাদের বংশের বড় ছেলে চন্দ্র। ছেলের সংখ‍্যা মাত্র দুইজন। রাইয়‍্যান,, চন্দ্র।

এদের তিন ভাই অনেক ভালোবাসে,,। তবে তিন ভাইয়ের কাছে মেয়েরাও সমান ভালোবাসার ভাগিদার। বাবাদের কাছে চন্দ্র রাইয়‍্যান একটু বেশী শাষন পেয়েছে ।। মেয়েদের মধ‍্যে সবচাইতে বেশী আদর পায় পুনম সেই পুনমের কল সকাল সকাল পেয়ে সবার মন পুলকিত হলো।

— আসসালামু আলাইকুম বড় চাচা কেমন আছেন। চাচী কই ছোট চাচা কই ছোট চাচী কই আপু কই ঝিনুক রিমি কই??? সবাই কেমন আছে??

— আস্তে আম্মা আস্তে,,, সবাই এখানে আছে ভালো আছে। তোমার চাচীরা রান্নাঘরে আর সবাই ঘুমায়।

— ওও আমি মনে হয় ডিসটার্ব করলাম??

পুনমের কথা শুনে মিরাজ সাহেব ফোন নিয়ে বলেন — আমার আম্মার ফোনে আমরা কখনও ডিসটার্ব ফিল করি না,,

মিরাজ সাহেবের কথা শুনে পুনম খিলখিল করে হাসে। পিছন থেকে রোজিনা ঝাড়ি দিতেই মুখ গোমড়া করে চুপ বনে যায়। মিরাজ সাহেব মোবাইলের স্ক্রিনে রোজিনা বেগমের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল — আমাদের আম্মার ঠোঁটে এরকম হাসি মানায়। নিজের মতো হাসবে কে কি বলল শুনবে না।

পুনম মুচকি হাসে। পারভেজ সাহেব স্ত্রীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। পুনম একে একে সবার সাথে কথা বলে
মুক্তি কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের ফোন মায়ের কাছে নিয়ে যায়।

— আসসালামু আলাইকুম বড় চাচী,, ছোট চাচী।

চাদনী বেগম নিপা বেগম একসাথে উত্তর নেয়। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখে ততক্ষণে চন্দ্র ঝিমাতে ঝিমাতে ড্রয়িং রুমে পৌছায়। সবাই চন্দ্রের দিকে তাকায়।
চন্দ্র চোখ বন্ধ রেখেই বলল — পুনম কল দিয়েছিল??

— হ‍্যা

— আমি কথা বলব আবার কল দাও,,,,

কামরুল সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন — যতদিন না তোমার পড়াশোনা শেষ না করে কিছু করছ পুনমের সাথে কোনো কথা বলবে না তুমি এবং কোনো যোগাযোগ রাখবে না।

বাবার কথা শুনে চন্দ্র তড়াক করে চোখ খুলে।। উত্তেজিত হয়ে বলে — এটা কেমন কথা বাবা?? আমি তোমাদের কথা মানতে রাজী না।।

— ঠিকাছে তাহলে আমি পারভেজকে বলে দেই তোমার সত‍্যতা।

চন্দ্রের চেহারা চুপসে যায়। পরোক্ষনেই ঠোট বাকিয়ে হেসে বলল — তোমরা আটকাতে পারবে আমাকে??

চন্দ্রের কথায় আবারও বাপ ছেলের তর্কাতর্কি লাগবে লাগবে ভাব তখনই আবারও কল আসে পারভেজ সাহেবের। এবার হোয়াটস অ‍্যাপে তখনই কামরুল সাহেব চুপ হয়ে কল রিসিভ করে।
— উফফ বড় চাচা আমি জিজ্ঞাসা করতেই ভুলে গেছি
একটা টিশার্ট দেখিয়ে বলল — দেখোতো এটা চন্দ্র ভাইয়ের কি না,,,

কামরুল সাহেব আড়চোখে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে ফোন ফিরায়। স্ক্রিনে চন্দ্রকে দেখে ভরকে যায় পুনম সালাম দেয়।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম কি বলছিলি বল,,,

টিশার্ট দেখিয়ে বলল — এটা কি আপনার??

— হ‍্যা ধুয়ে যত্ন করে রাখবি যদি একটুও নষ্ট হয় তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।

— আচ্ছা
বলেই পুনম দ্রুত কল কাটে। চন্দ্র বাবার দিকে তাকিয়ে বলল — আমি তোমাদের সব কথা মানলাম। এবং ঐ পাগলের ডাক্তারের কাছেও যাব তবে আমার শর্ত আছে।

চন্দ্রের কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটল। আবার চন্দ্র বলল — তবে আমার চাকুরী পাওয়ার একদিনের মধ‍্যেই পুনমকে আমি ঘরে তুলতে চাই তখন কেউ কোনো বাহানা করতে পারবে না।

চন্দ্রের কথা সবাই মানে কামরুল সাহেব চিন্তা করে ততোদিনে চন্দ্র ট্রিটমেন্টে অনেকখানি সুস্থ হয়ে যাবে।
চন্দ্র নিজের ঘরে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল
— তোকে ছাড় দিলাম এই চার বছর তার পরের প্রত‍্যেকটা বছর তুই আমার সাথে থাকবি এই চন্দ্র বিলীন হবে তার পূর্নিমায়।।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আজ নতুন রুপে সেজেছে। মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে আজ এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ যারা অনার্স মাস্টার্স ও পিএইচডি শেষ করেছে তাদের মূল সনদ প্রদান করা হবে।
কেটে গেছে তিনটি বছর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের চন্দ্র এখন মাষ্টার্সের ছাত্র।
আর একবছর পরেই সে পরিপূর্ণ গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করবে। ছাব্বিশ বছর বয়সী টগবগে যুবক বলিষ্ট দেহে আটসাটো গ্রে কালারের শার্টে স্টেজের সামনে দাড়িয়ে জুনিয়রদের ইনস্ট্রাকশন দিতে থাকে

— চন্দ্র ফুল কম পরে গেছে,,,

শিহাবের কথা শুনে চন্দ্র পিছন ফিরে বিরক্তি নিয়ে বলে — তো আমারে না বলে ফুল আনতে কাউকে পাঠা

— চেইতা আছোছ ক‍্যান ভাই?? আমি কি করছি??

চন্দ্র চোখ গরম করে তাকাতে শিহাব মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি মেরে চলে যায়।। শিহাব যেতে চন্দ্রর ফোন বেজে ওঠে চন্দ্র পকেট থেকে ফোন বের করতে দেখে তার চাচা মিরাজ সাহেব ফোন দিয়েছে

— আসসালামু আলাইকুম ছোট চাচা

— ওয়ালাকুম আসসালাম,, কেমন আছিস চন্দ্র।

— হু আলহামদুলিল্লাহ্

— কথা বলা যাবে এখন আব্বা,,,

— হ‍্যা বলো;,,,,, চন্দ্র সাইডে এসে বলে।

— আমার হাতে একটা ভালো চাকুরী আছে মাল্টিন‍্যাশনাল কম্পানির অ‍্যাসিসট‍্যান্ট ম‍্যানেজার পদে,,,

মিরাজ সাহেবকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র নিজেই বলল — উহু চাচ্চু আমি চাকরি করব না ভার্সিটি থেকেই শিক্ষকতার জন‍্য জব অফার আসছে মাষ্টার্স শেষ হলে এখানেই জয়‍্যেন করব।

— ভেবে দেখ বাবা ভবিষ্যতে বাইরে সেট‍্যেল হওয়ার সুযোগ,,
মিরাজ সাহেবকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র বলল
— দরকার নেই চাচ্চু বাংলাদেশই আমার জন‍্য ঠিক আছে এমনিতেই আমার জবের দরকার নেই তবুও করব জাষ্ট আ‍ব্বুর স‍্যাটিসফ‍্যাকশনের জন‍্য।

মিরাজ সাহেব আর কিছু বলল না চুপ বনে গেলো জানে চন্দ্রকে হাজার বলেও রাজী করানো যাবে না তার না মানে নাই। সেটা হ‍্যা করানো অসম্ভব। চন্দ্র কথা শেষ করেই চলে যায় আবার নিজের কাজে। কিছু মনে হতেই পারভেজ সাহেবকে কল দেয়। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে বলে

— আসসালামু আলাইকুম শশুর আব্বা

— সামলে আব্বাজান সামলে মেয়ে আমার রাজী না। অতএব আমি রাজী না।

পারভেজ সাহেবের কথা শুনে চন্দ্র বাকা হেসে গম্ভীর স্বরে বলে — তো ভালোয় ভালোয় মেয়েটাকে এখানে পাঠিয়ে দাও তাহলে তাকে কিভাবে রাজী করানো লাগে সেটা চন্দ্রের বউ চন্দ্রই বুঝে নিবে,,,

— পাগল ছেলে আমার মেয়ে তোর কাছে দিব না কি করবি,,

— সেটা তোমার থেকে ভালো কেউ জানবে না।

কারো ডাকে চন্দ্র কথোপকথন শেষ করে।। পুনম এবার এইচ এসসি দিচ্ছে। আর দুইটা পরীক্ষা শেষ হলে তার এইচ এসসি পরীক্ষা শেষ হবে। এই তিন বছরে চন্দ্র একবারের জন‍্যেও পারভেজ সাহেবের বাড়িতে পা দেয়নি। পারভেজ সাহেব বাদে কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।।

_________________

কলেজে উঠার পর পুনমের দুইজন বন্ধু হয়েছে একজন ছেলে নয়ন আরেকজন মেয়ে মিহি।
এই দুইজন দুই বছর ধরে পুনমের সাথে ছায়ার মতো ছিলো। পুনমের দিনকাল মোটামুটি ভালোই কাটছে।

মায়ের সাথে এটা সেটা করে হাত বাটানো কলেজ সব মিলিয়ে ভালোই কাটছিল। রুপশার বিয়ের পর পারভেজ সাথে পুনমের প্রতি আরো বেশী ধ‍্যান দেয়। তাকে পড়াশোনা ও কাজের প্রতি মনোবল দেয়। বাবা সাহায্যে পুনমও এসএসসিতে জিপিএ 5 পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

এরপর থেকে পুনমের একটাই লক্ষ্য তা হলো পড়াশোনা।। এবং জীবনে কিছু একটা করা।
— এই পুনু ঢাকায় কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবি ভর্তি পরীক্ষার জন‍্য,,??

— জানিনা আব্বু জানে,, তুই কি করবি।
নয়নের দিকে তাকিয়ে বলল পুনম
নয়ন মিহির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল — মেডিক্যালে পরীক্ষা দিব হলে ভালো না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এছাড়া আর কোনো ইচ্ছা নাই আর ভাইয়া বলছে ইউসিসিতে ভর্তি করিয়ে দিবে।

— আমিও জানিনা আব্বু কি বলে। মিহির দিকে তাকিয়ে বলে — কিরে মিহি তুই কি করবি??

মিহি উদাস ভঙ্গিতে বলে — জানিনা আমার আ‍ব্বার আমাকে ঢাকায় কোচিং এ ভর্তি করানোর মতো সামর্থ্য নাই তোরা তো জানিস তবুও ঘরে পড়েই যতটুকু পারি তাই করব।

— চিন্তা করিস না আমরা তোকে হেল্প করব।

পুনম নয়ন একসাথে বলে উঠে। বন্ধুদের কথা শুনে মিহি মুচকি হাসে সেই হাসি দেখে পুনম নয়ন ও হাসে।
কথা বলতে বলতে পুনমের বাসা চলে আসলে পুনমে চলে যায় বাসায় ঢুকতে কোথা থেকে মুক্তি দৌড়ে এসে পুনমকে জড়িয়ে ধরে।
পুনম ও মুক্তিকে জড়িয়ে ধরে — আপুউউউ বলে চিৎকার দেয়।

— তুমি এখানে

— হ‍্যা কাল তোর পরীক্ষা শেষে পরসু তোকে নিয়ে ঢাকায় যাব

— পরসু ঢাকা যাব কই আব্বু তো কিছু বলল না।

— চাচ্চু তো মানতে রাজী না তার কথা আর কিছুদিন পরে তোকে পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু আব্বু রাজী করিয়েছে।

— সত‍্যি

মুক্তি মাথা নাড়ায়। দুইবোন আরো অনেক কথা বলতে বলতে ঘরে যায়। আজ মুক্তি একাই এসেছে কামরুল সাহেব গাড়ি ঠিক করে পাঠিয়েছে।। সে আসতে চাইলেও ব‍্যবসার কাজের জন‍্য আসতে পারেনি। বর্তমানে কামরুল সাহেবের ব‍্যবসা বেশ ফুলে ফেপে উঠেছে ঢাকা শহরের বাড়িটা ডুপ্লেক্স করেছে গাড়ি করেছে। পারভেজ সাহেবের ও ব‍্যবসা উন্নতি হয়েছে। সবাই বেশ ভালোই আছে। তবে এই তিন বছরে সবাই যাওয়া আসা করলেও চন্দ্র ও পুনম কেউ কারো বাসায় যায়নি।

।। খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে নিশা রোজিনা বেগমকে কিছু ইশারা করে বললে রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেবের উদ্দেশ্যে বলে
— পুনম ঢাকায় পরতে যাচ্ছে। নিশাও এবছর কলেজে ভর্তি হয়েছে আমি বলি কি নিশাকেও ঢাকায় কোনো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলে ভালো হয়না। দুই বোন একসাথে কলেজে যাবে আসবে।।

পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগমের কথা শুনে তাকায় তার দিকে আবার নিশার দিকে তাকায়।
— তুমি তো ঢাকায় যেতে চাওনি বলেই আমি এখানের কলেজে তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিছি।

— আব্বু তখন ভেবেছি এখানে ভালো কলেজ কিন্তু এখানের কলেজ একদম ভালো না।

— অথচ পুনমও ঐ কলেজ থেকেই এবার ইন্টার দিচ্ছে,,,,,,,,

নিশা আর কিছু বলে না মাথা নিচু করে খেতে থাকে পুনম মুক্তি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার খেতে থাকে। রোজিনা বেগম গম্ভীর স্বরে বলল — নিশা তখন যেতে চায়নি এখন যাক সমস্যা কি??

পারভেস সাহেব এবার ইমোশনালি ব্ল‍্যাকমেইল করে বলল — মেয়েকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে নিশা চলে গেলে তুমি একা হয়ে যাবে না

রোজিনা বেগম ভেবে দেখলেন আসলেই পুনম চলে গেলেও তার সমস‍্যা নাই তবে তার এখন সব আশা ভরসা নিশাকে নিয়েই সে থাকতে চায়।
— হুম তাও ঠিক নিশা আম্মা তোমার কোথাও এখন যাওয়া লাগবে না
নিশা রোজিনা বেগমের কথা নাক ফুলিয়ে মুক্তির সাথে কথা বলতে খেতে থাকা পুনমের দিকে তাকায়। মনে মনে সে পুনমের প্রতি ক্ষুদ্ধ।।
— এই কাইল্লা চাদঁ ঢাকা শহরে পরব চন্দ্র ভাইয়ের বাড়িতে থাকবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

মনে মনে ভেবে ভাতে মুঠো করে চটকায়। যেনো পারেনা পুনমকেই চটকে দিচ্ছে।।
খাওয়া দাওয়া শেষে পুনম মুক্তি একসাথেই ঘুমায়। কাল ঝিনুকরাও যাবে ঢাকায় তিনবোন ঝিনুক রিমি পুনম তিনজন একসাথে কোচিং করবে মুক্তিদের বাসা থেকে।
দুইদিন থেকে পুনমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
দীর্ঘ পাচঁ ঘন্টা জার্নি শেষে পুনম মুক্তি ঢাকার সাভারে পৌছায়।।

পুনমের আসার খবর পেয়েই চাদনী বেগম বেজায় খুশী। সকাল থেকেই পুনমের পছন্দের রান্না করছে। গাড়িটা উঠোনে থামতেই চাদনী বেগম দৌড়ে আসে সাথে কাজের মেয়ে জরিনা।

— ঐতো আমার শাশুড়ি আম্মা চলে এসেছে,,,

মুক্তি ক্লান্ত পুনমকে গাড়ি থেকে নামায়। চাদনী বেগম দৌড়ে পুনমকে ধরে কপালে গালে হাত দিয়ে বলে — কি হয়ে পূর্ণ মা

— কিছুনা চাচী ঐ গাড়িতে তিনবার বমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি এই যা।

— চল চল ভিতরে চল
পুনমকে নিয়ে ভিতরে যায় তারা পুনম বাড়ির চারিদিকে দেখতে দেখতে ভিতরে যায়। পুনমকে তার বরাদ্দ কৃত রুমে নিয়ে যায়।
পুনম হাত মুখ ধুয়েই একটা ঘুম দেয় একঘুমে রাত এগারোটায় ঘুম ভাঙ্গে।
খিদেয় পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে টের পেয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বের হয়।
নিচে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে কাউকে না পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়।
কাউকে না পেয়ে ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। এই বাড়িয়ে না আসলেও ভিডিও কলে এই বাড়ির প্রতিটি কোনা পুনমের দেখা।
সেই অনুযায়ী রান্নাঘরের ফ্রিজে চেক করে কি আছে উবু হয়ে ফ্রিজে দেখতে থাকে কি কি আছে। এরমধ‍্যে পিছন থেকে ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস পেতেই ভয় পায় পুনম ঘনঘন গরম নিঃশ্বাস পরছে পুনমের ঘাড়ে ভয় পায় পুনম চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে পিছনে তাকাতেই,,,,,,,,,,,,,

#চলবে