#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২০
বিকাল চারটা ত্রিশ মিনিট। পুনম গভীর মোহে পড়ে আছে পুনমের জীবনের প্রথম মোহ আকাঙ্খা রং তুলি,, ড্রয়িং রুমের জন্য পুনম কিছু পেইন্ট আর্ট করছে।
এর মধ্যেই কলিং বেলের আওয়াজ আসল। এই সময় কেউ আসায় বিরক্ত হলো পুনম হাতের তুলি রেখে উঠে দাড়ালো কোমরে জরানো ওড়নাটা খুলে শরীরে জড়াতে জাড়াতে এগিয়ে যায়।
দরজা খুলতেই নজরে আসে চন্দ্র। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল চন্দ্র দরজা খোলার আওয়াজে উপরে তাকায়। থুতনিতে সাদা রঙ লেগে আছে ঠিক যেনো চাদেঁর আকারে রয়েছে। চন্দ্র পুনমের পুরো মুখস্রীতে নজর বুলায়।
বিড়বিড় করে বলে — তুমি নামক পুনমে এই চন্দ্রের সিল লাগা লেগে গেলো এবার এই চন্দ্রের আধিপত্য বিস্তার করা বাকি,,,,,
— উহহ মাগোওওও,,,,,
রিশানের আর্দনাতে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের পিছন ফিরে একবার তাকে দেখে আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — সামনে থেকে সর,,,,
সাইড সরে যায় পুনম চন্দ্র হনহন করে ভিতরে ঢুকে আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে শিহাব রিশানও পিছন দিয়ে আসে। এদেরকে এই সময় দেখে পুনম অবাক হয়।
— মামারা কোথায়রে পুনম??
— আব্বু আম্মু ঘুমায় শিহাব ভাইয়া,, আর বড় চাচারা বাসায় চলে গেছে
— ওওওও
বলেই শিহাবও বসে পরল। শুধু দাড়িয়ে রইল রিশান পুনম রিশানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনম বলল — এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো রিশান ভাইয়া??
পুনমের কথায় শিহাব মিচকে হেসে বলল — ওরে স্পেশাল ডোজ দিয়েছে চন্দ্র
— কি??
— হু ওর
শিহাবকে বলতে না দিয়ে রিশান বলল — পুনম ওর কথায় কান দিস না। জানিস আমি আজ থেকে ঠিক করেছি সব জায়গায় তোর বডিগার্ড হিসেবে যাব।
বলেই আবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলল
— বডিগার্ড লাভলি সিং রিপোর্টিং আপা,,,,,,
রিশানের কথায় হাহা করে হেসে উঠল শিহাব পুনম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আর চন্দ্র বিরক্তিতে।
চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — এককাপ কড়া করে কফি দে তো,,,,
— কফি পাউডার নেই
পুনমের কথা শেষ হতে না হতেই আবারও দরজায় নক হলো পুনম গেটে দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা খোলা সেখানে একটা ছেলে একটা ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে আছে।। ভিতরে এসে বলল
— আসসালামু আলাইকুম ভা,,,, ফের চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — আপা মনি এগুলো চন্দ্র ভাই আনিয়েছে
পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের গম্ভীর স্বরে বলল — দ্রুত যা,,
পুনম বিরক্ত হয়ে থলেটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো খুলে দেখে দুধ চিনি সহ কফি পাউডার সবই আছে।
পুনম মেপে চার কাপ পানি দেয় হাড়িতে। চুলা জ্বালায় কিছুক্ষণের মধ্যে পানি বলক আসতে কফি পানি চন্দ্রের জন্য কাপে ঢেলে শুধু কফি পাউডার মিশিয়ে এক চামচ চিনি মিশায়। বাকী তিনজনের জন্য দুধ দিয়ে সুন্দর করে কফি বানায়। পুনম রান্নাঘর থেকে বের হয়েও দেখে তখনও রিশান দাড়িয়ে সাথে সেই ছেলেটা রিশানের সাথে দাড়িয়ে মোচরা মুচরি করছে।
পুনম কিছু না বলে চন্দ্রের কফি বাড়িয়ে দেয় চন্দ্র নিজের কফিতে নির্বিঘ্নে চুমুক দেয়। তা দেখে পুনম বিড়বিড় করে বলে — তিতা করলা আবার মিষ্টি খাবে সেটা ভাবাও অবাস্তব।
পুনমের বিড়বিড়রানি কানে গেলেও চন্দ্র কিছু বলে না সবাইকে কফি দিয়ে চলে যেতে নিলে ডাকে চন্দ্র
— ভাত দে খাব,,
— এখানে তো কিছু নেই সব আপনাদের বাসায় আর আপনি এতোক্ষণ না খেয়ে ছিলেন??
পুনমের দিকে তাকিয়ে চন্দ্র বলল — সেটা আমি জানি বাসা থেকে এনেই দিবি। নাহ এখানে আনা লাগবে না বাসায় চল,,
বলেই চন্দ্র উঠে দাড়ায় পিছন থেকে সাঙ্গপাঙ্গ দাড়াতেই চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — আয় আয় আমি হাগ**তে গেলেও তোরা আমার পিছু পিছু আয়,,,
চন্দ্রের কথা নাক মুখ কুচকে ফেলে পুনম নাকে ওড়না দিয়ে আগে আগে হাটে। কথা বাড়ায় না এই লোকের কাজ শেষ করে দ্রুত বাসায় আসতে চায় সে। শিহাব হাসতে হাসতে বলল — যেই জায়গায় আমরা একই কমোটে হা*গি সেই জায়গাই তুই আমাদের রেখে খেয়ে ফেলবি ভাবাটা বিলাসিতা তাও আজ মাফ করে দিলাম যাহ চন্দ্র যাহ ভারলে আপনি পেট,,
শিহাবের কথায় চন্দ্র ওর দিকে তাকাতেই শিহাব চুপসে যায়। চন্দ্র কালো শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল — রিশান আজকে তোর মেহমান দারীটা কেমন লেগেছে সেটা ইন ডিটেইল”সে শিহাবকে বলবি কালকে যাতে ওর কোনো সমস্যা না হয়।
চন্দ্র কথা শেষ করে চলে যেতেই শিহাবের মাথাটা হাতের মাঝে বন্দী করে রিশান। ঠুয়া দিতে দিতে বলে — আমি তোর মাথায় এইযে ঠুয়া গুলা দিতেছি তোর যেমন ফিলিংস হচ্ছে আমারও তেমনি হচ্ছিল।
শিহাব অনেকবার নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারেনা। শেষে নিজেকে বাচাতে রিশানের পশ্চাতদেশে ঠাসসস করে থাবা বসায়।
ব্যাথা জায়গায় ব্যাথা পেয়ে রিশান উহহ মাগো বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তার চিৎকারে পারভেজ সাহেব ও রোজিনা বেগম দৌড়ে ঘরে থেকে বের হয়।
— কি হয়েছে রিশান এমন চিল্লাচিল্লি করলি ক্যান। তোরা কখন আসলি পুনম কই??
— আরে মামু থামো কিচ্ছু হয়নাই এমনি আমরা দুষ্টুমি করছিলাম আর পুনম চন্দ্ররে ভাত বেড়ে দিতে গেছে
পাচঁ মিনিট হাটার রাস্তা দূরত্বে চন্দ্রদের বাড়ি। পুনমের পিছু পিছু চন্দ্র বাসায় ঢোকে ঢুকতেই দেখে মুক্তি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে অ্যাসাইনমেন্টে ব্যস্ত তাদের দিকে ফিরেও তাকাল না। চন্দ্র চেয়ার টেনে বসতেই পুনম রান্নাঘর থেকে ভাত বেড়ে একটা আলাদা বাটিতে তরকারি আনল।
চন্দ্রের সামনে দিতে চন্দ্র কিছু না বলে খাওয়া শুরু করল।। পুনম যেয়ে মুক্তির পাশে বসে। মুক্তি রুপশা এবার ফোর্থ ইয়ারে। লাষ্ট যেহুতু পড়ার চাপ বেশী
— আপু রুপশা আপুর সাথে তোমার দেখা হয়েছে??
নিজের অ্যাসাইনমেন্টে মনোযোগ থেকেই মুক্তি বলল — হ্যা আজ এসেছিল বলল কাল আসবে তোদের বাসায় লিমন ভাই নাকি অনুমতি দিয়েছে,,
— আচ্ছা
বলেই চুপ থাকল পুনম একবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল তার খাওয়া শেষ কিনা মিনিটের মধ্যে শেষ হতেই থালা নিয়ে ধুয়ে রেখে আসল। আর কোনো কথা না বলে চন্দ্রও চলে গেলো নিজের ঘরে তার এখন লম্বা একটা ঘুমের দরকার।
___________________
আজ চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগম যাবে আজ ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার দেখিয়ে রোজিনা বেগম ঘরের জন্য বাজার সদাইপাতি কিনবে। সেই প্রিপারেশনেই দুইজনে বের হয়েছে।।
পুনম ক্লাসে তাই তার জন্য রান্না করেই রেখেছে পারভেজ সাহেব এখানেও নতুন করে দোকান দিবে তাই সেটা দেখতে গিয়েছে।
— রোগির এজেটা অনেক বেশী এতে অনার জীবনে ঝুঁকি আছে। এই বয়সে বাচ্চা,,,
গাইনী বিশেষজ্ঞ আফিফা পারভীন রোজিনা বেগমের সকল রিপোর্টস দেখে বলল তবে শেষের কথাটা শেষ করতেও পারল না রোজিনার লজ্জায় নত মস্তক দেখে। বুঝল বাচ্চাটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
— আপনার শরীর একটা বাচ্চা ধারনে অতটা স্টেবল না রেষ্ট নিবেন আর বেশী বেশী খাওয়া দাওয়া করবেন।।
আরো কিছু ইন্সট্রাকশন নিয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হলো তারা। রিক্সায় উঠে চলল বাজারে
— হ্যারে রোজিনা এখন কোনো ভারী বাজার না করি মাছ মাংস এগুলো তোর ভাইকে দিয়ে আনিয়ে নিবনে,,
রোজিনা বেগম উদাস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। চাদনী বেগম নিজের মতো কেনা কাটা করে বের হয়। আবার রিক্সায় উঠে চাদনী বেগম রিক্সায় বসা পুরোটা সময় খেয়াল করে রোজিনা বেগম উদাসীন ছিলো ভেবে নেয় বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে,,
বাসায় এসে দারোয়ানকে রিক্সা থেকে জিনিস পত্র গুলো নামাতে বলে তারা ভিতরে যায়। রোজিনা বেগম বসতে তার সামনাসামনি বসে জিজ্ঞাসা করে — কি হয়েছে তোর এমন উদাস হয়ে আছিস কেনো??
— যার থেকে আমার কোনো আশা ছিলো না আপা সেই আমার পাশে আর যার থেকে সবচেয়ে বেশী আশা ছিল সেই আজ আমার থেকে দূরে।
বলেই ফিকরে কেদেঁ উঠল আবার কান্নাভেজা স্বরেই বলল — আজ দুইদিন নিশার ফোন বন্ধ আপা আপনার দেবরকেও কথাটা বলতে পারছি না। ওর হোষ্টেলের ওয়ার্ডেন ফোন দিয়েছিল নিশা নাকি আজ দুইদিন ধরে হোষ্টেলে ফিরছে না।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২১
সন্ধ্যা সাতটা পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেব তড়িঘড়ি করে কোথাও বেরোতে নিলে তখন চন্দ্র বাড়িতে ঢোকে। তাদের দেখে ভ্রু কুচকে বলে
— কোথায় যাও আব্বু চাচ্চু??
— আর বলিস না চন্দ্র বিকালে তোর আম্মু ফোন দিয়ে বলল রোজিনার শরীর খারাপ তাই আমি আর পারভেজ বাসায় যাই দ্রুত যেয়ে শুনি আরেক কথা নিশা নাকি আজ তিনদিন ধরে হোষ্টেলে যায় না তাই ওয়ার্ডেন ফোন দিয়েছে। পরিচিত সব জায়গায় ফোন দিয়েছি পারভেজের শালি সমন্দি সবাইকেই জিজ্ঞাসা করেছি তারা কেউ জানে না,,,
— তারা জানে এবং তাদের প্ররোচনায় নিশা এতোটা সাহস দেখিয়েছে,,
চন্দ্রের কথা পারভেজ সাহেব ও কামরুল সাহেব অবাক হয়। পারভেজ সাহেব অবাক স্বরেই বলে
— কি বলছিস চন্দ্র
— হ্যা চাচ্চু রুবি আন্টি সব জানে সেই এই সকল কিছু নাটিগুটি। সেই এতোদিন চাচীকে নিজের আঙ্গুলের মাথায় ঘুড়িয়েছে এখন নিশাকে।
— মানে
চন্দ্র হেয়ালি করে বলল — কাল সকালেই সব জানতে পারবে এখন বাসার ভিতর যাও,,,
— কি বলছিস চন্দ্র বাড়ির মেয়ে নিখোঁজ আর আমরা জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকব
— হ্যা থাকবে আর কেনো থাকবে সেটা কাল সকালে টের পাবে
বলেই চন্দ্র তাদের দুইজনকে নিজেদের বাসায় বসিয়ে যায় পুনমদের বাসায় সে জানে তার বোকারানী এখন সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বসে বসে কাদছে। সেই খবর পেয়েই তো এতো দ্রুত বাসায় আসা।
রোজিনা বেগম নিজের ঘরে বসে কাদছে তার পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে চাদনী বেগম।
— পুনম ও মায়ের পাশে বসে গুনগুনিয়ে কাদছে। মুক্তি অনেক বলে কয়েও থামাতে পারছে না তার এককথা তখন যদি সে নিশাকে না যেতে বলত নিশা নিশ্চয়ই যেতো না।
চন্দ্র ঘরে ঢুকে সবার আগে পুনমের দিকে তাকায়। পরে রোজিনা বেগমের পাশে বসে তার হাতগুলো নিজের হাতে নেয়।
— নিশাকে কাল সকালে তোমার কাছে এনে দিব চাচী এখন কেদো না,,
চন্দ্রের কথা রোজিনা তরাক চোখে চন্দ্রের দিকে তাকায়।
— তুই কই পাবি বাপ
চন্দ্র একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখের আশ্বাস দিয়ে আবার রোজিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — কাল সকাল বেলায় নিশা এসে তোমার সামনে হাজির হবে কেদো না।
বলেই আবার যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে যায়। পুনম কান্না ভুলে নাকমুখ কুচকে বলে
— আপু তোমার ভাইকি একটু সহানুভূতি দিয়ে কন্ঠটা নরম করে বলতে পারে না। কথা বলে না যেনো একেকটা মিসাইল ছুড়ে মারে
মুক্তি মিটমিট হেসে বলল — আমার ভাই একজনের ক্ষেত্রেই নরম বাকী সবার সাথে গরম।
মুক্তির কথায় পুনম আগ্রহ নিয়ে বলে — কে সে??
মুক্তি চোখ টিপ দিয়ে বলল — আছে আমাদের ফ্যামিলির স্পেশাল কেউ,,
পুনম মুক্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল — হাহ স্পেশাল কেউ। যেনো তার স্পেশাল কাউকে আমি দেখার জন্য মরে যাচ্ছি। ঐ গম্ভীর মার্কা চাদের উপর আমার একটুও ইন্টারেস্ট নাই।
রাতে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রোজিনা বেগমকে খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়েছে। সবাই থমথমে পরিবেশে খেয়ে নিয়েছে কোনো রকম চন্দ্রের কথা অনুযায়ী পারভেজ সাহেব বেশ ভয়েই আছে নাজানি মেয়েটার কি হলো।
পুনম আজ কিছুতেই ঘুমাতে পারে না কেনো যেনো মনটা খারাপ বেশ খারাপ মন খারাপের কারণ হিসেবে ধরে নেয় বোনের নিখোঁজ হওয়া। বাইরে মৃদু হাওয়া বইছে। পর্দা উড়ে সেই হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে।
পুনম উঠে বারান্দায় দাড়ায়। পুনমের ঘরের বারান্দা দিয়ে চন্দ্রের পুরো ঘরটা দেখা যায়।
চন্দ্রের ঘরের লাইট জ্বলছে। চন্দ্র কাউচে বসে কারো সাথে ফোনের কথা বলছে পুরো মুখস্রী লাল টকটকে হয়ে আছে মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে।
চন্দ্র কথা বলতে বলতে হঠাৎই তার নজরে আসে একটা আবছায়া। চন্দ্র জানে কার ছায়া এটা হঠাৎই মনে প্রবেশ করে অদ্ভূত শীতলতা। ঠোটের কোণে ফুটে স্নিগ্ধ হাসি যার প্রেমে পরে যাবে কেউ। তবে সেকেন্ডই তা মিলিয়ে যায়। ফোনের অপর পাশ থেকে কেউ ডাক দিলে বিগড়ে যাওয়া মেজাজটা ফিরে আসে তবুও শান্ত কন্ঠে বলল
— আ”ল কল ইয়্যু লেটার
অপর পাশের কোনো কথার অপেক্ষা করে না নিজের মতো কেটে ফোনটা কাউচে রেখে দেয়ালের একপাশে হ্যালান দিয়ে দেখতে থাকে পুনমকে।
পুনম চন্দ্রের দিকে আর তাকায় না তাকিয়ে আছে ঐ দুর আকাশে। ভালো লাগে দেখতে এই থালার মতো গোল রুপালি চাদঁ খানা সমগ্র পৃথিবীকে আলো দিয়ে চলছে সেদিকেই তাকিয়ে আছে পুনম।
পুনমের নজর লক্ষ্য করে হাসে চন্দ্র বিড়বিড় করে বলে — ঐ দূর আকাশের চন্দ্রের দিকে যখন এভাবে তাকিয়ে থাকিস তখন আমার কেমন লাগে জানিস উহু জানিস না,,,
হিংসে হয় ঐ চন্দ্রের মতোই তো আমিও চন্দ্র তাহলে আমার দিকে এরকম করে মোহিতো চোখে তাকাস না কেনো তুই?? মনে চায় ঐ চন্দ্রকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিন্ন করে দেই তবে কি করব বল অনেক কিছু চাইলেও করা যায় না। তবে চিন্তা করিস না যখন এই চন্দ্রের তোর উপর আধিপত্য বিস্তার করবে তখন থেকে ঐ মোহনীয় চোখ গুলি শুধু এই চন্দ্রকেই দেখবে।
ভেবেই ঠোট বাকিয়ে হাসে চন্দ্র। পুনম বারান্দা থেকে চলে যেতেই ঘোর ভাঙ্গে চন্দ্রের।
______________________
সকাল সাতটা নীড়বাসি বাড়িতে কলিং বেল বাজে। আজ চন্দ্র সকাল সকালই উঠেছে তাকে দেখে এতোক্ষণ কামরুল সাহেব তার বিশিষ্ট কাজ চা খাওয়া ও পেপার পড়া ছেড়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
চন্দ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে ছিল এতোক্ষণ তবে বেল বাজতেই ঠোট বাকিয়ে হাসে চন্দ্র। কাজের মেয়ে মিনু তড়িঘড়ি করে আসতেই চন্দ্র তাকে ইশারায় বলল ভিতরে যেতে। আঠারো বছর বয়সী মিনু বেশ ভয় পায় চন্দ্রকে। তাই দৌড়ে আবার রান্নাঘরে চলে যায়।
গেট খুলতেই প্রবেশ করে নিশা রুবি ও রিয়াজ সাহেব। তার সাথে একজন লোক।
কামরুল সাহেব অবাক হয় তাকায় তাদের দিকে আবার তাকায় চন্দ্রের দিকে।
রিয়াজ সাহেব কামরুল সাহেবের দিকে তেড়ে এসে — ভোর বেলা আমাদের এভাবে উঠিয়ে আনার মানে কি??
— এখানে নিশ্চয়ই কোনো কারণে আপনাদের আনা হয়েছে বিনা কারণে আনা হয়নি,,
চন্দ্রের গম্ভীর স্বরে থেমে যায় রিয়াজ সাহেব। এর মধ্যে প্রবেশ করে পুনম রোজিনা পারভেজ সাহেব। নিশাকে দেখে রোজিনা তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে নিশা তার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দেয়।
রোজিনা বেগম পরতে নিলে তাকে পুনম পিছন থেকে ধরে ফেলে। তবুও রোজিনা বেগম নিশার মুখে চুমু দিতে দিতে বলে — এই কয়দিন কোথায় ছিলি মা??
— তোমার বোনের বাসায় ছিল চাচী,,
— মানেহ,, কি বলছ চন্দ্র আমি কালকেও রুবির কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি সে সাফ মানা করে দিয়েছে সেখানে নিশা নেই।
পারভেজ সাহেবের কথায় পাত্তা না দিয়ে চন্দ্র হেয়ালি স্বরে বলল
— কি মি. শশুর শাশুড়ির সাথে পরিচয় হবেন না,,
চন্দ্রের কথায় পুরো ড্রয়িং রুমে বিষ্ফোরণ ঘটে।
— কিহ
বলে রোজিনা ঢলে পরতে নিলে তাকে আগলে নেয় পারভেজ সাহেব।
— এগুলো কি বলছিস চন্দ্র
পারভেজ সাহেবের রাগী স্বর।।
— কি নিশা আমি সত্যি বলছি কিনা মিথ্যা বলছি বলোত।
নিশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে পারভেজ সাহেবকে রেগে যেতে দেখে নিশা ভয় পায়। তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। নিশার নিশ্চুপতা দেখে পারভেজ সাহেব নিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — জবাব দাও নিশা চন্দ্র যা বলছে তা কি সত্যি
পারভেজ সাহেবের কথায় কেপে ওঠে নিশা পিছনে দাড়ানো লোকটা নিশাকে ধরে বলল
— হ্যা নিশা আমার স্ত্রী আমরা গত পরসু বিয়ে করেছি,,
রাশেদের কথায় পারভেজ সাহেব অবাক চোখে তাকিয়ে রোজিনাকে সোজা করে দাড় করায়।
— এতো বড় সাহস হয়ে গেছে যে বিয়ে পযর্ন্ত চলে গেছো
বলেই একটা সপাটে চড় বসিয়ে দেয়। আরেকটা মারতে নিলে তাকে আটকায় কামরুল সাহেব
— আমাকে ছাড়েন ভাইজান এই মেয়েকে আমি মেরেই ফেলব।
— পারভেজ শান্ত হ এভাবে উত্তজিত হয়ে কিচ্ছু হবে না।
পারভেজ সাহেব আবার রুবির দিকে তেড়ে যায়।
— তাহলে বদলাটা এভাবেই নিলে,,,
— বদলাহ
রোজিনা অস্ফুট স্বরে বলল। — হ্যা প্রতিশোধ নিশা গ্রামে ফিরে যাওয়ার দিন আমি রুবিকে কল দিয়ে বলেছিলাম ওর খেয়াল রাখতে রুবি কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমিও বলি। তখন রুবিও আমাকে অনেক কথা শুনায় আমিও ছাড় দেইনি। কথায় কথায় রুবির পালিয়ে বিয়ে করার কথাও বলি। সেই কথার জের ধরেই ও আজ আমার মেয়ের সাথে সেই কাজটাই করল।
কথাটা শুনে রুবিও তেজী স্বরে বলল — হ্যা হ্যা করেছি তো কি করবা তোমরা?? তোমার মেয়েকে আমিই ফুসলিয়ে তার বয়সের দ্বিগুন লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছি।
কথার সাথে সাথে গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় মারে।। সাথে সাথে আরেকটা গালেও থাপ্পড় মারে। রুবি ফুসফুস করে উঠলে
— একদম চুপ কোনো আওয়াজ করবিনা। দশ বছরের ছিলি তখন থেকে মানুষ করে বড় করেছি। নিজের সংসারের দিকেও তাকিয়ে দেখিনি আজ তার প্রতিদান এভাবে দিবি তা কোনো দিনেও ভাবতে পারিনি।
আজ থেকে মনে করব আমার কোনো ভাই বোন নেই এখুনি আমাদের বাড়ি থেকে বের হ।।
রিয়াজ থমথমে মুখে কিছু বলতে নিলে রোজিনা বেগম তাকে থামিয়ে দেয় হাত উচু করে। রিয়াজ সাহেব রুবিকে নিয়ে চলে যায়।
রোজিনা বেগম নিশার দিকে তাকিয়ে বলে — নাড়ীছেরা ধন তুমি তোমাকে ভুলতে পারব না তবে মনে রেখো আজ থেকে তুমি আমাকে মা বলে ডাকার অধিকার হারালে।
বলেই হাপাতে লাগল। চাদনী বেগম দ্রুত এসে তাকে ধরে নিজেদের ঘরে নিয়ে যায়।
— আমি জানতাম নিশার কেউ নেই ও এতিম খালার কাছে থাকে তাই এভাবে বিয়ে করেছি,,
আমতা আমতা করে বলে রাশেদ। রাশেদের কথায় কেউ কিছু বলে না কামরুল সাহেব তাকে বসতে বলে। পারভেজ সাহেবকে নিয়ে সাইডে যায়। বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে সব মেনে নিতে বলে।।। পারভেজ সাহেব আর কিছু বলে না। কামরুল সাহেব চাদনী বেগমকে বলে নিশাদের আপ্যায়নের কথা বলে। চাদনী বেগম তাদের জন্য রান্না শুরু করে। তবে নিশা কারো সাথে কথা বলে না এবং সেখানে থাকেও না। সে জোর করেই সেখান থেকে চলে যায়।
________________
— অ্যাই পুনু
ক্লাস শেষে চন্দ্র পুনম একসাথে আসছিল। কারো ডাকে সে ফিরে তাকায় পিছনে ফিরে দেখে নয়ন।
— নয়ন তুই এখানে,,??
— হ্যারে এই সাহরান” স কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি,,
— কবে ভর্তি হয়েছিস আর আমি জানিনা কেনো আমিও তো ঐ খানেই ভর্তি হয়েছি,,
— দেখবি কিভাবে ছেলে আর মেয়েদের তো আলাদা ক্লাস হয় বলদি এতোদিনে তাও জানিস নি
নয়ন হেসে পুনমের মায়ায় ঠুয়া দিয়ে বলল। নয়নের ভাজ করা আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে আছে চন্দ্র নাহ এখন তার এই আঙ্গুলটা কেটে ফেলতে মন চাচ্ছে। হাতের মুঠো শক্ত করে এদিক ওদিক তাকায়। পুনমের আপাতত কোনো স্থানে ধ্যান নেই সে বন্ধুর সাথে আলাপে ব্যস্ত।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২২
নিখুঁত হাতের নকশী কাথায় ফুটিয়ে তুলছে চাদনী বেগম। পরিবারের সবচেয়ে ছোট্ট ও অনাগত বাচ্চার জন্য।
— চাচী এই কাথা গুলো বেশ সুন্দর হয়েছে ভাইয়ের জন্য আমার পছন্দ হয়েছে।
মুচকি হাসে চাদনী বেগম। সেলাই উঠাতে উঠাতে বলে — ভাইই হবে তুই জানলি কেমনে বোনোও তো হতে পারে,,
— আমি প্রত্যেক নামাজের মুনাজাতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি যেনো এবার আমার মায়ের কোলে আল্লাহ্ একটা ছেলে দেয়। তার মনের আশা পূরণ করে।
চাদনী বেগম দেখলেন পুনমের ঠোটে হাসি চোখে জল। সে মাথায় হাত বুলায়
— অনেক সহ্য করেছিস তাই না মা
— উহু চাচী আমার কপালে ছিলো জন্মসূত্রে নাহলে কি আমি জন্ম নেই। প্রথম সন্তান ভালোবাসা থাকলেও পরের সন্তান আশা ভরসা। প্রথম কন্যা সন্তান জন্মানোর পরই স্বাভাবিক ভাবে বাবা মা চাইবে পরের সন্তান ছেলে হোক। তবে সেই জায়গাই আরেকটা কন্যা সন্তান সেটা সবার জন্যই হতাশা নিরাশা। তার উপর গায়ের রঙ কালো।
চাদনী বেগম পুনমকে বুকে জড়ায়। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে — কে বলেছে আমার মেয়ে কালো উহু সেতো এক মায়াবী কন্যা যার মায়ায় আমরা বাধিত। আর কালো বলছিস নিজেকে ভুলে যাস না ঐ অন্ধকার আছে বলেই আলোর এতো কদর। দোয়া করি আল্লাহ্ আমার মাটাকে এতো বড় করুক যেনো অন্ধকার ছাপিয়ে আলোর রশ্নি হয়ে ওঠে তার জীবনে।
চাচীর কথায় মিষ্টি হাসল পুনম। চাদনী বেগম সেই মিষ্টি হাসি মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবে কিভাবে এই মায়াময় চেহারা দেখেও রোজিনা এই মেয়েটাকে উপেক্ষা করতে পারত।
দরজায় ওপাশ থেকে সবই শুনেছে। সে এসেছিল চাদনী বেগমের কাছে কাথা গুলো দেখতে কেমন হয়েছে মেয়ের কথা শুনে থেমে যায় ভাবতে থাকে কতটা কষ্ট পেলে একটা মেয়ে নিজের জন্মানো নিয়েও কথা বলতে পারে। তারপর ও মেয়েটা তার প্রতি যত্নশীল। এইযে একটা কাজও তাকে এখন করতে হয় না চাদনী বেগম তাদের পুরোপুরি তাদের বাড়িতেই শিফ্ট করেছেন। পুনমও তাকে বিছানা হতে নামতে দেয় না। খাবারের থালাটাও সে বিছানায় বসেই পায়।
____________________
আজকে ভর্তি কোচিংয়ের একটা ইংলিশ ক্লাসটা চন্দ্র করাবে তাও আবার ছেলেদের।।
চন্দ্র যখন ক্লাসে ঢোকে হইহুল্লোর লেগে যায় ছেলেদের মুখে বড় বড় হাসি ঝুলছে চন্দ্রের বিশাল বড় ফ্যান তাড়া।
— আসসালামু আলাইকুম স্যার আমরা আপনার অনেক বড় ফ্যান।
সবাই একসাথে হাসি মুখে বলল। চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে ক্লাস শুরু করল। সবাই খুব একটা অবাক হলো না কারণ তারা জানে চন্দ্র এমনিই। তবে আজকে সবার ক্লাসটা বেশ ডিফ্রেন্ট ভাবে হয়। একঘন্টার ক্লাস প্রায় দেঢ় ঘন্টায় শেষ হয় লাষ্টে সবাইকে পড়া ধরে চন্দ্র এর মধ্যে পুনমের বন্ধু নয়নও ছিলো সে পাচঁ টা কোয়েশ্চেনের মধ্যে দুইটা পারেনি।
— নয়ন আপনি এই কুয়শশ্যনটা দুইশত বার লিখে আনবেন দুইটা মোট চারশ।
চন্দ্রের কথা শুনে চমকে ওঠে নয়ন ভয়ে ঢোক গিয়ে চারশ বার লেখা কোনো মুখের কথা না রাত পার করেও কালকের দিনেও শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ কারণ প্যাসেজটা বেশ বড়। তবুও কিছু বলার সাহস করল না কারণ সবাইকেই মোটামুটি শাস্তি দিয়েছে।
ক্লাস শেষে বের হয় চন্দ্র ও পুনম। পুনম আজকেও নয়নকে দেখে ডাক দিলে নয়ন দূর থেকেই সময় নেই বলে চলে যায়। পুনম ভ্রু কুচকে তাকায় কি হলো এই ছেলের
— ভাইয়া বাইক নিবে না আজ আনোনি,,
— নাহ সার্ভিসিং এ আছে কেনো হাটতে সমস্যা হচ্ছে রিক্সা নিব??
পুনম মাথা নাড়ায় তবে মনে মনে বিরক্ত হয়। এখান থেকে হেটে গেলে প্রায় আধঘন্টার রাস্তা এই কড়া রোদে যাবে কিভাবে যদিও শেষের শীত দেখে খুব একটা গায়ে লাগছে না। রাস্তা দিয়ে ব্যাগ কাধে নিয়ে হাটছে পুনম পাশেই চন্দ্র দুই হাত পকেটে গুজে হাটছে।।
পুনম ধীর পায়ে হাটলেও চন্দ্র তার থেকেও ধীর পায়ে হাটছে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি যা সূক্ষ্মভাবে না দেখলে বোঝা যাবে না।
চন্দ্ররা যেখানে থাকে সেই এরিয়াটা হাউজিং টাইপ ঢোকার শুরুতেই একটা পার্ক পড়ে।
— ঐখানে বসবি
পুনম ইঙ্গি করা জায়গাটার দিকে তাকায়। আসার দিনেই তার মনটা ঐ পার্কে যাওয়ার জন্য আকুপাকু করছিল তবে যায়নি। বলা চলে সময় হয়নি। আজ চন্দ্র বললে সে না করতে পারল না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। দুইজন পার্কে একটা বেঞ্চে বসে সামনেই রাউন্ড শেপের একটা পুকুর।। আশেপাশে বাচ্চাদের রাইডস প্লাষ্টিকের ঘোড়া,, ঢেকি,, স্লিপার। পুনমের মন চাচ্ছে ছোটবেলার মতো ঢেকিতে চরতে।
— ঢেকিতে চরবি
পুনম অবাক হয় তার মনোভাব বুঝল কিভাবে।
— যেভাবে লালসা নজরে ঢেকিটাকে দেখছিলি যে কেউই বুঝবে তুই ঐটাতে চড়তে চাস।
চন্দ্রের কথায় মুখ ঘুড়িয়ে ভেংচি কাটে। চন্দ্র ইশারা করে উঠার জন্য একপাশে পুনম অন্য পাশে চন্দ্র। একজন উপরে নামছে তো অন্যজন নিচে নামছে। এই দুলুনিতে খিলখিল করে হাসে তার হাসিতে যে আরেকজনের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে বোকা রমনী কি তা জানে।
পুনমের রেজাল্ট দিয়েছে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। সবাই তার রেজাল্টে অনেক খুশী তবে এরমধ্যে আরেকটা খুশীর খবর নিয়ে আসে মুক্তি।
— দেখতো এটা
হাত বাড়িয়ে খামটা নিতে নিতে বলল পুনম। খুলে দেখে একবার মুক্তি তো একবার চন্দ্রের দিকে তাকায় আজ পুনমের রেজাল্টের উপলক্ষ্যে সবাই একত্র হয়েছিল রুপশাও তার হাজবেন্ট নিয়ে এসেছে। রুপশা উঠে এসে হাতে পেপারটা পড়ে অবাক হয়ে প্লাস হাসি দিয়ে পুনমকে জড়িয়ে ধরে।
বাকি সবাই অবাক মুক্তিকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে??
— আব্বু আম্মু চাচা চাচী,, আমাদের পুনম একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিল সেটার মনিটাইজেশন আসছে। গুগল থেকে চিঠি এসেছে।
এক সেলিব্রেশনের মাঝে আরেকটা খুশীর খবর সবার আনন্দ দ্বিগুন করে দেয়।
দেখতে দেখতে কেটে দুই মাস এর মধ্যে পুনমের ভর্তি পরীক্ষাটাও শেষ হয়ে গেছে মেডিকেলে চান্স হয়নি পুনমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল তবে সেখানে পারভেজ সাহেব দেয়নি সাভার থেকে এতো দূরে জার্নি করে ক্লাস করাটা কষ্টকর হয়ে যাবে এই জন্য পুনম এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশায় বসে আছে।।
আজকে পুনমের পরীক্ষা আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের।
পারভেজ সাহেব তাকে নিয়ে যাবে। ইদানীং রোজিনা বেগম বেশ আদর করে পুনমকে সবার চোখে পড়ছে সেটা সবাই অবাক হয় তবে চাদনী বেগম অবাক হয়না। সে জানে সেদিন পুনমের বলা সব কথায় রোজিনা শুনেছে এবং নিজের মনে মনে অনুতপ্ত ও সে। রোজিনা বেগমের পাচঁ মাসের পেটটা নিয়ে আস্তে আস্তে পুনমের ঘরে উকি দেয়।
— আর কতক্ষণ পুনম তোর আব্বু রেডী হয়ে বসে আছে,,
পুনম মাথার হিজাবে পিন দিতে দিতে বলল — হয়ে গেছে আম্মু। আজ না রুপশা আপুর আসার কথা কখন আসবে??
— এই তো জামাই সহ আসবে তাই বারোটার দিকেই আসবে
— ওওহ তাহলে আমি এসে পাব তাদের
পুনম ফাইল পত্র গুছিয়ে সোজা হতেই রোজিনা বেগম মুখের সামনে দুধের গ্লাস ধরে। পুনম খেয়ে নিতে রোজিনা বেগম আচলে মুখ মুছতে মুছতে বলল — ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষা দিবে
পুনম আদর টুকু উপভোগ করে মাথা নাড়ায়। মুচকি হেসে রোজিনা বেগমের হাত ধরে তাকে সাবধানে নামায়।
একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে পারভেজ সাহেবের সাথে বেড়িয়ে পরল। উপর থেকে একজন দেখল। তার ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি।
।।
পুনমের সাথে আজ মিহিও পরীক্ষা দিবে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাটা দিতে পারেনি। তখন ওর দাদী ভীষণ অসুস্থ ছিলো এজন্য এখানে পরীক্ষা দিচ্ছে পুনমের জোড়াজুড়ির কারণে।
#চলবে