#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৬
আজ শুক্রবার সবাই বাসায় তার উপর আবার রুপশার চাচা শশুর চাচী শাশুড়ি আসবে। সকাল সকাল রুপশারা এসে পরেছে। লিমন চন্দ্র শিহাব রিশানের সাথে ব্যস্ত।
— ছোট শালা বাবু চাচা একদম বন্দি বানিয়ে দিল।
— হ্যা লিমন ভাই রাইয়্যানরে মামী ক্যাডেটে না দিলেও পারত বেচারা সহজে ছুটিই পায়না।
চন্দ্ররা কথা বলছিল তখনই কোথা থেকে হতদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল চাদনী বেগম চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — একটু বাজারে যানা বাপ,,
— এখন আবার কেনো আম্মু সকালেই না আব্বু সব বাজার করে দিল।
— একটা আইসক্রিমের টাব আনবি ফালুদা বানাচ্ছে রুপশা তার জন্য লাগবে,,
— আচ্ছা নামাজ পরে আসার সময় নিয়ে আসব নে,,,
চন্দ্রের কথা শুনে চাদনী বেগম যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই চলে গেলেন। রান্নাঘরে তার অনেক কাজ আছে এই প্রথম মেয়ের শশুর বাড়ি থেকে লোক আসবে বলে কথা। গতকাল রাতে রোজিনা বেগম দই ও পেতেছিলেন তাই ডেজার্ট এর কথা কেউ চিন্তা করেনি তবে রুপশা ফালুদা বানাতে চাইলে তাকে কেউ না করেনি।।
রান্নাঘরে তিন জা রান্না করছে রোজিনা বেগমকে যদিও কেউ কিছু করতে দিচ্ছে না তারপরেও সে জেদ ধরে করছে এভাবে কাজের সময় বসে থাকা যায়।
বেশা সাড়ে বারোটা বাজতেই সবাই মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রমিজ সাহেব শিলা বেগমকে নিয়ে একটু আগেই এসেছে।। আজ পুনমের ছোট্ট ফুপি বেলা আক্তার ও এসেছে। ইনি খুব একটা পারিবারিক আয়োজনে থাকতে চায় না তবে ভাইঝি ভাইপোদের জ্বালাতে না এসে পারেন না।।
মুক্তির ঘরে সব বোনেরা আজ এসে খুটি গেরেছে। মুক্তিকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে রুপশা। ঝিনুক রিমি এটা সেটা বলে তাকে লজ্জায় ফেলছে তবে পুনমের মন খারাপ সে চুপচাপ বসে আছে মুক্তি রুপশা দুজনেই সেটা খেয়াল করে।। মুক্তি রেডি হওয়া ছেড়ে পুনমের কাছে আসে পুনমের নিচু মাথাটা উচু করে দেখে তার অশ্রুসিক্ত আখি জোড়া। মুক্তিও কেদেঁ ফেলে কাল রাত থেকেই পুনমের মন খারাপ।
পুনম মুক্তিকে ঝাপটে ধরে তার বুকে মুখ গুজে বলল
— তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে যেও না আপু আমি কার সাথে নিজের সব কথা শেয়ার করব। কে আমাকে অর্ধেক রাতে খিদে লাগলে খাওয়াবে। কে আমাকে বুঝবে তোমার মতো করে আব্বু ছাড়া আর কেউ আমাকে বুঝে না আপু। বলেই শব্দ করে কেদেঁ দিল। সাথে মুক্তিও কেদেঁ দিল এই মেয়েটাকে সে অনেক ভালোবাসে চাচাতো বোন হিসেবে সবাইকে ভালোবাসলেও পুনমকে একটু বেশীই বাসে। মা বোনের কাছে অবহেলিত পুনমকে সে যখনই ঢাকা আসত খুব আদর করত এখানে আসার পর সেটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাদের কান্নার মাঝে ঝিনুক দুষ্টুমি করে বলল — আপু শুধু পুনমকেই ভালোবাসে আমাদের না।
— হ্যা আপু শুধুমাত্র আমাকেই ভালোবাসে বলেই মুক্তিকে আরো জোরে ঝাপটে ধরল।
রিমি ঝিনুক হেসে দিলো। তবে খারাপ লাগল রুপশার নিজের বোনের বিয়ের সময় ও এতোটা মন খারাপ করেনি পুনম এখন যতটা করছে। আবার মনে মনে ভাবে -” আসলেই মন খারাপ করবেই বা কেনো সে তো তার সাথে একদিন ভালো করে দুটো কথা বলেনি তার যত সখ্যতা ছিলো নিশার সাথে। সেই নিশাই আজ কতটা পরপর বিহেব করে।।
ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এবারও নিশাটাকে কেউ বলে কয়েও আনাতে পারেনি তার এককথা। যতদিন ঐ বাচ্চাটা দুনিয়ায় না আসছে সে আসবে না অন্তত স্বামীর সামনে নিজেকে ছোট করতে পারবে না।।
নামাজ পরে সব ছেলেরা ঘরে ঢুকে একসাথে। এরমধ্যেই লিমনের ফোনে কল আসে ফাতেমা আক্তারের লিমন রিসিভ করলে জানায় তারা হাউজিং এর গেটের সামনে দাড়িয়ে। লিমন তাদের আনতে যায়।
মিনিট দশের মধ্যে লিমন পৌঁছে যায় ফাতেমা আক্তার ইশতিয়াক সাহেব ও ফাতেমা আক্তারের ভাই ভাবী সহ। তাদের সাথে আছে ইহান ও তার মামাতো ভাই কাইফি।
সবাইকে বসিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় লিমন। রান্নাঘর থেকে নিপা বেগম চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগম আসতেই তাদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। একে একে সবার সাথেই পরিচয় করিয়ে দেয় একে একে আলাপচারিতার পর ফাতেমা আক্তার বলল — আপা ভাইজান একটা আর্জি নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে,,,
চাদনী বেগম কামরুল সাহেব একে অপরের দিকে তাকায় যদিও তারা জানে কিজন্য তারা আজ এখানে এসেছে তবুও চুপ করে ফাতেমা আক্তারের কথা শুনল। বাবার পাশে বসা ইহান বিরক্তি নিয়ে বসে আছে তার পাশে বসা কাইফি তাকে খুচিয়ে যাচ্ছে। ইহান রাগী চোখে তাকালে চুপ করে আবার শুরু করে তাকে জ্বালানো। চন্দ্ররা আসতেই তাদের সাথে কথা বলা শুরু করে।
— আপনাদের মেয়ে মুক্তি মাকে আমি লিমনের বাসায় দেখেছি সেখানেই তাকে আমার পছন্দ হয়েছে তাকে আমার ছেলের বউ করে চাই। আপা আমার একটা মাত্র ছেলে ইনশাআল্লাহ ভালো থাকবে আপনাদের মেয়ে।
একদমে বলে থামল ফাতেমা আক্তার।
— আপা মেয়ে হয়ে যখন জন্ম হয়েছে বিয়ে একদিন না একদিন দিতেই হবে পরের ঘরে যেতেই হবে। তবে আগে ছেলে মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করুক তারপর আমরা কথা এগোই।
কামরুল সাহেবের কথা মনপ্যুত হয় ইশতিয়াক সাহেবের। সে মুচকি হেসে বলল — তো এবার আমাদের হবু বউমাটাকেও একটু দেখান।
বেলা আক্তার উঠে যায় মুক্তির ঘরে। ধীরে ধীরে নিচে নামে মুক্তি হালকা মেরুন কালারের একটা তাতের শাড়ি পরেছে মুক্তি ফর্সা শরীরে তা যেনো আরো ফুটে উঠেছে। ধীর স্বরে সালাম দিতে ইহান কাইফি দুজনেই একসাথে মাথা উচু করে। ইহানের মুক্তি দেখে চোখ আটকে গেলেও কাইফির মুক্তির পাশে দাড়ানো ধূসর রঙা থ্রিপিছ পড়া মায়াবী কন্যায় চোখ আটকায়।।
চন্দ্র ভ্রু কুচকে কাইফির দিকে তাকায়। শিহাব রিশান লিমন এতোক্ষণ তাদের সাথে কথা বললেও চন্দ্র হু হা ছাড়া আর কিছুই বলেনি তার এসব ভালো লাগে না শুধু মায়ের জন্য বসে আছে।
কাইফির নজর অনুসরণ করে দেখতেই চন্দ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। চাদনী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল — আম্মু আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি একটু ঘরে যাই
আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — আমার জন্য এককাপ কফি নিয়ে আসো,,,
বলেই গটগট পায়ে চলে যায়। পুনম ভরকে গিয়ে সেখানে দাড়িয়ে থাকে চন্দ্র থেমে আবার বলল — পুনম আমি কিছু বলেছি,, পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।
পুনম আর দেরী না করে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানানো শুরু করে বিড়বিড় করে বলে — তিতা করলা তুই কি আমাকে ছাড়া আর কাউকে পাসনি। একটু মুক্তির আপুর পাশে থাকতেও দিলো না।। মনে মনে কতক্ষণ চন্দ্রকে বকে কফি নিয়ে দৌড় দিল।
ফাতেমা আক্তার ছেলের দিকে তাকায় ছেলের হাসি হাসি চেহারা দেখে বুঝতে পারে মেয়ে তার পছন্দ হয়েছে।
— ভাই একবার ছেলে মেয়ে আলাদা কথা বলে নিজেদের বোঝা পড়া করে নিক।
— ঝিনুক রিমি মুক্তির সাথে ছাদে যাও কামরুল সাহেব বললে রিমি ঝিনুক চলে যায় সেখান থেকে মুক্তিকে নিয়ে।
ইহান কাইফিকে ইশারা করলেও সে যায় না। কাইফির মনোভাব এখন অন্য সে তার মায়ের সাথে কথা বলবে।
অগত্যা ইহান একা একাই চলে গেছে। মুক্তিকে ছাদে রেখে রিমি ঝিনুকও অন্যপাশে চলে গেছে ছাদে পৌঁছে মুক্তিকে একা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
— আমি ভেবেছিলাম আপনার বোনদের কারণে একান্তে কথা বলা যাবে না।
— আমার বোনেরা কোথায় সম্পর্কে মেইনটেনেন্স করতে হবে তা জানে। আর আপনি এখন ওদের কাছে অচেনা তাই এখন চুপচাপ আছে
— ওওওও আচ্ছা আপনার নাম??
— সায়মা কামরান মুক্তি,, বলেই ইহানের দিকে তাকাতেই ইহান নিজের নাম বলল — ইহান আহমেদ।
মুক্তি মাথা নাড়িয়ে মাথা নিচু করে। — আপনার কি এই বিয়েতে মত আছে,,
মুক্তি মাথা নিচু করেই বলল — আমার বাবা মায়ের উপর বিশ্বাস আছে তাই তারা যা বলবেন তাই হবে।।
মুক্তির কথা শুনে ইহান মুচকি হেসে এগিয়ে যেতে যেতে বলল — তাহলে বি প্রিপেয়ার মাই মিসেস মিস মুক্তি।
মুক্তিও লাজুক হাসে। ইহান নিচে গিয়ে ফাতেমা বেগমকে পজিটিভ সাইন দিতে ফাতেমা বেগম বিস্তর হাসে।। ততক্ষণে দুপুরের খাবারের জন্য ডাকা হয়েছে সবাই টেবিলে বসে গেলো।। কিছুক্ষণের জন্য বিয়ের কথা বার্তা বন্ধ রেখে খাবার দাবারে মনোযোগ গেলো। খেতে বসে কাইফি মায়ের কানে কানে কিছু বলতে তিনি আশে পাশে তাকায়। কাইফি ইশারা করতে তারো পছন্দ হয়। তবে আপাতত চুপ থেকে পরে বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
____________________
— ভাই সাহেব বড় মেয়ে যখন আমাদের এখানে দিচ্ছেন এবার ছোট মেয়েটাকেও দিয়ে দিন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্ দুইটা বিয়ে একসাথে সেড়ে ফেলি।
ফাতেমা বেগমের কথায় কামরুল সাহেব একগাল হেসে বলল — সে তো আগেই আপনাদের বাড়ির বউ হয়েছে আছে বেয়ান,,
— আমি রুপশা বউমার কথা বলছি না আমি পুনমের কথা বলছি,,,
পুনমের নাম শুনে পুরো বাড়িতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। চন্দ্র চোখ বন্ধ করে আবার খুলে তার চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে পুনম সবার জন্য দইয়ের গ্লাস আনছিল তা পাও সেখানেই থেমে গেছে।।
চন্দ্র ঝিনুককে ইশারা করে পুনমের হাতের ট্রে নিতে। ঝিনুক পুনমের হাতের ট্রে নিতেই রিমি পুনমকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। পুনম কিছু বুঝার আগেই রিমি তাকে নিয়ে ঘর আটকে দিলো।
— তো কি বলছিলেন আন্টি??
ফাতেমা বেগম এবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
— তোমার ছোটবোন পুনমকে আমাদের কাইফির বেশ পছন্দ হয়েছে তার জন্য চাইছী,,
— ওওও আন্টি পুনমের সাথে তো এই বিয়ে সম্ভব না
— কেনো বাবা??
হাসি মুখে বলল ফাতেমা আক্তার।
— কারণ বিবাহিত মেয়ের তো স্বামী বেচে থাকতে আর বিয়ে হতে পারে না যদিও হয় তবে সেটা ডিবোর্স দিলে তবে সেটা ও এই জনমে পাবে না আমি বেচে থাকতে না।
শান্ত স্বরে বলেই উঠে চলে গেলো চন্দ্র। ফাতেমা বেগম কামরুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল
— ভাই ছেলের বিয়ে দিলেন কাউকে জানালেন না।
কামরুল সাহেব জোর করে হাসলেন বিড়বিড় করে বললেন — আমি নিজেই তো জানি না।।
তবে গম্ভীর হলো রোজিনা বেগম ভরা মজলিশে এমন কথা চন্দ্র বলল কেনো। এর মানে সে খুজে পেলো না পারভেজ সাহেবের দিকে তাকাতেই দেখে সে নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে। তাতে সন্দেহ হয় রোজিনা বেগমের।
এবার শুরু হয় মুক্তি ও ইহানের বিয়ের কথা বার্তা।। সবাই মিলে ঠিক করে আজ আংটি পরিয়ে যাবে মুক্তির অনার্স শেষে বিয়ে হবে। সবাই তাতেই রাজী হয়। কাইফি ও তার মা সেদিন মন খারাপ করে চলে যায়। অনেক দিন পর তার ছেলের একটা মেয়েকে পছন্দ করল সেও বিবাহিত। ভেবেই আরো মন খারাপ করল।।
____________________
রাত বারোটা পুনম ঘুমাচ্ছে গভীর ঘুমে ঘুমের মধ্যেই তার মনে হলো কেউ তার চোখ বাধছে। পুনম ছটফট করতে তার হাত ও মুখ বেধে কাধে তুলে নিলো।
পুনমকে কাধে তুলে নিয়ে চন্দ্র তাকে নিয়ে আসে ছাদের চিলেকোঠায়। ধপ করে তাকে বিছানায় ছুড়ে মারে। পুনম ডুকরে কেদেঁ ওঠে ভয়ে তার জান যায় যায় অবস্থা। তখনই বুঝতে পারে তার কানে কেউ হিসহিসিয়ে বলছে — বিয়ে করবি না বিয়ের পাখনা গজাইছে। দেখি দেখি কোথায় সেই পাখনা।
বলেই পুনমকে বসিয়ে পিঠে চেক করে আবার বিছানায় চেপে ধরে বলল — তোর ঐ বিয়ের পাখনা কাটতে আমার দুই মিনিট লাগবে। যাষ্ট মাইন্ড ইট ইয়্যু আর অনলি মাইন। মাই জোহরা। অনলি মাইন জোহরা।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৭
রাতে যতবার পারভেজ সাহেব ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠে ততবার পুনমের ঘরে উকি দেয়। আজও তার অন্যথা হলো না পুনমের ঘরে উকি দিয়ে দেখলেন রিমি ঝিনুক ঘুমে পাশে একটা কাতা মুরানো আরেকজন পারভেজ সাহেব আর কিছু না ভেবে চলে যায় ঘরে।
চিলেকোঠার ঘরে।
পুনমের কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। বেচারী ভয়ে একশেষ চন্দ্র কাপড়ে বাধা সেই ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার রাগ এখনো কমে নি। কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে ফুপানোর শব্দে চন্দ্র পুনমকে আবার সেই অবস্থায় কাধে তুলে নেয়। পুনম আবার ছটফট করলে থামে না চন্দ্র পুনমের ঘরে এসে ঝিনুকের পাশ থেকে কাতায় মুড়িয়ে রাখা কোল বালিশট সরিয়ে সেখানে পুনমেকে শোয়ায়। হাতের মুখের বাধন খুলে চোখের বাধন খুলে চট করে অন্ধকারের দিকে চলে যায়।
পুনম ধরফরিয়ে লাফিয়ে ওঠে নিজের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সে নিজের ঘরে হুহু করে আবার কেদেঁ দেয় বালিশে মুখ গুজে টের পায়না। চন্দ্রও সুযোগ বুঝে রুম থেকে বের হয়ে যায়।। পুনম কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের পায়না।
_____________
ভোর পাচঁটায় হঠাৎই কারো গোঙ্গানির শব্দে ঝিনুকের ঘুম ভাঙে কাপাল ভাজ করে ওঠে রিমির দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে। পুনমের দিকে তাকিয়ে দেখে পুনম কাতা মুরানো অবস্থায় কাপছে ঝিনুক দ্রুত পুনমের গায়ে হাত দিয়ে দেখে ধুম জ্বর তার।
ঝিনুক দ্রুত পারভেজ সাহেবকে ডেকে আনে রোজিনা বেগমও পুনমের জ্বরের কথা শুনে এসে পরে। মিনিট খানিকের মধ্যে পুরো ফ্যামিলি পুনমের জ্বরের কথা জেনে যায়। এই ভোর বেলা কোনো ডাক্তার না পাওয়ায় ঘরেই মাথায় পানি ঢালতে শুরু করে পারভেজ সাহেব পুনম বিড়বিড় করে কিছু বলছে দেখে চাদনী বেগম তার ঠোঁটের সামনে কান পেতে দেখে পুনম বিড়বিড় করে বলছে — আমাকে মারবেন না আমি বিয়ে করব না প্লিজ মারবেন না।
চাদনী বেগম মাথা উচু করে চন্দ্রকে আশে পাশে খুজে। কামরুল সাহেব জিজ্ঞাসা করে — কি শুনলে চাদঁ আম্মা কি বলল???
চাদনী বেগম গম্ভীর স্বরে বলল — চন্দ্র কই
যা বুঝার বুঝে গেলেন কামরুল সাহেব তবে এখন কিছু না বলে সোজা চন্দ্রের ঘরে যায়। তার পিছু পিছু মিরাজ সাহেব ও যায়। চাদনী বেগম যেতে নিলে তাকে আটকায় নিপা বেগম।
পারভেজ রোজিনা বেগমের এদিকে কোনো ধ্যান নেই তারা একজন পুনমের মাথা পানি ডালছে তো আরেকজন হাত পা ডলে দিচ্ছে রিমি ঝিনুক মুক্তিও থেমে নেই তারাও অন্য হাত পা ডলে দিচ্ছে। ।
নিজের ঘরে গভীর ঘুমে চন্দ্র এসির পাওয়ার কমিয়ে হীম শীতল করে রেখেছে ঘর। কামরুল সাহেব অনবরত দরজা ধাক্কানো শুরু করে।
— ভাইজান ছেলেটা উঠলেও কথা বলা যাবে,,,
— না মিরাজ ছেলেটা বেশী উচ্ছেন্নে চলে গিয়েছে ওকে থামানো দরকার ভেবেছিলাম অল্প বয়সের ট্রমাটা নিতে পারেনি তাই এমন হয়েছে। মেনে নিয়েছি সব কিছু আর না,,,,
অনবরত দরজা ধাক্কানোর ফলে চন্দ্রের গভীর ঘুম হালকা হয় সে ভ্রু কুচকে ঘুমঘুম চোখে উঠে দরজা খুলতেই ঠাসসস ঠাসসস করে পরপর দুইটা থাপ্পর তার গালে পরল।
— মারলে কেনো আব্বু কি করেছি আমি??
চন্দ্রের ঘরে ঢুকে আরেকবার মারতে গেলে আটকায় মিরাজ সাহেব। কামরুল সাহেব তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল — কি করেছ তুমি জানো না তাই না,?? পুনমের সাথে কি করেছ জানো না তাইনা মেয়েটার ১০৬° জ্বর। কেনো শুধুমাত্র তোমার কারণে তুমি নিশ্চয়ই মেয়েটার সাথে কিছু করেছ নাহলে ভালো মেয়েটার হঠাৎই জ্বর আসল কেনো??
— যা করেছি বেশ করেছি ওর সাহস কী করে হলো ঐ ছেলের সাথে কথা বলার ওর সামনে যাওয়ার ওরে আমি ঘরে যেতে বলিনি।
কামরুল সাহেব এবার তেড়ে এসে চন্দ্রকে আরো দুইটা থাপ্পড় দিলেন।
— আমি তোমাকে আগেও বলেছি চন্দ্র এখনো বলছি তুমি এমন করতে থাকলে পুনমের দিকে যাওয়ার পথে তোমার সবচেয়ে বড় বাধা আমি হব। তার পরেও যেহুতু তুমি শোধরানোর না এবার আমি অন্য পথ অবলম্বন করব।
— কি করবে আব্বু?? চন্দ্রের সাবলীল কথা কোনো ভয় নেই যেনো কোনো জোক্স বলেছে কামরুল সাহেব।
— পুনমকে অন্যত্র বিয়ে দিব ওকে অন্য জায়গাই পাঠিয়ে দিব।
কামরুল সাহেবের কথা শুনে চন্দ্র হাসে তবে সেকেন্ডের মধ্যে সেটা বিলীন হয়।
— ভালোবাসা ভালো আব্বু তবে অবসেশন না। ও আমার অবসেশন নেশায় ডুবে যাওয়া আমি নতুন ভাবে পুনম নামক নেশায় ডুবেছি ওকে তুমি চাইলে ও আমার থেকে দূরে রাখতে পারবে না।
চন্দ্রের কথা শুনে কামরুল সাহেব তার দিকে আবার তেড়ে যেতে নিলে আটকায় মিরাজ সাহেব। কামরুল সাহেবকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে চন্দ্র চলে যায় তার জোহরার ঘরে মেয়েটা ভালোই ভয় পেয়েছে এবার বিয়ে নামক শব্দটা তার কাছে আতঙ্ক থাকবে কয়েকদিন।
______________________
সকাল সাতটায় হাউজিং এর একজন ডাক্তারকে সাথে করে নিয়ে আসে চন্দ্র। তার ছেলে চন্দ্রের কোচিং এ পড়ে সেই সুবাদেই পরিচয় তাই চন্দ্র ডাকার সাথে সাথেই চলে এসেছে।
ডাক্তার এসে সবার আগে গ্লাভস পরে নিলো। এতোক্ষণ ডাক্তারের হাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিলো চন্দ্র হাতের নজর ঘুরায়। পুনমের জ্বর মেপে তার চেকআপ করে একটা ইনজেকশন পুশ করে বলল — ডোন্ট ওয়্যারি একঘণ্টার মধ্যে জ্বর নেমে যাবে। মনে হয় সিজনাল ফিবার।
সবাই ডাক্তারের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। ডাক্তার চলে যাওয়ার আধঘন্টার মধ্যে জ্বর ছেড়ে ঘাম দেয় পুনমের। ঘাম ছুটতে দেখে চাদনী বেগম সবাইকে বের করে মুক্তিকে গা মুছিয়ে দিতে বলে। সবাই বের হতে মুক্তি পুনমের গা মুছে দেয়। পুনম গভীর ঘুমে টের পায়না কিছুই।।
___________________
খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ নাস্তা করলেও আজ চন্দ্র চাদনী বেগম ও কামরুল সাহেব একটু বেশীই গম্ভীর। পুনম তখনও ঘুমে নিঃশব্দ পুরো টেবিল জুড়ে নিরবতা ভেঙে মিরাজ সাহেব বলল
— ভাইজান কালকে আমরা চলে যাব রিমি ঝিনুকের ও নতুন ক্লাস শুরু হবে আবার আমার ছুটি শেষ।
— এর পরের বার রাইয়্যানকে নিয়ে এসো।
— ওর তো সামনে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা তাই এবার আনিনি পরীক্ষা শেষ হলে ছুটি হবে তখনই নিয়ে আসব।
মাথা নাড়ায় কামরুল সাহেব। আর কেউ কিছু বলে না যে যার মতো খেয়ে চলে যায় মুক্তি,, ঝিনুক,, রিমি আবার মুক্তির ঘরে চলে যায় ঘুমাতে।
পারভেজ সাহেব আজ আর দোকানে যায় না পুনমের কাছে যায়। রোজিনা বেগম পুনমের কাছে যেতে নিলে তাকে পারভেজ সাহেব রেষ্ট নিতে বলে সে নিজেই যায়।
ঘুমন্ত পুনমের মাথায় হাত বুলায় পারভেজ সাহেব কয়েক ঘন্টার জ্বরে মেয়েটার চেহারা একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে চকলেট কালারের ঠোট জোড়া শুকিয়ে গেছে।।
কামরুল সাহেব তার কিছুক্ষণ পর ঢোকে। অপর পাশে বসে পুনমের মাথায় হাত বুলায় পুনম মেয়েটা একদম তাদের মায়ের মতো হয়েছে আচার আচরণে কথা চেহারা এবং কন্ঠস্বরেও রুপা বেগমের মতো। রুপা বেগম কামরুল,, পারভেজ ও মিরাজ সাহেবের মা। বাড়ির সব মেয়েরা উজ্জল ত্বক পেলেও এই মেয়েটা পেয়েছে শ্যামলা বর্ণ। একদম তাদের মায়ের মতো তাইতো মায়ের নেওটা কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেব মেয়েটাকে একটু বেশীই ভালোবাসে।।
— আমাকে ছেড়ে দিন আমি আআমমমি নাহহহ
বলেই চিৎকার দিয়ে ওঠে পুনম এতোক্ষণ দুইভাই গভীর ভাবনায় ছিলো পুনমের চিৎকারে তাদের ধ্যান ভাঙে।
— এই যে এইযে আম্মা কিচ্ছু হয়নাই আম্মা তুমি আব্বুর বুকেই আছো।
— আবববব্বু আআমম,,,
— হুশশ বলতে হবে না আম্মা তুমি স্বপ্ন দেখেছ খারাপ স্বপ্ন।
কান্নার জোরে পুনম কথা বলতে পারছে না এবার কামরুল সাহেব ও এগিয়ে এসে তাকে বুঝায় সে যা দেখেছে সব স্বপ্ন। এর বেশী কিচ্ছু না অনেক্ষণ পর পুনম থামে পারভেজ সাহেব তাকে গোসলে পাঠায় কারণ সে ঘামে ভেজা ছিলো এভাবে বেশীক্ষণ থাকলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৮
ছাদে শুয়ে আছে চন্দ্র খালি ফ্লোরে একটা হাত মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে আছে। তার নজর ঐ দূর আকাশের চাদেঁর দিকে। রুপালি থালার মতো চাদেঁর সৌন্দর্যের কাছে সবকিছুর সৌন্দর্য হাড় মানায় তবে ঐ যে চাদেঁর একটা দাগ তার রুপের কলঙ্ক হিসেবে ধরা হয়।
ঐ আকাশে থাকা চাঁদের মতো ধরনীতে থাকা চাদেঁর ও কলঙ্ক আছে। জীবনের অবিচ্ছিন্ন অধ্যায় যা চন্দ্র চাইলেও ভুলতে পারে না। তবে আজ কয়েকদিন একটু বেশীই মনে পড়েছে। ঐ যে তার ভুলে থাকার নেশাটা চোখের সামনে নেই যে।
পুনমের সাথে আজ একসপ্তাহ দেখা হয় না চন্দ্রের। যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী হয়েছে এই দেয়ালটা তৈরী করেছে চন্দ্রের মা বাবা বোন। এই তিনজনই কোনো না কোনো ভাবে পুনমের জন্য তার সামনে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে। ইভেন খাবারটাও পুনমের ঘরে দিয়ে আসা হচ্ছে এদিকে যে চন্দ্র তীব্র জ্বলনে জ্বলছে তার পোড়া হৃদয়ের দহন যে কাউকে দেখানো যাচ্ছে না। নিজের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে কাউকে বলতেও পারছে না তোমরা একটাবার আমার জোহরাকে দেখতে দাও।
ওকে একটা ঝলক দেখে নিজের হৃদয়কে তৃপ্তি করি।
— এতোই যদি ভালোবাসিস তাহলে এতো লুকোচুরি কেনো?? আর তুই যা শুরু করেছিস এতে মেয়েটা তোকে ভালোবাসা তো দূর তোর কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবে।।
পেছন থেকে শিহাবের কথা শুনেও চন্দ্রের ভাবাবেগ হলো না সে নিজের মতোই শুয়ে রইল। শিহাব চন্দ্রের পাশে বসল। আবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — এভাবে আর কতদিন??
— যতদিন না ও আমার হয়,,,,
— তুই যা করছিস তাতে ও কোনোকালে তোর হবে না।
শিহাবের কথা শুনে চন্দ্র ধপ করে চোখ খুলে শিহাবের দিকে তাকায়। শিহাব মুচকি হাসে — ঐ চোখ দেখে সবাইকে ভয়ে দমাতে পারলেও আমাকে পারবি না
— ময়না পাখি বরাবর একটা লাথি খেলে ঠিকই ভয় পাবি
চন্দ্রের কথা শুনে নাক মুখ কুচকে ফেলে শিহাব এই ত্যাড়া ছেলের সাথে কথা বলাটাও বিফল।
— যাই হোক যেটা বলতে এসেছিলাম পুনমের সাবজেক্ট চয়্যেজের রেজাল্ট দিয়েছে। জুলিয়জিতে চান্স পেয়েছে,,
— হুম এখন যা
শিহাব পাত্তা না পেয়ে উঠে দাড়ায়।।
______________________
রোজিনা বেগমের শরীরটা আজকে একটু খারাপ। চাদনী বেগম তার সাথে আছে চন্দ্র বাসায় নেই এই সুযোগে মুক্তি পুনমকে নিয়ে রান্নাঘরে রান্না করছে।
— আপু ভাইয়া ফোন দেয় তোমার কাছে??
মুক্তি রান্না করতে করতে জিজ্ঞাসা করে — কোন ভাইয়ার কথা বলছিস??
— তোমার ফিয়্যন্সে ইহান ভাইয়া,,,
— নাহ সেদিনের পর থেকে তার সাথে আমার কোনো আলাপ হয়নি।
— ওওওওও
— হ্হহহহ্যা
টেনে বলেই দুই বোন হেসে দিল। আবার রান্নায় মনোযোগ দিল মুক্তি পুনম সবজি কেটে দিচ্ছে।
— পুনম জুলিয়জিতে তো চান্স পেলি ক্লাস কবে??
— আর কয়েকদিন পরে
এমনেই আরো টুকটাক কথা চলতে থাকে পুনম মুক্তির।।
রান্না শেষে পুনম খাবার টেবিলে সাজাতে যায়। বাটি গুলো একে একে টেবিলে আনে লাষ্ট বাটিটা আনতে গেলেই চন্দ্রের সামনে পরে। চন্দ্র কোচিং থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি এসে পরেছে ভর্তি ক্লাসের চাপ কমে এসেছে। তাই একটু তাড়াতাড়ি এসে পরেছে তবে সে ভাবতেও পারেনি আজ তার ভাগ্য এতোটা সুপ্রন্ন হবে সে অপলক তাকিয়ে থাকে তার জোহরার দিকে।
পুনম ও অনেক দিন পর চন্দ্রকে দেখে যারপরনাই অবাক তবে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে যেতে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের বিড়বিড় করে বলল
— একটু ভালো মতো তৃপ্তি মিটিয়ে দেখতেও দেয়না
বলেই কপাল কুচকে নিজের ঘরে চলে গেলো। অনেক দিন পর মনটা একটু শান্ত হয়েছে একঝলকের জন্যও দেখা পেয়েছে তার জোহরার তাতেই চন্দ্র খুশী।
_________________________
আজকে পুনমের ভার্সিটির প্রথম ক্লাস তার সাথে মিহিরও মিহিও জাবিতে চান্স পেয়েছে নয়ন মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। তিন বন্ধুর মধ্যে একজন আলাদা হওয়ায় পুনম মিহি বেশ মন খারাপ করেছে। নয়ন ও বেশ মন খারাপ করেছে তবে কিছু করার নেই এটা তার প্যাশন সে ছাড়তে পারবে না আর এতে পুনম মিহিও সাপোর্ট করেছে।
মিহি হোষ্টেল থেকেই ভার্সিটি যাবে পুনম পারভেজ সাহেবের সাথে যাবে আজ।
রিক্সায় দুই বাপ মেয়ে বসতেই রোজিনা বেগম উচু পেটটা ধরে ধীর পায়ে ভিতরে চলে গেলেন।। গেটে সামনে থেকে বাবাকে বিদায় দিয়ে মিহির সাথে পুনম ভিতরে ঢুকল। চারিদিকে তাকাতে তাকাতে ঢুকছে পুনম হঠাৎই তার নাক বরাবর একটা কাগজের টুকরো এসে পরল।
পুনম নাক ডলতে ডলতে বসে কাগজটা নিয়ে চারিদিকে তাকায়। আশে পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে ফেলে দিতে নিলে মিহি বাধা দিয়ে বলল
— আরে কি করছিস??
— কি করছি কাগজটা ফেলে দেই আমার নাকে উপর পরল মনে হয় বাতিল পেপার কেউ ছুড়ে ফেলেছে,,,
— যাই হোক খুলে দেখ কি লেখা আছে,,
— সব কিছুতে তোর কৌতূহল গেলো না।
বলেই পুনম মুড়ানো কাগজটা সোজা করে খুব সুন্দর হাতের লেখা দেখে পড়ার আগ্রহ জাগে তাদের। পুনম পড়তে শুরু করে
নক,,নক,,
— শুরু হলো প্রেমের কাহিনী ওয়েল কাম টু জাবি মিস,,,;
প্রেমের প্রথম ধাপে পা দেয়ার জন্য আপনাকে উপহার দিলাম হৃদয়ে গচ্ছিত একগুচ্ছ আবেগ!!
লেখাটা পড়ে পুনম অবাক হয় এরকম করে কেউ ওয়েলকাম করে জানা নেই তার।।
— এই পুনু কি লেখা আছে এতে??
পুনম মিহির দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দেয় মিহি পড়ে মুখ কুচকে বলে — নির্ঘাত ব্যাটা বেরসিক নক নক এমন ভাবে বলছে যেনো নাকে ঠুয়া দিচ্ছে।
মিহির কথা শুনে পুনম ফিক করে হেসে দিল।
— যাই বল তবে ওয়েলকামটা ডিফ্রেন্ট ছিলো
— হ্যা তবে ভাবনার বিষয় এটা কে পাঠাল??
গালে তর্জনী দিয়ে ভাবতে ভাবতে বলল মিহি।
— থাক আপা আপনার কৌতূহল বন্ধ করেন এখন চলেন ঐ দিকে আবার ক্লাসও খুজতে হবে নাহলে দেখা যাবে ছুটি পযর্ন্ত এখানেই দাড়িয়ে আছি,,,
মিহি পুনম চলল ক্লাস খোজার উদ্দেশ্যে। এরমধ্যে শিহাব সামনে পড়ল — আরে শিহাব ভাইয়া তুমি কখন আসলা,,,
— সে অনেক্ষণ,, তা ক্লাস পাচ্ছিস না বুঝি??
মাথা নাড়ে পুনম শিহাব পুনমকে ক্লাস দেখিয়ে দিল। ক্লাসে যেয়ে পুনম মিহি একসাইটের বেঞ্চে বসল।। কিছুক্ষণ পরে ক্লাস শুরু হলো আজকে শুধু পরিচিতি হলো সবার সাথে।
টুকটাক বইয়ের সাথেও হলো দুইটা ক্লাস পর আর ক্লাস হবে না তাই সবাই বেড়িয়ে পরল ক্লাস থেকে। পুনম মনে মনে ভাবল বাসায় চলে যাবে তবে তার ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে মিহি আবদার করল ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখবে। অগত্যা পুনমের ও যেতে হলো।
ঘুরতে ঘুরতে তারা আসল অডিটোরিয়াম রুমে সেখানে কেউ গান গাচ্ছে কবিতা আবৃত্তি করছে। গোল গোল করে দুই তিনটা সাড়ি আছে পুনম উকি মেরে আবার চলে আসতে নিলে তখনই গানের আওয়াজে থেমে গেলো।
” বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে,
তার গন্ধ মেখে থাকতে
— কেনো সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে সে পালায়!
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা,,,
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা _
আমি দাড়িয়ে দেখছি শেষটা জানালায়,,,,
বোঝেনা সে বোঝেনা!!!
মন দিয়ে গানটা শুনল পুনম গান শেষ হতেই আবার উকি মারল ভিতরে তবে বুঝতে পারল না কে এখানে দুইটা গ্রুপের ছেলের হাত গিটার।।।
কিছু না ভেবে আবার ঘুরাঘুরিতে মন দিল হাটতে হাটতে লাইব্রেরিতে এসে পৌছাল।
— উফফ অনেক হেটেছি এবার একটু জিরাই
মিহি বসে পড়ল। তাদের সবে মাত্র ক্যাম্পাসের একাংশ দেখা হয়েছে বাকিটা এখনো রয়েছে। তবে পুনম বসল না সে বুক শেলফের দিকে এগিয়ে গেলো পুনম একটা বইয়ে হাত দিতে আবার ও একটা মুড়ানো কাগজের বল তার কাধে এসে বারি খেলো।
পুনম নিচে তাকিয়ে আবারও আশেপাশে তাকায় ।।
পুরো লাইব্রেরিতে তিন চারজন মানুষ আছে তাও তারা টেবিলে বসে পড়ছে আর নাহলে কোনো সাড়াশব্দ নেই এবার পুনমের সত্যিই কৌতূহল হয়। সে কাগজ খানা উঠিয়ে খুলে
— এই শ্যামবতী এতো কৌতূহল কেনো হ্যা। গান শুনেছো সেই পযর্ন্ত সমাপ্ত থাকো না কে গাইছে তা দেখার ইচ্ছা পেশন করো কেনো??
পুনম এবার নিজেকে দমাতে না পেরে ব্যাগ থেকে কলম বের করে শেলফে রেখে লিখতে শুরু করে
— কোনো কৌতূহল না যাষ্ট দেখার ইচ্ছা কে এতো মধুর স্বরে গানটা গাইল।
#চলবে