#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২
শফিউল স্যারের ক্লাস চলছে। পিনড্রপ সাইলেন্স শুধু বোর্ডে খসখসে চকের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নাই সেই ক্লাসেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে পুনম।
ছয়টা থাপ্পড়ে তিনদিন জ্বরে কাটিয়ে আজ এসেছে স্কুলে। আজকে যে শফিউল স্যারের ক্লাস আছে সেটা পুনম একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল। স্যার যখন ক্লাসে ঢুকে তখনই মনে পড়ে। পুরো স্কুলে শফিউল স্যারের মতো কড়া ও গম্ভীর স্যার আর নেই।
পুনমের মনে হয় প্রত্যেকটা স্কুলে এরকম একজন করে টিচার আছে।
আজ এসেই সর্বপ্রথম তাকে শফিউল স্যার না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে পুনম বলল — জ্বর এসেছিল
শফিউল স্যার ভ্রু কুচকে বসতে বলে। পুনম বসে যায় তবে বিপত্তি বাধে পড়া ধরার সময় সেদিনের কান্ডটা তার কনফিডেন্ট লেভেল ডাউন করে ফেলেছে। মুখ দিয়ে কেনো যেনো পড়াই বের হচ্ছে না।
— আ”ই টেলিং ইয়্যু পুনম সলভ দিজ কুয়্যেশশন,,
গড়গড় করে ন্যারাশন সলভ করা পুনম আজ বাধা প্রাপ্ত অথচ কিছুদিন আগেই শফিউল স্যার তাকে পারসোনালি এমন ভাবে ন্যারাশন বুঝিয়েছে যে সে সারাজীবন মনে রাখতে পারবে।
পুনমকে কিছু বলতে না দেখে স্যার তার চিরচেনা স্বরে বলল — দাড়িয়ে থাকো,,,
পুনম মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। দশ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পর তার মনে হচ্ছে সে বলতে পারবে ইভেন বোর্ডে লেখা ট্যাগ কুয়্যেশশনটাও সলভ করতে পারবে। স্যার পুনমের হাসফাস টের পায়। পিছন ফিরে বলে
— এটা কে কে সলভ করতে পারবে,??
পুনম হাত উঠায় স্যার ইশারায় তাকে ডেকে চক হাতে দেয়।। পুনম মিনিটের মধ্যে পাচঁটা কুয়্যেশশন সলভ করে
তা দেখে স্যার মুচকি হেসে গম্ভীর স্বরে বলল
— আরো ভালো করতে হবে,,,,
পুনম মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। স্যারটা তাকে স্নেহ করে নাকি স্যার এমনি পুনম বুঝতে পারে না তবে মাঝে মধ্যে স্যার তার অনেক হেল্প করে যেটা রোল দশের পরের ছাত্র/ ছাত্রীদের জন্য বিরল।
একে একে সব ক্লাস শেষ করে ছোট বোন নিশাকে নিয়ে স্কুল থেকে বের হয় পুনম। চঞ্চল নিশা এদিক ওদিক ছুটে লাফিয়ে হাটতে থাকে। পুনম সাবধান করে বোনকে। এর কিছু হলে তার কপালে বকা জুটবে।
______________
দুপুর দেড়টা যোহরের আযান পড়েছে অনেক আগে। পারভেজ সাহেব দোকান বন্ধ করছে। বাজারে তার পাচঁটা দোকান আছে তিনটা ভাড়া দেয়া আর দুইটা সে নিজে চালায়। রেডিমেড কাপড় ও গজ কাপড় থ্রি পিছ এগুলোই বিক্রি করে।।
সামনে ঈদ বেচা কেনাও ভালো হবে তাই কাল ঢাকা যাবে মালামাল অনতে।। নিজের সাইকেলটা নিয়ে বাজারের একচত্বর পেরুতেই সামনে পড়ে পুনমের স্কুলের টিচার শফিউল স্যার। ইনি পুনমদের স্কুলের হেড মাষ্টার ও বটে।
— আসসালামু আলাইকুম স্যার,,
— ওয়ালাকুম আসসলাম পারভেজ তোমার সাথে কথা আছে কিছুক্ষণ সময় দিতে পারবে??
পারভেজ সাহেব হাসি মুখে দাড়িয়ে যায়। সত্তরের কোটা থাকা শফিউল স্যার এখনো বেশ শক্তপোক্ত।
তারা গিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে
— তোমাকে কিভাবে বলব বুঝতে পারি না পারভেজ তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার তারপরও বলছি পুনমের কি কোনো টিচার নেই বাসায়,,
পারভেজ সাহেব ভ্রু কুচকে ফেলে তার তিন মেয়ের জন্যই টিচার রাখা আছে বাসায়। তাহলে এখানে স্যার শুধু পুনমের কথাই জিজ্ঞেস করল কেনো??
— না স্যার ওদের বাসায় আলাদা টিচার রাখা আছে তো,,,
— ও আমি ভাবলাম তোমার বাকি দুই মেয়ে বেশ ভালো পড়াশোনায় তাহলে পুনম এমন কেনো
— ও একটু এমনি পড়াশোনায় খুব একটা চতুর না,,
— না পারভেজ পুনম তোমার বাকি দুই মেয়ের থেকে ব্রিলিয়্যান্ট। ইভেন ওকে কোনো পড়া একবারের বেশী বুঝানো লাগে না তবে কনফিডেন্স লেভেলটা একটু কম এই যা,,,,
!! শফিউল স্যার থেমে আবার বলে — তোমাদের ঘরোয়া ব্যাপারে বলতে চাইনা তবুও বলি মেয়েটা হয়তো কোনো কারণে হীনমন্যতায় ভুগে তার যেকোন কাজের আগ্রহ কম। যেনো সে জানেই সে পারবে না।
পারভেজ ভাবনায় ডুবে যায় কি বলবে ভেবে পায়না। শফিউল স্যার পারভেজ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল — আজ আসি আর পুনম মেয়েটা দিকে একটু খেয়াল করো মেয়েটা কেয়ার পেলে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে,,,,
পারভেজ সাহেব ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছায় হঠাৎই তার বাড়ির সামনে গাড়ি দেখে ভ্রু কুচকে যায়। এতো বড় গাড়ি তাদের বাসার সামনে কেনো??
বাসায় ঢুকে আরো অবাক হয় পুরো ড্রয়িং রুমে মেহমানের ছড়াছড়ি। তার শালী সমুন্দি সবাই উপস্থিত। সাথে আরো অচেনা মানুষ।
— ঐ তো দুলাভাই এসে পড়েছে,,,
রুবির কথায় সবাই পারভেজ সাহেবের দিকে তাকায়। পারভেজ সাহেব ভরকে যায় তবুও নিজেকে সামলে এগোয়।
— আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই,, দেখেন কারা এসেছে??
পারভেজ সালামের উত্তর নিয়ে কথা বলে সবার সাথে। কথা বার্তায় বুঝতে পারে তার বড় মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তারা
পারভেজ সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকায় তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে রাজী। রাজী হবেই না কেনো সরকারি চাকরি করা পাত্র হাত ছাড়া করা যায় নাকি,,
রোজিনা পারভেজ সাহেবকে অন্য দিকে নিয়ে যায়।
— তারা আজই আংটি পরিয়ে রাখতে চাচ্ছে,, আপনি কি বলেন??
— এভাবে হুট করে সব হয়না রোজিনা দেখা শোনার একটা ব্যাপার আজে মেয়ে রাজী কিনা সেটাও দেখতে হবে।
— মেয়ে রাজী ছেলে মাশাল্লাহ্ রাজপুত্র
পারভেজ একপলক ভ্রু কুচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে রোজিনাকে বলে — এর মধ্যে রাজপুত্র কই পেলা তুমি?? শ্যামলা গায়ের রঙের ছেলেরাই বুঝি রাজপুত্র হয় মেয়েরা হয়না।
পারভেজ সাহেবের কথা শুনে রোজিনা বেগম থতমত খেলো পরে মুখ বাকিয়ে বলল — সোনার চামচ বাকাও ভালা,,
কথাটা বলেই রোজিনা চলে যায়। পারভেজ সাহেব বুঝে এখানে তার না টিকবে না তাই চুপচাপ দেখতে থাকে কে কি করে।
সব শেষে ঠিক করা হয় আজকে আংটি পরিয়ে রেখে যাবে আগামী শেষের শুক্রবার বিয়ে।
সব ফাইনাল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই চলে গেলো শুধু থেকে গেলো রোজিনার ভাই বোন।
— দেখলে দুলাভাই আমাদের উছিলায় কেমন বড়লোক জামাই পেলে বড় মেয়ের জন্য,,,
রুবির কথায় পারভেজ সাহেব হাসে তখন রিয়াজ সাহেব মুখ কুচকে বলল — ও কি কখনও আমাদের কাজের শোকরিয়া আদায় করেছে নাকি,, এই সমন্ধটাও তো আমাদের জন্যই এলো
পারভেজ সাহেব এবারও হাসল কিছু বলল না তখনই রোজিনা বলল — মেয়েটাকে ভালোই ভালোই বিদায় করতে পারলেই হয়,, এরপরে মেঝো মেয়েটার বিয়ের জন্য যৌতুকের ব্যবস্থা করতে হবে,,,
— হ্যা আপা তোর মেইঝা মেয়ের যেই ছিরি,, যৌতুক ছাড়া কোথায় বিয়ে দিবি,,,
পরভেজ সাহেব এবার আর চুপ থাকলেন না হাসি মুখেই বলল — তোমরা আমার মেয়েদের জন্য অনেক চিন্তা করো রুবি তার জন্য ধন্যবাদ,, তবে আমার পুনমের চিন্তা তোমরা বাদ দাও আমার মেয়ে তো ওর চিন্তা নাহয় আমিই করলাম,,,,
বলেই পারভেজ সাহেব উঠে চলে যায় ঘরে। পারভেজ সাহেবের মিষ্টি স্বরে তিক্ত কথাটা হজম করতে পারল না রুবি খিটমিট করে — রোজিনাকে বলল দেখ আপা দুলাভাই কি বলে আমরা কি তোর মেঝো মেয়ের ভালো চাইনা,,, ???
রোজিনা কি বলবে ভেবে পেলো না অন্য প্রসঙ্গে কথা উঠালো। তিনভাই বোন বিয়েতে কতজন দাওয়াত দিবে ছেলের বাড়ি থেকে কতজন আসবে সেই বিষয়ে কথা বলতে থাকলো।
পুনম নিজের ঘরে দেয়ালে রঙতুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এই তেরোটা তুলি ও ছাপ্পান্ন সেডের রঙই হচ্ছে পুনমের সবচেয়ে পছন্দের স্থান। পারভেজ সাহেব পুনমের ঘরে ঢুকে মেয়ের ঘরের দেয়ালে তাকিয়ে অবাক হয়। দক্ষিন পাশের দেয়ালটা মানে হচ্ছে একটা গ্যাল্যাক্সি।
এতোটাই রিয়েলিস্টিক যেনো হাত বাড়ালেই পোরো সৌর জগতটাই হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে।
#চলবে