পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৪

” তিল ”
রাতের আধারে মোম বাতির কমলা রঙের আলোয় জ্বলজ্বল করা একটা তিল এই মূহুর্তে চন্দ্রকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। নিজেকে কন্ট্রোল করার জন‍্য অনবরত ঢোক গিলছে।
পুনমকে বুকে নিতেই পুনমের কাধের তিলটা নজরে আসে চন্দ্রের। এতোদিন গোছালো মায়ায় কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখা পুনমের এই রুপ দেখে চন্দ্রের হাল বেহাল।
নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে একটু ছুয়ে দিতেই। চন্দ্রকে ধাক্কা মেরে পুনম ছিটকে সরে যায়

— ধরবেন না একদম ধরার চেষ্টা করবেন না,, কি পেয়েছেন কি বিয়ে করেছেন বলে সাতখুন মাফ উহু তা কখনও না।
বলেই পাশ থেকে চিঠির বাক্সটা নিয়ে আবারও দাড়ায় বক্স থেকে লাইটার বের করেই একটা চিঠি হাতে নেয় — প্রেমের সূচনা করেছিলেন না এই চিঠির মাধ্যমে!! যে সূচনাকে সমাপ্তিতে পরিণত করলাম আজ।

বলেই লাইটার দিয়ে চিঠিটাতে আগুন ধরাতে নিলে চন্দ্র পুনমের হাত থেকে লাইটার ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে।
— আমার রাগ আমার উপর ঝারবি যত ইচ্ছা। তবে ঐ একটা চিঠিতে হাত দিবি না ঐগুলো আমাদের প্রণয়ের স্মৃতি,,,

— করব না কিচ্ছু করব না আমার গত দুই দিন রাতের বিভিষীকাময় যন্ত্রণা উপশম দিন। ফেরত দিন সেই সময়টুকু যা আমি এক মরিচীকার জন‍্য কাটিয়েছি।

— স্বার্থপর তোরা নারীরা স্বার্থপর,, তোর রাত,, তোর কষ্ট গুলো দেখলি। আমার আমার কিছুই দেখলি না। আমি যে দীর্ঘ আটটা বছর তোর অপেক্ষায় একেকটা রাত তীব্র যন্ত্রণায় কাটিয়েছি। এমনও রাত গেছে তোকে ভেবে কাটিয়েছি সেই তুই কি করলি আমার দিকে ফিরেও তাকালি না সকলের চোখের মনি ক্রাশ প্রান প্রেয়সীর নজরে পড়ল না সেটা কতটা যন্ত্রণার সেটা কি তুই জানিস উহু জানিস না।।

চন্দ্রর দিকে অপলক কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল পুনম তারপর তাচ্ছিল্য হেসে বলল
— তাই বুঝি প্রতিশোধ নিলেন। যার জন‍্য মেয়েরা পাগল চাদের মতো সৌন্দর্য দিয়ে যেকোনো মেয়েকে পাগল করতে পারে সেই লোকটার দিকে একটা কালো মেয়ে ফিরেও তাকায় না তার প্রতি কোনো ইন্টারেষ্ট নেই তাই বুঝি আপনার ইগো হার্ট হয়েছে।

এবার চন্দ্রর মটকা গরম হলো পুনমের হাত ধরে তাকে কাছে নিয়ে আসল পুনম ছুটাছুটির চেষ্টা করতেই পুনমের হাত পিছমোরা করে অন‍্য হাত দিয়ে পুনমের চিবুক শক্ত করে ধরল — কালো!! কারে বলিস কালো এই কালো মেয়ের মধ‍্যে এই চন্দ্রের অস্তিত্ব।।

ব‍্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে পুনমের তবুও জেদি স্বরে বলল — স্বীকার করেন ইয়‍্যু আ”র অ‍্যা চিটার. বিট্রেবাজ

— উহু ভালোবেসেছি আর ভালোবাসা হাসিল করেছি জোহরা জান। সেটা চিটিং বলিস আর যাই বলিস,,,, বলেই পুনমের গালে ঠোট দাবিয়ে চুমু খেলো অপর গালেও তাই করল। কপালে দীর্ঘ চুমু দিয়ে পুনমের কানে ফিসফিসিয়ে বলল — তোমাকে এতো ছুতে ইচ্ছে করছে কেনো জোহরাজান?? বৈধতা আছে বলে। এই জোহরাজান একটু ক্ষমা কর না তোমায় নিয়ে ডুব দেই প্রণয় সাগরে।।
বলেই মোহগ্রস্থ মতো গলায় মুখ ডুবাতে নিলে পুনম সুযোগ বুঝে ধাক্কা মারে আঙ্গুল উচু করে বলল — ডোন্ট টাচ মি,, বিট্রেবাজদের আবার অনুমতি লাগে নাকি।।
বলেই হাওয়ার বেগে ঘরে চলে যায় খাটের সব ফুল সরিয়ে এককোণে শুয়ে পরে। চন্দ্র পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। বিড়বিড় করে বলে — এতো আদুরে কেনো তার বউটা উফফ সবার বদদোয়া পরেছে আমার বাসর ঘরের উপর।।

পরপর দুই রাত জাগা ঠিক মতো না খাওয়া দুপুরে কোনো রকম রুপশার হাতে খেয়েছিল। সবমিলিয়ে ক্লান্তিতে মূহুর্ত্তের মধ‍্যেই ঘুমিয়ে গলো পুনম। চন্দ্র বারান্দায় দাড়িয়েই কমলা রঙা আলোয় প্রান সখীকে দেখছে পুনম ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে পুনমের সামনে হাটু গেরে বসে বিড়বিড় করে গাইল
~ তোকে একার দেখার
লুকিয়ে কি মজা
সেতো আমি ছাড়া কেউ জানে না,,,,

_______________________

ঘুমের মধ‍্যে নড়তে নিয়েও নড়াচড়া করতে পারল না পুনম। চোখ বন্ধ অবস্থায় ভ্রু কুচকে গেলো তার আবার নড়তে গেলেই এবারও পারল না আর না পেরে টিমটিম করে চোখ খুলল পুনম। চোখ খুলে নিজের গায়ের উপর চন্দ্রকে দেখে ভয় পেলো। এই চন্দ্র ভাই এখানে কেনো?? এই লোকতো নিজের গায়ে অন‍্য কারো স্পর্শ মেনে নিতে পারে না কেউ ভুলেও ছুইলে খবর করে ছাড়ে তাহলে তার কি হবে ভেবেই ঢোক গিলল।
পরোক্ষনেই কাল রাতের কথা স্মরণ হতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। চন্দ্রকে ধাক্কানো শুরু করল।
— উঠেন এইযে,,,,, এই লোক উঠেনা কেনরে??
ঘুম ঘুম চোখে চন্দ্র তাকায় পুনমের দিকে।

— আমার ঘুম হয়নি ঘুমাও জোহরাজান,,

— আমার ঘুম শেষ খিদে লেগেছে সরেন নিচে যাব।
বলেই ধাক্কাধাক্কি শুরু করে চন্দ্র বিরক্তিকর চেহারা করে বলল — তুই একটা ডিষ্টার্ব
আবার পাশ ফিরে শুয়ে পরে। পুনম বিড়বিড় করে কি বলল নিজেও জানে না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চক্ষু কপালে উঠে গেছে। সকাল নয়টা কখন বাজল?? পুনম দ্রুত বিছানা ছাড়ে কাপড় নিতে আলমারির খুলে দেখে কালকে মুক্তির রাখা তার কোনো থ্রি পিছ নেই সব শাড়িতে কনবার্ট হয়েছে।।
নাক কুচকে ফেলল পুনম এখন এই শাড়ি পড়তে হবে ভেবেই আরো বিরক্তি লাগল তবুও সী গ্রিন কালারের একটা শাড়ি নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। নিজের মতো সময় নিয়ে গোসল সারে ধোয়া কাপড় বারান্দায় নেড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়তে শুরু করে।
চোখের উপর পানির ছিটা পড়ায় চোখ মেলে তাকায় চন্দ্র। তাকিয়ে দেখতে পায় মোহনীয় রুপে ভেজা চুল মুছছে এক মায়াবী শ‍্যামকন‍্যা যার পায়ের নখ থেকে প্রত‍্যেকটা পশম অবদি মায়ার সাগর।
— হায়য় উফফ জোহরাজান এই সকাল সকাল এমনে ঘায়েল না করলেও পারতে এখন তো রুমে থেকে বেরতে দিতে ইচ্ছা করছে না।

সাইড হয়ে শুয়ে এক হাতে ভর দিয়ে মাথা তুলে বলল চন্দ্র। পুনম চন্দ্রের কথা শুনেও কিছু বলল না নিজের মতো কাজ করে চলল। পুনম নিজের চুল কোনো রকম ঢিল খোপা করল খুজেঁ দিলো একটা কাঠি। মাথায় কাপড় দিয়ে বের হতে নিলে ঝড়ের বেগে চন্দ্র পিছন থেকে ঝাপটে ধরল।

— একদম কোনো অসভ্যতামি করবেন না ছাড়েন আমাকে
ছোটাছুটি করে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল পুনম।

— লোভ দেখিয়ে পালিয়ে যাবি চন্দ্র বুঝি তা হতে দেবে কখনও না
চন্দ্রের কথায় অবাক হয় পুনম কি লোভ দেখাল সে এই লোককে?? পুনমকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ফাজিল হাসল চন্দ্র পুনম কিছু বুঝার আগেই তার ওষ্ঠপুট দখল হলো চন্দ্রের দখল দারিতে। পুনম আরো ছটফট শুধু করে চন্দ্রের কাজে ব‍্যাঘাত ঘটায় একহাত উন্মুক্ত উদরে রেখে অন‍্য ঘাড়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে।

আয়েশী ভঙ্গিতে নিজের খায়েশ মিটিয়ে পুনমের ঠোঁট ছাড়ল। হাপাতে থাকল পুনম রক্ত শুণ্য ওষ্ঠ জোড়া আবারও লোভ জাগালো চন্দ্রের পুনমকে নিজেকে সামলানোর সুযোগ না দিয়ে বীনা নোটিশে আবার আধিপত্য বিস্তার করল পুনমের ওষ্ঠপুটে। এবার দাতের ঘসায় হালকা কেটেও যাচ্ছে তবে সেদিকে চন্দ্র মিয়ার কোনো হুশ । অনেক অপেক্ষার পর কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে কি আর কারো হুশ থাকে চন্দ্রের ও নেই।

হঠাৎই পূর্বের কান্নার শব্দ পুনমের কানে ভেসে আসতেই পুনম বেশ জোরদার ধাক্কা মারে। চন্দ্রের দিকে একপলক ও না তাকিয়ে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে — ছ‍্যাহ এই চাচাতো শালা দেখি একটু রোমান্স ও করতে দেয় না বউয়ের সাথে।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৫

পুরো বাড়িতে লোকজনে ভর্তি। শিলারা মিরাজরা সবাই দুপুরের খাওয়ার পরেই চলে যায় শর্ট নোটিশে বিয়ের হওয়ার দারুন মিরাজ সাহেব ছুটি পাননি বিয়েটা শুক্রবার হওয়ায় শুধু বৃহস্পতিবারটা ছুটি ম‍্যানেজ করতে পেরেছিলেন। তাই আজ তারা চলে যাবে শিলাদের বাসা এখানে হলেও তাকে আটকে রাখে তিন ভাবী। ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত পুনমের মা চাচীরা রান্নাঘরে।

পুনম নিচে নামতেই সর্বপ্রথম কামরুল সাহেবের চোখ পড়ে তার দিকে। — ঐ তো আমার আম্মাজান এসে পড়েছে মারে আজ সকালে তোর হাতে চা জোটেনি তাই এখনো চা জোটেনি এককাপ চা দেতো।

পুনম কোনো রকম জোরপূর্বক হেসে রান্নাঘরে চলে যায়। পুনম যেতেই মিরাজ সাহেব কামরুল সাহেবকে বলল — ভাই কুছতো শরম করো,,,,
পারভেজ সাহেব গলা খাকারি দিয়ে পেপার দিয়ে মুখ ঢাকল
পুনম রান্নাঘরের সামনে ইস্তত করে দাড়িয়ে আছে। তার কেমন জানি লজ্জা লাগছে তার হঠাৎই সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেলো। চেনাজানা বাড়িতেও পুনম লজ্জা পাচ্ছে
— কিরে মা ঐদিকে দাড়িয়ে আছিস ক‍্যান আয়,,,

নিপা বেগমের কথায় পুনম এগিয়ে যায়। চাদনী বেগম বলল — কি মা এখন রান্নাঘরে কি করছিস যা তুই নতুন বউ মেহেদী যাওয়ার আগ পযর্ন্ত রান্নাঘরে আসতে পারবি না,,,

— চাচী আমি,,,
চাদনী বেগম পুনমকে বলতে না দিয়েই হায় হায় করে বলল — কি চাচী এই মেয়ে চাচী কি হ‍্যা মা ডাক
চাদনী বেগমের কথায় পুনম মাথা নাড়িয়ে বলল —
চা বানাই??

চাদনী বেগম জায়গা দিতে পুনম চায়ের পানি বসায়। রোজিনা বেগম কিছু বলছে না নিজের মতো কাজ করছে। পুনম মায়ের দিকে তাকায় তার কেনো জানি মনে হয় তার মা রেগে আছে।।
তার সাথে পরে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

পুনম চা নিয়ে বের হতে দেখে চন্দ্র নামছে। শিহাব রিশান হই হই করে উঠল তাকে দেখে তবে সোফায় বসা বাবাদের দেখে থেমে গেলো। রুপশা লিমন বাইরে গেছিল মাত্র ফিরল তাদের সাথে পূর্ব।
— আপু ভাইকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে?? তখন কান্না শুনলাম

— হ‍্যা কান্না করছিল দেখেই বাইরে নিয়ে গেছিলাম।
দুই বোন ভাইকে আদর করতে থাকে।।

______________________

দুপুরে খেয়ে দেয়ে সবাই চলে যায় তবে লিমন রুপশা থাকে লিমন এখান থেকেই কাল সকালে অফিসে যাবে।।
পুনম সকাল থেকে এখন পযর্ন্ত ঘরে যায়নি। এবার বিশ্রাম নেয়ার জন‍্য তার আগের ঘরে যায় সেখানে রুপশা ও লিমনকে থাকতে দেয়া হয়েছে

— কিরে তুই এই ঘরে এই সময়??

— এমনি আপু
বলে ঘরে ঢুকতে গেলে চন্দ্রের ডাক পড়ে,,

— ঐ শালি সাহেবার ডাক পড়েছে যাও যাও,, লিমনের কথা শুনে পুনম তড়িঘড়ি করে বের হয়ে চন্দ্রকে বিড়বিড় করে বকতে বকতে মুক্তির ঘরের সামনে যায়। পরোক্ষণেই মনে পড়ে এই দুই ভাই বোনই এক ভাইয়ের ডাক শুনলে মুক্তি আপু তাকে নিশ্চিত ঘর থেকে খেদিয়ে ছাড়বে। তাই সেখানে দাড়িয়ে ছাদের দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে কেউ হাত টেনে ধরে। পিছন ফিরে দেখে চন্দ্র চেহারার রঙ উঠে যায় চন্দ্র সেদিকে পাত্তা না দিয়ে পুনমকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যায়।

— ছাড়েন ছাড়েন আমাকে যাবনা আপনার ঘরে,,

চন্দ্র পুনমের কথায় পাত্তা না দিয়ে পুনমকে ঘরে এনে দরজায় খিল দিতেই পুনম চুপ মনে পড়ে যায় সকালের কথা চন্দ্র দরজা আটকে ফাজিল হাসল। যা বুঝার বুঝে যায় পুনম চন্দ্র থেকে বাচতে দৌড়ে ওয়াশরুমে যায় দরজা আটকাতে নিলে চন্দ্র দরজা ধরে
— বাচতে পারবি জোহরা জান উহু

— ওয়াশরুম যাব

— সত্যিই তো
সন্দিহান নজর চন্দ্রর পুনম দাতে দাত চেপে বলল
— হ‍্যা

চন্দ্র গেট ছেড়ে দেয় পুনম দরজা আটকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিক করে হেসে দেয়। সকাল থেকে এই চন্দ্র ব‍্যাটাকে ভালোই জ্বালিয়েছে সে। অনেক বার ঘরে যাওয়ার জন‍্য সবার সামনেই বলেছে ইশারা ইঙ্গিত ও করেছে তবে পুনম সেদিকে পাত্তা দেয়নি চন্দ্রর যদিও লজ্জা নেই সবার সামনে থেকে নিয়ে যেতে পারতো কিন্তু নতুন জামাই হিসেবে একটু রয়েসয়ে ছিল।।

দশ মিনিট পার হওয়ার পরেও যখন পুনম বের হয় না তখন জোরে জোরে দরজা ধাক্কানো শুরু করে।
— কিরে আর কতক্ষণ??

ব‍্যগ্র কন্ঠ চন্দ্রের। পুনম আর জ্বালায় না চুপচাপ বেড়িয়ে আসে পুনম বেড়িয়ে আসতে চন্দ্র তাকে কোলে তুলে নেয় পুনম গলা জড়িয়ে ধরে না পুরো ভাড় ছেড়ে দেয়।
পুনমকে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসে নিজের বুকের সাথে মেশায় পুনম মুচড়ামুচরি করতেই চন্দ্র হাতে বাধন শক্ত করে ।

— জানি আমার উপর অভিমান করে আছিস তোর অভিমান জায়েজ আছে তবে একটাবার আমার কথাটা শোন,, ধোকা আমি তোকে দিতে চাইনি তবে আর কোনো রাস্তা ছিলো না আমার।

পুনম চুপচাপ থাকে — তোর জন‍্য পাগলামি আমার গোটা ফ‍্যামিলি জানতো এই ডুবে যাওয়া আমিটাকে তুই ছাড়া কেউ বাচাতে পারবে না। টিনএজ আঠারো বছরের ছেলেটা ভালোবাসা অনুভূতি মানেই তুই বুঝেছিল। সেই তুই যখন আমায় ইগনোর করতি।
সেটা আমায় রাগান্বিত করত না পুড়িয়ে ছাড়খার করে ফেলত।
থামল চন্দ্র পুনম মুখ উঠিয়ে চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র আবার বলতে শুরু করে — সবাই বলতো নামের সাথে মিলিয়েই নাকি আল্লাহ আমাকে সৌন্দর্য দান করেছে সবার কাছে বেশ পপুলার ছিলাম তাই!! তবে তুই নামক রমনীর নজরে পড়লাম না। মাঝে মাঝে বেশ বিরক্ত লাগত এই ভেবে যে। যে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না তাকে কিভাবে আমার মনের অবস্থা বুঝাব রুপশার বিয়েতে গিয়েছিলাম আমার মনে তান্ডব তোকে বুঝাতে এই আমিটাকে যাতে একটু বুঝিস তাই কিন্তু সেই সময় অনেক কান্ডে আমার রাগ উঠে তাই তোর উপর আমার রাগের বহ্নিপ্রকাশ ঘটে।
তখন থেকেই তুই আমাকে আরো ইগনোর করতি। তোর মনোভাব জানার অনেক চেষ্টা করেছি শেষে জানলাম আমার প্রতি তোর মনোভাব জিরো পার্সেন্ট। একদিন তো মুক্তি না পেরে বলে বসল তুমি একটু সেজেগুজে পুনমের সামনে থাকতে পারো না।। পরে না পেরে এই চিঠির পদ্ধতি অ‍্যাপলাই করেছি

চন্দ্র থামতেই পুনম ভ্রু কুচকে বলল — এই চিঠির পদ্ধতিটা আপনি কোথায় পেয়েছেন??

চন্দ্র হাসল — তুই দিয়েছিস,,,,

পুনম তো অবাক সে কিভাবে দিলো ফের ভ্রু কুচকে বলল — আমি কিভাবে??

— নব্বই দশকের মুভি লাভার পুনমের “সেরফ তুম” মুভি থেকেই আইডিয়াটা পেয়েছি তাতে নিজের মতো আপডেট করেছি
চোখ মেরে বলল চন্দ্র ফিক করে হেসে দিলো পুনম। সেই হাসির দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে চন্দ্র হাসতে হাসতে চন্দ্রের দিকে নজর যেতেই থেমে গেলো পুনম।
ভ্রু উচু করে জানতে চাইল কি?? উত্তরে চন্দ্র মুচকি হাসল। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকল পুনম
— আপনি এতো সুন্দর কেন??

— আমার সৌন্দর্য তাহলে এতোদিন পর বউয়ের নজরে পড়ল তাহলে,,

— হুম সৌন্দর্য মেয়েদের জন‍্য ছেলেদের এতো সুন্দর মানায় না।

— আসলেই সৌন্দর্য মেয়েদের তাইতো মায়াময় সৌন্দর্যে ডুবেছি আমি। তার গহীন চোখে ঘন পাপড়ি যুক্ত আখি জোড়ায় ডুবেছি আমি যার খিলখিল হাসিতে মরেছি আমি,,

চন্দ্রের এমন কথায় লজ্জা পায় পুনম। চন্দ্র সেই লজ্জা দেখে তর্জনী দ্বারা পুনমের চেহারা উচু করে ললাটে দীর্ঘ চুমু খায়। পুনম আবেসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে — ইশশ এমন প্রেমিক পুরুষের উপর রেগে থাকা যায় নাকি??

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৬

চন্দ্র পুনমের ছোট ফুপি বেলা সবার ছোট সে ভাইবোনদের মধ‍্যে। তার সাথে চন্দ্র বাদে কারো খুব একটা সখ‍্যতা নেই আজ সেই ছোট ফুপির বাসায় যাচ্ছে চন্দ্র পুনমকে নিয়ে। বেলা আক্তার গাউছিয়া থাকে সেখানেই একটা সরকারি স্কুলের টিচার। ভাইঝি ভাইপোর বিয়েতে তিনি যাননি। তার এই ভীরবাট্টা ভালো লাগে না তিনি একা থাকতে পছন্দ করে। বলতে গেলে তিনি পরিবারের সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। তিন ভাই ও তার সাথে কথা বলে না তার একটা ভুলের কারণে।।

বাস থেকে নেমে রিক্সায় উঠে চন্দ্র পাশে বসা পুনমের দিকে চায়। ঘেমে নেয়ে একাকার মেয়েটা বহুদিন পর এমন বাস জার্নি করায় বমিও করেছে।
মেরুন কালারের শাড়ি সাথে কালো কালারের হিজাব। হিজাবের পাশ দিয়ে ঘামের বিন্দু কণা উকি দিচ্ছে
অটোর প‍্যাপু শব্দে সেদিকে তাকায় চন্দ্র দেখে ফুপির বাসায় সামনেই এসে গেছে।
— এখানেই থামান ঐ দোকানের সামনে,,,,

দুইজন নামে চন্দ্র দোকানের সামনে গিয়ে কিছু চিপস আইসক্রিম নিয়ে নেয়।
— এগুলো নিচ্ছেন ক‍্যানো ফুপির বাসায় তো ফুপি ছাড়া আর কেউ নেই,,

— ফুপির ভাইঝির মতো ফুপিরও এই খাবার গুলো পছন্দ

পুনম মুখ মুচড়ে চন্দ্রের সাথে যায়। এই তিনদিনে পুনম বেশ অবাক হয়েছে এককালে যেই চন্দ্রের সাথে তার কথা বলতেও অস্বস্তি হতো আজ তার সাথে কতটা ফ্রি সে।।
নিচ তলায় দুইটা ফ্ল‍্যাট একটা ওয়ান বেডের সিঙ্গেল ফ্ল‍্যাট আরেকটা ডাবল বেডের ফ্ল‍্যাট। বেলা আক্তার ওয়ান বেডের ফ্ল‍্যাটেই থাকে চন্দ্র কলিং বেল বাজায়
বেল বাজানোর সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে বেলা মনে হচ্ছে সে এতোক্ষণ দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিলো।

— আব্বা আমার,,,
বলেই চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে। বলিষ্ট দেহের চন্দ্র ফুপিকে আগলে নেয় বেলা ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দেয়। পুনম অবাক চোখে ফুপির কান্না দেখছে। তাদের সব বোনদের ভাব শিলা ফুপির সাথে থাকলেও এই ফুপি চন্দ্র ছাড়া কারো সাথেই খুব একটা কথা বলতো না।
কান্নার মাঝেই বেলার চোখ যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা পুনমের দিকে পুনম চুপচাপ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা তাদের ঘরে নিয়ে যায়।
— এই চন্দ্র এতো দেখী তোদের জুটিটা একদম আমার আব্বা আম্মার মতো লাগছে

চন্দ্রের হাতে শরবতের গ্লাস ধরিয়ে পুনমকে দিতে দিতে বলল। পুনম এবার বেশ লজ্জা পায়। চন্দ্র পুনমের দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ফুপীর দিকে তাকায়।

— তাহলে ধরো তোমার আব্বা আম্মা তোমার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছে মেয়ে হিসেবে সেটা পূরণ করা তোমার গুরু দায়িত্ব।

— জ্বী আব্বাজান তবে আগে খেয়ে দেয়ে নিজের পেট ও মন দুটোই ঠাণ্ডা করেন। আর আম্মাজান ফুপির সাথে এতো জড়তা করতে হবে না হিজাব খুলে ফ্রেশ হোও।। বলে নিজের একে একে হিজাবের পিন সরাতে থাকে। পুনম ফুপির আদরে মিষ্টি করে হাসে

বেলা রান্নাঘরে যেতেই পুনম চন্দ্রের দিকে প্রশ্নাত্বক চোখে তাকায়। চন্দ্র ভ্রু নাচায় এগিয়ে আসতে গেলেই পুনম বেলার কাছে দৌড়ে যায়।
— এই বউটা এতো পালায় কেনো বিয়ে করেছি কি তার ম‍্যারাথন দেখার জন‍্য?? বিড়বিড় করে বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়।

ইলিশ মাছটা এখন ভাজতেছে যাতে গরম গরম খেতে পারে। পুনম ফুপীর পিছে দাড়ায়
— ফুপী

বেলা পিছনে পুনমকে দেখে তড়িঘড়ি করে বলল
— আম্মা এখানে খুব গরম ঘরে যা

— তোমার কাছে থাকি ফুপি,,
বেলা পুনমের আবদার ফেরাতে পারে না। অনেক দিন পর কেউ এমন আবদার করল।

— একটা কথা জিজ্ঞাসা করি ফুপি

— হু
রান্না করতে করতে জবাব দিলো বেলা।

— তুমি এমন আলাদা থাকো ক‍েনো?? আর থাকোই যখন বাড়িতে গেলেও কারো সাথে কথা বলো না চন্দ্র ভাই ছাড়া কেনো আমরা কেউ কি তোমার প্রিয় না। শুধু চন্দ্র ভাই তোমার প্রিয়

— স্বামীকে বুঝি ভাই ডাকিস। চাচাতো ভাই স্বামী হলেও তাকে ভাই ডাকা যাবে না

— কথা ঘুড়াচ্ছো ফুপি আচ্ছা ডাকব না উনাকে ভাই তবুও বলো কেনো এতোদিন আমাদের এরকম আদর করোনি কেন দুইটা ফুপি থেকেও একটা ফুপির আদরে বড় হয়েছি কেনো আমার বড় ফুপি তোমার জন‍্য কাদে।

পুনমের কথা শুনে বেলার হাত থেমে যায়। উদাসী চোখে কড়াই নামাতে নামতে বলে — নিজের ভুলের কারণে
বলেই আবার কেদেঁ ওঠে পুনম আগলে নেয় ফুপিকে। চন্দ্র এতোক্ষণ সব শুনলেও যায়না সেখানে মনে মনে পুনমকে বাহবা দেয় এতোদিন অনেক চেষ্টা করেও চন্দ্র কারো থেকে বেলা ফুপির নিঃসঙ্গতার কথা জানতে পারেনি শুধু এটুকুই জানতো সে বাবা চাচাদের মান ডুবিয়েছিল।

— কোনো এক পুরুষের প্রেমে নিজেকে ডুবিয়ে। তার জন‍্য মাতোয়ারা হয়ে ঘর ছেড়ে ছিলাম যখন ঘর ছেড়ে ছিলাম তখন আমি আঠারোর রমণী চারিদিকে জমকালো আয়োজন বাড়িতে সানাইয়ের সুর ।। সেই সবকিছু উপেক্ষা করে গভীর রাতে পাড়ি দিয়েছিলাম কারো জন‍্য তবে সেই লোকটা এলো না ঘন্টার পর ঘন্টা তার অপেক্ষায় ছিলাম তবুও সে আসল না। ধোকা দিল আমাকে পরের দিন সকালে সেই হলুদের সাজেই বাসায় এসে উপস্থিত হলাম তবে ততোক্ষণে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছে কামরুল ও পারভেজের ছোট বোন রাতের আধারে পালিয়ে গেছে কোনো এক নাগরের হাত ধরে।।

বলতে বলতে বেলার কান্নার আওয়াজ বাড়ল। পুনম হাত বাড়িয়ে একগ্লাস পানি দেয় পানিটুকু খেয়ে বেলা আবার বলল — ভাইদের মান সম্মান ডুবানোর অপরাধে ভাইরা কথা বলা বন্ধ করে দিলো আমিও অপরাধবোধ থেকে কথা বলতে পারিনি সেই থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি একা করে দিয়েছি,,,

— কেনো বলনি দরকার পড়লে পায়ে ধরে মাফ চাইতে তখন তাহলে আজ আমাদের একটা ফুপির আদর বিনে থাকা লাগত না। আজ তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো।

— নারে মা তা হয়না

— কেনো হয়না যদি না হয় তাহলে আজ এই মূহুর্ত্তে আমি তোমার বাসা থেকে চলে যাব।
বলেই বেলার হাত নিজের থেকে ছাড়ায় বেলা আবার হাত ধরে — এমন করে না আম্মা,,

— উহু তুমি বলো যাবে কিনা না গেলে এই মুহূর্তে আমরা বেড়িয়ে যাব

অগত‍্যা রাজী হয় বেলা। দুপুরে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বের যেতে যেতে তাদের রাত নয়টা বাজে। বাসায় সবাই ছিলো মুক্তি গেট খুলে ফুপি দেখে অবাক হয়।
বেলাকে টেনে ঘরে ঢুকায় পুনম। সবাই বেলার দিকে তাকায় বেলা ধীর পায়ে ভাইদের সামনে দাড়ায় বড় ভাইয়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
আকস্মিক ঘটনায় হতবাক কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেবও। তবে দুই ভাবীর চোখে জল

— আমাকে মাফ করে দাও ভাইজান আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমরা আমাকে মাফ করে দাও।

কামরুল সাহেব বোনের মাথায় হাত রেখে কেদেঁ দেয়। এরপর বেলা পারভেজ সাহেবের কাছে গিয়েও একি কথা বলে। ভাবীদের কাছেও মাফ চায় এই ভাবীগুলো তাকে বেশ আদর করতো।

রাতে খাবারের সাথে ঘটে পারিবারিক মিলন। খাওয়া শেষে যে যার মতো ঘরে চলে যায় মুক্তি বেলাকে নিজের সাথে নিয়ে যায় আজ সে ফুপির সাথে ঘুমাবে। পুনম যেতে নিলেও তাকে থামিয়ে দিয়ে মুক্তি বলল — হ‍্যা তোরে নেই আর তোর ঐ খ‍্যাপা জামাই আমার ভাই এসে আমাদের ঘুম নষ্ট করুক।
বলেই মুখ মুচড়ে বেলা নিয়ে ঘরের দরজা আটকে দিলো আর পুনম হা করে সেই বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।

— পুনম

চন্দ্রের ডাকে পুনমের ধ‍্যান ভাঙ্গে বিড়বিড় করে বলে — ঐ শের তার গর্জন শুরু করেছে ঘরে না যাওয়া অবদি থামবে না,,

পুনম ঘরে ঢুকে সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে শাড়ি পাল্টে কামিজ পড়ে। ওড়না জড়াতে জড়াতে বের হয় চন্দ্র তা দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। চন্দ্রকে এভাবে তাকাতে দেখে পুনম ভরকে গিয়ে বলল

— কি!! শাড়ি পরে ঘুমাতে কষ্ট হয় তাই

চন্দ্র কিছু না বলে ওড়না নিয়ে হাতে পেচায়।
— ওড়না নিলেন ক‍্যান দেন ওড়না দেন

চন্দ্র ফাজিল হাসল পুনমকে পাজা কোলে নিয়েই বিছানায় শুয়ে দিলো গলায় মুখ ডুবিয়ে বিড়বিড় করে বলল — ঘুমাব জোহরা বিবি ঘুমাতে দে,,,,,

#চলবে