পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-৫০+৫১+৫২

0
3

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫০

— এখানে জোহরা তাবাচ্ছুম কে??

প্রানী বিদ‍্যা বিভাগে পিয়ন এসেছে। ক্লাস নেই বিধায় সবাই আড্ডায় মশগুল কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজন টিচার আসবে তাই কেউ বের হয়নি। পিয়নের কথায় পুনম পুরো ক্লাসে চোখ বুলায় দেখে আর কেউ দাড়ায় নাকি। নাহ আর কেউ দাড়ায়নি তাই পুনম দাড়িয়ে বলল — আমি কাকা কোনো প্রয়োজন,,

— হ‍্যা আপনাকে নাওয়াজ শেখ স‍্যার ডেকে পাঠিয়েছেন,,,

— আচ্ছা

পুনম বলেই পিয়ন নিজ গন্তব্যস্থল চলে গেলো পুনম ক্লাস থেকে বের হয়ে নাওয়াজ শেখের কেবিনের উদ্দেশ্যে যায়।
নক করতেই ভিতর থেকে অনুমতি আস — কাম ” নাওয়াজ শেখ পেপারে নজর রেখেই বলল।

— আসসালামু আলাইকুম স‍্যার,,

— হু ওয়ালাইকুম আসসালাম। মিস জোহরা তাবাচ্ছুম পুনম ডটার অব পারভেজ আহমেদ। আপনার কি কোনো ফুপু আছে??

হঠাৎই তার ফুপির জিজ্ঞাসা করায় ভরকে যায়। তবে হাসি মুখে বলে — হ‍্যা স‍্যার আছে আমার দুইটা ফুপি বিবাহিত,,,

পুনমকে আর বলতে না দিয়ে নাওয়াজ শেখ বললেন — স্টপ আপনার ফ‍্যামিলি ব‍্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানা আমার কোনো ইন্টারেষ্ট নেই। আপনার এমাসের এবসেন্ডটা একটু বেশী হোয়াই??

— আসলে স‍্যার নতুন বিয়ে হয়েছে তো,,,

— বিয়ে হয়েছে তো দুনিয়ার সকল কার্যক্রম আপনার জন‍্য বন্ধ হ‍্যা
তাদের কথা বলার মধ‍্যে কেউ প্রবেশ করে
— আসব স‍্যার,,,

হুম এসো চন্দ্র স‍্যারের কথা শুনে পুনম পিছন ফিরে তাকায় চন্দ্রকে দেখে ঠোট ফুলায় চন্দ্র সেদিকে তাকায় না। নাওয়াজ শেখের দিকে তাকিয়ে বলল — আমাকে ডেকেছিলেন স‍্যার,,,

— হ‍্যা চন্দ্র তোমার বোন লাষ্ট কয়েকদিন বেশ গ‍্যাপ দিয়েছে লিভ অ‍্যাপলিকেশন দেয়ার কথা বললেও সেটা দেয়নি যাই হোক আমি ওর ফর্মে লাষ্ট গার্ডিয়ান হিসেবে তোমার নাম দেখেছি তাই আগে তোমাকেই জানালাম তুমি ভার্সিটি টপার আর তোমার বোন,,,

— স‍্যার ও আমার বোন না ওয়াইফ

চন্দ্রের কথায় থেমে গেলো নাওয়াজ শেখ। অবাক দৃষ্টিতে একবার চন্দ্র তো একবার মাথা নিচু করে থাকা পুনমের দিকে তাকায়

— সত্যি

— জ্বী স‍্যার আর ওর গ‍্যাপ গুলা আমাদের বিয়ের জন‍্যই হয়েছে আর আমার জানা মতে ভার্সিটি স্টুডেন্টস”রা গ‍্যাপ দেক বা না দেক এতে টিচারদের কোনো সমস্যা থাকার কথা না,।।

চন্দ্রর কথায় এদিক ওদিক তাকায় নাওয়াজ শেখ সে তো পুনমকে ডেকেছিল অন‍্য একটা কারণে পারভেজ নামটা তার অতি পরিচিত তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন‍্যই ডেকেছে তবে পুনম মুখে বিবাহিত ফুপি শুনেই তার মেজাজ খিচে গেছে। তাই তাকে কথা শুনানোর জন‍্য আর কিছু না পেয়ে এই পন্থা।

— আর কোনো কিছু বলবেন স‍্যার,,,

— হূ না বোথ অফ ইয়‍্যু গো নাউ,,

পুনমকে সাথে করে নিয়ে চন্দ্র বের হয়। পুনম মাথা নিচু করেই কিছু ভাবছে
— কিছু খাবে??

চন্দ্রের প্রশ্নে ধ‍্যান ভাঙ্গে পুনমের সে মাথা নাড়িয়ে বলে — হু আইসক্রিম,,

আইসক্রিম পাগলীর কাছ থেকে এটাই আশা করা যায় চন্দ্র আর কিছু না বলে ক‍্যানটিনে গিয়ে দুইটা স‍্যান্ডউইচ অর্ডার করে সাথে চা পরটা,,

চায়ে ডুবিয়ে পরটা পুনমের মুখে দিতে দিতে বলল
— একটা স‍্যান্ডউইচ মিহিকে দিবি আরেকটা ক্লাসের একফাকে খেয়ে নিবি আজ বেশ লম্বা ক্লাস চলবে,, আর একা একা বের হবি না

সুবোধ বালিকার মতো মাথা নাড়ে পুনম। চন্দ্র মুচকি হেসে বলে — লক্ষী জোহরা বিবি,,

তখনই পিছন থেকে ঝনঝন আওয়াজ হয় — চন্দ্র ভাই আপনি,,, ববিয়ে করেছেন,, এই মেয়েটা আপনার বোন না??

এলিনার কথায় খুব একটা ভাবান্তর হয়না চন্দ্রর সে পুনমকে খায়িয়ে নিজে খেয়ে উঠে দাড়ায়। পুনমের মুখ টিস‍্যু দিয়ে মুছে তাকে ক্লাসে যেতে ইশারা করে।।

পুনম চলে যেতেই চন্দ্র এলিনার দিকে তাকায় অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে চন্দ্র কিছু না বলে চলে যেতে নিলে এলিনা পথ আটকায় — আমার সাথে এমনটা কেনো করলেন??
বলেই চন্দ্রের হাত ধরতে নিলে চন্দ্র তৎক্ষণাৎ সরে গেলো। এলিনা বাড়ানো হাত গুটিয়ে নিল একটু আগেও তো ঐ পুনমকে দিব্বি খাইয়ে দিলো হাতে হাত রেখে কই তখন তো এরকম করল না।

— আমি তোমাকে আগেই ক্লিয়ার করেছিলাম রাইট যে আমি বিবাহিত,,

মাথা নিচু করে এলিনা। চন্দ্র কপাল কুচকে চলে গেলো তাকে দেখে মনে হলো সে বেজায় বিরক্ত তবে যাওয়ার থেমে এলিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সো কল্ড ছ‍্যাকাখোরদের মতো আমার বউয়ের উপর আঘাত এনো না তাহলে চন্দ্রর ভয়ংকর রুপ দেখবে,,

চন্দ্রর কন্ঠের তীক্ষ্মতায় ভয় পেতে বাধ‍্য এলিনা। কিছু বললনা।

_______________________

প্রহরের মধ‍্যম ভাগ আড়াইটার দিকে ক্লাস শেষ করে বের হয় পুনম মিহি। ভার্সিটির গেটের সামনে চন্দ্র শিহাবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেদিকে যায়। পুনমকে বিদায় দিয়ে মিহি চলে যায় হোষ্টেলে।

— কেমন আছো ভাইয়া??

— ভালা নাইরে পূর্ণ তোর বর আমগো আগে বিয়া কইরা বউ লইয়া ঘুরে আর আমি বর্তমানে চাকরির পিছনে ঘুরি,,,

চন্দ্র শিহাবের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— তো ভার্সিটি কতৃপক্ষ থেকে অফার কি আমার একারই এসেছে নাকি,,

— হে হে ভাই বতর্মানে তো আমি বেকার।।

চন্দ্র শিহাবকে কিছু না বলে পুনমকে নিয়ে বাইকে বসে । — বাসায় এসো ভাইয়া,,

— তুমি না বললেও ঐ বেহায়া হাজির হবে,,

— দেখ চাদঁ মামা ইনসাল্ট করবি না,,

— হু তোর আবার ইনসাল্ট
মুখ বাকিয়ে বলে চন্দ্র বাইক স্টার্ট দেয়। — শা*লা ধান্দাবাজ নিজের যখন দরকার পরে তখনই ডাক পরে হুহ।।
বিড়বিড় করে বলে নিজের বাইক স্টার্ট দেয়।।

পুনম বাসায় এসেই আগে যায় ঢুকে ওয়াশরুমে বিছানায় পড়ে থাকা চন্দ্রর শার্ট প‍্যান্ট নিয়ে। চন্দ্রর কাপড় এখন বেশীর ভাগ পুনমই ধোয় মাঝে মাঝে চন্দ্র ধোয় রেনু মিনু বা ওয়াশিং মেশিনের কাপড় ধোয়া চন্দ্র পছন্দ করে না। আগে নিজে ধুইলেও এখন পুনম ধোয়।

চন্দ্রের কাপড় ধুয়ে একেবার গোসল সেরে বের হয় পুনম বালতি কোনো রকম বারান্দায় রেখে নামাজে দাড়ায়। পুনমকে নামাজে দাড়াতে দেখে চন্দ্র কিছু না বলে নিজেও গোসলে যায়।

নামাজ শেষে পুনম ছাদে যায়। কাপড় মেলে দিয়ে আসতে নিলে পিছন থেকে কেউ ডাক দেয়,,

— জ্বি কাকে ডাকছেন??

— আপনাকেই ডাকছি আপনি এখন ছাদে আসেন না কেনো??

— কেনো আপু আমাকে দিয়ে কি প্রয়োজন,,

— না আরকি জিজ্ঞাসা করতাম আপনি বাসায় কখন থাকেন,,??

মহিলার কথায় পুনম ভ্রু কুচকে তাকায়। পুনমকে তাকাতে দেখে মহিলা হেসে বলল — আসলে আপনাকে আমার ভাইয়ের জন‍্য বেশ পছন্দ,,,

— ও ম‍্যারেড
কারো গম্ভীর স্বরে সেদিকে তাকায় দুইজনেই। মহিলা হায়হায় করে বলল — সেকি এতো ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে??

— আপনার ভাইয়ের জন‍্য যখন পছন্দ হয়েছিল তখন ছোট মেয়ে মনে ছিলো না,,

মহিলা আর কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। মহিলাটি চলে যেতেই চন্দ্র পুনমের দিকে রাগী চোখে তাকায় তা দেখে পুনম ফিক করে হেসে দেয়।

— মাইষ‍্যের শুধু আমার বউয়ের উপরই নজর পরে আরে নাকে নাকফুল হাতে চুড়ি নজরে পরে না।। নাহ চন্দ্র দ্রুত এই বউকে নিজর বাচ্চাগাচ্চার মা বানিয়ে ফেল কোলে ট‍্যা টু নিয়ে ঘুরলে কেউ ফিরেও তাকাবে না।।

— ওহে শের “এ আলী সাহেব কি ভাবছেন,,??

চন্দ্র আনমনে বলে ফেলল — বউকে কিভাবে মানুষের নজর থেকে প্রটেকশন দেয়া যায়।।

— হয়েছে এখন চলেন খিদে পেয়েছে,,,

চন্দ্র পুনম নিচে চলে যায়। তারা যখন নামে তখন সবাই যে যার মতো খেয়ে দেয় নিজের ঘরে। পুনম চন্দ্র একসাথে খেয়ে নেয়।।

— আমি আসছি গেট লাগাও আর এখন ঘুমাবে ওকে মাই জোহরা,,

— আচ্ছা সাবধানে

চন্দ্র পুনমের কপালে চুমু দিয়ে চলে যায় কোচিং এর উদ্দেশ্যে। কয়েকদিন পর তার কোচিং এর আই এল টি এস স্টুডেন্টস “দের এক্সাম তাই তাদের প্রতি একটু বেশী মনোযোগী হওয়া দরকার তাই কয়কেদিন চন্দ্রের একটু বেশী চাপ যাচ্ছে দুপুরে খাওয়ার পরপরই বের হয় আসে সেই রাত দশটার পর।।

_______________________

চন্দ্রর কাবার্ডে এলোমেলো কাপড় গোছগাছ করছে পুনম কালকের ধোয়া কাপড় গুলো ভাজ করে রাখছে হঠাৎই উপরের দিকে নজর গেলো তার নাগাল না পেয়ে সেমি উচু টুল নিয়ে এসে সেটাতে দাড়িয়ে দেখল একটা লকার সিস্টেমের তাক।
পুনম শাড়ির আচল থেকে চাবি নিল যেটা চন্দ্র বিয়ের পরদিনই বেধে দিয়েছে । চাবির গোছা থেকে সব চাবি ট্রাই করেও খুলল না লকারটা পুনম ভাবল চন্দ্র আসলে বলবে ঐটাতে কি আছে যেটার চাবি এখানে নেই।।

এগারোটা বাজে চন্দ্র আজ এখনো আসে নাই। পুনম একবার বারান্দায় তো একবার ঘরে পায়চারি করছে,,
একটু পরপর ফোনও করছে ধরছেও না কল। সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির সবাই সাড়ে দশটার মধ‍্যেই শুয়ে পড়ে।।

ঘড়ির কাটা বারোটার দিকে পৌছাতেই পুনম চন্দ্রর বাইকের শব্দ পায় পুনম দৌড়ে নিচে আসে। এসে দেখে চাদনী বেগম বসে আছে

— মা তুমি ঘুমাও নি

— নাড়ে মা ছেলেটা এখনো আসল না বাসায়,,

চিন্তিত স্বর চাদনী বেগমের। — এসেছে বাইক পার্কিং করে আসছে তুমি ঘুমাতে যাও,,

— আসুক দেখেই যাই ছেলেটাকে। সারাদিন দেখিনি

মুচকি হাসে পুনম তাদের কথোপকথনের মাঝে প্রবেশ করে চন্দ্র — আম্মু এখনো ঘুমাও নি

মায়ের ললাটে সযত্নে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করে চন্দ্র। — ছেলে এতোরাত পযর্ন্ত বাইরে থাকলে মায়ের কি ঘুম আসে,,

— সরি ঐ স্টুডেন্টসদের পরীক্ষা তাই সব গুছিয়ে আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো,, রাতে খেয়েছ

— হু শুধু তুই আর পূর্ণ বাকি,,

চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে।
— আচ্ছা তুমি ঘুমাতে যাও আমরা খেয়ে নিব,,

চাদনী বেগম চলে যেতেই চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায়। গাল ফুলানো পুনমকে দেখে ঠোট বাকিয়ে হাসে চন্দ্র। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলে — ঝলসে দিবি নাকি,, হায় চলো একসাথে ফ্রেশ হই,,

— হু সেগুরে বালি
বলেই পুনম রান্নাঘরে দৌড় দেয়। চন্দ্র ঠোট কামড়ে হেসে নিজের ঘরে প্রস্থান করে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নাহয় অভিমানির অভিমান ভাঙ্গাবে।।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫১

— দেখ নয়ন তুই যেটা করতেছিস সেটা একদম ঠিক না মিহি তোকে অনেক ভালোবাসে সেই কলেজ লাইফ থেকে তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস ভালোবাসিস।

— পছন্দ বদলায় ভালোবাসা ও বদলায় পুনম আর আমি বুঝেছি মিহি শুধু আমার মোহ ওকে আমি ভালোবাসি না,,, আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি।
বলেই পুনমের হাত খানা ধরে নিজের হাতে নিয়ে নিলো

নয়নের কথায় অবাক হয় পুনম কি বলছে কি ছেলেটা পুনম কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারো গর্জনে থেমে যায় পাশে তাকিয়ে দেখে চন্দ্র রক্ত চক্ষু নিয়ে তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে পুনম দ্রুত নিজের হাত ছাড়াতে নিলে নয়ন আরো আকরে ধরে কাতর স্বরে বলে — আমাকে একটু বুঝ পুনম

— আমার হাত ছাড় নয়ন

— নাহ

পিছন থেকে চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — ও ওর হাত ছাড়তে বলেছে নয়ন,,,

নয়ন তাকিয়ে দেখে চন্দ্র তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে তবুও পুনমের হাত ছাড়ল না আরো জোরে আকরে ধরল। ব‍্যাথায় পেলো পুনম ব‍্যাথায় কুকরে বলল — আহ

পুনমের ব‍্যাথা সূচক শব্দে বুঝি চন্দ্র রাগের বাধ ভাঙল নাক বরাবর ঘুষি মারল নয়নের পুনমের হাত ছাড়িয়ে নয়নের হাত মুচড়ে বলল — ও বলেনি ওর হাত ছাড়তে হ‍্যা বলেনি বল

নয়ন ব‍্যাথা পেলেও রাগল রাগী কন্ঠেই বলল
— ব‍্যাথা ও পেয়েছে আপনার কি হ‍্যা আপনি ওর আপন ভাই না চাচাতো ভাই

নয়ন কথাটা শেষ করতেই চন্দ্র নয়নের গালে পরপর কতগুলো থাপ্পড় দিতে থাকল। পুনম টানলেও চন্দ্রকে আটকাতে পারল না নিজের মতো দশটা থাপ্পড় দিয়ে থামল চন্দ্র পুনমকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে পুনমের কপালে দীর্ঘ চুমু দিয়ে নয়নের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল
— এখন নিশ্চয়ই বুঝে গেছিস ও আমার কি। এখন একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ নেক্সট টাইম থেকে পুনমের আশে পাশে থাকলেও এর চেয়ে খারাপ অবস্থা হবে।

প্রথমে ঘুষি তারপর হাত মুচড়ে ধরা। এরপর বেশ জোরদার থাপ্পড়ে নয়নের অবস্থা খারাপ কিছু বলার মতো অবস্থায় থাকল না শুধু চন্দ্র ধাক্কা মেরে ছেড়ে দিতেই নয়ন পড়িমরি করে পালিয়েছে। জীবন থাকতে সে আর পুনমের আশপাশ ঘেষবে না।।

চন্দ্র পুনমের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে হনহন করে টানতে টানতে বাইকের সামনে ধাক্কা মারে পুনম চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে সে অলরেডি বসে গেলে পুনম ও কি না বলে চুপচাপ চন্দ্রর পিছনে বসে পড়ে।
বাসার সামনের আসতেই পুনমের হাত ধরে টেনে হনহন করে টেনে নিয়ে যায় চন্দ্র
— আমার কথাটা শুনেন একবার

বলতে থাকে পুনম চন্দ্র কি তার কথা শুনে উহু। চাদনী বেগম ড্রয়িং রুমেই ছিলো পুনমকে টানতে দেখে দ্রুত বলে — কি হয়েছে আব্বা পুনমকে এভাবে টেনে এনেছিস কেনো মেয়েটা কাদছে চন্দ্র ছাড় ছাড়

বলতে বলতে চাদনী বেগম চন্দ্রের পিছন পিছন আসে। চন্দ্র পুনমকে ঘরে ছুড়ে দরজা আটকে দিয়ে ফ্লোরে পড়া পুনমের দিকে তাকায় ওদিকে চাদনী বেগম সমানে চিল্লাচিল্লি করে চলেছে।
চন্দ্র পুনমের সামনে বসে পুনমের গাল চেপে ধরে

— এই এই তোর হাত ঐ ব্লাডি বা** নয়ন কিভাবে ধরে ও সাহস পায় কিভাবে। এই তোকে আমি ক্লাসে বসিয়ে যাইনি হ‍্যা তুই ঐ পার্কে কি করছিলি বলল বলছিস না কেনো??

পুনমের চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়ছে। চন্দ্র পুনমের উত্তরের আশা করে না তাকে হিরহির করে টেনে ওয়াশরুমে দাড় করায় বেসিনের সামনে পুনমের হাত নিয়ে হ‍্যান্ড ওয়াশ ডলতে ডলতে বলল এই হাত এখনই পরিষ্কার করবি আমার জোহরার শরীরে এক ইঞ্চিও আমি ঐ বা** ছোয়া চাই না,,

— আহ লাগছে ছাড়েন,,, কাদতে কাদতে পুনম বলল

— ও এখন লাগছে তাইনা ওর ছোয়া ভালো লেগেছিল তাইনা,,

এবার পুনমও রেগে গেলো রেগেমেগে চন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে বলল — ওর ছোয়া আমার জন‍্য বেদনা দায়ক হলেও বর্তমানে আপনার ছোঁয়াও বেদনা দেয় আঘাতে জর্জরিত করে

— আমার ছোঁয়া তোমাকে আঘাত দেয়??

চন্দ্রর রাগের মাথায় কথা প্রশ্নে পুনমও রাগের মাথায় উত্তর দেয় — হ‍্যা

— নে ছুলাম না আর তুই পুনমকে যেমন আমি মাথার তাজ করে রেখেছিলাম আজ সেখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিলাম। এই চন্দ্র তোকে না স্পর্শ করলে মরে যাবে না
বলেই ওয়াশরুম থেকে বের হয় গেলো যাওয়ার আগে ওয়াশরুমের দরজাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে গেলো সেই শব্দে পুনম কেপে উঠল পরোক্ষনেই মনে পড়ল সে কি বলেছে। দৌড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় ততক্ষণে চন্দ্র বেড়িয়ে গেছে ঘর থেকে পুনম দৌড়ে বের হতে নিলে চাদনী বেগম সামনে পড়ে — কি হয়েছে পুনম??

চাদনী বেগমের কথায় পুনম ঝরঝরে কেদেঁ দেয়। চাদনী বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পুনম কান্নাভেজা কন্ঠে ভার্সিটির সব কথা বলতে লাগল।।
— থাক আর কাদে না মা চন্দ্র রেগে গেছে একটু পর রাগ থামতেই এসে পড়বে,,,,

পুনমকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। পুনম ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে উপুর হয়ে শুয়ে কাদতে থাকে। পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে চাদনী বেগম ভাগ‍্যিস রোজিনা বেগম নেই সে পূর্বকে নিয়ে ঐ টিকা দিতে গেছে চাদনী বেগমের ও যাওয়ার কথা ছিলো তবে সে মাথা ব‍্যাথার কারণে যেতে পারেনি মুক্তিকে সাথে পাঠিয়েছে।।

দিন পেরিয়ে রাত হলেই পুনম ছটফট শুরু করে সারাদিন চন্দ্রের কোনো খবর নাই পুনম ফোন দিলেও ধরে না কয়েকটি ফোন দেয়ার পরপরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায় সেই থেকে এই পযর্ন্ত ফোন বন্ধ। শিহাব রিশানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো খবর পেল না।।

রাতে চাদনী বেগমকে কোনো রকম বুঝিয়ে খাইয়ে ঘরে পাঠিয়ে নিজে বসে আছে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে রাস্তায় নজর দিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পুনম যখন কোনো বাইকের শব্দ পায় তখনই আশার আলো জেগে ওঠে তবে চন্দ্রকে না পেয়ে নিরাশ হয়।

— কোথায় গেলেন শের “এ আলী সাহেব আমি আপনাকে সেভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি ফিরে আসুন না আমি
ফিকরে কেদেঁ ওঠে পুনম। কাদতে কাদতে সেভাবেই বসে পড়ে।। রাত একটায় ঘরে ঢোকে চন্দ্র বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকায় পুনমের দিকে নজর দিতে সেদিকে গেলো
পুনমকে পাজা কোলে নিতে গেলেই দুপুরের কথা মনে পড়ল।।

চন্দ্র সেভাবেই কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকল। হঠাৎই পুনমের ঘুম ভাঙল সামনে কারো পা দেখে লাফ চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরল — আমাকে মাফ করে দিন শের “এ আলী সাহেব আমি আমি,,

পুনমকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র বলল — আমাকে ছাড়ুন আমি ছাড়াতে গেলে আপনার শরীরে ব‍্যাথার সৃষ্টি হতে পারে পরে সেই দায়ভার আমার উপর পড়বে।

চন্দ্রের কথা শুনে পুনম আরো জোরে কেদেঁ দেয় কান্নার জেরে হেচকি উঠে যায়। কিছু বলতে পারে না চন্দ্রও সেভাবেই দাড়িয়ে থাকে কান্না করতে কারতে পুনম কখন যে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না।
চন্দ্র কিছুক্ষণ পর ফুপানো বন্ধ বলে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে পুনম ঘুম। চন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনমকে কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে ঘুম দেয়।

সারাদিনের না খাওয়া ক্লান্ত শরীরে দুজনেই খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে। ফোনের শব্দে চন্দ্রের ঘুম ভাঙে পিটপিট করে চোখ খুলে পুনমকে পাশে শুইয়ে ফোন চার্জ থেকে নিয়ে দেখে শিহাব কল দিয়েছে

চন্দ্র ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায় — হ‍্যা শিহাব বল

— ভাই ছেলেটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি,,

— হুম বাসায় যা
বলেই কেটে দেয়। বাকা হেসে বলে — আমার জোহরার গায়ে হাত ঐ হাত দিয়ে অন্তত ছয়মাস কিছু করার অবস্থায় থাকবি না তুই নয়ন।

শাওয়ার নিয়ে আসতেই দেখে পুনম ঘুম থেকে উঠে গেছে বিছানায় বসে বড় আগ্রহ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চন্দ্র সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে — এমন কিউট করে তাকিয়ে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা যায়। তবে জোহরা তোমাকে একটু শাস্তি দেয়া প্রয়োজন যাতে পরবর্তীকালে কেউ তোমার হাত বা গায়ে স্পর্শ করলে তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারো।।

চন্দ্র পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে রেডি হতে থাকে।
— কোথায় যাবেন আজ তো আমার ক্লাস ও আপনার কোচিং ও এখন নেই,,

চন্দ্র পুনমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল — একটু দরকার আছে,,

পায়ে সু গলিয়ে গটগট পায়ে চলে গেলো সেদিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকল পুনম।।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫২

নীল অম্বরে ধূসর রঙা নীরদের ঘনঘটা। তবে বারিধারায় এখনো ভিজেনি রাস্তাঘাট জনজীবন।
দুপুর সাড়ে তিনটা বাজলেও সন্ধ্যা হয়েছে এমন দেখা যায়। সারাদিন পুনমের জঘন্যতম দিন গেছে। চন্দ্রর কোনো খোঁজ খবর নেই প্রতিদিন দুপুরে খেতে আসলেও আজ আসেনি। সকালেও পুনম ভালো মতো খেতে পারেনি চন্দ্র না খেয়ে বেড়িয়েছে শুনে।
শুধু বাবার পাশে বসে বাবার হাতে কোনো রকম এক টুকরো রুটি গিলেছিল সেই থেকে এই পযর্ন্ত খাওয়া হয়নি তবে মনের জ্বালায় খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে না।
চন্দ্রকে এবার কল দিলো পুনম ওপর পাশ থেকে রিসিভ ও হলো পুনম সালাম দিলো
— হুম ওয়ালাইকুম আসসালাম

— পৌনে চারটা বাজে এখনো খেতে আসলেন না,,

— আসব না কোচিং এ কাজ পড়ে গেছে

চন্দ্রের গম্ভীর স্বর। পুনম ঢোক গিলে আর কিছু বলার আগেই কলটা কেটে গেলো এবার না পেরে পুনম কেদেঁ দিলো।
তখনই ঝপঝপিয়ে নেমে এলো বারিধারা। পুনমের সাথে মনে হয় আকাশ ও কাদছে। পুনম কাদতে কাদতে দৌড়ে বারান্দা থেকে কাপড় আনতে যায়। চন্দ্রের কাপড় উঠিয়ে নিজের শাড়িতে হাত দিতেই পুনমের কিছু মনে পড়ে যায়।
কান্না অবস্থাতেই মুচকি হাসে বিড়বিড় করে বলে — এবার শের “এ আলী সাহেবের রাগ না ভেঙ্গে কোথায় যাবে

_________________

রাতে বেলা সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর পর এগারোটার দিকে চন্দ্র বাসায় ঢোকে পুনমকে ড্রয়িং রুমে না দেখে বেশ অবাক হয় বিড়বিড় করে বলে — রেগে আছি কোথায় রাগ ভাঙ্গাবে তা না মহারানি ঘুমিয়ে গেছে

ঘরে যেয়ে অন্ধকার পায় ঘর তবে উজ্জল আকাশের নিয়ন আলোয় দেখতে পায় সবই পুনমকে না পেয়ে ভ্রু কুচকে যায় ওয়াশরুমে চেক করলে সেখানেও পায়না হঠাৎই কারো গুনগুন শব্দ কানে যেতে বারান্দায় যায় চন্দ্র।

বারান্দার চারকোণে সুগন্ধি ক‍্যান্ডেল চারটা জ্বালিয়ে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে পায়ে আলতা পড়ছে পুনম সাথে গুনগুন করে চলেছে
— ওগো আমার,,,হুম উহুম হু

চন্দ্র মোহিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জোহরা বধূয়ার দিকে লাল সাদা মিশেলে শাড়ি অটপৌড়ে ভাবে পড়া ব্লাউজের নিচ থেকে কোমর পযর্ন্ত পুরোটাই উন্মুক্ত। ঘন কালো কেশরাশি ঢিলে খোপা করা সেই খোপায় আছে গুটি কয়েক নয়নতারা ফুল। পায়ের আলতা দেয়ার জন‍্য হাতের চুড়ি রিনিঝিনি বাঝছে।

ঢোক গিলল চন্দ্র — আয় হায় এতো দেখি মেরে ফেলার জন‍্য এমন সাজছে আমার অবস্থা এখন এমন যে বিরিয়ানি সামনে সাজানো তা খেতে পারছি না ধরতেও পারছি না।
বিড়বিড় করে বলে গলা খাকাড়ি দিলো চন্দ্র যাতে পুনম নিজেকে গুছিয়ে নেয়।

চন্দ্রের গলা খাকারি শুনে পুনম মুচকি হাসল সে অনেক আগেই চন্দ্রর আসার আভাস পেয়েছিল তবে পিছন ফিরে তাকায়নি নিজের কাজ করেছে আড়চোখে চন্দ্রের গতিবিধি লক্ষ্য করেছে।
— এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ো

বলেই চন্দ্র টিশার্ট ও ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরোতেই পুনমও বারান্দা থেকে আসে পুনমকে এবার সামনে থেকে দেখে আরো অবস্থা খারাপ চন্দ্রর হালকা সেজেছেও বড় বড় আখি জোড়ায় মোটা করে কাজল পড়েছে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পুনমকে।

পুনম চন্দ্রর সামনে দাড়ায় মুচকি হেসে চন্দ্রর গলায় ঝুলে পড়ে — এতো রাগ কেনো শের “এ আলী সাহেবের। এতো সুন্দর মানুষের রাগ মানায় না। ফের গেয়ে ওঠে

“- ওগো আমার সুন্দর মানুষ
একটা কথা শোনো

চন্দ্র পুনমের হাতের মাঝখান থেকে নুয়ে বের হয়ে যায় বারান্দায় তোয়ালে মেলে পিছনে ফিরতে আবার পুনম চন্দ্রের গলায় ঝুলল এবার পায়ের উপর পুনমের পা রেখে দাড়ালো

-” ওগো আমার সুন্দর মানুষ
একটা কথা শোনো
ওগো আমার সুন্দর মানুষ একটা কথা শোনো
“” তুমি বীনে আমার তো
নাই গতি কোনো

— মাফ করে দেন না শের “এ আলী সাহেব,,, ঠোট উল্টে বলল পুনম

চন্দ্র শান্ত স্বরে বলল — আমার স্পর্শ আপনার জন‍্য বেদনাদায়ক

— ভালোবাসার আরেক নামই তো বেদনা

— আমি স্পর্শ করলে কষ্টে জর্জরিত হবে

— সেই কষ্টেই আছে ভালোবাসাময় সুখ

পুনমের কথা শুনে চন্দ্রের ঠোটের কোণে হাসি ফুটল তবে পুনম দেখার আগেই মুছে ফেলল। আবার বলল — ভেবে বলো কিন্তু এই কষ্ট দেয়া মানুষের কাছেই কিন্তু থাকতে হবে

— আজীবন
বলেই পুনম চন্দ্রের ললাটে দীর্ঘ চুম্বন করে। চন্দ্র পুনমের কোমর আকরে ধরে মনে মনে বলল
— গো টু হেল উইথ ইয়‍্যুর কন্ট্রোল চন্দ্র

মিশিয়ে দেয় পুনমের অধের নিজের শুষ্ক অধর। প্রথমে হালকা থাকলেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে গভীরতা। সাথে চলে চন্দ্রের হাতে দৌড়াত‍্য যাতে পুনম খনে খনে কেপে উঠছে আর সেই কাপুনি চন্দ্রকে আরো বেপরোয়া করে তুলেছে।
বহুদিন পর কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে আজ সে বেপরোয়া নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।। ওষ্ঠপুট ছেড়ে পুনমকে কোলে তুলে আবারও মিলায় ওষ্ঠপুট সেভাবেই ঘরে ঢুকে পুনমকে আলতো হাতে শুয়িয়ে দেয়।

ঠোট ছেড়ে গলদেশে মুখ ডুবায় আচল সরিয়ে পুনম ও আজ কোনো বাধা দেয় না কেনো দিবে লোকটা যে তার স্বামী তার অর্ধাঙ্গ।। সময়ের সাথে ভেসে যায় দুজনেই ভালোবাসার জোয়ারে।।

—————– ভোরের আলো চোখে পড়তেই পুনম পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে চন্দ্র তার গলায় মুখ ডুবিয়ে বসে আছে পুনম নিজেদের অবস্থান দেখে লজ্জা পায়। বহু কষ্টে বলিষ্ট দেহী চন্দ্রকে সরিয়ে বিছানা থেকে নামতেই মাথা ঝিমঝিম দিয়ে ওঠে।

মিনিট খানিক বসে আবারো চাদর পেচিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। শাড়ি পড়ার চান্স না নিয়ে থ্রি পিছই পড়ে নেয় বের হয়ে দেখে ঘড়ির কাটা আটটা বাজতে আরো দশ মিনিট কিছু না ভেবে জায়নামাজ নিয়ে নামাজে দাড়ায়। নামাজ পরে ওড়না সেভাবেই রেখে বাইরে বের হয়।।

পারভেজ সাহেবের জৈন ভিজানো পানি এখন নিয়ে আসতে পুনমকে জিজ্ঞাসা করলেন
— কিরে মা শরীর খারাপ আম্মাজান এতো দেরীতে উঠলে

— উহু আব্বু উনি এসেছিল রাতে দেরীতে তাই ঘুমাতেও দেরী হয়েছে এজন্য উঠতেও দেরী

পারভেজ সাহেব আর কিছু না বলে চুপচাপ পানি খেয়ে সস্নেহে পুনমের কপালে চুমু খায়। পুনম মুচকি হেসে রান্নাঘরে শশুরের জন‍্য চা বানাতে চলে যায়।

— শরীর খারাপ মা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো

রোজিনা বেগমের প্রশ্নে পুনম ঢোক গিলে জোর পূর্বক হেসে বলল — উহু আম্মু ঘুমাতে দেরী হওয়ার জন‍্য এমন লাগছে তুমি তো জানোই আমার কত ঘুম কাতুরে,,

রোজিনা বেগম মানতেই চাদনী বেগম রান্নাঘরে প্রবেশ করে সেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে পুনমও ক্লান্ত স্বরে সেই একই উত্তর দেয়।।

ব্রেকফাস্ট সেড়ে পুনম ঘরে এসে দেখে চন্দ্র এখনো গভীর ঘুমে। পুনম আস্তে করে পাশে শুতেই চন্দ্র ঝড়ের বেগে পুনমের গলায় মুখ ডুবায়।
— সকাল সকাল আমাকে না বলে বিছানা থেকে নেমেছ ক‍্যান

— তাও তো নেমেছি আব্বু আম্মু বাবা মায়ের কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনি জানেন ভাগ‍্য ভালো মুক্তি আপু বাসায় নেই ছোট চাচার বাসায় গেছে।

— উমম

চন্দ্রের মতিগতি বুঝে পুনম ধস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়ানোর জন‍্য গোয়ার চন্দ্র কি তা মানে উহু হাতের বাধন শক্ত করে।
— আমি গোসল করেছি

— আবার করবে আমরা একসাথেই করব সমস্যা নেই

— সবাই কি ভাববে

— কিছুই না এখন বেশী কথা না বলে চুপ থাকো বলেই চন্দ্র ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয় পুনমের ওষ্ঠপুটে। চন্দ্রর হাতের দৌড়াত‍্য বেড়ে চলে সমান বেগে আবার ডুবে যায় দুজন ভালোবাসার জোয়ারে।।।

#চলবে