#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৩
— ইন্টার প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর থেকেই মিহি, আমি,, নয়ন আমরা ফ্রেন্ড প্রথম প্রথম আমার ফ্রেন্ড থাকলেও মিহি আর নয়নের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কটা শুরু হয় প্রথম বর্ষের অর্ধেকেই প্রথম প্রথম আমার থেকে লুকানো থাকলেও দুজনের হাবভাবে আমি টের পাই তাই দুজনকে চেপে ধরলে স্বীকার করে তখন থেকেই দেখতাম ওদের মধ্যে গভীর প্রণয় ছিলো। নয়ন বেশ পাগলামি ও করত মিহির জন্য।
তবে ইদানীং মিহি ক্লাসে কেমন উদাসীন থাকতো বিয়ের চাপে আবার অন্যান্য কাজে ওকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি গত পরসু মিহি নিজেই কাদতে কাদতে আমার কাছে বলে নয়ন নাকি ওর সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায়না। মিহি কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে মিহিকে ওর এখন ভালো লাগে না তাই নয়নকে বোঝাতেই গিয়েছিলাম। তবে আমি যদি ঘুর্নাক্ষরে টের পেতাম নয়নের মনে এমন ছিলো তাহলে ওর সাথে যোগাযোগ রাখতাম না।
থামল পুনম চন্দ্রর বুকে মাথা রেখে নিজের সব কথা উগরে দিলো। চন্দ্র পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খায় — চিন্তা করে না জোহরা ঐ নয়নকে ঠিক করা বা হাতের খেল ঐ ব্যাটা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এখন মিহিকে বলো ওর কাছে যেয়ে একটু সেবা যত্ন করতে তাহলেই হবে বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
চন্দ্রের কথা শুনে পুনম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল — সত্যি
— আমার জোহরার প্রিয় বান্ধবীকে কষ্টে দেখে আমার জোহরাও কষ্ট পাবে তা আমি স্বামী হিসাবে কি করে দেখী,,
পুনম চোখে হাসল। — হয়েছে এখন উঠেন খিদে পেয়েছে কখন থেকে ঘরে আটকে রেখেছেন ছাড়ুন
চন্দ্র হাসি মুখে ছাড়তেই পুনম নিজেকে গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চন্দ্র শিহাবকে ও রিশানকে ফোন করে ডাকল।
পুনম গোসল করে বের হতে চন্দ্র এগোতে গেলেই পুনম তড়াক করে সরে যায় — উহু এখন কোনো দুষ্টুমি না সেই সকাল থেকে ঘরে আটকে রেখেছেন।।
বলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। চন্দ্র নাকমুখ কুচকে বিড়বিড় করে বলল — পাষাণ জোহরা,,
পুনম ঘর থেকে বের হয়ে কাউকে পায়না যে যার ঘরে তাই পুনম স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল রান্নাঘরে যেয়ে ভাত বেড়ে তরকারি গরম করতে দেয় এর
মধ্যেই কানে কেউ ফু দেয়। পুনম ভয় পেয়ে সরে যায়। তাকিয়ে দেখে মুক্তি
— ওহ আপু তুমি,, স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে পুনম।
— কি চলে ভভাআআবী
— কিছু না,,
— শুনলাম আজ কেউ কেউ নাকি সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি
বলেই বাহু দিয়ে ধাক্কা মারে। পুনম লজ্জা পায় আমতা আমতা করে বলে — আমি তোমার বড় ভাবী ওকে সো কিছুতো রেসপেক্ট দাও,,
— উউ আসছে বড় ভাবী তুই আমার বোন আগে
— তাহলে নিজের ছোট বোনের পারসোনাল কথা শুনতে লজ্জা করে না ছিহ,,
বলেই টেবিলে খাবারের বাটি নিয়ে যায়। পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুক্তি বিড়বিড় করে বলল
— বোকা পুনম দেখী চালাক হয়ে গেছে,,
পুনম খাবার বেড়ে দিয়ে চন্দ্র পুনমকে হ্যাচকা টান দিতে নিলে পুনম চোখ রাঙিয়ে বলল — মুক্তি আপু রান্নাঘরে
চন্দ্র হাত ছেড়ে দিয়ে ভাত মেখে পুনমের মুখে সামনে ধরে পুনম ও বিনাবাক্যে খেয়ে নেয়। পুনমকে খাওয়াতে খাওয়াতে নিজেও খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে চন্দ্র বাইরে যায় আর পুনম নিজের আগের ঘরে অনেক দিন রংতুলি হাতে নেয়া হয়না আজ নাহয় একটু আর্টই করা যাক।।
মুক্তি প্রথমে কয়েটা শটস নিয়ে চলে যায় পুনম সেটা কম্পিলিট করে আরেকটা ক্যানভাস নেয় আজকে সে চার্কোল স্কেচ করবে তাও প্রান প্রিয় স্বামীর।
______________________
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে নয়ন তার পাশে বসে মিহি সমানভাবে কেদেঁ চলেছে। নয়ন মিহির কান্নাকাটি দেখে বেশ অবাক হয়
হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ক্রন্দনরত মিহির দিকে তখনই ঢুকে চন্দ্র রিশান শিহাব সাথে কাজী,,
— কাজী সাহেব শুরু করেন
বাবা আপনার বাবা মায়ের নাম ও ঠিকানা বলেন এখানে ভোটার আইডি কার্ড তো পাওয়া যাবে না আপাতত শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হোক।
— তোর কাছে কত টাকা আছে আপাতত??
কাজীর পরপরই চন্দ্র নয়নকে জিজ্ঞাসা করে। নয়ন থতমত খেয়ে যায় হঠাৎই এখানে কাজী কেনো,,??
— আপনারা কি বলতেছেন কিছুই বুঝতেছি না।
রিশান নয়নের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বলে
— ছোট ভাই যা যা জিজ্ঞাসা করবে শুধু সেটুকুই বলবে বাকিটা বললে আওয়াজ নিচে করার পন্থাটা খুব ভালোই জানি আমরা তাইনা শিহাব।
শিহাব আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল — আরে বা*ল কয়েকদিন পর টিচারের খাতায় নাম লিখাব তখন তো কিছু করতে পারব না এখন টুকটাক হাত সাফাই হলে মন্দ হয় না।।
নয়ন ভয় পায় গরগর করে বলে দিলো তার বাবা মায়ের নাম ঠিকানা আর তার কাছে কত টাকা আছে। টাকাটা শিহাবের হাতে দিতে দিতে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — ভাই আমার বাসা থেকে এই মাসে দশ হাজার টাকাই হাত খরচ পাঠিয়েছে এর মধ্যে হাসপিটাল বিল,,
— তোমার হসপিটাল বিলের চিন্তা করা লাগবে না বলেই কাজীকে নিজের কাজ সারার ইশারা করল।
কাজী সব ফর্মালিটি শেষ করে নয়নকে কবুল বলতে বললে নয়ন কবুল বলল না চুপ করে বসে রইল। মিহিকে সে কোনো মতেই বিয়ে করবে না।
— কিরে চন্দ্র এই ব্যাটা দেখী পূর্ণর থেকেও বেশী সময় নেয় পুনমের মতো লজ্জা পেলো নাকি,,
রিশানের কথায় শিহাব মিহি খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।। বিয়ের কনে সয়ং হাসতে দেখে কাজী অবাক বিড়বিড়িয়ে বলে — ইয়া খোদা আজকালকার মাইয়াগো একটুও লাজ শরম নাই।
নয়ন এখনো চুপ চন্দ্র আঙ্গুল ফুটায় চেয়ার ছেড়ে উঠে নয়নের সামনে দাড়িয়ে বলে — এতো লজ্জা কেনো ছোট ভাই কবুলটা বলে ফেলো।।
নয়ন গরগর করে তিন বারের জায়গায় ছয় বার কবুল বলল। — একটু আস্তে বলো বাকি তিনবার তো আমি বলব
মিহি লজ্জালু স্বরে বলল।।
কাজী এবার হেসে ওঠে তার দেখাদেখী শিহাব রিশানও হেসে ওঠে। মিহি কবুল বলতেই দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। চন্দ্র রিশান শিহাব কাজীকে নিয়ে বের হয়।।
তখনই নয়ন আঙ্গুল তুলে মিহিকে শাষায় — বিয়ে তো জোড় করে করে নিলি তবে কোনো দিনও তোকে আমার বউ হিসেবে মানব না।
— এই সব বাংলা সিনেমার ডায়লগ দেয়ার জন্য আমি তোমাকে অবশ্যই মুভিতে চান্স দিব তবে মিহির সাথে উল্টাপাল্টা কিছু হলে শা*লা তোমার মাংস আমার হাড্ডি তোমার বাবা মায়ের ওকেই,,,
চন্দ্রের থ্রেড শুনে নয়ন অনবরত ঢোক গিলে বলল — আপনার যাননি
— উহু ছোট ভাই কাজীকে এগিয়ে দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম আর বিয়ে করেছ কিছু না খাওয়ালে হয় তাই শিহাবকে পাঠিয়েছি মিষ্টি কিনে আনার জন্য।।
নয়নের এখন হাত পা ছড়িয়ে কাদতে মন চাচ্ছে। মিহির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালে মিহি মুখ ভেংচি মারে। নয়ন ও মুখ মুচরে বসে থাকে শিহাব মিষ্টি নিয়ে আসতেই রিশান নয়নকে একটা মিষ্টি জোরজবরদস্তি খাওয়ায়। কাধ পরিষ্কার করতে করতে বলে — আমাদের চন্দ্র কিন্তু নিজের কথা রাখে মনে থাকে যেনো মাংস আমাদের হাড্ডি তোমার বাবা মায়ের আর হ্যা তোমার বাবা মায়ের চিন্তা করা লাগবে না তাদের পূর্ণ সম্মতি আছে।।
নয়ন অনবরত মাথা নাড়ায়। তা দেখে শিহাব বাকা হাসে তিনজন চলে যেতেই মিহি পাশে বসে নয়নের নয়ন ধীর স্বরে বলল — এটা না করলেও পারতি,,
— তুই কোনো ওয়ে রাখিসনি আমার সামনে
আর কোনো কথা হয়না দুজনের মধ্যে পিনপতন নিরবতা।
____________________
চন্দ্র বাসায় ঢুকে দেখে গেট খুলে সোফায় বসে অধীর আগ্রহে তার জোহরা তার অপেক্ষা করছে চন্দ্র ফাজিল হেসে পুনমের সামনে যায় তার দিকে ঝুকে বলে — কি জোহরা বধূ বুঝি স্বামীর আদর এরমধ্যেই মিস শুরু করে দিয়েছে। আমাকে একবার বলবে না আম অলওয়েজ রেডী আদর করার জন্য,,,,,,
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৪
মাস একের পর ____________
আর একসপ্তাহ পর মুক্তির বিয়ে। পিছাতে পিছাতে মুক্তির বিয়ের ডেট বেশ ভালোই পিছিয়েছিল। প্রথম চন্দ্রর জন্য পরে ইহানের জন্য। নতুন চাকরি চন্দ্র ছুটি পাবে না তাই বিয়েটা পিছিয়েছে এরপর ডেট ফেলবে তখন ইহান অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে এভাবেই বলতে বলতে বিয়ের ডেট পিছিয়েছে। তবে এবার আর হয়নি ইহান পাগল হয়ে গেছে নিজের ঘরে বউ তোলার জন্য। তাই সামনের শুক্রবার ডেট ঠিক করা হয়েছে সাথে এটাও ঠিক করা হয়েছে যে মুক্তি ও চন্দ্রর রিসিপশন একসাথেই হবে।
সকাল সকাল পুনমের কাজের বাহার। চন্দ্রকে রেডি করিয়ে দেয়া ইউনিভার্সিটির জন্য নিজে রেডি হওয়া সব মিলিয়ে বেশ হ্যাসেল যায় বেচারীর উপর। তবুও নিষ্ঠুর চন্দ্র একটু হেরফের চায়না। সব পুনমের হাতে তার চাইই।
চন্দ্র ওয়াশরুমে পুনম চন্দ্রর শার্ট আয়রন করছে।
— আগে শুনেছি নিজের সব কাজ নিজেই করত এখন এই লোক একটা কাজও করেনা।
— আগে বউ ছিলো না তাই নিজের কাজ নিজে করেছি এখন বউ আছে তাই বউয়ের হাতে ছোয়া ছাড়া কোনো কিছু ভালো লাগে না।
পুনম ঠোঁট উল্টে চন্দ্র দিকে তাকায়। চন্দ্র মুচকি হেসে ইশারা করে শার্ট পরিয়ে দিতে। পুনম শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল — আলমারির উপরে একটা লকার আছে ঐটার চাবি কই?? অনেক দিন ধরেই আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে যেয়েও করা হয়নি।
চন্দ্রর হাসি মুখ ধপ করে নিভে গেলো। গম্ভীর হলো সেভাবেই বলল — ঐ তাকে তোমার কোনো নেই তুমি কি করবে ঐটার চাবি দিয়ে??
পুনম চন্দ্রর গম্ভীর স্বর শুনে বেশ অবাক হয় তবে কিছু বলে না। ভেবে নেয় আরেকদিন এর বিষয়ে কথা বলবে আপাতত সে আরেক মিশনে আছে তার মনোভাব যদি সঠিক হয় তাহলেই হলো।।
______________________
ভার্সিটিতে ঢুকেই মিহিকে নিয়ে আগে নাওয়াজ শেখের কেবিনে গেলো সে
— দেখ পূর্ণ এভাবে স্যারের পার্সোনাল কথা আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি না তাও আবার সে ফ্যাকাল্টি হেড।
— তুই চুপ করতো মিহি এমনিতে ভয়ে আছি আর ভয় বাড়াস না তোহ
দুজনে মিলে নাওয়াজ কেবিনে নক করে সে অনুমতি দিলে দুইজন হাসি মুখে প্রবেশ করে।।
— স্যার আমার ননদের বিয়ে তার পরের দিন আমার রিসিপশন এবারও কিছু দিনের ছুটি লাগবে আগেরবার তো আপনি রাগ করেছেন তাই এবার আমি নিজেই আপনাকে দাওয়াত দিলাম।
বলেই ব্যাগের থেকে কার্ড বের করে মিহি পুনম হাসল। — কার্ডটি টেবিলে রেখে!! দাঁত বের করা বন্ধ করে ক্লাসে যাও
দুজনেই মুখ মুচরে ক্লাসে চলে গেলো। নাওয়াজ শেখ কার্ডটি হাত তুলে নেয় কনের পিতার জায়গায় পারভেজ আহমেদ নামটি তার ভীত নাড়িয়ে দেয়। সাথে চন্দ্রের পিতার নামটিও দেখে তার সন্দেহ জাগে দুইজনের নাম একইভাবে হুবহু মিলে গেলো কিভাবে। আবার শুভেচ্ছান্তে গিয়ে সেখানে তার বহু পরিচিত দুইটি নাম দেখতে পায়।
— আল্লাহ্ আমি যাকে খুজছি তাকে যেনো পেয়ে যাই
উপরে তাকিয়ে মনে মনে দোয়া চাইল। কেউ নক করতেই নিজের ভঙ্গিমায় আবার বসে পড়ল।
__________________________
বাড়িতে হইহুল্লোর শুরু হয়ে গেছে মিরাজ সাহেব নিজের পরিবার নিয়ে গতকালই চট্টগ্রাম থেকে এসে পড়েছে আজ চন্দ্রর মামা আসবে সাথে তার নানী।।
আজ চন্দ্র মামারা এসেছে,,,,,,
চন্দ্রর নানী এসেই পুনমের সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রের নানীর নাম রানিবানু এই মহিলাটি বেশ রসীক ছেলের বাড়িতেই বেশীরভাগ থাকে ঐ বছরান্তেও মেয়ের বাড়িতে আসে কেননা কামরুল সাহেবকে সে মেয়ের জন্য পছন্দ করে নাই করেছিল পারভেজ সাহেবকে তবে কামরুল সাহেবকে চাদনী বেগমের বেশ পছন্দ হওয়ায় মেয়ের বিরুদ্ধে যেতে পারেনি। পারভেজের মেয়ে শুনে পুনমের প্রতি তার বেশ গদগদ ভাব পুনমকে কাছ ছাড়া করছেই না।।
— হ্যারে পূর্ণ রুপশা আপু আসেনি কেনো এখনো
পূর্বকে দোলাতে দোলাতে বলল ঝিনুক। ছয়মাসের পূর্ব ফোকলা দাতেঁ বোনের দিকে তাকিয়ে হাসে পুনম ভাইকে কোলে নিতে নিতে বলল — আপু ছেলে পক্ষ থাকবে তাই একেবারে রিসিপশনে আসবে।
— ওও
এরমধ্যেই রুপশা ভিডিও কল দেয় তিনবোন কথা বলা শুরু করে সাথে রানিবানুর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই কথা বলছে এরমধ্যে চন্দ্র প্রবেশ করে — জোহরা আমি বাইরে যাব শার্ট বের করো,,
চন্দ্রর কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে ফের পুনমের দিকে তাকিয়ে একত্রে বলল — হোওওও জজোহহহরা,,,,
চন্দ্র তাদের পাত্তা দিলো না পুনমকে ফের তারা দিলো তখন রানিবানু বলল — যাও বোইন এখন যা যা লাগে দিয়া আহো রাইতে তো আমার লগেই থাকবা,,,
নানীর কথা শুনে চন্দ্রর মাথায় বিস্ফোরণ ঘটে সে একপ্রকার চিল্লিয়ে বলল — কি ও তোমার সাথে থাকবে কেনো নানু,,,??
সকলে মুচকি মুচকি হাসছে রানিবানু এবার একটু গম্ভীর হলো — কেনো ভাই তুমার বউ আমার কাছে থাকলে কি হইব দুইডা রাইতেরই তো ব্যাপার নানীর লইগা এইডাও করতে পারবা না।
— ইমোশনে হিট দিবানা নানু একদম ইমোশনে হিট দিবানা বউ ছাড়া রাতে ঘুম হয় নাকি,,, এই জোহরা তাড়াতাড়ি আয়,, শেষের কথাটা পুনমের দিকে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। পুনম লাজে রাঙা হয়ে নিজেও চন্দ্রর পিছন পিছন গেলো। পিছন থেকে রানিবানু সহ সবাই হাহা করে হেসে উঠল।
রাতে ______
খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে চন্দ্র এখনো পায়চারি করে চলেছে একঘণ্টা ধরে রাতে বাজে সাড়ে বারোটা এখনো পুনমের আগমনের খবর নাই। এবার অধৈর্য্য হয়ে ঘর থেকে বের হয় ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে মহিলা মন্ডলী কাজে ব্যস্ত
— এখানে এতো কি কাজ হ্যা
— কাল সকালে হলুদের ত্বত্ত নিয়ে সাথে বিয়ের কাপড় নিয়ে ছেলের বাড়িতে পাঠাতে হবে সকাল বেলা। এখন গুছিয়ে না রাখলে হবে আব্বা
চাদনী বেগমের কথা শুনে চন্দ্র কিছু বলে না চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে। চন্দ্রকে বসতে দেখে সবাই মুচকি মুচকি হাসে রানিবানু চন্দ্রকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলে
— ভাই আইজ থেকে পুরা দুই দিন বউরে ছাড়া ঘুমানোর চেষ্টা করো মুক্তির সাথে তো তোমারও পরসু বৌভাত হইব।
— তো এখন বইল না এগুলো নিয়ম এইসব আমি মানতে পারব না।
গলা খাকারি দিলো রোজিনা বেগম তা দেখে নিপা বেগম বলল — চন্দ্র বাবা একটু রয়ে সয়ে কথা বল এখানে তোর শাশুড়ি ও আছে
চন্দ্র এই মহিলা মন্ডলীর সাথে কথা বলে না চুপচাপ বসে থাকে নিজের মতো করে রাতের দেড়টায় কাজ শেষ হয় তাদের।
— আম্মু কাল সকালে এতো তাড়াতাড়ি উঠার দরকার নেই রেনু ও মিনু মিলে সামলে নিবে ওরা তো এখন ঘুমিয়েই আছে,,
— আচ্ছা আব্বাজান
রানিবানু মেয়ে আর নাতীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যাতে সবাই এরকমই একসাথে সুখে থাকে।
সবাই ঘরে যাওয়ার পর চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় চোখ ছোটছোট করে।
— কি ঘরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই নাকি চলো,,
— যাবনা আপনার সাথে আমি নানুর সাথে ঘুমাব
ভেংচি কেটে বলল পুনম।
— কেনো কেনো
চন্দ্র তেড়ে আসতেই পুনম অন্যদিকে সরে যায়।
— কাল থেকে বেশ কয়েকবার আপনার কাছে লকারের চাবি চেয়েছি দিয়েছেন। সকালে তো একপ্রকার ঝাড়ি মেরেছেন
গাল ফুলায় পুনম চন্দ্র সেই ফুলন্ত গাল আজলায় নিয়ে বলল — তাই বুঝি জোহরার অভিমান হয়েছে,,
— কিসের অভিমান আমার কোনো অভিমান নেই,,
হাসল চন্দ্র চট করে পুনমকে কোলে তুলে বলল
— তোমার অভিমান বেশী
— আপনার ভালোবাসা বেশী
— আর এই ভালোবাসাতেই সিক্ত তুমি আমার আবেশী।।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৫
— যাহ বা*ল আর কোনো কাজই করব না
বলেই হাতের ফুলের স্টিকের ঝুড়িটা ফেলে দিল। রিশানের দিকে বিরক্ত চোখে তাকাল চন্দ্র শিহাব
— দ্রুত কর একটু পরেই ছেলে পক্ষের লোকজন এসে পরবে
— শা*লা তুই তো আর কথাই বলিস না। যত নষ্টের গোড়া তুই!! ঐ ছোট ভাই নয়ন পযর্ন্ত বিয়ে করে ফেলল আর পাচঁ বছর যাবত প্রেম করে এখন পযর্ন্ত বিয়ে করতে পারলাম না। তুই চাদ মামা আগেই বিয়ে করে আমাদের মতো সিঙ্গেলদের অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করছিস
— ভাই আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাদেরই হাত ছিলো আপনারা জোর করেই দিয়েছেন।
নয়নের কথায় বিরক্তি চোখে তিনজন তাকায় নয়ন জোরপূর্বক হেসে নিজের কাজ করতে থাকে। তখনই মিহি আসে একগ্লাস শরবত নিয়ে লাজুক হেসে বলে — অনেকক্ষণ কাজ করেছ একটু শরবতটা খাও
নয়ন মুচকি হেসে শরবতটা খায়। আর চলতে থাকে তাদের প্রেমময় বার্তা প্রথম প্রথম নয়ন মিহিকে মানতে চায়নি খারাপ ব্যবহার করেছে মিহিও কম যায়না চন্দ্রদের ভয় দেখিয়ে জোর করে সব আদায় করেছে এবং নিজের মতো করে ভালোবেসেছে। এখন আবার নয়ন মিহির ভালোবাসায় সিক্ত।।
— দেখ দেখ কি দিনকাল আইল আমার জুনিয়রদের প্রেম দেখা লাগছে
শিহাব চন্দ্র নয়ন মিহি কেউই পাত্তা দিলো না রিশানকে তাই ব্যাচারা গাল ফুলিয়ে আবার নিজের মতো কাজ করতে থাকে।
________ সন্ধ্যার পরপরই মুক্তিকে স্টেজে নেওয়া হয় বাসার ছাদেই হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব এবার রান্নার ভেজালে নেই সকল কাজ তারা চন্দ্রদের উপর দিয়ে নিজেরা অন্যান্য কাজ করছে। বিয়ে বাড়িতে না হলেও হাজারটা কাজ আছে।।
সাড়ে সাতটার দিকে রুপশারা মিলে ইহানের আরো কয়েকজন ভাইবোনেরা মুক্তিকে হলুদ দিতে এসেছে।
— কিরে পূর্ণ এখনো রেডি হসনি??
— না আপু বাড়িতে অনেক লোকজন তাদের চা নাস্তা দেয়া আজ আবার রেনু মিনু হাত গুটিয়ে বসে বসে বিয়ের জন্য নাচতে ব্যস্ত।
— আচ্ছা দ্রুত যা রেডি হো,,,
— মুক্তি আপুকে নিয়ে গেছে স্টেজে!!
— হ্যা তুই যা এগুলো আমি নিয়ে যাব
— হ্যা এই ফলের থালাটা সাজানো হলেই যাচ্ছি।
পুনম থালা সাজিয়ে রুপশাকে বুঝিয়ে চলে যায় ঘরে রেডি হতে রুপশা ঝিনুক ও রিমির সাহায্যে থালা গুলো নিয়ে যায় হলুদ উপলক্ষ্যে ইয়া বড় একটা কেক এনেছে সেটা মাঝখানে রেখে চারিদিকে থালা গুলো রাখে।
চন্দ্র রান্নার কাজ শেষ করে গোসল করতে ঘরে ঢুকে দেখে পুনম পেটিকোট পড়ে কোনো রকম শাড়ি পেচিয়ে বের হয়েছে ভেজা চুলে গামছা পেচিয়ে বের হয়েছে চন্দ্র ভ্রু কুচকে বলল
— এই টাইমে গোসল করেছ ঠান্ডা লেগে যাবে তো
— গোসল না করে শান্তি পাচ্ছিলাম না!! আপনি গোসল করবেন??
— হু
— আচ্ছা কোন পাঞ্জাবী বের করব নাকি সবার সাথে ম্যাচ করে পড়বেন
— ঐ ঝমকালো কালার আমার পোসাবে না তুমি অফওয়াইট পাঞ্জাবীটা বের করো
বলেই চন্দ্র গোসলে চলে যায় দ্রুত এখন তার বাহিরে থাকা মুশকিল মেয়েটাকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে কন্ট্রোল করতে পারতো না চন্দ্র।
গোসল সেড়ে বাইরে আসতেই চন্দ্রর শিথিল ভ্রু জোড়া কুচকে যায় কেননা পুনম বাঙালী ভাবে আটপৌড়ে শাড়ি পড়েছে।
বড় বড় কদম ছেড়ে পুনমের পিছে দাড়ায় চন্দ্র। পুনম আচল প্লেট করে ভাজ করতে করতে চন্দ্রকে দেখে বলল — গোসল শেষ এখন দ্রুত রেডি হন
চন্দ্র কিছু না বলে পুনমের উন্মুক্ত উদরে খামচে ধরে বলল — এভাবে শাড়ি পরেছিস কেনো??
— কুচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারি নাতো। পুনমের আহ্লাদী স্বর
চন্দ্র পুনমের উদর আরো খামচে ধরে। পুনম চোখ বন্ধ করে ফেলে ঢোক গিলে। চন্দ্র বলল — শাড়ি পড়ার কি দরকার পাচঁ মিনিট সময় এখনই চেঞ্জ করবে
পুনম মিনমিন করে বলে — সবাই পড়বে
চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — বাড়িতে অনেক লোকজন তুমিও কাজের তালে থাকবে তাই এভাবে শাড়ি না পড়াই ভালো
পুনম বুঝল চন্দ্র কি মিন করতে চায় তারো খুব একটা ভালো লাগছে না তবে সবাই ঠিক করেছে শাড়ি পরবে আর তার হলুদে পড়ার মতো কোনো জামাও নেই ফের মিনমিন করে বলল — অন্য ভাবেই পরি আপনি একটু সাহায্য করেন না,,,,,
চন্দ্র পুনমের কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলে না। পুনম বুঝে নিবর সম্মতি আছে পুনম পিছন ফিরে চন্দ্রকে বলে — একটু বাইরে যান
— কেন আমার ঘর আমার বউ আমি কেনো বাইরে যাব??
পুনম হতাশা নিঃশ্বাস ফেলে লাইট নিভিয়ে দেয়। মৃদু আলোয় শাড়ি কোনো রকম পেচিয়ে লাইট জ্বালাতে যেতে নিলে উষ্ঠা খেয়ে পড়তে নিলে চন্দ্র ঝাপটে ধরে নেশাক্ত স্বরে বলল — হলুদে না গেলে হয়না জোহরা
পুনম ঢোক গিলল বলল — না গেলে কেমন দেখায় না মুক্তি আপু আপনার বোন হয় তো
চন্দ্র কোলে তুলে পেচানো শাড়ি খুলে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল — রাতটা আমার কিন্তু জোহরা,,
— হু কোন রাতটা আবার আপনার হয়না হু
বিড়বিড় করে বলল পুনম যার পুরোটাই চন্দ্রর কানে গেলো তবে কিছু বলল না ইউটিউবে শাড়ি পড়ার টিউটোরিয়াল ভিডিও ছেড়ে শাড়ি পরাতে থাকে।
চন্দ্র পুনম একসাথেই ছাদে যায়। ততক্ষণে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে শিহাব ওদের দেখে বলল — ঐ তো জোড়া কবুতর এসে গেছে মুক্তি তুই এবার হলুদ লাগা
প্রথমে কামরুল সাহেব ও চাদনী বেগম একসাথে হলুদ লাগায় পরে পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগম একসাথে হলুদ লাগায়। একে একে সবাই হলুদ লাগায়। রাইয়্যান মুক্তির মুখে হলুদ মাখিয়ে বলল — আপু তোমার বিয়েতে এতো খেটেছি সেই জন্য তোমার একখান ননদ আমি পাওনা বুঝছ।
— এখনো সাড়ে সতেরো বছরে আছিস এখনই বিয়ের চিন্তা ভাবনায় আরে ভাই এখানে তোর বড় বড় দুইটা ভাই আছে তাদের দিকে তাকা,, তাদের জন্যও মেয়ে দেখ।
রিশানের কথায় পিছন থেকে ঝিনুক বলল — আপনার জন্যে আমি মেয়ে দেখী রিশশশান ভাইইই।
ঝিনুকের কথা শুনে ঢোক গিলল রিশান আর সবাই উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
— আরে কেকটা কাটবা নাকি দেখো কেকটা কখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে বলতে আয় আমাকে কাট হায়য় বেচারা
রিমির কথা শুনে শিহাব বলল
— চুপ কেক খাদক রিমি আজকে কেক কাটব না কি করবি
— কিছু করব না যাষ্ট খাবলা মারব,,, বলেই কেকে খাবলা মারতে যেতে নিলে সবাই তাকে ধরে আটকায় এই কেক লোভী মেয়েটা সব কিছু লোভ সামলাতে পারলেও কেকের লোভ সামলাতে পারেনা। হইহুল্লোর করে ভাই বোনেরা কেক কাটে বড়রা কেউ সেখানে উপস্থিত।।
তখনই রাইয়্যান বলে — আপা চলো নাচ গান হয়ে যাক
সবাই একসাথে চিল্লিয়ে বলল — হয়ে যাক,,,,,
রাইয়্যান কালা চাশমা গান ছেড়ে দিলো একে একে সবাইকেই টেনে নিলো নিচের জন্য। তবে চন্দ্র পুনম দুজনেই পিছনে বসে আছে একজন মুক্তির পিছনে আরেকজন সবার পিছনে। এই একটা বিষয়ে এদের খুব মিল এরা এসব পছন্দ করে না চন্দ্রকে টেনে আনার সাহস না করলেও পুনমকে টানাটানি করল। তখনই চন্দ্র পিছন থেকে বলল — ওরে ছাড় মুক্তির সাথে ও এখন মেহেদী দিবে
সবাই নিরাশ হয়ে চলে যায়।
রাতে কতটা বাজে হিসেব নেই চন্দ্র ডুবে আছে জোহরায়।
— এই ছাড়েন কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠা লাগবে,,, হাতে মেহেদীর ভালোই ফায়দা উঠাচ্ছেন।
বাকা হাসে চন্দ্র
— উহু আগেই বলেছি রাতটা আমার
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করল পুনম। জানে এখন আর ছাড়া পাবে না আবারও দুজনেই বিলীন হয় উষ্ণ ভালোবাসায়। চন্দ্র বিলীন হয় তার পুর্ণিমায়।
#চলবে
এডিট ছাড়া পর্ব ভুলভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।