#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩
রাতের খাবারের পর রিয়াজ সাহেব সস্ত্রীক চলে যায় বাসায় তার ছেলে মেয়ে একটা আছে। রুবিও চলে যায় নিজের বাসায়।
পারভেজ সাহেব খাওয়া শেষে রোজিনাকে বলল
— এখন কিছু ধোয়া লাগবে না পরে করো সব গুছিয়ে দ্রুত ঘরে আসো,,,,
তাদের তিন মেয়ে খেয়ে দেয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেছে যদিও পারভেজ সাহেব নিশাকে এই বয়সেই আলাদা ঘর দিতে চায়নি তবুও নিশার জোরাজুরিতে দিতে হয়েছে।
পুনমদের বাড়িটা তিনতলা। পারভেজ সাহেব আগের মেট্রিক পাশ বড্ড সৌখিন মানুষ তাই বাড়িটাও নিজের জমায়িত অর্থ দিয়ে সুন্দর ভাবেই বানিয়েছে। তিনতলায় ভাড়া দেওয়া এখানে যারা জেলা ভিত্তিক সরকারি অফিসার আছে তারাই নিয়েছে দুইটা ফ্যামিলি থাকে দুই সাইটে বাসা ভাড়া দোকান ভাড়া নিজের ব্যবসার টাকা সব মিলিয়ে তাদের আলহামদুলিল্লাহ্ চলে যায়।।
ঘড়ির কাটা দশটার দিকে যেতেই রোজিনা বেগম ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই দেখে পারভেজ সাহেব খাটের এককোণে বসে আছে।
রোজিনা বেগম দুয়ার লাগাতে লাগাতে বলল
— কি যেনো কথা বলবে,,,???
— হু বসো সামনাসামনি,,
রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেবকে সামনে রেখে খাটের অপর পাশে বসল। পারভেজ সাহেব বলল
— আমার বাড়িতে মেহমান আসল আমিই জানলাম না,, আবার বড় মেয়েটা বিয়েও ঠিক করে ফেললা এটা কি ঠিক খোঁজ খবরাখবর এর একটা বিষয় আছে না
— খোঁজ খবর সব রুবিই নিছে ওর ননদের ননদের ছেলে খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরি করে,,
পারভেজ সাহেব বুঝলেন সব আটশাট বেধেই নেমেছে। তবুও শান্ত স্বরে বলল — বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয় তাই মা বাবা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব মেয়েকে সঠিক পাত্রস্থ দিয়ে বিদায় করতে।
— পাত্র সঠিক এবং হাজারে একটা,,
— হাজারে একটা হলেও সে শুধু চাকরির দিকে আমি চারিত্রিক গুনাবলির কথা বলছি,,,
— তুমি কি ভেবেছ রুবি যে আমার মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে সে তাকে কোনো চরিত্রহীন ছেলের কাছে বিয়ে দিবে,,,
তুমি কথার অন্য মানে বের করছ রোজিনা। আমি সেকথা বলিনি।
— তো কি কথা বলতে চাও,, এখন আমার বোনের দ্বারা এই সম্পর্ক এসেছে তাই এমন করছ তাইনা,,
— এখানে আমি এমন কোনো কথা বলিনি রোজি,,
— তবে তুমি ও জেনে রাখো বিয়েতো আমি ঐ ছেলের কাছেই দিব আর আমার মেয়েও রাজী চাইলেও তুমি আমাদের কন্ট্রোল করতে পারবা না ,, চিল্লিয়ে বলল রোজিনা। হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পারভেজ সাহেব
বাইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই প্রথম রোজিনা তার সামনে এমন চিল্লাচিল্লি করে কথা বলছে সে বুঝে গেছে সব হাতের বাহিরে চলে গেছে। সে গম্ভীর স্বরে বলল — শোনো রোজি তোমরা মানুষ কোনো রোবটকে কন্ট্রোল করা যায় মানুষকে না।
এতোদিন আমার কথা মতোই সংসার চলেছে তার মানে এই না যে এই সংসারে তোমাদের কোনো মতামত গ্রহন করা হয়নি সব বুঝে যেটা তোমাদের জন্য ভালো হবে সেটাই আমি সর্বদা করেছি,,,
।। থেমে আবারও বললেন — এই বিয়ের সকল কাজ করব বাবা হওয়ার দায়িত্ব থেকে একচুলও নড়ব না তবে মনে রেখো বিয়ের পরে মেয়ের সকল দায়িত্ব তোমার,, আর ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে সেটার দায়ভার ও তোমার ভাইবোনদের চূকাতে হবে,,,:
বলেই একসাইড হয়ে শুয়ে পড়ে। রোজিনা বেগম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে পারভেজ সাহেবের দিকে তবে কিছু বলে না মাথা নিচু করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে
_____________________
রুপশা নতুন ভাবনায় বিভোর রাত বারোটা বাজে এখনো ফোনে কথা বার্তা চলেছে। অপর পাশ থেকে কিছু বলতেই লজ্জা পেলো রুপশা।
— আপনি খুব অসভ্য,,,
অপরপাশ থেকে হা হা হা করে হাসির শব্দ শোনা গেলো।
রাত বেশ অনেকক্ষণ চলল এই প্রেমালাপ।।
স্নিগ্ধ সকাল কুয়াশায় ঘেরা আকাশে আজ সূর্যের দেখা নেই চারিপাশে শিশিরভেজা ঘাস। নামাজ পরে পুনম খালি পায়ে হাটছে এই শিশিরভেজা শীতল পানি পায়ে লাগলে এক অদ্ভূত ভালোলাগা কাজ করে।
হঠাৎই বাড়ির কথা মনে পড়তে সেদিকে পা বাড়ায় দেখে তার মা রান্নাঘরে কাজ করছে। পুনমকে দেখে বলল — অ্যাই পুনম নিশাকে একটু ডেকে দে তো সকাল সাতটা বাজে
— আচ্ছা আম্মু,,
পুনম নিশাকে ডাকতে চলে যায়।। নিশা গাইগুই করে উঠে বসে। তবে ভিতর থেকেই চিল্লিয়ে বলে
— আপা তুমি যাও তো আমি আসছি,,,
পুনম চলে যায় রেডি হতে নবম শ্রেণীর ছাত্রী সে। ব্যাগে নতুন বই গুলো ঢুকানোর আগে একবার হাত বুলিয়ে নেয়। নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকে নতুন বছর মানেই তো নতুন ক্লাস নতুন সহপাঠী নতুন বইয়ের গন্ধ।।
তাইতো পুনমের মনে হয় প্রত্যেকটি দিন যদি নতুন বছর আসতো তাহলে কিনা ভালো হতো।
বড়ই অদ্ভূত ভাবনা।।
খাবার টেবিলে বসে আছে তিনজন রুপশা এখনো ঘুম তাই খেতে আসেনি। নিশাকে রোজিনা বেগম খাইয়ে দিচ্ছে।
পারভেজ সাহেব চুপচাপ নিজের মতো করে খাচ্ছে। আজকে আর পারভেজ সাহেব রোজিনাকে কিছু বলল না। খেয়ে দেয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বের হলো।
রোজিনা স্বামীর গমনের দিকে তাকিয়ে থাকে পারভেজ সাহেব বিয়ের পর থেকে শুরু করে সদা তাকে সম্মান করে এসেছে।। বিয়ের পর পারভেজ সাহেব কোনো দিন তাকে তার ভাই বোন ও মেয়েদের সামনেও কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি। তবে একবার তার ভাই করেছিল সেবারের কথা মনে পড়ে রোজিনার,,,,
বিয়ের পর পারভেজ সাহেবের ভাইবোনেরা মোটামুটি সবাই নিজেদের মতো আলাদা থাকে দুই ঈদ ও ডিসেম্বর মাস ছাড়া তাদের দেখা যায় না। তারা নিজের সংসার গোছাতে ব্যস্ত। পারভেজ সাহেবরা তিন ভাই দুই বোন পারভেজ সাহেব মেঝো,,,সবাই মোটামুটি ভালো হলেও পারভেজ সাহেবের ছোট ভাইটা ছিলো রগচটা। গ্রামে বেড়াতে এসে তরকারিতে লবণ কম হওয়াতে কি হুলুস্থুল অবস্থা করেছিলেন এবং তার বউয়ের উপর তেড়ে গিয়েছিলেন মারতে।
সেদিন পারভেজ তাকে আটকে বলেছিলেন
— স্বামী হচ্ছে স্ত্রীর বটগাছ যে তাকে সর্বদা ছায়া দিয়ে রাখেন,, তাকে ছায়া দেয়াটা শুধু কথাতেই না কাজেও করতে হয় সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তাকে সম্মান দেয়া ।। তুমি তোমার স্ত্রীকে কতটুকু সম্মান দাও সেই হিসেবেই আমরাও তোমার স্ত্রীকে সম্মান দিব তাই বললাম তাকে সম্মান দিতে না পারো তাকে অসম্মান কখনও করোনা।
হ্যা পারভেজ সাহেব সর্বদা কথা ও কাজেও করে দেখিয়েছেন সে কখনও তার মা ভাই বোনদের সামনে কখনও রোজিনা বেগমকে কটু কথা বলেনি। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল রোজিনা বেগম বোনকে ফোন দিল বিয়েতে না করার জন্য
— কিরে আপা কি খবর,, অবশ্য ভালোই থাকবি সরকারি জামাই পাচ্ছিস,,
রুবির কথায় সূক্ষ্ম ঢোক গিলল রোজিনা বেগম মনে মনে অনেক কথা গুছানো থাকলেও বলতে পারছে না কোনো রকম বলল — রুবি বিয়েটা খুব দ্রুত হয়ে যাচ্ছে না,,??
— বলিস কি আপা তারা তো আরও আগে ডেট ফালাইতে চাইল।
— না মানে বলছিলাম কি একটু ভাবার মতো সময় চাই,,,,
রোজিনা বেগমকে বলতে না দিয়ে রুবি বলল
— কি বলিস আপা এমন ভালো ছেলে তুই কোথায় পাবি আর কোনো চাহিদাও নেই ভাববার সময় নিবি তারা কি তোদের আশায় বসে থাকবে। আরে বিয়ের বাজারে সরকারি চাকরির অনেক দাম তারা সহজেই তাদের ছেলের জন্য মেয়ে পেয়ে যাবে।
রুবির কথা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না ভাবলেন রোজিনা বেগম এরমধ্যেই রুপশাকে নিজের ঘর থেকে বের হতে দেখে আরো টুকটাক কথা বলে রেখে দিলো।।
রোজিনা বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকায় তখনই রুপশার ফোনের রিং বেজে ওঠে। রুপশার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
রোজিনা বেগম বুঝে হয়তো গতকাল ঠিক করা মেয়ের হবু জামাই।
#চলবে