#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৬৫
পিনপন নিরবতা। ডাক্তার জোহরা মুনমুন চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে গম্ভীর ছেলেটা কেমন শান্ত মনে অশান্ত হয়ে আছে ক্ষণে ক্ষণে হাত মুচরানো টের পায় মহিলাটি। ডাক্তার জীবনে অনেক পেশেন্ট দেখেছেন তিনি একটা বাচ্চার জন্য দম্পতির হাহাকার দেখেছেন তিনি। সেখানে এই ছেলেটা একটু আলাদা তার ছোট ভাইয়ের কাছে শুনেছে ভার্সিটি কাপানো ছেলেটা একটা মেয়েতেই আটকে।
— চন্দ্র
— আপু আপনি এখনো কিছু বলছেন না,,,
হাসি ফুটিয়ে ডাক্তার বলল — তোমার ওয়াই আলহামদুলিল্লাহ্ সুস্থ সবল আছে দীর্ঘদিন ট্রিটমেন্টে থাকার কারনে আপাতত স্টেবল আছে তবে ঔষধ মিস দেয়া যাবে না আর হ্যা একদম বেড রেষ্টে থাকতে হবে।
চন্দ্র আটকে রাখা দমটা ফুসসস করে ছাড়ল। হাসি মুখে ডাক্তারের দিকে তাকায়। এতোক্ষণ মাথা নিচু করে রেখেছিল। ডাক্তারটি খেয়াল করল চন্দ্রর চোখ লাল হয়ে আছে কান্না আটকানোর পুরো চেষ্টায় ছিলো ছেলেটা।।
— খুব ভালোবাসো নিজের ওয়াইফকে তাইনা,,
— ভালোবাসা কিনা বলতে পারব না আপু তবে ও আমার অন্ধকার জীবনের একটুকরো আলো জীবনের ন্যানো সেকেন্ড ওকে ছাড়া ভাবা অসম্ভব।
ডাক্তার খেয়াল করল তার সামনের ছেলেটি তাকে মুগ্ধ করল। সৌন্দর্য প্রিয়তার যুগেও কেউ মায়াবীনির খোঁজ করতে পারে কজন।
— আজ তাহলে আসি আপু
হাসি ছাড়াই যে নম্র কন্ঠে কথা বলা যায় সেটা সে চন্দ্রকে দেখেই বুঝল। তিনি চন্দ্রকে বিদায় দিয়ে রাউন্ডে বের হলেন কাল মুক্তিকে ছাড়া হবে তাই আজ চেকআপ করেই তিনি বাড়ি যাবেন।
___________________
রাস্তায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। গাড়িতে উঠে চট যলদি একটা মসজিদের সামনে গাড়ি থামিয়ে ওযু খানা থেকে ওযু করে মসজিদে যেয়ে দুই রাকাত শোকোরানা নামাজ পরে বের হলো। ফের গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।।
মুক্তিকে কাল আনার কথা থাকলেও ওকে আজই নিয়ে এসেছে ওকে কামরুল সাহেব নিজেদের বাসায় নিয়ে আসতে চাইলেও ইহান ও ফাতেমা আক্তার নিয়ে আসতে দেয়নি তার এককথা তাদের বউ তাদের বাড়িতেই যাবে।
চাদনী বেগম জোর করলেও তাকে ফাতেমা আক্তার থামিয়ে দেয়।
চন্দ্র বাড়িতে ঢুকে দেখে তার বাবা মা শশুর শাশুড়ি ড্রয়িং রুমে বসে আছে শুধু তার বউটা নেই। মাথা ঝুকিয়ে ঠোট কামড়ে হাসে চন্দ্র তার অভিমানিটা অভিমান করে আছে।
— হঠাৎই মিষ্টি
কামরুল সাহেবের গম্ভীর স্বর। চন্দ্র মিষ্টির প্যাকেট গুলো কামরুল সাহেবের হাতে দিয়ে সেখান থেকে একটা মিষ্টি তার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে বলল
— এমন ভাব করছ যেনো তুমি কিছুই জানো না।
— কিভাবে জানব আমাদের ছেলে তো আমাদেরকে বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।
একসাথে পারভেজ ও কামরুল সাহেব বলল।।
চন্দ্র তাদের জড়িয়ে ধরে আদ্র কন্ঠে বলল
— ভয়ে ছিলাম আব্বু খুব ভয়ে ওকে হারানোর ভয়ে তাইতো কোনো কিছু জানানোর মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না
পারভেজ সাহেব ও কামরুল সাহেব চন্দ্রর ব্যাকুলতা বুঝে রোজিনা বেগম মনে মনে মেয়ের সুখের জন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করে।
— আব্বাজান পুনমের জন্য এটা নিয়ে যা ও খেতে চেয়েছিল। একটা বাটিতে ঝোলঝোল রামেন দিয়ে বলল চাদনী বেগম দুপুরে মেয়েটা শুকনো মরিচ ডলে ভাত খেয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই খেতে পারেনি।
চন্দ্র বাটিটা নিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে ততক্ষণে কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব আরো মিষ্টির অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগম সবাইকে ফোন করে সুখবরটা জানাচ্ছে।
মুক্তি আফসোস করছে সে এখন আসতে পারছেনা বলে রুপশা উচ্ছ্বসিত হয়ে জানায় সে কাল আসছে।।
অন্ধকার ঘরে খাটের উপর হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে পুনম। চন্দ্র ঘরে ঢুকে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালায় পুনম চোখ কুচকে ফেলে চোখ তুলে দেখে চন্দ্র অভিমানি চোখে তাকায়।
মুখ ঘুরিয়ে হাসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলে। কাবার্ডের সামনে দাড়িয়ে টিশার্ট ট্রাউজার বের করে
পুনম নজর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে চন্দ্রের গতিবিধি।
গোসলে চলে যায় চন্দ্র এবার পুনম কেদেঁ দিল এবার চন্দ্র ওয়াশরুমের দরজায় হ্যালান দিয়ে বিনা শব্দে হেসে দিলো।
গোসলে সেড়ে দেখে সে যেরকম রেখে গিয়েছিল বাটি সেরকমই আছে।
তোয়ালে বারান্দায় মেলে দিয়ে পুনমের পাশে বসে তার মাথা বুকে জড়িয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
— ভয় পেয়েছিলাম তো জোহরা বিবি,, তুমি ছাড়া আমি সবকিছু অন্ধকার দেখী,,,
— তাই বলে কাল থেকে আমাকে অবহেলা করবেন।
হাসে চন্দ্র রামেনের বাটিটা নিয়ে খাইয়ে দিতে দিতে বলল — এখন তার ভরপাই হিসেব কি করতে হবে অভিমানিনী??
— আমি কি জানি শের “এ আলী তার জোহরার অভিমান ভাঙানোর জন্য কি করতে পারেন।
চন্দ্র মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
পরদিন সকালে রুপশা এসে দেখে যায় মুক্তি ঝিনুক রিমিরা ভিডিও কল দেয়। হাসি ঠাট্টা চলতে থাকে সবার মধ্যে।
চন্দ্র পুনমকে সকালে খাইয়ে ভার্সিটি গিয়েছে। পুনমের আপাতত ভার্সিটি যাওয়া নিষেধ করেছে চন্দ্র পুনম ও সুবোধ বালিকার মতো মেনে নিয়েছে।।
______________________
ছয় মাসের পেটটা নিয়ে টুলে বসে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে আইসক্রিম খাচ্ছে। আজকে রিশান ও শিহাবের বিয়ে একসাথে শিহাব বউ নিতু খুব মিষ্টি মেয়ে।
পুনমের বেশ পছন্দ হয়েছে তাকে শিহাব নিতুর বিয়ে পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়।
ঝিনুক বউ সেজে স্টেজে বসে আছে তার পাশে আরেকটি বউ নিতু।
চন্দ্র টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
— আর বমি হয়েছিল
মাথা নাড়ে পুনম। মেয়েটা প্রেগনেন্সির শুরুতে সাবলীল থাকলেও ইদানীং বেশ কষ্ট করে। পেটে ব্যাথা সাথে বমি তো আছেই।
পুনম অসুস্থ থাকায় তাকে আনতে চায়নি চন্দ্র তবে সবার তোপে তার আপত্তি টেকেনি। তাই নিয়ে এসেছে মেয়েটারও মন ভালো থাকবে।।
বিয়ের সকল ফর্মালিটি শেষ করতে করতে রাত বারোটা বেজে যায়। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় বসে আছে পুনম পায়ে ব্যাথা পা সোজা করে রাখছে চোখে ঘুম থাকলেও পা ব্যাথার কারণে ঘুমাতে পারছে না। আবার বাইরে সবাই হইহল্লোর করে শুনে সেখানেও যাওয়ার ইচ্ছে করেতেছে।
চন্দ্র রসুন সরিষার তেল গরম করে আনে,,, টেবিলে রেখে পুনমের পাশে বসে
— একটু আগে যা খেলে সবই তো বমি করে ফেলে দিলে আর কিছু খাবে দিব,,,
— উহু বাইরে যাব সবাই সেখানে আছে
রিশান ও শিহাবের বউকে চন্দ্রদের বাড়িতে উঠানো হয়েছে সবার আবদারে কাল বউ ভাতের পর তারা শশুরালয়ে ফিরবে। তাই শিহাব ও রিশানের বাসর ধরেছে মুক্তি নিশা রুপশা রাইয়্যান রিমি।
চন্দ্র বউয়ের হাত ধরে বাইরে এনে দেখে এখানে দর কষাকষি চলছে।
— মাছের বাজার চলছে এখানে
চন্দ্র পিছন থেকে বললে বোনেরা চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে বলল — দেখো চন্দ্র ভাই এরা দুই ভাই কি কিপ্টা বলেছি দুই ভাই দশ দশ বিশ হাজার ছাড়ো তারা বলে কিনা আমরা ডাকাতি করতে এসেছী।
শিহাব ক্ষেপে গিয়ে বলল — ডাকাতিই তো যাহ আজ গেলাম না ঘরে কি হবে
তখনই রিশান তাড়াহুড়ো করে বলল — না না বোনেরা আমি যাব আমার বহুদিনের বউ এটা অনেক অপেক্ষা করেছি বাসরের জন্য আর না
রিশানের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। লিমন ইহান রাশেদ এরা চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলেও এবার রিশানকে বলল — তাহলে শালা সাহেব আগে আপনি বাসর ঘরের টিকিট কাটেন।
রিশান দ্রুত টাকা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। তা দেখে পুনম বলল — শিহাব ভাই এটা ঠিক না রিশান ভাই দিলো টাকা এবার তুমিও দাও কিপ্টেমি করবা না কিন্তু,,,
অগত্যা শিহাবও টাকা দিয়ে প্রবেশ করে। সবাই টাকা নিয়ে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার ঘরে চলে গেলো চন্দ্র ঘুমন্ত পুনমকে কোলে তূলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো আলতো হাতে ফুলো পা জোড়ায় মালিস করতে করতে বিড়বিড়য়ে বলল — তুমি হীন আমি শূন্য জোহরা।।
#চলবে