#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়_আক্তার
#পর্ব_৬৬
পুনমের উন্মুক্ত উদরে জেল লাগিয়ে আল্ট্রা করছে ডক্টর।
— দেখতে পারছো তোমার বাচ্চা
ডাক্তারের কথা শুনে পুনম মনিটরের দিকে তাকায় তাকিয়েই বুকটা শীতলতায় ভরে গেলো। পুনমের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বলল — প্রথম বেবী
— জ্বী
মুচকি হাসল ডাক্তার মহিলাটি। নার্সটি টিস্যু দিয়ে পুনমকে পরিষ্কার করে দিয়ে উঠায়। পুনম বের হতেই সামনে বসা চন্দ্রকে দেখে মুচকি হাসে
চন্দ্র আদ্র চোখে চায়।
— বাকী রিপোর্ট নিচে রিসিপশনের থেকে নিবেন,,,
চন্দ্র ডাক্তারের কেবিনের সামনে পুনমকে বসিয়ে হাতে একটা জুস্যের প্যাকেট দিয়ে বলল — আমি আসতে আসতে যেনো এটা শেষ হয়।
পুনম জ্যুসে চুমুক দেয়। পাশে বসা দম্পতির দিকে তাকায় মেয়েটি সমানে কেদেঁ চলেছে। পুনম আগ্রহ নিয়ে তাকায় মেয়েটির দিকে পাশে বসা একটা মহিলা পুনমকে বলল — জামাইরে না জানিয়ে দুইটা বাচ্চা নষ্ট করছে দ্বিতীয় বাচ্চা নষ্ট করার সময় ক্ষতি হয় এখন একটা বাচ্চার জন্য অনেকদিন ধরেই চিকিৎসা করতাছে,,
পুনম তাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নিজের বাড়ন্ত পেটে হাত বুলিয়ে বলল — মা তোমার জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করবে বাচ্চা।।
চন্দ্র আসলে পুনমের সিরিয়ার অনুযায়ী তাকে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনে যায়।
রিপোর্ট দেখে মুচকি হাসল ডাক্তার জোহরা মুনমুন।
— সারপ্রাইজ আছে চন্দ্র
— কি সারপ্রাইজ আপু
— সেটা ডেলিভারির দিন জানতে পারবে,, এখন বলো এই মাসের কোন দিনে সিজারিয়ান করাবে,,
চন্দ্র কিছু বলার আগেই পুনম বলল — আপু নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা যায় না,,,
— যায় তবে তোমার শরীর নরমাল ধাক্কা নিতে পারবে না আর চন্দ্রই বলেছে নরমালে করাবে না সিজারিয়ান করাবে।
পুনম কিছু বলে না। অপারেশনের ডেট ঠিক করে সবকিছু ঠিকঠাক করে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরে চন্দ্র ও পুনম।
পুনমকে সোফায় বসিয়ে চন্দ্র হ্যালান দিয়ে বসে।
কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব সহ সবাই চন্দ্রের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে।
— কি বলল ডাক্তার
মুক্তির কথায় চন্দ্র বলল — পরসু অপারেশনের ডেট ঠিক করেছি এনাম মেডিক্যালেই করাব। সব ঠিক করে টাকা পয়সার কথাও বলে এসেছি,,,
মুক্তি পুনমের মাথায় হাত বুলায়। মেয়েটা অধিক ফুলে গেছে এই নিয়ে সবার ভয় তাদের বেলায় তো তারা এতো গুলুমুলু ছিলো না তাহলে। মেয়েটার কোনো সমস্যা হলে যে চন্দ্র ঠিক থাকবেনা।
— ভাইয়া পুনমকে নিয়ে ঘরে যাও ওর রেষ্ট নেওয়া লাগবে
চন্দ্র পুনমকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। মুক্তি রুপশা একে অপরের দিকে তাকায় তাদের কেনো জানি একটা সন্দেহ হচ্ছে।
দুইদিন পর সকাল সকাল পুনমকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। বারোটার দিকে অপারেশন কাপা হাতে চন্দ্র সব ফর্মালিটি পূরণ করে।
কেবিনে চন্দ্রের বুকে শুয়ে পুনম এই টাইম টুকু বড়রা কেউই তাদের ডিসটার্ব করতে আসেনি।
স্ট্রেচারে শুয়িয়ে পুনমকে নেওয়ার সময়। চন্দ্র শুধু এটুকুই বলল — কথা দিয়েছিলে ফিরবে কিন্তু??
পুনম কিছু বলতে পারেনা। নিয়ে যাওয়া হয় তাকে আস্তে আস্তে হাত ছুটে তাদের ধক করে উঠল পুনম বুক। এই স্বামীটাকে সে অনেক ভালোবাসে তা কখনও বলা হয়েছে উহু হয়নি তো যদি ফিরে আসে তাহলে নিশ্চয়ই বলবে। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল পুনম।
পুনমকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরপরই রোজিনা ও চাদনী বেগম হসপিটালের নামাজের স্থানে নামাজে বসে পড়েছে। মিরাজ সাহেবরাও এসে হাজির হয়েছে।
সবাই অস্থির ভাবে সময় কাটাচ্ছেন। তবে এসবের মধ্যে যাকে নিয়ে সবার ভয় ছিলো সেই যেনো আজ অদ্ভুতভাবে শান্ত।
কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব চন্দ্রর দুই পাশে বসে বলল — আমাদের পুনম ফাইটার আব্বা ছোট থেকেই ফাইট করে এসেছে। ইনশাআল্লাহ এবারের লড়াইতে পুনমই জিতবে আল্লাহর কাছে রহম চাও।
চন্দ্র চুপচাপ কথা শুনে কিছু বলে না। ইহান রাশেদ না জানলেও লিমন রিশান শিহাব চন্দ্রের পাগলাটে স্বভাবের অবগত। তারাও ভয়ে আছে চন্দ্রের এই শান্ততা নিয়ে।।
সর্বশেষে পয়তাল্লিশ মিনিট পর নার্স একজন মেয়ে বাবু আরেকজন নার্স একজন ছেলে বাবু নিয়ে বের হয়।
চন্দ্র সেদিকে তাকিয়ে কেপে ওঠে। দুই দুইটা সন্তান তার।
পিছন থেকে ডাক্তার বের হয় ছেলে বাবুটিকে এন আই সিউতে নেয়ার হুকুম দিয়ে বলল — পুনমের অবস্থা ক্রিটিকাল হঠাত করেই হার্ডবিট বেড়ে যাচ্ছে এতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে। আর তোমার ছেলেটারও শ্বাস জনিত সমস্যা হচ্ছে। আম সরি চন্দ্র সারপ্রাইজটা হাসি মুখে দিতে পারলাম না। রাতটা না গেলে কিছু বলতে পারছি না প্রে ফর দেম,,,,,,
ধপ করে বসে পড়ল চন্দ্র পিছন থেকে কামরুল সাহেব কাধে হাত রাখতেই তাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেদেঁ দিলো।
— আব্বু আমার সাথেই কেনো এমন হলো আমার পুনম ও বাবুটাকে সুস্থ চাই আব্বু
শক্ত পোক্ত চন্দ্রকে এমন বাচ্চাদের মতো কাদতে দেখে সবার খারাপ লাগছে
একদিকে এক বাচ্চার খুশী আরেকদিকে অন্য বাচ্চার অসুস্থতা ও তাদের মায়ের আশঙ্কা।
সারাদিন কারো খাওয়া হয়নি তাই তাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে লিমন। চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগম কেউই কিছু মুখে তুলছে না। শেষে না।।
ঐদিকে মেয়ে বাচ্চাটা গলা ফাটিয়ে কাদছে তার খিদের জানান দিতে। পূর্ব সহ সকল বাচ্চারাও তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
রাত আটটার দিকে সকলকে সস্তি দিয়ে দুই মা ছেলে একসাথেই ফেরে। অবস্থা উন্নত হয়।
খবর শোনার সাথে সাথে চন্দ্র পশ্চিম দিকে ফিরে সিজদায় লুটিয়ে পরে।
___________________
কেবিনে পুনম ও দুই বাচ্চাদের ঘিরে চলছে আনন্দ উৎসব কেউই ভাবতে পারেনি এইটুকু পুনমের পেটে দুই দুইটা বাচ্চা।
সবাই হাসি তামাশা করতে ব্যস্ত তখনই ভাই অন্ত প্রান বোনের নজরে পড়ল ভাইয়ের দিকে সে সকলের দিকে বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছে।
— আব্বু আম্মু চলো কাল থেকে তোমরা হাসপাতালে সবাই ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নিয়ে আবার এসো ততক্ষণে ভাইয়া থাকুক।
তবে কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব নাতনী রেখে যেতে দিতে নারাজ। মেয়েদের সবার ঘরেই ছেলে কাজেই এই একটা মেয়ে সবার আদরের।
তবুও মুক্তি তাদের জোড় করে নিয়ে এসেছে।।
কেবিন খালি হতেই পুনম চন্দ্রের দিকে তাকায়। একদিনেই লোকটার চেহারা শুকিয়ে গেছে পুনম মিষ্টি হেসে তাকে কাছে ডাকে।
চন্দ্র ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। আলতো হাতে পুনমের হাত ধরে।
— ওরা এতো ছোটো কেনো জোহরা,,,
— ওরা তো আপনার মতো এতো বুইড়া হয় নাই তাই ছোট,, আপনি ছেলে মেয়েদের কোলে নিয়েছেন
— হুম মেয়েকে নিয়েছিলাম যখন কান্না করতেছিল। আর তোমার ছেলে তো এখন থেকেই তোমার দলে মায়ের সাথে নিজেও অসুস্থ হয়ে বসে ছিলো।
হাসে পুনমের লোকটার বিচার শুনে কেমন শান্তি বিস্তার করে হৃদয় কোণে।
চন্দ্র পুনমের নাকে নাক ঘষে কপালে দীর্ঘ চুমু খায়।
ব্যাথায় পুনম নড়তে পারছে না। তবুও বলে
— একটু পরে লিমন ভাই খাবার আনবে খেয়ে ঐ বেডে একটা ঘুম দিবেন
— উহু ঘুমানো চলবে না আমার প্রিন্স প্রিন্সেস যদি জেগে যায়। তখন তোমার নিতে কষ্ট হবে।
— আপনার প্রিন্স প্রিন্সেস এখন উঠবেনা। ওরা মাত্রই ঘুমিয়েছে আপনি ভালো ছেলের মতো খেয়ে ঘুমাবেন।
লিমন আপাতত দুই প্যাকেট বিরিয়ানি দিয়ে যেতেই সেটা খেয়ে পুনমের হুকুম মতো ঐ পাশের বেডে শুয়ে পড়ে কাল থেকে না খাওয়া না ঘুমের কারণে খুব সহজেই ঘুমিয়ে যায় চন্দ্র।। ঘুমানোর আগে বিড়বিড় করে বলে — জোহরা আমি কি বাবা হওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে উহু দেইনি তো ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না তোমাকে আরো আদরে সোহাগে জড়িয়ে নিব।।
___________________
দুই ছেলে মেয়ে ও পুনমকে একসাথে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে চন্দ্র তখনই উপর থেকে বেলুন ফুটে সেখানে থেকে ফুলের পাপড়ি বর্সিত হয়।
একসাথে সকলে চিল্লিয়ে বলে — ” ওয়েলকাম হোম ”
পুরো বাড়িটা সাজানো হয়েছে খেয়াল করল পুনম।
পুনম হেসে ওঠে তবে বাচ্চা দুটো কেদেঁ ওঠে। ধমকে ওঠে চন্দ্র।
— এতো বাজারের মতো হইচই শুরু করেছিস কেনো?? আমার বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে,,,,
মুক্তি ছেলেটাকে কোলে নিতে নিতে বলল — ওরা তোমার মতো খাটাশ না ওরা ফুপির কষ্টের কথা চিন্তা করে কান্না করেছে।
মেয়েটিকে নিয়ে একই কথা বলল। পুনমকে নিয়ে চন্দ্র চলে যায় ঘরে তাকে ফ্রেশ করিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে দেখে নবজাতকদের নামের যুদ্ধ চলছে।
ইন্ডিয়া পাকিস্তানের যুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো হস্তক্ষেপ করে চন্দ্র বলল — আমার বাচ্চাদের না আমি ঠিক করে রেখেছি তোদের চিন্তা করা লাগবে না।
সবাই একজোটে বলল — কি
— ছেলের নাম জাহরান আলী প্রত্যুষ,, মেয়ের নাম সাফরিনা তাবাচ্ছুম চন্দ্রা,,,
সবাই প্রত্যুষ ও চন্দ্রাকে নিয়ে হই হুল্লোড় করতে থাকে। কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেব ও মিরাজ সাহেব টেবিলে বসে তাদের চাদেঁর হাটকে দেখতে থাকে আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সকলে যেনো এভাবেই হাসি খুশী থা
——————- ” সমাপ্ত ” ————–